উম্মাহর অধিকাংশ মানুষ কুরআনের আইনের বাস্তবতা সম্পর্কে জানে না। তারা মনে করে কুরআনের আইন অনেক কঠোর, এমনকি অনেকে কিসাসের ভিডিও দেখে ভয় পায়। অনেকে কঠোর কিছু বুঝাতে কুরআনি শাসন শব্দটা ব্যাবহার করে। অথচ কুরআনের আইন কি কঠোর? কুরআনের আইনের প্রকৃত কল্যান সম্পর্কে যদি মানুষের জানা থাকতো তাহলে মুসলিম সন্তান কুরআনের আইন ওয়ালা একটি সমাজের স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু আজ স্বপ্ন দেখাতো দূরের কথা উল্টো ভয় পায়। কিন্তু তারা ব্রিটিশদের আইনকে ভয় পায় না,অথচ হত্যা, রাহাজানি বেড়ে যাওয়ার মূল কারন ই হলো আল্লাহর আইন না থাকা।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الۡقِصَاصُ فِی الۡقَتۡلٰی ؕ اَلۡحُرُّ بِالۡحُرِّ وَ الۡعَبۡدُ بِالۡعَبۡدِ وَ الۡاُنۡثٰی بِالۡاُنۡثٰی ؕ فَمَنۡ عُفِیَ لَہٗ مِنۡ اَخِیۡہِ شَیۡءٌ فَاتِّبَاعٌۢ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ اَدَآءٌ اِلَیۡہِ بِاِحۡسَانٍ ؕ ذٰلِکَ تَخۡفِیۡفٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ رَحۡمَۃٌ ؕ فَمَنِ اعۡتَدٰی بَعۡدَ ذٰلِکَ فَلَہٗ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۱۷۸﴾وَ لَکُمۡ فِی الۡقِصَاصِ حَیٰوۃٌ یّٰۤاُولِی الۡاَلۡبَابِ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۷۹﴾
হে বিশ্বাসিগণ! নরহত্যার ব্যাপারে তোমাদের জন্য ক্বিসাসের (প্রতিশোধ গ্রহণের বিধান) বিধিবদ্ধ করা হল; স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস ও নারীর বদলে নারী। কিন্তু তার ভাইয়ের পক্ষ হতে কিছুটা ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে, প্রচলিত প্রথার অনুসরণ করা ও সদয়ভাবে তার দেয় পরিশোধ করা উচিত।এ তো তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে ভার লাঘব ও অনুগ্রহ। এর পরও যে সীমালংঘন করে, তার জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে।
হে বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! তোমাদের জন্য ক্বিসাসে জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার।(সুরা বাকারা ১৭৮-১৭৯)
মহান আল্লাহ আয়াতে হত্যার শাস্তি বর্ননার পর তিনি নিজেই বলে দিলেন ক্বিসাসে জীবন রয়েছে। আপসোস, মুসলমান সেই কিসাসকে ভয় করে।মুসলমান কিসাসের কথা আসলেই চিন্তা করে একজন ব্যক্তির গাড় থেকে আলাদা করা রক্তাক্ত মাথার কথা চিন্তা করে। অথচ এর দ্বারা যে সমাজের হত্যাগুলো বন্ধ হয়ে যায় সেটা চিন্তা করে না। মানুষ চাইলেও অনেকে কিসাসের ভয়ে খুন করা থেকে বেচে যায় সেটা চিন্তা করে না।
যিনা বা ধর্ষনের কথা মাথায় আসলে মানুষের মাথায় ভেসে আসে পাথর দিয়ে একজন মানুষ হত্যার করার চিত্র বা বেত্রাগাতের চিত্র। অথচ এর দ্বারা যে সমাজে সকল খারাপ চরিত্রের লোকগুলো শিক্ষা পায় তা চিন্তা করে না। এর দ্বারা যে ধর্ষিতা ও তার ভাই, বাবা স্বস্তি পায় তা চিন্তা করে না। যার বোন বা স্ত্রী ধর্ষিত হয় সে জানে এটার আসল কষ্ট।
আজ বহু যৌবনের তাড়নায় একটা সময় অনেক পাপ করে, এরপর শুরু হয় এক আযাব। যার নাম ডিপ্রেশন।সমাজে দ্বীন প্রতিষ্ঠিত থাকলে মানুষ চাইলেও পাপ করতে পারতো না,চাইলেও বেনামাজি থাকতো না।আজ সুদ বন্ধের জন্য কত চেষ্টা, কত ওয়াজ। অথচ আপনি যতক্ষণ এনজিও গুলো উৎখাত না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত সুদ দূর হবে না। আপনাকে সুদের উৎসহ বন্ধ করতে হবে এবং যাকাত ভিত্তিক সমাজ চালু করতে হবে৷ আজ যারা সুদ নেয় তাদের প্রায় লোকের কথা হলো সুদ না নিয়ে উপায় নেই। অথচ ইসলামি সমাজ হলে তখন যাকাতের মাধ্যমে অভাবিদের অভাব মোছন করা হতো। আজ যাদের হাত, পা, চোখ না থাকার কারনে মানুষের ধারে ধারে গিয়ে ভিক্ষা করতে হচ্ছে দ্বীন কায়েম থাকলে তারা তা করতে পারতো না।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, গোটা সমাজে দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত থাকলে, আল্লাহ আইন বাস্তবায়িত হলে, কোন কুলাঙ্গার আমাদের প্রিয় নবী সাঃ ও কুরআন নিয়ে কেউ ব্যঙ্গ করার চিন্তাও মাথায় আনতো না। কিন্তু আজ দ্বীন কায়েম না থাকাতে প্রায় সময়ই এসব ঘটনা ঘটতেছে।
আজ যে সকল ইসলামী দল ও নেতাদের মাঝে বিভিন্ন মাসয়ালা মাসায়েল নিয়ে দলাদলি করার কারনে উম্মাহ দলে দলে বিভক্ত হচ্ছে এবং দ্বীন কায়েম হচ্ছে না তারাও কিন্তু এসব অপরাধের বোঝা বহন করতে হবে। নবী সাঃ ও কুরআন নিয়ে বিদ্রুপের এই পাপের বোঝা তারাও বহন করতে হবে৷ কেননা তারা উম্মাহকে সঠিক পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দলে দলে ভাগ করছে। তারা যেখানে সবাই মিলে কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা ছিলো, সেখানে তারা একে অপরকে বাহাস যুদ্বের দিকে ডাকে। সবার মনে রাখা উচিত, রাসূল সাঃ সারাজীবন উম্মতের মুক্তির জন্য কষ্ট করেছেন, কেঁদে ছেন, নিজের সুখ বিসর্জন দিয়েছেন,খন্দকের যুদ্বে পেটে পাথর বেদেছেন, উহুদে রক্ত ঝরিয়েছেন, তায়েফে রক্ত ঝরিয়েছেন।সেই উম্মত যদি কোন আলিম বা দলের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিভ্রান্ত হয়, পথভ্রষ্ট হয় তাহলে এর পরিনতি কিন্তু খুবই খারাপ হবে।
এ কারনেই পথভ্রষ্ট কারী এই আলিমদের রাসূল সাঃ দাজ্জাল বলেছেন।
প্রত্যেক আলিমের উচিত কুরআনের আইন বাস্তবায়নের চেষ্টা করা, নিজে না পারলে যারা করে তাদের জন্য দোয়া করা এবং নিজে পারার জন্য চেষ্টা ও দোয়া করা।
Comment