(3) আপনি কি সিরাতে মুস্তাকীম (সঠিক পথ) এর পরিচয় জানতে ইচ্ছুক? (3),
وَ مَنۡ یُّطِعِ اللّٰہَ وَ الرَّسُوۡلَ فَاُولٰٓئِکَ مَعَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمَ اللّٰہُ عَلَیۡہِمۡ مِّنَ النَّبِیّٖنَ وَ الصِّدِّیۡقِیۡنَ وَ الشُّہَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیۡنَ ۚ وَ حَسُنَ اُولٰٓئِکَ رَفِیۡقًا ﴿ؕ۶۹
﴾ আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে তারা তাদের সাথে থাকবে, আল্লাহ যাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসেবে তারা হবে উত্তম।
****
اَیۡنَ مَا تَکُوۡنُوۡا یُدۡرِکۡکُّمُ الۡمَوۡتُ وَ لَوۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ بُرُوۡجٍ مُّشَیَّدَۃٍ ؕ وَ اِنۡ تُصِبۡہُمۡ حَسَنَۃٌ یَّقُوۡلُوۡا ہٰذِہٖ مِنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ ۚ وَ اِنۡ تُصِبۡہُمۡ سَیِّئَۃٌ یَّقُوۡلُوۡا ہٰذِہٖ مِنۡ عِنۡدِکَ ؕ قُلۡ کُلٌّ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ ؕ فَمَالِ ہٰۤؤُلَآءِ الۡقَوۡمِ لَا یَکَادُوۡنَ یَفۡقَہُوۡنَ حَدِیۡثًا ﴿۷۸﴾
তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর।
আর যদি তাদের কাছে কোন কল্যাণ পৌঁছে তবে বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’।
আর যদি কোন অকল্যাণ পৌঁছে, তখন বলে, ‘এটি তোমার পক্ষ থেকে’।
বল, ‘সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে’। সুতরাং এই কওমের কী হল, তারা কোন কথা বুঝতে চায় না!
প্রশ্ন ঃ- মুনাফিকরা "ক্বিতাল ফরজ বিধান কে" ভয় পায় কেন?
উত্তর ঃ- মৃত্যুর ভয়ে।
আল্লাহ তাআলা বলেন
اَیۡنَ مَا تَکُوۡنُوۡا یُدۡرِکۡکُّمُ الۡمَوۡتُ وَ لَوۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ بُرُوۡجٍ مُّشَیَّدَۃٍ
প্রশ্ন ঃ- মৃত্যুর থাবা থেকে বাঁচা কি সম্ভব ?
উত্তর ঃ- মৃত্যুর থাবা থেকে বাঁচা সম্ভব নয়।
(★ মানুষ মৃত্যু থেকে বাঁচার চেষ্টা করে কিন্তু তা সম্ভব না। ইচ্ছা করলে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারে কিন্তু তার চেষ্টা করে না।★)
প্রশ্ন ঃ- মৃত্যুর থাবা থেকে বাঁচা সম্ভব নয় কেন?
উত্তর ঃ- আল্লাহ তাআলা বলেন
1) کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ نَبۡلُوۡکُمۡ بِالشَّرِّ وَ الۡخَیۡرِ فِتۡنَۃً ؕ وَ اِلَیۡنَا تُرۡجَعُوۡنَ ﴿۳۵
﴾ প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আর ভাল ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে।
2) اَیۡنَ مَا تَکُوۡنُوۡا یُدۡرِکۡکُّمُ الۡمَوۡتُ وَ لَوۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ بُرُوۡجٍ مُّشَیَّدَۃٍ তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর।
প্রশ্ন ঃ- সুদৃঢ় দুর্গ নির্মাণ করা যাবে কি? উহা কি তায়াক্কুল বিরোধ ?
উত্তর ঃ- [১] আয়াতে বলা হয়েছে যে, তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা সুদৃঢ় প্রাসাদে হলেও মৃত্যু তোমাদেরকে বরণ করতেই হবে। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, বসবাস করার জন্য কিংবা ধন-সম্পদের হেফাজতের উদ্দেশ্যে সুদৃঢ় ও উত্তম গৃহ নিৰ্মাণ করা তাওয়াক্কুল বা ভরসার পরিপন্থী কিংবা শরী’আত বিরুদ্ধ নয়। [কুরতুবী]
ؕ وَ اِنۡ تُصِبۡہُمۡ حَسَنَۃٌ یَّقُوۡلُوۡا ہٰذِہٖ مِنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ ۚ وَ اِنۡ تُصِبۡہُمۡ سَیِّئَۃٌ یَّقُوۡلُوۡا ہٰذِہٖ مِنۡ عِنۡدِکَ ؕ
প্রশ্ন ঃ- উক্ত আয়াতে কল্যাণ অকল্যাণ এর ব্যখ্যা কি?
উত্তর ঃ- ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এখানে কল্যাণ দ্বারা বদরের যুদ্ধে বিজয় ও গনীমত লাভ বোঝানো হয়েছে।
পক্ষান্তরে অকল্যাণ দ্বারা ওহুদের যুদ্ধে যে বিপদ সংঘটিত হয়েছিল, যাতে রাসূলের চেহারা মুবারকে ক্ষত হয়ে গিয়েছিল এবং তাঁর দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল তা বোঝানো হয়েছে। [তাবারী]
প্রশ্ন ঃ- বিজয়, পরাজয়। কল্যাণ, অকল্যাণ এতে সিরাতে মুস্তাকীম কোনটি?
উত্তর ঃ- দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য বের হয়ে মারলেন/ মরলেন উভয়টাই সিরাতে মুস্তাকীম।
প্রশ্ন ঃ- মারা ও মরা যে সিরাতে মুস্তাকীম এর কোন প্রমাণ আছে কী?
উত্তর ঃ- মারা ও মরা সিরাতে মুস্তাকীম না। এটা আপনি বুঝতে ভূল করেছেন।
প্রশ্ন ঃ- কোন মারা ও মরা সিরাতে মুস্তাকীম বুঝিয়ে বলবেন কী?
উত্তর ঃ- হ্যাঁ!
তাহলে শুনুন।
আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য রাসূল যেভাবে লড়াই করেছেন
এভাবে লড়তে গিয়ে মারা ও মরা এটাই হলো সিরাতে মুস্তাকীম।
যথা
১) ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ ۟
তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। অতএব তারা মারে ও মরে। (সূরা তাওবা /১১১)
২) اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۚ وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ الطَّاغُوۡتِ
যারা ঈমান এনেছে তারা লড়াই করে আল্লাহর রাস্তায়, আর যারা কুফরী করেছে তারা লড়াই করে তাগূতের পথে।
৩) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এখানে কল্যাণ দ্বারা বদরের যুদ্ধে বিজয় ও গনীমত লাভ বোঝানো হয়েছে। পক্ষান্তরে অকল্যাণ দ্বারা ওহুদের যুদ্ধে যে বিপদ সংঘটিত হয়েছিল, যাতে রাসূলের চেহারা মুবারকে ক্ষত হয়ে গিয়েছিল এবং তাঁর দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল তা বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] ইত্যাদি।
★ মুনাফিকদের আরেকটি পরিচয় ? ★
প্রশ্ন ঃ- মুনাফিকদের আরেকটি পরিচয় কি?
উত্তর ঃ- যদি তাদের কাছে কোন কল্যাণ পৌঁছে তবে বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’। আর যদি কোন অকল্যাণ পৌঁছে, তখন বলে, ‘এটি তোমার পক্ষ থেকে’।
প্রশ্ন ঃ- মুনাফিক দের কথার জবাব কি হবে?
উত্তর ঃ- ؕ قُلۡ کُلٌّ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ ؕ বল, ‘সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে’।
প্রশ্ন ঃ- ১)
‘সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকেই' হয়। প্রশ্ন হলো খারাপের নিছবত (সম্মন্ধ) আল্লাহর দিকে করা যাবে কি?
প্রশ্ন ঃ- ২) এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় । কিন্তু এর পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে যে, ভাল কাজ হলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর মন্দ কাজ হলে তা বান্দার পক্ষ থেকে।
উত্তর ঃ-(১-২) এর কারণ হলো
আল্লাহর ইচ্ছা দু’প্রকার,
(এক) সৃষ্টিগত সাধারণ ইচ্ছা, যার সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকা বাধ্যতামূলক নয়।
(দুই) শরীআতগত বিশেষ ইচ্ছা, যার সাথে সন্তুষ্ট থাকা অবশ্য জরুরী। আলোচ্য এ আয়াতে আল্লাহর সাধারণ ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে।
অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টিতে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কিছুই হয় না।
কিন্তু খারাপ কিছুর মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকে না।
তিনি শুধু ভাল কাজেই সন্তুষ্ট হন। খারাপ পরিণতি বান্দার কর্মকাণ্ডের ফল। বান্দা যখন খারাপ কাজ করে তখন আল্লাহ তা হতে দেন যদিও তাতে তিনি সন্তুষ্ট হন না।
এর বিপরীতে বান্দা যখন ভাল কাজ করেন তখন আল্লাহ তা’আলা তা হতে দেয়ার পাশাপাশি তাতে সন্তুষ্টও হন।।
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে খারাপ পরিণতির দায়-দায়ীত্ব কেবল বান্দার দিকেই সম্পর্কযুক্ত করা যাবে, আল্লাহর দিকে সম্পর্কযুক্ত করা জায়েয নেই। [মাজমু ফাতাওয়া ইবন তাইমিয়্যাহ]
****
مَاۤ اَصَابَکَ مِنۡ حَسَنَۃٍ فَمِنَ اللّٰہِ ۫ وَ مَاۤ اَصَابَکَ مِنۡ سَیِّئَۃٍ فَمِنۡ
نَّفۡسِکَ ؕ وَ اَرۡسَلۡنٰکَ لِلنَّاسِ رَسُوۡلًا ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰہِ شَہِیۡدًا ﴿۷۹﴾
তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে।
আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট।
প্রশ্ন ঃ- وَ اَرۡسَلۡنٰکَ لِلنَّاسِ رَسُوۡلًا ؕ
উক্ত আয়াতে " لِلنَّاسِ رَسُوۡلًا " দ্বারা উদ্দেশ্য কি?
উত্তর ঃ- উক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমগ্র মানবমণ্ডলীর জন্য রাসূল বানিয়ে পাঠানো হয়েছে।
তিনি শুধু আরবদের জন্যই রাসূল ছিলেন না, বরং তার রেসালাত ছিল সমগ্র বিশ্বমানবের জন্য ব্যাপক। তারা তখন উপস্থিত থাকুক বা না-ই থাকুক।
কিয়ামত পর্যন্ত আগত সমস্ত মানুষই এর আওতাভুক্ত।
চলবে ইনশাআল্লাহ......
وَ مَنۡ یُّطِعِ اللّٰہَ وَ الرَّسُوۡلَ فَاُولٰٓئِکَ مَعَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمَ اللّٰہُ عَلَیۡہِمۡ مِّنَ النَّبِیّٖنَ وَ الصِّدِّیۡقِیۡنَ وَ الشُّہَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیۡنَ ۚ وَ حَسُنَ اُولٰٓئِکَ رَفِیۡقًا ﴿ؕ۶۹
﴾ আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে তারা তাদের সাথে থাকবে, আল্লাহ যাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসেবে তারা হবে উত্তম।
****
اَیۡنَ مَا تَکُوۡنُوۡا یُدۡرِکۡکُّمُ الۡمَوۡتُ وَ لَوۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ بُرُوۡجٍ مُّشَیَّدَۃٍ ؕ وَ اِنۡ تُصِبۡہُمۡ حَسَنَۃٌ یَّقُوۡلُوۡا ہٰذِہٖ مِنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ ۚ وَ اِنۡ تُصِبۡہُمۡ سَیِّئَۃٌ یَّقُوۡلُوۡا ہٰذِہٖ مِنۡ عِنۡدِکَ ؕ قُلۡ کُلٌّ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ ؕ فَمَالِ ہٰۤؤُلَآءِ الۡقَوۡمِ لَا یَکَادُوۡنَ یَفۡقَہُوۡنَ حَدِیۡثًا ﴿۷۸﴾
তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর।
আর যদি তাদের কাছে কোন কল্যাণ পৌঁছে তবে বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’।
আর যদি কোন অকল্যাণ পৌঁছে, তখন বলে, ‘এটি তোমার পক্ষ থেকে’।
বল, ‘সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে’। সুতরাং এই কওমের কী হল, তারা কোন কথা বুঝতে চায় না!
প্রশ্ন ঃ- মুনাফিকরা "ক্বিতাল ফরজ বিধান কে" ভয় পায় কেন?
উত্তর ঃ- মৃত্যুর ভয়ে।
আল্লাহ তাআলা বলেন
اَیۡنَ مَا تَکُوۡنُوۡا یُدۡرِکۡکُّمُ الۡمَوۡتُ وَ لَوۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ بُرُوۡجٍ مُّشَیَّدَۃٍ
প্রশ্ন ঃ- মৃত্যুর থাবা থেকে বাঁচা কি সম্ভব ?
উত্তর ঃ- মৃত্যুর থাবা থেকে বাঁচা সম্ভব নয়।
(★ মানুষ মৃত্যু থেকে বাঁচার চেষ্টা করে কিন্তু তা সম্ভব না। ইচ্ছা করলে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারে কিন্তু তার চেষ্টা করে না।★)
প্রশ্ন ঃ- মৃত্যুর থাবা থেকে বাঁচা সম্ভব নয় কেন?
উত্তর ঃ- আল্লাহ তাআলা বলেন
1) کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ نَبۡلُوۡکُمۡ بِالشَّرِّ وَ الۡخَیۡرِ فِتۡنَۃً ؕ وَ اِلَیۡنَا تُرۡجَعُوۡنَ ﴿۳۵
﴾ প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আর ভাল ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে।
2) اَیۡنَ مَا تَکُوۡنُوۡا یُدۡرِکۡکُّمُ الۡمَوۡتُ وَ لَوۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ بُرُوۡجٍ مُّشَیَّدَۃٍ তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর।
প্রশ্ন ঃ- সুদৃঢ় দুর্গ নির্মাণ করা যাবে কি? উহা কি তায়াক্কুল বিরোধ ?
উত্তর ঃ- [১] আয়াতে বলা হয়েছে যে, তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা সুদৃঢ় প্রাসাদে হলেও মৃত্যু তোমাদেরকে বরণ করতেই হবে। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, বসবাস করার জন্য কিংবা ধন-সম্পদের হেফাজতের উদ্দেশ্যে সুদৃঢ় ও উত্তম গৃহ নিৰ্মাণ করা তাওয়াক্কুল বা ভরসার পরিপন্থী কিংবা শরী’আত বিরুদ্ধ নয়। [কুরতুবী]
ؕ وَ اِنۡ تُصِبۡہُمۡ حَسَنَۃٌ یَّقُوۡلُوۡا ہٰذِہٖ مِنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ ۚ وَ اِنۡ تُصِبۡہُمۡ سَیِّئَۃٌ یَّقُوۡلُوۡا ہٰذِہٖ مِنۡ عِنۡدِکَ ؕ
প্রশ্ন ঃ- উক্ত আয়াতে কল্যাণ অকল্যাণ এর ব্যখ্যা কি?
উত্তর ঃ- ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এখানে কল্যাণ দ্বারা বদরের যুদ্ধে বিজয় ও গনীমত লাভ বোঝানো হয়েছে।
পক্ষান্তরে অকল্যাণ দ্বারা ওহুদের যুদ্ধে যে বিপদ সংঘটিত হয়েছিল, যাতে রাসূলের চেহারা মুবারকে ক্ষত হয়ে গিয়েছিল এবং তাঁর দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল তা বোঝানো হয়েছে। [তাবারী]
প্রশ্ন ঃ- বিজয়, পরাজয়। কল্যাণ, অকল্যাণ এতে সিরাতে মুস্তাকীম কোনটি?
উত্তর ঃ- দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য বের হয়ে মারলেন/ মরলেন উভয়টাই সিরাতে মুস্তাকীম।
প্রশ্ন ঃ- মারা ও মরা যে সিরাতে মুস্তাকীম এর কোন প্রমাণ আছে কী?
উত্তর ঃ- মারা ও মরা সিরাতে মুস্তাকীম না। এটা আপনি বুঝতে ভূল করেছেন।
প্রশ্ন ঃ- কোন মারা ও মরা সিরাতে মুস্তাকীম বুঝিয়ে বলবেন কী?
উত্তর ঃ- হ্যাঁ!
তাহলে শুনুন।
আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য রাসূল যেভাবে লড়াই করেছেন
এভাবে লড়তে গিয়ে মারা ও মরা এটাই হলো সিরাতে মুস্তাকীম।
যথা
১) ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ ۟
তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। অতএব তারা মারে ও মরে। (সূরা তাওবা /১১১)
২) اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۚ وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ الطَّاغُوۡتِ
যারা ঈমান এনেছে তারা লড়াই করে আল্লাহর রাস্তায়, আর যারা কুফরী করেছে তারা লড়াই করে তাগূতের পথে।
৩) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এখানে কল্যাণ দ্বারা বদরের যুদ্ধে বিজয় ও গনীমত লাভ বোঝানো হয়েছে। পক্ষান্তরে অকল্যাণ দ্বারা ওহুদের যুদ্ধে যে বিপদ সংঘটিত হয়েছিল, যাতে রাসূলের চেহারা মুবারকে ক্ষত হয়ে গিয়েছিল এবং তাঁর দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল তা বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] ইত্যাদি।
★ মুনাফিকদের আরেকটি পরিচয় ? ★
প্রশ্ন ঃ- মুনাফিকদের আরেকটি পরিচয় কি?
উত্তর ঃ- যদি তাদের কাছে কোন কল্যাণ পৌঁছে তবে বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’। আর যদি কোন অকল্যাণ পৌঁছে, তখন বলে, ‘এটি তোমার পক্ষ থেকে’।
প্রশ্ন ঃ- মুনাফিক দের কথার জবাব কি হবে?
উত্তর ঃ- ؕ قُلۡ کُلٌّ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ ؕ বল, ‘সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে’।
প্রশ্ন ঃ- ১)
‘সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকেই' হয়। প্রশ্ন হলো খারাপের নিছবত (সম্মন্ধ) আল্লাহর দিকে করা যাবে কি?
প্রশ্ন ঃ- ২) এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় । কিন্তু এর পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে যে, ভাল কাজ হলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর মন্দ কাজ হলে তা বান্দার পক্ষ থেকে।
উত্তর ঃ-(১-২) এর কারণ হলো
আল্লাহর ইচ্ছা দু’প্রকার,
(এক) সৃষ্টিগত সাধারণ ইচ্ছা, যার সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকা বাধ্যতামূলক নয়।
(দুই) শরীআতগত বিশেষ ইচ্ছা, যার সাথে সন্তুষ্ট থাকা অবশ্য জরুরী। আলোচ্য এ আয়াতে আল্লাহর সাধারণ ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে।
অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টিতে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কিছুই হয় না।
কিন্তু খারাপ কিছুর মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকে না।
তিনি শুধু ভাল কাজেই সন্তুষ্ট হন। খারাপ পরিণতি বান্দার কর্মকাণ্ডের ফল। বান্দা যখন খারাপ কাজ করে তখন আল্লাহ তা হতে দেন যদিও তাতে তিনি সন্তুষ্ট হন না।
এর বিপরীতে বান্দা যখন ভাল কাজ করেন তখন আল্লাহ তা’আলা তা হতে দেয়ার পাশাপাশি তাতে সন্তুষ্টও হন।।
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে খারাপ পরিণতির দায়-দায়ীত্ব কেবল বান্দার দিকেই সম্পর্কযুক্ত করা যাবে, আল্লাহর দিকে সম্পর্কযুক্ত করা জায়েয নেই। [মাজমু ফাতাওয়া ইবন তাইমিয়্যাহ]
****
مَاۤ اَصَابَکَ مِنۡ حَسَنَۃٍ فَمِنَ اللّٰہِ ۫ وَ مَاۤ اَصَابَکَ مِنۡ سَیِّئَۃٍ فَمِنۡ
نَّفۡسِکَ ؕ وَ اَرۡسَلۡنٰکَ لِلنَّاسِ رَسُوۡلًا ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰہِ شَہِیۡدًا ﴿۷۹﴾
তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে।
আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট।
প্রশ্ন ঃ- وَ اَرۡسَلۡنٰکَ لِلنَّاسِ رَسُوۡلًا ؕ
উক্ত আয়াতে " لِلنَّاسِ رَسُوۡلًا " দ্বারা উদ্দেশ্য কি?
উত্তর ঃ- উক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমগ্র মানবমণ্ডলীর জন্য রাসূল বানিয়ে পাঠানো হয়েছে।
তিনি শুধু আরবদের জন্যই রাসূল ছিলেন না, বরং তার রেসালাত ছিল সমগ্র বিশ্বমানবের জন্য ব্যাপক। তারা তখন উপস্থিত থাকুক বা না-ই থাকুক।
কিয়ামত পর্যন্ত আগত সমস্ত মানুষই এর আওতাভুক্ত।
চলবে ইনশাআল্লাহ......
Comment