দিকে দিকে আজ সুন্নাতুল্লাহর বাস্তবায়ন; কিন্তু আমাদের অবস্থান কি?
কাফের-মুনাফিকদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার রীতি এটাই যে, তিনি দুনিয়াতেই তাদের শাস্তি দিবেন, ধ্বংস করবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
لَئِنْ لَمْ يَنْتَهِ الْمُنَافِقُونَ وَالَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ وَالْمُرْجِفُونَ فِي الْمَدِينَةِ لَنُغْرِيَنَّكَ بِهِمْ ثُمَّ لَا يُجَاوِرُونَكَ فِيهَا إِلَّا قَلِيلًا مَلْعُونِينَ أَيْنَمَا ثُقِفُوا أُخِذُوا وَقُتِّلُوا تَقْتِيلًا سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلُ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا -الأحزاب: 60 - 62
মুনাফেকগণ, যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এবং যারা নগরে গুজব রটিয়ে বেড়ায় তারা যদি বিরত না হয়, তবে আমি অবশ্যই এমন করবো যে, তুমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, ফলে তারা এ নগরে তোমার সাথে অল্প কিছুদিনই অবস্থান করতে পারবে- অভিশপ্তরূপে। অতপর তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে পাকড়াও করা হবে এবং তাদেরকে এক-এক করে হত্যা করে হবে।এটা আল্লাহর রীতি যা পূর্বে গত হওয়া (কাফেরদের) ক্ষেত্রেও কার্যকর ছিল। তুমি কখনোই আল্লাহর রীতিতে পরিবর্তন পাবে না। -সূরা আহযাব: ৬০-৬২
সুতরাং আজ আফগান-ইয়ামান-মালি-সোমালিয়ায় যে কাফের ও মুসলিম নামধারী মুনাফিকরা নিহত হচ্ছে, তা আল্লাহ তায়ালার এই সুন্নাহ বা রীতিরই বাস্তবায়ন। তা আমাদের ভালো লাগুক বা নাই লাগুক এবং কাফেদের তৈরি তথাকথিত মানবতার মাপকাঠিতে তা উত্তীর্ণ হোক না না হোক, এতে কিছু আসে যায় না। আল্লাহ তায়ালা তার একদল বান্দাদের দিয়ে এই রীতি চালু রাখবেনই। কারণ এ এক অমোঘ ও অপরিবর্তনীয় রীতি। হাঁ এর পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়েছে। পূর্ববর্তী উম্মতদের আল্লাহ তায়ালা সরাসরি শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করেছেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের পর হতে আল্লাহ তায়ালা কাফের-মুনাফিকদের সরাসরি শাস্তি দিবেন না, বরং আমাদের মাধ্যমে শাস্তি দিবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
{قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَيُذْهِبْ غَيْظَ قُلُوبِهِمْ وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَى مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ- التوبة: 14، 15
“তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো, যাতে আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে শাস্তি দান করবেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং মুমিনদের অন্তর জুড়িয়ে দেন। এবং তাদের মনের ক্ষোভ দূর করবেন। আল্লাহ যার প্রতি ইচ্ছা তার তাওবা কবুল করেন। আল্লাহর জ্ঞানও পরিপূর্ণ, তাঁর হিকমত পরিপূর্ণ। -সূরা তাওবা: ১৪-১৫
এজন্য বর্তমানে এই সুন্নাতুল্লাহর ক্ষেত্রে আমরা তিনটি অবস্থানের কোন একটি গ্রহণ করতে পারি, বুদ্ধিমান যেন ভেবে দেখেন, তিনি কোনটি গ্রহণ করবেন:-
১. এ সুন্নাহর বিরোধিতা করা। বিশ্বে চলমান সকল জিহাদকে শরিয়তবিরোধী সন্ত্রাস আখ্যা দেয়া। জিহাদের মনগড়া নানা শর্ত আবিষ্কার করে তার ভিত্তিতে বর্তমান জিহাদকে অবৈধ ঘোষণা দেয়া। নিঃসন্দেহে এটা হবে আল্লাহ তায়ালার সুন্নাহ ও রীতির বিরোধিতা। তার বিপক্ষে অবস্থান। এ অবস্থান গ্রহণ করলে অযথাই আমাদের আখেরাত বরবাদ হবে, কারণ দুনিয়াতে নিরাপদ থাকার জন্য এমন অবস্থানগ্রহণ জরুরী নয়। বরং এ হলো নিরেট অহংকার। কেউ আমাদের চেয়ে দ্বীনি কাজে এগিয়ে গেছে তা মেনে নিতে কষ্ট হওয়া। নিজেদের দুর্বলতা ও কাপুরুষতা স্বীকার করার পরিবর্তে তাকেই দূরদর্শিতার মোড়কে পেশ করা। যেমনটা উহুদের যুদ্ধের সময় মুনাফিকরা করেছিল। তারা যুদ্ধে রওয়ানা হওয়ার পর মাঝপথ হতে এ কথা বলে ফিরে এসেছিল, لَوْ نَعْلَمُ قِتَالا لاتَّبَعْنَاكُمْ ‘যদি আমরা এটাকে যুদ্ধ মনে করতাম, তাহলে আমরা যুদ্ধে শরিক হতাম’। অর্থাৎ এটা তো যুদ্ধ না, বরং আত্মহত্যা, যুদ্ধ তো হয় উভয় পক্ষের শক্তি সমান হলে। (দেখুন, সূরা আলে ইমরান: ১৬৭ তাফসীরে আবুস সাউদ: ২/১২০ তাওযীহুল কুরআন: ১/২১৯)
২. আল্লাহ তায়ালার এই সুন্নাহ বাস্তবায়নে সক্রিয় কর্মী হওয়া। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা আমাদের হাতেই এর বাস্তবায়ন করবেন, তো যদি আমরা এর বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করতে পারি তাহলে তা হবে মহাসৌভাগ্য। এর মাধ্যমে আমরা মৌখিক ইমানকে কর্মে রূপান্তরিত করে সিদ্দিকিনদের (যারা কথাকে কাজের মাধ্যমে সত্যায়ন করে) অন্তর্ভুক্ত হতে পারবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ِاِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ -الحجرات: 15
মুমিন তো তারা, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অন্তর দিয়ে স্বীকার করেছে, তারপর কোন সন্দেহে পড়েনি এবং তাদের জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। তারাই তো সত্যবাদী। -সূরা হুজুরাত: ১৫
অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا لِيَجْزِيَ اللَّهُ الصَّادِقِينَ بِصِدْقِهِمْ وَيُعَذِّبَ الْمُنَافِقِينَ إِنْ شَاءَ أَوْ يَتُوبَ عَلَيْهِمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا - الأحزاب: 23، 24
‘মুমিনদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতিকে সত্যে পরিণত করেছে এবং তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা তাদের নজরানা আদায় করেছে (শাহাদাত বরণ করেছে) এবং আছে এমন কিছু লোক, যারা এখনও (শাহাদাতের) প্রতীক্ষায় আছে। আর তারা (তাদের ইচ্ছার ভেতর) কিছুমাত্র পরিবর্তন ঘটায়নি। (এ ঘটনা ঘটানোর কারণ) আল্লাহ সত্যনিষ্ঠদেরকে তাদের সততার পুরস্কার দিবেন এবং মুনাফিকদেরকে ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন অথবা তাদের তাওবা কবুল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা আহযাব: ২৩-২৪
গ. শুধু আন্তরিক সমর্থন জানানো। অর্থাৎ এ সুন্নাহকে সমর্থন করা স্বত্বেও নিজেদের দুর্বলতার কারণে সক্রিয় কোন ভূমিকা না রাখা। শুধু অন্তরে সমর্থন জানানো। এতে যদিও আমাদের ফরয তরকের গুনাহ হবে, তবে যদি আমরা এর কারণে অনুতপ্ত হই, ইস্তেগফার করি, নিজেদের নিরাপত্তা শতভাগ ঠিক রেখে যতটুকু সমর্থন করা যায় ততটুকু করি, বা কমপক্ষে বিরোধিতা না করি, তবে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই সকলের ইমান ও সাহস সমান না। ইলম শিখা অনেকের জন্য সম্ভব হলেও তা প্রকাশ করার মতো বুকের পাটা সবার থাকে না। তাই যদি আলেমগণ কমপক্ষে এ অবস্থান গ্রহণ করতেন, তবেই আমরা সন্তুষ্ট থাকতাম। কিন্তু তারা সুন্নাতুল্লাহর সম্পূর্ণরূপে বিরোধিতা করে বসলেন। কাফেরদের সাথে শান্তি ও সম্প্রীতিতে বসবাসের দিবাস্বপ্নে বিভোর হলেন। বরং আরো বেড়ে শাসকদের পক্ষাবলম্বন শুরু করলেন। অথচ মানবরচিত বিধান দ্বারা দেশ পরিচালনাকারী এ শাসকদের তাগুত ও মুনাফিক হওয়া তো কুরআন-সুন্নাহ হতে স্পষ্ট। আর মুজাহিদদের বিপক্ষে তাগুতের পক্ষাবলম্বন তো অত্যন্ত ভয়াবহ। ইরশাদ হয়েছে,
الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُوا أَوْلِيَاءَ الشَّيْطَانِ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا . (سورة النساء:76)
“যারা ইমানদার তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাস্তায়। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পক্ষে। সুতরাং তোমরা যুদ্ধ করতে থাক শয়তানের পক্ষালবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে-(দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত নিতান্তই দুর্বল।” –সূরা নিসা: ৭৬
Comment