সুলাইমান আলাইহিস সালাম এবং জিহাদ (তৃতীয় পর্ব- জিহাদের আসবাবের প্রতি ভালোবাসা, তার পরিচর্যা এবং একে আল্লাহ তায়ালার যিকিরের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা)
وَوَهَبْنَا لِدَاوُودَ سُلَيْمَانَ نِعْمَ الْعَبْدُ إِنَّهُ أَوَّابٌ (30) إِذْ عُرِضَ عَلَيْهِ بِالْعَشِيِّ الصَّافِنَاتُ الْجِيَادُ (31) فَقَالَ إِنِّي أَحْبَبْتُ حُبَّ الْخَيْرِ عَنْ ذِكْرِ رَبِّي حَتَّى تَوَارَتْ بِالْحِجَابِ (32) رُدُّوهَا عَلَيَّ فَطَفِقَ مَسْحًا بِالسُّوقِ وَالْأَعْنَاقِ
“আমি দাউদকে দান করলাম সুলাইমান (-এর মত পুত্র)। সে ছিল উত্তম বান্দা। নিশ্চয়ই সে ছিল অতিশয় আল্লাহ অভিমুখী। (সেই সময়টি স্মরণীয়) যখন সন্ধ্যাবেলা তার সামনে উৎকৃষ্ট প্রজাতির ভালো-ভালো ঘোড়া পেশ করা হল। তখন সে বললো, আমি আমার প্রতিপালকের স্মরণার্থেই এই সম্পদকে ভালোবেসেছি। অবশেষে তা পর্দার আড়াল হয়ে গেল। (অনন্তর সে বললো,) ওগুলোকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনো। অতপর সে (তাদের) পায়ের গোছা ও ঘাড়ে হাত বুলাতে লাগলো।” -সূরা সোয়াদ, ৩০-৩৩ তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, ৩/১৯৩-১৯৪
আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা তাকী উসমানী দা.বা. বলেন, “সুলাইমান আলাইহিস সালাম বললেন, আমি তো এগুলোকে আল্লাহর জন্যই ভালোবাসি, এগুলো তো সংগ্রহই করা হয়েছে জিহাদের জন্য। আর জিহাদের করা হয় আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসায়। অতপর ঘোড়াগুলো এগুতে এগুতে তার চোখের আড়ালে চলে গেল। তিনি সেগুলোকে আবারও তার সামনে আনতে বললেন। এবার তিনি সেগুলোর পায়ের গোছা ও গর্দানে আদর বুলিয়ে দিলেন। আয়াতের উপরিউক্ত তাফসীর হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাযিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে এবং এটা আয়াতের শব্দাবলীরও বেশি কাছাকাছি। ইবনে জারীর ও ইমাম রাযী রহিমাহুমাল্লাহ এ তাফসীরকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।” তাওযীহুল কুরআন, ৩/১৯৪
শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী রহিমাহুল্লাহও আয়াতের এরকম অর্থই করেছেন। তার তরজমার টীকায় আল্লামা শাব্বীর আহমদ উসমানী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
یعنی نہایت اصیل، شائستہ اور تیز و سبک رفتار گھوڑے جو جہاد کے لئے پرورش کئے گئے تھے ان کے سامنے پیش ہوئے۔ ان کا معائنہ کرتے ہوئے دیر لگ گئ۔ حتٰی کہ آفتاب غروب ہو گیا۔ شاید اسی شغل میں عصر کے وقت کا وظیفہ بھی نہ پڑھ سکے ہوں۔ اس پر کہنے لگے کوئی مضائقہ نہیں ۔ اگر ایک طرف ذکر اللہ (یاد خدا) سے بظاہر علیحدگی رہی تو دوسری جانب جہاد کے گھوڑوں کی محبت اور دیکھ بھال بھی اسی کی یاد سے وابستہ ہے۔ جب جہاد کا مقصد اعلائے کلمۃ اللہ ہے تو اس کے مُعدّات و مبادی کا تفقد کیسے ذکر اللہ کے تحت میں داخل نہ ہو گا۔ آخر اللہ تعالیٰ جہاد اور آلات جہاد کے مہیا کرنے کی ترغیب نہ دیتا تو اس مال نیک سے ہم اس قدر محبت کیوں کرتے۔ اسی جذبہ جہاد کے جوش و افراط میں حکم دیا کہ ان گھوڑوں کو پھر واپس لاؤ۔ چنانچہ واپس لائے گئے اور حضرت سلیمانؑ غایت محبت و اکرام سے ان کی گردنیں اور پنڈلیاں پونچھنے اور صاف کرنے لگے۔ آیت کی یہ تقریر بعض مفسرین نے کی ہے۔ اور لفظ { حُبَّ الْخَیْرِ } سے اس کی تائید ہوتی ہے۔ گویا خیر کا لفظ اس مضمون کی طرف اشارہ کر رہا ہے جو نبی کریم ﷺ نے حدیث میں فرمایا «الخيل معقود في نواصيها الخير إلى يوم القيامة» ۔
“অর্থাৎ জিহাদের ঘোড়ার ভালোবাসা ও পরিচর্যাও তো আল্লাহ তায়ালার স্মরণের সাথে সম্পৃক্ত। যেহেতু জিহাদের উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহর দ্বীনকে সুউচ্চ করা তাই জিহাদের হাতিয়ার ও আসবাবও নিশ্চিতভাবে আল্লাহর যিকিরের অন্তর্ভুক্ত। যদি আল্লাহ তায়ালা জিহাদ এবং জিহাদের হাতিয়ার প্রস্তুত করার আদেশ না দিতেন তবে এই ঘোড়াকে আমরা এত ভালোবাসতাম না। এই জিহাদের জযবার আতিশয্যে সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিলেন, ঘোড়াগুলো পুনরায় নিয়ে আসো। ঘোড়াগুলো ফিরিয়ে আনা হলে সুলাইমান আলাইহিস সালাম অত্যন্ত ভালোবাসা ও আদরের সাথে সেগুলোর গর্দান ও পায়ের গোছায় হাত বুলিয়ে তা পরিষ্কার করতে লাগলেন। আয়াতের এ ব্যাখ্যা কোন কোন মুফাসসির করেছেন, আয়াতে উল্লিখিত خير (কল্যাণ) শব্দ থেকে এর সমর্থন মেলে, যেন এ শব্দটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণিত এই হাদিসের বিষয়বস্তুর দিকে ইশারা করছে, “ঘোড়ার কেশরে কিয়ামত পর্যন্ত خير (কল্যাণ) যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।” (তাফসীরে উসমানী)
***
সুলাইমান আলাইহিস সালাম এবং জিহাদ (প্রথম পর্ব- যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত)
সুলাইমান আলাইহিস সালাম এবং জিহাদ (দ্বিতীয় পর্ব- মুজাহিদ বানানোর নিয়তে সন্তান কামনা)
Comment