★ এগুলো হিকমাহ নয় কি? ★
اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّکَ بِالۡحِکۡمَۃِ وَ الۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ وَ جَادِلۡہُمۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ ؕ اِنَّ رَبَّکَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِمَنۡ ضَلَّ عَنۡ سَبِیۡلِہٖ وَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُہۡتَدِیۡنَ ﴿۱۲۵﴾
তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন।
প্রশ্ন ঃ- (دعوة) এর শাব্দিক অর্থ কি?
উত্তর ঃ- (دعوة) এর শাব্দিক অর্থ ডাকা, আমন্ত্রণ জানানো, আহবান করা।
প্রশ্ন ঃ- নবীগণের সর্বপ্রথম কর্তব্য কি?
উত্তর ঃ- নবীগণের সর্বপ্রথম কর্তব্য হচ্ছে মানবজাতিকে আল্লাহর দিকে আহবান করা। এরপর নবী ও রাসূলগণের সমস্ত শিক্ষা হচ্ছে এ দাওয়াতেরই ব্যাখ্যা।
প্রশ্ন ঃ- কুরআনুল কারীম হতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশেষ কোন পদবী বর্ণণা করা যাবে কি?
উত্তর ঃ-হ্যাঁ! কুরআনুল কারীমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশেষ পদবী হচ্ছে- আল্লাহর দিকে আহবানকারী হওয়া।
এক আয়াতে এ ব্যাপারে বর্ণিত আছে
(وَّدَاعِيًا اِلَى اللّٰهِ بِاِذْنِهٖ وَسِرَاجًا مُّنِيْرًا)
এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী [১] ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে [২]।
[আল-আহযাবঃ ৪৬]
এবং অন্য এক আয়াতে আরো বর্ণিত আছে
(يٰقَوْمَنَآ اَجِيْبُوْا دَاعِيَ اللّٰهِ)
‘হে আমাদের সম্প্রদায়! আল্লাহর দিকে আহবানকারীর প্রতি সাড়া দাও । [আল-আহুকাফঃ ৩১]
প্রশ্ন ঃ- এ ক্ষেত্রে উম্মতের জন্য করণীয় কিছু আছে কি?
উত্তর ঃ- হ্যাঁ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদাংক অনুসরণ করে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া উম্মতের উপরও শুধু করণীয় নয় বরং ফরয।
কুরআনুল কারীমে এ সম্বন্ধে বর্ণিত আছে
(وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ اُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ اِلَى الْخَيْرِ وَيَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ)
অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে একটি দল এমন থাকা উচিত, যারা মানুষকে কল্যাণের প্রতি দাওয়াত দেবে (অর্থাৎ) সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজের নিষেধ করবে।" [আলে-ইমরানঃ ১০৪]
অন্য আয়াতে আছে-
(وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَآ اِلَى اللّٰهِ) -
অর্থাৎ "কথা-বার্তার দিক দিয়ে সে ব্যক্তির চাইতে উত্তম কে হবে, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়?” [ফুসসিলাতঃ ৩৩]
***
প্রশ্ন ঃ- হেকমত শব্দের অর্থ কি?
উত্তর ঃ- হেকমত’ শব্দটি কুরআনুল কারীমে অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এস্থলে কোন কোন মুফাসসির হেকমতের অর্থ নিয়েছেন কুরআন, কেউ কেউ বলেছেন, কুরআন ও সুন্নাহ। [তাবারী]
★ আবার কেউ কেউ অকাট্য যুক্তি-প্রমাণ স্থির করেছেন। [ফাতহুল কাদীর]
★আবার কোন কোন মুফাসসিরের মতে বিশুদ্ধ ও মজবুত সহীহ কথাকে হেকমত বলা হয়। [ফাতহুল কাদীর]
প্রশ্ন ঃ-- (وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ) - এর আভিধানিক অর্থ কি?
উত্তর ঃ- (وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ) -
موعظة ـ وعظ এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন শুভেচ্ছামূলক কথা এমনভাবে বলা, যাতে প্রতিপক্ষের মন তা কবুল করার জন্য নরম হয়ে যায় [ফাতহুল কাদীর]
উদাহরণতঃ তার কাছে কবুল করার সওয়াব ও উপকারিতা এবং কবুল না করার শাস্তি ও অপকারিতা বর্ণনা করা। [ইবন কাসীর]
(الْحَسَنَةِ) -এর অর্থ বর্ণনা ও শিরোনাম এমন হওয়া যে, প্রতিপক্ষের অন্তর নিশ্চিত হয়ে যায়, সন্দেহ দূর হয়ে যায় এবং অনুভব করে যে, এতে আপনার কোন স্বার্থ নেই- শুধু তার শুভেচ্ছার খাতিরে বলেছেন।
(موعظة) -শব্দ দ্বারা শুভেচ্ছামূলক কথা কার্যকর ভঙ্গিতে বলার বিষয়টি ফুটে উঠেছিল। কিন্তু শুভেচ্ছামূলক কথা মাঝে মাঝে মর্মবিদারক ভঙ্গিতে কিংবা এমনভাবে বলা হয় যে, প্রতিপক্ষ অপমান বোধ করে। এ পন্থা পরিত্যাগ করার জন্য (حسنة) শব্দটি সংযুক্ত করা হয়েছে।
প্রশ্ন ঃ- দাওয়াতের সময় কোন জিনিসের প্রতি নজর রাখতে হবে? উত্তর ঃ- দাওয়াত দেওয়ার সময় দুটি জিনিসের প্রতি নজর রাখতে হবে।
১) এক, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং
২) দুই সদুপদেশ। এ দুটিই মূলত: দাওয়াতের পদ্ধতি। কিন্তু কখনও কখনও দায়ী-র বিপক্ষকে যুক্তি-তর্কে নামাতে হয়। তাই কিভাবে সেটা করতে হবে তাও জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। [ফাতহুল কাদীর]
[৪] (وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِىَ اَحْسَنُ)
جادل শব্দটি (مجادلة) ধাতু থেকে উদ্ভুত। (আরবি) তর্ক-বিতর্ক বোঝানো হয়েছে।
(بِالَّتِيْ هِىَ اَحْسَنُ) -এর অর্থ এই যে, যদি দাওয়াতের কাজে কোথাও তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে তর্ক-বিতর্কও উত্তম পন্থায় হওয়া দরকার। উত্তম পন্থার মানে এই যে, কথাবার্তায় নম্রতা ও কমনীয়তা অবলম্বন করতে হবে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
এমন যুক্তি-প্রমাণ পেশ করতে হবে, যা প্রতিপক্ষ বুঝতে সক্ষম হয়। কুরআনুল কারীমের অন্যান্য আয়াত সাক্ষ্য দেয় যে, উত্তম পন্থায় তর্ক-বিতর্ক শুধু মুসলিমদের সাথেই সম্পর্কযুক্ত নয়; বরং আহলে কিতাব সম্পর্কে বিশেষভাবে কুরআন বলে যে,
(وَلَا تُجَادِلُوْٓا اَهْلَ الْكِتٰبِ اِلَّا بِالَّتِيْ ھِىَ اَحْسَنُ) [আল-আনকাবূতঃ ৪৬]
-অন্য আয়াতে মূসা ও হারূন আলাইহিস সালাম-কে
(فَقُوْلَا لَهٗ قَوْلًا لَّيِّنًا) [ত্বাহাঃ ৪৪]
নির্দেশ দিয়ে আরো বলা হয়েছে যে, ফিরআওনের মত অবাধ্য কাফেরের সাথেও নম্র আচরণ করা উচিত।
★★ একটি ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
ঘটনাটি হল এই -
এক ইমাম সাব, তিনি, তার মসজিদের মুয়াজ্জিনকে জিঙ্গাসা করলেন, মুয়াজ্জিন সাব,
হরেক রকমের মুসল্লি এসে আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, আপনাকে গালি দেয়।
আপনি কিছু বলেন না কেন?
মুয়াজ্জিন সাব উত্তর দেয়,
হুজুর এগুলোতো গরু , এদেরকে কিছু বললে লাভ হবে কি?
★তিনি একটি উদাহরণ দিলেন
(এটাই আমার মূল উদ্দেশ্য)
★ হুজুর ! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আপনাদের এলাকায় ভার্সিটির বেল্ডিং নির্মাণ অনুষ্ঠানে ভিত্তিস্থাপণের জন্য দাওয়াত দিলেন। কিন্তু মাঠে যাওয়ার রাস্তাটি ৫ হাত ।
প্রধানমন্ত্রী মাইক্রো/প্রাইভেট কার নিয়ে আসতেছে।
এই মুহূর্তে অষ্ট্রেলিয়ান একটি "বড় গরু" ঠিক রাস্তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে চেনাইতেছে লেদাইতেছে
আপনি যদি উক্ত গরুর পেটে হাত বুলান আর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলতে থাকেন ।
হে গরু রাস্তা ছাইড়া দে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইতেছে , তোমার জন্য ঘাসের বাজেট আছে, ভূসীর বাজেট আছে, যথেষ্ট পরিমাণ পানির ব্যবস্থা ও করবে।
রাস্তাটি ছেড়ে দে। রাস্তা ছাড়বে তো?
না। ছাড়বে না। কারন এগুলোতো হলো গরু। এ মুহূর্তে পেটে হাত বুলানো আর পিঠে হাত বুলানো হিকমত নয়।
বরং হিকমত হলো আপনি একটি লাঠি নিয়ে তার শরীরে আঘাত করেন। দেখবেন দুরে চলে যাবে। আর এখানে এটাই হলো হিকমাহ ।
এরকম ভাবে যারা হিকমতের কথা বলে কুরআন ও সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করে তাদের ব্যপারে ।
আল্লাহ তাআলার উক্ত আয়াত وَ اَنۡزَلۡنَا الۡحَدِیۡدَ فِیۡہِ بَاۡسٌ شَدِیۡدٌ وَّ مَنَافِعُ لِلنَّاسِ
আমি আরো নাযিল করেছি লোহা, তাতে প্রচন্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ রয়েছে।
বিঃদ্রঃ -
প্রশ্ন ঃ- আপনি কি ঈমানের হেফাজত করতে ইচ্ছুক?
উত্তর ঃ- হ্যাঁ! তাহলে শুনোন
১) আমাদের দেশে পালাক্রমে ছেনা আর লেদা দেশ চালায়। ছেনা আর লেদার দুর্গন্ধ তো সবারই জানা । সুতরাং দেশ দুর্গন্ধে ভরবে না করবে কি?
২) "ছেনার" দুর্গন্ধ "লেদার" দুর্গন্ধের চেয়ে বেশি । আর "ছেনার" অবস্থান দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে দুগন্ধ ও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যত দীর্ঘায়িত হবে ততবেশি দুর্গন্ধ ছড়াবে । ততবেশিই মানুষ মারা যাবে।
৩) বায্যিক "ছেনার" দুর্গন্ধের চেয়ে গণতান্ত্রিক ময়লার দুর্গন্ধ বেশি।
★ বায্যিক "ছেনার" দুর্গন্ধের কারণে মানুষ মারা যায় ঠিক, কিন্তু ঈমান হারা হয়ে জাহান্নামে যায় না।
★ কিন্তু গণতান্ত্রিক ময়লার দুর্গন্ধে মানুষ ঈমান হারা হয়ে জাহান্নামে যায়। আমি গণতান্ত্রিক ময়লার আবর্জনার দুর্গন্ধের মাঝে ডুবে থাকলাম/ অথবা যারা গণতান্ত্রিক ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধের মাঝে ডুবে আছে তাদের সমর্থন করলাম
কিংবা নিজে এগুলোর মাঝে ডুবে থাকতে পছন্দ করলাম
এরপর ও কি আমি হিকমাত হিকমাত বলে ঈমান হারাব?
এরপর ও কি আমি বুদ্ধিমানদের অন্তরভুক্ত হব?
প্রশ্ন ঃ- গণতান্ত্রিক নামক ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার কোন উপায় আছে কি?
উত্তর ঃ- হ্যাঁ! আছে । আর তা হলো প্রথমে আপনি গণতন্ত্র থেকে সরে আসুন, এরপর তাওবা করে আল্লাহর রহমতের দুয়ারে ফিরে আসুন। পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামে প্রবেশ করুন।
প্রশ্ন ঃ- গণতন্ত্রের মাঝে ডুবে ঈমানের হিফাজত কি সম্ভব?
প্রশ্ন ঃ- আপনার নিকট প্রশ্ন পেসাব, পায়খানা অর্থাৎ ময়লা আবর্জনার স্তূপে বা ডাসবিনে অবস্থান করে কি পবিত্রতা অর্জন সম্ভব?
প্রশ্ন ঃ-ময়লা আবর্জনার স্তূপে বা ডাসবিনে অবস্থানকালে পবিত্রতা অর্জনের চেষ্টা করেন, অর্থাৎ আপনার পা টাখনু পর্যন্ত ময়লা আবর্জনায় ঢাকা এ অবস্থায় যদি আপনি পানি ঢালেন পা পরিষ্কার হবে কি?
★ পানির ছিটাতে পবিত্র অঙ্গ আরো অপবিত্র হবে তা নয় কি?
★ দৈনন্দিন পবিত্র অঙ্গের সংখ্যা কমবে ও অপবিত্র অঙ্গের সংখ্যা কমবে নয়কি?
★ এভাবে আপনি দৈনন্দিন হাবুডুবু খেতে থাকবেন কি?
★ গণতান্ত্রিক নামক ময়লা আবর্জনায় হাবুডুবু খেতে থাকবেন কি?
★ গণতান্ত্রিক নামক ময়লা আবর্জনায় হাবুডুবু খেতে খেতে ঐ অবস্থায় ডুবে ঈমান হারা হয়ে চলে যাবেন কি?
★ এমনিভাবে আপনি যদি গণতন্ত্রের মাঝে ডুবে থেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ফিকির করেন তা ভূল নয় কি?
প্রশ্ন ঃ- হিকমাত এর দোহাই দিয়ে কুরআন থেকে সরে যাওয়া হাদীস থেকে সরে যাওয়া ঈমান ধ্বংসের কারণ নয় কি?
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে হিকমতের হাকীকত বুঝে ঈমান হিফাজতের তাওফীক দাও। আমিন।
আয় আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে গণতান্ত্রিক ময়লার দুর্গন্ধ থেকে বেঁচে ঈমান হেফাজতের তাওফীক দাও। আমিন।
ইনশাআল্লাহ চলবে .....
اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّکَ بِالۡحِکۡمَۃِ وَ الۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ وَ جَادِلۡہُمۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ ؕ اِنَّ رَبَّکَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِمَنۡ ضَلَّ عَنۡ سَبِیۡلِہٖ وَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُہۡتَدِیۡنَ ﴿۱۲۵﴾
তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন।
প্রশ্ন ঃ- (دعوة) এর শাব্দিক অর্থ কি?
উত্তর ঃ- (دعوة) এর শাব্দিক অর্থ ডাকা, আমন্ত্রণ জানানো, আহবান করা।
প্রশ্ন ঃ- নবীগণের সর্বপ্রথম কর্তব্য কি?
উত্তর ঃ- নবীগণের সর্বপ্রথম কর্তব্য হচ্ছে মানবজাতিকে আল্লাহর দিকে আহবান করা। এরপর নবী ও রাসূলগণের সমস্ত শিক্ষা হচ্ছে এ দাওয়াতেরই ব্যাখ্যা।
প্রশ্ন ঃ- কুরআনুল কারীম হতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশেষ কোন পদবী বর্ণণা করা যাবে কি?
উত্তর ঃ-হ্যাঁ! কুরআনুল কারীমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশেষ পদবী হচ্ছে- আল্লাহর দিকে আহবানকারী হওয়া।
এক আয়াতে এ ব্যাপারে বর্ণিত আছে
(وَّدَاعِيًا اِلَى اللّٰهِ بِاِذْنِهٖ وَسِرَاجًا مُّنِيْرًا)
এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী [১] ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে [২]।
[আল-আহযাবঃ ৪৬]
এবং অন্য এক আয়াতে আরো বর্ণিত আছে
(يٰقَوْمَنَآ اَجِيْبُوْا دَاعِيَ اللّٰهِ)
‘হে আমাদের সম্প্রদায়! আল্লাহর দিকে আহবানকারীর প্রতি সাড়া দাও । [আল-আহুকাফঃ ৩১]
প্রশ্ন ঃ- এ ক্ষেত্রে উম্মতের জন্য করণীয় কিছু আছে কি?
উত্তর ঃ- হ্যাঁ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদাংক অনুসরণ করে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া উম্মতের উপরও শুধু করণীয় নয় বরং ফরয।
কুরআনুল কারীমে এ সম্বন্ধে বর্ণিত আছে
(وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ اُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ اِلَى الْخَيْرِ وَيَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ)
অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে একটি দল এমন থাকা উচিত, যারা মানুষকে কল্যাণের প্রতি দাওয়াত দেবে (অর্থাৎ) সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজের নিষেধ করবে।" [আলে-ইমরানঃ ১০৪]
অন্য আয়াতে আছে-
(وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَآ اِلَى اللّٰهِ) -
অর্থাৎ "কথা-বার্তার দিক দিয়ে সে ব্যক্তির চাইতে উত্তম কে হবে, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়?” [ফুসসিলাতঃ ৩৩]
***
প্রশ্ন ঃ- হেকমত শব্দের অর্থ কি?
উত্তর ঃ- হেকমত’ শব্দটি কুরআনুল কারীমে অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এস্থলে কোন কোন মুফাসসির হেকমতের অর্থ নিয়েছেন কুরআন, কেউ কেউ বলেছেন, কুরআন ও সুন্নাহ। [তাবারী]
★ আবার কেউ কেউ অকাট্য যুক্তি-প্রমাণ স্থির করেছেন। [ফাতহুল কাদীর]
★আবার কোন কোন মুফাসসিরের মতে বিশুদ্ধ ও মজবুত সহীহ কথাকে হেকমত বলা হয়। [ফাতহুল কাদীর]
প্রশ্ন ঃ-- (وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ) - এর আভিধানিক অর্থ কি?
উত্তর ঃ- (وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ) -
موعظة ـ وعظ এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন শুভেচ্ছামূলক কথা এমনভাবে বলা, যাতে প্রতিপক্ষের মন তা কবুল করার জন্য নরম হয়ে যায় [ফাতহুল কাদীর]
উদাহরণতঃ তার কাছে কবুল করার সওয়াব ও উপকারিতা এবং কবুল না করার শাস্তি ও অপকারিতা বর্ণনা করা। [ইবন কাসীর]
(الْحَسَنَةِ) -এর অর্থ বর্ণনা ও শিরোনাম এমন হওয়া যে, প্রতিপক্ষের অন্তর নিশ্চিত হয়ে যায়, সন্দেহ দূর হয়ে যায় এবং অনুভব করে যে, এতে আপনার কোন স্বার্থ নেই- শুধু তার শুভেচ্ছার খাতিরে বলেছেন।
(موعظة) -শব্দ দ্বারা শুভেচ্ছামূলক কথা কার্যকর ভঙ্গিতে বলার বিষয়টি ফুটে উঠেছিল। কিন্তু শুভেচ্ছামূলক কথা মাঝে মাঝে মর্মবিদারক ভঙ্গিতে কিংবা এমনভাবে বলা হয় যে, প্রতিপক্ষ অপমান বোধ করে। এ পন্থা পরিত্যাগ করার জন্য (حسنة) শব্দটি সংযুক্ত করা হয়েছে।
প্রশ্ন ঃ- দাওয়াতের সময় কোন জিনিসের প্রতি নজর রাখতে হবে? উত্তর ঃ- দাওয়াত দেওয়ার সময় দুটি জিনিসের প্রতি নজর রাখতে হবে।
১) এক, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং
২) দুই সদুপদেশ। এ দুটিই মূলত: দাওয়াতের পদ্ধতি। কিন্তু কখনও কখনও দায়ী-র বিপক্ষকে যুক্তি-তর্কে নামাতে হয়। তাই কিভাবে সেটা করতে হবে তাও জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। [ফাতহুল কাদীর]
[৪] (وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِىَ اَحْسَنُ)
جادل শব্দটি (مجادلة) ধাতু থেকে উদ্ভুত। (আরবি) তর্ক-বিতর্ক বোঝানো হয়েছে।
(بِالَّتِيْ هِىَ اَحْسَنُ) -এর অর্থ এই যে, যদি দাওয়াতের কাজে কোথাও তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে তর্ক-বিতর্কও উত্তম পন্থায় হওয়া দরকার। উত্তম পন্থার মানে এই যে, কথাবার্তায় নম্রতা ও কমনীয়তা অবলম্বন করতে হবে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
এমন যুক্তি-প্রমাণ পেশ করতে হবে, যা প্রতিপক্ষ বুঝতে সক্ষম হয়। কুরআনুল কারীমের অন্যান্য আয়াত সাক্ষ্য দেয় যে, উত্তম পন্থায় তর্ক-বিতর্ক শুধু মুসলিমদের সাথেই সম্পর্কযুক্ত নয়; বরং আহলে কিতাব সম্পর্কে বিশেষভাবে কুরআন বলে যে,
(وَلَا تُجَادِلُوْٓا اَهْلَ الْكِتٰبِ اِلَّا بِالَّتِيْ ھِىَ اَحْسَنُ) [আল-আনকাবূতঃ ৪৬]
-অন্য আয়াতে মূসা ও হারূন আলাইহিস সালাম-কে
(فَقُوْلَا لَهٗ قَوْلًا لَّيِّنًا) [ত্বাহাঃ ৪৪]
নির্দেশ দিয়ে আরো বলা হয়েছে যে, ফিরআওনের মত অবাধ্য কাফেরের সাথেও নম্র আচরণ করা উচিত।
★★ একটি ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
ঘটনাটি হল এই -
এক ইমাম সাব, তিনি, তার মসজিদের মুয়াজ্জিনকে জিঙ্গাসা করলেন, মুয়াজ্জিন সাব,
হরেক রকমের মুসল্লি এসে আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, আপনাকে গালি দেয়।
আপনি কিছু বলেন না কেন?
মুয়াজ্জিন সাব উত্তর দেয়,
হুজুর এগুলোতো গরু , এদেরকে কিছু বললে লাভ হবে কি?
★তিনি একটি উদাহরণ দিলেন
(এটাই আমার মূল উদ্দেশ্য)
★ হুজুর ! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আপনাদের এলাকায় ভার্সিটির বেল্ডিং নির্মাণ অনুষ্ঠানে ভিত্তিস্থাপণের জন্য দাওয়াত দিলেন। কিন্তু মাঠে যাওয়ার রাস্তাটি ৫ হাত ।
প্রধানমন্ত্রী মাইক্রো/প্রাইভেট কার নিয়ে আসতেছে।
এই মুহূর্তে অষ্ট্রেলিয়ান একটি "বড় গরু" ঠিক রাস্তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে চেনাইতেছে লেদাইতেছে
আপনি যদি উক্ত গরুর পেটে হাত বুলান আর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলতে থাকেন ।
হে গরু রাস্তা ছাইড়া দে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইতেছে , তোমার জন্য ঘাসের বাজেট আছে, ভূসীর বাজেট আছে, যথেষ্ট পরিমাণ পানির ব্যবস্থা ও করবে।
রাস্তাটি ছেড়ে দে। রাস্তা ছাড়বে তো?
না। ছাড়বে না। কারন এগুলোতো হলো গরু। এ মুহূর্তে পেটে হাত বুলানো আর পিঠে হাত বুলানো হিকমত নয়।
বরং হিকমত হলো আপনি একটি লাঠি নিয়ে তার শরীরে আঘাত করেন। দেখবেন দুরে চলে যাবে। আর এখানে এটাই হলো হিকমাহ ।
এরকম ভাবে যারা হিকমতের কথা বলে কুরআন ও সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করে তাদের ব্যপারে ।
আল্লাহ তাআলার উক্ত আয়াত وَ اَنۡزَلۡنَا الۡحَدِیۡدَ فِیۡہِ بَاۡسٌ شَدِیۡدٌ وَّ مَنَافِعُ لِلنَّاسِ
আমি আরো নাযিল করেছি লোহা, তাতে প্রচন্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ রয়েছে।
বিঃদ্রঃ -
প্রশ্ন ঃ- আপনি কি ঈমানের হেফাজত করতে ইচ্ছুক?
উত্তর ঃ- হ্যাঁ! তাহলে শুনোন
১) আমাদের দেশে পালাক্রমে ছেনা আর লেদা দেশ চালায়। ছেনা আর লেদার দুর্গন্ধ তো সবারই জানা । সুতরাং দেশ দুর্গন্ধে ভরবে না করবে কি?
২) "ছেনার" দুর্গন্ধ "লেদার" দুর্গন্ধের চেয়ে বেশি । আর "ছেনার" অবস্থান দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে দুগন্ধ ও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যত দীর্ঘায়িত হবে ততবেশি দুর্গন্ধ ছড়াবে । ততবেশিই মানুষ মারা যাবে।
৩) বায্যিক "ছেনার" দুর্গন্ধের চেয়ে গণতান্ত্রিক ময়লার দুর্গন্ধ বেশি।
★ বায্যিক "ছেনার" দুর্গন্ধের কারণে মানুষ মারা যায় ঠিক, কিন্তু ঈমান হারা হয়ে জাহান্নামে যায় না।
★ কিন্তু গণতান্ত্রিক ময়লার দুর্গন্ধে মানুষ ঈমান হারা হয়ে জাহান্নামে যায়। আমি গণতান্ত্রিক ময়লার আবর্জনার দুর্গন্ধের মাঝে ডুবে থাকলাম/ অথবা যারা গণতান্ত্রিক ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধের মাঝে ডুবে আছে তাদের সমর্থন করলাম
কিংবা নিজে এগুলোর মাঝে ডুবে থাকতে পছন্দ করলাম
এরপর ও কি আমি হিকমাত হিকমাত বলে ঈমান হারাব?
এরপর ও কি আমি বুদ্ধিমানদের অন্তরভুক্ত হব?
প্রশ্ন ঃ- গণতান্ত্রিক নামক ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার কোন উপায় আছে কি?
উত্তর ঃ- হ্যাঁ! আছে । আর তা হলো প্রথমে আপনি গণতন্ত্র থেকে সরে আসুন, এরপর তাওবা করে আল্লাহর রহমতের দুয়ারে ফিরে আসুন। পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামে প্রবেশ করুন।
প্রশ্ন ঃ- গণতন্ত্রের মাঝে ডুবে ঈমানের হিফাজত কি সম্ভব?
প্রশ্ন ঃ- আপনার নিকট প্রশ্ন পেসাব, পায়খানা অর্থাৎ ময়লা আবর্জনার স্তূপে বা ডাসবিনে অবস্থান করে কি পবিত্রতা অর্জন সম্ভব?
প্রশ্ন ঃ-ময়লা আবর্জনার স্তূপে বা ডাসবিনে অবস্থানকালে পবিত্রতা অর্জনের চেষ্টা করেন, অর্থাৎ আপনার পা টাখনু পর্যন্ত ময়লা আবর্জনায় ঢাকা এ অবস্থায় যদি আপনি পানি ঢালেন পা পরিষ্কার হবে কি?
★ পানির ছিটাতে পবিত্র অঙ্গ আরো অপবিত্র হবে তা নয় কি?
★ দৈনন্দিন পবিত্র অঙ্গের সংখ্যা কমবে ও অপবিত্র অঙ্গের সংখ্যা কমবে নয়কি?
★ এভাবে আপনি দৈনন্দিন হাবুডুবু খেতে থাকবেন কি?
★ গণতান্ত্রিক নামক ময়লা আবর্জনায় হাবুডুবু খেতে থাকবেন কি?
★ গণতান্ত্রিক নামক ময়লা আবর্জনায় হাবুডুবু খেতে খেতে ঐ অবস্থায় ডুবে ঈমান হারা হয়ে চলে যাবেন কি?
★ এমনিভাবে আপনি যদি গণতন্ত্রের মাঝে ডুবে থেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ফিকির করেন তা ভূল নয় কি?
প্রশ্ন ঃ- হিকমাত এর দোহাই দিয়ে কুরআন থেকে সরে যাওয়া হাদীস থেকে সরে যাওয়া ঈমান ধ্বংসের কারণ নয় কি?
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে হিকমতের হাকীকত বুঝে ঈমান হিফাজতের তাওফীক দাও। আমিন।
আয় আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে গণতান্ত্রিক ময়লার দুর্গন্ধ থেকে বেঁচে ঈমান হেফাজতের তাওফীক দাও। আমিন।
ইনশাআল্লাহ চলবে .....
Comment