الحمد لله وحده ، و الصلاة و السلام على من لا نبي بعده ، أما بعد
হে ইনসান! পালনকর্তা পর্যন্ত পৌছুতে তোমাকে প্রচুর কষ্ট স্বীকার করতে হবে, তবেই তার সাক্ষাৎ লাভ ঘটবে। অতএব, তখন যার আমলনামা ডানহাতে দেওয়া হবে, তার হিসাব-নিকাশ হবে সহজ এবং সে প্রফুল্লচিত্তে স্বীয় পরিবারের নিকটে ফিরে যাবে। আর যাকে আমলনামা দেওয়া হবে পেছনদিক থেকে, সে তখনই মরণ ডাকবে কিন্তু প্রবেশ করবে আগুনে। ইতঃপূর্বে দুনিয়াতে সে নিজ পরিবারে খুবই সুখী ছিল। তার বিশ্বাস ছিল যে, তাকে আর ফিরে আসতে হবে না। কেন নয়, অবশ্যই! পালনকর্তা তো তাকে সরাসরি দেখতেন। অতএব, আমি শপথ করছি সান্ধকালিন আভার, এবং রাতের ও তাতে যার সমাহার ঘটে এবং কসম পূর্ণিমার চাঁদের, নিশ্চয়ই সত্যই তোমরা এক সিঁড়ি থেকে আারেক সিঁড়িতে আরোহন করবে।(১)
অতপর যেদিন খটখট করবে, থরথর কাঁপবে, ঘটনা ঘটবে, তখন সকলেই জেনে নিবে, সে কী অগ্রে প্রেরণ করেছে আর কী পশ্চাতে ফেলে এসেছে। যেদিন আকাশ হবে গলিত তাম্রের ন্যায়। পর্বতমালা পরিণত হবে রঙিন পশমে। বন্ধু বন্ধুর খবর নেবে না। সবাই শুধু একে অপরের প্রতি চেয়ে রইবে। অপরাধীরা চাইবে, আজকের আযাব থেকে বাঁচতে বিনিময়স্বরূপ দিয়ে দিতে নিজের সন্তানকে, পত্নী ও ভ্রাতাকে, আপন গোত্রকে, যার কাছে তারা আশ্রয় নিত, এমনকি দুনিয়ার সবকিছুকে দিয়ে, যা তাকে বাঁচাবে। এটা কেমনে সম্ভব! এ এক লেলিহান অগ্নি, যা চামড়া তুলে ফেলবে। যারা দুনিয়াতে হককে পিট দেখিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, ধন সঞ্চয় করেছে ও দান করে নি, আগুন তাদেরকে দাওয়াত দেবে, আস! (২)
ঘটনা কখন ঘটবে? যখন শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে, মাত্র একটি ফুঁৎকার। এবং ভূমি ও পর্বতমালা শূন্যে উত্তোলন করা হবে, অতপর তছনছ করে দেওয়া হবে। তখনই ঘটবে ঘটনা। সেদিন আকাশ টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়বে। ফেরেশতাকুল তার চারদিকে অবস্থান নেবে, আর তখন মাথায় আপনার পালনকর্তার আরশ বহন করবে আটজন ফেরেশতা। (৩)
সেদিন তোমাদের সকলকেই উপস্থিত হতে হবে, কোনো অন্তরায় তোমাদের আড়াল করবে না। অতঃপর তখন যার আমলনামা ডানহাতে আসবে, সে বলে উঠবে, আস আস, আমার এই আমলনামা তোমরাও পড়ে নাও! আমার তো নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। তো সে অনেক সুখ-আনন্দে দিন কাটাবে। সু-উচ্চ জান্নাতে, যার ফল-ফ্রুট নিকটে ঝুলে থাকবে। বলা হবে, ঐ যে বিগতদিনে আমল করেছিলে, তার বিনিময়ে এখন খাও ও পান কর একদম মন ভরে। আর যার আমলনামা আসবে বামহাতে, সে বলে উঠবে, হায় আফসুস! আমাকে যদি আমলনামাটা দেওয়াই না হতো! যদি না জানতাম, হিসাবে কী এসেছে! আহ আফসুস! মরণ তো হয়ে গেছে! টাকা-পয়সাগুলোও কোনো কাজে আসে নি! ক্ষমতাও নিঃশেষ হয়ে গেছে। এই, একে ধর এবং গর্দানে বেড়ী পড়াও। অতঃপর ঢুকিয়ে দাও দোযখে এবং সত্তরগজের সেই বেড়ীতে তাকে পেচিয়ে ফেল। এই বেটা মহান আল্লাহকে বিশ্বাস করতো না। এবং অনাথদের অন্যদানে উদ্বুদ্ধ করতো না। অতএব, টগবগানো পানি ছাড়া এখানে তার আর কিছু নাই। এবং পুঁজ ছাড়া তার আর কোনো আহার নেই। পাপিষ্ঠরা এটাই ভক্ষণ করবে। (৪)
অতঃপর তোমরা বিভক্ত হয়ে পড়বে তিনদলে। তো ডানপার্শবাসীরা, কত সৌভাগ্যবান তারা! আর বামপার্শবাসীরা, কত দুর্ভাগা তারা! অগ্রবর্তীরা তো সবার আগেই! তারাই সবচে' নৈকট্যশীল। তাদের বসবাস নেয়ামতপূর্ণ উদ্যানে। তাদের বিশাল একদল পূর্ববর্তীদের এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের। এরা স্বর্ণখচিত সিংহাসনে, হেলান দিয়ে সামনাসামনি বসবে। চিরকুমার কিশোরররা তাদের ঘুরেফিরে পরিবেশন করবে, গ্লাস-জগ আর সুরাভর্তি পানপাত্র। তা খেয়ে না হবে মাথাব্যথা আর না হবে মাতাল। আরো পরিবেশন করবে রুচিসম্মত ফল-মূল এবং উড়ন্ত পক্ষির গোশত ইচ্ছেমত। তথায় রয়েছে ডাগর চোখের পরী। যেন সুরক্ষিত মুক্তা। তথায় তারা না শ্রবণ করবে অসার কথাবার্তা আর না পাপের কথা। শুধু শুনবে সালাম আর সালাম। আর ডানপন্থীরা, ইশ! কত সৌভাগ্যবান তারা! তাদের বসবাস হবে কাঁটাবিহীন বরই গাছের নিচে, আর কাদি কাদি কলার সারিতে, এবং বিস্তৃত ছায়ারাজ্যে, আর প্রবাহমান জলাধারে এবং অনেক ফলফলাদির মাঝে, যার কোনো শেষ নেই ও নিষেধও নেই, এবং উচু উচু শয্যায়। নিশ্চই আমি তাদের সৃষ্টি করেছি এক আশ্চর্যরকমভাবে। এরপর তাদের চিরকুমারী রেখে দিয়েছি। কামিনী, সমবয়স্কা। ডানপার্শদের জন্যে। তারা একদল পূর্ববর্তীদের এবং অন্যদল পরবর্তীদের। আর বামপন্থীরা, হায়, কত দুর্ভাগা তারা! তাদের বসবাস হবে অগ্নি ও টগবগানো পানিতে এবং ধুম্রকুন্জের ছায়ায়, যা না শীতল, আর না আরামদায়ক। (৫)
জান্নাতিগণ জাহান্নামিদের ডাক দিয়ে বলবে, পালনকর্তা আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা তো আমরা সত্য পেলাম, তো তোমরাও কি তার ওয়াদা সত্য পেয়েছ? তারা বলবে, হ্যাঁ! তখন একজন ঘোষক এই ঘোষনা করবে যে, অবিচারকারীদের উপর আল্লাহর লানত, যারা আল্লাহর পথে বাঁধা সৃষ্টি করত এবং তাতে বক্রতা খুঁজে বেড়াত। আর তারাই ছিল পরকালে অবিশ্বাসী। (৬)
উভয়ের মাঝে থাকবে প্রাচীর। এদিকে আরাফে কিছু লোকের অবস্থান হবে, যারা উভয় ফরীককে আলামত দেখে চিনে ফেলবে। তখন তারা বেহেশতিদের আওয়াজ দিয়ে বলবে যে, এই! শান্তি পড়ুক তোমাদের উপর। তারা জান্নাত পায় নি, কিন্তু খুব চাই তাতে ঢুকতে। অতপর যখন ঘুরে দোযখীদের চোখে পড়বে, বলে উঠবে, আয় আল্লাহ! আমাদেরক এ জালেম সম্প্রদায়ের সাথী করো না! আ'রাফবাসীরা তথাকার কিছু লোককে চিহ্নিত করে তাদের ডাক দিয়ে বলবে, তোমাদের সঞ্চয় আর ঔদ্যত্ব তো কোনো কাজেই আসল না। এদের নিয়েই তো বলতে না যে, আল্লাহ তাদের রহমত করবেন না? না, হে জান্নাত বাসীরা, দাখিল হও জান্নাতে, তোমাদের কোনো ভয় নেই আর নেই কোনো চিন্তা! অতঃপর জাহান্নামীরা জান্নাতীদের চিৎকার দিয়ে বলবে, আমাদের উপর একটু পানি ঢেলে দাও না বা আল্লাহপ্রদত্ব অন্যকিছু! তারা বলবে, এই পানীয় ও খাবার আজ আল্লাহ কাফেরদের জন্য চিরতরে হারাম করে দিয়েছেন। যারা স্বীয় দ্বীনকে খেল-তামাশার বস্তু বানিয়েছিল এবং পার্থিব জগত তাদের প্রতারিত করেছিল। আল্লাহ বলবেন, তা তো! তারা যেমন অদ্য উপস্থিতি ভুলে থাকত ও আমার আয়াতসমূহ ছুঁড়ে ফেলত, তাই আজ আমিও তাদের ভুলে যাবো। (৭)
অতঃপর জান্নাতিরা একে অপরের সামনাসামনি হয়ে আলাপে রত হবে। এক জান্নাতি বলে উঠবে, আমার এক বন্ধু ছিল। সে বলত, আচ্ছা, তুইও কি বিশ্বাস করিস যে, আমরা মরে মৃত্তিকা ও হাড়ে পরিণত হয়ে গেলেও আমাদের হিসাব হবে? আল্লাহ জান্নাতিকে বলবেন, তুমি কি তোমার সেই বন্ধুকে উঁকি দিয়ে দেখতে চাও। অতঃপর সে উঁকি মেরে দেখবে যে, তাঁর বন্ধু জাহান্নামের একদম মাঝখানে পড়ে আছে। তখন সে বলে উঠবে, আল্লাহর কসম! তুই তো আমাকে ধ্বংস করেই দিচ্ছিলি! পালনকর্তার অনুগ্রহ না হলে তো আজ আমাকেও গ্রেফতার হতে হতো। উহ! আমাদের কি আর মরণ হবে না! সেই প্রথম মৃত্যু ছাড়া এবং আর তাহলে কেউ আমাদের শাস্তি দেবে না। নিশ্চই এইটাই মহাসাফল্য। এমন সাফল্যের জন্যই পরিশ্রমীদের পরিশ্রম করা উচিত। (৮)
এটাই কি উত্তম আপ্যায়ন না কি যাক্কুম বৃক্ষ? নিশ্চই আমি একে জালেমদের জন্যে ফিতনা বানিয়েছি। এ এক বৃক্ষ, যা জাহান্নামের গোড়ায় উৎপন্ন হয়। তার গুচ্ছটা যেন শয়তানের মাথা। এরা তো নিশ্চই এটাই ভক্ষণ করবে এবং এ দিয়েই উদর ভরবে। তদুপরি এর উপর দেওয়া হবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। অতঃপর সবাইকে পথ ধরিয়ে দেওয়া হবে আগুনের। (৯)
অতএব, যে সীমালঙ্ঘন করবে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেবে, জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা। তবে যে পালনকর্তার সমীপে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করবে এবং নিজ মনকে অবৈধ কামনা-বাসনা থেকে নিবৃত রাখবে, তো জান্নাতই হবে তাঁর ঠিকানা। (১০)যারা অবিশ্বাস করেছে, তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে ভয়ানক আযাব। আর যারা বিশ্বাস করে সৎকর্ম করেছে, তাঁদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা আর বিরাট পুরস্কার। (১১)যারা বিশ্বাস করে সৎকর্ম করেছে, এমন লোকদের জন্যে রয়েছে বসবাসের জান্নাতসমূহ। এটা তাঁদের কৃত আমলের বিনিময়ে মেহমানদারী। তবে যারা পাপাচার করেছে, তাদের আবাসস্থল তো আগুন! যখনই তারা সেই অগ্নি থেকে বের হতে চাইবে, তখন ঠেলে সেখানেই ফিরিয়ে দেয়া হবে আর বলা হবে, নাও আগুনের মজা! একেই তো মিথ্যা বলতে না! (১২)
অতএব, ভেবে দেখ, তুমি কোন পথে হাঁটবে? শীতল ছায়ারাজ্যে না লেলিহান অগ্নিতে? ফল-ফ্রুটের বাগানে না সাপ-বিচ্ছুর গর্তে? হে মানবকুল, নিশ্চই আল্লাহর ওয়াদা সত্য, তাই দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদের প্রতারিত না করে। আরও প্রবঞ্চিত না করে প্রবঞ্চক শয়তানও। নিশ্চই শয়তান তোমাদের বড় শত্রু, অতএব তাকে শত্রু হিসেবেই রাখ। সে তো তার সাঙ্গপাঙ্গদের আহ্বান করে, যেন সবাই মিলে জাহান্নামী হয়। (১৩)
হে মানুষ, কিসে তোমাকে মহামহিম পালনকর্তা থেকে বিভ্রান্ত করল? যিনি তোমাকে সৃজন করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং করেছেন সুষম। আর স্বীয় পছন্দের আকৃতিতে তোমাকে আকৃতি দিয়েছেন। (১৪)হ্যাঁ, কেউ জানে না, পরকালে তাঁর জন্যে নয়নজোড়ানো কী কী নেয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এটা তাঁদের কর্মেরই প্রতিদান। (১৫)
নিশ্চই এ দুনিয়ার জীবনই শেষ নয়। সবাইকে একদিন মৃত্যুর স্বাদটা আস্বাদন করতে হবে। তোমাদের পূর্ণ প্রতিদান তো পাবে কিয়ামত দিবসে। তো যাকে অগ্নিমুক্ত রেখে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হবে, সেই তো সফল। আর দুনিয়ার জীবন, ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়। (১৬)(ঈষৎ বর্ধিত, পরিমার্জিত। ভুলত্রুটি জানানোর অনুরোধ রইল)
——————————————————
তথ্যসূত্র : আল কুরআনুল কারীম
১) ইনশিকাক
২)মাআরিজ
৩)হা-ককাহ
৪)হা-ককাহ
৫)ওয়াকেআহ
৬)আ'রাফ
৭)আ'রাফ
৮)সাফফাত
৯)সাফফাত
১০)নাযিআত
১১)ফাতির
১২)সেজদাহ
১৩)ফাতির
১৪)ইনফিতার
১৫)সেজদাহ
১৬)আলে ইমরান
Comment