তারবিয়াতুল আওলাদ
بسم الله الرحمن الرحيم
إن الحمد لله الذي جعل الاولاد للحياة الدنيا زينة والعمل الصالح باقية وجعلهم عند أهلهم وديعة وجعل القيام عليهم واجبا و شريعة والصلاة والسلام على سيدنا محمد وعلى آله وأصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين أما بعد فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم وَاعْلَمُوْۤا اَنَّمَاۤ اَمْوَالُكُمْ وَ اَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ، وَّ اَنَّ اللهَ عِنْدَهٗۤ اَجْرٌ عَظِیْمٌ۠
وقال النبي صلوات ربي عليه وسلامه ثلاثُ دعواتٍ مستجاباتٌ لا شكّ فيهن: دعوة الوالد، ودعوة المسافر، ودعوة المظلوم
------
প্রিয় মুসলিম ভায়েরা! আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন আমাদের কে অসংখ্য অগণিত নিয়ামত দিয়েছেন, যা গণনা করে কখন শেষ করা যাবেনা, নিয়ামতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হচ্ছে সন্তান,যার সন্তান নেই সেই বুঝে সন্তান কত বড় নিয়ামত, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কালামে মজিদে ইরশাদ করেছেন -
لِلهِ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ اِنَاثًا وَّ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ الذُّكُوْرَ،اَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَّ اِنَاثًا وَ يَجْعَلُ مَنْ يَّشَآءُ عَقِيْمًا اِنَّهٗ عَلِيْمٌ قَدِيْرٌ
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদের দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই। আর যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। তিনি নিশ্চয়ই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। —সূরা শূরা (৪২) : ৪৯-৫০
প্রিয় ভায়েরা! আমরা যদি সন্তান-সন্তুতি কে ঈমান, আমলে ও উত্তম আদর্শে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে এই সন্তান পার্থিব জিবনে আমার উপকারে আসবে, তাদের দেখে চক্ষু শিতল হবে, আনন্দে অন্তর ভরে যাবে, বিশেষ করে আখিরাতের জিবনে এই সন্তান জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে, হতে পারে সন্তানের দুয়া ও আমলের উসিলায় জাহান্নামের ফায়সালা হওয়ার পরও মা বাবার মুক্তির ব্যবস্থ হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إذا مات الإنسانُ انقطع عنه عملهُ إلا من ثلاثةٍ: إلا من صدقة جارية، أو علم ينتفع به، أو ولد صالح يدعو له
যখন মানুষ মারা যায়, তখন ৩ টি আমল ব্যতিত সকল আমলের সওয়াব বন্ধ হয়ে যায় এর মধ্যে একটি হচ্ছে নেক সন্তান।
সুতরাং সন্তান হচ্ছে দুনিয়া ও আখিরাতের সবচেয়ে বড় পুঁজি এবং সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা, এই ব্যবসার প্রতি যারা যত্নশিল হয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের মুখ উজ্জ্বল হয়ে, তাদের চক্ষু শিতল হয়, চিরস্থায়ি সফলতা তাদের পদচুম্মন করে। কিন্তু আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হল, মানুষ ব্যবসা,বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি, গরু, ছাগল ইত্যাদির প্রতি খুবি যত্নশিল, কিন্তু সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি মারাত্নকভাবে অবহেলা প্রদর্শন করে।
মুসলিম ভায়েরা! সন্তান হচ্ছে রবের পক্ষ থেকে বান্দার নিকট বিরাট বড় একটি আমানত, নেক সন্তান যেমন দুনিয়া ও আখিরাতের বড় পুঁজি, তেমনিভাবে কেউ যদি সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যপারে অবহেলা করে, তাদের কে ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ থেকে দূরে রাখে, তাদের কে অবশ্যই মহান রবের নিকট জবাবদিহি করতে হবে। আর এই সন্তানের কারণে পার্থিব জিবনে লাঞ্চনা ও অপদস্ততার সম্মুখিন হতে হবে, এমনকি আদরের এই সন্তানেরাই একসময় মা-বাবা কে ঘর থেকে বের করে বিদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: أَلا كلُّكُمْ راعٍ وكلُّكُمْ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَالْإِمَامُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجِهَا وولدِهِ وَهِي مسؤولةٌ عَنْهُمْ وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مسؤولٌ عَنهُ أَلا فكلُّكُمْ راعٍ وكلكُمْ مسؤولٌ عَن رعيتِه
শুনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। পুরুষ তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নারী তার পরিবার, সন্তান-সন্ততির বিষয়ে দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।জেনে রাখো, প্রত্যেক ব্যক্তিই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্তদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। সহীহ বুখারী, হাদীস ৭১৩৮
আরেক হাদিসে এসেছে, ما مِن عبد اسْتَرْعاه اللهُ رعيّةً، فلم يَحُطْها بنصيحة، إلا لم يجدْ رائحة الجنة.
আল্লাহ তাআলা যদি বান্দাকে কারো দায়িত্বশীল বানান আর সে নিজ অধীনস্তদের কল্যাণের ব্যাপারে যত্নশীল না হয়, তাহলে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।সহীহ বুখারী, হাদীস ৭১৫০
সুতরাং রবের দেয়া আমানত সন্তানের ব্যপারে আমাদের যত্নশীল হতে হবে, তাদের কে ইসলামি শিক্ষা ও আদর্শের উপর গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় রবের পাকড়াও থেকে কেউ রেহাই পাবনা। সন্তান হয়ত জান্নাত যাওয়ার মাধ্যম হবে, না হয় জাহান্নামে যাওয়ার মাধ্যম হবে, তাই আমাদের রবের এই আমানাতের ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে।
প্রিয় মুসলিম ভায়েরা আমার!! সন্তান হচ্ছে রব্বে কা'বার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিরাট বড় একটি পরিক্ষা, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন-وَاعْلَمُوْۤا اَنَّمَاۤ اَمْوَالُكُمْ وَ اَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ، وَّ اَنَّ اللهَ عِنْدَهٗۤ اَجْرٌ عَظِیْمٌ۠.
জেনে রেখ, তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা। আর মহা পুরস্কার রয়েছে আল্লাহরই কাছে। সূরা আনফাল (৮) : ২৮
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দাকে সন্তান দিয়ে দুভাবে পরীক্ষা করেন।
১. বান্দা সন্তান পেয়ে তার রবের হুকুম ভুলে যায়কিনা, তার রবকে বেশি ভালবাসে, না সন্তান কে।
২. বান্দা রবের দেয়া নিয়ামতের হক যথাযথভাবে আদায় করে কিনা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
এই আয়াতে পরিস্কার বলা হয়েছে, সন্তান পেয়ে কেউ যদি তার রবকে ভুলে যায়, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অন্য আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তায়ালা বলেন-قُلۡ اِنۡ کَانَ اٰبَآؤُکُمۡ وَ اَبۡنَآؤُکُمۡ وَ اِخۡوَانُکُمۡ وَ اَزۡوَاجُکُمۡ وَ عَشِیۡرَتُکُمۡ وَ اَمۡوَالُۨ اقۡتَرَفۡتُمُوۡهَا وَ تِجَارَۃٌ تَخۡشَوۡنَ کَسَادَهَا وَ مَسٰکِنُ تَرۡضَوۡنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَیۡکُمۡ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ جِهَادٍ فِیۡ سَبِیۡلِهٖ فَتَرَبَّصُوۡا حَتّٰی یَاۡتِیَ اللّٰهُ بِاَمۡرِهٖ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِیۡنَ
হে নাবী!) তুমি তাদেরকে বলে দাওঃ যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্রগণ, তোমাদের ভাইগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের স্বগোত্র, আর ঐ সব ধন সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর ঐ ব্যবসায় যাতে তোমরা মন্দা পড়ার আশংকা করছ অথবা ঐ গৃহসমূহ যেখানে অতি আনন্দে বসবাস করছ, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের চেয়ে এবং তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে যদি (এই সব) তোমাদের নিকট অধিক প্রিয় হয় তাহলে তোমরা প্রতীক্ষা করতে থাক যে পর্যন্ত আল্লাহ নিজের নির্দেশ পাঠিয়ে দেন। আর আল্লাহ আদেশ অমান্যকারীদেরকে পথ প্রদশর্ন করেন না।
এই আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, সন্তানের ভালবাসা যেন আল্লাহ, তার রাসুল এবং তার পথে জিহাদের চেয়েও বেশি না হয়, যদি বেশি হয় তাহলে দুনিয়া ও আখিরাতে তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
সম্মানিত উপস্থিতি! আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় খলীল ইব্রাহিম আ. কে এই সন্তান দিয়েই পরীক্ষা করেছিলেন, আর তিনিও রবের ভালবাসায় প্রিয় পুত্রকে জবাই করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন।
মুহতারাম হাজিরিন!! সন্তানের পরীক্ষা সবচেয়ে বেশী জিহাদ ও হিজরতের পথেই এসে থাকে। কত মুসলমান সন্তানের ভালবাসার কারনেই জিহাদ ও হিজরতের পথে যেতে পারেনি।
প্রিয় মুসলিম ভায়েরা আমার !! সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, সন্তান রবের দেয়া অনেক বড় নিয়ামত এবং পরীক্ষা, যথাযথভাবে লালন-পালন করে, শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে সন্তান কে আদর্শ ও নেককার সন্তান হিসাবে গড়ে তুলতে পারলে, এই সন্তান উভয়জগতে মা-বাবার শান্তি ও সফলতার কারণ হবে। অন্যথায় সন্তান মা-বাবার জন্য অশান্তি, পেরেশানি, লাঞ্ছনা ও শাস্তির কারণ হবে। তাই সন্তানের তরবিয়াত ও শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি আমাদের যত্নশীল হতে হবে।
মুসলিম ভায়েরা আমার! সন্তান কে নেক সন্তান হিসাবে গড়ে তুলতে, ভবিষ্যত প্রজন্মকে শিরক, কুফুর ও নাস্তিকতার পথ থেকে বাঁচাতে , অশ্লিলতা, বেহাপনা ও মাদকের মরণছোবল থেকে রক্ষা করতে হলে পিতা-মাতার কিছু করণীয় ও বর্জণীয় কাজ আছে, এখন আপনাদের সম্মুখে ৬টি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
এক. সন্তানের জন্য দয়াময় রবের নিকট দুআ করা। কেননা সন্তানের জন্য মা-বাবার দুয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। রাসূলুল্লাহ সা. এর পবিত্র জবানে ইরশাদ হয়েছে- ثلاثُ دعواتٍ مستجاباتٌ لا شكّ فيهن: دعوة الوالد، ودعوة المسافر، ودعوة المظلوم.
তিন ব্যক্তির দুআ কবুল হয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। পিতা-মাতার দুআ, মুসাফিরের দুআ ও মজলুমের দুআ।সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫৩৬
প্রিয় ভায়েরা আমার! সন্তানের জন্য দুয়া করা নবী-রাসূল এবং নেককারদের সুন্নাহ, সন্তান মায়ের গর্ভে আসার আগে থেকেই দুয়া করতে থাকা। হযরত ইব্রাহিম আ. তার রবের নিকট নেককার সন্তানের জন্য দুয়া করেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন -
رَب
هَبْ لِیْ مِنَ الصّٰلِحِیْنَ.
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমন পুত্র দান কর, যে হবে সৎলোকদের একজন। সূরা আসসাফ্ফাত (৩৭)
হযরত জাকারিয়া আ. দুয়া করেছিলেন -
هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِیَّا رَبَّهٗ، قَالَ رَبِّ هَبْ لِیْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّیَّةً طَیِّبَةً، اِنَّكَ سَمِیْعُ الدُّعَآءِ.
এ সময় যাকারিয়া স্বীয় প্রতিপালকের কাছে দু‘আ করল। বলতে লাগল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তোমার নিকট হতে পবিত্র সন্তান দান কর। নিশ্চয়ই তুমি দুআ শ্রবণকারী। সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩৮
সম্মানিত ভায়েরা ! সন্তানের জন্য নেক দুআ করা নেককার মুমিনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা তাঁর খাছ বান্দাদের একটি গুণ কোরআনে কারিমে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন :
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْیُنٍ وَّ اجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِیْنَ اِمَامًا.
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান কর, যারা হবে আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর এবং আমাদেরকে কর মুত্তাকীদের জন্য অনুসরণযোগ্য। সূরা ফুরকান (২৫) : ৭৪
ভায়েরা আমার!! সন্তানের জন্য সর্বদায় দু'আ করা, স্বামি- স্ত্রি মিলনের সময়ও এই দু'আ করা যে, আল্লাহ তায়ালা যেন নেক সন্তান, বীর মুজাহিদ সন্তান দান করেন এবং শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাজত করেন, নবী সুলাইমান আ. স্ত্রীদের সাথে মিলনের পূর্বে নিয়ত করেছিলেন-
قال سليمان: لأطوفن الليلة على تسعين امرأة، كلهن تأتي بفارس يجاهد في سبيل الله،
আমাদের প্রিয় নবী সা. সন্তানদের কে শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাজতে রাখতে আমাদেরকে দু'আ শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি বলেছেন -لو أن أحدكم إذا أراد أن يأتي أهله قال: بسم الله، اللهم جنبنا الشيطان، وجنب الشيطان ما رزقتنا، فإنه إن يقدر بينهما ولد في ذلك، لم يضره شيطان أبدا
তোমাদের কেউ যখন স্ত্রীর সাথে মিলনের ইচ্ছে করে সে যেন এই দু'আ পড়ে, ' بسم الله، اللهم جنبنا الشيطان، وجنب الشيطان ما رزقتنا،
সুতরাং আমাদের কর্তব্য হল, সন্তানের জন্য বেশি বেশি নেক দু'আ করা। আরেকটি বিষয় গুরুত্বের সাথে মনে রাখতে হবে যে, আমাদের জবান থেকে যেন সন্তানের জন্য বদ দু'আ বের না হয়, এক্ষেত্রে আমাদের জবান নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে, বিশেষ করে মায়েদের, কারণ নারিরা অল্পতেই লা'নত ও বদ দু'আ দিতে শুরু করে দেয়। সন্তানের জন্য নেক দু'আ যেমন কবুল হয়, তেমনিভাবে বদ দু'আও কবুল হয়, তাই আমাদের আরো সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে ইনশাআল্লাহ।
দুই. সন্তানকে বিশুদ্ধ ঈমান ও তাওহিদ শিক্ষা দেয়া।
প্রিয় মুসলিম ভায়েরা! সন্তানের প্রথম বিদ্যালয় হল ঘর এবং প্রথম শিক্ষক হচ্ছেন মা-বাবা, সন্তানকে আদর্শবান, নেক সন্তান এবং চক্ষু শিতলকারি হিসেবে গড়ে তুলতে , মা-বাবা কে সন্তানের জন্মের পর থেকেই শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে, সন্তানকে সর্বপ্রথম যে শিক্ষা দিতে হবে তা হচ্ছে তাওহিদের শিক্ষা, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই তার কানে তাওহিদের আওয়াজ উচ্চারণ করতে হবে। এজন্যই তো ইসলাম জন্মের পরেই সন্তানের কানে আজান দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যেন সন্তান দুনিয়াতে আসার সাথে সাথেই একত্ববাদের আওয়াজ শুনতে পায়। শিশুর নির্মল ও স্বচ্ছ অন্তরে তাওহিদের আলো জ্বালিয়ে দিতে হবে, শিশুরা যখন কথা বলতে শুরু করে, তখন প্রথমে তাদের কে তাওহিদের কালিমা শিক্ষা দেয়া। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন - افتحوا على صبيانكم أول كلمة لا إله إلا الله ولقنوهم عند الموت لا إله
إلا الله
তোমরা শিশুদের কে সর্বপ্রথম কালিমা শিক্ষা দাও এবং মৃত্যুর সময় কালিমার তালক্বিন কর।
হজরত উম্মে সুলাইম রা. যখন মুসলমান হন, তখন আনাস রা. ছোট ছিলেন, মায়ের দুধ পান করতেন, উম্মে সুলাইম রা. আনাস রা. কে বলতেন:قل: لا إله إلا الله، قل أشهد أن لا إله إلا الله، ففعل
মুহতারাম মুসলিম ভায়েরা আমার! আল্লাহ তায়ালা লুকমান হাকিম এর উপদেশগুলো পছন্দ করেছেন, যা তিনি নিজ সন্তান কে লক্ষ্য করে করেছিলেন, রব্বে কা'বা সেই উপদেশ বাণিগুলো বিশ্ববাসির শিক্ষার জন্য মহাগ্রন্ত আল-কুরআনে উল্লেখ করেছেন। লুকমান হাকিম সর্বপ্রথম সন্তানকে তাওহিদের উপদেশ দিয়েছেন, আল্লাহর সাথে শিরক না করার আদেশ করেছেন,وَ اِذْ قَالَ لُقْمٰنُ لِابْنِهٖ وَ هُوَ یَعِظُهٗ : یٰبُنَیَّ لَا تُشْرِكْ بِاللّٰهِ، اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌ.
এবং (সেই সময়কে) স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশচ্ছলে বলেছিল, হে বাছা! আল্লাহর সাথে শিরক করো না। নিশ্চয়ই শিরক চরম জুলুম। সূরা লুকমান (৩১) : ১৩
প্রিয় ভায়েরা আমার! আমরা এমন এক সময়ে আছি, যখন কাফেররা দুনিয়ার সর্বত্রয় শিরক ও কুফুরের জাল বিস্তার করে রেখেছে, সমস্ত দাজ্জালি শক্তি মুসলিম উম্মাহর ঈমান ধ্বংস করার চক্রান্ত করে যাচ্ছে, বিশেষ করে স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঈমান বিধ্বংসি পাঠ্যবয় প্রনয়ন করে এবং সেগুলো পড়িয়ে আমাদের কোমলমতি সন্তানদের চিন্তা-চেতনা, আক্বিদা-বিশ্বাস ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিচ্ছে, এমন নাজুক পরিস্থিতিতে যদি আমাদের ছেলে-মেয়েদের কে বিশুদ্ব তাওহিদের শিক্ষা না দেয়, তাদের স্বচ্ছ অন্তরে যদি ইসলামী মূল্যবোধ এর বীজ রোপণ না করা হয়, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ভালবাসা গেঁথে দেয়া না হয়, তাহলে আমাদের কলিজার টুকরো প্রিয় সন্তানগুলো শিরক ও কুফুরের স্রোতে নিজেদের গা ভাসিয়ে দিয়ে, জাহান্নামের লাকড়িতে পরিণত হবে, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর চির শত্রুতে পরিণত হবে। শত্রু না হলেও, তারা ইসলাম ও উম্মাহর কোন উপকারেই আসবেনা।
তাই আমাদের প্রধান ও প্রথম কর্তব্য হল, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে তাওহিদের শিক্ষা দেয়া, তাদের বুকে ঈমানের আলো জ্বালিয়ে দেয়া, তাহলে আশা করা যায়, আমাদের সন্তানেরা সমস্ত চক্রান্ত নস্যাত করে দিয়ে তাওহিদ ও ঈমানের পথে অবিচল থাকবে ইনশাআল্লাহ এবং পিতা-মাতাও রব্বে কা'বার পাকড়াও থেকে রক্ষা পাবে ।
তিন. পিতা-মাতা সন্তানের জন্য আদর্শবান হওয়া, উত্তম পরিবেশের ব্যবস্থা করা এবং তাদেরকে মন্দ পরিবেশ থেকে দূরে রাখা।
প্রিয় ভায়েরা আমার! সন্তানের প্রথম পাঠাশালা হচ্ছে তাদের ঘর, তাই তারা প্রথম শিক্ষা ঘর থেকেই শুরু করে , মা- বাবার কাছ থেকেই শিখে। শিশুরা হচ্ছে অনুকরণ প্রিয়, তারা মা-বাবা কে যা করতে দেখে তারাও তা করতে থাকে, যা বলতে শুনে তারাও তা বলার চেষ্টা করে।
সন্তান যদি দেখে মা-বাবা রব্বে কা'বার কুদরতি পায়ে সিজদা করছে, তারাও সিজদা করার চেষ্টা করে, যদি দেখে তারা মূর্তিকে সিজদা করছে, তারাও মূর্তি কে সিজদা করতে চায়বে। তাই রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন -كلُّ مولودٍ يولَدُ على الفطرةِ فأبواه يُهوِّدانِه أو يُنصِّرانِه أو يُمجِّسانِه
প্রতিটি শিশু ফিতরাতের উপর ( ইসলামের উপর) জন্ম গ্রহন করে, তারপর তার পিতা-মাতা ইয়াহুদি, খ্রিষ্টান বা অগ্নিপূজক বানায়।
সুতরাং সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে মা-বাবা আদর্শবান হওয়া জরুরি। তারা যেন মা-বাবা থেকে কোন অন্যায় কাজ বা কথা দেখতে, শুনতে না পায়। পাশাপাশি ঘরে উত্তম ও দ্বিনি পরিবেশের ব্যবস্থা করা, ঘরকে অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে পবিত্র রাখা।
মুহতারাম মুসলমান ভায়েরা আমার!! সন্তান কে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তুলতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে ইনশাআল্লাহ।
১.ঘর কে গান-বাজনা, নাটক-মুভি ইত্যাদি থেকে পবিত্র রাখা, মা-বাবা সন্তান কে মন্দ কিছু শিখানোর প্রয়োজন নেই, হাজারো মন্দ কাজ ও কথা শিখানোর জন্য ঘরের মধ্যে একটি টিভিই যথেষ্ট।
২.সন্তান কে মিথ্যা আশ্বাস না দেয়া, তার সামনে জবানের নিয়ন্ত্রণ করা, যেন কোন অযাচিত কথা মুখ থেকে বের না হয় , কারণ এগুলোর প্রভাব সন্তানের মধ্যে পরবে।
৩. নফল নামাজগুলো ঘরে আদায় করার চেষ্টা করা, কারণ সন্তান এগুলো দেখে দেখে নামাজের প্রতি আগ্রহি হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ। তাই তো ইসলাম নফল নামাজসমূহ ঘরে আদায় করার প্রতি উতসাহ দিয়েছে এবং নবি সা. বলেছেন 'তোমরা তোমাদের ঘরসমূহ কে কবর বানিয়ে ফেলোনা '।
৪. ঘরে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা এবং ইসলামি বই পড়া, তাহলে সন্তানেরা ছোট থেকেই এগুলোর প্রতি আগ্রহি হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
৫. ঘরের মধ্যে প্রতিটি কাজ সুন্নাহ অনুসারে করার চেষ্টা করা এবং সন্তান কে শিখানোর নিয়তে করা, যেমন: খাবার খাওয়ার সময় সুন্নাহগুলোর উপর নিজেরা আমল করা এবং সন্তানকে শিখানোর চেষ্টা করা, ঘুমানো ইত্যাদির সুন্নাহগুলো এভাবে শিখানো
। আমাদের নবি সা. এভাবে শিখাতেন, হাদিসের মধ্যে এসেছে, রাসুলূল্লাহ সা. এক ছোট সাহাবিকে শিক্ষা দিতে বলেছেন -يَا غُلَامُ، سَمِّ اللهَ، وَكُلْ بِيَمِينِكَ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ.
‘হে বৎস! বিসমিল্লাহ বল, ডান হাতে খাও এবং তোমার পাশ থেকে খাও।’ —সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০২২
সন্তানের পিছনে এভাবে মেহেনত করলে, তারা ছোট থেকেই শরিয়তের অনেক কিছু শিখে নিবে এবং নেক আমলে অভ্যস্থ হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় ভায়েরা আমার! উল্লেখিত আমলগুলো যদি আমরা করতে পারি, তাহলে সন্তানেরা আমাদের মধ্যে আদর্শ খুঁজে পাবে এবং তাদের বুনিয়াদ সুন্দর এ মজবুতভাবে গড়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
আর মনে রাখতে হবে, সন্তান পিতা-মাতার কথার চেয়ে তাদেরকেই বেশি অনুসরণ করে থাকে, তাই পিতা-মাতার কর্তব্য হচ্ছে, নিজেদের কথা-বার্তা, চাল-চলন, কাজ-কর্ম, আচার-ব্যবহার সবকিছু নববী আদলে সাজিয়ে সন্তানের জন্য উত্তম আদর্শ হওয়া।
চার. সন্তানকে ফরজে আইন পরিমাণ ইলম শিক্ষা দেয়া, তাদেরকে নেক আমলে অভ্যস্থ করা।
প্রিয় হাজিরিন!! সন্তানকে দ্বিনের মৌলিখ বিষয়গুলো শিক্ষা দেয়া মা-বাবার ফরজ দায়িত্ব। পাশাপাশি সন্তানকে নেক আমলের আদেশ করা এবং নেক আমলের অভ্যাস গড়ে তুলা। বিশেষ করে তাদের কে নামাজের আদেশ করা। এই ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করে বলেন—
وَ اْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلٰوةِ وَ اصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْـَٔلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَ الْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰي.
আর আপনি স্বীয় পরিবার-পরিজনকে নামাযের আদেশ করুন এবং নিজেও তাতে অবিচল থাকুন। আমি আপনার নিকট রিযিক চাই না, আমিই আপনাকে রিযিক দান করি। আর শুভ পরিণাম তাকওয়া (অবলম্বনকারীদের) জন্য। —সূরা ত্ব-হা (২০) : ১৩২
হযরত লুকমান হাকিম তার ছেলে কে এই বলে উপদেশ দিচ্ছেন- یٰبُنَیَّ اَقِمِ الصَّلٰوةَ وَ اْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَ انْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ اصْبِرْ عَلٰی مَاۤ اَصَابَكَ، اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ.
হে বাছা! নামায কায়েম কর, মানুষকে সৎকাজের আদেশ কর, মন্দ কাজে বাধা দাও এবং তোমার যে কষ্ট দেখা দেয়, তাতে সবর কর। নিশ্চয়ই এটা অত্যন্ত হিম্মতের কাজ। সূরা লুকমান (৩১) ১৭
আমাদের নবি সা. এই ব্যাপারে তাকিদ দিয়ে বলেছেন -مُرُوا أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِينَ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِى الْمَضَاجِعِ
তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে তাদেরকে নামায শিক্ষা দাও এবং দশ বছর হলে তার (নামাযের) উপর তাদেরকে প্রহার কর। আর বিছানা আলাদা করে দাও।
প্রিয় ভায়েরা ! সুতরাং মা-বাবার কর্তব্য হচ্ছে, সন্তানকে তাওহিদ, নামাজ ও দ্বিনের মৌলিখ বিষয়গুলো শিক্ষা দেয়া এবং নেক আমলে অভ্যস্থ করা। প্রয়োজন হলে শাসন করা এবং আদবের লাঠি ব্যবহার করা।
পাঁচ.সন্তানকে ডিভাইস-স্মার্টফোন,মোবাইল থেকে দূরে রাখা।
প্রিয় মুসলিম ভায়েরা ! বর্তমানে মোবাইল অন্যতম একটি ফিতনা , আজ শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, যুবক-যুবতী সকলেই মোবাইলের মরণছোবলে আক্রান্ত, এর মাধ্যমে আমাদের আগামী প্রজন্ম ধ্বংস ও বরবাদির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তিব্র গতিতে, ধংসের অতল গহবরে নিক্ষিপ্ত হতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে।
তাই আমাদের সন্তানদেরকে মানুষের মত মানুষ হিসাবে গড়তে, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর রাহবার করে গড়তে মোবাইল নামক ভয়ংকর ফিতনা থেকে দূরে রাখতে হবে, কোন অজুহাতেই তাদের হাতে কোন ডিভাইস-স্মার্টফোন তুলে দেয়া যাবেনা। অনেক মা-বাবা সন্তানের জ্বালা-যন্ত্রনা বাচতে তাদের হাতে ডিভাইস-স্মার্টফোন তুলে দেয়।
রব্বে কা'বার কসম! আমাদের সন্তানেরা ধ্বংস হওয়ার জন্য একটি মাত্র মোবাইলেই যথেষ্ট।
তাই এগুলো থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে, তাদেরকে বেশি বেশি সময় দিতে হবে, তাদের জন্য উত্তম বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে সন্তানেরা আদর্শ ও চক্ষু শিতলকারি সন্তান হয়ে গড়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
ছয়. সন্তানকে ইসলামের সোনালিযোগের গৌরবময় ইতিহাস এবং মুসলিম উম্মাহর বীর-বাহাদুরদের গল্প শুনানো।
প্রিয় মুসলিম উম্মাহ! আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তারাই হবে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর আগামীর রাহবার, তারাই গোটা দুনিয়ায় কুফুর ও কুফফারদের পতন ঘটিয়ে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করবে, কালিমার পতাকা পতপত করে উড়াবে ইনশাআল্লাহ। তাদের থেকেই তৈরি হবে খালিদ বিন ওয়ালিদ, বিন কাসিম ও তারিক বিন যিয়াদের মত বির-বাহাদুর।
তাই, পিতা-মাতার অপরিহার্য কর্তব্য হছে,
মুসলিম উম্মাহর বীর-বাহাদুরদের গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে সন্তানদের বড় করা, যেন তারাও তাদের মত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, মু'আয ও মু'আউয়াজ, খালিদ বিন ওয়ালিদ, বিন কাসিম ও তারিক বিন জিয়াদের ইতিহাস তাদের সামনে বারবার আলোচনা করা। ছোট থেকেই মিথ্যা- বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনী না শুনিয়ে তাদেরকে নবী-রাসুলগনের গল্প, বিশেষ করে আমাদের নবির সিরাহ ও সাহাবায়ে কেরামের ইতিহাস শুনানো।
প্রিয় মুসলিম ভায়েরা! পিতা-মাতার উদ্দেশ্য সর্বশেষ কথা হচ্ছে, সন্তান রবের দেয়া মহা এক নিয়ামত, দুনিয়া ও আখিরাতের শ্রেষ্ট সম্পদ, সন্তান রবের পক্ষ থেকে বান্দার নিকট আমানত ও বিরাট এক পরীক্ষা। সুতরাং আপনারা সন্তানের যথাযথ তারবিয়াতের প্রতি গুরুত্ব দেন, সন্তানের জন্য রব্বে কা'বার নিকট দু'আ করুন এবং তাদের স্বচ্ছ অন্তরে তাওহিদের আলো জ্বালিয়ে দেন, তাদের অন্তরে দুনিয়াবিমুখতা ও আখিরাতের ভালবাসার বীজ বপন করে দিন, তাদেরকে নেক আমল ও নামাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করুন, উত্তম চরিত্রে তাদের কে সাজিয়ে তুলুন, মন্দ চরিত্র, কাজ ও পরিবেশ থেকে তাদের দূরে রাখুন, তাদের জন্য আপনারা আদর্শবান হয়ে যান এবং তাদের জন্য উত্তম ' পাঠশালার ' ব্যবস্থা করে দিন, তাদের কে দ্বীনের বিজ্ঞ আলেম বানাতে দু'আ ও চেষ্ট করুন। তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনাদের সন্তানেরা মানুষের মত মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে নিজেদের সবটুকু বিলিয়ে দিবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সন্তানের তারবিয়াত ও শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেয়ার তাওফিক দান করুন, আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন!!
بسم الله الرحمن الرحيم
إن الحمد لله الذي جعل الاولاد للحياة الدنيا زينة والعمل الصالح باقية وجعلهم عند أهلهم وديعة وجعل القيام عليهم واجبا و شريعة والصلاة والسلام على سيدنا محمد وعلى آله وأصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين أما بعد فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم وَاعْلَمُوْۤا اَنَّمَاۤ اَمْوَالُكُمْ وَ اَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ، وَّ اَنَّ اللهَ عِنْدَهٗۤ اَجْرٌ عَظِیْمٌ۠
وقال النبي صلوات ربي عليه وسلامه ثلاثُ دعواتٍ مستجاباتٌ لا شكّ فيهن: دعوة الوالد، ودعوة المسافر، ودعوة المظلوم
------
প্রিয় মুসলিম ভায়েরা! আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন আমাদের কে অসংখ্য অগণিত নিয়ামত দিয়েছেন, যা গণনা করে কখন শেষ করা যাবেনা, নিয়ামতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হচ্ছে সন্তান,যার সন্তান নেই সেই বুঝে সন্তান কত বড় নিয়ামত, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কালামে মজিদে ইরশাদ করেছেন -
لِلهِ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ اِنَاثًا وَّ يَهَبُ لِمَنْ يَّشَآءُ الذُّكُوْرَ،اَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَّ اِنَاثًا وَ يَجْعَلُ مَنْ يَّشَآءُ عَقِيْمًا اِنَّهٗ عَلِيْمٌ قَدِيْرٌ
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদের দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই। আর যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। তিনি নিশ্চয়ই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। —সূরা শূরা (৪২) : ৪৯-৫০
প্রিয় ভায়েরা! আমরা যদি সন্তান-সন্তুতি কে ঈমান, আমলে ও উত্তম আদর্শে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে এই সন্তান পার্থিব জিবনে আমার উপকারে আসবে, তাদের দেখে চক্ষু শিতল হবে, আনন্দে অন্তর ভরে যাবে, বিশেষ করে আখিরাতের জিবনে এই সন্তান জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে, হতে পারে সন্তানের দুয়া ও আমলের উসিলায় জাহান্নামের ফায়সালা হওয়ার পরও মা বাবার মুক্তির ব্যবস্থ হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إذا مات الإنسانُ انقطع عنه عملهُ إلا من ثلاثةٍ: إلا من صدقة جارية، أو علم ينتفع به، أو ولد صالح يدعو له
যখন মানুষ মারা যায়, তখন ৩ টি আমল ব্যতিত সকল আমলের সওয়াব বন্ধ হয়ে যায় এর মধ্যে একটি হচ্ছে নেক সন্তান।
সুতরাং সন্তান হচ্ছে দুনিয়া ও আখিরাতের সবচেয়ে বড় পুঁজি এবং সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা, এই ব্যবসার প্রতি যারা যত্নশিল হয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের মুখ উজ্জ্বল হয়ে, তাদের চক্ষু শিতল হয়, চিরস্থায়ি সফলতা তাদের পদচুম্মন করে। কিন্তু আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হল, মানুষ ব্যবসা,বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি, গরু, ছাগল ইত্যাদির প্রতি খুবি যত্নশিল, কিন্তু সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি মারাত্নকভাবে অবহেলা প্রদর্শন করে।
মুসলিম ভায়েরা! সন্তান হচ্ছে রবের পক্ষ থেকে বান্দার নিকট বিরাট বড় একটি আমানত, নেক সন্তান যেমন দুনিয়া ও আখিরাতের বড় পুঁজি, তেমনিভাবে কেউ যদি সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যপারে অবহেলা করে, তাদের কে ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ থেকে দূরে রাখে, তাদের কে অবশ্যই মহান রবের নিকট জবাবদিহি করতে হবে। আর এই সন্তানের কারণে পার্থিব জিবনে লাঞ্চনা ও অপদস্ততার সম্মুখিন হতে হবে, এমনকি আদরের এই সন্তানেরাই একসময় মা-বাবা কে ঘর থেকে বের করে বিদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: أَلا كلُّكُمْ راعٍ وكلُّكُمْ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَالْإِمَامُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجِهَا وولدِهِ وَهِي مسؤولةٌ عَنْهُمْ وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مسؤولٌ عَنهُ أَلا فكلُّكُمْ راعٍ وكلكُمْ مسؤولٌ عَن رعيتِه
শুনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। পুরুষ তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নারী তার পরিবার, সন্তান-সন্ততির বিষয়ে দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।জেনে রাখো, প্রত্যেক ব্যক্তিই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্তদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। সহীহ বুখারী, হাদীস ৭১৩৮
আরেক হাদিসে এসেছে, ما مِن عبد اسْتَرْعاه اللهُ رعيّةً، فلم يَحُطْها بنصيحة، إلا لم يجدْ رائحة الجنة.
আল্লাহ তাআলা যদি বান্দাকে কারো দায়িত্বশীল বানান আর সে নিজ অধীনস্তদের কল্যাণের ব্যাপারে যত্নশীল না হয়, তাহলে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।সহীহ বুখারী, হাদীস ৭১৫০
সুতরাং রবের দেয়া আমানত সন্তানের ব্যপারে আমাদের যত্নশীল হতে হবে, তাদের কে ইসলামি শিক্ষা ও আদর্শের উপর গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় রবের পাকড়াও থেকে কেউ রেহাই পাবনা। সন্তান হয়ত জান্নাত যাওয়ার মাধ্যম হবে, না হয় জাহান্নামে যাওয়ার মাধ্যম হবে, তাই আমাদের রবের এই আমানাতের ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে।
প্রিয় মুসলিম ভায়েরা আমার!! সন্তান হচ্ছে রব্বে কা'বার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিরাট বড় একটি পরিক্ষা, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন-وَاعْلَمُوْۤا اَنَّمَاۤ اَمْوَالُكُمْ وَ اَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ، وَّ اَنَّ اللهَ عِنْدَهٗۤ اَجْرٌ عَظِیْمٌ۠.
জেনে রেখ, তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা। আর মহা পুরস্কার রয়েছে আল্লাহরই কাছে। সূরা আনফাল (৮) : ২৮
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দাকে সন্তান দিয়ে দুভাবে পরীক্ষা করেন।
১. বান্দা সন্তান পেয়ে তার রবের হুকুম ভুলে যায়কিনা, তার রবকে বেশি ভালবাসে, না সন্তান কে।
২. বান্দা রবের দেয়া নিয়ামতের হক যথাযথভাবে আদায় করে কিনা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
এই আয়াতে পরিস্কার বলা হয়েছে, সন্তান পেয়ে কেউ যদি তার রবকে ভুলে যায়, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অন্য আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তায়ালা বলেন-قُلۡ اِنۡ کَانَ اٰبَآؤُکُمۡ وَ اَبۡنَآؤُکُمۡ وَ اِخۡوَانُکُمۡ وَ اَزۡوَاجُکُمۡ وَ عَشِیۡرَتُکُمۡ وَ اَمۡوَالُۨ اقۡتَرَفۡتُمُوۡهَا وَ تِجَارَۃٌ تَخۡشَوۡنَ کَسَادَهَا وَ مَسٰکِنُ تَرۡضَوۡنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَیۡکُمۡ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ جِهَادٍ فِیۡ سَبِیۡلِهٖ فَتَرَبَّصُوۡا حَتّٰی یَاۡتِیَ اللّٰهُ بِاَمۡرِهٖ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِیۡنَ
হে নাবী!) তুমি তাদেরকে বলে দাওঃ যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্রগণ, তোমাদের ভাইগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের স্বগোত্র, আর ঐ সব ধন সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর ঐ ব্যবসায় যাতে তোমরা মন্দা পড়ার আশংকা করছ অথবা ঐ গৃহসমূহ যেখানে অতি আনন্দে বসবাস করছ, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের চেয়ে এবং তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে যদি (এই সব) তোমাদের নিকট অধিক প্রিয় হয় তাহলে তোমরা প্রতীক্ষা করতে থাক যে পর্যন্ত আল্লাহ নিজের নির্দেশ পাঠিয়ে দেন। আর আল্লাহ আদেশ অমান্যকারীদেরকে পথ প্রদশর্ন করেন না।
এই আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, সন্তানের ভালবাসা যেন আল্লাহ, তার রাসুল এবং তার পথে জিহাদের চেয়েও বেশি না হয়, যদি বেশি হয় তাহলে দুনিয়া ও আখিরাতে তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
সম্মানিত উপস্থিতি! আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় খলীল ইব্রাহিম আ. কে এই সন্তান দিয়েই পরীক্ষা করেছিলেন, আর তিনিও রবের ভালবাসায় প্রিয় পুত্রকে জবাই করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন।
মুহতারাম হাজিরিন!! সন্তানের পরীক্ষা সবচেয়ে বেশী জিহাদ ও হিজরতের পথেই এসে থাকে। কত মুসলমান সন্তানের ভালবাসার কারনেই জিহাদ ও হিজরতের পথে যেতে পারেনি।
প্রিয় মুসলিম ভায়েরা আমার !! সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, সন্তান রবের দেয়া অনেক বড় নিয়ামত এবং পরীক্ষা, যথাযথভাবে লালন-পালন করে, শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে সন্তান কে আদর্শ ও নেককার সন্তান হিসাবে গড়ে তুলতে পারলে, এই সন্তান উভয়জগতে মা-বাবার শান্তি ও সফলতার কারণ হবে। অন্যথায় সন্তান মা-বাবার জন্য অশান্তি, পেরেশানি, লাঞ্ছনা ও শাস্তির কারণ হবে। তাই সন্তানের তরবিয়াত ও শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি আমাদের যত্নশীল হতে হবে।
মুসলিম ভায়েরা আমার! সন্তান কে নেক সন্তান হিসাবে গড়ে তুলতে, ভবিষ্যত প্রজন্মকে শিরক, কুফুর ও নাস্তিকতার পথ থেকে বাঁচাতে , অশ্লিলতা, বেহাপনা ও মাদকের মরণছোবল থেকে রক্ষা করতে হলে পিতা-মাতার কিছু করণীয় ও বর্জণীয় কাজ আছে, এখন আপনাদের সম্মুখে ৬টি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
এক. সন্তানের জন্য দয়াময় রবের নিকট দুআ করা। কেননা সন্তানের জন্য মা-বাবার দুয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। রাসূলুল্লাহ সা. এর পবিত্র জবানে ইরশাদ হয়েছে- ثلاثُ دعواتٍ مستجاباتٌ لا شكّ فيهن: دعوة الوالد، ودعوة المسافر، ودعوة المظلوم.
তিন ব্যক্তির দুআ কবুল হয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। পিতা-মাতার দুআ, মুসাফিরের দুআ ও মজলুমের দুআ।সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫৩৬
প্রিয় ভায়েরা আমার! সন্তানের জন্য দুয়া করা নবী-রাসূল এবং নেককারদের সুন্নাহ, সন্তান মায়ের গর্ভে আসার আগে থেকেই দুয়া করতে থাকা। হযরত ইব্রাহিম আ. তার রবের নিকট নেককার সন্তানের জন্য দুয়া করেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন -
رَب
هَبْ لِیْ مِنَ الصّٰلِحِیْنَ.
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমন পুত্র দান কর, যে হবে সৎলোকদের একজন। সূরা আসসাফ্ফাত (৩৭)
হযরত জাকারিয়া আ. দুয়া করেছিলেন -
هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِیَّا رَبَّهٗ، قَالَ رَبِّ هَبْ لِیْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّیَّةً طَیِّبَةً، اِنَّكَ سَمِیْعُ الدُّعَآءِ.
এ সময় যাকারিয়া স্বীয় প্রতিপালকের কাছে দু‘আ করল। বলতে লাগল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তোমার নিকট হতে পবিত্র সন্তান দান কর। নিশ্চয়ই তুমি দুআ শ্রবণকারী। সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩৮
সম্মানিত ভায়েরা ! সন্তানের জন্য নেক দুআ করা নেককার মুমিনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা তাঁর খাছ বান্দাদের একটি গুণ কোরআনে কারিমে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন :
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْیُنٍ وَّ اجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِیْنَ اِمَامًا.
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান কর, যারা হবে আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর এবং আমাদেরকে কর মুত্তাকীদের জন্য অনুসরণযোগ্য। সূরা ফুরকান (২৫) : ৭৪
ভায়েরা আমার!! সন্তানের জন্য সর্বদায় দু'আ করা, স্বামি- স্ত্রি মিলনের সময়ও এই দু'আ করা যে, আল্লাহ তায়ালা যেন নেক সন্তান, বীর মুজাহিদ সন্তান দান করেন এবং শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাজত করেন, নবী সুলাইমান আ. স্ত্রীদের সাথে মিলনের পূর্বে নিয়ত করেছিলেন-
قال سليمان: لأطوفن الليلة على تسعين امرأة، كلهن تأتي بفارس يجاهد في سبيل الله،
আমাদের প্রিয় নবী সা. সন্তানদের কে শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাজতে রাখতে আমাদেরকে দু'আ শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি বলেছেন -لو أن أحدكم إذا أراد أن يأتي أهله قال: بسم الله، اللهم جنبنا الشيطان، وجنب الشيطان ما رزقتنا، فإنه إن يقدر بينهما ولد في ذلك، لم يضره شيطان أبدا
তোমাদের কেউ যখন স্ত্রীর সাথে মিলনের ইচ্ছে করে সে যেন এই দু'আ পড়ে, ' بسم الله، اللهم جنبنا الشيطان، وجنب الشيطان ما رزقتنا،
সুতরাং আমাদের কর্তব্য হল, সন্তানের জন্য বেশি বেশি নেক দু'আ করা। আরেকটি বিষয় গুরুত্বের সাথে মনে রাখতে হবে যে, আমাদের জবান থেকে যেন সন্তানের জন্য বদ দু'আ বের না হয়, এক্ষেত্রে আমাদের জবান নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে, বিশেষ করে মায়েদের, কারণ নারিরা অল্পতেই লা'নত ও বদ দু'আ দিতে শুরু করে দেয়। সন্তানের জন্য নেক দু'আ যেমন কবুল হয়, তেমনিভাবে বদ দু'আও কবুল হয়, তাই আমাদের আরো সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে ইনশাআল্লাহ।
দুই. সন্তানকে বিশুদ্ধ ঈমান ও তাওহিদ শিক্ষা দেয়া।
প্রিয় মুসলিম ভায়েরা! সন্তানের প্রথম বিদ্যালয় হল ঘর এবং প্রথম শিক্ষক হচ্ছেন মা-বাবা, সন্তানকে আদর্শবান, নেক সন্তান এবং চক্ষু শিতলকারি হিসেবে গড়ে তুলতে , মা-বাবা কে সন্তানের জন্মের পর থেকেই শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে, সন্তানকে সর্বপ্রথম যে শিক্ষা দিতে হবে তা হচ্ছে তাওহিদের শিক্ষা, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই তার কানে তাওহিদের আওয়াজ উচ্চারণ করতে হবে। এজন্যই তো ইসলাম জন্মের পরেই সন্তানের কানে আজান দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যেন সন্তান দুনিয়াতে আসার সাথে সাথেই একত্ববাদের আওয়াজ শুনতে পায়। শিশুর নির্মল ও স্বচ্ছ অন্তরে তাওহিদের আলো জ্বালিয়ে দিতে হবে, শিশুরা যখন কথা বলতে শুরু করে, তখন প্রথমে তাদের কে তাওহিদের কালিমা শিক্ষা দেয়া। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন - افتحوا على صبيانكم أول كلمة لا إله إلا الله ولقنوهم عند الموت لا إله
إلا الله
তোমরা শিশুদের কে সর্বপ্রথম কালিমা শিক্ষা দাও এবং মৃত্যুর সময় কালিমার তালক্বিন কর।
হজরত উম্মে সুলাইম রা. যখন মুসলমান হন, তখন আনাস রা. ছোট ছিলেন, মায়ের দুধ পান করতেন, উম্মে সুলাইম রা. আনাস রা. কে বলতেন:قل: لا إله إلا الله، قل أشهد أن لا إله إلا الله، ففعل
মুহতারাম মুসলিম ভায়েরা আমার! আল্লাহ তায়ালা লুকমান হাকিম এর উপদেশগুলো পছন্দ করেছেন, যা তিনি নিজ সন্তান কে লক্ষ্য করে করেছিলেন, রব্বে কা'বা সেই উপদেশ বাণিগুলো বিশ্ববাসির শিক্ষার জন্য মহাগ্রন্ত আল-কুরআনে উল্লেখ করেছেন। লুকমান হাকিম সর্বপ্রথম সন্তানকে তাওহিদের উপদেশ দিয়েছেন, আল্লাহর সাথে শিরক না করার আদেশ করেছেন,وَ اِذْ قَالَ لُقْمٰنُ لِابْنِهٖ وَ هُوَ یَعِظُهٗ : یٰبُنَیَّ لَا تُشْرِكْ بِاللّٰهِ، اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌ.
এবং (সেই সময়কে) স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশচ্ছলে বলেছিল, হে বাছা! আল্লাহর সাথে শিরক করো না। নিশ্চয়ই শিরক চরম জুলুম। সূরা লুকমান (৩১) : ১৩
প্রিয় ভায়েরা আমার! আমরা এমন এক সময়ে আছি, যখন কাফেররা দুনিয়ার সর্বত্রয় শিরক ও কুফুরের জাল বিস্তার করে রেখেছে, সমস্ত দাজ্জালি শক্তি মুসলিম উম্মাহর ঈমান ধ্বংস করার চক্রান্ত করে যাচ্ছে, বিশেষ করে স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঈমান বিধ্বংসি পাঠ্যবয় প্রনয়ন করে এবং সেগুলো পড়িয়ে আমাদের কোমলমতি সন্তানদের চিন্তা-চেতনা, আক্বিদা-বিশ্বাস ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিচ্ছে, এমন নাজুক পরিস্থিতিতে যদি আমাদের ছেলে-মেয়েদের কে বিশুদ্ব তাওহিদের শিক্ষা না দেয়, তাদের স্বচ্ছ অন্তরে যদি ইসলামী মূল্যবোধ এর বীজ রোপণ না করা হয়, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ভালবাসা গেঁথে দেয়া না হয়, তাহলে আমাদের কলিজার টুকরো প্রিয় সন্তানগুলো শিরক ও কুফুরের স্রোতে নিজেদের গা ভাসিয়ে দিয়ে, জাহান্নামের লাকড়িতে পরিণত হবে, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর চির শত্রুতে পরিণত হবে। শত্রু না হলেও, তারা ইসলাম ও উম্মাহর কোন উপকারেই আসবেনা।
তাই আমাদের প্রধান ও প্রথম কর্তব্য হল, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে তাওহিদের শিক্ষা দেয়া, তাদের বুকে ঈমানের আলো জ্বালিয়ে দেয়া, তাহলে আশা করা যায়, আমাদের সন্তানেরা সমস্ত চক্রান্ত নস্যাত করে দিয়ে তাওহিদ ও ঈমানের পথে অবিচল থাকবে ইনশাআল্লাহ এবং পিতা-মাতাও রব্বে কা'বার পাকড়াও থেকে রক্ষা পাবে ।
তিন. পিতা-মাতা সন্তানের জন্য আদর্শবান হওয়া, উত্তম পরিবেশের ব্যবস্থা করা এবং তাদেরকে মন্দ পরিবেশ থেকে দূরে রাখা।
প্রিয় ভায়েরা আমার! সন্তানের প্রথম পাঠাশালা হচ্ছে তাদের ঘর, তাই তারা প্রথম শিক্ষা ঘর থেকেই শুরু করে , মা- বাবার কাছ থেকেই শিখে। শিশুরা হচ্ছে অনুকরণ প্রিয়, তারা মা-বাবা কে যা করতে দেখে তারাও তা করতে থাকে, যা বলতে শুনে তারাও তা বলার চেষ্টা করে।
সন্তান যদি দেখে মা-বাবা রব্বে কা'বার কুদরতি পায়ে সিজদা করছে, তারাও সিজদা করার চেষ্টা করে, যদি দেখে তারা মূর্তিকে সিজদা করছে, তারাও মূর্তি কে সিজদা করতে চায়বে। তাই রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন -كلُّ مولودٍ يولَدُ على الفطرةِ فأبواه يُهوِّدانِه أو يُنصِّرانِه أو يُمجِّسانِه
প্রতিটি শিশু ফিতরাতের উপর ( ইসলামের উপর) জন্ম গ্রহন করে, তারপর তার পিতা-মাতা ইয়াহুদি, খ্রিষ্টান বা অগ্নিপূজক বানায়।
সুতরাং সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে মা-বাবা আদর্শবান হওয়া জরুরি। তারা যেন মা-বাবা থেকে কোন অন্যায় কাজ বা কথা দেখতে, শুনতে না পায়। পাশাপাশি ঘরে উত্তম ও দ্বিনি পরিবেশের ব্যবস্থা করা, ঘরকে অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে পবিত্র রাখা।
মুহতারাম মুসলমান ভায়েরা আমার!! সন্তান কে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তুলতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে ইনশাআল্লাহ।
১.ঘর কে গান-বাজনা, নাটক-মুভি ইত্যাদি থেকে পবিত্র রাখা, মা-বাবা সন্তান কে মন্দ কিছু শিখানোর প্রয়োজন নেই, হাজারো মন্দ কাজ ও কথা শিখানোর জন্য ঘরের মধ্যে একটি টিভিই যথেষ্ট।
২.সন্তান কে মিথ্যা আশ্বাস না দেয়া, তার সামনে জবানের নিয়ন্ত্রণ করা, যেন কোন অযাচিত কথা মুখ থেকে বের না হয় , কারণ এগুলোর প্রভাব সন্তানের মধ্যে পরবে।
৩. নফল নামাজগুলো ঘরে আদায় করার চেষ্টা করা, কারণ সন্তান এগুলো দেখে দেখে নামাজের প্রতি আগ্রহি হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ। তাই তো ইসলাম নফল নামাজসমূহ ঘরে আদায় করার প্রতি উতসাহ দিয়েছে এবং নবি সা. বলেছেন 'তোমরা তোমাদের ঘরসমূহ কে কবর বানিয়ে ফেলোনা '।
৪. ঘরে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা এবং ইসলামি বই পড়া, তাহলে সন্তানেরা ছোট থেকেই এগুলোর প্রতি আগ্রহি হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
৫. ঘরের মধ্যে প্রতিটি কাজ সুন্নাহ অনুসারে করার চেষ্টা করা এবং সন্তান কে শিখানোর নিয়তে করা, যেমন: খাবার খাওয়ার সময় সুন্নাহগুলোর উপর নিজেরা আমল করা এবং সন্তানকে শিখানোর চেষ্টা করা, ঘুমানো ইত্যাদির সুন্নাহগুলো এভাবে শিখানো
। আমাদের নবি সা. এভাবে শিখাতেন, হাদিসের মধ্যে এসেছে, রাসুলূল্লাহ সা. এক ছোট সাহাবিকে শিক্ষা দিতে বলেছেন -يَا غُلَامُ، سَمِّ اللهَ، وَكُلْ بِيَمِينِكَ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ.
‘হে বৎস! বিসমিল্লাহ বল, ডান হাতে খাও এবং তোমার পাশ থেকে খাও।’ —সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০২২
সন্তানের পিছনে এভাবে মেহেনত করলে, তারা ছোট থেকেই শরিয়তের অনেক কিছু শিখে নিবে এবং নেক আমলে অভ্যস্থ হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় ভায়েরা আমার! উল্লেখিত আমলগুলো যদি আমরা করতে পারি, তাহলে সন্তানেরা আমাদের মধ্যে আদর্শ খুঁজে পাবে এবং তাদের বুনিয়াদ সুন্দর এ মজবুতভাবে গড়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
আর মনে রাখতে হবে, সন্তান পিতা-মাতার কথার চেয়ে তাদেরকেই বেশি অনুসরণ করে থাকে, তাই পিতা-মাতার কর্তব্য হচ্ছে, নিজেদের কথা-বার্তা, চাল-চলন, কাজ-কর্ম, আচার-ব্যবহার সবকিছু নববী আদলে সাজিয়ে সন্তানের জন্য উত্তম আদর্শ হওয়া।
চার. সন্তানকে ফরজে আইন পরিমাণ ইলম শিক্ষা দেয়া, তাদেরকে নেক আমলে অভ্যস্থ করা।
প্রিয় হাজিরিন!! সন্তানকে দ্বিনের মৌলিখ বিষয়গুলো শিক্ষা দেয়া মা-বাবার ফরজ দায়িত্ব। পাশাপাশি সন্তানকে নেক আমলের আদেশ করা এবং নেক আমলের অভ্যাস গড়ে তুলা। বিশেষ করে তাদের কে নামাজের আদেশ করা। এই ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করে বলেন—
وَ اْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلٰوةِ وَ اصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْـَٔلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَ الْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰي.
আর আপনি স্বীয় পরিবার-পরিজনকে নামাযের আদেশ করুন এবং নিজেও তাতে অবিচল থাকুন। আমি আপনার নিকট রিযিক চাই না, আমিই আপনাকে রিযিক দান করি। আর শুভ পরিণাম তাকওয়া (অবলম্বনকারীদের) জন্য। —সূরা ত্ব-হা (২০) : ১৩২
হযরত লুকমান হাকিম তার ছেলে কে এই বলে উপদেশ দিচ্ছেন- یٰبُنَیَّ اَقِمِ الصَّلٰوةَ وَ اْمُرْ بِالْمَعْرُوْفِ وَ انْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ اصْبِرْ عَلٰی مَاۤ اَصَابَكَ، اِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُوْرِ.
হে বাছা! নামায কায়েম কর, মানুষকে সৎকাজের আদেশ কর, মন্দ কাজে বাধা দাও এবং তোমার যে কষ্ট দেখা দেয়, তাতে সবর কর। নিশ্চয়ই এটা অত্যন্ত হিম্মতের কাজ। সূরা লুকমান (৩১) ১৭
আমাদের নবি সা. এই ব্যাপারে তাকিদ দিয়ে বলেছেন -مُرُوا أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِينَ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِى الْمَضَاجِعِ
তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে তাদেরকে নামায শিক্ষা দাও এবং দশ বছর হলে তার (নামাযের) উপর তাদেরকে প্রহার কর। আর বিছানা আলাদা করে দাও।
প্রিয় ভায়েরা ! সুতরাং মা-বাবার কর্তব্য হচ্ছে, সন্তানকে তাওহিদ, নামাজ ও দ্বিনের মৌলিখ বিষয়গুলো শিক্ষা দেয়া এবং নেক আমলে অভ্যস্থ করা। প্রয়োজন হলে শাসন করা এবং আদবের লাঠি ব্যবহার করা।
পাঁচ.সন্তানকে ডিভাইস-স্মার্টফোন,মোবাইল থেকে দূরে রাখা।
প্রিয় মুসলিম ভায়েরা ! বর্তমানে মোবাইল অন্যতম একটি ফিতনা , আজ শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, যুবক-যুবতী সকলেই মোবাইলের মরণছোবলে আক্রান্ত, এর মাধ্যমে আমাদের আগামী প্রজন্ম ধ্বংস ও বরবাদির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তিব্র গতিতে, ধংসের অতল গহবরে নিক্ষিপ্ত হতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে।
তাই আমাদের সন্তানদেরকে মানুষের মত মানুষ হিসাবে গড়তে, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর রাহবার করে গড়তে মোবাইল নামক ভয়ংকর ফিতনা থেকে দূরে রাখতে হবে, কোন অজুহাতেই তাদের হাতে কোন ডিভাইস-স্মার্টফোন তুলে দেয়া যাবেনা। অনেক মা-বাবা সন্তানের জ্বালা-যন্ত্রনা বাচতে তাদের হাতে ডিভাইস-স্মার্টফোন তুলে দেয়।
রব্বে কা'বার কসম! আমাদের সন্তানেরা ধ্বংস হওয়ার জন্য একটি মাত্র মোবাইলেই যথেষ্ট।
তাই এগুলো থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে, তাদেরকে বেশি বেশি সময় দিতে হবে, তাদের জন্য উত্তম বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে সন্তানেরা আদর্শ ও চক্ষু শিতলকারি সন্তান হয়ে গড়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
ছয়. সন্তানকে ইসলামের সোনালিযোগের গৌরবময় ইতিহাস এবং মুসলিম উম্মাহর বীর-বাহাদুরদের গল্প শুনানো।
প্রিয় মুসলিম উম্মাহ! আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তারাই হবে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর আগামীর রাহবার, তারাই গোটা দুনিয়ায় কুফুর ও কুফফারদের পতন ঘটিয়ে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করবে, কালিমার পতাকা পতপত করে উড়াবে ইনশাআল্লাহ। তাদের থেকেই তৈরি হবে খালিদ বিন ওয়ালিদ, বিন কাসিম ও তারিক বিন যিয়াদের মত বির-বাহাদুর।
তাই, পিতা-মাতার অপরিহার্য কর্তব্য হছে,
মুসলিম উম্মাহর বীর-বাহাদুরদের গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে সন্তানদের বড় করা, যেন তারাও তাদের মত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, মু'আয ও মু'আউয়াজ, খালিদ বিন ওয়ালিদ, বিন কাসিম ও তারিক বিন জিয়াদের ইতিহাস তাদের সামনে বারবার আলোচনা করা। ছোট থেকেই মিথ্যা- বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনী না শুনিয়ে তাদেরকে নবী-রাসুলগনের গল্প, বিশেষ করে আমাদের নবির সিরাহ ও সাহাবায়ে কেরামের ইতিহাস শুনানো।
প্রিয় মুসলিম ভায়েরা! পিতা-মাতার উদ্দেশ্য সর্বশেষ কথা হচ্ছে, সন্তান রবের দেয়া মহা এক নিয়ামত, দুনিয়া ও আখিরাতের শ্রেষ্ট সম্পদ, সন্তান রবের পক্ষ থেকে বান্দার নিকট আমানত ও বিরাট এক পরীক্ষা। সুতরাং আপনারা সন্তানের যথাযথ তারবিয়াতের প্রতি গুরুত্ব দেন, সন্তানের জন্য রব্বে কা'বার নিকট দু'আ করুন এবং তাদের স্বচ্ছ অন্তরে তাওহিদের আলো জ্বালিয়ে দেন, তাদের অন্তরে দুনিয়াবিমুখতা ও আখিরাতের ভালবাসার বীজ বপন করে দিন, তাদেরকে নেক আমল ও নামাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করুন, উত্তম চরিত্রে তাদের কে সাজিয়ে তুলুন, মন্দ চরিত্র, কাজ ও পরিবেশ থেকে তাদের দূরে রাখুন, তাদের জন্য আপনারা আদর্শবান হয়ে যান এবং তাদের জন্য উত্তম ' পাঠশালার ' ব্যবস্থা করে দিন, তাদের কে দ্বীনের বিজ্ঞ আলেম বানাতে দু'আ ও চেষ্ট করুন। তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনাদের সন্তানেরা মানুষের মত মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে নিজেদের সবটুকু বিলিয়ে দিবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সন্তানের তারবিয়াত ও শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেয়ার তাওফিক দান করুন, আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন!!