(23) আপনি কি সিরাতে মুস্তাকীম (সঠিক পথ) এর পরিচয় জানতে ইচ্ছুক? (2)
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا ضَرَبۡتُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ فَتَبَیَّنُوۡا وَ لَا تَقُوۡلُوۡا لِمَنۡ اَلۡقٰۤی اِلَیۡکُمُ السَّلٰمَ لَسۡتَ مُؤۡمِنًا ۚ تَبۡتَغُوۡنَ عَرَضَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۫ فَعِنۡدَ اللّٰہِ مَغَانِمُ کَثِیۡرَۃٌ ؕ کَذٰلِکَ کُنۡتُمۡ مِّنۡ قَبۡلُ فَمَنَّ اللّٰہُ عَلَیۡکُمۡ فَتَبَیَّنُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرًا ﴿۹۴﴾
হে মুমিনগণ, যখন তোমরা আল্লাহর রাস্তায় বের হবে তখন যাচাই করবে এবং যে তোমাদেরকে সালাম দেবে দুনিয়ার জীবনের সম্পদের আশায় তাকে বলবে না যে, ‘তুমি মুমিন নও’।
বস্ত্ততঃ আল্লাহর কাছে প্রচুর গনীমত আছে। তোমরাতো পূর্বে এরূপই ছিলে।
অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করলেন।
সুতরাং তোমরা যাচাই করবে। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত।
*****
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন যে
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡہَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُہُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰہِ ؕ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ ﴿۶۰﴾
নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
****
‘ফী সাবীলিল্লাহ’ (2)
****
1-2)
এ নিবন্ধের আলোচ্য বিষয় যেহেতু সপ্তম খাত ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ তাই এখানে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর পরিচয় এবং কোন শ্রেণীর লোক এর আওতাভুক্ত তা দলীলসহ উল্লেখ করা হল।
‘ফী সাবীলিল্লাহ’
যেমনটি বলা হল যাকাতের সপ্তম খাত হচ্ছে, ‘ফী সাবীলিল্লাহ’।
এর শাব্দিক অর্থ হল আল্লাহর পথে।
আর শরয়ী ও পারিভাষিক অর্থে
‘ফী সাবীলিল্লাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আল্লাহর রাস্তায় সশস্ত্র জিহাদকারীগণ।
‘ফী সাবীলিল্লাহ’র পারিভাষিক এ অর্থটি সালাফ তথা সাহাবা-তাবেয়ীন এবং মুজতাহিদ ইমামগণের নিকট স্বীকৃত ছিল।
অর্থাৎ ফী সাবীলিল্লাহ ‘মুতলাক’ (ব্যাখ্যামুক্ত)ভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা উক্ত অর্থটিই বুঝতেন।
ইবনুল আসীর রাহ. বলেন:
قد تكرر في الحديث ذكر “سبيل الله وابن السبيل” …وسبيل الله عام يقع على كل عمل خالص سلك به طريق التقرب إلى الله تعالى بأداء الفرائض والنوافل وأنواع التطوعات، وإذا أطلق فهو في الغالب واقع على الجهاد، حتى صار لكثرة الاستعمال كأنه مقصور عليه.
হাদীসে
‘সাবীলুল্লাহ’ ও ‘ইবনুস সাবীল’- এর কথা বারংবার এসেছে। ‘সাবীলুল্লাহ’ শব্দটি আম (ব্যাপক)।
ফরয, ওয়াজিব, নফল ও বিভিন্ন প্রকারের পুণ্যের কাজের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের পথে সব ধরনের খালেস আমল এর অন্তর্ভুক্ত।
আর ‘সাবীলুল্লাহ’কে যখন ‘মুতলাক’ (ব্যাখ্যামুক্ত)ভাবে বলা হয় তখন তা সাধারণত জিহাদের অর্থে ব্যবহার হয়।
এমনকি এই অর্থে সাবীলুল্লাহ শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হওয়ার কারণে ‘সাবীলুল্লাহ’ যেন ঐ মর্মের মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। [আননিহায়া ফী গারীবিল হাদীস ২/৩৩৮]
উপরোক্ত বক্তব্যের সমর্থনে নিম্নে দুয়েকটি হাদীস ও আসার উল্লেখ করা হল।
সহীহ মুসলিমে এসেছে:
أَنّ عُمَرَ بْنَ الْخَطّابِ وَهُوَ يَقُولُ: حَمَلْتُ عَلَى فَرَسٍ عَتِيقٍ فِي سَبِيلِ اللهِ.
উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, আমি একটি উৎকৃষ্টমানের ঘোড়া ‘সাবীলুল্লাহ’-এ সদকা করলাম। [সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬২০]
ইমাম নববী রাহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন:
“حملت على فرس عتيق في سبيل الله” معناه تصدقت به ووهبته لمن يقاتل عليه في سبيل الله.
এর অর্থ হল, আমি এটিকে সদকা করলাম এবং তা এমন ব্যক্তিকে দান করলাম, যে এর দ্বারা ‘সাবীলুল্লাহ’-এ (আল্লাহর রাস্তায়) জিহাদ করবে। [শরহুন নববী ১১/৬২]
সহীহ বুখারীতে এসেছে:
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنّهُ قَالَ: لَغَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللهِ، أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدّنْيَا وَمَا فِيهَا.
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘সাবীলুল্লাহ’-এ (আল্লাহর রাস্তায়) অতিবাহিত এক সকাল বা এক বিকাল দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা আছে তা হতে উত্তম। [সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৯২]
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন:
قوله في سبيل الله أي الجهاد.
‘ফী সাবীলিল্লাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে জিহাদ। [ফাতহুল বারী ৬/১৭]
সহীহ বুখারীর আরেক বর্ণনায় এসেছে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ: الخَيْلُ لِرَجُلٍ أَجْرٌ، وَلِرَجُلٍ سِتْرٌ، وَعَلَى رَجُلٍ وِزْرٌ، فَأَمّا الّذِي لَهُ أَجْرٌ: فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِي سَبِيلِ اللهِ.
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঘোড়া তিন ব্যক্তির জন্য। কারো জন্য সাওয়াবের। কারো জন্য (দরিদ্রতা ও পরনির্ভরতা থেকে) আত্মরক্ষা। আর কারো জন্য গুনাহের কারণ।
ঐ ব্যক্তির জন্য তা সওয়াবের, যে তা ‘সাবীলুল্লাহ’-এ (আল্লাহর রাস্তায়) আবদ্ধ করেছে। [সহীহ বুখারী, হাদীস ২৮৬০]
ইমাম নববী রাহ. বলেন:
(ربطها في سبيل الله) أي أعدها للجهاد.
‘সাবীলুল্লাহ’-এ (আল্লাহর রাস্তায়) আবদ্ধ করেছে’ এর অর্থ হল, জিহাদের জন্য প্রস্তুত করেছে। [শরহুন নববী ৭/৬৬]
যাকাতের খাতসমূহ বর্ণনাকারী [সূরা তাওবার (৯) : ৬০নং] আয়াতে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ দ্বারা যে কাফেরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদকারী মুজাহিদ উদ্দেশ্য, নিম্নের হাদীস দ্বারা তা আরো সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়।
সুনানে ইবনে মাজাহ্য়ে আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম ইরশাদ করেছেন:
لَا تَحِلّ الصّدَقَةُ لِغَنِيٍّ إِلّا لِخَمْسَةٍ: لِعَامِلٍ عَلَيْهَا، أَوْ لِغَازٍ فِي
سَبِيلِ اللهِ، أَوْ لِغَنِيٍّ اشْتَرَاهَا بِمَالِهِ، أَوْ فَقِيرٍ تُصُدِّقَ عَلَيْهِ فَأَهْدَاهَا لِغَنِيٍّ، أَوْ غَارِمٍ.
ধনীর জন্য যাকাত হালাল নয়, তবে এদের মধ্যে পাঁচ শ্রেণির জন্য তা হালাল-।
১. সদকা উসূলের আমিলের জন্য।
২. ‘সাবীলুল্লাহ’-এ (আল্লাহর রাস্তায়) জিহাদকারীর জন্য।
৩. ঐ ধনীর জন্য, যে নিজ অর্থ দ্বারা যাকাতের মাল ক্রয় করেছে।
৪. ফকীর তার প্রাপ্ত যাকাত থেকে কোনো ধনীকে হাদিয়া দিয়েছে (সে ধনীর জন্য)।
৫. ঋণগ্রস্তের জন্য। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৮৪১]
*****
2) ইমাম আবু উবাইদ কাসেম ইবনে সাল্লাম রাহ. (মৃত্যু : ২২৪ হি.) কিতাবুল আমওয়ালে এই হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেনÑ
فأرخص صلى الله عليه وسلم للغازي أن يأخذ من الصدقة وإن كان غنيا. ونراها تأويل هذه الآية قوله: وفي سبيل الله.
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সশস্ত্র লড়াইকারী মুজাহিদের জন্য সদকা গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন, যদিও সে ধনী হয়। আর আমরা মনে করি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই অনুমতি প্রদান কুরআন মাজীদের আয়াত
وفي سبيل الله-এরই ব্যাখ্যা। [কিতাবুল আমওয়াল, পৃ. ৭২৬]
ইমাম খাত্তাবী রাহ. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন:
فيه بيان أن للغازي وإن كان غنيا أن يأخذ الصدقة ويستعين بها في غزوه وهو من سهم سبيل الله… وقد جاء في هذا الحديث ما بينه ووكد أمره، فلا وجه للذهاب عنه.
অর্থাৎ উক্ত হাদীসে মুজাহিদের জন্য সদকা গ্রহণের অনুমতি আছে, যদিও সে ধনী হয়।
সে এর দ্বারা যুদ্ধে শক্তি অর্জন করবে। আর এটা যাকাতের কুরআন নির্ধারিত খাতসমূহের মধ্যে সাবীলুল্লাহ-খাতের জন্য বরাদ্দকৃত অংশ। … এ হাদীসটি ঐ খাতের ব্যাখ্যা সুস্পষ্ট করে দিয়েছে এবং বিষয়টিকে জোরালো করে দিয়েছে। অতএব এ উদ্দেশ্যের বাইরে অন্য দিকে যাওয়ার যৌক্তিকতা নেই। [মাআলিমুস সুনান, খাত্তাবী ২/২৩৪]
ইবনে হাযম রাহ. ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর ব্যাখ্যায় বলেন:
وأما سبيل الله فهو الجهاد بحق.
‘সাবীলুল্লাহ’ হল, হকের পথে জিহাদ করা।
অ
এরপর তিনি এর স্বপক্ষে উপরোক্ত হাদীসকে প্রমাণস্বরূপ পেশ করেন। অতঃপর বলেন:
وكل فعل خير فهو من سبيل الله تعالى، إلا أنه لا خلاف في أنه تعالى لم يرد كل وجه من وجوه البر في قسمة الصدقات، فلم يجز أن توضع إلا حيث بين النص، وهو الذي ذكرنا، وبالله تعالى التوفيق.
সকল পুণ্যের কাজই ‘সাবীলুল্লাহ’।
তবে এতে কোনো দ্বি-মত নেই যে, আল্লাহ তাআলা যাকাতের খাত সংক্রান্ত আয়াতে সকল পুণ্যের কাজকে উদ্দেশ্য করেননি।
তাই যাকাতের ক্ষেত্রে ‘সাবীলুল্লাহ’ -এর যে অর্থ হাদীসে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এ ছাড়া অন্য কোনো অর্থ গ্রহণ করা বৈধ নয়।
আর তা সেটিই, যা আমরা বর্ণনা করেছি। Ñআলমুহাল্লা বিল আসার ৪/২৭৫
কাযী ইবনুল আরাবী রাহ. ইমাম মালেক রাহ.-এর বক্তব্য এভাবে উল্লেখ করেছেনÑ
قال مالك: سبيل الله كثيرة، ولكني لا أعلم خلافا في أن المراد بسبيل الله هاهنا الغزو.
ইমাম মালেক রাহ. বলেন, ‘সাবীলুল্লাহ’ তথা আল্লাহর পথ অগণিত। কিন্তু এখানে যে সাবীলুল্লাহ দ্বারা উদ্দেশ্য জিহাদÑ এ ব্যাপারে কোনো ভিন্ন মতের কথা আমার জানা নেই। [আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী ২/৯৬৯]
ইমাম ইবনে জারীর তাবারী রাহ. ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর ব্যাখ্যায় বলেন:
وأما قوله: (وفي سبيل الله) فإنه يعني: وفي النفقة في نصرة دين الله وطريقه وشريعته التي شرعها لعباده، بقتال أعدائه، وذلك هو غزو الكفار،وبالذي قلنا في ذلك قال أهل التأويل.
আর আল্লাহ তাআলার বাণী ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ এর অর্থ হল, আল্লাহ তাআলার দ্বীন ও পথ এবং তাঁর শরীয়া, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য মনোনীত করেছেন তাঁর সাহায্যার্থে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্থ ব্যয় করা।
আর ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর যে অর্থ আমরা করেছি মুফাসসিরগণও তা-ই বলেছেন।
এরপর তিনি তাবেয়ী আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম রাহ.-এর বক্তব্য উল্লেখ করেন:
قال ابن زيد في قوله: (وفي سبيل الله) قال: الغازي في سبيل الله.
ইবনে যায়েদ রাহ. ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর ব্যাখ্যায় বলেন, তা হলÑ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী। Ñতাফসীরে তাবারী ৬/৪০২
পাশাপাশি তিনি আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর মারফু রেওয়ায়েতটিও উল্লেখ করেছেন, যা আমরা ইতিপূর্বে সুনানে ইবনে মাজাহর বরাতে প্রমাণস্বরূপ উল্লেখ করেছি।
যাতে সুস্পষ্টভাবেই ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী গাযীর কথা বলা হয়েছে।
উল্লিখিত আলোচনায় হাদীস-আসারের বরাতে এবং মুজতাহিদ ইমামগণের উদ্ধৃতিতে যে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হল তা এই যে, ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর শাব্দিক অর্থ যতই ব্যাপক হোক’ যাকাতের খাত সংক্রান্ত আয়াতে ফী সাবীলিল্লাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হল আল্লাহর পথে জিহাদকারী মুজাহিদ।
সে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত।
উপরিউক্ত বক্তব্যের পাশাপাশি এখানে আমরা চার মাযহাবের মুজতাহিদ ইমামগণের মত ও ফতোয়া কীÑ তা উল্লেখ করছি, যেন এ বিষয়ে কোনো ধরনের সংশয় না থাকে।
*****
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا ضَرَبۡتُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ فَتَبَیَّنُوۡا وَ لَا تَقُوۡلُوۡا لِمَنۡ اَلۡقٰۤی اِلَیۡکُمُ السَّلٰمَ لَسۡتَ مُؤۡمِنًا ۚ تَبۡتَغُوۡنَ عَرَضَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۫ فَعِنۡدَ اللّٰہِ مَغَانِمُ کَثِیۡرَۃٌ ؕ کَذٰلِکَ کُنۡتُمۡ مِّنۡ قَبۡلُ فَمَنَّ اللّٰہُ عَلَیۡکُمۡ فَتَبَیَّنُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرًا ﴿۹۴﴾
হে মুমিনগণ, যখন তোমরা আল্লাহর রাস্তায় বের হবে তখন যাচাই করবে এবং যে তোমাদেরকে সালাম দেবে দুনিয়ার জীবনের সম্পদের আশায় তাকে বলবে না যে, ‘তুমি মুমিন নও’।
বস্ত্ততঃ আল্লাহর কাছে প্রচুর গনীমত আছে। তোমরাতো পূর্বে এরূপই ছিলে।
অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করলেন।
সুতরাং তোমরা যাচাই করবে। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত।
*****
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন যে
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡہَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُہُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰہِ ؕ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ ﴿۶۰﴾
নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
****
‘ফী সাবীলিল্লাহ’ (2)
****
1-2)
এ নিবন্ধের আলোচ্য বিষয় যেহেতু সপ্তম খাত ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ তাই এখানে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর পরিচয় এবং কোন শ্রেণীর লোক এর আওতাভুক্ত তা দলীলসহ উল্লেখ করা হল।
‘ফী সাবীলিল্লাহ’
যেমনটি বলা হল যাকাতের সপ্তম খাত হচ্ছে, ‘ফী সাবীলিল্লাহ’।
এর শাব্দিক অর্থ হল আল্লাহর পথে।
আর শরয়ী ও পারিভাষিক অর্থে
‘ফী সাবীলিল্লাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আল্লাহর রাস্তায় সশস্ত্র জিহাদকারীগণ।
‘ফী সাবীলিল্লাহ’র পারিভাষিক এ অর্থটি সালাফ তথা সাহাবা-তাবেয়ীন এবং মুজতাহিদ ইমামগণের নিকট স্বীকৃত ছিল।
অর্থাৎ ফী সাবীলিল্লাহ ‘মুতলাক’ (ব্যাখ্যামুক্ত)ভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা উক্ত অর্থটিই বুঝতেন।
ইবনুল আসীর রাহ. বলেন:
قد تكرر في الحديث ذكر “سبيل الله وابن السبيل” …وسبيل الله عام يقع على كل عمل خالص سلك به طريق التقرب إلى الله تعالى بأداء الفرائض والنوافل وأنواع التطوعات، وإذا أطلق فهو في الغالب واقع على الجهاد، حتى صار لكثرة الاستعمال كأنه مقصور عليه.
হাদীসে
‘সাবীলুল্লাহ’ ও ‘ইবনুস সাবীল’- এর কথা বারংবার এসেছে। ‘সাবীলুল্লাহ’ শব্দটি আম (ব্যাপক)।
ফরয, ওয়াজিব, নফল ও বিভিন্ন প্রকারের পুণ্যের কাজের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের পথে সব ধরনের খালেস আমল এর অন্তর্ভুক্ত।
আর ‘সাবীলুল্লাহ’কে যখন ‘মুতলাক’ (ব্যাখ্যামুক্ত)ভাবে বলা হয় তখন তা সাধারণত জিহাদের অর্থে ব্যবহার হয়।
এমনকি এই অর্থে সাবীলুল্লাহ শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হওয়ার কারণে ‘সাবীলুল্লাহ’ যেন ঐ মর্মের মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। [আননিহায়া ফী গারীবিল হাদীস ২/৩৩৮]
উপরোক্ত বক্তব্যের সমর্থনে নিম্নে দুয়েকটি হাদীস ও আসার উল্লেখ করা হল।
সহীহ মুসলিমে এসেছে:
أَنّ عُمَرَ بْنَ الْخَطّابِ وَهُوَ يَقُولُ: حَمَلْتُ عَلَى فَرَسٍ عَتِيقٍ فِي سَبِيلِ اللهِ.
উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, আমি একটি উৎকৃষ্টমানের ঘোড়া ‘সাবীলুল্লাহ’-এ সদকা করলাম। [সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬২০]
ইমাম নববী রাহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন:
“حملت على فرس عتيق في سبيل الله” معناه تصدقت به ووهبته لمن يقاتل عليه في سبيل الله.
এর অর্থ হল, আমি এটিকে সদকা করলাম এবং তা এমন ব্যক্তিকে দান করলাম, যে এর দ্বারা ‘সাবীলুল্লাহ’-এ (আল্লাহর রাস্তায়) জিহাদ করবে। [শরহুন নববী ১১/৬২]
সহীহ বুখারীতে এসেছে:
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنّهُ قَالَ: لَغَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللهِ، أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدّنْيَا وَمَا فِيهَا.
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘সাবীলুল্লাহ’-এ (আল্লাহর রাস্তায়) অতিবাহিত এক সকাল বা এক বিকাল দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা আছে তা হতে উত্তম। [সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৯২]
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন:
قوله في سبيل الله أي الجهاد.
‘ফী সাবীলিল্লাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে জিহাদ। [ফাতহুল বারী ৬/১৭]
সহীহ বুখারীর আরেক বর্ণনায় এসেছে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ: الخَيْلُ لِرَجُلٍ أَجْرٌ، وَلِرَجُلٍ سِتْرٌ، وَعَلَى رَجُلٍ وِزْرٌ، فَأَمّا الّذِي لَهُ أَجْرٌ: فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِي سَبِيلِ اللهِ.
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঘোড়া তিন ব্যক্তির জন্য। কারো জন্য সাওয়াবের। কারো জন্য (দরিদ্রতা ও পরনির্ভরতা থেকে) আত্মরক্ষা। আর কারো জন্য গুনাহের কারণ।
ঐ ব্যক্তির জন্য তা সওয়াবের, যে তা ‘সাবীলুল্লাহ’-এ (আল্লাহর রাস্তায়) আবদ্ধ করেছে। [সহীহ বুখারী, হাদীস ২৮৬০]
ইমাম নববী রাহ. বলেন:
(ربطها في سبيل الله) أي أعدها للجهاد.
‘সাবীলুল্লাহ’-এ (আল্লাহর রাস্তায়) আবদ্ধ করেছে’ এর অর্থ হল, জিহাদের জন্য প্রস্তুত করেছে। [শরহুন নববী ৭/৬৬]
যাকাতের খাতসমূহ বর্ণনাকারী [সূরা তাওবার (৯) : ৬০নং] আয়াতে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ দ্বারা যে কাফেরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদকারী মুজাহিদ উদ্দেশ্য, নিম্নের হাদীস দ্বারা তা আরো সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়।
সুনানে ইবনে মাজাহ্য়ে আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম ইরশাদ করেছেন:
لَا تَحِلّ الصّدَقَةُ لِغَنِيٍّ إِلّا لِخَمْسَةٍ: لِعَامِلٍ عَلَيْهَا، أَوْ لِغَازٍ فِي
سَبِيلِ اللهِ، أَوْ لِغَنِيٍّ اشْتَرَاهَا بِمَالِهِ، أَوْ فَقِيرٍ تُصُدِّقَ عَلَيْهِ فَأَهْدَاهَا لِغَنِيٍّ، أَوْ غَارِمٍ.
ধনীর জন্য যাকাত হালাল নয়, তবে এদের মধ্যে পাঁচ শ্রেণির জন্য তা হালাল-।
১. সদকা উসূলের আমিলের জন্য।
২. ‘সাবীলুল্লাহ’-এ (আল্লাহর রাস্তায়) জিহাদকারীর জন্য।
৩. ঐ ধনীর জন্য, যে নিজ অর্থ দ্বারা যাকাতের মাল ক্রয় করেছে।
৪. ফকীর তার প্রাপ্ত যাকাত থেকে কোনো ধনীকে হাদিয়া দিয়েছে (সে ধনীর জন্য)।
৫. ঋণগ্রস্তের জন্য। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৮৪১]
*****
2) ইমাম আবু উবাইদ কাসেম ইবনে সাল্লাম রাহ. (মৃত্যু : ২২৪ হি.) কিতাবুল আমওয়ালে এই হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেনÑ
فأرخص صلى الله عليه وسلم للغازي أن يأخذ من الصدقة وإن كان غنيا. ونراها تأويل هذه الآية قوله: وفي سبيل الله.
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সশস্ত্র লড়াইকারী মুজাহিদের জন্য সদকা গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন, যদিও সে ধনী হয়। আর আমরা মনে করি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই অনুমতি প্রদান কুরআন মাজীদের আয়াত
وفي سبيل الله-এরই ব্যাখ্যা। [কিতাবুল আমওয়াল, পৃ. ৭২৬]
ইমাম খাত্তাবী রাহ. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন:
فيه بيان أن للغازي وإن كان غنيا أن يأخذ الصدقة ويستعين بها في غزوه وهو من سهم سبيل الله… وقد جاء في هذا الحديث ما بينه ووكد أمره، فلا وجه للذهاب عنه.
অর্থাৎ উক্ত হাদীসে মুজাহিদের জন্য সদকা গ্রহণের অনুমতি আছে, যদিও সে ধনী হয়।
সে এর দ্বারা যুদ্ধে শক্তি অর্জন করবে। আর এটা যাকাতের কুরআন নির্ধারিত খাতসমূহের মধ্যে সাবীলুল্লাহ-খাতের জন্য বরাদ্দকৃত অংশ। … এ হাদীসটি ঐ খাতের ব্যাখ্যা সুস্পষ্ট করে দিয়েছে এবং বিষয়টিকে জোরালো করে দিয়েছে। অতএব এ উদ্দেশ্যের বাইরে অন্য দিকে যাওয়ার যৌক্তিকতা নেই। [মাআলিমুস সুনান, খাত্তাবী ২/২৩৪]
ইবনে হাযম রাহ. ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর ব্যাখ্যায় বলেন:
وأما سبيل الله فهو الجهاد بحق.
‘সাবীলুল্লাহ’ হল, হকের পথে জিহাদ করা।
অ
এরপর তিনি এর স্বপক্ষে উপরোক্ত হাদীসকে প্রমাণস্বরূপ পেশ করেন। অতঃপর বলেন:
وكل فعل خير فهو من سبيل الله تعالى، إلا أنه لا خلاف في أنه تعالى لم يرد كل وجه من وجوه البر في قسمة الصدقات، فلم يجز أن توضع إلا حيث بين النص، وهو الذي ذكرنا، وبالله تعالى التوفيق.
সকল পুণ্যের কাজই ‘সাবীলুল্লাহ’।
তবে এতে কোনো দ্বি-মত নেই যে, আল্লাহ তাআলা যাকাতের খাত সংক্রান্ত আয়াতে সকল পুণ্যের কাজকে উদ্দেশ্য করেননি।
তাই যাকাতের ক্ষেত্রে ‘সাবীলুল্লাহ’ -এর যে অর্থ হাদীসে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এ ছাড়া অন্য কোনো অর্থ গ্রহণ করা বৈধ নয়।
আর তা সেটিই, যা আমরা বর্ণনা করেছি। Ñআলমুহাল্লা বিল আসার ৪/২৭৫
কাযী ইবনুল আরাবী রাহ. ইমাম মালেক রাহ.-এর বক্তব্য এভাবে উল্লেখ করেছেনÑ
قال مالك: سبيل الله كثيرة، ولكني لا أعلم خلافا في أن المراد بسبيل الله هاهنا الغزو.
ইমাম মালেক রাহ. বলেন, ‘সাবীলুল্লাহ’ তথা আল্লাহর পথ অগণিত। কিন্তু এখানে যে সাবীলুল্লাহ দ্বারা উদ্দেশ্য জিহাদÑ এ ব্যাপারে কোনো ভিন্ন মতের কথা আমার জানা নেই। [আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী ২/৯৬৯]
ইমাম ইবনে জারীর তাবারী রাহ. ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর ব্যাখ্যায় বলেন:
وأما قوله: (وفي سبيل الله) فإنه يعني: وفي النفقة في نصرة دين الله وطريقه وشريعته التي شرعها لعباده، بقتال أعدائه، وذلك هو غزو الكفار،وبالذي قلنا في ذلك قال أهل التأويل.
আর আল্লাহ তাআলার বাণী ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ এর অর্থ হল, আল্লাহ তাআলার দ্বীন ও পথ এবং তাঁর শরীয়া, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য মনোনীত করেছেন তাঁর সাহায্যার্থে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্থ ব্যয় করা।
আর ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর যে অর্থ আমরা করেছি মুফাসসিরগণও তা-ই বলেছেন।
এরপর তিনি তাবেয়ী আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম রাহ.-এর বক্তব্য উল্লেখ করেন:
قال ابن زيد في قوله: (وفي سبيل الله) قال: الغازي في سبيل الله.
ইবনে যায়েদ রাহ. ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর ব্যাখ্যায় বলেন, তা হলÑ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী। Ñতাফসীরে তাবারী ৬/৪০২
পাশাপাশি তিনি আবু সাঈদ খুদরী রা.-এর মারফু রেওয়ায়েতটিও উল্লেখ করেছেন, যা আমরা ইতিপূর্বে সুনানে ইবনে মাজাহর বরাতে প্রমাণস্বরূপ উল্লেখ করেছি।
যাতে সুস্পষ্টভাবেই ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী গাযীর কথা বলা হয়েছে।
উল্লিখিত আলোচনায় হাদীস-আসারের বরাতে এবং মুজতাহিদ ইমামগণের উদ্ধৃতিতে যে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হল তা এই যে, ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর শাব্দিক অর্থ যতই ব্যাপক হোক’ যাকাতের খাত সংক্রান্ত আয়াতে ফী সাবীলিল্লাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হল আল্লাহর পথে জিহাদকারী মুজাহিদ।
সে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত।
উপরিউক্ত বক্তব্যের পাশাপাশি এখানে আমরা চার মাযহাবের মুজতাহিদ ইমামগণের মত ও ফতোয়া কীÑ তা উল্লেখ করছি, যেন এ বিষয়ে কোনো ধরনের সংশয় না থাকে।
*****