আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
ভাই আজ আমরা সকলেই বিপদগ্রস্থ, গজবে নিপতিত । আর আমাদেরকে এই ভয়াবহ বিপদ/গজব থেকে বাঁচাতে পারেন একমাত্র সর্বময় ক্ষমতার মালিক আমাদের মহান সৃষ্টির্কতা, পালনর্কতা মহান আল্লাহ তা’আলা । আর এই চরম মুছিবাতের দিনে মহান রাব্বুল আ’লামিনের সাহায্য পেতে হলে সবার আগে আহকামুল হাকিমিনের বিদ্রোহ, অবাধ্যতা এবং সকল প্রকার ছোট বড় গুনাহ পরিত্যাগ করতে হবে এবং তাওবা করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে। আর তাওবার প্রথম শর্ত হচ্ছে ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গ যে গুনাহে লিপ্ত সেই গুনাহ থেকে নিজেকে/নিজেদেরক বিচ্ছিন্নকরণ। যেমন ধরা যাক কেউ মদ পান করছে আর বলছে আল্লাহ মাফ করে দাও। এটার মধ্যে আর শয়তানের শয়তানীর মধ্যে কোন র্পাথক্য আছে ? এই গুনাহগারকে প্রথমে মদপান বন্ধ/পরিত্যাগ করতে হবে তারপর নিজ অপকর্মের জন্য লজ্জিত হয়ে অনুতপ্ত হৃদয়ে ভবিষ্যতে আর এধরনের গুনাহ করবে না মর্মে দৃঢ় সংকল্প হয়ে গাফুরুর রাহিমের কাছে কায়োমনোবাক্যে ক্ষমা র্প্রাথনা করতে হবে। এটার নাম হচ্ছে তাওবা।
আর আমরা সবাই জানি যে পাপ/অপরাধ যত বড়/গুরুতর তার সাজাও তত কঠিন এবং এর দ্বারা মালিকের অসন্তুষ্টির সম্ভাবনাও তত বেশী। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাপ/অবাধ্যতা/বিদ্রোহ হচ্ছে শিরক্। আর এই শিরকের ব্যাপারেই মহান রাব্বুল আ’লামিন হাশরের ময়দানেও সবচেয়ে কঠোর থাকবেন। শিরক্ এমন এক জীবানু যা ঈমানকে ধ্বংস করে দেয় ।
الشرك এর শাব্দিক অর্থ হলঃ শরীক করা, অংশিদার সাব্যস্তকরা। পরিভাষায় شركবলা হয়ঃ যে সকল বিষয় আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট সেগুলোতে অন্য কাউকে শরীক করা। সে শরীকানা পুরোপুরিও হতে পারে বা আংশিকও হতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।”
(সুরা লোকমান ১৩)।
‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। (সূরা নিসা ৪৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন : নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। (সূরা মাইদা ৭২)
হাদিসের মধ্যে বর্ণিত হয়েছেঃ “রাসূল (ﷺ) ৩ বার জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে অবগত করবনা ? তারপর তিনি বললেন সবচেয়ে বড় গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সাথে শরীক করা।”
( মুসলিম )
১
মুয়াজ রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (ﷺ) আমাকে ১০টি বিষয় সম্পর্কে উপদেশ দিলেন, তার মধ্য থেকে প্রথম বিষয়টি হলঃ “তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় অথবা জালিয়ে দেয়া হয়’’। (মুসনাদে আহমদ)
শিরক মুলত ২ প্রকার
১) شرك الأكبر শিরকে আকবার (বড় শিরক)
২) شرك الأصغار শিরকে আসগর (ছোট শিরক)
১। شرك الأكبر শিরকে আকবার: তথা বড় শিরক যা ঈমান ভঙ্গের কারণ অর্থাৎ যা মানুষকে মিল্লাতে ইসলামিয়্যা থেকে বের করে দেয়। কেউ যদি এই অপরাধ করে আর তাওবা ছাড়া মৃত্যু বরণ করে তাহলে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। (সূরা নিসা : ৪৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন : নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। (সূরা মাইদা ৭২)
শিরকে আকবার ৪ প্রকার
১) شرك في الربوبية শিরক ফির রুবুবিয়্যাহ
২) شرك في الألوهية শিরক ফিল উলুহিয়্যাহ
৩) شرك في الحكم و الطاعة শিরক ফিল হুকমি ওয়া তাআ’হ
৪) شرك في الأسماء الصفات শিরক ফিল আসমা ওয়াস সিফাহ
১) শিরকে আকবারের ১ম প্রকার হচ্ছে شرك في الربوبية শিরক ফির রুবুবিয়্যাহ :
শিরক ফির রুবুবিয়্যাহ বলা হয় আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে কাউকে শরীক করা। অর্থাৎ সৃষ্টি, মালিকানা, রিযিক দান, জীবন মৃত্যু, সমগ্ররাজ্য নিয়ন্ত্রন ও পরিচালনা করা, সার্বভৌমত্ব, উপকার ও অপকারের ক্ষমতা, বিপদ থেকে পরিত্রান দেয়া ইত্যাদির অধিকার ও কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। এ শরীকানা পুরোপুরিও হতে পারে বা আংশিকও হতে পারে। যেমন:- ফেরাউন আল্লাহর রুবুবিয়্যাতকে পুরোপুরি অস্বীকার করেছিল এবং সে বলেছিল,‘আমি তোমাদের সর্বচ্চো প্রভূ।’–(সুরা নাযিয়া ২৪)। আবার আংশিকভাবে রুবুবিয়্যাতের কোন বৈশিষ্টকে মাখলুকের জন্য সাব্যস্ত করলেও শিরক ফির রুবুবিয়্যাহ ’র অপরাধে অপরাধী হতে হবে। যেমন:- বিপদ থেকে উদ্ধারকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তা’আলা। এখন কেউ যদি এই বিশ্বাস রাখে যে, ওলি আওলিয়া ও পীর বুযুর্গোরাও বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে। তাহলে সেও রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে শিরক করল। আবার সার্বভৌমত্বের মালিক হলেন একমাত্র আল্লাহ। এখন কেউ যদি বিশ্বাস করে সার্বভৌমত্বের মালিক জনগণ। তাহলে সেও রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে শিরক করল। এরকম আরও অসংখ্য শিরক ফির রুবুবিয়্যাহ’র অস্তিত্ত্ব আমাদের সমাজে বিরাজমান।
২
২। শিরকে আকবারের ২য় প্রকার হচ্ছে شرك في الألوهيةশিরক ফিল উলুহিয়্যাহ :
শিরক ফিল উলুহিয়্যাহ বলা হয়- আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্য কাউকে শরীক করা। এই শিরক বিভিন্নভাবে হতে পারে যেমন-
শিরকুদ দোয়া বা আল্লাহ সাথে অন্য উপাস্যকেও ডাকা বা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা। যেমন:- আজকে আমরা দেখি আমাদের সমাজে অনেক মানুষ রয়েছে যারা মাজার ও কবরের কাছে গিয়ে প্রার্থনা করে। আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। কেয়ামতের দিন তারা তোমাদের শিরক অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ আল্লাহর ন্যায় তোমাকে কেউ অবহিত করতে পারবে না।’ - (সুরা ফাতের :১৪) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকবে না, যে তোমার ভাল করবে না মন্দও করবে না। বস্তুতঃ তুমি যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। -(সুরা ইউসুফ: ১০৬) ।
আবার ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করার মাধ্যমেও এই শিরক সংঘঠিত হয়। যেমন:- কোন মাখলুককে সিজদা করা, রুকু করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সেজদা কর, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা নিষ্ঠার সাথে শুধুমাত্র তাঁরই এবাদত কর। -(সুরা হামীম সেজদা: ৩৭)। আজকে দেখা যায়, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় অনেকে পীর ফকীরকে সেজদা করে থাকে। যদি বলা হয়, এদেরকে কেন সেজদা করছেন ? তখন তারা বলে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়। আর মক্কার কাফেররা আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়ই মূর্তির উপাসনা করত। তারা বলতো, ‘আমরা তাদের ইবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।’ –(সুরা যুমার :৩)। সুতরাং আজকে যারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পীর ফরিকদের সেজদা করছে তাদের মাঝে আর মক্কার মুশরীকদের মাঝে কি কোন পার্থক্য আছে ? আল্লাহ তাআলা বলেন, অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইাবাদতে কাউকে শরীক না করে। -(সুরা কাহাফ: ১০৯)
নিয়ত, ইচ্ছা ও সংকল্পের ক্ষেত্রেও এই শিরক সংঘঠিত হয়। অর্থাৎ কোন ইবাদত আল্লাহর জন্য না করে শুধুমাত্র পার্থিব স্বার্থের জন্য করা। আর এই ধরণের শিরক মুনাফিকদের থেকে বেশী প্রকাশ পায়। তারা বাহ্যিক ভাবে ইসলামকে প্রকাশ করে কিন্তু আভ্যন্তরিন ভাবে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,‘আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা তো (মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্র। - (সুরা বাকারা: ১৪)। এছাড়াও অন্যান্যদের থেকেও এধরণের শিরক প্রকাশ পেতে পারে। যেমন, কোন ব্যক্তি দুনিয়ার স্বার্থে ইসলামের কোন কাজ করল। উদাহরণস্বরূপ, কেউ মুসলিম কোন সুন্দরী নারীকে বিয়ে করার জন্য ইসলাম গ্রহণ করল। এদের ব্যপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,‘যে ব্যক্তি পার্থিবজীবন ও তার চাকচিক্যই কামনা করে, হয় আমি তাদের দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না। এরাই হল সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছু নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে; আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হল। -(সুরা হুদ :১৫-১৬)।
৩
শিরকুল মুহাব্বাহ বা ভালোবাসার ক্ষেত্রেও এই শিরকের উদ্ভব হয়। যদি কেউ আল্লাহর চেয়ে দুনিয়া ও দুনিয়ার কোন কিছুকে বেশি ভালোবাসে তাহলে এটাই হল ভালোবাসার ক্ষেত্রে শিরক। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,‘আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। -(সুরা বাকার :১৬৫)
শিরকুল খাওফ বা ভয়ের ক্ষেত্রেও এমন শিরক হতে পারে । অর্থাৎ আল্লাহর চেয়ে অন্য কাউকে তথা গাইরুল্লাহকে বা কোন সৃষ্টিকে বেশী ভয় করলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর যখন তাদের প্রতি জিহাদের নির্দেশ দেওয়া হল , তৎক্ষণাৎ তাদের মধ্যে একদল লোক মানুষকে ভয় করতে আরম্ভ করল, যেমন করে ভয় করা হয় আল্লাহকে। এমন কি তার চেয়েও অধিক ভয়।’ - (সুরা নিসা :৭৭)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন‘এরা যে রয়েছে, এরাই হল শয়তান, এরা নিজেদের বন্ধুদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না। আর তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তবে আমাকে ভয় কর। - (সুরা আল ইমরান :১৮৫)
৩) শিরক ফিল হুকমি ওয়াত তাআ’হ- হুমুক ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে শিরক করা : অর্থাৎ আল্লাহর বিধান না মেনে অন্য কারো বিধান মানা। আল্লাহর আনুগত্য না করে অন্য কারো আনুগত্য করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, সৃষ্টি তার বিধানও তাঁর’ - (সুরা আরাফ ৫৪) । অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বিধান দেওয়ার ক্ষামতা একমাত্র আল্লাহর’- (সুরা ইউসুফ ৪০) ।
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, নিশ্চই শয়তানরা তাদের বন্ধুদের নিকট ওহী প্রেরণ করে যাতে তারা তোমাদের সাথে বির্তক কর।আর যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, নিশ্চিত তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে। [সূরা আনআম: ১২১]
ইবনে কাসীর (রহঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন :
আল্লাহ তায়ালার বাণী - ‘যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে”র্অথাৎ তোমরা যদি আল্লাহর আদেশ ও শরীয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্য কারো কথার দিকে দৃষ্টি দাও এবং সেটিকেই প্রাধান্য দাও তাহলে সেটিই হবে শিরক। [তাফসীরে ইবনে কাছীর, খন্ড:৩, পৃষ্ঠা:৩২৯]
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যারা দাবী করে যে যা আপনার প্রতি অর্বতীণ হয়েছে এবং আপনার র্পূবে যা অর্বতীণ হয়েছে তার উপর তারা ঈমান এনেছে ইহা সত্ত্বওে তারা তাগূতের কাছে বিচার র্প্রাথনার ইচ্ছা পোষণ করছে। অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ ছিল যাতে তারা তাকে (তাগূতকে) অস্বীকার করে । পক্ষান্তরে শয়তান ইচ্ছা করছে তাদেরকে পরিপূর্ণ পথভ্রষ্ট করে ফেলতে। [সূরা-নসিা, আয়াত:৬০]
এ আয়াতটি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এমন ব্যক্তির দাবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে যে দাবী করে আল্লাহ তায়ালা তার রাসূলের (ﷺ) উপর ও র্পূবর্বতী আম্বিয়াদের উপর যা অর্বতীণ করেছেন সে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে অথচ সে বিবদমান বিষয়াদিতে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহকে ছেড়ে ভিন্ন কোন কিছুর কাছে বিচার ফায়সালা চায়।
৪
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, তাদের জন্য এমন কিছু শরীক আছে কি যারা তাদের জন্য দ্বীনের এমন বিধান দিয়েছে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি। [সূরা শুরা: ২১]
‘তারা কি জাহিলিয়্যাতের বিধি-বিধান কামনা করে ? বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর বিধানদানকারী? [সূরা মায়দিাহ: ৫০]
সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ (রহঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেন:
এই নসের মাধ্যমে জাহিলিয়্যাতের র্অথ নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার র্বণনা ও তাঁর কুরআনের সংজ্ঞা অনুযায়ী জাহিলিয়্যাত বলা হয়, মানুষের জন্য তৈরী মানুষের বিধানকে। কেননা এটা মানুষ র্কতৃক মানুষের দাসত্ব, আল্লাহ তায়ালার দাসত্বকে র্বজন। তার উলুহিয়্যাতকে প্রত্যখ্যান। এবং প্রত্যাখ্যানের পর তার মোকাবেলায় কতক মানুষের উলুহিয়্যাতকে গ্রহণ। আল্লাহ তায়ালার পরিবর্তে তাদের দাসত্বের সামনে আত্মসর্মপণ।
এই নসের আলোকে বোঝা যায় জাহিলিয়্যাত কোন এক সময়রে নাম নয়। জাহিলিয়্যাত হলো, এক ধরনের উদ্ভাবন ও প্রণয়নের নাম। যা র্বতমানে বিদ্যমান আছ, ভবিষ্যতেও বিদ্যমান থাকবে। যা আসে ইসলামের মোকাবেলায়, যার সাথে থাকে ইসলামের বৈপরীত্য।[ফী-যলিাললি কুরআন, খন্ড:২, পৃষ্ঠা:৩৮৪]
আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্য কারো বিধান মানা, বা আল্লাহর আনুগত্য বাদ দিয়ে অন্য কারো আনুগত্য করা যে শিরক, তা বুঝা যায় নিম্নোক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে। ইয়াহুদী নাসারাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের পাদ্রী ও ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মারিয়ামের পুত্র মসীহকেও, অথচ তাদের প্রতি শুধু এই আদেশ করা হয়েছিল যে তারা শুধু এক মা’বুদের ইবাদত করবে যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি তাদের অংশ স্থির করা হতে পবিত্র’-(১ সূরা তাওবা: ৩১)।
উপরোক্ত আয়াতটি থেকে স্বাভাবিকভাবে একটি ব্যাপার বুঝে আসে না - তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের পাদ্রী ও ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে।’ অথচ তারা তাদেরকে রব বলে বিশ্বাস বা স্বীকার করতো না বা তাদের ইবাদতও করতো না। বরং তারা আল্লাহকেই রব বলে স্বীকার করতো ও তাঁরই ইবাদত করতো।
নিম্নের হাদিস থেকেই বিষয়টি পরিস্কার হবে ইনশা আল্লাহ । হাদীস শরীফে এসেছে ইমাম বুখারী রহ. বর্ণনা করেন: আদী ইবনে হাতমে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি গলায় একটি ক্রুশ ঝুলন্ত অবস্থায় রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এলে তিনি বলেন, হে আদী এই র্মূতিটি তুমি তোমার গলা থেকে ছুঁড়ে ফেল। ফলে আমি তা খুলে ফেললাম, অতঃপর রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে দেখতে পেলাম, তিনি সূরা তাওবা তিলাওয়াত করছেনে: “তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদেরে পাদ্রী ও র্ধম-যাজকদরেকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে । আমি বললাম, আমরা তো তাদের ইবাদত করতাম না। রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আল্লাহ তায়ালা যা হালাল করেছেন তারা তা হারাম করতো আর তোমরাও তা হারাম মানতে এবং আল্লাহ তায়ালা যা হারাম করেছেন তারা তা হালাল করতো আর তোমরাও তাকে হালাল ভাবতে। আমি বললাম, হ্যাঁ এমনটইি। তিনি (ﷺ) বললেন, এটিই তাদের ইবাদত। [তারিখুল কাবীর লিল ইমাম বুখারী ৭ম খন্ড ৪৭১ নং হাদীস; সুনানে তিরমিযি: ৩০৯৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী: ১৭/৯২/২১৮,২১৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী: ২০৩৫০ (সনদ: হাসান সহীহ) অন্য হাদীসে রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘স্রষ্টার অবাধ্য হয়ে কোন সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না।’- তিরমিযি
৫
৪) শিরকে আকবারের ৪র্থ প্রকার হচ্ছে شرك في الأسماء الصفات শিরক ফিল আসমা ওয়াস সিফাহ :
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামের ক্ষেত্রে কাউকে শরীক করা বা আল্লাহর কোন বৈশিষ্টকে মাখলুকের জন্য সাব্যস্ত করা বা মাখলুকের কোন বৈশিষ্টকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোন কিছুই তাঁর (আল্লাহর) অনুরূপ নয়।’ - (সুরা আশ শুরা :১১)।
শিরকের দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে شرك الأصغر শিরকে আসগার (ছোট শিরক):
শিরকের এ প্রকারটি মানুষকে মিল্লাতে ইসলামিয়া থেকে বের করে না। এই শিরক করা অবস্থায় যদি কেউ মৃত্যু বরণ করে তাহলে সে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাধীন থাকবে । আল্লাহ তায়ালা চাইলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন আবার শাস্তিও দিতে পারেন। তবে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকবে না। শিরকে আসগারের অনেকগুলো প্রকার রয়েছে তার মেধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকার উল্লেখ করছি।
১) الرياء রিয়া বা লৌকিকতা : রাসূল (ﷺ) বলেন, قوله صلى االله عليه وسلم : )إن أخوف ما أخاف عليكم الشرك الأصغر، قالوا : يا رسول االله ،وما الشرك الأصغر؟ قال : الرياء( رواه أحمد. ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে সবচেয়ে শিরকে আসগারের ভয় করি। সাহাবায়ে কেরাম রাযি. জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! শিরকে আসগার কী ? তিনি উত্তরে বললেন, রিয়া অর্থাৎ লৌকিকতা।’ -আহমাদ ।
২) الحلف بغير االلهআল হালফু বি গাইরিল্লাহ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করা : রাসূল (ﷺ) বলেন, حديث رسول االله صلى االله عليه وسلم )من حلف بغير االله فقد أشرك ( رواه الترمذي ‘ যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করল, সে কুফরি করল।’ - তিরমিযী। অন্য হাদীসে রাসূল (ﷺ) বলেন, أن النبي صلى االله عليه وسلم قال্র :ألا إن االله ينهاكم أن تحلفوا بآبائكم فمن كان حالفاً
فليحلف باالله أو ليصمت ‘জেনে রাখো! নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং কেউ যদি শপথ করে সে যেন আল্লাহর নামেই শপথ করে। অন্যথায় চুপ থাকে।’ -সাহীহাইন
৩) قول ما شاء االله وشئت কওলু মা শা আল্লাহু ও শি’তা ) ‘আল্লাহ যা চান এবং তুমি যা যাও’ এ কথা :
রাসূল (ﷺ) বলেন ‘এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) কে বলল, ‘আল্লাহ যা চান এবং আপনি যা চান।’ তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘তুমি কি আমাকে আল্লাহর সাথে অংশিদার সাব্যস্ত করছ ? বলো, ‘শুধু আল্লাহ যা চান।’
আবু মুসা আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা এই শিরক থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা কালো পিঁপড়ার ছোট পা থেকেও অস্পষ্ট। কোন একব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, আমরা কিভাবে এর থেকে বেঁচে থাকবো? অথচ এটা পিঁপড়ার ছোট পায়ের চেয়েও অস্পষ্ট। রাসূল (ﷺ) বললেন, বল: ‘ হে আল্লাহ ! আমরা জেনে যে শিরক করি তার থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর না জেনে যে শিরক করছি তার থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ -আহমদ
প্রিয় পাঠক আমরা অনেকেই কি কম বেশী এধরনের শিরকের মধ্যে লিপ্ত নই ? মহান রাব্বুল আ’লামিনের সাথে অংশী স্থাপন করে আমরা তাঁর রহমতের উপযুক্ত হচ্ছি না গজবের ?
চলবে………….
ভাই আজ আমরা সকলেই বিপদগ্রস্থ, গজবে নিপতিত । আর আমাদেরকে এই ভয়াবহ বিপদ/গজব থেকে বাঁচাতে পারেন একমাত্র সর্বময় ক্ষমতার মালিক আমাদের মহান সৃষ্টির্কতা, পালনর্কতা মহান আল্লাহ তা’আলা । আর এই চরম মুছিবাতের দিনে মহান রাব্বুল আ’লামিনের সাহায্য পেতে হলে সবার আগে আহকামুল হাকিমিনের বিদ্রোহ, অবাধ্যতা এবং সকল প্রকার ছোট বড় গুনাহ পরিত্যাগ করতে হবে এবং তাওবা করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে। আর তাওবার প্রথম শর্ত হচ্ছে ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গ যে গুনাহে লিপ্ত সেই গুনাহ থেকে নিজেকে/নিজেদেরক বিচ্ছিন্নকরণ। যেমন ধরা যাক কেউ মদ পান করছে আর বলছে আল্লাহ মাফ করে দাও। এটার মধ্যে আর শয়তানের শয়তানীর মধ্যে কোন র্পাথক্য আছে ? এই গুনাহগারকে প্রথমে মদপান বন্ধ/পরিত্যাগ করতে হবে তারপর নিজ অপকর্মের জন্য লজ্জিত হয়ে অনুতপ্ত হৃদয়ে ভবিষ্যতে আর এধরনের গুনাহ করবে না মর্মে দৃঢ় সংকল্প হয়ে গাফুরুর রাহিমের কাছে কায়োমনোবাক্যে ক্ষমা র্প্রাথনা করতে হবে। এটার নাম হচ্ছে তাওবা।
আর আমরা সবাই জানি যে পাপ/অপরাধ যত বড়/গুরুতর তার সাজাও তত কঠিন এবং এর দ্বারা মালিকের অসন্তুষ্টির সম্ভাবনাও তত বেশী। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাপ/অবাধ্যতা/বিদ্রোহ হচ্ছে শিরক্। আর এই শিরকের ব্যাপারেই মহান রাব্বুল আ’লামিন হাশরের ময়দানেও সবচেয়ে কঠোর থাকবেন। শিরক্ এমন এক জীবানু যা ঈমানকে ধ্বংস করে দেয় ।
الشرك এর শাব্দিক অর্থ হলঃ শরীক করা, অংশিদার সাব্যস্তকরা। পরিভাষায় شركবলা হয়ঃ যে সকল বিষয় আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট সেগুলোতে অন্য কাউকে শরীক করা। সে শরীকানা পুরোপুরিও হতে পারে বা আংশিকও হতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।”
(সুরা লোকমান ১৩)।
‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। (সূরা নিসা ৪৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন : নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। (সূরা মাইদা ৭২)
হাদিসের মধ্যে বর্ণিত হয়েছেঃ “রাসূল (ﷺ) ৩ বার জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে অবগত করবনা ? তারপর তিনি বললেন সবচেয়ে বড় গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সাথে শরীক করা।”
( মুসলিম )
১
মুয়াজ রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (ﷺ) আমাকে ১০টি বিষয় সম্পর্কে উপদেশ দিলেন, তার মধ্য থেকে প্রথম বিষয়টি হলঃ “তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় অথবা জালিয়ে দেয়া হয়’’। (মুসনাদে আহমদ)
শিরক মুলত ২ প্রকার
১) شرك الأكبر শিরকে আকবার (বড় শিরক)
২) شرك الأصغار শিরকে আসগর (ছোট শিরক)
১। شرك الأكبر শিরকে আকবার: তথা বড় শিরক যা ঈমান ভঙ্গের কারণ অর্থাৎ যা মানুষকে মিল্লাতে ইসলামিয়্যা থেকে বের করে দেয়। কেউ যদি এই অপরাধ করে আর তাওবা ছাড়া মৃত্যু বরণ করে তাহলে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। (সূরা নিসা : ৪৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন : নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। (সূরা মাইদা ৭২)
শিরকে আকবার ৪ প্রকার
১) شرك في الربوبية শিরক ফির রুবুবিয়্যাহ
২) شرك في الألوهية শিরক ফিল উলুহিয়্যাহ
৩) شرك في الحكم و الطاعة শিরক ফিল হুকমি ওয়া তাআ’হ
৪) شرك في الأسماء الصفات শিরক ফিল আসমা ওয়াস সিফাহ
১) শিরকে আকবারের ১ম প্রকার হচ্ছে شرك في الربوبية শিরক ফির রুবুবিয়্যাহ :
শিরক ফির রুবুবিয়্যাহ বলা হয় আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে কাউকে শরীক করা। অর্থাৎ সৃষ্টি, মালিকানা, রিযিক দান, জীবন মৃত্যু, সমগ্ররাজ্য নিয়ন্ত্রন ও পরিচালনা করা, সার্বভৌমত্ব, উপকার ও অপকারের ক্ষমতা, বিপদ থেকে পরিত্রান দেয়া ইত্যাদির অধিকার ও কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। এ শরীকানা পুরোপুরিও হতে পারে বা আংশিকও হতে পারে। যেমন:- ফেরাউন আল্লাহর রুবুবিয়্যাতকে পুরোপুরি অস্বীকার করেছিল এবং সে বলেছিল,‘আমি তোমাদের সর্বচ্চো প্রভূ।’–(সুরা নাযিয়া ২৪)। আবার আংশিকভাবে রুবুবিয়্যাতের কোন বৈশিষ্টকে মাখলুকের জন্য সাব্যস্ত করলেও শিরক ফির রুবুবিয়্যাহ ’র অপরাধে অপরাধী হতে হবে। যেমন:- বিপদ থেকে উদ্ধারকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তা’আলা। এখন কেউ যদি এই বিশ্বাস রাখে যে, ওলি আওলিয়া ও পীর বুযুর্গোরাও বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে। তাহলে সেও রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে শিরক করল। আবার সার্বভৌমত্বের মালিক হলেন একমাত্র আল্লাহ। এখন কেউ যদি বিশ্বাস করে সার্বভৌমত্বের মালিক জনগণ। তাহলে সেও রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে শিরক করল। এরকম আরও অসংখ্য শিরক ফির রুবুবিয়্যাহ’র অস্তিত্ত্ব আমাদের সমাজে বিরাজমান।
২
২। শিরকে আকবারের ২য় প্রকার হচ্ছে شرك في الألوهيةশিরক ফিল উলুহিয়্যাহ :
শিরক ফিল উলুহিয়্যাহ বলা হয়- আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্য কাউকে শরীক করা। এই শিরক বিভিন্নভাবে হতে পারে যেমন-
শিরকুদ দোয়া বা আল্লাহ সাথে অন্য উপাস্যকেও ডাকা বা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা। যেমন:- আজকে আমরা দেখি আমাদের সমাজে অনেক মানুষ রয়েছে যারা মাজার ও কবরের কাছে গিয়ে প্রার্থনা করে। আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। কেয়ামতের দিন তারা তোমাদের শিরক অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ আল্লাহর ন্যায় তোমাকে কেউ অবহিত করতে পারবে না।’ - (সুরা ফাতের :১৪) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকবে না, যে তোমার ভাল করবে না মন্দও করবে না। বস্তুতঃ তুমি যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। -(সুরা ইউসুফ: ১০৬) ।
আবার ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করার মাধ্যমেও এই শিরক সংঘঠিত হয়। যেমন:- কোন মাখলুককে সিজদা করা, রুকু করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সেজদা কর, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা নিষ্ঠার সাথে শুধুমাত্র তাঁরই এবাদত কর। -(সুরা হামীম সেজদা: ৩৭)। আজকে দেখা যায়, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় অনেকে পীর ফকীরকে সেজদা করে থাকে। যদি বলা হয়, এদেরকে কেন সেজদা করছেন ? তখন তারা বলে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়। আর মক্কার কাফেররা আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়ই মূর্তির উপাসনা করত। তারা বলতো, ‘আমরা তাদের ইবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।’ –(সুরা যুমার :৩)। সুতরাং আজকে যারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পীর ফরিকদের সেজদা করছে তাদের মাঝে আর মক্কার মুশরীকদের মাঝে কি কোন পার্থক্য আছে ? আল্লাহ তাআলা বলেন, অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইাবাদতে কাউকে শরীক না করে। -(সুরা কাহাফ: ১০৯)
নিয়ত, ইচ্ছা ও সংকল্পের ক্ষেত্রেও এই শিরক সংঘঠিত হয়। অর্থাৎ কোন ইবাদত আল্লাহর জন্য না করে শুধুমাত্র পার্থিব স্বার্থের জন্য করা। আর এই ধরণের শিরক মুনাফিকদের থেকে বেশী প্রকাশ পায়। তারা বাহ্যিক ভাবে ইসলামকে প্রকাশ করে কিন্তু আভ্যন্তরিন ভাবে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,‘আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা তো (মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্র। - (সুরা বাকারা: ১৪)। এছাড়াও অন্যান্যদের থেকেও এধরণের শিরক প্রকাশ পেতে পারে। যেমন, কোন ব্যক্তি দুনিয়ার স্বার্থে ইসলামের কোন কাজ করল। উদাহরণস্বরূপ, কেউ মুসলিম কোন সুন্দরী নারীকে বিয়ে করার জন্য ইসলাম গ্রহণ করল। এদের ব্যপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,‘যে ব্যক্তি পার্থিবজীবন ও তার চাকচিক্যই কামনা করে, হয় আমি তাদের দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না। এরাই হল সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছু নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে; আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হল। -(সুরা হুদ :১৫-১৬)।
৩
শিরকুল মুহাব্বাহ বা ভালোবাসার ক্ষেত্রেও এই শিরকের উদ্ভব হয়। যদি কেউ আল্লাহর চেয়ে দুনিয়া ও দুনিয়ার কোন কিছুকে বেশি ভালোবাসে তাহলে এটাই হল ভালোবাসার ক্ষেত্রে শিরক। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,‘আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। -(সুরা বাকার :১৬৫)
শিরকুল খাওফ বা ভয়ের ক্ষেত্রেও এমন শিরক হতে পারে । অর্থাৎ আল্লাহর চেয়ে অন্য কাউকে তথা গাইরুল্লাহকে বা কোন সৃষ্টিকে বেশী ভয় করলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর যখন তাদের প্রতি জিহাদের নির্দেশ দেওয়া হল , তৎক্ষণাৎ তাদের মধ্যে একদল লোক মানুষকে ভয় করতে আরম্ভ করল, যেমন করে ভয় করা হয় আল্লাহকে। এমন কি তার চেয়েও অধিক ভয়।’ - (সুরা নিসা :৭৭)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন‘এরা যে রয়েছে, এরাই হল শয়তান, এরা নিজেদের বন্ধুদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না। আর তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তবে আমাকে ভয় কর। - (সুরা আল ইমরান :১৮৫)
৩) শিরক ফিল হুকমি ওয়াত তাআ’হ- হুমুক ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে শিরক করা : অর্থাৎ আল্লাহর বিধান না মেনে অন্য কারো বিধান মানা। আল্লাহর আনুগত্য না করে অন্য কারো আনুগত্য করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, সৃষ্টি তার বিধানও তাঁর’ - (সুরা আরাফ ৫৪) । অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বিধান দেওয়ার ক্ষামতা একমাত্র আল্লাহর’- (সুরা ইউসুফ ৪০) ।
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, নিশ্চই শয়তানরা তাদের বন্ধুদের নিকট ওহী প্রেরণ করে যাতে তারা তোমাদের সাথে বির্তক কর।আর যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, নিশ্চিত তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে। [সূরা আনআম: ১২১]
ইবনে কাসীর (রহঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন :
আল্লাহ তায়ালার বাণী - ‘যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে”র্অথাৎ তোমরা যদি আল্লাহর আদেশ ও শরীয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্য কারো কথার দিকে দৃষ্টি দাও এবং সেটিকেই প্রাধান্য দাও তাহলে সেটিই হবে শিরক। [তাফসীরে ইবনে কাছীর, খন্ড:৩, পৃষ্ঠা:৩২৯]
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যারা দাবী করে যে যা আপনার প্রতি অর্বতীণ হয়েছে এবং আপনার র্পূবে যা অর্বতীণ হয়েছে তার উপর তারা ঈমান এনেছে ইহা সত্ত্বওে তারা তাগূতের কাছে বিচার র্প্রাথনার ইচ্ছা পোষণ করছে। অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ ছিল যাতে তারা তাকে (তাগূতকে) অস্বীকার করে । পক্ষান্তরে শয়তান ইচ্ছা করছে তাদেরকে পরিপূর্ণ পথভ্রষ্ট করে ফেলতে। [সূরা-নসিা, আয়াত:৬০]
এ আয়াতটি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এমন ব্যক্তির দাবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে যে দাবী করে আল্লাহ তায়ালা তার রাসূলের (ﷺ) উপর ও র্পূবর্বতী আম্বিয়াদের উপর যা অর্বতীণ করেছেন সে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে অথচ সে বিবদমান বিষয়াদিতে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহকে ছেড়ে ভিন্ন কোন কিছুর কাছে বিচার ফায়সালা চায়।
৪
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, তাদের জন্য এমন কিছু শরীক আছে কি যারা তাদের জন্য দ্বীনের এমন বিধান দিয়েছে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি। [সূরা শুরা: ২১]
‘তারা কি জাহিলিয়্যাতের বিধি-বিধান কামনা করে ? বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর বিধানদানকারী? [সূরা মায়দিাহ: ৫০]
সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ (রহঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেন:
এই নসের মাধ্যমে জাহিলিয়্যাতের র্অথ নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার র্বণনা ও তাঁর কুরআনের সংজ্ঞা অনুযায়ী জাহিলিয়্যাত বলা হয়, মানুষের জন্য তৈরী মানুষের বিধানকে। কেননা এটা মানুষ র্কতৃক মানুষের দাসত্ব, আল্লাহ তায়ালার দাসত্বকে র্বজন। তার উলুহিয়্যাতকে প্রত্যখ্যান। এবং প্রত্যাখ্যানের পর তার মোকাবেলায় কতক মানুষের উলুহিয়্যাতকে গ্রহণ। আল্লাহ তায়ালার পরিবর্তে তাদের দাসত্বের সামনে আত্মসর্মপণ।
এই নসের আলোকে বোঝা যায় জাহিলিয়্যাত কোন এক সময়রে নাম নয়। জাহিলিয়্যাত হলো, এক ধরনের উদ্ভাবন ও প্রণয়নের নাম। যা র্বতমানে বিদ্যমান আছ, ভবিষ্যতেও বিদ্যমান থাকবে। যা আসে ইসলামের মোকাবেলায়, যার সাথে থাকে ইসলামের বৈপরীত্য।[ফী-যলিাললি কুরআন, খন্ড:২, পৃষ্ঠা:৩৮৪]
আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্য কারো বিধান মানা, বা আল্লাহর আনুগত্য বাদ দিয়ে অন্য কারো আনুগত্য করা যে শিরক, তা বুঝা যায় নিম্নোক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে। ইয়াহুদী নাসারাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের পাদ্রী ও ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মারিয়ামের পুত্র মসীহকেও, অথচ তাদের প্রতি শুধু এই আদেশ করা হয়েছিল যে তারা শুধু এক মা’বুদের ইবাদত করবে যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি তাদের অংশ স্থির করা হতে পবিত্র’-(১ সূরা তাওবা: ৩১)।
উপরোক্ত আয়াতটি থেকে স্বাভাবিকভাবে একটি ব্যাপার বুঝে আসে না - তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের পাদ্রী ও ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে।’ অথচ তারা তাদেরকে রব বলে বিশ্বাস বা স্বীকার করতো না বা তাদের ইবাদতও করতো না। বরং তারা আল্লাহকেই রব বলে স্বীকার করতো ও তাঁরই ইবাদত করতো।
নিম্নের হাদিস থেকেই বিষয়টি পরিস্কার হবে ইনশা আল্লাহ । হাদীস শরীফে এসেছে ইমাম বুখারী রহ. বর্ণনা করেন: আদী ইবনে হাতমে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি গলায় একটি ক্রুশ ঝুলন্ত অবস্থায় রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এলে তিনি বলেন, হে আদী এই র্মূতিটি তুমি তোমার গলা থেকে ছুঁড়ে ফেল। ফলে আমি তা খুলে ফেললাম, অতঃপর রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে দেখতে পেলাম, তিনি সূরা তাওবা তিলাওয়াত করছেনে: “তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদেরে পাদ্রী ও র্ধম-যাজকদরেকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে । আমি বললাম, আমরা তো তাদের ইবাদত করতাম না। রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আল্লাহ তায়ালা যা হালাল করেছেন তারা তা হারাম করতো আর তোমরাও তা হারাম মানতে এবং আল্লাহ তায়ালা যা হারাম করেছেন তারা তা হালাল করতো আর তোমরাও তাকে হালাল ভাবতে। আমি বললাম, হ্যাঁ এমনটইি। তিনি (ﷺ) বললেন, এটিই তাদের ইবাদত। [তারিখুল কাবীর লিল ইমাম বুখারী ৭ম খন্ড ৪৭১ নং হাদীস; সুনানে তিরমিযি: ৩০৯৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী: ১৭/৯২/২১৮,২১৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী: ২০৩৫০ (সনদ: হাসান সহীহ) অন্য হাদীসে রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘স্রষ্টার অবাধ্য হয়ে কোন সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না।’- তিরমিযি
৫
৪) শিরকে আকবারের ৪র্থ প্রকার হচ্ছে شرك في الأسماء الصفات শিরক ফিল আসমা ওয়াস সিফাহ :
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামের ক্ষেত্রে কাউকে শরীক করা বা আল্লাহর কোন বৈশিষ্টকে মাখলুকের জন্য সাব্যস্ত করা বা মাখলুকের কোন বৈশিষ্টকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোন কিছুই তাঁর (আল্লাহর) অনুরূপ নয়।’ - (সুরা আশ শুরা :১১)।
শিরকের দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে شرك الأصغر শিরকে আসগার (ছোট শিরক):
শিরকের এ প্রকারটি মানুষকে মিল্লাতে ইসলামিয়া থেকে বের করে না। এই শিরক করা অবস্থায় যদি কেউ মৃত্যু বরণ করে তাহলে সে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাধীন থাকবে । আল্লাহ তায়ালা চাইলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন আবার শাস্তিও দিতে পারেন। তবে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকবে না। শিরকে আসগারের অনেকগুলো প্রকার রয়েছে তার মেধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকার উল্লেখ করছি।
১) الرياء রিয়া বা লৌকিকতা : রাসূল (ﷺ) বলেন, قوله صلى االله عليه وسلم : )إن أخوف ما أخاف عليكم الشرك الأصغر، قالوا : يا رسول االله ،وما الشرك الأصغر؟ قال : الرياء( رواه أحمد. ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে সবচেয়ে শিরকে আসগারের ভয় করি। সাহাবায়ে কেরাম রাযি. জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! শিরকে আসগার কী ? তিনি উত্তরে বললেন, রিয়া অর্থাৎ লৌকিকতা।’ -আহমাদ ।
২) الحلف بغير االلهআল হালফু বি গাইরিল্লাহ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করা : রাসূল (ﷺ) বলেন, حديث رسول االله صلى االله عليه وسلم )من حلف بغير االله فقد أشرك ( رواه الترمذي ‘ যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করল, সে কুফরি করল।’ - তিরমিযী। অন্য হাদীসে রাসূল (ﷺ) বলেন, أن النبي صلى االله عليه وسلم قال্র :ألا إن االله ينهاكم أن تحلفوا بآبائكم فمن كان حالفاً
فليحلف باالله أو ليصمت ‘জেনে রাখো! নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তোমাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং কেউ যদি শপথ করে সে যেন আল্লাহর নামেই শপথ করে। অন্যথায় চুপ থাকে।’ -সাহীহাইন
৩) قول ما شاء االله وشئت কওলু মা শা আল্লাহু ও শি’তা ) ‘আল্লাহ যা চান এবং তুমি যা যাও’ এ কথা :
রাসূল (ﷺ) বলেন ‘এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) কে বলল, ‘আল্লাহ যা চান এবং আপনি যা চান।’ তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘তুমি কি আমাকে আল্লাহর সাথে অংশিদার সাব্যস্ত করছ ? বলো, ‘শুধু আল্লাহ যা চান।’
আবু মুসা আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা এই শিরক থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা কালো পিঁপড়ার ছোট পা থেকেও অস্পষ্ট। কোন একব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, আমরা কিভাবে এর থেকে বেঁচে থাকবো? অথচ এটা পিঁপড়ার ছোট পায়ের চেয়েও অস্পষ্ট। রাসূল (ﷺ) বললেন, বল: ‘ হে আল্লাহ ! আমরা জেনে যে শিরক করি তার থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর না জেনে যে শিরক করছি তার থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ -আহমদ
প্রিয় পাঠক আমরা অনেকেই কি কম বেশী এধরনের শিরকের মধ্যে লিপ্ত নই ? মহান রাব্বুল আ’লামিনের সাথে অংশী স্থাপন করে আমরা তাঁর রহমতের উপযুক্ত হচ্ছি না গজবের ?
চলবে………….
Comment