সূরাহ আহযাব পাঠ করলে কখনো কখনো সামনে ভেসে উঠলো বিলাদুশ শামের বর্তমান যুদ্ধের চিত্র! গাজওয়াতুল আহযাব তথা খন্দকের যুদ্ধের বিভিন্ন চিত্রের সাথে বর্তমান শামের জিহাদের অনেকাংশেই মিল রয়েছে।
সম্প্রতি সিরিয়ায় আল কায়েদার প্রাক্তন শাখা তাহরিরুশ শাম বাশার আল আসাদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে। বাশারের এলাকা থেকে পণ্যের সাপ্লাই ইদলিবে ঢুকার পথে যেসব মুজাহিদ গ্রুপ বাধা দিচ্ছে, যেমন ফায়লাক আল শাম, তাদের ওপর তাহরীর আক্রমণ করেছে এবং দূরে হটিয়ে দিয়েছে।
এই গ্রুপের এক কমান্ডার আবু মারিয়া আল কাহতানি গ্লোবাল তানজিম আল কায়েদাকে ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। যাচ্ছলে! এরা না ছিলো আল কায়েদার সিরিয়ান শাখার কমান্ডার?
এই কারণেই জিহাদের ময়দানে "পরীক্ষা" জিনিসটার প্রয়োজন। সহজে বিজয় অর্জিত হলে মুমিন ও মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য করা যায় না। ফলে দুটি একত্রিত অবস্থায় থেকে যায়।
ঈমানী কঠোর পরীক্ষার মাধ্যমে দুই জিনিস আলাদা হয়ে যায়।
যেমনটা আমরা দেখি, খন্দকের যুদ্ধের সময়। তখন মুমিনদের উপর এতটা কঠিন ঈমানী পরীক্ষা হচ্ছিলো যে আরো একটু বেশি পরীক্ষা নিলে সাহাবায়ে কেরামের অনেকে হয়তো আল্লাহর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ শুরু করে দিতেন। সেটা আল্লাহ নিজেই বলেছেন কোরআনে, সুরাহ আহযাবের ১০ ও ১১ নম্বর আয়াতে,
إِذْ جَاءُوكُمْ مِنْ فَوْقِكُمْ وَمِنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَإِذْ زَاغَتِ الْأَبْصَارُ وَبَلَغَتِ الْقُلُوبُ الْحَنَاجِرَ وَتَظُنُّونَ بِاللَّهِ الظُّنُونَا (10) هُنَالِكَ ابْتُلِيَ الْمُؤْمِنُونَ وَزُلْزِلُوا زِلْزَالًا شَدِيدًا (11)
“যখন তারা তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল উচ্চ ভূমি ও নিম্নভূমি থেকে এবং যখন (আতঙ্কে) তোমাদের দৃষ্টিভ্রম হচ্ছিল, প্রাণ কন্ঠাগত হয়েছিল এবং তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা (বিরূপ) ধারণা পোষণ করতে শুরু করছিলে। সে সময়ে মুমিনগণ পরীক্ষিত হয়েছিল এবং ভীষণভাবে প্রকম্পিত হচ্ছিল।” (সুরাহ আহযাব:১০-১১)।
মুজাহিদগণ ২০১৫ সালে দামেস্কের ভিতরে ঢুকে যান। আসাদের পতন মাত্র সময়ের ব্যাপার! কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ভিন্ন। তিনি পরীক্ষা নেবেন। ঈমানদার ও দুর্বল ঈমানের লোকদের আলাদা করবেন। জিহাদের ফিল্ডকে পবিত্র করবেন যেখানে শুধু ঈমানদাররা থাকবে।
রাশিয়া নেমে গেলো ফিল্ডে। তার সাথে বিপুল শক্তি। সাথে আছে মুরতাদ রমজান কাদিরভের দুধর্ষ চেচেন যুদ্ধারা। বহুমুখী যুদ্ধে জড়িয়ে গেলেন মুজাহিদগণ। হাতছাড়া হতে থাকলো তাদের ভূখণ্ড। দামেস্ক, দারা, হিমস, হামা ও আলেপ্পো হাতছাড়া হয়ে শেষে তারা ইদলিব শহরে অবরুদ্ধ হলেন।
বাশার আল আসাদ আর রাশিয়া যখন ইদলিবে চূড়ান্ত হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন এই মুজাহিদগণ ভয়ে জিহাদের কথা ভুলে গেলেন। জাওলানি সাহেব জানালেন যে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা শামের জনগণের ইচ্ছা! আল কায়েদার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন ঘোষণা দিলেন এবং সেক্যুলার তুরস্কের আশ্রয় গ্রহণ করলেন। এবং তারা বলতে লাগলেন আল কায়েদার অন্তর্ভুক্ত হয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন! আসলে আল কায়দাকে দোষ দিচ্ছে না। বরং শরীয়াহ এর জন্য ক্বীতালকেই দোষারোপ করছে। যিনি ক্বিতালের আদেশ করেছেন তারই যেনো ভুল হয়েছে এই আদেশ দিয়ে,(নাউযুবিল্লাহ)
সুরাহ আহযাব পাঠ করলে কেমন যেনো একদম বাস্তবতা মিলে যায়!
وَإِذْ يَقُولُ ٱلْمُنَٰفِقُونَ وَٱلَّذِينَ فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌ مَّا وَعَدَنَا ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ إِلَّا غُرُورًا
এবং যখন মুনাফিক ও যাদের অন্তরে রোগ ছিল তারা বলছিল, আমাদেরকে প্রদত্ত আল্লাহ ও রসূলের প্রতিশ্রুতি প্রতারণা বৈ নয়।
(সূরাহ আহযাব আয়াত-১৩)।
.
শামের এই পরিস্থিতি মুমিন ও অন্তরে রোগ আছে এমন মুজাহিদদের পৃথক করে দিলো। কয়েক হাজার মুজাহিদ তাহরীর আল শাম ছেড়ে গিয়ে গঠন করলেন হুররাস আদ দ্বীন। আরো কয়েকটি মুজাহিদ জামাআত জাওলানির দল থেকে পৃথক হয়ে নিজেদের মতো করে জিহাদ চালিয়ে গেলেন রাশিয়া ও বাশারের বিরুদ্ধে।
তখন জাওলানি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলেন। তাদেরকে তার অধিকৃত ইদলিব ছেড়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন। সম্প্রতি জুনুদ আল শাম এর কমান্ডার মুসলিম শিশানি(হাফি) তাদের বশ্যতা স্বীকার না করে তিনি জাওলানি তাদেরকে আদেশ দেন ইদলিব ছেড়ে যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যেতে।
এই ঘটনা কেমন যেনো সুরাহ আহযাবের এই আয়াতেরই প্রতিফলন,
وَإِذْ قَالَت طَّآئِفَةٌ مِّنْهُمْ يَٰٓأَهْلَ يَثْرِبَ لَا مُقَامَ لَكُمْ فَٱرْجِعُوا۟ۚ وَيَسْتَـْٔذِنُ فَرِيقٌ مِّنْهُمُ ٱلنَّبِىَّ يَقُولُونَ إِنَّ بُيُوتَنَا عَوْرَةٌ وَمَا هِىَ بِعَوْرَةٍۖ إِن يُرِيدُونَ إِلَّا فِرَارًا
আর যখন তাদের একদল বলেছিল, ‘হে ইয়াসরিববাসী! (এখানে রাসূলের কাছে প্রতিরোধ করার) তোমাদের কোন স্থান নেই সুতরাং তোমরা (ঘরে) ফিরে যাও' এবং তাদের মধ্যে একদল নবীর কাছে অব্যাহতি প্রার্থনা করে বলছিল, 'আমাদের বাড়িঘর অরক্ষিত'; অথচ সেগুলো অরক্ষিত ছিল না, আসলে পালিয়ে যাওয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
(সূরাহ আহযাব আয়াত-১৩)
.
আসলে শামের অবস্থা একেবারেই এখন আনপ্রেডিক্টেবল। কালকের বন্ধু আজকের শত্রু। কালকে যাদের তাকওয়া ও খোদাভীরুতায় একদম পারফেক্ট মনে হতো আজ তারা ক্ষমতা রক্ষার্থে জিহাদের পথ ছেড়ে গোমরাহীর পথে। যাদের বয়ান শুনে শরীরে জিহাদের উদ্যম তৈরি হতো, তাদের অনেকে দাঁড়ি ছেটে এখন মডারেট পন্থা অবলম্বন করছেন। তাদের এই পৃষ্ঠপ্রদর্শনের কথাটাও যেনো এই সূরায় উঠে এসেছে,
وَلَقَدْ كَانُوا۟ عَٰهَدُوا۟ ٱللَّهَ مِن قَبْلُ لَا يُوَلُّونَ ٱلْأَدْبَٰرَۚ وَكَانَ عَهْدُ ٱللَّهِ مَسْـُٔولًا
অথচ তারা পূর্বে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না। আল্লাহর অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
(সূরাহ আহযাব- আয়াত ১৫)
.
২০১৮-১৯ সালের দিকে ঈমানের এই মহাপরীক্ষার সময় শামের প্রায় এক লাখ মুজাহিদ বেশিরভাগই "শরীয়াহ" এর জন্য জিহাদ ছেড়ে ক্ষমতার লড়াই এর পথ ধরলেন। আর খুবই অল্প সংখ্যক মুজাহিদ(মাত্র কয়েক হাজার) বিশুদ্ধ তাওহীদের পথে রয়ে গেলেন। তাদের কথাও বাদ যায়নি,
قَدْ يَعْلَمُ ٱللَّهُ ٱلْمُعَوِّقِينَ مِنكُمْ وَٱلْقَآئِلِينَ لِإِخْوَٰنِهِمْ هَلُمَّ إِلَيْنَاۖ وَلَا يَأْتُونَ ٱلْبَأْسَ إِلَّا قَلِيلًا
আল্লাহ্ অবশ্যই জানেন তোমাদের মধ্যে কারা বাধাদানকারী এবং কারা তাদের ভাইদেরকে বলে, আমাদের দিকে চলে এসো। ' তারা অল্পই যুদ্ধে যোগদান করে।
(সূরাহ আহযাব - ১৮)
শামের ভূমিতে এখনও জিহাদ চালিয়ে যাওয়া এই ক্ষুদ্র জামাআতগুলো এখনও শত পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েও জিহাদের রশিকে দাঁত কামড়ে আছেন। তাদের ওপর একদিকে রাশিয়া, আমেরিকার ড্রোন ও বিমান হামলা অপরদিকে জাওলানির সেনাদের জুলুম, এতকিছুর পরেও পরেও এই জামাআতটি শামে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ চালাচ্ছে, তাদের ব্যাপারেই যেনো বলা হচ্ছে,
مِّنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا۟ مَا عَٰهَدُوا۟ ٱللَّهَ عَلَيْهِۖ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُۥ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُۖ وَمَا بَدَّلُوا۟ تَبْدِيلًا
মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি।
(সূরাহ আহযাব: আয়াত ২৩)
বি ইয নিল্লাহ, আল্লাহ পাক এই মুজাহিদ দলটাকেই সাহায্য করবেন। মুরতাদ বাশার, ইরান, রাশিয়া, আমেরিকার শক্তিকে চুরমার করবেন। যেটা তিনি করেছিলেন খন্দকের যুদ্ধের সময়।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱذْكُرُوا۟ نِعْمَةَ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَآءَتْكُمْ جُنُودٌ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا وَجُنُودًا لَّمْ تَرَوْهَاۚ وَكَانَ ٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرًا
হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল, অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে ঝঞ্চাবায়ু এবং এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলাম, যাদেরকে তোমরা দেখতে না। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন।
(সূরাহ আহযাব আয়াত-৯)
এবং মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ আমেরিকা ও রাশিয়ার ক্রুসেডারদের শামের ভূমি থেকে ব্যর্থ মনোরথ করে ফিরিয়ে দেবেন। তারা যে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এসেছিলো তা কোনোদিনই পুরা হবে না। আল্লাহ পাক এভাবেই খন্দকের যুদ্ধের সময় কাফেরদেরকে লাঞ্ছিত করে ফিরিয়ে দেন।
وَرَدَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ بِغَيْظِهِمْ لَمْ يَنَالُوا۟ خَيْرًاۚ وَكَفَى ٱللَّهُ ٱلْمُؤْمِنِينَ ٱلْقِتَالَۚ وَكَانَ ٱللَّهُ قَوِيًّا عَزِيزًا
আল্লাহ কাফেরদেরকে ক্রুদ্ধাবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন। তারা কোন কল্যাণ পায়নি। যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ মুমিনদের জন্যে যথেষ্ট হয়ে গেছেন। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।
(সূরাহ আহযাব - আয়াত:২৫)
সম্প্রতি সিরিয়ায় আল কায়েদার প্রাক্তন শাখা তাহরিরুশ শাম বাশার আল আসাদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে। বাশারের এলাকা থেকে পণ্যের সাপ্লাই ইদলিবে ঢুকার পথে যেসব মুজাহিদ গ্রুপ বাধা দিচ্ছে, যেমন ফায়লাক আল শাম, তাদের ওপর তাহরীর আক্রমণ করেছে এবং দূরে হটিয়ে দিয়েছে।
এই গ্রুপের এক কমান্ডার আবু মারিয়া আল কাহতানি গ্লোবাল তানজিম আল কায়েদাকে ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। যাচ্ছলে! এরা না ছিলো আল কায়েদার সিরিয়ান শাখার কমান্ডার?
এই কারণেই জিহাদের ময়দানে "পরীক্ষা" জিনিসটার প্রয়োজন। সহজে বিজয় অর্জিত হলে মুমিন ও মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য করা যায় না। ফলে দুটি একত্রিত অবস্থায় থেকে যায়।
ঈমানী কঠোর পরীক্ষার মাধ্যমে দুই জিনিস আলাদা হয়ে যায়।
যেমনটা আমরা দেখি, খন্দকের যুদ্ধের সময়। তখন মুমিনদের উপর এতটা কঠিন ঈমানী পরীক্ষা হচ্ছিলো যে আরো একটু বেশি পরীক্ষা নিলে সাহাবায়ে কেরামের অনেকে হয়তো আল্লাহর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ শুরু করে দিতেন। সেটা আল্লাহ নিজেই বলেছেন কোরআনে, সুরাহ আহযাবের ১০ ও ১১ নম্বর আয়াতে,
إِذْ جَاءُوكُمْ مِنْ فَوْقِكُمْ وَمِنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَإِذْ زَاغَتِ الْأَبْصَارُ وَبَلَغَتِ الْقُلُوبُ الْحَنَاجِرَ وَتَظُنُّونَ بِاللَّهِ الظُّنُونَا (10) هُنَالِكَ ابْتُلِيَ الْمُؤْمِنُونَ وَزُلْزِلُوا زِلْزَالًا شَدِيدًا (11)
“যখন তারা তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল উচ্চ ভূমি ও নিম্নভূমি থেকে এবং যখন (আতঙ্কে) তোমাদের দৃষ্টিভ্রম হচ্ছিল, প্রাণ কন্ঠাগত হয়েছিল এবং তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা (বিরূপ) ধারণা পোষণ করতে শুরু করছিলে। সে সময়ে মুমিনগণ পরীক্ষিত হয়েছিল এবং ভীষণভাবে প্রকম্পিত হচ্ছিল।” (সুরাহ আহযাব:১০-১১)।
মুজাহিদগণ ২০১৫ সালে দামেস্কের ভিতরে ঢুকে যান। আসাদের পতন মাত্র সময়ের ব্যাপার! কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ভিন্ন। তিনি পরীক্ষা নেবেন। ঈমানদার ও দুর্বল ঈমানের লোকদের আলাদা করবেন। জিহাদের ফিল্ডকে পবিত্র করবেন যেখানে শুধু ঈমানদাররা থাকবে।
রাশিয়া নেমে গেলো ফিল্ডে। তার সাথে বিপুল শক্তি। সাথে আছে মুরতাদ রমজান কাদিরভের দুধর্ষ চেচেন যুদ্ধারা। বহুমুখী যুদ্ধে জড়িয়ে গেলেন মুজাহিদগণ। হাতছাড়া হতে থাকলো তাদের ভূখণ্ড। দামেস্ক, দারা, হিমস, হামা ও আলেপ্পো হাতছাড়া হয়ে শেষে তারা ইদলিব শহরে অবরুদ্ধ হলেন।
বাশার আল আসাদ আর রাশিয়া যখন ইদলিবে চূড়ান্ত হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন এই মুজাহিদগণ ভয়ে জিহাদের কথা ভুলে গেলেন। জাওলানি সাহেব জানালেন যে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা শামের জনগণের ইচ্ছা! আল কায়েদার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন ঘোষণা দিলেন এবং সেক্যুলার তুরস্কের আশ্রয় গ্রহণ করলেন। এবং তারা বলতে লাগলেন আল কায়েদার অন্তর্ভুক্ত হয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন! আসলে আল কায়দাকে দোষ দিচ্ছে না। বরং শরীয়াহ এর জন্য ক্বীতালকেই দোষারোপ করছে। যিনি ক্বিতালের আদেশ করেছেন তারই যেনো ভুল হয়েছে এই আদেশ দিয়ে,(নাউযুবিল্লাহ)
সুরাহ আহযাব পাঠ করলে কেমন যেনো একদম বাস্তবতা মিলে যায়!
وَإِذْ يَقُولُ ٱلْمُنَٰفِقُونَ وَٱلَّذِينَ فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌ مَّا وَعَدَنَا ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ إِلَّا غُرُورًا
এবং যখন মুনাফিক ও যাদের অন্তরে রোগ ছিল তারা বলছিল, আমাদেরকে প্রদত্ত আল্লাহ ও রসূলের প্রতিশ্রুতি প্রতারণা বৈ নয়।
(সূরাহ আহযাব আয়াত-১৩)।
.
শামের এই পরিস্থিতি মুমিন ও অন্তরে রোগ আছে এমন মুজাহিদদের পৃথক করে দিলো। কয়েক হাজার মুজাহিদ তাহরীর আল শাম ছেড়ে গিয়ে গঠন করলেন হুররাস আদ দ্বীন। আরো কয়েকটি মুজাহিদ জামাআত জাওলানির দল থেকে পৃথক হয়ে নিজেদের মতো করে জিহাদ চালিয়ে গেলেন রাশিয়া ও বাশারের বিরুদ্ধে।
তখন জাওলানি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলেন। তাদেরকে তার অধিকৃত ইদলিব ছেড়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন। সম্প্রতি জুনুদ আল শাম এর কমান্ডার মুসলিম শিশানি(হাফি) তাদের বশ্যতা স্বীকার না করে তিনি জাওলানি তাদেরকে আদেশ দেন ইদলিব ছেড়ে যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যেতে।
এই ঘটনা কেমন যেনো সুরাহ আহযাবের এই আয়াতেরই প্রতিফলন,
وَإِذْ قَالَت طَّآئِفَةٌ مِّنْهُمْ يَٰٓأَهْلَ يَثْرِبَ لَا مُقَامَ لَكُمْ فَٱرْجِعُوا۟ۚ وَيَسْتَـْٔذِنُ فَرِيقٌ مِّنْهُمُ ٱلنَّبِىَّ يَقُولُونَ إِنَّ بُيُوتَنَا عَوْرَةٌ وَمَا هِىَ بِعَوْرَةٍۖ إِن يُرِيدُونَ إِلَّا فِرَارًا
আর যখন তাদের একদল বলেছিল, ‘হে ইয়াসরিববাসী! (এখানে রাসূলের কাছে প্রতিরোধ করার) তোমাদের কোন স্থান নেই সুতরাং তোমরা (ঘরে) ফিরে যাও' এবং তাদের মধ্যে একদল নবীর কাছে অব্যাহতি প্রার্থনা করে বলছিল, 'আমাদের বাড়িঘর অরক্ষিত'; অথচ সেগুলো অরক্ষিত ছিল না, আসলে পালিয়ে যাওয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
(সূরাহ আহযাব আয়াত-১৩)
.
আসলে শামের অবস্থা একেবারেই এখন আনপ্রেডিক্টেবল। কালকের বন্ধু আজকের শত্রু। কালকে যাদের তাকওয়া ও খোদাভীরুতায় একদম পারফেক্ট মনে হতো আজ তারা ক্ষমতা রক্ষার্থে জিহাদের পথ ছেড়ে গোমরাহীর পথে। যাদের বয়ান শুনে শরীরে জিহাদের উদ্যম তৈরি হতো, তাদের অনেকে দাঁড়ি ছেটে এখন মডারেট পন্থা অবলম্বন করছেন। তাদের এই পৃষ্ঠপ্রদর্শনের কথাটাও যেনো এই সূরায় উঠে এসেছে,
وَلَقَدْ كَانُوا۟ عَٰهَدُوا۟ ٱللَّهَ مِن قَبْلُ لَا يُوَلُّونَ ٱلْأَدْبَٰرَۚ وَكَانَ عَهْدُ ٱللَّهِ مَسْـُٔولًا
অথচ তারা পূর্বে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না। আল্লাহর অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
(সূরাহ আহযাব- আয়াত ১৫)
.
২০১৮-১৯ সালের দিকে ঈমানের এই মহাপরীক্ষার সময় শামের প্রায় এক লাখ মুজাহিদ বেশিরভাগই "শরীয়াহ" এর জন্য জিহাদ ছেড়ে ক্ষমতার লড়াই এর পথ ধরলেন। আর খুবই অল্প সংখ্যক মুজাহিদ(মাত্র কয়েক হাজার) বিশুদ্ধ তাওহীদের পথে রয়ে গেলেন। তাদের কথাও বাদ যায়নি,
قَدْ يَعْلَمُ ٱللَّهُ ٱلْمُعَوِّقِينَ مِنكُمْ وَٱلْقَآئِلِينَ لِإِخْوَٰنِهِمْ هَلُمَّ إِلَيْنَاۖ وَلَا يَأْتُونَ ٱلْبَأْسَ إِلَّا قَلِيلًا
আল্লাহ্ অবশ্যই জানেন তোমাদের মধ্যে কারা বাধাদানকারী এবং কারা তাদের ভাইদেরকে বলে, আমাদের দিকে চলে এসো। ' তারা অল্পই যুদ্ধে যোগদান করে।
(সূরাহ আহযাব - ১৮)
শামের ভূমিতে এখনও জিহাদ চালিয়ে যাওয়া এই ক্ষুদ্র জামাআতগুলো এখনও শত পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েও জিহাদের রশিকে দাঁত কামড়ে আছেন। তাদের ওপর একদিকে রাশিয়া, আমেরিকার ড্রোন ও বিমান হামলা অপরদিকে জাওলানির সেনাদের জুলুম, এতকিছুর পরেও পরেও এই জামাআতটি শামে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ চালাচ্ছে, তাদের ব্যাপারেই যেনো বলা হচ্ছে,
مِّنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا۟ مَا عَٰهَدُوا۟ ٱللَّهَ عَلَيْهِۖ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُۥ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُۖ وَمَا بَدَّلُوا۟ تَبْدِيلًا
মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি।
(সূরাহ আহযাব: আয়াত ২৩)
বি ইয নিল্লাহ, আল্লাহ পাক এই মুজাহিদ দলটাকেই সাহায্য করবেন। মুরতাদ বাশার, ইরান, রাশিয়া, আমেরিকার শক্তিকে চুরমার করবেন। যেটা তিনি করেছিলেন খন্দকের যুদ্ধের সময়।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱذْكُرُوا۟ نِعْمَةَ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَآءَتْكُمْ جُنُودٌ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا وَجُنُودًا لَّمْ تَرَوْهَاۚ وَكَانَ ٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرًا
হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল, অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে ঝঞ্চাবায়ু এবং এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলাম, যাদেরকে তোমরা দেখতে না। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন।
(সূরাহ আহযাব আয়াত-৯)
এবং মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ আমেরিকা ও রাশিয়ার ক্রুসেডারদের শামের ভূমি থেকে ব্যর্থ মনোরথ করে ফিরিয়ে দেবেন। তারা যে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এসেছিলো তা কোনোদিনই পুরা হবে না। আল্লাহ পাক এভাবেই খন্দকের যুদ্ধের সময় কাফেরদেরকে লাঞ্ছিত করে ফিরিয়ে দেন।
وَرَدَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ بِغَيْظِهِمْ لَمْ يَنَالُوا۟ خَيْرًاۚ وَكَفَى ٱللَّهُ ٱلْمُؤْمِنِينَ ٱلْقِتَالَۚ وَكَانَ ٱللَّهُ قَوِيًّا عَزِيزًا
আল্লাহ কাফেরদেরকে ক্রুদ্ধাবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন। তারা কোন কল্যাণ পায়নি। যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ মুমিনদের জন্যে যথেষ্ট হয়ে গেছেন। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।
(সূরাহ আহযাব - আয়াত:২৫)
Comment