অত্যাচারী কাফেরদের দুনিয়াতেই শাস্তি অনিবার্য
যে কাফেররা মুসলমানদের উপর অত্যাচার করেছে বা করছে তারা একদিন না একদিন শাস্তি পাবেই। আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা করেছেন, তিনি দুনিয়াতেই তাদের শাস্তি দিবেন, তাদের শাস্তি দিয়ে মাজলুম মুসলমানদের হৃদয় প্রশান্ত করবেন, আর আল্লাহ তায়ালার প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম ঘটে না, আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“নিশ্চিতভাবে জেনে রেখ, আমি আমার রাসূলগণকে এবং মুমিনদেরকে পার্থিব জীবনেও সাহায্য করি এবং সেই দিনও করবো, যে দিন সাক্ষীগণ দাঁড়িয়ে যাবে।” -সূরা গাফির, ৫১
এ আয়াতের অধীনে ইমাম ইবনে কাসীর রহ. অত্যন্ত চমৎকার হৃদয়-জুড়ানো আলোচনা করেছেন, সে আলোচনা ভাইদের সাথে শেয়ার করার জন্যই এ লেখার অবতারণা। ইবনে কাসীর রহ. বলেন,
“ইমাম ইবনে জারীর তবারী রহ. এ আয়াতের তাফসীরে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেন, তিনি বলেন, (কুরআন-সুন্নাহ হতে) নিশ্চিতরুপে জানা গেছে যে, কোন কোন নবীকে তার গোত্র হত্যা করে ফেলেছে, যেমন ইয়াহয়া ও যাকারিয়া আলাইহিস সালাম। কোন নবী তার জাতিকে ছেড়ে হিজরত করেছেন। ইসা আলাইহিস সালামকে আকাশে চলে গেছেন। তাহলে দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাদের সাহায্য করলেন কোথায়?
এরপর তিনি এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আয়াতে ‘সাহায্য করবেন’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যারা নবী ও মুমিনদের কষ্ট দিয়েছে তাদের পক্ষ থেকে তিনি কাফেরদের উপর প্রতিশোধ নিবেন। তবে এই প্রতিশোধ মাজলুমদের জীবদ্দশায়ও হতে পারে কিংবা তাদের মৃত্যুর পর, তাদের উপস্থিতিতেও হতে পারে কিংবা তাদের হিজরত করে চলে যাওয়ার পর। (যারা অত্যাচার করেছে তাদের উপরও আযাব আসতে পারে কিংবা তাদের উত্তরসূরীদের উপর, যারা পূর্বসূরীদের অত্যাচারে সন্তুষ্ট এবং সুযোগ পেলে নিজেরাও অত্যাচারের ইচ্ছা পোষণ করে)
এই প্রতিশোধ গ্রহণের নিমিত্তেই তিনি যাকারিয়া ও ইয়াহইয়ার হত্যাকারীদের তাদের শত্রুদের চাপিয়ে দিয়েছেন, যারা তাদের লাঞ্চিত করেছে, তাদের হত্যা করেছে। বর্ণনা করা হয়, আল্লাহ তায়ালা (ইবরাহীমের হিজরতের পর ইবরাহীমকে আগুনে নিক্ষেপকারী বাদশাহ) নমরুদকে কঠিন শাস্তি দিয়েছেন। আর যে ইহুদীরা ইসা আলাইহিস সালামকে শূলিতে চড়াতে চেয়েছিলো, আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর রোমানদের চাপিয়ে দিয়েছেন, যারা তাদের লাঞ্চিত ও অপদস্থ করেছে। অতপর কিয়ামতের পূর্বে ইসা আলাইহিস সালাম আসমান হতে অবতরণ করে দাজ্জাল ও তার বাহিনী ইহুদীদের হত্যা করবেন। তিনি শুকর হত্যা করবেন, ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন এবং জিযয়ার বিধান রহিত করে দিবেন। যারাই ইসলামগ্রহণ করবে না তাদের সবাইকে তিনি (পাইকারীহারে) হত্যা করবেন। এরচেয়ে বড় প্রতিশোধ আর কী হতে পারে?
বস্তুত, এটাই আল্লাহ তায়ালার চিরস্থায়ী রীতি, তিনি তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী বান্দাদের সাহায্য করেন, যারা তাদের উপর অত্যাচার করেছে তাদের শাস্তি দিয়ে তিনি মুমিনদের চক্ষু শীতল করেন। সহিহ বুখারীতে আবু হুরাইরা রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, “যে আমার কোন বন্ধুর সাথে শত্রুরা করে সে প্রকাশ্যে আমার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে”। অপর হাদিসে এসেছে, “আমি আমার বন্ধুদের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ করি যেমনিভাবে ক্ষীপ্ত সিংহ প্রতিশোধ গ্রহণ করে। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা নুহ ও লুত আলাইহিস সালামের গোত্র, আদ ও সামুদ জাতি, মাদয়ানবাসী সহ আরো যারা হকের বিরোধীতা করেছে, নবীদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছেন তাদের সকলকে শাস্তি দিয়েছেন, কাউকে ছাড়েননি। কিন্তু তাদের মধ্য হতে মুমিনদের মুক্তি দান করেছেন, কোন মুমিনকে ধ্বংস করেননি।
সুদ্দী রহ. বলেন, আল্লাহ তায়ালা যখনই কোন নবী বা মুমিনদের কোন দলকে কাফেরদের নিকট প্রেরণ দাওয়াতের জন্য প্রেরণ করেছেন আর তারা তাঁদের হত্যা করেছে, তো সেই প্রজন্ম শেষ হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা তাঁদের পক্ষ হতে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য কাউকে প্রেরণ করেন। তাই রাসূলগণ দুনিয়াতে নিহিত হলেও তারা বিজয়ী, সাহায্যপ্রাপ্ত। -তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৭/১৫০
এখানে লক্ষ্যনীয় যে, পূর্ববর্তী নবী-রাসূল ও তাদের অনুসারীদের উপর যে কাফেররা অত্যাচার করেছে, আল্লাহ তায়ালা অধিকাংশ সময়ই দুই পদ্ধতিতে তাদেরকে শাস্তি দিয়েছেন, হয়তো তাদের উপর অন্য কোন কাফেরকে চাপিয়ে দিয়েছেন, কিংবা আসমানী গযব নাযিল করেছেন। যেহেতু পূর্ববর্তী অধিকাংশ নবীদের শরিয়তেই জিহাদ ছিলো না তাই তাদের শাস্তির জন্য এ ধরণের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু উম্মতে মুসলিমার উপর যে কাফেররা অত্যাচার করবে তাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার রীতি হলো, আল্লাহ তায়ালা সাধারণত এই উম্মতের মুজাহিদ হাতেই তাদের শাস্তি দেন। এতে মাজলূম মুসলমানদের অধিক হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে। ইসলামে জিহাদ বিধান থাকার এটিও একটি বড় হিকমত। পূর্ব তুর্কিস্তানের মুসলিমদের উপর নির্মম নির্যাতনকারী চিনা মালাউনরা করোনা ভাইরাসে মরলেও আমাদের অন্তরে শান্তি আসে, কিন্তু এই মালাউনদের নিজ হাতে কোপাতে পারলে নিসন্দেহে আমাদের অন্তর আরো বেশি প্রশান্তি লাভ করতো। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো, যাতে আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে শাস্তি দান করবেন, তাদেরকে লাঞ্চিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং মুমিনদের অন্তর জুড়িয়ে দেন। এবং তাদের মনের ক্ষোভ দূর করবেন। আল্লাহ যার প্রতি ইচ্ছা তার তাওবা কবুল করেন। আল্লাহর জ্ঞানও পরিপূর্ণ, তারঁ হিকমত পরিপূর্ণ। -সূরা তাওবা, ১৪-১৫
আয়াতের তাফসীরে আল্লামা শাব্বীর আহমদ উসমানী বলেন,
“এই আয়াতে জিহাদ শরিয়তসম্মত হওয়ার মূল কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে পূর্ববর্তী উম্মতের যে কাহিনীগুলো বিবৃত হয়েছে তা থেকে বুঝে আসে যে, যখন কোন জাতি কুফর ও নবীদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করার ক্ষেত্রে সীমালঙ্গন করতো তখন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে তাদের উপর ভয়াবহ শাস্তি প্রেরণ করা হতো। যার মাধ্যমে তাদের কুফর ও খারাবী মূহুর্তে শেষ হয়ে যেতো। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আমি তাদের প্রত্যেককে তার অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কেউ তো এমন, যার বিরুদ্ধে পাঠিয়েছি পাথর বর্ষণকারী ঝড়ো-ঝঞ্ঝা, কেউ ছিল এমন যাকে আক্রান্ত করেছে মহানাদ, কেউ ছিল এমন, যাকে ভূগর্ভে ধ্বসিয়ে দিয়েছি এবং কেউ ছিল এমন, যাকে করেছি নিমজ্জিত। বস্তুত আল্লাহ এমন নন যে, তাদের প্রতি যুলুম করবেন, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করছিল।” -সূরা আনকাবুত, ৪০
নিসন্দেহে এই শাস্তি অত্যন্ত ভয়ানক ও পরবর্তীদের জন্য শিক্ষনীয় হতো। কিন্তু এক্ষেত্রে শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা দুনিয়াতে নিজেদের লাঞ্চনা ও যিল্লতি দেখে যেতে পারে না এবং তাওবা করে সত্যের দিকে ফিরে আসারও সুযোগ পায় না। তাই আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতকে জিহাদের হুকুম দিয়েছেন, যেন হঠকারী ও মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের তিনি নিজে সরাসরি শাস্তি দেবার পরিবর্তে তাঁর বিশ্বস্ত বান্দাদের মাধ্যমে শাস্তি দেন। এভাবে শাস্তি দেয়া হলে, অপরাধীদের যিল্লতি এবং মুমিনদের মর্যাদাবৃদ্ধি বেশি হয়, বিশ্বস্ত বান্দাদের বিজয় ও প্রতাপ প্রকাশ্যে দৃষ্টিগোচর যায়, তাঁদের অন্তর এটা দেখে সান্তনা লাভ করে যে, গতকাল পর্যন্ত যারা তাঁদের তুচ্ছ ও দূর্বল মনে করে যুলুম করতো, তাঁদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতো আজ তারাই তাঁদের করুণাপ্রার্থী, তাঁদের হাতেই ওদের ভাগ্য। যে নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলিমরা কাফেরদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ না করতে পেরে অন্তরে রাগ চেপে রাখতো, জিহাদের মাধ্যমে তাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। অধিকন্তু অপরাধীদের জন্যও শাস্তি প্রদানের এই পদ্ধতি অধিক কার্যকর। কেননা এক্ষেত্রে শাস্তি পাবার পরও তাওবা করে সত্যধর্ম গ্রহণের পথ খোলা থাকে। অনেক সময়ই শাস্তির ঘটনাবলী থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে বহু অপরাধী তাওবা করার সৌভাগ্য লাভ করে। তাই তো রাসূলের যমানায় জিহাদের কল্যাণে অল্প দিনেই পুরো আরব ইসলামের ছায়াতলে এসে গিয়েছিল।” -তাফসীরে উসমানী, পৃ: ২৪৪ ফরিদ বুক ডিপো।
যে কাফেররা মুসলমানদের উপর অত্যাচার করেছে বা করছে তারা একদিন না একদিন শাস্তি পাবেই। আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা করেছেন, তিনি দুনিয়াতেই তাদের শাস্তি দিবেন, তাদের শাস্তি দিয়ে মাজলুম মুসলমানদের হৃদয় প্রশান্ত করবেন, আর আল্লাহ তায়ালার প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম ঘটে না, আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّا لَنَنْصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الْأَشْهَادُ
“নিশ্চিতভাবে জেনে রেখ, আমি আমার রাসূলগণকে এবং মুমিনদেরকে পার্থিব জীবনেও সাহায্য করি এবং সেই দিনও করবো, যে দিন সাক্ষীগণ দাঁড়িয়ে যাবে।” -সূরা গাফির, ৫১
এ আয়াতের অধীনে ইমাম ইবনে কাসীর রহ. অত্যন্ত চমৎকার হৃদয়-জুড়ানো আলোচনা করেছেন, সে আলোচনা ভাইদের সাথে শেয়ার করার জন্যই এ লেখার অবতারণা। ইবনে কাসীর রহ. বলেন,
قد أورد أبو جعفر بن جرير، رحمه الله تعالى، عند قوله تعالى: {إنا لننصر رسلنا والذين آمنوا في الحياة الدنيا} سؤالا فقال: قد علم أن بعض الأنبياء، عليهم الصلاة والسلام، قتله قومه بالكلية كيحيى وزكريا وشعياء، ومنهم من خرج من بين أظهرهم إما مهاجرا كإبراهيم، وإما إلى السماء كعيسى، فأين النصرة في الدنيا؟ ثم أجاب عن ذلك بجوابين :
أحدهما: أن يكون الخبر خرج عاما، والمراد به البعض، قال: وهذا سائغ في اللغة.
الثاني: أن يكون المراد بالنصر الانتصار لهم ممن آذاهم، وسواء كان ذلك بحضرتهم أو في غيبتهم أو بعد موتهم، كما فعل بقتلة يحيى وزكريا وشعياء، سلط عليهم من أعدائهم من أهانهم وسفك دماءهم، وقد ذكر أن النمروذ أخذه الله أخذ عزيز مقتدر، وأما الذين راموا صلب المسيح، عليه السلام، من اليهود، فسلط الله عليهم الروم فأهانوهم وأذلوهم، وأظهرهم الله عليهم. ثم قبل يوم القيامة سينزل عيسى ابن مريم إماما عادلا وحكما مقسطا، فيقتل المسيح الدجال وجنوده من اليهود، ويقتل الخنزير، ويكسر الصليب، ويضع الجزية فلا يقبل إلا الإسلام. وهذه نصرة عظيمة، وهذه سنة الله في خلقه في قديم الدهر وحديثه: أنه ينصر عباده المؤمنين في الدنيا، ويقر أعينهم ممن آذاهم، ففي صحيح البخاري عن أبي هريرة، رضي الله عنه، عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال: "يقول الله تعالى: من عادى لي وليا فقد بارزني بالحرب". وفي الحديث الآخر: "إني لأثأر لأوليائي كما يثأر الليث الحرب"؛ ولهذا أهلك تعالى قوم نوح وعاد وثمود، وأصحاب الرس، وقوم لوط، وأهل مدين، وأشباههم وأضرابهم ممن كذب الرسل وخالف الحق. وأنجى الله من بينهم المؤمنين، فلم يهلك منهم أحدا وعذب الكافرين، فلم يفلت منهم أحدا.
قال السدي: لم يبعث الله رسولا قط إلى قوم فيقتلونه، أو قوما من المؤمنين يدعون إلى الحق فيقتلون، فيذهب ذلك القرن حتى يبعث الله لهم من ينصرهم، فيطلب بدمائهم ممن فعل ذلك بهم في الدنيا. قال: فكانت (10) الأنبياء والمؤمنون يقتلون في الدنيا، وهم منصورون فيها. (تفسير ابن كثير ت سلامة 7/150 دار طيبة للنشر والتوزيع الطبعة: الثانية 1420هـ)
أحدهما: أن يكون الخبر خرج عاما، والمراد به البعض، قال: وهذا سائغ في اللغة.
الثاني: أن يكون المراد بالنصر الانتصار لهم ممن آذاهم، وسواء كان ذلك بحضرتهم أو في غيبتهم أو بعد موتهم، كما فعل بقتلة يحيى وزكريا وشعياء، سلط عليهم من أعدائهم من أهانهم وسفك دماءهم، وقد ذكر أن النمروذ أخذه الله أخذ عزيز مقتدر، وأما الذين راموا صلب المسيح، عليه السلام، من اليهود، فسلط الله عليهم الروم فأهانوهم وأذلوهم، وأظهرهم الله عليهم. ثم قبل يوم القيامة سينزل عيسى ابن مريم إماما عادلا وحكما مقسطا، فيقتل المسيح الدجال وجنوده من اليهود، ويقتل الخنزير، ويكسر الصليب، ويضع الجزية فلا يقبل إلا الإسلام. وهذه نصرة عظيمة، وهذه سنة الله في خلقه في قديم الدهر وحديثه: أنه ينصر عباده المؤمنين في الدنيا، ويقر أعينهم ممن آذاهم، ففي صحيح البخاري عن أبي هريرة، رضي الله عنه، عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال: "يقول الله تعالى: من عادى لي وليا فقد بارزني بالحرب". وفي الحديث الآخر: "إني لأثأر لأوليائي كما يثأر الليث الحرب"؛ ولهذا أهلك تعالى قوم نوح وعاد وثمود، وأصحاب الرس، وقوم لوط، وأهل مدين، وأشباههم وأضرابهم ممن كذب الرسل وخالف الحق. وأنجى الله من بينهم المؤمنين، فلم يهلك منهم أحدا وعذب الكافرين، فلم يفلت منهم أحدا.
قال السدي: لم يبعث الله رسولا قط إلى قوم فيقتلونه، أو قوما من المؤمنين يدعون إلى الحق فيقتلون، فيذهب ذلك القرن حتى يبعث الله لهم من ينصرهم، فيطلب بدمائهم ممن فعل ذلك بهم في الدنيا. قال: فكانت (10) الأنبياء والمؤمنون يقتلون في الدنيا، وهم منصورون فيها. (تفسير ابن كثير ت سلامة 7/150 دار طيبة للنشر والتوزيع الطبعة: الثانية 1420هـ)
“ইমাম ইবনে জারীর তবারী রহ. এ আয়াতের তাফসীরে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেন, তিনি বলেন, (কুরআন-সুন্নাহ হতে) নিশ্চিতরুপে জানা গেছে যে, কোন কোন নবীকে তার গোত্র হত্যা করে ফেলেছে, যেমন ইয়াহয়া ও যাকারিয়া আলাইহিস সালাম। কোন নবী তার জাতিকে ছেড়ে হিজরত করেছেন। ইসা আলাইহিস সালামকে আকাশে চলে গেছেন। তাহলে দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাদের সাহায্য করলেন কোথায়?
এরপর তিনি এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আয়াতে ‘সাহায্য করবেন’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যারা নবী ও মুমিনদের কষ্ট দিয়েছে তাদের পক্ষ থেকে তিনি কাফেরদের উপর প্রতিশোধ নিবেন। তবে এই প্রতিশোধ মাজলুমদের জীবদ্দশায়ও হতে পারে কিংবা তাদের মৃত্যুর পর, তাদের উপস্থিতিতেও হতে পারে কিংবা তাদের হিজরত করে চলে যাওয়ার পর। (যারা অত্যাচার করেছে তাদের উপরও আযাব আসতে পারে কিংবা তাদের উত্তরসূরীদের উপর, যারা পূর্বসূরীদের অত্যাচারে সন্তুষ্ট এবং সুযোগ পেলে নিজেরাও অত্যাচারের ইচ্ছা পোষণ করে)
এই প্রতিশোধ গ্রহণের নিমিত্তেই তিনি যাকারিয়া ও ইয়াহইয়ার হত্যাকারীদের তাদের শত্রুদের চাপিয়ে দিয়েছেন, যারা তাদের লাঞ্চিত করেছে, তাদের হত্যা করেছে। বর্ণনা করা হয়, আল্লাহ তায়ালা (ইবরাহীমের হিজরতের পর ইবরাহীমকে আগুনে নিক্ষেপকারী বাদশাহ) নমরুদকে কঠিন শাস্তি দিয়েছেন। আর যে ইহুদীরা ইসা আলাইহিস সালামকে শূলিতে চড়াতে চেয়েছিলো, আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর রোমানদের চাপিয়ে দিয়েছেন, যারা তাদের লাঞ্চিত ও অপদস্থ করেছে। অতপর কিয়ামতের পূর্বে ইসা আলাইহিস সালাম আসমান হতে অবতরণ করে দাজ্জাল ও তার বাহিনী ইহুদীদের হত্যা করবেন। তিনি শুকর হত্যা করবেন, ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন এবং জিযয়ার বিধান রহিত করে দিবেন। যারাই ইসলামগ্রহণ করবে না তাদের সবাইকে তিনি (পাইকারীহারে) হত্যা করবেন। এরচেয়ে বড় প্রতিশোধ আর কী হতে পারে?
বস্তুত, এটাই আল্লাহ তায়ালার চিরস্থায়ী রীতি, তিনি তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী বান্দাদের সাহায্য করেন, যারা তাদের উপর অত্যাচার করেছে তাদের শাস্তি দিয়ে তিনি মুমিনদের চক্ষু শীতল করেন। সহিহ বুখারীতে আবু হুরাইরা রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, “যে আমার কোন বন্ধুর সাথে শত্রুরা করে সে প্রকাশ্যে আমার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে”। অপর হাদিসে এসেছে, “আমি আমার বন্ধুদের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ করি যেমনিভাবে ক্ষীপ্ত সিংহ প্রতিশোধ গ্রহণ করে। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা নুহ ও লুত আলাইহিস সালামের গোত্র, আদ ও সামুদ জাতি, মাদয়ানবাসী সহ আরো যারা হকের বিরোধীতা করেছে, নবীদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছেন তাদের সকলকে শাস্তি দিয়েছেন, কাউকে ছাড়েননি। কিন্তু তাদের মধ্য হতে মুমিনদের মুক্তি দান করেছেন, কোন মুমিনকে ধ্বংস করেননি।
সুদ্দী রহ. বলেন, আল্লাহ তায়ালা যখনই কোন নবী বা মুমিনদের কোন দলকে কাফেরদের নিকট প্রেরণ দাওয়াতের জন্য প্রেরণ করেছেন আর তারা তাঁদের হত্যা করেছে, তো সেই প্রজন্ম শেষ হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা তাঁদের পক্ষ হতে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য কাউকে প্রেরণ করেন। তাই রাসূলগণ দুনিয়াতে নিহিত হলেও তারা বিজয়ী, সাহায্যপ্রাপ্ত। -তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৭/১৫০
এখানে লক্ষ্যনীয় যে, পূর্ববর্তী নবী-রাসূল ও তাদের অনুসারীদের উপর যে কাফেররা অত্যাচার করেছে, আল্লাহ তায়ালা অধিকাংশ সময়ই দুই পদ্ধতিতে তাদেরকে শাস্তি দিয়েছেন, হয়তো তাদের উপর অন্য কোন কাফেরকে চাপিয়ে দিয়েছেন, কিংবা আসমানী গযব নাযিল করেছেন। যেহেতু পূর্ববর্তী অধিকাংশ নবীদের শরিয়তেই জিহাদ ছিলো না তাই তাদের শাস্তির জন্য এ ধরণের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু উম্মতে মুসলিমার উপর যে কাফেররা অত্যাচার করবে তাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার রীতি হলো, আল্লাহ তায়ালা সাধারণত এই উম্মতের মুজাহিদ হাতেই তাদের শাস্তি দেন। এতে মাজলূম মুসলমানদের অধিক হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে। ইসলামে জিহাদ বিধান থাকার এটিও একটি বড় হিকমত। পূর্ব তুর্কিস্তানের মুসলিমদের উপর নির্মম নির্যাতনকারী চিনা মালাউনরা করোনা ভাইরাসে মরলেও আমাদের অন্তরে শান্তি আসে, কিন্তু এই মালাউনদের নিজ হাতে কোপাতে পারলে নিসন্দেহে আমাদের অন্তর আরো বেশি প্রশান্তি লাভ করতো। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَيُذْهِبْ غَيْظَ قُلُوبِهِمْ وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
“তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো, যাতে আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে শাস্তি দান করবেন, তাদেরকে লাঞ্চিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং মুমিনদের অন্তর জুড়িয়ে দেন। এবং তাদের মনের ক্ষোভ দূর করবেন। আল্লাহ যার প্রতি ইচ্ছা তার তাওবা কবুল করেন। আল্লাহর জ্ঞানও পরিপূর্ণ, তারঁ হিকমত পরিপূর্ণ। -সূরা তাওবা, ১৪-১৫
আয়াতের তাফসীরে আল্লামা শাব্বীর আহমদ উসমানী বলেন,
اس آیت میں مشروعیت جہاد کی اصلی حکمت پر متنبہ فرمایا ۔ قرآن کریم میں اقوام ماضیہ کے جو قصے بیان فرمائے ہیں ان سےظاہر ہوتا ہے کہ جب کوئی قوم کفر و شرارت اور انبیاءؑ کی تکذیب و عداوت میں حد سے بڑھ جاتی تھی تو قدرت کی طرف سے کوئی تباہ کن آسمانی عذاب ان پر نازل کیا جاتا تھا جس سے ان کے سارے مظالم اور کفریات کا دفعۃً خاتمہ ہو جاتا تھا۔ فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنْبِهِ فَمِنْهُمْ مَنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَمِنْهُمْ مَنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُمْ مَنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُمْ مَنْ أَغْرَقْنَا وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ (عنکبوت۔۴۰) کوئی شبہ نہیں کہ عذاب کی یہ اقسام بہت سخت مہلک اور آئندہ نسلوں کے لئے عبرتناک تھیں۔ لیکن ان صورتوں میں معذبین کو دنیا میں رہ کر اپنی ذلت و رسوائی کا نظارہ نہیں کرنا پڑتا تھا اور نہ آئندہ کے لئے توبہ و رجوع کا کوئی امکان باقی رہتا تھا۔ مشروعیت جہاد کی اصلی غرض و غایت یہ ہے کہ مکذبین و متعنتین کو حق تعالیٰ بجائے بلا واسطہ عذاب دینے کے اپنے مخلص وفادار بندوں کے ہاتھ سے سزا دلوائے سزا دہی کی اس صورت میں مجرمین کی رسوائی اور مخلصین کی قدر افزائی زیادہ ہے وفادار بندوں کا نصرت و غلبہ علانیہ ظاہر ہوتا ہے ۔ ان کے دل یہ دیکھ کر ٹھنڈے ہوتے ہیں کہ جو لوگ کل تک انہیں حقیر و ناتواں سمجھ کر ظلم و ستم اور استہزاء و تمسخر کا تختہ مشق بنائے ہوئے تھے ، آج خدا کی تائید و رحمت سے انہی کے رحم و کرم یا عدل و انصاف پر چھوڑ دیے گئے ہیں۔ کفر و باطل کی شوکت و نمائش کو دیکھ کر جو اہل حق گھٹتے رہتے تھے یا جو ضعیف و مظلوم مسلمان کفار کے مظالم کا انتقام نہ لے سکنے کی وجہ سے دل ہی دل میں غیظ کھا کر چپ ہو رہتے تھے جہاد فی سبیل اللہ کے ذریعہ سے ان کے قلوب تسکین پاتے تھے اور آخری بات یہ ہے کہ خود مجرمین کے حق میں بھی سزا دہی کا یہ طریقہ نسبۃً زیادہ نافع ہے کیونکہ سزا پانے کے بعد بھی رجوع و توبہ کا دروازہ کھلا ہوا ہے ۔ بہت ممکن ہے کہ حالات سے عبرت حاصل کر کے بہت سے مجرموں کو توبہ نصیب ہو جائے چنانچہ حضور پر نور ﷺ کے زمانہ میں ایسا ہی ہوا کہ تھوڑے دنوں میں سارا عرب صدق دل سے دین الہٰی کا حلقہ بگوش بن گیا۔
“এই আয়াতে জিহাদ শরিয়তসম্মত হওয়ার মূল কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে পূর্ববর্তী উম্মতের যে কাহিনীগুলো বিবৃত হয়েছে তা থেকে বুঝে আসে যে, যখন কোন জাতি কুফর ও নবীদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করার ক্ষেত্রে সীমালঙ্গন করতো তখন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে তাদের উপর ভয়াবহ শাস্তি প্রেরণ করা হতো। যার মাধ্যমে তাদের কুফর ও খারাবী মূহুর্তে শেষ হয়ে যেতো। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنْبِهِ فَمِنْهُمْ مَنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَمِنْهُمْ مَنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُمْ مَنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُمْ مَنْ أَغْرَقْنَا وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
“আমি তাদের প্রত্যেককে তার অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কেউ তো এমন, যার বিরুদ্ধে পাঠিয়েছি পাথর বর্ষণকারী ঝড়ো-ঝঞ্ঝা, কেউ ছিল এমন যাকে আক্রান্ত করেছে মহানাদ, কেউ ছিল এমন, যাকে ভূগর্ভে ধ্বসিয়ে দিয়েছি এবং কেউ ছিল এমন, যাকে করেছি নিমজ্জিত। বস্তুত আল্লাহ এমন নন যে, তাদের প্রতি যুলুম করবেন, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করছিল।” -সূরা আনকাবুত, ৪০
নিসন্দেহে এই শাস্তি অত্যন্ত ভয়ানক ও পরবর্তীদের জন্য শিক্ষনীয় হতো। কিন্তু এক্ষেত্রে শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা দুনিয়াতে নিজেদের লাঞ্চনা ও যিল্লতি দেখে যেতে পারে না এবং তাওবা করে সত্যের দিকে ফিরে আসারও সুযোগ পায় না। তাই আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতকে জিহাদের হুকুম দিয়েছেন, যেন হঠকারী ও মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের তিনি নিজে সরাসরি শাস্তি দেবার পরিবর্তে তাঁর বিশ্বস্ত বান্দাদের মাধ্যমে শাস্তি দেন। এভাবে শাস্তি দেয়া হলে, অপরাধীদের যিল্লতি এবং মুমিনদের মর্যাদাবৃদ্ধি বেশি হয়, বিশ্বস্ত বান্দাদের বিজয় ও প্রতাপ প্রকাশ্যে দৃষ্টিগোচর যায়, তাঁদের অন্তর এটা দেখে সান্তনা লাভ করে যে, গতকাল পর্যন্ত যারা তাঁদের তুচ্ছ ও দূর্বল মনে করে যুলুম করতো, তাঁদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতো আজ তারাই তাঁদের করুণাপ্রার্থী, তাঁদের হাতেই ওদের ভাগ্য। যে নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলিমরা কাফেরদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ না করতে পেরে অন্তরে রাগ চেপে রাখতো, জিহাদের মাধ্যমে তাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। অধিকন্তু অপরাধীদের জন্যও শাস্তি প্রদানের এই পদ্ধতি অধিক কার্যকর। কেননা এক্ষেত্রে শাস্তি পাবার পরও তাওবা করে সত্যধর্ম গ্রহণের পথ খোলা থাকে। অনেক সময়ই শাস্তির ঘটনাবলী থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে বহু অপরাধী তাওবা করার সৌভাগ্য লাভ করে। তাই তো রাসূলের যমানায় জিহাদের কল্যাণে অল্প দিনেই পুরো আরব ইসলামের ছায়াতলে এসে গিয়েছিল।” -তাফসীরে উসমানী, পৃ: ২৪৪ ফরিদ বুক ডিপো।
Comment