Announcement

Collapse
No announcement yet.

Herman ও Chomsky-এর “প্রোপাগান্ডা মডেল” [Part 4]

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • Herman ও Chomsky-এর “প্রোপাগান্ডা মডেল” [Part 4]

    Herman ও Chomsky-এর “প্রোপাগান্ডা মডেল” [Part 4]
    Ideology (মতাদর্শ): Herman and Chomsky (EH/NC) তাদের প্রোপাগান্ডা মডেলের ধারণাটি পাবলিশ করেন 1988 খৃষ্টাব্দে, সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানের মাটিতে মার খেয়ে তার সাম্রাজ্যের ক্রান্তিকালে এসে পৌঁছেছে। লেখকদ্বয়ের মতে, তৎকালীন সময়ে মিডিয়ার সর্বশেষ ফিল্টারটি ছিল কমিউনিজম (Communism) বিরোধী মতবাদ। এই মতবাদ এক অভিন্ন ‘শত্রু’-র বিরুদ্ধে জনগণকে পরিচালিত করতে সহায়ক ছিল। 1991 খৃষ্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর এই মতবাদটি আর অবশিষ্ট রইল না, ফলে অভিন্ন শত্রুর ধারণার সে শূন্যস্থানটি পূরণের লক্ষ্যে তারা নিয়ে আসল ‘মুক্ত বাজার (Free Market) মতবাদ’, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” (Mullen, 2009).

    অর্থাৎ, যে কোন মতবাদ যা অভিজাত শ্রেণীর (elite class) স্বার্থের অনুকুলে সেই মতবাদের পক্ষালম্বন, এবং যে মতবাদ অভিজাত শ্রেণীর স্বার্থের বিপক্ষে যায়, তার বিরোধিতাই মিডিয়ার চূড়ান্ত ফিল্টারের ভূমিকা পালন করবে। “এলিট” শব্দটির মর্মার্থ সুস্পষ্টভাবে নিরূপণ করা বেশ কঠিন। বর্তমান পৃথিবীতে এলিট শব্দটিকে ক্ষমতা, অর্থ, পদ মর্যাদা, কতৃত্ব আর প্রতিপত্তির মত বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট করা হয়। এলিট শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে মিডিয়া সচরাচর কোন আপোষ করে না। প্রকৃতপক্ষে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ব্যাপারে এলিট শ্রেণীর ঐক্যমতই মিডিয়ার বৈধতা প্রদানের ছাড়পত্র। মিডিয়া সর্বশক্তি নিয়ে এলিটদের স্বার্থবিরোধী মতবাদের বিরোধিতা করে আসবে, তা সে মতবাদ যতই যৌক্তিক হোক না কেন। পুঁজিবাদী মিডিয়া স্বত্বাধিকারীগণ পুজিবাদকে বৈধতা প্রদান করতে মিডিয়া সিস্টেমকে এমন ছাঁচে গড়ে নিয়েছেন যেন এটি তাদের স্বার্থবিরোধী যে কোন মতাদর্শকে নেতিবাচক ও গুরুত্বহীন হিসেবে প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়। যখন মিডিয়া এই শ্রেণীর মতবাদ বিরোধী প্রচারণা চালায়, তখন সেই মতবাদ কতৃক সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার ব্যাপারে প্রমাণ করার দাবী তারা হয় অগ্রাহ্য করে, নতুবা কাল্পনিক প্রমাণ উপস্থাপন করে সেটি বাস্তব প্রমাণে উঠেপড়ে লেগে যায়। মিডিয়া তখন তাদের পছন্দনীয় ব্যক্তিদের ‘বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে জাহির করে। দল/দেশ ত্যাগী/ বহিষ্কৃত/নির্বাসিত, সুবিধাবাদী ও গুপ্তচরেরা তখন বিশেষজ্ঞ সেজে কেন্দ্রীয় রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হয়, পরবর্তীতে উক্ত বিশেষজ্ঞদের অযোগ্যতা প্রকাশিত হবার পরও তারা সগর্বে স্বীয় পদমর্যাদায় বহাল থাকে।

    মিডিয়া যেহেতু কর্পোরেট সিস্টেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অস্বীকার করে, তাই ক্ষুদ্র পরিসরে রাষ্ট্রের এলিটদের কাছে গ্রহণীয় মতাদর্শের সীমার ভেতরেই অবস্থানরত (Freedom of Speech-এর উদাহরণস্বরূপ) কিছু বিকল্প সমাধান পেশ করা হয়। যেসব সাংবাদিক ও সংবাদের উৎস এই ফ্রেমওয়ার্কের নির্ধারিত সীমার বাইরে কাজ করে, তাদেরকে মৌলবাদী (Radicals) হিসেবে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। লিবারেল মিডিয়া সংস্থাসমূহ সমালোচনাকারী পাঠকদের দাবী পূরণ করতে অল্প সংখ্যক সমালোচক ব্যক্তি ও সাংবাদিকদেরকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। যদিও ঐ সকল ব্যক্তি ও সাংবাদিকদের পরিবেশিত তথ্যাদি (রাষ্ট্র ও সমাজ নিয়ে) উদ্বিগ্ন নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবহিত রাখতে মৌলিক ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে, কিন্তু এই সকল সাংবাদিকগণ সংবাদ জগতের অত্যন্ত নগন্য একটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের এই স্রোতের বিপরীতে অবস্থান হয়তোবা তাদেরকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়, কিন্তু তাদের সংখ্যালঘিষ্ঠতা প্রমাণ করে যে, কর্পোরেট বান্ধব মিডিয়া সিস্টেমে তাদের অবস্থান মূলত পূর্ব-পরিকল্পিত নিস্ফল অর্থহীন কর্মকাণ্ড, এলিট পন্থী মিডিয়া সজ্ঞানে এইটুকু ছাড়ের অনুমোদন দেয় (Pedro-Carañana et al., 2018).

    এই ধরণের নাটকীয়তার মাধ্যমে কর্পোরেট মিডিয়া গণতান্ত্রিক সমাজের বহুমুখিতা প্রমাণে প্রয়োজনীয় এক প্রকার বিভ্রমের সৃষ্টি করে। কয়েক ফোঁটা বিকল্প চিন্তা সুবিশাল এলিটদের সেবাদাস সংবাদ মাধ্যমের সৃষ্ট পৃথিবীতে কর্পূরের ন্যায় উড়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমান মিডিয়া প্রগতিশীল Neo-Liberal আইডিওলজির প্রভাবের আওতাধীন হয়ে কাজ করে। এই মিডিয়া সজ্ঞানে বা অজ্ঞাতভাবে নিজেই নিজের বৈধতা প্রদান করে, অতঃপর স্বীয় আত্মতৃপ্তির কথা সগর্বে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করে। প্রতিষ্ঠিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূলধারার সমালোচকরা যে ধরণের সমালোচনার অনুশীলন করেন, Chomsky-র ভাষায় তা হল “Feigned Dissent” বা বিরোধিতার ছল; যদিও এগুলো দৃশ্যত ক্ষমতার দোষগ্রাহী, কিন্তু আদতে তা ক্ষমতার শক্তিবৃদ্ধি করে (Chomsky, 1988/2004).

    EH বলেন, মেইনস্ট্রীম মিডিয়াগুলো জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সরবরাহে ঐদাসীন্য প্রদর্শন করে। এসব সংবাদ মাধ্যমগুলো বাস্তব সমস্যা নিয়ে কাজ করার চাইতে বরং হাস্যকর ও বিনোদনমূলক সংবাদ প্রদানে বেশি সফল বলা চলে (Pedro-Carañana et al., 2018). এলিটগণ যে সকল বাস্তব সমস্যার কথা উচ্চারণে প্রস্তুত নয়, সাধারণ মানুষের দৃষ্টি সে সকল সমস্যা থেকে সরিয়ে অন্য কোন ইস্যু বা লক্ষ্যের দিকে সরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চালায়।

    বাংলাদেশে মিডিয়ার এই সর্বশেষ ফিল্টারটি যে কাল্পনিক উগ্রবাদী মতাদর্শকে টার্গেট করে ব্যবহৃত হয়, সেটি হল “মৌলবাদ”। এর আভিধানিক অর্থ- মূলের দিকে ফিরে যাওয়া। যারা বঙ্গীয় হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির ব্লেন্ডিং-এ সৃষ্ট উদ্ভট বাঙালি সংস্কৃতি ত্যাগ করে ইসলামের দিকে ফিরে যায়, তাদেরকে বলা হয় মৌলবাদী। মিডিয়া ইসলামের মৌলিক শিক্ষাকে বাঙালিত্বের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে এক অভিনব ন্যারেটিভ সৃষ্টি করেছে। তাদের ভাষ্য, ইসলামের মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করা মানে 1400 বছর পিছিয়ে যাওয়া, তাই মৌলবাদ একটি ঘৃণিত কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের বোরকা, ছেলেদের দাড়ি, টাখনুর উপর জামা মানেই জঙ্গি বলে সন্দেহ করার ট্রেন্ড বেশ ভালোভাবেই চালানো হয়েছিল, যেখানে আবার নেতৃত্ব দিয়েছিল একটি উগ্র ছাত্র সংগঠন। জঙ্গিবাদের ধোঁয়া তুলে বহু সাধারণ ছাত্রদের জীবন যারা অপবাদ দিয়ে নষ্ট করেছে। মাঝে বেশ কয়েক বছর দেশীয় ইসলাম বিদ্বেষী কাফির-মুরতাদগুলো হীরক রাজার দেশের স্বাধীনতা পেয়ে তরুণ সমাজকে নষ্ট করার পায়তারা করছিল। পরবর্তীতে মুসলিমদের নবজাগরণে বাঙালি, নাস্তিক, ইসলাম বিদ্বেষী সকলের বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ মাঠে মারা গেছে। বর্তমানে “ইসলাম প্রেম মানেই পাকিস্তান প্রেম, তাই মৌলবাদী মুসলিমরা সব নব্য রাজাকার”, এই গাঁজাখুরি ন্যারেটিভ বেচে খাওয়া বাঙালি দেউলিয়া সেকুলাররা আর কতদিন কানা, খোঁড়া যুক্তি নিয়ে বিশুদ্ধ ইসলাম চর্চাকে ট্যাকল দিতে পারে, মুসলিমরা সেটি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে।

    সর্বোপরি, মূলত এই পাঁচটি ফিল্টার মিডিয়ার “সংবাদ” বাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে সংক্ষিপ্ত ও সঙ্কীর্ণ করে তোলে এবং কোন ধরণের সংবাদ ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হবার যোগ্য ও তীব্র প্রচারণা পাবার উপযোগী- সেটি নির্ধারণ করে (Herman & Chomsky, 1988/2002, p. 31)
    ______________________________________
    The End.
Working...
X