(13) আপনি কি সিরাতে মুস্তাকীম (সঠিক পথ) এর পরিচয় জানতে ইচ্ছুক?(13)
اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ؕ لَیَجۡمَعَنَّکُمۡ اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ لَا رَیۡبَ فِیۡہِ ؕ وَ مَنۡ اَصۡدَقُ مِنَ اللّٰہِ حَدِیۡثًا ﴿٪۸۷﴾
আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে একত্র করবেন কিয়ামতের দিনে। এতে কোন সন্দেহ নেই। আর কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কে?
★
اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ
প্রশ্নঃ- আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ্ আছে কি? আমাদের জন্য করণীয় কি?
উত্তরঃ- [১] আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ্ নেই। তাঁকেই উপাস্য মনে কর এবং যে কাজই কর, তাঁর ‘ইবাদাতের নিয়তে কর।
প্রশ্নঃ- ক্বিয়ামতের ব্যপারে কিছু বলবেন কি?
উত্তরঃ- (1) لَیَجۡمَعَنَّکُمۡ اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ لَا رَیۡبَ فِیۡہِ ؕ
তিনি কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে একত্রিত করবেন। এতে কোন সন্দেহ নেই। ঐ দিন সবাইকে প্রতিদান দেবেন। কিয়ামতের ওয়াদা, প্রতিদান ও শাস্তির সওয়াব সব সত্য।
উত্তরঃ- (2) فَاِذَا جَآءَتِ الصَّآخَّۃُ ﴿۫۳۳﴾
অতঃপর যখন বিকট আওয়াজ* আসবে,
*কিয়ামত দিবসের আওয়ায।
یَوۡمَ یَفِرُّ الۡمَرۡءُ مِنۡ اَخِیۡہِ ﴿ۙ۳۴﴾
সেদিন মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাই থেকে,
وَ اُمِّہٖ وَ اَبِیۡہِ ﴿ۙ۳۵﴾ তার মা ও তার বাবা থেকে,
وَ صَاحِبَتِہٖ وَ بَنِیۡہِ ﴿ؕ۳۶﴾ তার স্ত্রী ও তার সন্তান-সন্ততি থেকে।
لِکُلِّ امۡرِئٍ مِّنۡہُمۡ یَوۡمَئِذٍ شَاۡنٌ یُّغۡنِیۡہِ ﴿ؕ۳۷﴾ সেদিন তাদের প্রত্যেকেরই একটি গুরুতর অবস্থা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।
وُجُوۡہٌ یَّوۡمَئِذٍ مُّسۡفِرَۃٌ ﴿ۙ۳۸﴾ সেদিন কিছু কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে। ضَاحِکَۃٌ مُّسۡتَبۡشِرَۃٌ ﴿ۚ
۳۹﴾ সহাস্য, প্রফুল্ল।
وَ وُجُوۡہٌ یَّوۡمَئِذٍ عَلَیۡہَا غَبَرَۃٌ ﴿ۙ۴۰﴾ আর কিছু কিছু চেহারার উপর সেদিন থাকবে মলিনতা।
تَرۡہَقُہَا قَتَرَۃٌ ﴿ؕ۴۱﴾ কালিমা সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে।
اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡکَفَرَۃُ الۡفَجَرَۃُ ﴿٪۴۲﴾ তারাই কাফির, পাপাচারী।
****
প্রশ্নঃ- ১) কিয়ামত দিবসে নিকটতমরা তোমার থেকে পলায়ন করবে তা তোমার বুঝে আসছে কি?
উত্তরঃ- উল্লেখিত আয়াত গুলোর দিকে লক্ষ্য কর, তাহলে তা তোমার নিকট স্পষ্ট হয়ে যাবে।
প্রশ্নঃ- দুনিয়াতে এসব নিকটতম আত্মীয়-স্বজন তোমার জন্য দিনের পথে বাধা হবে এটা তোমার জানা আছে কি?
উত্তরঃ-
আল্লাহ তাআলা বলেন
قُلۡ اِنۡ کَانَ اٰبَآؤُکُمۡ وَ اَبۡنَآؤُکُمۡ وَ اِخۡوَانُکُمۡ وَ اَزۡوَاجُکُمۡ وَ عَشِیۡرَتُکُمۡ وَ اَمۡوَالُۨ اقۡتَرَفۡتُمُوۡہَا وَ تِجَارَۃٌ تَخۡشَوۡنَ کَسَادَہَا وَ مَسٰکِنُ تَرۡضَوۡنَہَاۤ اَحَبَّ اِلَیۡکُمۡ مِّنَ اللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ وَ جِہَادٍ فِیۡ سَبِیۡلِہٖ فَتَرَبَّصُوۡا حَتّٰی یَاۡتِیَ اللّٰہُ بِاَمۡرِہٖ ؕ وَ اللّٰہُ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِیۡنَ ﴿٪۲۴﴾
বল, (1)‘তোমাদের পিতা, (2)তোমাদের সন্তান, (3) তোমাদের ভাই (4)তোমাদের স্ত্রী, (5)তোমাদের গোত্র, (6) তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, (7) আর সে ব্যবসা যার মন্দা হওয়ার আশঙ্কা তোমরা করছ এবং (8) সে বাসস্থান, যা তোমরা পছন্দ করছ,
যদি তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয়
১) আল্লাহ,
২) তাঁর রাসূল ও
৩) তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত’। আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।
প্রশ্নঃ- উক্ত আটটি জিনিস তোমার নিকট বেশি প্রিয়?
উত্তরঃ- তাহলে তুমি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে শাস্তির অপেক্ষা করতে থাকো।
প্রশ্নঃ- না। আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ তোমার নিকট বেশি প্রিয়?
উত্তরঃ- যদি আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ তোমার নিকট বেশি প্রিয় হয় তাহলে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে থাকো।
আল্লাহ তাআলা বলেন 2:214
اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَاۡتِکُمۡ مَّثَلُ الَّذِیۡنَ خَلَوۡا مِنۡ قَبۡلِکُمۡ ؕ مَسَّتۡہُمُ الۡبَاۡسَآءُ وَ الضَّرَّآءُ وَ زُلۡزِلُوۡا حَتّٰی یَقُوۡلَ الرَّسُوۡلُ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَہٗ مَتٰی نَصۡرُ اللّٰہِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ نَصۡرَ اللّٰہِ قَرِیۡبٌ ﴿۲۱۴﴾
নাকি তোমরা ভেবেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনো তোমাদের নিকট তাদের মত কিছু আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল কষ্ট ও দুর্দশা এবং তারা কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথি মুমিনগণ বলছিল, ‘কখন আল্লাহর সাহায্য (আসবে)’? জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।
****
আল্লাহ তাআলা বলেন
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنۡ یُّتۡرَکُوۡۤا اَنۡ یَّقُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا وَ ہُمۡ لَا یُفۡتَنُوۡنَ ﴿۲﴾
মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না?
*****
وَ مَنۡ اَصۡدَقُ مِنَ اللّٰہِ حَدِیۡثًا
প্রশ্নঃ- এ সংবাদ গুলো কার?
উত্তরঃ- [২] এ সংবাদ আল্লাহর দেয়া। আল্লাহর চাইতে কার কথা সত্য হতে পারে? তিনি নিজে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, তিনি ব্যতীত আর কোন সত্য ইলাহ নেই। তিনি আরও ঘোষণা করছেন যে, তিনি সবাইকে কিয়ামতের দিন একত্রিত করবেন। সুতরাং এ তাওহীদ ও আখেরাতের ব্যাপারে কারও মনে কোন প্রকার সন্দেহ থাকা উচিত হবে না।
প্রশ্নঃ- তাওহীদ ও আখেরাতের ব্যাপারে কারো মনে কোন প্রকার সন্দেহ থাকলে সমস্যা হবে কি?
উত্তরঃ- তাওহীদ ও আখেরাতের ব্যাপারে কারো মনে কোন প্রকার সন্দেহ থাকলে ঈমান থাকবে না।
প্রশ্নঃ- ঈমানের জন্য কোন শর্ত আছে কি?
উত্তরঃ- উক্ত আয়াত স্পষ্ট যে, প্রথমে তাগূতকে অস্বীকার করবে এরপর ঈমান আনবে।
***
যথা:-
আল্লাহ তাআলা বলেন
فَمَنۡ یَّکۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰہِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَکَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی ٭ لَا انۡفِصَامَ لَہَا ؕ وَ اللّٰہُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۵۶﴾
অতএব, যে ব্যক্তি তাগূতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
প্রশ্নঃ- ‘তাগূত’ শব্দটির অর্থ কী?
এব্যপারে বিস্তারিত কিছু বলবেন কি?
উত্তরঃ-
[২] ‘তাগূত’ শব্দটি আরবী ভাষায় সীমালংঘনকারী বা নির্ধারিত সীমা অতিক্রমকারী ব্যক্তিকে বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় তাগুত বলা হয়ে থাকে এমন প্রত্যেক ইবাদাতকৃত বা অনুসৃত অথবা আনুগত্যকৃত সত্তাকে, যার ব্যাপারে ইবাদতকারী বা অনুসরণকারী অথবা আনুগত্যকারী তার বৈধ সীমা অতিক্রম করেছে আর ইবাদাতকৃত বা অনুসৃত অথবা আনুগত্যকৃত সত্তা তা সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করে নিয়েছে বা সেদিকে আহবান করেছে। [ইবনুল কাইয়্যেম: ইলামুল মু'আক্কোয়ীন]
সুতরাং আমরা বুঝতে পারছি যে, তাগুত এমন বান্দাকে বলা হয়, যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা অতিক্রম করে নিজেই প্রভূ ও ইলাহ হবার দাবীদার সাজে এবং আল্লাহ্র বান্দাদেরকে নিজের বন্দেগী ও দাসত্বে নিযুক্ত করে।
প্রশ্নঃ- বান্দার প্রভূত্বের দাবীদার সাজার এবং বিদ্রোহ করার পর্যায় কয়টি ও কী কী?
উত্তরঃ- আল্লাহ্র মোকাবেলায় বান্দার প্রভূত্বের দাবীদার সাজার এবং বিদ্রোহ করার
*তিনটি পর্যায় রয়েছে।*
★ প্রথম পর্যায়ে বান্দা নীতিগতভাবে তাঁর শাসন কর্তৃত্বকে সত্য বলে মেনে নেয়। কিন্তু কার্যত তার বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে। একে বলা হয় ‘ফাসেকী’।
★ দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে আল্লাহ্র শাসন-কর্তৃত্বকে নীতিগতভাবে মেনে না নিয়ে নিজের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় অথবা আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে অন্য কারো বন্দেগী ও দাসত্ব করতে থাকে। একে বলা হয় ‘কুফর ও শির্ক’।
★ তৃতীয় পর্যায়ে সে মালিক ও প্রভূর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তার রাজ্যে এবং তার প্রজাদের মধ্যে নিজের হুকুম চালাতে থাকে। এ শেষ পর্যায়ে যে বান্দা পৌছে যায়, তাকেই বলা হয় তাগুত।
★ এ ধরণের তাগুত অনেক রয়েছে। কিন্তু প্রসিদ্ধ তাগুত ওলামায়ে কেরাম
*পাঁচ প্রকার *উল্লেখ করেছেন।
(এক) শয়তান, সে হচ্ছে সকল প্রকার তাগূতের সর্দার। যেহেতু সে আল্লাহ্র বান্দাদেরকে আল্লাহ্র ইবাদাত থেকে বিরত রেখে তার ‘ইবাদাতের দিকে আহবান করতে থাকে, সেহেতু সে বড় তাগূত।
(দুই) যে গায়েব বা অদৃশ্যের জ্ঞান রয়েছে বলে দাবী করে বা অদৃশ্যের সংবাদ মানুষের সামনে পেশ করে থাকে। যেমন, গণক, জ্যোতিষী প্রমূখ।
(তিন) যে আল্লাহ্র বিধানে বিচার ফয়সালা না করে মানব রচিত বিধানে বিচার-ফয়সালা করাকে আল্লাহ্র বিধানের সমপর্যায়ের অথবা আল্লাহ্র বিধানের চেয়ে উত্তম মনে করে থাকে। অথবা আল্লাহ্র বিধানকে পরিবর্তন করে বা মানুষের জন্য হালাল-হারামের বিধান প্রবর্তন করাকে নিজের জন্য বৈধ মনে করে।
(চার) যার ইবাদাত করা হয় আর সে তাতে সন্তুষ্ট।
(পাঁচ) যে মানুষদেরকে নিজের ‘ইবাদাতের দিকে আহবান করে থাকে।
উপরোক্ত আলোচনায় পাঁচ প্রকার তাগূতের পরিচয় তুলে ধরা হলেও তাগূত আরও অনেক রয়েছে। [কিতাবুত তাওহীদ]
এ ব্যাপারে নিম্নোক্ত নীতিমালার আলোকে আমরা সকল প্রকার তাগূতের পরিচয় লাভ করতে সক্ষম হব।
[১] আল্লাহ্র রুবুবিয়্যত তথা প্রভূত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বৈশিষ্ট্যের দাবী করা।
[২] আল্লাহ্র উলুহিয়াত বা আল্লাহ্র ইবাদাতকে নিজের জন্য সাব্যস্ত করা। এ হিসেবে আল্লাহ্র রুবুবিয়্যাতের বৈশিষ্ট্য যেমন, সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান, জীবিতকরণঃ, মৃত্যুদান, বিপদাপদ থেকে উদ্ধারকরণঃ, হালাল হারামের বিধান প্রবর্তন ইত্যাদিকে যে ব্যক্তি নিজের জন্য দাবী করবে সে তাগূত। অনুরূপভাবে আল্লাহ্কে ইবাদাত করার যত পদ্ধতি আছে যে ব্যক্তি সেগুলো তার নিজের জন্য চাইবে সেও তাগূত । এর আওতায় পড়বে ঐ সমস্ত লোকগুলো যারা নিজেদেরকে সিজদা করার জন্য মানুষকে আহবান করে। নিজেদের জন্য মানত, যবেহ্, সালাত, সাওম, হজ ইত্যাদির আহবান জানায়।
[৩] তাগূতকে অস্বীকার করার অর্থ এই নয় যে, তাগূত নেই বলে বিশ্বাস পোষণ করা। বরং তাগূতকে অস্বীকার করা বলতে বুঝায় আল্লাহ্র ইবাদাত ছাড়া অন্য কারো জন্য ইবাদাত সাব্যস্ত না করা এবং এ বিশ্বাস করা যে আল্লাহ্র ইবাদাত ছাড়া সকল প্রকার ইবাদাতই বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য। আর যারা আল্লাহ্র বৈশিষ্ট্যে কোন কিছু তাদের জন্য দাবী করে থাকে তাদেরকে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রতিপন্ন করা এবং এ বিশ্বাস করা যে তাদের এ ধরণের কোন ক্ষমতা নেই।
[৪] ইসলামকে যারা সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করে তারা যেহেতু ধ্বংস ও প্রবঞ্চনা থেকে নিরাপদ হয়ে যায়, সে জন্য তাদেরকে এমন লোকের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যে কোন শক্ত দড়ির বেষ্টনকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করে পতন থেকে মুক্তি পায়।
আর এমন দড়ি ছিঁড়ে পড়ার যেমন ভয় থাকে না, তেমনিভাবে ইসলামেও কোন রকম ধবংস কিংবা ক্ষতি নেই।
তবে দড়িটি যদি কেউ ছিড়ে দেয় তা যেমন স্বতন্ত্র কথা, তেমনিভাবে কেউ যদি ইসলামকে বর্জন করে, তবে তাও স্বতন্ত্র ব্যাপার ।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে হেদায়েত দাও।
দ্বীনের উপর অটল থাকার তৌফিক দাও।
ঈমানের মজবুতি দিয়ে দাও।
সিরাতে মুস্তাকীমের উপর অটল রাখো।
আমীন।
اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ؕ لَیَجۡمَعَنَّکُمۡ اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ لَا رَیۡبَ فِیۡہِ ؕ وَ مَنۡ اَصۡدَقُ مِنَ اللّٰہِ حَدِیۡثًا ﴿٪۸۷﴾
আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে একত্র করবেন কিয়ামতের দিনে। এতে কোন সন্দেহ নেই। আর কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কে?
★
اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ
প্রশ্নঃ- আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ্ আছে কি? আমাদের জন্য করণীয় কি?
উত্তরঃ- [১] আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ্ নেই। তাঁকেই উপাস্য মনে কর এবং যে কাজই কর, তাঁর ‘ইবাদাতের নিয়তে কর।
প্রশ্নঃ- ক্বিয়ামতের ব্যপারে কিছু বলবেন কি?
উত্তরঃ- (1) لَیَجۡمَعَنَّکُمۡ اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ لَا رَیۡبَ فِیۡہِ ؕ
তিনি কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে একত্রিত করবেন। এতে কোন সন্দেহ নেই। ঐ দিন সবাইকে প্রতিদান দেবেন। কিয়ামতের ওয়াদা, প্রতিদান ও শাস্তির সওয়াব সব সত্য।
উত্তরঃ- (2) فَاِذَا جَآءَتِ الصَّآخَّۃُ ﴿۫۳۳﴾
অতঃপর যখন বিকট আওয়াজ* আসবে,
*কিয়ামত দিবসের আওয়ায।
یَوۡمَ یَفِرُّ الۡمَرۡءُ مِنۡ اَخِیۡہِ ﴿ۙ۳۴﴾
সেদিন মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাই থেকে,
وَ اُمِّہٖ وَ اَبِیۡہِ ﴿ۙ۳۵﴾ তার মা ও তার বাবা থেকে,
وَ صَاحِبَتِہٖ وَ بَنِیۡہِ ﴿ؕ۳۶﴾ তার স্ত্রী ও তার সন্তান-সন্ততি থেকে।
لِکُلِّ امۡرِئٍ مِّنۡہُمۡ یَوۡمَئِذٍ شَاۡنٌ یُّغۡنِیۡہِ ﴿ؕ۳۷﴾ সেদিন তাদের প্রত্যেকেরই একটি গুরুতর অবস্থা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।
وُجُوۡہٌ یَّوۡمَئِذٍ مُّسۡفِرَۃٌ ﴿ۙ۳۸﴾ সেদিন কিছু কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে। ضَاحِکَۃٌ مُّسۡتَبۡشِرَۃٌ ﴿ۚ
۳۹﴾ সহাস্য, প্রফুল্ল।
وَ وُجُوۡہٌ یَّوۡمَئِذٍ عَلَیۡہَا غَبَرَۃٌ ﴿ۙ۴۰﴾ আর কিছু কিছু চেহারার উপর সেদিন থাকবে মলিনতা।
تَرۡہَقُہَا قَتَرَۃٌ ﴿ؕ۴۱﴾ কালিমা সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে।
اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡکَفَرَۃُ الۡفَجَرَۃُ ﴿٪۴۲﴾ তারাই কাফির, পাপাচারী।
****
প্রশ্নঃ- ১) কিয়ামত দিবসে নিকটতমরা তোমার থেকে পলায়ন করবে তা তোমার বুঝে আসছে কি?
উত্তরঃ- উল্লেখিত আয়াত গুলোর দিকে লক্ষ্য কর, তাহলে তা তোমার নিকট স্পষ্ট হয়ে যাবে।
প্রশ্নঃ- দুনিয়াতে এসব নিকটতম আত্মীয়-স্বজন তোমার জন্য দিনের পথে বাধা হবে এটা তোমার জানা আছে কি?
উত্তরঃ-
আল্লাহ তাআলা বলেন
قُلۡ اِنۡ کَانَ اٰبَآؤُکُمۡ وَ اَبۡنَآؤُکُمۡ وَ اِخۡوَانُکُمۡ وَ اَزۡوَاجُکُمۡ وَ عَشِیۡرَتُکُمۡ وَ اَمۡوَالُۨ اقۡتَرَفۡتُمُوۡہَا وَ تِجَارَۃٌ تَخۡشَوۡنَ کَسَادَہَا وَ مَسٰکِنُ تَرۡضَوۡنَہَاۤ اَحَبَّ اِلَیۡکُمۡ مِّنَ اللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ وَ جِہَادٍ فِیۡ سَبِیۡلِہٖ فَتَرَبَّصُوۡا حَتّٰی یَاۡتِیَ اللّٰہُ بِاَمۡرِہٖ ؕ وَ اللّٰہُ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِیۡنَ ﴿٪۲۴﴾
বল, (1)‘তোমাদের পিতা, (2)তোমাদের সন্তান, (3) তোমাদের ভাই (4)তোমাদের স্ত্রী, (5)তোমাদের গোত্র, (6) তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, (7) আর সে ব্যবসা যার মন্দা হওয়ার আশঙ্কা তোমরা করছ এবং (8) সে বাসস্থান, যা তোমরা পছন্দ করছ,
যদি তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয়
১) আল্লাহ,
২) তাঁর রাসূল ও
৩) তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত’। আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।
প্রশ্নঃ- উক্ত আটটি জিনিস তোমার নিকট বেশি প্রিয়?
উত্তরঃ- তাহলে তুমি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে শাস্তির অপেক্ষা করতে থাকো।
প্রশ্নঃ- না। আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ তোমার নিকট বেশি প্রিয়?
উত্তরঃ- যদি আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ তোমার নিকট বেশি প্রিয় হয় তাহলে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে থাকো।
আল্লাহ তাআলা বলেন 2:214
اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ وَ لَمَّا یَاۡتِکُمۡ مَّثَلُ الَّذِیۡنَ خَلَوۡا مِنۡ قَبۡلِکُمۡ ؕ مَسَّتۡہُمُ الۡبَاۡسَآءُ وَ الضَّرَّآءُ وَ زُلۡزِلُوۡا حَتّٰی یَقُوۡلَ الرَّسُوۡلُ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَہٗ مَتٰی نَصۡرُ اللّٰہِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ نَصۡرَ اللّٰہِ قَرِیۡبٌ ﴿۲۱۴﴾
নাকি তোমরা ভেবেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনো তোমাদের নিকট তাদের মত কিছু আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল কষ্ট ও দুর্দশা এবং তারা কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথি মুমিনগণ বলছিল, ‘কখন আল্লাহর সাহায্য (আসবে)’? জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।
****
আল্লাহ তাআলা বলেন
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنۡ یُّتۡرَکُوۡۤا اَنۡ یَّقُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا وَ ہُمۡ لَا یُفۡتَنُوۡنَ ﴿۲﴾
মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না?
*****
وَ مَنۡ اَصۡدَقُ مِنَ اللّٰہِ حَدِیۡثًا
প্রশ্নঃ- এ সংবাদ গুলো কার?
উত্তরঃ- [২] এ সংবাদ আল্লাহর দেয়া। আল্লাহর চাইতে কার কথা সত্য হতে পারে? তিনি নিজে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, তিনি ব্যতীত আর কোন সত্য ইলাহ নেই। তিনি আরও ঘোষণা করছেন যে, তিনি সবাইকে কিয়ামতের দিন একত্রিত করবেন। সুতরাং এ তাওহীদ ও আখেরাতের ব্যাপারে কারও মনে কোন প্রকার সন্দেহ থাকা উচিত হবে না।
প্রশ্নঃ- তাওহীদ ও আখেরাতের ব্যাপারে কারো মনে কোন প্রকার সন্দেহ থাকলে সমস্যা হবে কি?
উত্তরঃ- তাওহীদ ও আখেরাতের ব্যাপারে কারো মনে কোন প্রকার সন্দেহ থাকলে ঈমান থাকবে না।
প্রশ্নঃ- ঈমানের জন্য কোন শর্ত আছে কি?
উত্তরঃ- উক্ত আয়াত স্পষ্ট যে, প্রথমে তাগূতকে অস্বীকার করবে এরপর ঈমান আনবে।
***
যথা:-
আল্লাহ তাআলা বলেন
فَمَنۡ یَّکۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰہِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَکَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی ٭ لَا انۡفِصَامَ لَہَا ؕ وَ اللّٰہُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۵۶﴾
অতএব, যে ব্যক্তি তাগূতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
প্রশ্নঃ- ‘তাগূত’ শব্দটির অর্থ কী?
এব্যপারে বিস্তারিত কিছু বলবেন কি?
উত্তরঃ-
[২] ‘তাগূত’ শব্দটি আরবী ভাষায় সীমালংঘনকারী বা নির্ধারিত সীমা অতিক্রমকারী ব্যক্তিকে বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় তাগুত বলা হয়ে থাকে এমন প্রত্যেক ইবাদাতকৃত বা অনুসৃত অথবা আনুগত্যকৃত সত্তাকে, যার ব্যাপারে ইবাদতকারী বা অনুসরণকারী অথবা আনুগত্যকারী তার বৈধ সীমা অতিক্রম করেছে আর ইবাদাতকৃত বা অনুসৃত অথবা আনুগত্যকৃত সত্তা তা সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করে নিয়েছে বা সেদিকে আহবান করেছে। [ইবনুল কাইয়্যেম: ইলামুল মু'আক্কোয়ীন]
সুতরাং আমরা বুঝতে পারছি যে, তাগুত এমন বান্দাকে বলা হয়, যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা অতিক্রম করে নিজেই প্রভূ ও ইলাহ হবার দাবীদার সাজে এবং আল্লাহ্র বান্দাদেরকে নিজের বন্দেগী ও দাসত্বে নিযুক্ত করে।
প্রশ্নঃ- বান্দার প্রভূত্বের দাবীদার সাজার এবং বিদ্রোহ করার পর্যায় কয়টি ও কী কী?
উত্তরঃ- আল্লাহ্র মোকাবেলায় বান্দার প্রভূত্বের দাবীদার সাজার এবং বিদ্রোহ করার
*তিনটি পর্যায় রয়েছে।*
★ প্রথম পর্যায়ে বান্দা নীতিগতভাবে তাঁর শাসন কর্তৃত্বকে সত্য বলে মেনে নেয়। কিন্তু কার্যত তার বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে। একে বলা হয় ‘ফাসেকী’।
★ দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে আল্লাহ্র শাসন-কর্তৃত্বকে নীতিগতভাবে মেনে না নিয়ে নিজের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় অথবা আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে অন্য কারো বন্দেগী ও দাসত্ব করতে থাকে। একে বলা হয় ‘কুফর ও শির্ক’।
★ তৃতীয় পর্যায়ে সে মালিক ও প্রভূর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তার রাজ্যে এবং তার প্রজাদের মধ্যে নিজের হুকুম চালাতে থাকে। এ শেষ পর্যায়ে যে বান্দা পৌছে যায়, তাকেই বলা হয় তাগুত।
★ এ ধরণের তাগুত অনেক রয়েছে। কিন্তু প্রসিদ্ধ তাগুত ওলামায়ে কেরাম
*পাঁচ প্রকার *উল্লেখ করেছেন।
(এক) শয়তান, সে হচ্ছে সকল প্রকার তাগূতের সর্দার। যেহেতু সে আল্লাহ্র বান্দাদেরকে আল্লাহ্র ইবাদাত থেকে বিরত রেখে তার ‘ইবাদাতের দিকে আহবান করতে থাকে, সেহেতু সে বড় তাগূত।
(দুই) যে গায়েব বা অদৃশ্যের জ্ঞান রয়েছে বলে দাবী করে বা অদৃশ্যের সংবাদ মানুষের সামনে পেশ করে থাকে। যেমন, গণক, জ্যোতিষী প্রমূখ।
(তিন) যে আল্লাহ্র বিধানে বিচার ফয়সালা না করে মানব রচিত বিধানে বিচার-ফয়সালা করাকে আল্লাহ্র বিধানের সমপর্যায়ের অথবা আল্লাহ্র বিধানের চেয়ে উত্তম মনে করে থাকে। অথবা আল্লাহ্র বিধানকে পরিবর্তন করে বা মানুষের জন্য হালাল-হারামের বিধান প্রবর্তন করাকে নিজের জন্য বৈধ মনে করে।
(চার) যার ইবাদাত করা হয় আর সে তাতে সন্তুষ্ট।
(পাঁচ) যে মানুষদেরকে নিজের ‘ইবাদাতের দিকে আহবান করে থাকে।
উপরোক্ত আলোচনায় পাঁচ প্রকার তাগূতের পরিচয় তুলে ধরা হলেও তাগূত আরও অনেক রয়েছে। [কিতাবুত তাওহীদ]
এ ব্যাপারে নিম্নোক্ত নীতিমালার আলোকে আমরা সকল প্রকার তাগূতের পরিচয় লাভ করতে সক্ষম হব।
[১] আল্লাহ্র রুবুবিয়্যত তথা প্রভূত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বৈশিষ্ট্যের দাবী করা।
[২] আল্লাহ্র উলুহিয়াত বা আল্লাহ্র ইবাদাতকে নিজের জন্য সাব্যস্ত করা। এ হিসেবে আল্লাহ্র রুবুবিয়্যাতের বৈশিষ্ট্য যেমন, সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান, জীবিতকরণঃ, মৃত্যুদান, বিপদাপদ থেকে উদ্ধারকরণঃ, হালাল হারামের বিধান প্রবর্তন ইত্যাদিকে যে ব্যক্তি নিজের জন্য দাবী করবে সে তাগূত। অনুরূপভাবে আল্লাহ্কে ইবাদাত করার যত পদ্ধতি আছে যে ব্যক্তি সেগুলো তার নিজের জন্য চাইবে সেও তাগূত । এর আওতায় পড়বে ঐ সমস্ত লোকগুলো যারা নিজেদেরকে সিজদা করার জন্য মানুষকে আহবান করে। নিজেদের জন্য মানত, যবেহ্, সালাত, সাওম, হজ ইত্যাদির আহবান জানায়।
[৩] তাগূতকে অস্বীকার করার অর্থ এই নয় যে, তাগূত নেই বলে বিশ্বাস পোষণ করা। বরং তাগূতকে অস্বীকার করা বলতে বুঝায় আল্লাহ্র ইবাদাত ছাড়া অন্য কারো জন্য ইবাদাত সাব্যস্ত না করা এবং এ বিশ্বাস করা যে আল্লাহ্র ইবাদাত ছাড়া সকল প্রকার ইবাদাতই বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য। আর যারা আল্লাহ্র বৈশিষ্ট্যে কোন কিছু তাদের জন্য দাবী করে থাকে তাদেরকে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রতিপন্ন করা এবং এ বিশ্বাস করা যে তাদের এ ধরণের কোন ক্ষমতা নেই।
[৪] ইসলামকে যারা সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করে তারা যেহেতু ধ্বংস ও প্রবঞ্চনা থেকে নিরাপদ হয়ে যায়, সে জন্য তাদেরকে এমন লোকের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যে কোন শক্ত দড়ির বেষ্টনকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করে পতন থেকে মুক্তি পায়।
আর এমন দড়ি ছিঁড়ে পড়ার যেমন ভয় থাকে না, তেমনিভাবে ইসলামেও কোন রকম ধবংস কিংবা ক্ষতি নেই।
তবে দড়িটি যদি কেউ ছিড়ে দেয় তা যেমন স্বতন্ত্র কথা, তেমনিভাবে কেউ যদি ইসলামকে বর্জন করে, তবে তাও স্বতন্ত্র ব্যাপার ।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে হেদায়েত দাও।
দ্বীনের উপর অটল থাকার তৌফিক দাও।
ঈমানের মজবুতি দিয়ে দাও।
সিরাতে মুস্তাকীমের উপর অটল রাখো।
আমীন।