Announcement

Collapse
No announcement yet.

আজকের তারাবীহ - প্রতিদিন তারাবীহ তে তিলাওয়াকৃত কোরআন কারীমের সারসংক্ষেপ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আজকের তারাবীহ - প্রতিদিন তারাবীহ তে তিলাওয়াকৃত কোরআন কারীমের সারসংক্ষেপ

    আজকের তারাবীহ
    প্রতিদিন খতমে কোরআন তারাবীহ তে তিলাওয়াকৃত কোরআন কারীমের সারসংক্ষেপ

    ফেসবুক হতে সংগৃহীত


    পিডিএফ লিঙ্কঃ
    https://files.fm/f/ed5b3m3624

    ওয়ার্ড ফাইল লিঙ্কঃ
    https://files.fm/f/6rrcftg6h8
    Last edited by Rakibul Hassan; 4 days ago.

  • #2
    রামাদান - ০১



    ০২। সূরা বাকারা, আয়াত ১-২০১

    কুরআনকে মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াহ বলার পর মুত্তাকীদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। তারপর কাফির ও মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। তারপর কাফির মুনাফিকদের অবস্থা কয়েকটি উপমার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের উপর আল্লাহর বিভিন্ন অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে তাঁর দাসত্ব করতে বলা হয়। কুরআন আল্লাহর বাণী হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করলে অনুরূপ সূরা তৈরি করার চ্যালেঞ্জ করা হয়। কাফিরদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি ও ঈমানদারদের জন্য জান্নাতের নিয়ামতের কিছু বর্ণনা দেওয়া হয়। কুরআনে আল্লাহ তুচ্ছাতিতুচ্ছ বস্তুর উপমা কেন ব্যবহার করেন, এ ব্যাপারে কাফিরদের আপত্তির জবাব দেওয়া হয়েছে। উল্টো তাদের ভণ্ডামিগুলো তুলে ধরা হয়েছে

    আল্লাহ কর্তৃক আদম (আঃ) এর সৃষ্টির ইচ্ছা করা থেকে শুরু করে আদম-হাওয়া (আঃ) এর জমিনে অবতরণ ও আল্লাহর পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা পাওয়া পর্যন্ত কাহিনী বর্ণিত হয়। ওয়াহী আকারে আসা এসব হিদায়াতের অনুসরণ যারা করবে, তারা জান্নাতি। অন্যথায় জাহান্নামি

    বনী ইসরাইল, ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের উদ্দেশ্য করে ঈমান আনার জন্য দীর্ঘ নসিহত করা হয়। সত্যের সাথে মিথ্যা মিশ্রণ ও সত্য গোপন করতে নিষেধ করা হয়। বনী ইসরাইলের উপর আল্লাহর বিভিন্ন নিয়ামতের কথা স্মরণ করানো হয়। তাদেরকে মানবজাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান, ফিরাউন ও তার দলকে লোহিত সাগরে ডুবিয়ে তাদের মুক্ত করা, মূসার (আঃ) অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাছুরপূজা করার পরও তাদের ক্ষমা করা, আসমান থেকে মান্ ও সালওয়া পাঠানো, পাথর থেকে তাদের বারটি গোত্রের জন্য বারটি ঝর্ণা প্রদানের কথা স্মরণ করানো হয়। এরপরও তারা নানাভাবে মূসা (আঃ) কে কষ্ট দেওয়া ও অন্য অনেক নবীকে হত্যা করার মতো জঘন্য কাজ করে আযাবে পতিত হয়। আগের উম্মতদের মাঝে যারা তাওহীদের উপর মৃত্যুবরণ করেছে, তারা আখিরাতে পুরষ্কার পাবে। এছাড়া বনী ইসরাইলের সীমালঙ্ঘনকারীদের বিভিন্ন আযাব দেওয়া হয়েছিলো, তা স্মরণ করানো হয়। তাদের মাথার উপর তূর পর্বতকে এনে তুলে ধরা, শনিবারের আইন অমান্যকারীদের বানরে পরিণত করা ইত্যাদি।
    তাদের মাঝে এক ব্যক্তির হত্যাকারীকে আল্লাহ অলৌকিকভাবে সনাক্ত করে দেন। তা হলো একটি গাভী জবাই করে তার গোসত মৃতের গায়ে মারা, এতে সে জীবিত হয়ে অপরাধীর নাম বলে দেয়। এই গাভী জবাইয়ে অনীহার কারণে বনী ইসরাইল বারবার মূসা (আঃ) এর কাছে এর রঙ ইত্যাদি নিয়ে অনেক খুঁটিনাটি প্রশ্ন করে কালক্ষেপণ করেছিলো। এত এত নিদর্শন দেখানোর পরও তাদের অনেকের অন্তর পাথরের চেয়ে শক্ত রয়ে যায়

    বনী ইসরাইলের স্বভাব স্মরণ করিয়ে দিয়ে ঈমানদারদের সতর্ক করা হয়েছে। এরা আসমানী কিতাবে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগমন সম্পর্কে পড়েছে, কিন্তু জিদের বশে সে কথা গোপন করছে এবং কিতাব বিকৃত করে। আখিরাতে জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারে তারা খুব আত্মবিশ্বাসী। আল্লাহ তাদের দ্বীন অমান্য করার ফিরিস্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে জান্নাত পাওয়ার সঠিক ক্রাইটেরিয়া জানিয়ে দেন। তাদের বংশ থেকে শেষ নবী আসেনি বলে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, অথচ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নবুওয়ত দেওয়ার অধিকার রাখেন। তাদের আরো ভণ্ডামি উন্মোচন করে বলা হয় তারা যদি আসমানী কিতাবে বিশ্বাসী হয়েই থাকে তাহলে পূর্বের নবীদের হত্যা করলো কেন। এরা জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হলে মৃত্যু কামনা করে না কেন? বরং দুনিয়ার জীবনকে এরাই বেশি ভালোবাসে।

    সুলাইমান (আঃ)-এর বিরুদ্ধে তারা জাদুবিদ্যা চর্চার অভিযোগ করতো (জাদুবিদ্যা কুফরি)। আল্লাহ তাদের এ ধারণা খণ্ডন করে জাদুটোনার আসল ইতিহাস বলেন। ব্যাবিলনে হারুত-মারুত দুই ফেরেশতাকে দিয়ে আল্লাহ জাদুর শিক্ষা দুনিয়াতে পাঠান পরীক্ষাস্বরূপ। ফেরেশতাদ্বয় খোলাখুলি বলে দিতেন যে জাদু শেখা কুফর, তারপরও ক্ষমতার লোভে পড়ে মানুষ তা শিখতো এবং নানা অনাচার ঘটাতো

    মুনাফিকরা দ্ব্যর্থবোধক কথা বলে রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গালি দিতো। আল্লাহ ঈমানদারদের এসব দ্ব্যর্থবোধক কথা বাদ দিয়ে স্পষ্ট বাচনভঙ্গি শেখান

    কোনো আয়াত বা আয়াতের হুকুম রহিত করে নতুন হুকুম বা আয়াত কেন আনা হয়, তার হেকমত বর্ণনা করা হয়েছে

    ইহুদী-খ্রিষ্টানরা আল্লাহর সন্তান আছে বলে যে আকিদা পোষণ করে তা খণ্ডন করা হয়েছে। ঈমানদাররা এদের মিল্লাত অনুসরণ না করা পর্যন্ত তারা যে ঈমানদারদের প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, এ ব্যাপারে সাবধান করা হয়। বনী ইসরাইলের মাঝে যারা শেষ নবীর উপর ঈমান এনেছে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে

    মুসলিম, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের সকলের সম্মানিত ব্যক্তি ইবরাহীম (আঃ) এর কথা স্মরণ করানো হয়েছে। তাঁর বংশধরদেরকে আল্লাহ মানবজাতির নেতা বানানোর ওয়াদা করেন, কিন্তু জালিমরা এ ওয়াদার বাইরে। ইবরাহীম ও ইসমাইল (আলাইহিমুস সালাম) এর কাবা নির্মাণের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। তিনি তাঁর বংশধরদের এই দ্বীন পালন করার ওসিয়ত করে যান এবং তিনি ছিলেন দ্বীন ইসলামের অনুসারী। তাঁর বংশে অনেক নবী আসে, সকলেই এই দ্বীনের অনুসারী ছিলেন এবং নিজ বংশধরদের এই দ্বীন পালন করার ওসিয়ত করে গেছেন। ইবরাহীম (আঃ) ইহুদী-খ্রিষ্টানদের মতো শিরকি আকিদা লালন করতেন না। মুসলিম হতে হলে সকল নবীর উপরই ঈমান আনতে হবে

    আল্লাহর আদেশে মুসলিমদের কিবলা বায়তুল আকসা থেকে পাল্টে মাসজিদুল হারামের দিকে নির্ধারিত হয়। কাফিররা এটা দেখে নিন্দা ছড়াতে থাকে যে মুসলিমরা একবার একদিকে ফিরে ইবাদাত করে। আল্লাহ এদের খণ্ডন করে বলেন যে পূর্ব-পশ্চিমে মুখ করার নাম ইবাদাত না, আল্লাহ যেটা করতে বলেন সেটাই ইবাদাত। আল্লাহর আদেশে কিবলা পরিবর্তন হয়েছে, এখন এদিকে ফিরেই সালাত আদায় করতে হবে। কিন্তু এই বিধানের পূর্বে আকসার দিকে ফিরে যেসব সালাত পড়া হয়েছে, তার সাওয়াবও নষ্ট হবে না

    সালাত ও সবরের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার ফজিলত, শহীদদের মর্যাদা, দুনিয়াবি বিপদ আপদ পাঠানোর পেছনের হেকমত, এবং এসব পরিস্থিতিতে ইন্নালিল্লাহ...পড়ার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে

    মুশরিকরা হাজ্জ করার সময় সাফা-মারওয়ার মাঝে দৌড়াদৌড়ি (সাঈ) করতো। সাহাবাগণ চিন্তিত ছিলেন যে এটা করা ঠিক হবে কিনা। আল্লাহ আয়াত নাযিল করে জানান এটা হাজ্জেরই অংশ এবং সাওয়াবের কাজ

    যারা আল্লাহর কিতাবের কথা গোপন করে, তাদের উপর লানত। তবে যারা এ পাপ থেকে তাওবাহ করেছে, তাদের কথা আলাদা। দুনিয়াতে কাফিররা তাদের নেতাদের অনুসরণ করার কারণে আখিরাতে যে আযাব পাবে, তার ফলে এই অনুসরণের ব্যাপারে তারা আফসোস করবে। বাপ-দাদার অন্ধ অনুসরণ ত্যাগ করে আল্লাহর আদেশ মানতে বলা হয়

    হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার করতে বলে হারাম খাদ্যের তালিকা বর্ণনা করা হয়। আসমান-যমীন সহ পুরো সৃষ্টিজগতে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শনের কথা বর্ণনা করা হয়

    কিসাস (খুনের বদলা), সম্পদের উইল, ফরজ রোজা, রোজার কাফফারা, রমজানের ফজিলত, রমজানের রাতে সহবাস করা, চাঁদ দেখে মাস গণনা, জিহাদ, হাজ্জ-উমরাহ সংক্রান্ত বিবিধ বিধান বর্ণনা করা হয়

    Comment


    • #3
      রামাদান - ০২



      ০২। সূরা বাকারাহ, আয়াত ২০২ থেকে ২৮৬

      হাজ্জের বিধিবিধান বর্ণনা শেষে মুনাফিক ও সাচ্চা ঈমানদারের পার্থক্য বর্ণনা করে ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ করার হুকুম করা হয়েছে। কাফিররা বলতো স্বয়ং আল্লাহ নিজেকে দেখা দিয়ে হুকুম করলে তারা মানবে। অথচ আল্লাহর নিদর্শনসমূহ দেখেও ঈমান না আনা এইসকল লোকেরা যে হঠকারি মানসিকতার কারণেই এই অজুহাত দেয়, তা উন্মোচন করা হয়েছে

      কাফিররা নিজেদের ধনসম্পদের প্রাচুর্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলতো আল্লাহ তাদের প্রতি খুশিই আছেন। আখিরাতে তাদের অবস্থা কেমন হবে আর ঈমানদারদের মর্যাদা কত বেশি হবে, তা স্মরণ করিয়ে আল্লাহ তাদের ভুল ধারণা খণ্ডন করেন

      আদম (আঃ) থেকে শুরু করে মানবজাতি একই উম্মত ছিলো, পরে তারা বিভিন্ন মনগড়া ধর্মমতে ভাগ হয়ে পড়ে। আল্লাহ যুগে যুগে কিতাব আকারে তাঁর হিদায়াত পাঠান। যারা নিজেরাই এই কিতাব বিকৃত করে ফেলেছে, তাদের দুর্ভোগের কথা বলা হয়। ঈমানদারদেরকে আল্লাহ এসব থেকে বাঁচিয়ে সঠিক পথের দিশা দেন

      পূর্ববর্তী নবী ও উম্মতগণ কত কষ্টের মাঝে দিয়ে অতিক্রম করেছেন, তা জানিয়ে সান্ত্বনা দেওয়া হয়। অতঃপর যুদ্ধ ফরজ করার হেকমত বর্ণিত হয়

      কুরাইশদের কাফেলা আক্রমণের ঘটনায় সাহাবিদের হাতে একজন মারা যায়, কিন্তু তা ঘটে পবিত্র মাসসমূহের শেষ দিনে, যেসব মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিলো। কাফিররা এটা নিয়ে তোলপাড় করে ফেলে যে মুসলিমরা নিজেরাই পবিত্র মাসসমূহের সম্মান করে না। আল্লাহ এ ব্যাপারে আয়াত নাযিল করে কাফিরদের আরো বড় বড় সব গুনাহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেখান যে এই একটা বিষয়ে তাদের এত মায়াকান্না শোভা পায় না। এর বিপরীরতে ঈমানাদার মুহাজির মুজাহিদদের আল্লাহর রহমতের সুসংবাদ দেওয়া হয়

      মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করার প্রাথমিক স্তরের আয়াত নাযিল হয়, যেখানে বলা হয় এসব জিনিসে সামান্য উপকার থাকলেও ক্ষতি অনেক বেশি

      ইয়াতীমদের লালনপালনের ব্যাপারে মধ্যমপন্থার সবক দেওয়া হয়। খুব কড়াকড়ি করতে গিয়ে নিজ পরিবারকে অভুক্ত রাখাও যাবে না, আবার ইয়াতীমদের একেবারে অবহেলাও করা যাবে না

      মুশরিকদের সাথে বিবাহসম্পর্ক স্থাপন নিষেধ করা হয়। ঈমানদার দাসদাসীও মুশরিক সম্ভ্রান্তদের চেয়ে উত্তম

      ঋতুস্রাব চলাকালীন সহবাস না করা, যেসব পথে সহবাস জায়েয সেসব রাস্তায় পছন্দমতো সহবাস করার হুকুম বর্ণিত হয়

      আরবদের মাঝে কথায় কথায় কসম করার প্রবণতা আছে। অনর্থক কসমের ব্যাপারে বিধান বর্ণিত হয়েছে। তারপর তালাক, ইদ্দত, মোহর, শিশুকে দুগ্ধদান, বিধবা বিবাহ, বিবাহের ইচ্ছাপোষণ করা, বিবাহের প্রস্তাব পাঠানো, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তাদের খোরপোষের ব্যাপারে ন্যায়সঙ্গত পন্থা কী হবে তা বর্ণনা করা হয়েছে। সালাতের গুরুত্বের কথা দিয়ে এ বিধবিধান বর্ণনা শুরু হয়েছিলো, শেষে এসে এর কথা আবার বলা হয়, বিশেষ করে আসরের সালাত। যুদ্ধাবস্থায়ও সালাতের গুরুত্ব ও বিধান বলা হয়

      আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে জীবন ও সম্পদ কোরবানি করার উৎসাহ দিয়ে কয়েকটি কাহিনী বর্ণনা করা হয়, যেখানে দেখানো হয় হায়াত-মাওত আল্লাহর হাতে। আর সবসময় উম্মাহর মাঝে এমন লোক ছিলো, যারা বিভিন্ন অজুহাতে জিহাদ থেকে দূরে থাকে

      প্রাচীনকালের কোনো এক সম্প্রদায় জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যায়। আল্লাহ তাদের মৃত্যু দিয়ে আবার জীবিত করে দেখিয়ে দেন মৃত্যু তাকদিরে থাকলে তা আসবেই। নবী উযাইর (আঃ)-কে আল্লাহ একবার মৃত্যু দিয়ে একশ বছর পর পুনর্জীবিত করেন। নবীদের ঈমানকে মজবুত করতে আল্লাহ এরকম চাক্ষুষ নিদর্শন দেখাতেন তাঁদের

      এছাড়া ইবরাহীম (আঃ)-কে চারটি পাখি জবাই করে কেটে তাদের গোশত মিশিয়ে চারটি পাহাড়ের চূড়ায় রেখে ডাক দিতে বলা হয়। এতে পাখিগুলো অবিকৃত অবস্থায় জীবিত হয়ে তাঁর দিকে ছুটে আসে
      এছাড়া নমরুদ একজন কয়েদীকে হত্যা করে, আরেকজনকে ছেড়ে দিয়ে বোকার মতো নিজেদে জীবন-মৃত্যুর মালিক দাবি করে। ইবরাহীম (আঃ) তাকে সূর্য পশ্চিম দিকে থেকে উদিত করে দেখাতে বললে তার অপারগতা প্রকাশ পেয়ে যায়

      এছাড়া বনী ইসরাইলের একটি ঘটনা বর্ণিত হয়। সামুয়েল (আঃ) এর নবুওয়ত কালে বনী ইসরাইল তাঁর কাছে গিয়ে নিজেদের জন্য একজন বাদশাহ নিযুক্ত করে দিতে বলে যাতে তাঁর অধীনে জিহাদ করতে পারে। সামুয়েল (আঃ) বলেন তারা যে চরম মুহূর্তে গিয়ে পিঠটান দেবে না, তারা গ্যারান্টি কী। বনী ইসরাইল আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে থাকে ভিটেমাটি থেকে উতখাত হয়েও কেন তারা জান লাগিয়ে জিহাদ করবে না! তারপর আল্লাহর নির্দেশে তালূত (আঃ) বাদশাহ নিযুক্ত হন। তিনি বনী ইসরাইলের যোদ্ধাদের কিছু কঠিন পরীক্ষার মাঝ দিয়ে নেন। বেশিরভাগই এতে ঝরে পড়ে। বাকিরা আল্লাহর উপর ভরসা রাখে যে, আল্লাহর সাহায্যে কত ছোট দলই তো কত বড় দলকে হারিয়েছে। তালূত (আঃ) এর বাহিনী জালূতের বিশাল সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করে। তালূত (আঃ) এর বাহিনীতে দাউদ (আঃ) ছিলেন, যিনি তখনও নবী হননি। তিনি মহাশক্তিধর জালূতকে হত্যা করে বনী ইসরাইলের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

      এসব কাহিনীর ফাঁকেই আল্লাহর মহাক্ষমতার বর্ণনা সম্বলিত আয়াতুল কুরসি রয়েছে। এবার যার ইচ্ছা হয় আল্লাহর উপর ভরসা করে তাঁর রাস্তায় কাজ করবে, কোনো জবরদস্তি নেই। আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক আর তাগুত কাফিরদের অভিভাবক

      আল্লাহর পথে দানসদকা করলে সাতশ গুণ বা তারও বেশি সাওয়াব হয়। দান করে খোঁটা দেওয়ার স্বভাবকে তিরস্কার করা হয়েছে। উত্তম কথা বলার আদেশ করা হয়েছে। বিভিন্ন উপমা দিয়ে দেখানো হয়েছে এসব খোঁটার কারণে কীভাবে দানের সাওয়াব নষ্ট হয়ে যায়। লোক দেখানোর নিয়ত না থাকলে প্রকাশ্যেও দান করা যায়, তবে গোপনে করা আরো উত্তম। গরীবদের পাশাপাশি সেসব মিসকীনকেও খুঁজে খুঁজে দান করতে বলা হয় যারা আত্মসম্মানের জন্য হাত পাততে পারে না

      সুদের লেনদেন নিষিদ্ধ করে ব্যবসা ও দানসদকাকে প্রশংসা করা হয়েছে। পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা মাফ। এখন থেকে আর কেউ সুদ লেনদেন করবে না। পাওনা টাকার সুদ মাফ করে শুধু আসল ফেরত নেবে। যারা অন্যথা করবে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নিক। অস্বচ্ছল দেনাদারদের অবকাশ দেওয়া বা ক্ষমা করার আদেশ করা হয়
      লেনদেনের ক্ষেত্রে সাক্ষীসহ লিখিত ডকুমেন্ট রাখার গুরুত্ব ও নিয়ম নিয়ে বলা হয়। লেখার সুযোগ না থাকলে জিনিস বন্ধক রাখার নিয়মাদি বর্ণনা করা হয়

      আল্লাহ কারো উপর সাধ্যাতীত বোঝা চাপান না। ঈমানদারদের দায়িত্ব হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশসমূহের প্রতি "শুনলাম ও মানলাম" মানসিকতা রাখা। আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ ও রাসূলগণের উপর ঈমান আনতে হবে। আল্লাহ যেন আমাদের উপর সাধ্যাতীত দায়িত্ব না দেন, আমাদের ভুলত্রুটি মাফ করেন ও কাফিরদের বিরুদ্ধে সাহায্য করেন, সেই দুআ শেখানোর মাধ্যমে শেষ হয় কুরআনের দীর্ঘতম এই সূরা


      ০৩। সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১ থেকে ৯১

      সূরা আলে ইমরানের শুরুতে বলা হয়েছে আল্লাহ ফুরকান নাযিল করেছেন, যার অর্থ সত্যমিথ্যার প্রভেদকারী। হতে পারে এটি কুরআন, অথবা আল্লাহর নাযিলকৃত অন্য কোনো জ্ঞান। কুরআনের কিছু আয়াত স্পষ্ট আদেশনির্দেশাদি সম্বলিত বা মুহকামাত। এগুলোই কিতাবের মূল অংশ যা আমাদের পালন করতে হবে। আর কিছু আয়াত আমাদের পূর্ণ জ্ঞানে আয়ত্ত করা সম্ভব না, এদের বলে মুতাশাবিহাত। যেমন আলিফ-লাম-মীম এর অর্থ, আল্লাহর আরশে আরোহণের স্বরূপ। যাদের মনে বক্রতা আছে তারা এগুলো নিয়ে অপ্রয়োজনীয় দার্শনিক আলাপে লিপ্ত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়। আমাদের দায়িত্ব কেবল এগুলোর প্রতি ঈমান আনা

      কুফর অবলম্বনকারীরা শক্তিশালী হলেও ফিরআউনের মতো পরাজিত হবে। বদরের প্রান্তরে কাফিররা এভাবেই শক্তিশালী হওয়ার পরও পরাজিত হয়। ঈমানদাররা দুনিয়ার মোহাবিষ্টকারী জিনিসের চেয়ে আখিরাতের স্থায়ী সম্পদকে বেশি ভালোবাসে। তারা ধৈর্যশীল, ইবাদতগুজার, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়কারী ও ফজরের ওয়াক্তের আগ মুহূর্তে সাহরির সময়ে ইস্তিগফারকারী

      বনী ইসরাইলীরা ভাবে তারা জাহান্নামে গেলেও অল্প সময়ের জন্য যাবে, কারণ তারা আল্লাহর প্রিয়পাত্র। আল্লাহ তাদের কিতাব বিকৃত করা ও নবীদেরকে হত্যা করার কথা স্মরণ করিয়ে আযাবের 'সুসংবাদ' দেন। মুসলিমরা রোম ও পারস্য বিজয় করবে এমন কথা শুনে তারা হাসতো। অথচ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন, যাকে ইচ্ছা লাঞ্চিত করেন

      মুমিনগণ যেন মুমিনদের নিজেদের ছেড়ে কাফিরদেরকে বন্ধু না বানায়। অবশ্য দুর্বল অবস্থায় আত্মরক্ষার প্রয়োজন হলে ভিন্ন কথা

      আল্লাহকে ভালোবাসলে রাসূলের অনুসরণ করতে হবে

      ইমরানের স্ত্রী তাঁর গর্ভের সন্তানকে আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফ করার নিয়ত করেন। কিন্তু কন্যাসন্তান হওয়ায় একটু হতাশ হন। এই কন্যা ছিলেন মারইয়াম (আঃ)। তাঁর দ্বারা দ্বীনের যে খেদমত হয়, তা কোনো ছেলের দ্বারা হওয়া সম্ভব ছিলো না। তিনি বায়তুল আকসার খাদিমা থাকাকালে আসমান থেকে তাঁর কাছে রিযিক আসতো। কুমারী অবস্থায় তাঁর গর্ভে ঈসা (আঃ) আসেন, যিনি আল্লাহর ইচ্ছায় শিশুবয়সে কথা বলার মাধ্যমে তাঁর মা-কে ব্যভিচারের অপবাদ থেকে রক্ষা করেন

      ইমরানের মৃত্যুর পর লটারি করে মারইয়ামের অভিভাবক ঠিক করা হয় যাকারিয়া (আঃ)-কে। তিনি মারইয়াম (আঃ) এর কাছে আসমানী রিযিক আসতে দেখে বৃদ্ধ বয়সেও সন্তানলাভের জন্য আশান্বিত হন। আল্লাহর কাছে দুআ করলে তাঁকে ইয়াহইয়া (আঃ) নামক সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়। নবুওয়াতি ক্যারিয়ারে ইয়াহইয়া (আঃ) ছিলেন ঈসা (আঃ) এর সহায়তাকারী

      ঈসা (আঃ) আল্লাহর হুকুমে মাটির পাখিতে প্রাণ ফুঁকে দেওয়া, মৃতকে জীবিত করা, জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য করার মুজিযা দেখাতেন। তিনি তাওরাতকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেন। তবে মূসার (আঃ) শরিয়তের কিছু হারাম বস্তু ঈসার (আঃ) শরিয়তে হালাল হয়। হাওয়ারীগণ (ঈসা আঃ এর সাহাবা) আল্লাহর রাস্তায় সাহায্যকারী হওয়ার ওয়াদা করেন। কাফিররা চক্রান্ত করলে আল্লাহ তাঁকে তুলে নেন। ঈসা (আঃ) এর উপর ঈমান আনয়নকারীদেরকে কুফরিকারীদের উপর প্রবল করার প্রতিশ্রুতি দেন।

      ইতিহাসেও দেখা যায় বেশিরভাগ সময়ে মুসলিম ও খ্রিষ্টানরা অন্যান্য জাতির উপর প্রবল ছিলো। ঈসা (আঃ) আল্লাহর অলৌকিক সৃষ্টি, যেমন আদম (আঃ) ছিলেন পিতামাতাবিহীন সৃষ্টি। আল্লাহর কাছ থেকে এ সত্য আসার পরও যারা বিতণ্ডা করে, তাদের সাথে প্রয়োজনে মুবাহালা করতে বলা হয়। মুবাহালা হলো বিতণ্ডায় কোনো পক্ষ সুস্পষ্ট প্রমাণ দেখার পরও হঠকারিতা করলে উভয়পক্ষ সপরিবারে উপস্থিত হয়ে বাতিল পক্ষের উপর আল্লাহর আযাব কামনা করা

      ইবরাহীম (আঃ)-কে ইয়াহুদীরা ইয়াহুদী মনে করে, খ্রিষ্টানরা খ্রিষ্টান মনে করে। অথচ এ দুটো নাম এসেছে তাওরাত ও ইঞ্জিল নাযিলের পর, আর ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন এর আগের। ইবরাহীমের সবচেয়ে নৈকট্যের দাবিদার মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর ঈমান আনা মুসলিমরা। আহলে কিতাবরা তা জেনেও গোপন করছে

      আহলে কিতাবদের কেউ কেউ প্ল্যান করে যে একদিন তারা ঈমান আনার ভান করে পরে অস্বীকার করে বলবে 'আমরা মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছ থেকে দেখেছি। এই লোক কিতাবে বর্ণিত সেই নবী নয়।' এতে লোকজনকে বিভ্রান্ত করা সহজ হবে। আল্লাহ তাদের পরিকল্পনা ফাঁস করে দেন। তাদের অনেকে ভালো আমানতদার, আবার অনেকে খিয়ানতকারী। কারণ তারা ভাবে আহলে কিতাবদের বাইরে কারো আমানতের খিয়ানত করা পাপ নয়। তাদের অনেকে কিতাব তিলাওয়াতের সময় জিহ্বা বক্র করে এর কথা পরিবর্তন করে ফেলতো। এভাবেই ইয়াহুদীরা উযাইর (আঃ)-কে এবং খ্রিষ্টানরা ঈসা (আঃ) কে আল্লাহর পুত্র বানিয়ে ছাড়ে। অথচ জ্ঞানবান মাত্রই বুঝতে পারে তাওহীদের দাওয়াত প্রদান করা এই নবীগণ নিজেদেরকে আল্লাহর স্থানে বসাতে পারেন না

      Comment


      • #4
        রামাদান - ০৩



        ০৩। সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৯২-২০০

        আল্লাহর রাস্তায় নিজের প্রিয়বস্তু খরচ করতে বলা হয়। তারপর আহলে কিতাবদের কয়েকটি আপত্তির জবাব দেওয়া হয়। পূর্বের নবীদের শরিয়তের কিছু হারাম জিনিস কেন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শরিয়তে হালাল করা হলো, তার হেকমত বর্ণিত হয়। এছাড়া আহলে কিতাবরা বলতো মুসলিমরা কেন পূর্ববর্তী নবীদের কিবলা মাসজিদুল আকসার দিকে ফিরে নামাজ পড়ে না। জবাবে বলা হয় ইবরাহীম (আঃ) এর হাতে তৈরি মাসজিদুল হারাম তো আকসার আগে থেকেই ছিলো আর প্রথম থেকেই এটা পবিত্র স্থান। ইবরাহীম (আঃ) কে সম্মান করা আহলে কিতাবরা ঠিকই এসব বিষয় জানে, জেনেশুনে শুধু শুধুই জিদের বশে এসব আপত্তি তোলে

        মদীনার স্থানীয় দুই গোত্র আওস-খাযরাজ ছিলো পরস্পরের জানের দুশমন। ইসলাম গ্রহণের পর আল্লাহ তাদের মাঝে এমন সম্প্রীতি তৈরি করে দেন যে তারা ভালো কাজে প্রতিযোগিতা শুরু করে। ইহুদীরা তা দেখে অন্তর্জ্বালায় ভুগতো। একবার তাদের একজন জাহিলি যুগের কথাগুলো বর্ণনা করে আগের সেই হিংসার আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আল্লাহ আয়াত নাযিল করে আওস-খাযরাজকে দ্বীনি ভ্রার্তৃত্ব অটুট রাখার জন্য মর্মস্পর্শী নসিহত করেন। ইহুদীদের সম্পর্কে বলা হয় জাতিগতভাবেই তারা লাঞ্ছনার সিল মারা জাতি। বাইরের শক্তির সাহায্য ছাড়া তারা কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। তবে আহলে কিতাবদের সকলে একরকম নয়। যারা তাদের মাঝ থেকে ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের প্রশংসা করা হয়

        কাফিরদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়। তারা অন্তরে কী পরিমাণ বিদ্বেষ পোষণ করে, তা উন্মোচন করা হয়

        তারপর উহুদ যুদ্ধের বিভিন্ন দিক নিয়ে সুদীর্ঘ নসিহত করা হয়। উহুদের সংক্ষিপ্ত ঘটনা হলো মুশরিকদের আক্রমণ প্রতিহত করতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক হাজার সৈন্যের ছোট দল নিয়ে অগ্রসর হন। মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ৩০০ জনকে নিয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে আসে। যুদ্ধের ময়দানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক জায়গায় ৫০ জন তীরন্দাজ নিযুক্ত করে সেখানেই স্থির থাকার কঠোর নির্দেশ দেন। প্রাথমিক পর্যায়ে মুসলিমরা আপাত জয়লাভ করে। কাফিরদের পালাতে দেখে তীরন্দাজদের বেশিরভাগই গনীমত সংগ্রহ করতে চলে আসেন। কাফিররা উল্টো দিক দিয়ে ঘুরে আবার আক্রমন করলে মুসলিমরা বিপদে পড়ে যান। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তারপরও আল্লাহর ইচ্ছায় মুসলিমরা আবার গুছিয়ে নিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ করে। কাফিররা কেন যেন যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে ভেবে ফিরে চলে যেতে থাকে। আল্লাহরই ইচ্ছা! তারপর আফসোস করে মাঝপথে ভাবে মুসলিমদের একেবারে গুঁড়িয়ে দিয়ে আসা যেতো। এই ভেবে আবার তারা আক্রমণে উদ্যত হয়। ওদিকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পুনর্নির্দেশে ক্লান্ত সাহাবাগণ শত্রুদের পশ্চাদ্ধাবনে বীরবিক্রমে এগিয়ে আসেন। খবর পেয়ে মুশরিকরা অবশেষে সোজা বাড়ির পথ ধরে। বাহ্যিকভাবে মুসলিমরা উহুদে পরাজিত হয়। কিন্তু অনেক মুফাসসির একে বিজয় বলেছেন, কারণ উহুদ ছিলো শিক্ষার এক খনি

        মুনাফিকদের মতো সংখ্যাধিক্যকে ভয় না পেয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। বদর যুদ্ধে কীভাবে আল্লাহ সাহায্য করেছেন তা স্মরণ করানো হয়

        মুশরিকরা যুদ্ধে শক্তি বাড়াতে সুদে ঋণ নিয়েছিলো। মুসলিমদের আল্লাহ এসব হারাম পথে পা বাড়াতে নিষেধ করেন। সৎকাজে প্রতিযোগিতা করা, সচ্ছল-অসচ্ছল উভয় অবস্থায় দানসদকা, রাগ গিলে ফেলা, ক্ষমা করা, গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তাওবাহ করার অভ্যাস যাদের আছে, তাদের জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়

        মুমিনরাই সবশেষে বিজয়ী হবে। ইতিহাসে সীমালঙ্ঘনকারী বিভিন্ন জাতির কী অবস্থা হয়েছে, তা জমিনে ঘোরাফেরা করে দেখতে বলা হয়। আর যুদ্ধে আল্লাহ জয়ও দিবেন, পরাজয়ও দিবেন। এটাই আল্লাহর পরীক্ষা, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। শহীদের মর্যাদা এমনি এমনি পাওয়া যায় না। কষ্ট করতে হয়

        মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একজন রাসূল মাত্র, তাঁর আগেও অনেক নবী-রাসূল গত হয়েছেন। তিনি মারা গেলে কি আমরা ইবাদাত করা ছেড়ে দেবো? না, বরং মৃত্যু পর্যন্ত দ্বীনের উপর অটল থাকতে হবে। আগের যুগেও আল্লাহওয়ালা লোকেরা নবীদের সাথে মিলে দৃঢ়পদে যুদ্ধ করেছেন। আল্লাহ তাদের উভয় জাহানে কামিয়াবি দিয়েছেন

        গনীমতের মাল পড়ে থাকতে দেখে দৌড়ে যাবার কিছু নেই। শেষপর্যন্ত তা তো শরিয়ত অনুযায়ী বণ্টিত হবে। কেউ কমবেশি করলে গুনাহগার হবে। যাইহোক, এ যুদ্ধে মুসলিমদের এসব ভুলত্রুটি আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর কোমল স্বভাবের কারণে কিছু বলেননি

        মুনাফিকরা ভাবে যে তারা জিহাদে না গিয়ে বেঁচে গেছে। শহীদদের সম্পর্কে তারা বলে 'এরা আমাদের সাথে বসে থাকলে আজকে মারা যেতো না।' আল্লাহ বলেন, মৃত্যু যদি এদের তাকদিরে থাকতোই, তারা ঘর থেকে বের হয়ে নিজ গরজে মৃত্যুর জায়গায় চলে যেতো। আর শহীদদেরকে মৃত ভাবা যাবে না। তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতি রিযিক পান। আর সাথী ভাইয়েরাও শহীদ হয়ে তাঁদের সাথে যোগ দিবে, এই আশায় উন্মুখ হয়ে আছেন। জিহাদে গেলেই বরং আল্লাহ সম্মান সহকারে বিজয় দেন। সেখান থেকে জীবিত না ফিরলেও আল্লাহর ক্ষমা তো পাওয়া হয়েই যায়। মুনাফিকরা পারলে নিজেরা চির অমর হয়ে দেখাক!
        মুমিনদেরকে যদি বলা হয় তোমাদের বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনী জমা হয়েছে, এতে তাদের ঈমান আরো বেড়ে যায়

        আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতে কৃপণতা করলে আখিরাতে সাজা ভোগ করতে হবে। আহলে কিতাবরা দান সদকার কথা শুনে ঠাট্টা করে বলতো 'আল্লাহ গরীব, আমরা ধনী।' তাদের এই গুনাহের কথার ব্যাপারে আখিরাতের শাস্তির কথা বলা হয়। সম্পদ কুক্ষিগত করে স্বচ্ছন্দে থাকা লোকদের দেখে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। আখিরাতে তাদের পরিণতি মন্দ

        পূর্বের যুগে কুরবানির গোশত খাওয়া হালাল ছিলো না। কুরবানি কবুল হলে আসমান থেকে আগুন এসে তা জ্বালিয়ে দিতো। আহলে কিতাবরা মুসলিমদেরকে এরকম একটা নিদর্শন দেখানোর চ্যালেঞ্জ করে। আল্লাহ তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে আগেও তাদের সামনে এমন সুস্পষ্ট নিদর্শন ও কিতাব নিয়ে অনেক নবীই এসেছিলেন। তারা তো ঈমান আনেইনি, বরং তাঁদের হত্যা করেছে ও কিতাব বিকৃত করেছে। তবে তাদের মাঝে যারা ঈমান এনেছে ও আল্লাহর কিতাবকে দুনিয়াবি স্বার্থে স্বল্পমূল্যে বেচে দেয়নি, তাদের প্রশংসা করা হয়। আহলে কিতাব ও মুশরিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ভবিষ্যতে আরো অনেক তীর্যক কথাবার্তার সম্মুখীন হতে হবে এই মর্মে মুসলিমদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হয়

        আল্লাহ এই সৃষ্টিজগত অনর্থক সৃষ্টি করেননি। এই সৃষ্টিজগত নিয়ে চিন্তাফিকিরকারী লোকেরা আল্লাহর অস্তিত্ব অনুধাবন করে তাঁর কাছে সর্বক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তাদের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের দুআ কবুল করার প্রতিশ্রুতি দেন


        ০৪। সূরা নিসা, আয়াত ১-৮৬

        সূরা নিসার শুরুতে আল্লাহকে ভয় করা, আত্মীয়ের হক আদায় করা, ইয়াতীমদের লালনপালন, বিবাহ, ইয়াতীমদের বিবাহ দেওয়া বা করা, দাসদাসীদের বিবাহ দেওয়া বা করা, সম্পদের উত্তরাধিকারে নারীপুরুষের অংশ ইত্যাদি সম্পর্কিত বিশদ আলোচনা করা হয়

        ব্যভিচারের শাস্তি বিষয়ক কিছু প্রাথমিক বিধান বর্ণিত হয়। প্রকৃত তাওবাহকারীদের আল্লাহ ক্ষমা করেন। তবে যে গুনাহ করতেই থাকে আর মৃত্যু নিকটে আসলে তাওবাহ করে, তাদের কোনো ক্ষমা নেই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার ন্যায়ানুগ সম্পর্ক, তালাক দিলে মোহর ফেরত না নেয়া সংক্রান্ত বিধান বর্ণিত হয়। কার কার সাথে বিবাহ সম্পর্ক করা হারাম, তার তালিকা বর্ণিত হয়

        যুদ্ধবন্দিনী কাফির নারীদের সাথে সহবাসের বিধান বর্ণিত হয়। মুসলিম স্বাধীন নারীকে বিবাহের সামর্থ্য না থাকলে দাসীদের বিবাহ করতে বলা হয়। বিবাহকে নিছক আনন্দ সম্ভোগের পথ না বানিয়ে চরিত্রের হেফাজত এবং আল্লাহ যে মানুষকে বংশবিস্তার ও খিলাফাতের দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পূর্ণ করার মাধ্যম বানাতে উৎসাহ দেওয়া হয়

        জুলুম করে অন্যের সম্পদ ভোগ করতে নিষেধ করা হয়। কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকলে ছোটখাটো গুনাহগুলো মাফ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়

        কিছু নারী সাহাবি ইচ্ছা পোষণ করতেন যে পুরুষ হলে তাঁরাও জিহাদের সাওয়াব পেতেন। আল্লাহ যাকে যে বিষয়ের এখতিয়ার দেননি, সে বিষয়ে এরকম কথাবার্তা বলতে নিষেধ করা হয়। প্রত্যেকের দায়িত্ব নিজ নিজ জায়গায় স্বতন্ত্র। নারীদের উপর পুরুষদের অভিভাবকত্বের স্বরূপ ও পরিসর বর্ণিত হয়। স্বামী-স্ত্রীর কলহ মীমাংসার নিয়ম বর্ণিত হয়

        শির্ক না করা, পিতামাতা, আত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট, দূর, অস্থায়ী প্রতিবেশী, পথচারী ও দাসদাসীদের প্রতি সদাচরণ করা ও অহংকার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়

        কৃপণতার ভয়াবহতা বর্ণিত হয়

        মদপান করে সালাতের নিকটবর্তী না হতে বলা হয়, যা মদ হারাম করা সংক্রান্ত প্রাথমিক পর্যায়ের একটি আয়াত। তায়াম্মুমের বিধান বর্ণিত হয়

        আহলে কিতাবদের কিতাব বিকৃতি, দ্ব্যর্থবোধক কথা বলা ও শির্ক করার স্বভাবকে তিরস্কার করা হয়

        আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও উলিল আমর (মুসলিমদের দায়িত্বশীল নেতা) এর আনুগত্য করতে বলা হয়। আমানতদার হওয়া এবং কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করার হুকুম করা হয়। ঈমান আনার দাবি করার পরও তাগুতের কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়াকে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিচার ফায়সালার ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথাই মানতে হবে। পূর্বেকার উম্মতদের অনেক কঠিন বিধান মানতে হতো (যেমন তাওবাহর অংশ হিসেবে পরস্পরকে হত্যা করা), অথচ আমাদের জন্য তা সহজ করা হয়েছে

        অত্যাচারিত দুর্বল নারী, পুরুষ ও শিশুদের পক্ষ হয়ে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। মুনাফিকরা এ ইবাদত থেকে দূরে থাকে। মুমিনদের বিপদে পড়তে দেখলে খুশি হয় আর বিজয় পেতে দেখলে আফসোস করে

        মাক্কী যুগে অত্যাচারিত হয়ে মুসলিমরা আশা করতো যাতে যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু তখন এ বিধান দিলে তা কেবল ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার প্রতিফলন হতো। আজ মাদানী যুগে জীবনে নিরাপত্তা আসার পর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের বিধান নাযিল হলে অনেকে আতংকিত হয়ে ভাবে 'হায়! আর কিছু দিন পরে কেন নাযিল হলো না!'

        মৃত্যু তো একদিন আসবেই। তাই মৃত্যুভয়ে আল্লাহর বিধান পালনে পিছপা না হতে বলা হয়

        যাচাই না করে গুজব ছড়ানোকে তিরস্কার করা হয়

        সালামের জবাব দেওয়ার উত্তম নিয়ম আলোচিত হয়

        Comment


        • #5
          রামাদান - ০৪



          ০৪। সূরা নিসা, আয়াত ৮৭ থেকে ১৭৬

          মুনাফিকদের কেউ কেউ মদীনায় এসে ইসলাম গ্রহণের ভান করে আবার মক্কায় ফিরে গিয়ে কাফিরদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে সহায়তা করে। কেউ কেউ মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কোনো দুরভিসন্ধি পোষণ করে না। কেউ ভাব দেখায় যে যুদ্ধ করতে চায় না, কিন্তু কাফিরদের কাছ থেকে প্রস্তাব পেলে ঠিকই তাদের সাহায্য করে। এমন প্রত্যেক শ্রেণীর ব্যাপারে করণীয় বিধান বর্ণনা করা হয়
          ভুলবশত কোনো মুসলিমকে হত্যা করার কাফফারার বিধান বলা হয়। ইচ্ছাকৃত অন্যায়ভাবে মুসলিম হত্যার শাস্তির কথা বলা হয়

          জিহাদের ময়দানে কোনো কাফির বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিলে তাকে মুসলিম হিসেবে গণ্য করতে বলা হয়, তারা জান বাঁচাতে মিথ্যা বলছে এমন ধারণা না করতে বলা হয়
          জিহাদ ফরজে কিফায়া থাকাকালীন কেউ কেউ বিনা ওজরে জিহাদে না গেলে দোষ নেই। তবুও ঘরে বসা লোকদের তুলনায় মুজাহিদদের মর্যাদা বেশি। হিজরত ফরজ হয়ে যাওয়ার পরও তা না করার ভয়াবহতা বর্ণিত হয়, তবে যাদের সামর্থ্য নেই তাদের কথা আলাদা। জিহাদের মাঠে সালাত আদায় করার নিয়ম বর্ণিত হয়

          বিশর নামের এক মুনাফিক কিছু জিনিস চুরি করে এক নিরপরাধ ইহুদীকে ফাঁসায়। যদিও ওই ইহুদী বলে যে এসব জিনিস বিশর তাকে দিয়েছে, কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি। বিশরের গোত্রও তার পক্ষে ওকালতি করে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিচার করার সময় আপাত প্রমাণের ভিত্তিতে ইহুদীকে দোষী সাব্যস্ত করেন। আল্লাহ আয়াত নাযিল করে বিশরের মুখোশ উন্মোচন করেন।
          নিরপরাধ ব্যক্তিকে ফাঁসানো, অপরাধীর পক্ষে ওকালতি করা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা ও ভয়াবহতা বর্ণিত হয়। এসব কাজ করে দুনিয়াতে পার পেয়ে গেলেও আখিরাতে শাস্তি হবে

          সুন্নাহ এবং মুসলিমদের ইজমাও যে শরিয়তের দলীল, এ সংক্রান্ত কিছু ইঙ্গিত দেওয়া হয়

          শির্কের গুনাহ তাওবাহ ছাড়া মাফ হয় না। মুশরিকরা নারীদেরকে পুরুষদের চেয়ে নিকৃষ্ট ভাবে, অথচ ঠিকই নারীদেবীর উপাসনা করে। প্রকৃতপক্ষে তারা শয়তানের উপাসনা করে। শয়তান ওয়াদা করেছিলো যে সে তার অনুসারীদের অনেক আশা ভরসা দিবে এবং আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি সাধনে প্ররোচিত করবে

          নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সৎকর্মশীল ঈমানদারদের জন্য জান্নাতের লোভনীয় বর্ণনা দেওয়া হয়

          ইয়াতীম নারীর দেখভাল, স্ত্রীদের মাঝে সমতাবিধানের স্বরূপ, স্বামী-স্ত্রীর মীমাংসা, বিরোধ ও বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিধি-বিধান বর্ণিত হয়

          মুমিনদের বিরুদ্ধে মুনাফিকদের বিদ্বেষের কথা উন্মোচন করে তাদের সাথে ওঠাবসা-চলাফেরার বিধান বর্ণনা করা হয়। মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে, তবে তাওবাহকারীদের কথা আলাদা
          অন্যের দোষ চর্চা নিষেধ করা হয়, তবে জুলুমের বিচার করার জন্য এমন করা হলে ভিন্ন কথা। ক্ষমা করার মানসিকতাকে উৎসাহিত করা হয়

          কিছু নবীর প্রতি ঈমান আনা আর অন্য কোনো নবীকে অস্বীকার করা পুরোটাই কুফরি

          আহলে কিতাবরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে দাবি করে আসমান থেকে একটা কিতাব নামিয়ে এনে প্রমাণ দেখাতে। আল্লাহ এর জবাবে স্মরণ করিয়ে দেন যে, যেই মূসা (আঃ) এর উপর তারা ঈমান আনার দাবি করে, তাঁর কাছে এরা এর চেয়ে গুরুতর দাবি করেছিলো। বলেছিলো আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখাতে। এর শাস্তিস্বরূপ তাদের উপর বজ্র আঘাত হানে, তূর পাহাড়কে তাদের মাথার উপর তুলে ধরা হয়।

          এছাড়া বাছুরপূজা, শনিবারের আইন লঙ্ঘন, অহংকার করা, নবীদের হত্যা করা, মারইয়াম (আঃ)-কে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া ইত্যাদি কুকাজে তারা লিপ্ত ছিলো। ঈসা (আঃ) এর শূলবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে তারা নিজেরাই নিশ্চিত না। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাঁকে জীবিত আসমানে তুলে নেন। কিয়ামাতের আগে ঈসা (আঃ) এর পুনরাগমন দেখে সব আহলে কিতাব এই বাস্তবতার উপর ঈমান আনতে বাধ্য হবে। আর কিয়ামতের দিন ঈসা (আঃ) ঐসকল কুফরিকারীদের বিপক্ষে সাক্ষী হবেন

          বনী ইসরাইলীদের এসব হঠকারিতার মূল্যস্বরূপ তাদের শরিয়তে অনেক বস্তু হারাম ছিলো। তাদের মধ্যকার কাফির পাপাচারীদের শাস্তি ও মুমিন নেককারদের পুরষ্কারের কথা বলা হয়

          মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সত্য নবী হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ সাক্ষ্য দেন, যেমন সত্য ছিলেন পূর্বেকার সকল নবী যারা সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে আগমন করেছেন। খ্রিষ্টানদের ট্রিনিটির বিশ্বাসকে খণ্ডন করে তাওহীদের দাওয়াত দেওয়া হয়। ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র ভাবার একটা কারণ হলো আল্লাহর বান্দা হওয়াটাকে তারা ঈসা (আঃ) এর মর্যাদার পরিপন্থী ভাবতো। অথচ ঈসা (আঃ) নিজেকে আল্লাহর বান্দা ভাবতে মোটেও লজ্জা পেতেন না

          পিতা, দাদা, পুত্র ও পৌত্র না থাকা অবস্থায় মারা যাওয়া ব্যক্তির সম্পদ বণ্টন সংক্রান্ত বিধান বর্ণিত হয়েছে


          ০৫। সূরা মায়িদাহ, আয়াত ১ থেকে ৮২

          সূরা মায়িদাহ এর শুরুতে হালাল-হারাম খাদ্য, শিকার, হাজ্জের ইহরাম বাঁধা অবস্থায় শিকার, আহলে কিতাব নারীদের বিবাহ করা, ওজু, গোসল, তায়াম্মুমের নিয়ম বর্ণিত হয়। শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার করতে বলা হয়

          ইহুদী ও নাসারা উভয় সম্প্রদায় তাদের কিতাবের অনেক বিষয় গোপন করতো যা আল্লাহ রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুখ দিয়ে প্রকাশ করিয়ে দেন। এই নিদর্শনের কথা বলে তাদেরকে এই নবীর প্রতি ঈমান আনতে বলা হয়।

          এসকল লোক নিজেদের আল্লাহর সন্তান দাবি করে, কিন্তু বিভিন্ন কারণে যে তারা আল্লাহর আযাবের শিকার হচ্ছে, তাও স্বীকার করে। আল্লাহ এই দ্বিমুখী বিশ্বাসের ত্রুটি তুলে ধরেন। ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর সন্তান বলে মনে করার জঘন্য বিশ্বাসকে খণ্ডন করা হয়

          মূসা (আঃ) বনী ইসারইলকে নিয়ে প্রতিশ্রুত ভূমির (শাম ও ফিলিস্তিন) প্রান্তে এসে তাদের যুদ্ধ প্রস্তুতি নিতে বলেন। এতদিন এই ভূমির অপেক্ষায় থাকা বনী ইসরাইল এখন বলে বসে যে ওখানে অনেক শক্তিশালী জাতি থাকে, ওরা বের হয় গেলে পরে আমরা ঢুকবো। মাত্র দুজন নেককার ব্যক্তি মূসা (আঃ) এর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে অগ্রসর হতে রাজি হন। বনী ইসরাইলীরা মূসা (আঃ)-কে ধৃষ্টতা সহকারে বলে আপনি আর আপনার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ করেন, আমরা এখানে বসলাম। এর শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ তাদের ৪০ বছরের জন্য এ ভূমি থেকে দূরে রাখেন। ফলে জাতিটি এদিকসেদিক দিকভ্রান্ত হয়ে ঘুরতে থাকে। জিহাদের হুকুম আসার পরও গা বাঁচানো মানসিকতার ফলে এই শাস্তি হয়

          মানবহত্যার ভয়াবহতা দেখানোর জন্য হাবিল ও কাবিলের ঘটনা বর্ণিত হয়। আত্মরক্ষা করা জায়েয হলেও হাবিল তাকওয়ার কারণে কাবিলকে কোনো বাধা দেননি। আল্লাহর হুকুমে একটি কাক এসে লাশ কবর দেওয়ার নিয়ম দেখিয়ে দেয়, কারণ এটি মানব ইতিহাসের প্রথম খুন। কাবিল আফসোস করে যে সে কাকটির মতোও বিচক্ষণ হতে পারলো না। আল্লাহ হুকুম জারি করেন যে একটি নিরপরাধ প্রাণ হত্যা করা যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যার শামিল। আর একটি নিরপরাধ প্রাণ বাঁচানো সমগ্র মানবজাতিকে বাঁচানোর শামিল। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিরুদ্ধাচরণ ও জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি (ডাকাতি এর অন্তর্ভুক্ত) করলে কী শাস্তি হবে, তা বিস্তারিত বলা হয়। কয়েক আয়াত পর চুরির শাস্তিও বর্ণিত হয়

          ইয়াহুদীরা তাওরাতের আইনগত শাস্তির বিধানগুলো পরিবর্তন করতো। গরীবদেরকে শাস্তি দিতো, ধনী কেউ অপরাধ করলে শাস্তি হালকা করে দিতো। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে বিচার চাইতে আসলে তাঁর শরিয়ত অনুযায়ী হালকা শাস্তি পাওয়া যাবে, এমন আশায় তাঁর কাছেও মামলা মোকদ্দমা নিয়ে আসতো। কিন্তু যেসব বিধান এই শরিয়তেও একইরকম, সেসব ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একইরকম শাস্তির বিধানই দিতেন। ইয়াহুদীরা আগেই ঠিক করে আসতো কোন কোন রায় দিলে তারা মানবে, আর কোন কোন রায় মানবে না।

          এ প্রসঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয় যে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, সে অনুযায়ী যারা বিচার ফায়সালা করে না তারা কাফির, জালিম, ফাসিক

          ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের বন্ধু বানাতে নিষেধ করা হয়। মুনাফিকরা তাদের শক্তিমত্তা দেখে তাদের সাথে যোগ দেয়। আল্লাহ ইসলামকে বিজয় দেওয়ার পর এরা বিপদে পড়ে যাবে

          মুমিনদের প্রতি কোমল হতে, কাফিরদের প্রতি কঠোর হতে, জিহাদ করতে এবং এ ব্যাপারে নিন্দুকদের পরোয়া না করতে হুকুম করা হয়

          দ্বীন নিয়ে আহলে কিতাবদের ঠাট্টা মশকরা করাকে তিরস্কার করা হয়। তাদের অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ তাদের সাময়িক কষ্টে ফেলেন। এতে তারা বাধ্য না হয়ে উল্টো বলে বসে 'আল্লাহ কৃপণ।' তাদের ওলামা মাশায়েখরাও তাদের এসব থেকে মানা করে না। অথচ আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করলে তাদের সবদিক থেকে রিযিক দেওয়া হতো

          রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি যা নাযিল হয়েছে, তা প্রচার করতে বলা হয়। ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহ মনে করা, ট্রিনিটিতে বিশ্বাস করা, মারইয়াম (আঃ)-কে অপবাদ দেওয়া ইত্যাদি কুফরি আকিদা খণ্ডন করা হয়। দ্বীনের ভেতর এসকল বাড়াবাড়িমূলক বিশ্বাস ও কাজকে তিরস্কার করা হয়

          বনী ইসরাইলের মধ্যকার কাফিরদেরকে দাউদ (আঃ) ও ঈসা (আঃ) এর মুখ দিয়ে অভিশাপ দেওয়ানো হয়েছে

          মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকার পরও ইয়াহুদীরা যে শত্রু মুশরিকদের সাথে গোপনে আঁতাত করে চলে, তা উন্মোচন করা হয়েছে। মুসলিমদের সাথ শত্রুতায় সবচেয়ে কঠোর হলো ইয়াহুদী ও মুশরিকরা। খ্রিষ্টানদের মাঝে জ্ঞানী, দুনিয়াবিমুখ ও নিরহংকারী লোক আছে। তাই অমুসলিম সম্প্রদায়সমূহের মাঝে তারাই মুসলিমদের প্রতি বন্ধুত্বে সবচেয়ে নিকটবর্তী

          Comment


          • #6
            রামাদান - ০৫



            ০৫। সূরা মায়িদাহ, আয়াত ৮৩ থেকে ১২০

            আবিসিনিয়ার খ্রিষ্টান বাদশা নাজ্জাশি এবং তাঁর কতিপয় প্রতিনিধি কুরআন শুনে বুঝতে পারেন এটি আল্লাহর কালাম। তাঁদের চোখের পানি বেরিয়ে আসে। এঁদের প্রশংসা করে আয়াত নাযিল হয়

            হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল বানাতে নিষেধ করা হয়। কসমের কাফফারা সংক্রান্ত বিধান বলা হয়। মদ, জুয়া, লটারি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে এগুলোর অপকারিতা বর্ণিত হয়

            ইহরাম অবস্থায় শিকার করা, সামুদ্রিক খাবার ও স্থলের খাবার খাওয়ার বিধান বর্ণিত হয়েছে। অপবিত্র বস্তুর আধিক্য দেখেই সেগুলোকে পবিত্র না ভাবতে আদেশ করা হয়

            আল্লাহর নাযিলকৃত সহজ বিধানগুলো নিয়ে খুঁটিনাটি প্রশ্ন করে জটিলতা বাড়াতে নিষেধ করা হয়। পূর্বের কিছু জাতি এরকম অতিরিক্ত প্রশ্ন করতো, ফলে সেগুলোর জবাবে ওয়াহী নাযিল হয়ে বিধানগুলো এত কঠিন হয়ে যেতো যে তারা নিজেরাই তা আর পালন করতে চাইতো না

            ওসিয়ত করা সংক্রান্ত কিছু বিধান বর্ণিত হয়

            হাওয়ারীগণ (ঈসা আঃ এর সাহাবা) ঈসা (আঃ)-কে বলেছিলেন আল্লাহর কাছে দুআ করে মুজিযাস্বরূপ আসমান থেকে একটি মায়িদাহ (খাবারের দস্তরখানা) নাযিল করতে। এরকম মুজিযার ফরমায়েশ করা সাধারণত কাফিরদের স্বভাব হলেও হাওয়ারীদের নিয়ত ছিলো ভিন্ন। তাঁরা এই আসমানী দস্তরখানা দেখে এবং তা থেকে খেয়ে ঈমানকে মজবুত করতে চেয়েছেন। আল্লাহ তা নাযিল করার প্রতিশ্রুতি দেন এবং সাবধান করে দেন এরপর আর কুফরি করার সুযোগ নেই। অতঃপর কিয়ামাতের দিন ঈসা (আঃ)-কে সেসব মুজিযার কথা স্মরণ করানো হবে, যা তিনি আল্লাহর নির্দেশে করতেন। তারপর জিজ্ঞেস করা হবে তিনি নিজেকে ও তাঁর মা-কে উপাস্য বানানোর কথা প্রচার করতেন কিনা। ঈসা (আঃ) তা অস্বীকার করবেন। ফলে তাঁকে ও মারইয়াম (আঃ)-কে উপাস্য মানা লোকেরা আযাবের উপযোগী হয়ে যাবে


            ০৬। সূরা আন'আম, আয়াত ১ থেকে ১৬৫

            সূরা আন'আমের শুরুতে সমগ্র সৃষ্টিজগতজুড়ে আল্লাহর ক্ষমতা ও জ্ঞানের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কাফিরদের ঈমান আনতে বললে তারা সবসময় অলৌকিক জিনিস দেখতে চাইতো। কিন্তু এসব দেখলেও ঈমান আনতো না, বলতো এগুলো স্রেফ জাদু (জাদু ও মুজিযার পার্থক্য হলো, জাদুতে কেবল চোখের বিভ্রম ঘটে কোনো জিনিসকে অলৌকিক মনে হয়, আর মুজিযার ফলে বাস্তবিকই কোনো অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটে)। মানুষ নবীর বদলে ফেরেশতা আসলো না কেন এ নিয়ে তারা আপত্তি তুলতো। অথচ ফেরেশতা আসলে তো এমন আকৃতি নিয়েই আসতো যা মানুষের দৃষ্টিসীমায় দেখা যায়। ফলে এটাকেও তারা অস্বীকার করার একটা না একটা অজুহাত খুঁজে নিতো। আর এরকম নিদর্শন আসে শেষ সুযোগ হিসেবে। তখন কুফরি করলে একেবারেই সর্বনাশ

            আহলে কিতাবরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে কিতাবে বর্ণিত সেই নবী হিসেবে ঠিকই চিনতে পারছে, যেভাবে তারা চেনে নিজ সন্তানদের। তারপরও তারা অস্বীকার করছে

            মুশরিকরা আল্লাহর কালাম শুনে এগুলোকে আদিকালের উপাখ্যান বলে ঠাট্টা করে। আখিরাতে তারা বিশ্বাস করে না। কিয়ামাতের দিন তারা দুনিয়ায় শির্ক করার কথা প্রথমে অস্বীকার করে বসবে। পরে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর পুনরায় পৃথিবীতে পাঠানোর আবেদন করবে যাতে এবার ভালো কাজ করে আসতে পারে। আল্লাহ জানিয়ে দেন যে আবার পৃথিবীতে পাঠালে সেই একই কাজই তারা করতো
            রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলা হয় কাফিরদের কুফরের কারণে অতিরিক্ত মনঃপীড়া না পেতে। পূর্বেকার অনেক জাতিই নবীদের অবাধ্যতা করে ধ্বংস হয়েছে। তাদেরকে সংকট ও প্রাচুর্য উভয় অবস্থা দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। পরে আযাব দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে

            মক্কার মুশরিকরা বলতো মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবী হলে তাঁর কাছে আল্লাহর ধনভাণ্ডার নই কেন, ফিরিশতা তাঁর সাথে ঘোরে না কেন। তাদের ধারণা খণ্ডন করে বলা হয় নবী হওয়ার অর্থ এই না যে এসব প্রাচুর্য সাথে নিয়ে ঘোরাফেরা করতে হবে। নবীর দায়িত্ব কেবল আল্লাহর বাণীসমূহ পৌঁছে দেওয়া

            মক্কার বড় বড় নেতারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আশেপাশে গরীব লোকদের দেখে হাসাহাসি করতো। বলতো, আল্লাহ অনুগ্রহ করার জন্য তাদের মতো হোমরাচোমরাদের ফেলে এদেরকেই খুঁজে পেলেন! অথচ যারা ঈমান আনে, তারা গরীব হলেও ওইসব সম্ভ্রান্ত অহংকারীদের চেয়ে ভালো

            যেই আযাবের ভয় দেখানো হয়, তা নিয়ে আসার জন্য কাফিররা চ্যালেঞ্জ করতো। তাদের জানিয়ে দেওয়া হয় যে তা কখন, কীভাবে আসবে তা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হাতে নয়, বরং আল্লাহরই এখতিয়ারে

            বিপদে পড়লে কাফির মুশরিকরাও যে অন্য সব দেবদেবীদের ভুলে গিয়ে চুপিসারে আল্লাহর কাছেই সাহায্য চায়, তা উন্মোচন করা হয়েছে বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে। তারপরও বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর তারা শির্ক করে

            প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানুষের নিজেদের মধ্যকার যুদ্ধগুলো যেকোনো সময় আযাব হিসেবে চলে আসার ভয় দেখানো হয়

            ধর্মকে খেলতামাশার বস্তু বানানো এসকল মুশরিক থেকে দূরে থাকতে বলা হয়। তবে দাওয়াহ দিতে হবে এই আশায় যে তারা সুপথ পাবে

            শয়তান কীভাবে এদেরকে নিজ 'হিদায়াত' (পথ) এর দিকে ডেকে উদ্ভ্রান্ত করে দেয়, তা উপমা আকারে দেখানো হয়েছে। আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়াতই আসল হিদায়াত

            কিয়ামাত সংঘটিত হওয়া কেবল আল্লাহর একটি হুকুমের ব্যাপার। তিনি বলবেন 'হও', আর তা হয়ে যাবে

            ইবরাহীম (আঃ) এর পিতা আযার ছিলো মূর্তিপূজক। বরং পুরো সম্প্রদায়ই এরকম ছিলো। ইবরাহীম (আঃ) এগুলোর অসারতা বুঝতে পারেন। নক্ষত্র, চাঁদ, সূর্য উপাস্য হতে পারে কিনা এ নিয়ে চিন্তাভাবনার পর তিনি এক আল্লাহর উপাসনায় মনস্থির করেন। তাঁর সম্প্রদায় তাঁর সাথে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়। তিনি জানিয়ে দেন যে তারাই যখন মিথ্যা উপাস্যের মোকাবেলায় আল্লাহকে ভয় করছে না, তখন তাঁর কী কারণ থাকতে পারে যে তিনি আল্লাহর মোকাবেলায় এসব মিথ্যা উপাস্যদের ভয় করবেন

            এরপর অন্যান্য কয়েকজন নবীর কথা বলা হয়। এঁরা সবাই বিশুদ্ধ তাওহীদের দিকে হিদায়াতপ্রাপ্ত ছিলেন। ইবরাহীমের বংশধর হিসেবে গর্ব করা আরব মুশরিকরা এখন চাইলে হিদায়াত গ্রহণ করুক, অন্যথায় ক্ষতিগ্রস্ত হোক। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তো তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করানোর মাধ্যমে কোনো দুনিয়াবি পারিশ্রমিক চাচ্ছেন না, অর্থাৎ তাঁর কোনো স্বার্থ এখানে নেই
            রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অস্বীকার করতে গিয়ে কিছু আহলে কিতাব বলে বসে যে আল্লাহ কোনো কিতাব নাযিল করেন না। তাদের গোমর ফাঁস করে বলা হয় যে মূসা (আঃ) এর প্রতি নাযিলকৃত কিতাবে তারা বিশ্বাস করে, সেই সাথে এর অনেক অংশ নিজেদের সুবিধামতো বিকৃত করে ও লুকিয়ে রাখে

            সৃ্ষ্টিজগতের বিভিন্ন জিনিসের উদাহরণ দিয়ে দেখানো হয় আল্লাহ কীভাবে প্রাণ সৃষ্টি করেন, মৃতকে পুনর্জীবিত করেন। চিন্তাশীলদের এগুলো নিয়ে চিন্তা করার জন্য বলা হয়

            মুশরিকদের কেউ কেউ জিনদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করতো, কেউ ফেরেশতাদের আল্লাহর কন্যা ভাবতো, খ্রিষ্টানরা ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র ভাবে। এসব ভুল ধারণা খণ্ডন করা হয়। আল্লাহ কোনোকিছুর জন্মদাতা নন, বরং স্রষ্টা। জন্মদানের মাধ্যমে বংশবিস্তারের প্রয়োজন তাদেরই থাকে যারা সত্ত্বাগতভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়

            আল্লাহ চাইলে সবাইকে জোরপূর্বক ঈমানদার বানিয়ে দিতেন। কিন্তু পরীক্ষার জন্য তাদের সকলকে স্বাধীন বোধবুদ্ধি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর ঈমান না আনলে অতিরিক্ত দুঃখ পেতে নিষেধ করা হয়। তাদের উপাস্যকে গালি দিতে নিষেধ করা হয়, নাহলে তারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিবে

            মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে কুরআনের মতো রচনাশৈলী রপ্ত করেছেন, এমন আজগুবি দাবি করতে কাফিররাও সাহস পেতো না। তাই তাদের কেউ বলতো যে অন্য কেউ তাঁকে এসব শিক্ষা দিয়েছে। অন্যত্র এ দাবি খণ্ডন করা হয়েছে

            কাফিররা জোরালো কসম করে বলে মুজিযা দেখলে তারা ঈমান আনবে। অথচ কুরআন শুনেই তারা ঈমান আনতে পারেনি, অন্য কোনো নিদর্শন দেখলেও এভাবেই মুখ ফিরিয়ে নিবে। পূর্বেকার নবীদের সাথেও কাফিররা এমন আচরণই করেছিলো, অথচ তারাও মনে মনে বুঝতো যে এগুলো আল্লাহর কালাম

            অধিকাংশ মানুষ যে মত-পথ অনুসরণ করে, তা অন্ধভাবে অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়

            মুসলিমরা জবাই করা ছাড়া অন্য মৃত পশু খেতো না। কাফিররা ঠাট্টা করতো যে, আল্লাহ যাকে হত্যা করলেন তা তোমরা খাও না, আর নিজ হাতে হত্যা করা জিনিস খাও, এটা আবার কেমন ধর্ম? আল্লাহ এ ধারণা খণ্ডন করে দেন যে হালাল-হারাম নির্ধারণের এখতিয়ার আল্লাহর, তিনি যা ইচ্ছা হালাল-হারাম করবেন। আল্লাহর নাম না নিয়ে জবাই করা পশু খেতে নিষেধ করা হয়

            কাফিররা দাবি করতো তাদের উপরও ওয়াহী নাযিল হলে পরে তারা ঈমান আনবে। তাদের এই মিথ্যা দাবিকে তিরস্কার করা হয়। জিন শয়তান ও মানুষ শয়তানেরা কীভাবে কিয়ামাতের দিন নিজের দোষ স্বীকার করতে বাধ্য হবে, তার চিত্র তুলে ধরা হয়। সত্যের ব্যাপারে অবহিত করা ছাড়া কাউকে শাস্তি দেওয়া আল্লাহর রীতি নয়। তাই উভয় জাতির মাঝেই নবী-রাসূলগণ যথাযথভাবে দাওয়াতি কাজ করেছেন। অস্বীকারকারী জিন ও মানুষেরা কিয়ামাতের দিন নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে

            মুশরিকরা কিছু মনগড়া হালাল-হারাম মেনে চলতো। কিছু পশুর পিঠে চড়া হারাম মানতো, কিছু পশুর বাচ্চা হলে সেটা পুরুষরা খাবে, না নারীরা খাবে তা ঠিক করতো, নিজেদের সন্তান হত্যা করাকে অভাব দূর করার ভালো উপায় ভাবতো। এসব রসম-রেওয়াজ খণ্ডন করে প্রকৃত হালাল-হারামের কিছু বিধান বর্ণনা করা হয়। পূর্বের উম্মাতদের অবাধ্যতার জন্য তাদের উপর কিছু অতিরিক্ত বস্তু হারাম করা হয়েছিলো

            সেসময়কার কাফিররাও এমন কথা বলতো যে, আল্লাহ না চাইলে তো আমরা শির্ক করতাম না, আল্লাহ চাইছেন বলেই আমরা শির্ক করি। এসকল কথা বলে তারা নিজেদের ভ্রান্তির উপর অটল থাকতো
            অতঃপর এমন কিছু কাজের কথা বলা হয় যা মনগড়া রসম-রেওয়াজ নয়, প্রকৃতই সাওয়াবের কাজ। শির্ক না করা, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার, দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা না করা, গোপন ও প্রকাশ্য অশ্লীলতার কাছেও না যাওয়া, অন্যায় হত্যা না করা ইয়াতীমের দেখভাল, মাপে কমবেশি করে লোক না ঠকানো, নিকটাত্মীয়ের বিরুদ্ধে গেলেও ন্যায়বিচার করা

            কুরআন নাযিল করে অজুহাতের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নাহলে মুশরিকরা বলতো ইহুদী-খ্রিষ্টানরা তাদের কিতাব আমাদের শিক্ষা দেয়নি তাই হিদায়াত পাইনি, অথবা আমাদের উপর কিতাব নাযিল হলে আমরাই বেশি হিদায়াত পেতাম। অথচ কুরআন নাযিল করার পরও তারা অজুহাত দিচ্ছে। নতুন নতুন মুজিযা দেখতে চাইছে। অথচ এসকল মুজিযা তো শেষ সুযোগ হিসেবে আসে, যা অস্বীকার করলে সরাসরি আযাব পেতে হয়

            একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীম (আঃ) এর দ্বীনের অনুসারী হতে বলা হয়, যিনি মুশরিক ছিলেন না। জীবন, মৃত্যু, শারিরীক ইবাদত, আর্থিক ইবাদত সবই হতে হবে আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক

            Comment


            • #7
              রামাদান - ০৬



              ০৭। সূরা আ'রাফ, আয়াত ১ থেকে ২০৬

              বিশুদ্ধ তাওহীদের প্রতি ঈমান আনতে বলা হয়। পূর্বের জাতিসমূহ সীমালঙ্ঘন করার পর তাদের কাছে অকস্মাৎ আযাব এসেছে, রাতে বা দুপুরে বিশ্রামের সময়। তখন তারা আর ঈমান আনার সুযোগ পায়নি। কিয়ামতের দিন উম্মাত এবং রাসূলগণ উভয়পক্ষই নিজ নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। আমলনামা ওজন করা হবে। অস্বীকারকারীদের মীযানের পাল্লা হালকা হবে

              ইবলীস অহংকারের কারণে আদাম (আঃ)-কে সেজদা করার হুকুম অমান্য করে। ফলে সে অভিশপ্ত হয়। সে আল্লাহর কাছে কিয়ামাত পর্যন্ত হায়াত চায়, যেন মানুষদের চারদিক থেকে পথভ্রষ্ট করতে পারে। আল্লাহ তার এই দুআ কবুল করে তার অনুসারীদেরসহ তাকে দিয়ে জাহান্নাম পরিপূর্ণ করার ওয়াদা করেন

              আদাম-হাওয়া (আঃ)-কে জান্নাতে রেখে তাঁদের একটি গাছের নিকটবর্তী হতে মানা করা হয়। শয়তান একদিন তাঁদের প্ররোচিত করে। কসম করে নিজেকে কল্যাণকামী দাবি করে। ওই গাছটির স্বাদ নিলে তাঁরা অমর বা ফেরেশতা হয়ে যাবেন বলেই আল্লাহ এটি খেতে নিষেধ করেছেন বলে দাবি করে। তার কথামতো কাজ করার পর তাঁদের লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। আল্লাহ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁরা ইবলীসের মতো অহংকার না করে মাফ চান। আল্লাহ তাঁদের মাফ করে সকলকে জমিনে পাঠিয়ে দেন সাময়িক জিন্দেগির পরীক্ষাস্বরূপ

              আল্লাহ আমাদের সাবধান করে দেন যে, শয়তান যেভাবে আমাদের পূর্বপুরুষদের উলঙ্গ করেছে, আমাদের যেন সেভাবে প্ররোচিত করে অশ্লীলতার দিকে নিতে না পারে। মূলত মুশরিকরা যে উলঙ্গ হয়ে কাবা তাওয়াফ করতো, তার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। লজ্জা নিবারণ ও সৌন্দর্যের জন্য আল্লাহর দেওয়া পোশাক পরতে বলা হয়। আর তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম। সালাতে যাওয়ার সময় সাজসজ্জা গ্রহণ করতে বলা হয়। খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করতে বলা হয়, অপচয় করতে নিষেধ করা হয়

              দুনিয়াতে মুমিনরা আল্লাহর দেওয়া হালাল দ্রব্যাদি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করবে। আর আখিরাতের নিয়ামতও বিশেষভাবে মুমিনদেরই জন্য। মুশরিকরা যেসব মনগড়া হারামের বিধান নিজেদের উপর চাপিয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। আসল হারাম হলো শির্ক, অন্যের প্রতি সীমালঙ্ঘন, প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা

              কিয়ামাতের দিন সব যুগের কাফিররা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তারা একে অপরকে দোষারোপ করবে এবং একজন আরেকজনের জন্য দ্বিগুণ আযাবের দুআ করবে। মিথ্যা উপাস্য ও নেতৃবর্গ সেদিন তাদের সাহায্য করবে না। মুমিনরা জান্নাতে মিলেমিশে থাকবে। তাদের মনের দুঃখ-কষ্ট, শত্রুতা ভুলিয়ে দেওয়া হবে। আর যেসব ঈমানদারের গুনাহ ও নেকি সমান, তারা আরাফে ঘোরাফেরা করবে। একবার জান্নাতিদের দেখে সালাম দিবে, একবার জাহান্নামিদের তিরস্কার করবে (আরাফবাসীরাও পরে জান্নাতে যাবে)। জাহান্নামীরা জান্নাতিদের অনুরোধ করবে এক ফোঁটা পানি হলেও তাদের উপর ফেলতে। ঘোষণা করা হবে যে এই দিনে এসব নিয়ামত কাফিরদের উপর হারাম

              আল্লাহর বিভিন্ন সৃষ্ট নিদর্শনের কথা বর্ণনা করে দেখানো হয় কীভাবে দুনিয়াতেই মৃত থেকে জীবিত ও জীবিত থেকে মৃতকে বের করা হচ্ছে। অতএব আখিরাতের অস্তিত্ব অসম্ভব কিছু নয়
              নূহ, হুদ, সালিহ, লূত ও শুআইব (আলাইহিমুসসালাম) নবীগণের কাহিনী সংক্ষেপে পরপর বলা হয়। সকল ক্ষেত্রেই লক্ষণীয় বিষয় হলো- তাঁদের সম্প্রদায়গুলোর কমন সমস্যা ছিলো শির্ক। শির্কের পাশাপাশি একেক কওমের একেক সমস্যা ছিলো। অহংকার, অত্যাচার, সমকামিতা ও ওজনে কমবেশি করার মতো গুনাহে তারা লিপ্ত ছিলো। নবীগণ তাওহীদের দাওয়াত দিলে সকল ক্ষেত্রেই দুর্বল লোকেরা কথা শুনতো। আর সমাজের রুইকাতলারা বিরোধিতা করতো। তারা মুজিযা দেখানোর আবদার করতো। অথচ মুজিযা দেখেও ঈমান আনতো না। সকল জাতিকেই সংকট ও প্রাচুর্য দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। সীমালঙ্ঘন করার ফলে অবশেষে আচমকা এমন সময়ে আযাব এসেছে যে একেবারে অপ্রস্তুত অবস্থায় পুরো জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। কেবল সংশ্লিষ্ট নবী ও তাঁর মুষ্টিমেয় অনুসারীরা রক্ষা পেয়েছে

              মূসা (আঃ) এর কাহিনী বিস্তারিত বলা হয়েছে। ফিরআউনকে মুজিযা দেখানোর পরও ঈমান আনতে ও জুলুম থেকে নিবৃত হতে অস্বীকার করে। রাজ্যের জাদুকরদের সাথে মূসার (আঃ) প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। জাদুকররা মোকাবেলার সময় তাদের জাদু (দৃষ্টিবিভ্রম) ও মূসার মুজিযার (বাস্তবিক অতিপ্রাকৃত ঘটনা) পার্থক্য বুঝতে পেরে ঈমান আনে। ফিআউন ক্রোধে দিশা হারিয়ে ফেলে একে ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে এবং বনী ইসরাইলকে অত্যাচার করতে থাকে। ফিরআউনের কওমের উপর ভয়ংকর কিছু আযাব পরপর আসে। বন্যা, পঙ্গপাল, ঘুনপোকা, ব্যাঙ ও রক্ত।

              প্রতিবারাই তারা মূসার কাছে এসে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে অনুরোধ করে ঈমান আনার অঙ্গিকার করে। আযাব সরে যাওয়ার পর আবার ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে। অবশেষে বনী ইসরাইলকে ধাওয়া করার সময় ফিরআউন ও তার লস্কর লোহিত সাগরে ডুবে মরে

              শাম-ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের সীমায় নিরাপদে প্রবেশ করার পর বনী ইসরাইল ও মূসা-হারুন (আঃ) এর বিচিত্র কাহিনী শুরু হয়। এতদিন আল্লাহর এত নিয়ামাত দেখেও দাসত্বমনা বনী ইসরাইল জাতি অন্য এক জাতিকে মূর্তিপূজা করতে দেখে মূসাকে অনুরোধ করে ওদের জন্যও একটা পূজার মূর্তি বানিয়ে দিতে। মূসা (আঃ) এর নসিহতে তারা নিবৃত হয়

              মূসা (আঃ)-কে তাওরাত দেওয়ার জন্য আল্লাহ তাঁকে তূর পাহাড়ে ডেকে নেন। তিনি আল্লাহকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তূর পাহাড়ে আল্লাহ তাজাল্লী নিক্ষেপ করলে মূসা (আঃ) অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর তিনি আল্লাহর ক্ষমতা ও নিজের আবদারের পার্থক্য উপলব্ধি করেন। ফলকে লেখা তাওরাত নিয়ে তিনি ফেরত আসেন

              এদিকে মূসার (আঃ) অনুপস্থিতিতে হারুন (আঃ) বনী ইসরাইলের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তারা তাঁকে অমান্য করে এক জাদুকরের বানানো স্বর্ণের বাছুরের উপাসনা শুরু করে। মূসা (আঃ) ফিরে এসে আবারও নসিহত করে তাদের নিবৃত করেন। এভাবেই উম্মাতকে সরলপথে ধরে রাখতে নবীগণ অনেক কষ্ট করেছেন। আবার বারবার ভুল করার পরও উম্মাতদের আল্লাহ বারবার মাফ করে বারবার সুযোগ দিয়েছেন। তাওরাত-ইঞ্জিলের এসব কাহিনী একজন নিরক্ষর ব্যক্তি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করছেন, এটাও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুওয়তের একটি প্রমাণ

              এত নিয়ামাতের পরও বনী ইসরাইল পরবর্তীতে কিতাব বিকৃত করে। সপ্তাহে একদিন শনিবারে কাজকর্ম করা নিষিদ্ধ থাকার মতো সহজ বিধান অমান্য করে সেদিন তারা মাছ ধরতো। কিছু লোক নিজেরা না ধরলেও, যারা ধরতো তাদের হিদায়াতের ব্যাপারে হতাশ হয়ে তাদেরকে মানা করা ছেড়ে দিয়েছিলো। কিছু লোক নিজেরাও এ কাজ থেকে বিরত থাকতো, অন্যদেরও তা হতে নিষেধ করতো। প্রথমোক্ত দলটিকে আল্লাহ আযাব দিয়ে বানরে পরিণত করেন

              এছাড়াও আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের আলেমরা ঘুষের বিনিময়ে মানুষের সুবিধামতো কিতাব বিকৃত করতো

              রুহের জগতে থাকা অবস্থায় আল্লাহ আমাদের থেকে সাক্ষ্য নিয়েছেন যে তিনিই আমাদের রব্ব। অতএব, বাপদাদাকে শির্ক করতে দেখাটা শির্ক করার জন্য কোনো অজুহাত নয়

              মুশরিকরা আল্লাহর উপর এমন বৈশিষ্ট্য আরোপ করতো, যা তাঁর বৈশিষ্ট্য নয়। আবার এমন বৈশিষ্ট্য অস্বীকার করতো যা আসলে আল্লাহর বৈশিষ্ট্য। তাই আল্লাহকে তাঁর সুন্দরতম গুণবাচক নামসমূহ ধরে ডাকতে আদেশ করা হয়

              মূর্তিপূজার অসারতা বর্ণনা করে আল্লাহর ইবাদাত ও যিকিরের কিছু সুন্দর পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়


              ০৮। সূরা আনফাল, আয়াত ১ থেকে ৪০

              সূরা আনফাল নাযিল হয় মূলত বদর যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। যুদ্ধ জয়ের পর মুসলিমদের একাংশ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর রক্ষণাবেক্ষণে দাঁড়িয়ে যায়, একাংশ শত্রুদের ধাওয়া করে, একদল গনীমত সংগ্রহ করে। তিন দলেরই ধারণা ছিলো তারা নিজেরাই গনীমতের বেশি হকদার। কারণ বদর ছিলো প্রথম যুদ্ধ এবং গনীমতের বিধান তখনও নাযিল হয়নি। এ নিয়ে তাঁদের মাঝে মনোমালিন্য বেঁধে যায়

              আল্লাহ ওয়াহী নাযিল করে জানিয়ে দেন যে গনীমত কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। এভাবে তাঁদের মনে চলে আসা সম্পদের টান দূর করে মন নরম করে ফেলা হয়। উল্লেখ্য আনফাল অর্থ বোনাস। গনীমতের জন্য আনফাল কথাটা ব্যবহার করে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এটি না পেলে আফসোসের কিছু নেই, আর পেলে তো উপরি পাওনা

              দিল নরম করার পর দীর্ঘ নসিহত করা হয়। যুদ্ধজয়কে মুসলিমরা যেন নিজেদের কৃতিত্ব না ভাবে। কাফিরদেরকে মুসলিমরা নিজ শক্তিতে মারেনি, বরং আল্লাহই মেরেছেন। যুদ্ধের আগের রাতে প্রশান্তির ঘুম ও বৃষ্টি দিয়ে আল্লাহ সাহায্য করেছেন। ময়দানে ফেরেশতা পাঠিয়ে সাহায্য করেছেন

              কাফিররা মক্কায় দুর্বল মুসলিমদের উপর কী নির্যাতন করেছে, যুদ্ধে তারা কীভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে, এখনও এসব কাজ না ছাড়লে পরিণাম কী হবে, এই নিয়ে কাফিরদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখা হয়েছে
              এসকল বিষয় পরিষ্কার বর্ণনা করে দেওয়ার পর মুজাহিদদের মাঝে গনীমতের মাল বণ্টনের বিধান বর্ণনা শুরু হয়, যা পরের দিনের তারাবীহতে থাকবে।

              Comment


              • #8
                রামাদান - ০৭



                ০৮। সূরা আনফাল, আয়াত ৪১ থেকে ৭৫

                গনীমতের মাল বণ্টনের নিয়ম বর্ণিত হয়

                বদরের দুই দল আলোচনা করে যুদ্ধের তারিখ ঠিক করতে গেলে উভয় দলই মতভেদ করতো। আল্লাহ তাঁর নির্ধারিত সময়েই যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছেন। যেন যাদের ধ্বংস হওয়ার, তারা সুস্পষ্ট প্রমাণ দেখেই ধ্বংস হয়; আর যাদের বেঁচে থাকার, তারাও সুস্পষ্ট প্রমাণ দেখেই বেঁচে থাকে

                আল্লাহর ইচ্ছায় উভয় দল পরস্পরকে চোখের দেখায় কম সংখ্যক দেখছিলো। ফলে মুমিনদের সাহস বাড়ে, আর কাফিরদের অহংকার ও অসাবধানতা বাড়ে

                যুদ্ধের সময় অধিক যিকির করতে এবং কুরআন সুন্নাহর অনুগামিতা করতে বলা হয়। অন্তঃকলহ করতে নিষেধ করা হয়। কাফিরদের মতো অহংকারের সহিত লোক দেখানো ধাঁচের যুদ্ধ মহড়া না করতে বলা হয়

                শয়তান কাফিরদেরকে যুদ্ধের ব্যাপারে খুব উৎসাহ দিয়েছিলো। ময়দানে এসে ফেরেশতাদের দেখে সে তার বন্ধু কাফিরদের ফেলে পলায়ন করে

                কুরাইশ মুশরিকদের ফিরআউনের সাথে তুলনা করা হয়। উভয় অহংকারী দলই শক্তি ও সংখ্যায় বেশি হয়েও লাঞ্ছিত হয়েছে। এটা তাদের নিজেদেরই দোষ। কাফিররাই আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম জীব
                চুক্তি ভঙ্গকারী শত্রু জাতি ও বিশ্বাসঘাতকদের সাথে সমুচিত আচরণ করতে বলা হয়

                জানা-অজানা শত্রুদের মনে ভীতি সঞ্চার করার লক্ষ্য মুমিনদের যথাসাধ্য সামরিক শক্তি অর্জন করতে বলা হয়। আর কোনো শত্রুজাতি শান্তিচুক্তি করতে চাইলে তা করতে বলা হয়। এটা করে তারা যদি ধোঁকা দিতে চায়, তাহলে তা উন্মোচন করার জন্য আল্লাহ আছেন

                প্রচণ্ড গোত্রীয় চেতনাবাদী আরব সমাজে আল্লাহ কীভাবে মুমিনদের মাঝে দ্বীনি সম্প্রীতি সৃষ্টি করে দিয়েছেন তা স্মরণ করানো হয়

                প্রাথমিকভাবে মুসলিম ও কাফিরের যুদ্ধ শক্তির অনুপাত ১ঃ১০ হলেও যুদ্ধ ছেড়ে পলায়ন না করে যুদ্ধ করতে বলা হয়, এতেই মুসলিমরা আল্লাহর ইচ্ছায় সফল হবে। পরে বিধান সহজ করে ১ঃ২ করা হয়

                শত্রুর শক্তি একেবারে চূর্ণ করার আগ পর্যন্ত তাদের হত্যা না করে বন্দী করা আল্লাহর পছন্দ নয়। বদরের বন্দীদের হত্যা না করে মুক্তিপণ আদায় করার কারণে আল্লাহ কড়া ধমকি দেন। কিন্তু সেই সাথে মাফও করে দেন এবং যা অর্থ অর্জিত হয়েছে, তা নিশ্চিন্তে ভোগ করার অনুমতি দেন। আর সেসকল কাফিরদের অন্তরে যদি আল্লাহ ঈমান আনার ইচ্ছা দেখেন, তাহলে তাদের এই মুক্তিপণ বাবদ সম্পদের ক্ষতিকে তিনি এর চেয়েও উত্তম জিনিস দিয়ে ক্ষতিপূরণ করে দিবেন

                যারা তখনও হিজরত করেনি, তাদের সাথে সম্পদের উত্তরাধিকারের বিধান এবং কাফির গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাদের সহায়তার বিধান বর্ণিত হয়

                যারা ঈমান আনার পর হিজরত ও জিহাদ করেছেন এবং যারা তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন (আনসার), তাঁদেরকে সাচ্চা মুমিন আখ্যায়িত করে ক্ষমা ও উত্তম রিযিকের ওয়াদা করা হয়


                ০৯। সূরা তাওবাহ, আয়াত ১ থেকে ৯২

                সূরা তাওবাহর বক্তব্য অনেকটা সূরা আনফালের মতোই। আরবের অনেক লোক মুসলিম ও মুশরিকদের মাঝে যুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতি দেখার অপেক্ষায় ছিলো। মুসলিমদের মক্কা বিজয় ও হুনাইন যুদ্ধ জয়ের পর সমগ্র আরবের এসব লোকদের ইসলাম গ্রহণের পথে আর বাধা রইলো না। এমতাবস্থায় আরব উপদ্বীপকে ইসলামের কেন্দ্র ঘোষণার্থে সেখানে অমুসলিমদের স্বাধীন নাগরিকত্ব নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রয়োজন দেখা দেয়। যুদ্ধরত নয় এমন মুশরিকদের যাদের সাথে এমন চুক্তি ছিলো যার মেয়াদ নির্ধারিত হয়নি, তাদের চার মাস সময় দেওয়া হয়। এর মাঝে ইসলাম গ্রহণ না করলে আরব উপদ্বীপ ছেড়ে চলে যাবে। আর যাদের সাথে মেয়াদ নির্ধারিত আছে, তাদের সাথে মেয়াদ পূর্ণ করা হবে। তারপরও তারা মুসলিম না হলে বা আরব উপদ্বীপ ছেড়ে না গেলে যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানেই হত্যা করা হবে। এসকল মুশরিকেরা মুসলিমদের বাগে পেলে কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক বা ন্যায়-অন্যায়ের মূল্য দেয় না। তাদের সাথে অনুরূপ আচরণের হুকুম করা হয়। তারপর কিছু শর্ত বর্ণিত হয়, যেখানে তাদের হত্যা না করে নিরাপত্তা দিতে হবে। যেমন- ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হওয়া

                মুশরিকরা কাবার রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে গর্ব করতো। মূর্তিপূজকরা যে এ দায়িত্বের অযোগ্য, তা ঘোষণা করা হয়

                আত্মীয়-ঘরবাড়ি-সম্পদের চেয়ে জিহাদকে অধিক ভালোবাসতে বলা হয়। আপন আত্মীয়ও যদি কাফির হয়, তাদেরও অভিভাবক বানানো যাবে না

                হুনাইনের যুদ্ধের দিন মুসলিমরা নিজেদের সংখ্যাধিক্য দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে গিয়েছিলো। ফলে প্রাথমিকভাবে পরাজয় বরণ করে। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের পুনঃসংগঠিত করে আক্রমণের সুযোগ দিয়ে বিজয় দেন। এই নিয়ামাতের কথা স্মরণ করানো হয়

                আহলে কিতাবগণের উপর জিযিয়ার বিধান আরোপ করা হয়। তাদের ভ্রান্ত ধর্মীয় বিশ্বাসগুলো তিরস্কার করা হয়। যেমন- আল্লাহর সন্তান আছে বলে বিশ্বাস করা এবং পীর-দরবেশদেরকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করা। তাদের অন্যায়ভাবে সম্পদ কুক্ষিগত করার কাজকেও তিরস্কার করা হয়

                মুশরিকরা নিজ সুবিধার্থে পবিত্র মাসসমূহ আগপিছ করে বছর হিসাব করতো। এটিকে তিরস্কার করা হয়

                এরপর রোমানদের বিরুদ্ধে সংঘটিতব্য তাবূক যুদ্ধের বিভিন্ন দিক বর্ণনা শুরু হয়। সংখ্যার স্বল্পতা, আসবাবের অভাব, বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও জিহাদে বের হতে নানাভাবে উৎসাহিত করা হয়

                মুনাফিকদের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়। জিহাদের ইচ্ছা যদি তাদের থাকতোই তাহলে কিছু না কিছু প্রস্তুতি নিতো। কিন্তু তারা জিহাদে গেলে বিশৃঙ্খলাই করবে। তাই আল্লাহই তাদের ঘরে বসিয়ে রেখেছেন
                তাদের অনেকে আজগুবি সব অজুহাত দিতো। এক মুনাফিক আরজ করেছিলো রোমান নারীদের দেখলে সে ফিতনায় পড়ে যাবে, তাই তাকে জিহাদে না যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। আল্লাহ বলেন জিহাদে না গিয়ে বসে থাকাটাই ফিতনা

                মুসলিমদের উপর বিপদ আসলে মুনাফিকরা ভাবে যে তারা বেঁচে গেলো। অথচ তাকদিরে থাকা বিপদ আসবেই। মুমিনরা তো হয় জয়ী হবে নয়তো শহীদ হবে, আর মুনাফিকরা হয় আল্লাহর হাতে সরাসরি বা মুমিনদের হাত দিয়ে শাস্তি পাবে

                তারা কেউ কেউ টাকা দিয়ে শারীরিক জিহাদ থেকে অব্যাহতি চায়। আর মুমিনদের মধ্যে কেউ সদকা দিলে তাকে লোক দেখানো বলে উপহাস করে। কেউ দারিদ্রের কারণে কিছু দিতে না পারলে তাকেও উপহাস করে। আল্লাহ বলেন মুনাফিকদের দানই বরং কবুল হয় না। মুমিনরা ঠিকই সাওয়াব পায়

                যাকাতের খাতসমূহ বর্ণিত হয়

                রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সকলের কথা বিশ্বাস করেন বলে মুনাফিকরা খুশি হয় এই ভেবে যে তাঁকে তারা সহজেই প্রতারিত করছে। আল্লাহ এই ধারণা খণ্ডন করে দেন যে তিনি তাঁর রাসূলকে ঠিকই সব গোপন চক্রান্ত জানিয়ে দেন

                নিজেদের মুসলিম দাবি করার পরও মুনাফিকরা কাফিরসুলভ কথাবার্তা বলে। জিজ্ঞেস করলে বলে ঠাট্টা করছিলো। এটাকেও কুফরি আখ্যায়িত করা হয়

                মুনাফিক নারী-পুরুষদের তিরস্কার করে তাদের পূর্বেকার জাতিসমূহের সীমালঙ্ঘনকারীদের সাথে তুলনা করা হয়। মুমিন নারী-পুরুষদের প্রশংসা করে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়

                কাফিরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে মৌখিক জিহাদ করতে বলা হয়। তাদের প্রতি কঠোর হতে বলা হয়

                গরমের ভয়ে জিহাদ না করতে চাওয়ার মানসিকতা খণ্ডন করে বলা হয় জাহান্নাম এরচেয়েও উত্তপ্ত

                মুনাফিকদের মৃত্যুতে জানাযা পড়তে রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিষেধ করা হয়

                মুনাফিকরা যারা জিহাদে যেতে চায় না আর মুমিনদের যারা সামর্থ্য না থাকায় জিহাদে যেতে পারে না, তাদের পার্থক্য দেখানো হয়। শেষোক্ত দলের কোনো দোষ নেই

                কাফির-মুনাফিকদের সম্পদের প্রাচুর্য বরং তাদের প্রতি আযাব। এগুলো তাদেরকে কুফরে অটল রেখে কুফরির উপরই মৃত্যুবরণ করায়

                Comment


                • #9
                  রামাদান - ০৮



                  ০৯। সূরা তাওবাহ, আয়াত ৯৩ থেকে ১২৯

                  মুসলিমরা তাবুক যুদ্ধ থেকে ফেরার পর যে মুনাফিকরা নিজেদের না যাওয়ার ব্যাপারে কসম করে ওজর পেশ করবে, তা জানিয়ে দেওয়া হয়। মুসলিমদের বলা হয় তাদেরকে বাহ্যিকভাবে উপেক্ষা করতে, যদিও আল্লাহ ঠিকই তাদের উপর ক্রোধান্বিত

                  মদীনাবাসী এবং শহরতলীর বেদুইন উভয় শ্রেণীর লোকের মাঝেই মুনাফিক এবং সাচ্চা মুমিন আছে। এদের পার্থক্য বর্ণনা করা হয়

                  মদীনার এক খ্রিষ্টান পালিয়ে গিয়ে রোম থেকে মদীনা আক্রমণের পরিকল্পনা করছিলো। তার সাহায্যার্থে মুনাফিকরা মসজিদের নাম দিয়ে একটি ইমারত তৈরি করে যা গোপন সলাপরামর্শ ও অস্ত্র মজুদের ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে। রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তারা বলে দুর্বল লোকদের কষ্ট কমাতে এটি তৈরি হয়েছে। তাঁকে অনুরোধ করে একদিন সেখানে নামাজ পড়াতে। তাবুকে যাওয়ার কথা বলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা আপাতত এড়িয়ে যান। তাবুক থেকে ফেরার পথে এই ইমারতের গোমর ফাঁস করে আয়াত নাযিল হয়। পরে তা ধ্বংস করা হয়

                  আলসেমি ইত্যাদি কারণে জনাদশেক সাচ্চা সাহাবা তাবুক যুদ্ধে যেতে পারেননি। তাঁরা অত্যন্ত অনুতপ্ত হন। সাতজনের ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে ক্ষমা ঘোষণা করে আয়াত নাযিল হয়, কাফফারা হিসেবে তাঁরা যে সাদকা করেন, তা গ্রহণ করতে বলা হয়

                  তিনজনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত মুলতবি রাখা হয়। পুরো মুসলিম সমাজ ৪০ দিন যাবত তাঁদের বয়কট করে রাখে। এরপর তাঁদের স্ত্রীদেরও তাঁদের থেকে আলাদা থাকতে বলা হয়। তাঁদের একজন কা'ব বিন মালিক (রাঃ) এর এ ঘটনার বিস্তারিত একটি হৃদয়ছেঁড়া বর্ণনা আছে, যা তাফসির ও সীরাত গ্রন্থগুলোতে আছে। এ সময়ের মাঝে তাঁদের কাছে বহিঃশত্রুদের থেকে লোভনীয় প্রস্তাবও আসে। তাঁরা সেসব চিঠি পুড়িয়ে ফেলেন। তাঁরাও নিজেদের বিশ্বস্ততা ধরে রাখেন, মুসলিম সমাজও মনে মনে চায় আল্লাহ যেন তাঁদের মাফ করেন। ৫০ দিনের মাথায় তাঁদের ক্ষমার সুসংবাদ নিয়ে আয়াত নাযিল হয়

                  কাফির অবস্থায় মারা যাওয়া আত্মীয় স্বজনের জন্যও দুআ করা নিষিদ্ধ করে আয়াত নাযিল হয়। ইবরাহীম (আঃ) যদিও তাঁর মুশরিক পিতার জন্য দুআ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে যখন প্রকাশ হয়ে যায় তাঁর পিতা আল্লাহর শত্রু, তখন তিনি দুআ করা থেকে বিরত হন

                  জিহাদের বিভিন্ন ফজিলত বর্ণিত হয়। মুজাহিদীন যত ক্ষুদা, তেষ্টা, কষ্ট ভোগ করেন, যত রাস্তা পার হন, যত পরিকল্পনা করেন, যত শত্রু হত্যা করেন, সব কিছুর জন্য সাওয়াব পান। আল্লাহর কাছে জান্নাতের বিনিময়ে জানমাল বিক্রয়কারী লোকদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয় তাঁরা আল্লাহর রাস্তায় শত্রুদের মারেন ও নিজেরা মরেন, তাওবাকারী, ইবাদতগুজার, রোজাদার, নামাজি, সৎ কাজের আদেশদাতা, মন্দ কাজের বাধাদানকারী

                  ফরজে কিফায়া জিহাদের ক্ষেত্রে সকলে একত্রে জিহাদে না গিয়ে একদল মানুষ ইল্ম চর্চায় রত থাকার নির্দেশ করা হয়


                  ১০। সূরা ইউনুস, আয়াত ১ থেকে ১০৯

                  সূরা ইউনুসে অন্যান্য মাক্কী সূরাসমূহের মতোই মূলত তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত নিয়ে আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ প্রথমবার সকল মাখলুক সৃষ্টি করেছেন, দ্বিতীয়বারও তিনি তা করতে সক্ষম
                  আল্লাহর সৃষ্টজগতের বিভিন্ন নিদর্শনাদি বর্ণনা করে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে বলা হয়। এসব নিদর্শনের ব্যাপারে উদাসীন কাফিরদের জন্য আছে জাহন্নাম। আর এসব সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তাভাবনাকারীরা বিশুদ্ধ তাওহীদে ঈমান আনার কারণে জান্নাতে যাবে

                  মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবুওয়াতের মিথ্যা দাবি করছেন বলে যারা দাবি করতো, তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয় যে তিনি তো চল্লিশ বছর তাদের মাঝেই বসবাস চলাফেরা করেছেন। তাঁর সত্যবাদিতার ব্যাপারে তারা নিজেরাই সাক্ষী

                  মানুষের উপর ভ্রমণ বা অন্য কোনো অবস্থায় বিপদআপদ আপতিত হলে তারা শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ডাকে। আর বিপদ সরে গেলে এমন ভাব করে যেন আল্লাহকে তাদের কোনো দরকারই নেই

                  মুশরিকরাও বিশ্বাস করতো এ জগতের সৃষ্টিতে দেবদেবীর কোনো হাত নেই, আল্লাহই সব করেছেন। তারপরও ইবাদাত করার সময় ঠিকই তারা মনগড়া উপাস্যকে আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত বা সুপারিশকারী ভেবে পূজা করা শুরু করে

                  দুনিয়ার উপমা দেখানো হয় ফসলের ক্ষেত্রের মতো, যাকে উর্বর দেখে মানুষ নিশ্চিন্ত হয়ে এটাকেই সব ভেবে বসে থাকে। তারপর হঠাৎ কোনো এক দুর্যোগ এসে সব ফসল নষ্ট হয়ে যায়। দুনিয়াটাও এভাবে হঠাৎ কিয়ামাত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। সবাই নিজ নিজ কাজ অনুযায়ী আখিরাতে বদলা পাবে।

                  কাফিররা তাদের মিথ্যা উপাস্যগুলোর কাছ থেকে কোনো সাহায্যই পাবে না। এসবকে তারা অনুমানের ভিত্তিতে বিশ্বাস করতো অথচ সত্যের বিপরীতে অনুমান কোনো কাজে আসে না

                  কাফিরদের ঠাট্টা উপহাসের বিপরীতে মুমিনদের সান্ত্বনা দিয়ে আখিরাতের প্রতিদানের কথা জানানো হয়েছে। কুরআনকে রোগের উপশম ও হিদায়াত আখ্যায়িত করা হয়েছে

                  প্রত্যেক জাতির কাছেই নবী রাসূল এসেছেন সত্য জানাতে। যখন তারা সীমালঙ্ঘন করেছে, তখন যথোচিতভাবেই নির্ধারিত সময়ে তাদের উপর আযাব এসেছে। কারো উপর যুলুম করা হয়নি। এভাবে এক জাতিকে ধ্বংস করে অন্য জাতিকে আনা হয় পরীক্ষা করার জন্য। আজ যারা জমিনে আছে, তারাও এই সিলসিলারই অংশ

                  নূহ ও মূসা আলাইহুমাসসালাম এর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁদের যুগেও অনেকে নবীগণের সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখেও ঈমান আনেনি। কাফিরদের পক্ষ থেকে নির্যাতনের ভয় থাকা সত্ত্বেও কিছু লোক ঈমান এনেছিলো। আল্লাহ কাফিরদের ধ্বংস করে মুমিনদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। আযাব চলে আসার পর তা দেখে ফিরআউন ঈমান আনার ঘোষণা দেয়। কিন্তু আল্লাহ তা আর কবুল করেননি। ইউনুস (আঃ) এর কওম অবশ্য ব্যতিক্রম। তারা আযাবের লক্ষণ দেখে অনুতপ্ত হয়ে ঈমান আনে। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে আযাব হটিয়ে দেন

                  এসব কাহিনী বর্ণনা করে মুশরিকদের ঈমান আনতে আহ্বান করা হয়। কারণ তারা যে বারবার প্রতিশ্রুত আযাব এনে দেখাতে চ্যালেঞ্জ করছে, সেই আযাব চলে আসলে তাদের আর ঈমান আনার সুযোগ হবে না

                  রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চাইলেই কাউকে জোর করে ঈমান আনাতে পারবেন না। মুসলিমরা তো নিজ কল্যাণের জন্যই আল্লাহর দ্বীনের অনুসরণ করবে। আর যারা মুখ ফিরিয়ে নিলো, শির্ক করলো, তারা নিজেদেরই ক্ষতি করলো


                  ১১। সূরা হুদ, আয়াত ১ থেকে ৫

                  সূরা হুদে পূর্বেকার বিভিন্ন নবীর কওমের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত না করার দাওয়াত দিতে এই নবীগণ জান্নাতের সুসংবাদদাতা ও জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ককারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। যারা তাঁদের অমান্য করবে, তারা কিয়ামাতের দিন ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হবে। কাফিররা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মুখে এসব কথা শুনলে মুখে কাপড় জড়িয়ে এমনভাবে সরে যেতো যেন আল্লাহকে ফাঁকি দিতে চাইছে, অথচ আল্লাহ গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুর ব্যাপারে অবগত

                  Comment


                  • #10
                    রামাদান - ০৯



                    ১১। সূরা হুদ, আয়াত ৬ থেকে ১২৩

                    সকল মাখলুকের রিযিক আল্লাহ দিয়ে থাকেন। দুনিয়ার জীবনকে পরীক্ষা হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। আখিরাত নিয়ে ঠাট্টাকারীদের ওপর আচমকা আযাব চলে এলে তারা বিপদে পড়বে

                    আল্লাহ মানুষকে বিপদ দিলে তারা হতাশ হয়ে পড়ে, আবার নিয়ামাত দিলে অহংকার করে। যারা এমনটা না করে ধৈর্য ধরে ও নেক আমল করে, তারাই আল্লাহর কাছে প্রতিদানের যোগ্য

                    মুশরিকরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে কখনও বলত মূর্তির সমালোচনা বাদ দিয়ে বাকি কুরআন পড়তে, কখনো বলত তাঁর সাথে সাথে ফেরেশতা ঘোরাফেরা করে না কেন। কখনো বলত এটা তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের রচনা। তাদেরকে সকলে মিলে কুরআনের অনুরূপ দশটি সূরা তৈরি করে আনতে বলা হয় (পরবর্তীতে নাযিলকৃত আয়াত ২ঃ২৩ ও ১০ঃ৩৮ এ সহজ করে একটি সূরা বানাতে বলা হয়)। এখানে উল্লেখ্য, সমসাময়িক সাহিত্যে পারদর্শী আরব মুশরিকরা এরকম গূঢ়ার্থপূর্ণ ও সাহিত্যমানের জিনিস তৈরির চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সাহস করেনি। বর্তমানে অনুবাদ পড়া ইসলামবিদ্বেষীরা অর্থহীন ও সাহিত্যমাধুর্যহীন লাইন তৈরি করে দাবি করে তারা চ্যালেঞ্জে জিতে গেছে

                    আখিরাত অবিশ্বাসীরা তাদের সব ভালো কাজের প্রতিদান দুনিয়ায়ই পেয়ে যাবে। আখিরাতে তাদের মিথ্যা উপাস্যরা তাদের বাঁচাতে আসবে না। আর মুমিনগণ থাকবেন জান্নাতে। উভয় দলের উপমা যথাক্রমে অন্ধ-বধির এবং দৃষ্টিমান-শ্রুতিবানের মতো

                    তারপর বিভিন্ন নবীর ঘটনা বর্ণনা শুরু হয়। একজন নিরক্ষর আরবের মুখে আসমানী কিতাবের এসকল ঘটনার নির্ভুল বর্ণনাও তাঁর নবুওয়াতের প্রমাণ

                    নূহ (আঃ) তাওহীদের দাওয়াত দিলে কাফির নেতারা তাঁকে অমান্য করে। মক্কার মুশরিকরা যেসব প্রশ্ন তুলত, সেসব প্রশ্ন তারাও করে। তাদের সকলেরই প্রশ্ন ছিল নবীকে সমাজের দুর্বল লোকেরাই কেবল অনুসরণ করে কেন আর নবীর সাথে আসমান জমিনের ধনভাণ্ডার থাকে না কেন। নূহ (আঃ) জবাব দেন দুনিয়াবি দৃষ্টিতে দুর্বল এসব লোকের মাঝে আল্লাহ ভালো কিছু দেখলে আমরা আপত্তি করার কে? আর নবী অর্থ এই না যে তিনি কোনো সুপারপাওয়ারধারী ফেরেশতা হবেন, নবী তো কেবল আল্লাহর বার্তাবাহক। তিনি এ কাজের জন্য কোনো পার্থিব পারিশ্রমিকও দাবি করেন না। আল্লাহর নির্দেশে নূহ (আঃ) নৌকা তৈরি করতে শুরু করলে কাফিররা উপহাস শুরু করে। অবশেষে প্রতিশ্রুত আযাব চলে আসে। নৌকায় আরোহণ করা মুমিন এবং অন্যান্য জোড়া জোড়া জীব ছাড়া সবাই ধ্বংস হয়। নূহ (আঃ) এর এক ছেলেও নৌকায় উঠতে অস্বীকার করে মারা যায়। আল্লাহ ওয়াদা করেছিলেন নূহের পরিবারকে তিনি বাঁচাবেন। নূহ (আঃ) এই দুটি ঘটনার সামঞ্জস্য ধরতে পারছিলেন না। আল্লাহ জানিয়ে দিলেন সেই ছেলে নূহের পরিবারের কেউ নয়, কারণ সে কুফরি করেছে

                    আদ জাতির কাছে সেই জাতিরই একজন হুদ (আঃ)-কে নবী করে পাঠানো হয়। হুদ (আঃ) তাওহীদে বিশ্বাস ও অহংকার ত্যাগ করার দাওয়াত দেন। তাহলে আল্লাহ তাদের প্রতিপত্তি আরো বাড়িয়ে দেবেন। এখানেও কাফির নেতাদের সাথে হুদ (আঃ) এর বাদানুবাদ হয়। কাফিররা বলে তাদের কোনো উপাস্যের অভিশাপেই হুদ (আঃ) এমন হয়ে গেছেন (না'উযুবিল্লাহ)। অতঃপর আযাবের নির্ধারিত দিন এলে মুমিনগণ ছাড়া আদ জাতি সমূলে ধ্বংস হয়

                    সামূদ জাতির কাছে সেই জাতিরই সালিহ (আঃ) কে নবী বানিয়ে পাঠানো হয়। তাঁর দাওয়াত শুনে কাফিররা বলে, তোমাকে নিয়ে আমাদের বড় আশা ছিল অথচ তুমি আমাদেরকে বলছ বাপদাদাদের উপাস্যগুলো ত্যাগ করতে! অর্থাৎ সালিহ (আঃ)-কেও তারা নবুওয়াতের আগে অনেক সম্মান করত, যেমনটা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মক্কার লোকেরা করত। সামূদ জাতির কাছে মু’জিযাস্বরূপ পাহাড় থেকে উটনী বের করে দেখানো হয়। তারা আপাতত নিবৃত হলে তাদের বলা হয় উটনীর কোনো ক্ষতি না করতে। কিন্তু উটনীকে পানি পান করানোর জন্য তাদের কিছুটা টান পড়ত বলে কতিপয় দুষ্ট লোক উটনীটি হত্যা করে। তিনদিন পর প্রচণ্ড শব্দের আকারে আযাব আসে। মুমিনগণ ছাড়া সামুদ জাতির সবাই এমনভাবে ধ্বংস হয়, যেন তারা সেখানে কোনোদিন বসবাসই করেনি
                    ইবরাহীম (আঃ) এর নিকট মানুষের রূপ ধরে কতিপয় ফেরেশতা আসেন। তাঁরা লূত (আঃ) এর কওম সাদ্দুমের জন্য আযাব নিয়ে নাযিল হয়েছেন বলে জানান। ইব্রাহীম (আঃ)এর স্ত্রী সারা (আঃ) তা শুনে আনন্দে হেসে দেন। তাঁদেরকে পুত্র ইসহাক (আঃ) ও নাতি ইয়াকুবের (আঃ) জন্মের আগাম সুসংবাদ দেওয়া হয়। সারা (আঃ) এই বৃদ্ধ বয়সে সন্তান হওয়ার খবর শুনে বিস্মিত হন। ফেরেশতাগণ জানান এটাই আল্লাহর হুকুম। ইবরাহীম (আঃ) তাঁর নরম দিলের কারণে সাদ্দুম নগরে এখনই আযাব না দেওয়ার ব্যাপারে অনুযোগ করেন। [অথবা ইবরাহীম (আঃ) লূত (আঃ) এবং অন্যান্য মুমিনদের ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাঁকে মুমিনদের রক্ষার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়া হয়। (আনক্বাবুত, ৩২)] কিন্তু প্রতিশ্রুত সময় চলে আসায় আযাব নিশ্চিত হয়ে গেছে

                    লূত (আঃ) এর কাছে ফিরিশতাগণ সুদর্শন পুরুষ মেহমানরূপে এসেছিলেন। সাদ্দুমের লোকেরা মুশরিক হওয়ার পাশাপাশি পৃথিবীর প্রথম সমকামী জাতি ছিল। লূত (আঃ) তাঁর মেহমানদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। কওমের লোকেরা খবর পেয়ে লূত (আঃ)-কে এসে হুমকি দিতে থাকে মেহমানদের তাদের হাতে তুলে দিতে। ফেরেশতারা লূত (আঃ) এর নিকট নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করে ভোরবেলা আযাব আসার কথা বলেন। আর বলেন যে সেসব লোক কখনও তাঁর নিকট পৌঁছতে পারবে না। ভোরবেলা লূত (আঃ) সপরিবারে নগরী ছেড়ে চলে যান। তাঁর পরিবারের মাঝে শুধু তাঁর স্ত্রী আযাবে পাকড়াও হয়, কারণ সে ওইসকল পাপাচারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। সাদ্দুমের কওমকে আযাব হিসেবে ভূমিসহ উল্টে ফেলা হয় এবং আসমান থেকে পাথর বর্ষণ করে ধ্বংস করা হয়

                    মাদইয়ানের লোকেরা শির্ক করত। এছাড়া পথেঘাটে চৌকি বসিয়ে অন্যায়ভাবে পথিকদের থেকে টোল নিত বা লুটতরাজ করত। বেচাকেনার সময় মাপে কম দিত। শুআইব (আঃ) তাদের এসব ছেড়ে দিতে বলেন। হালালভাবে যা রিযিক অবশিষ্ট থাকবে, তাই যথেষ্ট। কাফিররা বলে, হে শুআইব! তোমার ধর্ম কি আমাদের বাপদাদার ধর্ম পালনে আর ব্যবসাবাণিজ্যে বাধা দিতে বলে? তুমি বেশি ভালোমানুষি দেখাচ্ছ। তোমার খান্দান প্রতিপত্তিশীল না হলে তোমাকে আমরা হত্যা করতাম (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেও তাঁর বংশ ও আত্মীয়দের ক্ষমতার ভয়ে মুশরিকরা ক্ষতি করার সাহস পেত না)। শুআইব (আঃ) আফসোস করেন যে, আল্লাহর ভয়ের চেয়ে আমার বংশের ভয়ই কি বেশি হয়ে গেল! অবশেষে সামূদ জাতির মতো আযাবে মাদইয়ানের কাফিররা ধ্বংস হয়

                    মূসা (আঃ) যখন ফিরআউন ও তার অমাত্যদের দাওয়াত দেন তখন ফিরআউনের মতো তার অমাত্যরাও ভ্রান্তির ওপর অটল থাকে। আখিরাতেও জাহান্নামে যাওয়ার সময় ফিরআউন তাদের নেতৃত্বে থাকবে

                    পূর্ববর্তী জাতিসমূহের প্রজ্ঞাবান লোকেরা নিজেরা ঈমান এনে অন্যদেরকেও হিদায়াতের পথে ডাকলে তারা সমূলে ধ্বংস হতো না

                    এভাবে পূর্বের নবী ও জাতিসমূহের বর্ণনা করা হয়েছে যা মুমিনদের জন্য শিক্ষাস্বরূপ। এসব জনপদের মাঝে কিছু জায়গায় এখনো লোক বসবাস করে, আর কিছু এমনভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত যে আর কখনো লোক বাস করেনি। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মুমিনদের সালাত পড়ার ও নেককাজ করার হুকুম করা হয়।


                    ১২। সূরা ইউসুফ, আয়াত ১ থেকে ৫২

                    সূরা ইউসুফ প্রায় পুরোটাই ইউসুফ (আঃ) এর ঘটনা। বনী ইসরাইল কীভাবে শাম থেকে মিসরে গিয়ে বসবাস শুরু করল, তা এখান থেকে জানা যায়। ইউসুফ (আঃ) এর পিতা ইয়াকুব (আঃ) এর অপর নাম ইসরাইল, তাঁর পিতা ইসহাক (আঃ), তাঁর পিতা ইবরাহীম (আঃ)। ইয়াকুব (আঃ) এর এক স্ত্রী হতে দশ সন্তান, অপর স্ত্রী হতে দুই সন্তান (ইউসুফ ও বিন ইয়ামীন) জন্ম নিয়েছিল। এই বারোজন থেকে পরে বনী ইসরাইলের বারোটি গোত্র হয়

                    ইউসুফ (আঃ) স্বপ্নে দেখেন এগারটি নক্ষত্র এবং চাঁদ ও সূর্য তাঁকে সিজদা করছে। ইয়াকুব (আঃ)-কে এই স্বপ্নের কথা জানালে তিনি তা গোপন রাখতে বলেন এবং ভবিষ্যতে যে ইউসুফ (আঃ) নবী হবেন তার ইঙ্গিত দেন

                    সেই দশজন সৎভাই ইউসুফ ও বিন ইয়ামীনের প্রতি তাদের পিতার ভালোবাসা দেখে হিংসা করত। অথচ তারা বড় দল (বড় পরিবার মানে নিরাপত্তা ও আয়ের নিশ্চিততর উৎস, তাই তাদের আশা ছিল তারাই পিতার ভালোবাসার অধিক যোগ্য)। একদিন তারা ইউসুফ (আঃ)-কে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে পরিকল্পনা পাল্টে কুয়োয় ফেলে দিতে মনস্থির করে। তারা ইয়াকুব (আঃ) এর কাছে গিয়ে খেলাধুলার কথা বলে ইউসুফ (আঃ)-কে নিয়ে যেতে চায়। ইয়াকুব (আঃ) বলেন তাদের অসাবধানতায় নেকড়ে ইউসুফকে (আঃ) খেয়ে ফেলার ভয় তিনি করেন। ছেলেরা তাঁকে আশ্বস্ত করে জোর করে নিয়ে যায়। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে তারা ইউসুফের জামায় নকল রক্ত মাখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে আসে। বলে যে তারা ইউসুফকে মালপত্র হেফাজতের দায়িত্বে রেখে দৌড় প্রতিযোগিতা করার সময় নেকড়ে ইউসুফকে খেয়ে ফেলে। ইয়াকুব (আঃ) তাদের মিথ্যাচার বুঝতে পেরেও সবর করেন

                    এদিকে ইউসুফ (আঃ)-কে আল্লাহ দৃঢ় রাখেন, কুয়োর ভেতর তাঁকে জীবিত রাখেন। কোনো এক কাফেলা পানি তুলতে বালতি ফেললে তিনি তাতে করে উঠে আসেন। তারা তাঁকে দাস হিসেবে স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করে দেয়। মিশরের অর্থমন্ত্রী (উপাধি 'আযীয) তাঁকে ক্রয় করে ঘরে রাখেন এবং নিজের স্ত্রীকেও তাঁর ভালো রক্ষণাবেক্ষণ করতে বলেন

                    একসময় আযীযের স্ত্রী ইউসুফকে মন্দ কাজে আহ্বান করে। ইউসুফ (আঃ) এর মনেও মানবীয় দুর্বলতা আসার উপক্রম হলেও আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করেন। তিনি দরজার দিকে দৌড় দিলে আযীযের স্ত্রী তাঁকে ধরতে গিয়ে তাঁর জামা পেছন থেকে ছিঁড়ে ফেলে। এমন সময় আযীয চলে আসেন। আযীযের স্ত্রী ইউসুফের বিরুদ্ধে খারাপ কাজের অভিযোগ করে ভিক্টিম প্লে করতে থাকে

                    ইউসুফের (আঃ) জামা সামনে থেকে ছেঁড়া থাকলে বোঝা যেত তিনিই মন্দ কাজে আগে অগ্রসর হয়েছেন, নারীটি বাধা দিতে গিয়ে জামা ছিঁড়েছে। কিন্তু পেছনদিকে ছেঁড়া থাকায় আসল দোষী প্রকাশ পেয়ে যায়। আযীয ইউসুফের কাছে ক্ষমা চেয়ে স্ত্রীকে সাবধান করে পুরো বিষয় গোপন রাখতে চান

                    এদিকে ঘটনা চাউর হয়ে শহরের সম্ভ্রান্ত নারীদের মাঝে কানাকানি শুরু হয় যে আযীযের স্ত্রী তার দাসের প্রেমে পড়েছে। সে তা জানতে পেরে তাদের দাওয়াত করে ইউসুফকে কৌশলে সামনে আনায়। তাঁর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সেসব নারী ফল কাটতে গিয়ে নিজেদের হাত কেটে ফেলে। আযীযের স্ত্রী বলে এজন্যই সে তাঁকে ফুসলানোর চেষ্টা করেছিল। প্রত্যাখ্যান করার অপরাধে তাঁকে কারাগারে যেতে হবে। ইউসুফ (আঃ) দু’আ করেন এই গুনাহের পরিবেশের চেয়ে কারাগারই তাঁর অধিক প্রিয়

                    অবশেষে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। তাঁর সাথে আরো দুজন বন্দী ছিল। তারা ইউসুফের সুন্দর স্বভাব দেখে তাঁর কাছে নিজেদের দুটি স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চায়। তিনি এ সুযোগে তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দেন। তারপর স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানান যে তাদের একজন মুক্তি পেয়ে রাজার মদপরিবেশনকারীর চাকরি পাবে, আরেকজন মৃত্যুদণ্ড পাবে। যে মুক্তি পাবে সে যেন রাজার কাছে ইউসুফের জন্য সুপারিশ করে, এ কথা বলে দেন। কিন্তু লোকটি মুক্তি পাওয়ার পর সে কথা ভুলে যায়। ফলে ইউসুফ (আঃ) আরো কয়েক বছর কারাগারে থাকেন

                    রাজা এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে পরিষদবর্গের কাছে এর ব্যাখ্যা জানতে চান। তারা বলে এটা অর্থহীন। আর তাদের তো স্বপ্নের ব্যাখ্যার জ্ঞানও নেই। তখন মদপরিবেশনকারীর ইউসুফের (আঃ) কথা মনে পড়ে। তাকে পাঠানো হলে সে ইউসুফ (আঃ) এর কাছে হুবহু স্বপ্নের কথা তুলে ধরে। ইউসুফ (আঃ) আসন্ন সাত বছরের প্রাচুর্য ও পরের সাত বছরের দুর্ভিক্ষ এবং তা মোকাবেলার উপায় বলে দেন

                    রাজা ইউসুফের প্রজ্ঞার খবর পেয়ে তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ইউসুফ (আঃ) প্রথমে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাকারীদের সাক্ষ্য নিতে বলেন। আযীযের স্ত্রীসহ ওই মহিলাগুলো তাঁর নির্দোষিতা স্বীকার করে। এভাবে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করিয়ে তবেই তিনি জেল থেকে বের হন। বাকি ঘটনা পরের তারাবীহতে।

                    Comment


                    • #11
                      রামাদান - ১০



                      ১২। সূরা ইউসুফ, আয়াত ৫৩ থেকে ১১১

                      ইউসুফ (আঃ) সাক্ষ্য দেন যে দুর্বল মুহূর্তে আল্লাহই তাঁকে খারাপ কাজে প্রলুব্ধ হওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন, তাঁর নিজের কৃতিত্ব নেই

                      মিসরের বাদশাহ ইউসুফ (আঃ)-কে অর্থমন্ত্রী তথা 'আযীযে'র পদে ভূষিত করেন। এভাবে এক কালে সব হারানো ইউসুফকে আল্লাহ মহাসম্মানের স্থানে তুলে নেন

                      দুর্ভিক্ষ শুরু হলে রেশনের জন্য ইউসুফের ভাইয়েরা এলো। ইউসুফ তাদের চিনলেন, তারা তাঁকে চিনতে পারেনি। তাদের প্রত্যেককে উট বোঝাই মালসামানা দেওয়া হলো। পিতার দেখভালের জন্য ঘরে থাকা বিন ইয়ামীনের জন্যও তারা সামানা চাইলো। ইউসুফ (আঃ) বললেন ভাইকে সাথে করে আবার আসতে। তার আগে তাদের কিছু দেওয়া হবে না

                      ভাইয়েরা হতাশ হয়ে ফিরে গিয়ে ইয়াকুবকে (আঃ) বললো বিন ইয়ামীনকেও তাদের সাথে পাঠাতে। কিন্তু ইউসুফের সাথে ইতোপূর্বে তারা যা করেছে সেজন্য ইয়াকুব (আঃ) ভরসা পেলেন না। ভাইয়েরা তাদের মালপত্রে হাত দিয়ে দেখলো রেশন আনার জন্য তারা যেসব পণ্য নিয়ে গিয়েছিলো (তখন পণ্য বিনিময় প্রথা ছিলো), তা তাদের অজান্তে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে পরেরবার আবার সেগুলো নিয়ে যেতে পারে। তা দেখিয়ে তারা পিতাকে ভরসা দিলো। কথা দিলো এইবার নিরাপত্তার কোনো ব্যত্যয় করবে না। ইয়াকুব (আঃ) অনুমতি দিলেন। তাদের বললেন শহরের আলাদা আলাদা ফটক দিয়ে ঢুকতে। কারণ এগার ভাইয়ের দলকে দেখলে কারো বদনজর লাগতে পারে। তবে এ-ও বলে দেন যে বদনজর থেকে বাঁচানোর মালিক তো কেবল আল্লাহই

                      বিন ইয়ামীন সহ তারা মিশরে গেলে ইউসুফ (আঃ) তাঁর ভাইকে নিজের কাছে রাখার ইচ্ছা করলেন। একটি পানপাত্র গোপনে তিনি বিন ইয়ামীনের সামানার সাথে রাজার একটি পানপাত্র রেখে দিলেন। পানপাত্র হারানোর খবর চাউর হওয়ার পর লোকেরা ইউসুফের ভাইদের চোর সাব্যস্ত করলো। তারা অস্বীকার করলো। জিজ্ঞেস করা হলো তাদের কাছে চুরির মাল পাওয়া গেলে কী করা হবে। তারা ইয়াকুব (আঃ) এর শরিয়ত অনুযায়ী বললো যে শুধু চোরকে পণ্যের মালিক বন্দী করে রাখবে, বাকিদের ছেড়ে দিবে (মিশরের রাজার আইন/শরিয়ত অনুযায়ী এত সহজে ইউসুফ ভাইকে নিজের কাছে রাখতে পারতেন না)। তল্লাশীর পর বিন ইয়ামীনের সামানার ভেতর পানপাত্রটি পাওয়া গেলো। অন্য ভাইয়েরা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বললো, তার ভাইও (ইউসুফ) তো এরকম একবার চুরি করেছিলো। ইউসুফ (আঃ) তাদের কিছু বললেন না

                      পিতার কাছে এত কঠিন প্রতিজ্ঞা করার পর বিন ইয়ামীনকে ছাড়া ফিরতে সংকোচ লাগায় ভাইদের মাঝে সবার বড়জন মিশরে থেকে যায়। বাকিরা গিয়ে ইয়াকুব (আঃ)-কে সব ঘটনা জানায়। ইয়াকুব (আঃ) কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে যান। অতঃপর ছেলেদের বলেন ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করতে, আশা না হারাতে। আল্লাহর রহমত থেকে কাফিররাই কেবল হতাশ হয়

                      ভাইয়েরা আবার মিশরে ফিরে গিয়ে মালসামানার জন্য অনুনয় করে। ইউসুফ (আঃ) তাদের সামনে নিজ পরিচয় প্রকাশ করেন। ভাইয়েরা অনুতপ্ত হয়। তিনি তাদের সকলকে ক্ষমা করে দেন। তিনি ভাইদের বলেন পিতামাতাকে সহ মিশরে নিয়ে আসতে। সাথে তিনি নিজের একটি জামা দেন, যা ইয়াকুব (আঃ) এর চোখে রাখলে আল্লাহর ইচ্ছায় মুজিযাস্বরূপ চোখ ভালো হয়ে যাবে

                      তারপর পিতামাতাকে সহ ভাইয়েরা সবাই ইউসুফ (আঃ) এর কাছে ফিরে আসে। ইউসুফ পিতামাতাকে সম্মানের আসনে বসান। তারা সকলে ইউসুফ (আঃ) এর সামনে সেজদা করেন, কারণ পূর্ববর্তী নবীদের শরিয়তে এমন সম্মানসূচক সেজদা জায়েয ছিলো। এভাবে সূরার শুরুতে ইউসুফ (আঃ) এর দেখা স্বপ্ন সত্যি হয়। ইউসুফ (আঃ) আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানান

                      পরিশেষে আল্লাহ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মুমিনদের সান্ত্বনা দেন। ইউসুফ (আঃ) এর মতোই দীর্ঘ সময়ে দুঃখকষ্টে থাকা লাগলেও মুমিনরা শেষমেশ জয়ীই হবে । কাফিররা যে আল্লাহর উপর ঈমান আনার পাশাপাশি শির্কও করে, তা তিরস্কার করা হয়। প্রতি যুগেই এমন হয়েছে যে নবীর শত্রুরা আযাব আসতে দেরি দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে। কিন্তু ঠিকই শেষ পর্যন্ত তারা ধ্বংস হয়েছে


                      ১৩। সূরা রাদ, আয়াত ১ থেকে ৪৩

                      সূরা রা'দে আল্লাহর বিভিন্ন সৃষ্টির প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাওহীদের প্রমাণ দেখানো হয়েছে। খুঁটিবিহীন আসমান, চাঁদ, সূর্যের আবর্তন, বিস্তীর্ণ পৃথিবী, নদনদী, জোড়ায় জোড়ায় মাখলুক, পাশাপাশি অবস্থিত বৈচিত্র্যময় ভূখণ্ড, উদ্ভিদবৈচিত্র্য সৃষ্টিকারীর জন্য আখিরাতে পুনরায় সৃষ্টি কঠিন কিছু নয়

                      মাতৃগর্ভে যা বাড়েকমে, দিনেরাতে যে যা প্রকাশ্যে ও গোপনে বলে- সবই আল্লাহর জ্ঞানের আয়ত্তাধীন

                      আল্লাহ বিজলি চমক দিয়ে আশা ও ভীতি উভয়ই প্রদর্শন করেন। বজ্রনির্ঘোষ ও ফেরেশতাগণ তাঁরই প্রশংসা করে

                      আল্লাহ ছাড়া অন্য সৃষ্টির কাছে দুআ করাটা যেন পানির নিকট দুআ করার মতো, যাতে তা আপনাআপনিই মুখে চলে আসে। (এদিক দিয়ে মুশরিকদের মূর্তিপূজা ও নাস্তিকদের বস্তুপূজা একইরকম)
                      সকল কিছুই স্বেচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে আল্লাহর আনুগত্য করে

                      বাতিল মতাদর্শ ফেনার মতো উপচে পড়া অস্থায়ী জিনিস। আর হক হলো জমিনে থেকে যাওয়া উপকারী ও স্থায়ী বস্তু

                      আখিরাতে কাফিররা দুনিয়ার সমস্ত সম্পদের কয়েকগুণ মুক্তিপণ দিয়ে হলেও শাস্তি থেকে বাঁচতে চাইবে, কিন্তু তা সম্ভব হবে না

                      মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো অঙ্গীকার ও চুক্তি রক্ষা করা, আল্লাহর নির্দেশিত সম্পর্কগুলো রক্ষা করা, সবর করা, সালাত কায়েম, আল্লাহর দেওয়া রিযক থেকে গোপন ও প্রকাশ্যে দান, দুর্ব্যবহারের বিপরীতে সদাচরণ করা। এরা আত্মীয়পরিজন সহ জান্নাতে যাবে। এর বিপরীতকারীরা জাহান্নামি

                      আল্লাহর স্মরণেই (যিকর) অন্তরসমূহ প্রশান্তি পায়

                      কাফিররা মুজিযা দেখলে ঈমান আনবে বলে যে মিথ্যা দাবি করে, তার অসারতা দেখানো হয়। মুমিনরাও ভাবতো এসকল কাফিরের উপর আযাব আসছে না কেন। বলা হয়, দুনিয়ায় তো এদের উপর ছোটখাটো বিপদ আসছেই, আর আখিরাতের শাস্তি তো আরো কঠিন। শির্ক কুফরের প্রতিপত্তি চারদিক থেকে সংকুচিত হয়ে আসছে

                      মুশরিকরা মাটির মূর্তি বানিয়ে কল্পিত নাম আরোপ করে তার পূজা করে। আহলে কিতাবরা আল্লাহর কিতাবের কিছু অংশ মানতে অস্বীকার করে। এ সকল প্রকার শির্ককে তিরস্কার করা হয়েছে


                      ১৪। সূরা ইবরাহীম, আয়াত ১ থেকে ৫২

                      সূরা ইবরাহীমেও ইসলামের মৌলিক আকিদা বিশ্বাস আলোচিত হয়েছে। আখিরাতের উপর দুনিয়াকে প্রাধান্যদানকারী ও দ্বীনের মাঝে বক্রতা অনুসন্ধানকারীদের তিরস্কার করা হয়েছে

                      নূহের (আঃ) জাতি, আদ, সামূদ, ফিরআউনের অবাধ্যতা ও পরিণতির কথা স্মরণ করানো হয়েছে। তাদের কাছে প্রেরিত নবীগণও মানুষই ছিলেন। কাফিররা দুনিয়ায়ও ধ্বংস হয়, ফলে ঈমানদাররা জমিনে প্রতিষ্ঠা পায়।

                      জাহান্নামে কাফিরদের গলিত পুঁজ ভক্ষণ করানো হবে, পোশাক হবে আলকাতরার, মুখ আগুনে আচ্ছন্ন হবে। মৃত্যু তাদের চারদিক থেকে এগিয়ে আসবে, কিন্তু তারা মরবে না। তাদের দুনিয়ার সব কাজ ছাইয়ের মতো, যা ঝড়ে উড়ে গেছে, কোনো লাভ হয়নি

                      কাফিররা তাদের নেতাদেরকে আখিরাতে বলবে তাদের জন্য কিছু করতে। নেতারা অপারগতা প্রকাশ করবে। তাদেরকে সুন্দর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুলিয়ে রাখা শয়তানও সেদিন তাদের থেকে দায়মুক্তি ঘোষণা করবে। সে তো কেবল ভ্রান্ত পথের দিকে ডেকেছিলো, কাউকে জোর করেনি। আজ সেও কাউকে শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারবে না, তাকেও কেউ বাঁচাবে না

                      পবিত্র বাক্য বা কালিমা তাইয়্যিবাহ হলো পবিত্র গাছের মতো, যার মূল দৃঢ়ভাবে প্রোথিত, ডালপালা আসমানে উত্থিত, প্রতিপালকের নির্দেশে অহরহ ফল দেয়। আর অপবিত্র বাক্য বা কুফরি কথাবার্তা হলো অপবিত্র গাছের মতো, যাকে উপড়ে ফেলা হয়েছে

                      সূর্য-চন্দ্র, নদী-নালা, যানবাহনকে আল্লাহ আমাদেট অধীন করে দিয়েছেন যেন আমরা তাঁরই ইবাদাত করি

                      ইবরাহীম (আঃ) এর বংশধর হিসেবে আরবরা গর্ব করতো। অথচ তিনি শির্ক ও মূর্তিপূজা ঘৃণা করতেন, সন্তানরাও যাতে এ থেকে বেঁচে থাকে সেই দুআ করেছেন। হাজেরা (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ)-কে তিনি আল্লাহর আদেশে এই ভূমিতে রেখে গেছেন যেন তারা সালাত কায়েম করে। তাই আল্লাহ এই বিরানভূমিতে তাঁদেরকে উত্তম রিযক দিয়েছেন। ইবরাহীম (আঃ) সকল মুমিনের মাগফিরাতের দুআ করেন

                      কিয়ামতের দিন কাফিররা আরেকটু অবকাশ চাইবে কিন্তু তাদের তা দেওয়া হবে না

                      ১৫। সূরা হিজর, আয়াত ১

                      ...

                      Comment


                      • #12
                        রামাদান - ১১



                        ১৫। সূরা হিজর, আয়াত ২ থেকে ৯৯

                        কিয়ামাতের দিন কাফিররা আফসোস করবে তারা যদি ঈমানদার হয়ে যেতো। দাওয়াহ দেওয়ার পরও দুনিয়ায় তারা ভ্রান্তিতে পড়ে থাকতে চাইলে তাদের সেভাবেই ছেড়ে দিতে বলা হয়

                        কাফিররা রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উন্মাদ বলতো। আল্লাহ জানিয়ে দেন যে পূর্ববর্তী নবীদেরও এসব বলা হতো। কাফিরদের জন্য আসমানের দরজা খুলে দিয়ে তাতে চড়ার অনুমতি দিলেও তারা সেটাকে জাদু বলে অস্বীকার করে বেঈমানই থাকতো

                        আসমান-জমিনে আল্লাহ সকল মাখলুকের জন্য যে বিপুল রিযক ছড়িয়ে রেখেছেন, তা স্মরণ করানো হয়

                        ঠনঠনে মাটি থেকে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি থেকে শুরু করে ইবলীসের অহংকার করে বিতাড়িত হওয়া পর্যন্ত কাহিনী বর্ণিত হয়। ইবলীস সকল মানুষকে পথভ্রষ্ট করার হুমকি দেয়। কিন্তু আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদেরকে যে সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে টলাতে পারবে না, তা নিজেই স্বীকার করে

                        শয়তানের অনুসারীদের একেকদল জাহান্নামের সাত দরজার একেকটা দিয়ে ঢুকবে। আর মুত্তাকীরা জান্নাতে থাকবে যেখানে তাদের মনের দুঃখকষ্ট সব দূর করে দেওয়া হবে, সকলে মিলেমিশে থাকবে
                        ইবরাহীম (আঃ) এর ঔরসে বৃদ্ধ বয়সে ইসহাক (আঃ) এর জন্মের সুসংবাদ আনয়নকারী ফেরেশতাদের কাহিনী বর্ণিত হয়। সেখান থেকে এই ফেরেশতারা লূত (আঃ) এর কওমের নিকট আযাব নিয়ে যান। এছাড়া শুআইব (আঃ) এর কওমও আযাবে ধ্বংস হয়। উভয় কওমের বাসস্থানই (সাদ্দুম ও মাদায়েন) মানুষের চলাচলের পথের পাশে। মানুষ যেন এসব দেখে শিক্ষা নেয় যে আল্লাহর অবাধ্যতার পরিণাম কী হয়। আর সামূদ জাতির বাসস্থান ছিলো হিজর, যেখানে তারা পাহাড় কেটে সুদৃঢ় বসতি বানিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে আল্লাহর নাফরমানি করতো। আযাবে ধ্বংস হওয়ার সময় এসব ঘরবাড়ি তাদের কোনো কাজে আসেনি

                        কাফিরদের দুনিয়ার ভোগবিলাসের উপকরণকে পরোয়া না করতে, মুমিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে, প্রকাশ্যে দাওয়াহ দিতে, মুশরিকদের পরোয়া না করতে, আল্লাহর হামদ ও তাসবীহ পাঠ করতে এবং মৃত্যু পর্যন্ত ইবাদাত করে যেতে বলা হয়


                        ১৬। সূরা নাহল, আয়াত ১ থেকে ১২৮

                        মুসলিমদের বিজয় ও কাফিরদের পরাজয়ের ভবিষ্যৎবাণী শুনে কাফিররা ঠাট্টা করতো। সূরা নাহলের শুরুতে সে অবশ্যম্ভাবী ভবিষৎবাণী শক্তভাবে পুনঃব্যক্ত করা হয়েছে। সামান্য শুক্রবিন্দু হতে সৃষ্ট মানুষ কীভাবে একসময় প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী হয়ে যায়, তা তিরস্কার করা হয়েছে

                        মানুষের প্রতি আল্লাহর বিবিধ নিয়ামাতের কথা স্মরণ করানো হয়েছে ও তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে বলা হয়েছে। পালিত পশু, বৃষ্টি, উদ্ভিদ, ফসল, রাতদিনের আবর্তন, চাঁদ, সূর্য, নক্ষত্র দ্বারা পথ চেনা, সমুদ্র তলের খাদ্য ও ধনভাণ্ডার, নৌযান ইত্যাদি নিয়ামাত গুনে শেষ করা যাবে না। সবই আল্লাহর দান, মিথ্যা উপাস্যরা এর কিছুই সৃষ্টি করেনি

                        কাফির নেতা ও অনুসারীদের আখিরাতের পরিণতির কথা বলা হয়েছে। পূর্ববর্তী জাতিসমূহের কাফিররাও একইরকম অবাধ্যতা করতো, ফলে অপ্রস্তুত অবস্থায় তাদের উপর আযাব চলে আসতো

                        জান কবজ করার সময় কাফির ও মুত্তাকীদের অবস্থার পার্থক্য বর্ণিত হয়েছে। উল্লেখ্য, এসব জায়গায় কাফিরদের অহংকারী বৈশিষ্ট্যের কথা বারবার উল্লেখিত হয়েছে

                        জমিনে বিচরণ করে দেখতে বলা হয় নবীদের অস্বীকারকারী জাতিসমূহের কী অবস্থা হয়েছিলো। তাদের কাছে মানুষদেরকেই নবী করে পাঠানো হতো

                        কাফিররা আখিরাতের অস্তিত্ব অসম্ভব মনে করে। অথচ আল্লাহ কোনোকিছু হওয়ার হুকুম করলেই তা হয়ে যায়

                        আল্লাহর আযাব অকস্মাৎও আসতে পারে, ক্রমশও আসতে পারে

                        আল্লাহর রাস্তায় কাজ করতে গিয়ে নিপীড়িত হয়ে নিজ ভিটেমাটি থেকে হিজরত করা লোকদের দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম রিযকের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়

                        সকল প্রাণী ও ফেরেশতা আল্লাহকেই সিজদাহ করে। সকল নিয়ামাত আল্লাহর দেওয়া। বিপদে পড়লেও মানুষ তাঁকেই ডাকে। আল্লাহ বিপদ দূর করে দিলে এরাই আবার শির্ক করে

                        কাফিররা কিছু ফেরেশতা ও দেবীদের আল্লাহর কন্যা বলতো। অথচ নিজেদের কন্যাসন্তান হলে কোথায় মুখ লুকাবে না একে মাটিতেই পুঁতে ফেলবে এ নিয়ে অস্থির হয়ে পড়তো

                        মৃতভূমিতে বৃষ্টির মাধ্যমে প্রাণসঞ্চারের মাঝে আখিরাত অস্বীকারকারীদের জন্য চিন্তার খোরাক দেওয়া হয়

                        আল্লাহর দেওয়া গবাদি পশু, ফল ও মৌমাছি থেকে প্রাপ্ত পানীয় এবং স্ত্রী-সন্তানের নিয়ামাত স্মরণ করানো হয়

                        মানুষ নিজেরাই দাসদাসীদের এমনভাবে দান করে না যাতে দাস-মনিব সমান হয়ে যায়। অথচ আল্লাহর দাসদের ঠিকই আল্লাহর সাথে শরীক করে

                        মুশরিকরা কুযুক্তি দিতো যে দুনিয়ার কোনো বাদশাহ একা একা রাজ্য চালায় না, আল্লাহও বিভিন্ন দায়িত্ব সেরকমভাবে দেবদেবীদের হাতে ন্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তাঁর বিভিন্ন সৃষ্টির সক্ষমতার মাঝে পার্থক্য দেখিয়ে প্রমাণ করে দেন যে সৃষ্টিকূলের মাঝেই এত পার্থক্য থাকলে স্রষ্টার (আল্লাহ) সাথে সৃষ্টির (দুনিয়ার বাদশাহ) তুলনা নিতান্ত বোকামি

                        ভাসমান পাখি, মানুষের স্থায়ী ঘর, পশুর চামড়া থেকে তৈরি অস্থায়ী ঘর, অন্যান্য অঙ্গ থেকে পাওয়া তৈজসপত্র, গাছ-পাহাড়ের ছায়া, খনিজ থেকে বানানো বর্ম ইত্যাদি নিয়ামাত স্মরণ করানো হয়

                        কিয়ামাতের দিন নবীগণ তাঁদের উম্মাহর কাফিরদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন। কাফিররা সেদিন তাদের মিথ্যা উপাস্যদের গালাগাল করতে থাকবে

                        মুমিনদের জীবনে অবশ্য অনুসরণীয় কিছু গুণাবলীর কথা বলা হয়। ন্যায়বিচার ও দয়া করা, আত্মীয়ের হক প্রদান, অশ্লীলতা ও জুলুম না করা, অঙ্গীকার পূর্ণ করা

                        কুরআন পড়ার সময় আ'উযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজীম পড়ার হুকুম করা হয়

                        কোনো আয়াত বা বিধান রহিত করে নতুন আয়াত বা বিধান আনয়নের হিকমত বর্ণিত হয়েছে

                        মুশরিকরা অপবাদ দিতো যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে অমুক ব্যক্তি কুরআন শিখিয়ে দেয়। অথচ ওই ব্যক্তি নিজেই এক আরবি না জানা অনারব

                        স্বেচ্ছায় কুফরিকারীদের আযাবের কথা বলা হয়েছে। যাদেরকে নিপীড়ন করে মুখে কুফরি কথা বলতে বাধ্য করা হয়েছে, তাদের কথা আলাদা। নিপীড়িত হওয়ার পর হিজরত ও জিহাদ করা ব্যক্তিদের মাগফিরাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে

                        আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মনগড়া হালাল-হারামের বিধান নাকচ করে প্রকৃত হালাল-হারামের বিধান এবং অপারগ অবস্থার বিধান বর্ণিত হয়েছে

                        আহলে কিতাব ও আরব মুশরিক- সকলের সম্মানের পাত্র ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন বিশুদ্ধ তাওহীদবাদী

                        উত্তম পন্থায় দাওয়াহ প্রদানের নিয়ম বর্ণিত হয়। জুলুমের সমপরিমাণ প্রতিশোধ নেওয়া বা ক্ষমা করার বিধান ও ফজিলত বর্ণিত হয়

                        Comment


                        • #13
                          রামাদান - ১২



                          ১৭। সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত ১ থেকে ১১১

                          সূরা বনী ইসরাইলের শুরুতে ইসরা-মিরাজের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহর ক্ষমতা এমনই যে তিনি তাঁর বান্দাকে এক রাতের কিছু অংশে এতদূর ভ্রমণ করান

                          বনী ইসরাইল তাদেরই বংশধর যারা নূহ (আঃ) এর সাথে নৌকায় ছিলো। অথচ তারা নূহের মতো শোকরগুজার না হয়ে ফাসাদ সৃষ্টিকারী হয়েছে। এর ফলে তাদের উপর দুইবার দুইজন প্রতাপশালী জালিম শাসক চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। শেষ নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি ঈমান না এনে আবারও ফাসাদ করলে আবারও একই পরিণতি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়

                          যেভাবে কল্যাণ চাওয়ার কথা, সেভাবে কাফিররা দ্রুত আযাব দেখতে চায় নিদর্শন হিসেবে। অথচ সৃষ্টিজগতেই হাজারো নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। দুনিয়ার রিযিক মুমিন-কাফির সকলের জন্য উন্মুক্ত, আর আখিরাত শুধু মুমিনদের জন্য। তাই দুনিয়াবি প্রাচুর্য থাকা মানেই হকপন্থী হওয়া নয়

                          পিতামাতা, আত্মীয়, মুসাফির, অভাবী, ইয়াতীমের হক আদায়, কৃপণতা ও অপচয়ের মাঝামাঝি পথ অবলম্বন, ব্যভিচারের নিকটে না যাওয়া, লোক না ঠকানো, অন্যায় হত্যা না করা, যাচাই না করে গুজব না ছড়ানো, অহংকার না করা, সর্বোপরি তাওহীদ আঁকড়ে ধরার হুকুম বর্ণিত হয়

                          একাধিক ইলাহ থাকলে তারা পরস্পর দ্বন্দ্বে জড়িয়ে জগত বিশৃঙ্খল করে দিতো

                          প্রথমবার যিনি সৃষ্টি করেছেন, দ্বিতীয়বার আখিরাতে সৃষ্টি করা তাঁর জন্য কঠিন কিছু নয়

                          উত্তম কথা বলার হুকুম করা হয়। শয়তান খারাপ কথার মাধ্যমে ঝগড়া বিবাদ লাগায়

                          মুশরিকরা কিছু জিন ও ফেরেশতাকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছিলো। অথচ এসকল মাখলুক নিজেরাই আল্লাহর অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী

                          পূর্বেকার জাতিসমূহ স্পষ্ট মুজিযা দেখেও কুফরি করে আযাব তরান্বিত করতো। যেমন সামুদ জাতি পাহাড় থেকে বের হওয়া উটনী দেখেও সোজা হয়নি

                          আদম (আঃ) সৃষ্টি ও সেজদা করতে অবাধ্য ইবলীসের অহংকারের কাহিনী বিধৃত হয়। ফলে শয়তান অঙ্গীকার করে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার। তাকে কিয়ামাত পর্যন্ত আয়ু দিয়ে তার সকল বাহিনী নিয়ে চেষ্টা করার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু আল্লাহর খাঁটি বান্দাদের তিনি নিজেই রক্ষা করবেন

                          বিপদে পড়লে মানুষ সব উপাস্য ভুলে কীভাবে আল্লাহকে ডাকে, উদ্ধার পাওয়ার পর আবার কীভাবে শির্কে লিপ্ত হয়, তা নৌযানে সফরকালীন ঝড়ের উদাহরণ দিয়ে বোঝানো হয়েছে
                          আখিরাতের বিচারে কারো প্রতি জুলুম করা হবে না

                          পূর্ববর্তী নবীদের শত্রুদের মতোই মক্কার মুশরিকরাও ফিকিরে আছে রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এখান থেকে বের করে দিবে। অথচ এমনটা করার পর নবীর শত্রুরা নিজেরাও বেশিদিন নিজ জনপদে থাকতে পারে না। বাস্তবেও মক্কার মুশরিকদের এই পরিণতিই হয়েছিলো

                          পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও তাহাজ্জুদের গুরুত্ব বর্ণিত হয়

                          সত্য সমাগত, মিথ্যা দূরীভূত। কুরআন মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও হিদায়াত। আর জালিমদের এর দ্বারা ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়

                          রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো। আল্লাহ জানিয়ে দেন রুহ হলো আল্লাহর হুকুম, যার বিস্তারিত জ্ঞান মানুষকে দেওয়া হয়নি

                          মুজিযা দেখতে চেয়ে কাফিররা যেসব আজগুবি দাবি করে সেগুলো খণ্ডন করা হয়েছে। নবী কেন ফেরেশতা না হয়ে মানুষ হলো এ নিয়েও তারা আপত্তি তোলে। এছাড়া এরা এত কৃপণ যে, আল্লাহর রহমতের ভাণ্ডার এদের হাতে থাকলেও তারা খরচ হয়ে যাওয়ার ভয়ে কৃপণতা করতো। জাহান্নামে এদের জন্য নির্ধারিত আযাবের বর্ণনা দেওয়া হয়

                          মূসা (আঃ) এর কওমের বিরুদ্ধে ফিরআউনের ষড়যন্ত্র ও এর পরিণতি বর্ণিত হয়

                          কুরআনকে অল্প অল্প করে নাযিল করার হেকমত বর্ণিত হয়

                          জ্ঞানীরা কুরআন শুনে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে রবের প্রশংসা ঘোষণা করে ও বিনয়ী হয়

                          সালাতে মধ্যম স্বরে কুরআন তিলাওয়াত করতে বলা হয়। আল্লাহর আসমাউল হুসনা সম্পর্কে বলা হয়


                          ১৮। সূরা কাহফ, আয়াত ১ থেকে ৭৪

                          সূরা কাহফে চারটি কাহিনী বর্ণিত হয়েছে যা জীবনমরণ, সম্পদ, জ্ঞান ও ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে আল্লাহর উপর ঈমান রাখা বিষয়ক। উল্লেখ্য দাজ্জাল এসকল বিষয়েই ফিতনা ছড়াবে
                          প্রথম কাহিনীটি গুহাবাসী যুবকদের বা আসহাবুল কাহফের। তারা ছিলো বিশুদ্ধ তাওহীদবাদী। কিন্তু তারা যে রাজ্যে থাকতো, তার বাদশাহ ও জনগণ ছিলো মুশরিক। তাদের পক্ষ থেকে অত্যাচার ও কুফরের দাওয়াতের ভয় ছিলো। যুবকেরা এই সমাজের সাথে কোনো আপোষ না করে একটি গুহায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। তাদের সাথে তাদের এক পোষা কুকুর ছিলো। সেই গুহার ভেতর আল্লাহ তাদের ঘুম পাড়িয়ে দেন আর কুকুরটি পাহারার ভঙ্গিতে গুহামুখে বসে থাকে

                          এ অবস্থায় ৩০৯ বছর পেরিয়ে যায়। এরপর তারা জেগে উঠে অনুমান করার চেষ্টা করে তারা কতদিন ঘুমিয়ে ছিলো। তাদের মধ্যকার একজনকে কিছু টাকা দিয়ে তারা সাবধানে কোথাও থেকে হালাল খাবার আনতে পাঠায়। ততদিনে সেই এলাকায় তাওহীদপন্থী সাচ্চা ঈমানদার বাদশাহ ও জনপদ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। খাবার কিনতে আসা যুবকের কাছে ৩০০ বছর আগের মুদ্রা দেখে সব কাহিনী খোলাসা হয়ে যায়। এতে ওইসকল যুবক ও জনপদের লোকেদের উভয় পক্ষের ঈমান বেড়ে যায়। এর অল্পসময় পরেই যুবকেরা মারা যায় এবং জনপদের লোকেরা তাদের অত্যন্ত সম্মান দেখায়। জীবন দিয়ে হলেও কুফরের সাথে আপোষ না করা এবং আখিরাতের পুনরুত্থানের একটি নমুনা এখান থেকে জানা যায়। কিন্তু যাদের মূল শিক্ষার দিকে ঝোঁক নেই, তারা যুবকদের সংখ্যা, কুকুরের গায়ের রঙ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণায় লিপ্ত হবে

                          কাফিররা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসারীদের মাঝে গরীব লোকদের দেখে বলতো এদেরকে সরিয়ে তাদের মতো সম্ভ্রান্তদের জায়গা করে দিতে। তাহলে তারা ঈমান আনবে। আল্লাহ দুই বাগানমালিকের কাহিনীর উপমা দেন। উভয়েরই উর্বর বাগান ছিলো, তবে একজনেরটা একটু বেশি। সে নিজ সম্পদ নিয়ে অহংকার করতো, আখিরাত অস্বীকার করতো। অপরজন তাকে অহংকার ত্যাগ করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে বলে, অন্যথায় কোনো আযাব চলে আসতে পারে। এমতাবস্থায় একদিন কোনো এক দুর্যোগ এসে ওই অহংকারীর সব ফসল নষ্ট করে ফেলে। মুমিন-কাফির উভয়ই দুনিয়ায় কিছু না কিছু রিযক পায়। কিন্তু আখিরাতে কাফিরের সব উপার্জন এভাবে নিষ্ফল হয়ে যাবে। নিজ আমলনামা দেখে গুনাহহাররা ভাববে হায় এ কেমন আমলনামা! এ যে ছোট বড় কোনো কিছুই বাদ দেয়নি

                          মূসা (আঃ)-কে একবার এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেছিলো সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে। সংশ্লিষ্ট যুগের নবীর চেয়ে যেহেতু কারো জ্ঞান বেশি হয় না, মূসা (আঃ) অহংকার ছাড়াউ জবাব দেন যপ তিনিই সবচেয়ে জ্ঞানী। এ উত্তর আল্লাহর পছন্দ না হওয়ায় তিনি মূসা (আঃ)-কে তাঁর আরেক জ্ঞানী বান্দা খাযির (আঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করাতে চান। মূসা (আঃ) জ্ঞান লাভের আগ্রহে সেদিকে যাত্রা করেন। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন ইউশা (আঃ)। কথা ছিলো তাঁদের সঙ্গে থাকা মাছ যেখানে হারিয়ে যাবে, সেখানেই খাযির (আঃ) এর দেখা পাওয়া যাবে। এক জায়গায় তাঁরা বিশ্রাম নিতে গেলে মাছটি সমুদ্রে সুড়ঙ্গ মতো পথ করে চলে যায়। ইউশা (আঃ) এ কথা মূসা (আঃ)-কে বলতে ভুলে যান

                          সামনে কিছুদূর পথ চলার পর মূসার (আঃ) ক্ষিদে পায়। সেসময় ইউশা (আঃ) এর সেই মাছের কাণ্ড মনে পড়ে। মূসা (আঃ) বুঝতে পারেন কাঙ্ক্ষিত জায়গা তাঁরা ফেলে এসেছেন। সেখানে ফিরে গিয়ে তাঁরা খাযির (আঃ) এর দেখা পান। মূসা (আঃ) জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর সঙ্গী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। খাযির (আঃ) বললেন যে মূসা (আঃ) তাঁর সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবেন না। মূসা (আঃ) ধৈর্য ধরার প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁরা একসাথে চলতে শুরু করেন। তাঁরা একটি নৌকায় কিছু পথ যান। খাযির (আঃ) নৌকাটি ফুটো করে দেন। কিছুদূর গিয়ে একটি বালককে হত্যা করেন। উভয় ঘটনায়ই মূসা (আঃ) ধৈর্য হারিয়ে প্রশ্ন করে বসেন। কাহিনীর বাকি অংশ পরের তারাবীহতে আসছে ইনশাআল্লাহ

                          Comment


                          • #14
                            রামাদান - ১৩



                            ১৮। সূরা কাহফ, আয়াত ৭৫ থেকে ১১০

                            আরো কিছুদূর যাওয়ার পর খাযির (আঃ) ও মূসা (আঃ) এমন এক জনপদে যান, যেখানকার লোকজন তাঁদের ভালো সমাদর করেনি। খাযির (আঃ) সেখানকার একটি পতনোন্মুখ প্রাচীর মেরামত করে দেন। মূসা (আঃ) আবারও অবাক হন যে পারিশ্রমিক ছাড়া তিনি এ কাজ করে দিলেন (অথচ কিছু আগে তাঁদের উপকার করা একটা নৌকাকে ফুটো করে দিলেন)

                            খাযির (আঃ) বলেন এবার আর তিনি মূসাকে (আঃ) তাঁর সাথে রাখবেন না। কারণ প্রতিজ্ঞা করার পরও তিনি তিনটি ঘটনায়ই ধৈর্য হারিয়ে প্রশ্ন করে বসেছেন। এবার খাযির (আঃ) তিনটি ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। এক অত্যাচারী রাজা ছিলো, যে ভালো নৌকা দেখলে তা নিয়ে নিতো। তাই তিনি সেই নৌকাটিকে ত্রুটিপূর্ণ করে দিয়েছিেন। এছাড়া যে বালকটিকে হত্যা করলেন, সে বড় হয়ে তার মুমিন পিতামাতাকে ফিতনায় ফেলতো। এখন তার বদলে আল্লাহ একটি উত্তম সন্তান দেবেন

                            আর সেই প্রাচীরের নিচে দুজন ইয়াতীমের সম্পদ আছে। প্রাচীর ভেঙে গেলে এলাকার দুষ্ট লোকেরা তা পেয়ে যাবে। এখন প্রাচীর মেরামত করে দেওয়ায় ইয়াতীমদ্বয় বড় হয়ে তাদের পাওনা খুঁজে নিতে পারবে। এসব জ্ঞান ওয়াহী বা ইলহামের মাধ্যমে আল্লাহ খাযিরকে দিয়েছেন। মূসা (আঃ) তখন বুঝতে পারেন আল্লাহ কাউকে না কাউকে মূসার চেয়েও বেশি জ্ঞান দিয়েছেন

                            তারপর সমগ্র বিশ্ব শাসনকারী মুসলিম বাদশাহ যুলকারনাইনের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। তিনি পশ্চিম দিক পর্যন্ত অনেক রাজ্য অধিকার করেন। সেখানকার কুফরিকারী ও ঈমানদার লোকদের সাথে যথাযথ আচরণ করেন। তারপর পূর্বদিকে অভিযাত্রা করে এমন এক জনপদে পৌঁছান, যাদের সূর্য থেকে আড়াল নিতে পারার কোনো উপায় নেই

                            তারপর আরেকদিকে অভিযাত্রা করেন। এমন জনপদের দেখা পান যারা ইয়াজুজ মাজুজের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। তাদের অনুরোধে তিনি কোনো ট্যাক্স ছাড়াই লোহা-তামার এক সুদৃঢ় প্রাচীর গড়ে দেন। অবশ্য সে জাতির লোকেরা শ্রম দিয়ে সহায়তা করে। ফলে ইয়াজুজ মাজুজের আক্রমণ বন্ধ হয়ে যায়। তবে যুলকারনাইন অহংকার না করে বলেন যে আল্লাহ যতদিন চাইবেন, ততদিনই এ প্রাচীর থাকবে। উল্লেখ্য কিয়ামাতের আগে ইয়াজুজ মাজুজ মুক্ত হয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাবে

                            পূর্বেকার উম্মাতদের এসকল কাহিনী বর্ণনা করা আহলে কিতাবদের নিকট এটা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট যে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সত্য নবী, কারণ তারা ছাড়া অন্য কোনো আরব এসব জানতো না। আখিরাতে অবিশ্বাসী কাফিররা ভাবে তারা অনেক ভালো কাজ করছে। কিন্তু তাদের কুফরের কারণে সেগুলো আখিরাতে ওজনই করা হবে না। আর ঈমানদার ও নেক আমলকারীরা জান্নাতে থাকবে

                            আল্লাহর যাত ও সিফাতের কথা লিখার জন্য যদি সকল সাগর কালি হয়ে যায়, তাতেও সব লেখা শেষ হবে না। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের মতোই মানুষ, পার্থক্য হলো তাঁর কাছে রবের নিকট হতে ওয়াহী আসে


                            ১৯। সূরা মারইয়াম, আয়াত ১ থেকে ৯৮

                            সূরা মারইয়ামে পূর্বেকার কয়েকজন নবীর কাহিনী বর্ণিত হয়। মুসলিমদের নিকট এসব বিষয়ের জ্ঞান খ্রিষ্টানদের কাছে, বিশেষ করে হাবশার খ্রিষ্টানদের কাছে এগুলো প্রমাণ করে যে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সত্য নবী

                            যাকারিয়া (আঃ) অনেক বৃদ্ধ হয়ে যান। কিন্তু নিজ সন্তান না থাকায় ও চাচাত ভাইয়েরা অযোগ্য হওয়ায় তিনি আশংকা করেন তাঁর নবুওয়তি মিশন জারি রাখার মতো লোক থাকবে না। আল্লাহর কাছে দুআ করলে আল্লাহ তাঁকে এ বয়সেও সন্তান দেন। তাঁর নাম ইয়াহইয়া (আঃ), যিনি ছিলেন জ্ঞানী, নিরহংকারী, পিতামাতার খেদমতকারী

                            মারইয়াম (আঃ) এর নিকট মানুষের রূপ ধরে এক ফেরেশতা আসলে তিনি তার থেকে আল্লাহর আশ্রয় চান (তাঁর পবিত্র চরিত্রের একটি প্রমাণ)। ফেরেশতা নিজের পরিচয় দিয়ে সংবাদ দেন যে পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই মারইয়ামের গর্ভে ঈসা (আঃ) আসবেন

                            একদিন প্রসববেদনা উঠলে মারইয়াম (আঃ) লোকালয় থেকে দূরে চলে যান। সেখানে আল্লাহ তাঁর জন্য খাবার ও পানির ব্যবস্থা করেন। ঈসা (আঃ)-কে কোলে নিয়ে লোকালয়ে ফিরলে সকলে ছিঃছিঃ করতে থাকে। এ অবস্থায়ই ঈসা (আঃ) কথা বলে উঠে নিজের নবুওয়ত সম্পর্কে জানান। এতে সকলে বুঝতে পারে মারইয়াম (আঃ) ব্যভিচারিণী নন, আল্লাহর ইচ্ছায় অলৌকিকভাবে এই শিশুর জন্ম
                            ইবরাহীম (আঃ) তাঁর পিতার সাথে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় কথা বলে শির্কের বিরুদ্ধে দাওয়াহ দেন। তাঁর পিতা অনড় থাকে। ইবরাহীম তাঁর মূর্তিপূজক জাতি ও তাদের মিথ্যা উপাস্য থেকে নিজের বিচ্ছিন্নতা ঘোষণা করেন। এরপর ইসহাক, ইয়াকুব, ইসমাইল ও ইদরীস (আলাইহিমুসসালাম) এর মহান গুণাবলী বর্ণিত হয়। এঁদের বংশধররা ছিলেন ঈমানদার ও সৎ

                            এরপর এমন লোকেরা আসলো যারা আল্লাহর অবাধ্যতা করলো। আখিরাতে তাদের পরিণামের ভয়াবহ বর্ণনা দেওয়া হয়। মুমিন-কাফির নির্বিশেষে সকলের পুলসিরাত পার হওয়া ও ভিন্ন ভিন্ন পরিণতির কথা বর্ণিত হয়

                            কাফিররা মুমিনদের তুলনায় নিজেদের সম্পদের প্রাচুর্য দেখিয়ে গর্ব করে। আল্লাহ তাদের মনে করিয়ে দেন যে তাদের পূর্বের অনেক সীমালঙ্ঘনকারী জাতিকে তিনি ধ্বংস করেছেন যারা তাদের চেয়েও বেশি ধনী ছিলো

                            আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেন- খ্রিষ্টানদের এরকম নোংরা বিশ্বাসকে কঠোর ভাষায় খণ্ডন করা হয়


                            ২০। সূরা ত্বা-হা, আয়াত ১ থেকে ১৩৫

                            সূরা ত্বা-হা মূসা (আঃ) এর দীর্ঘ ঘটনা সম্বলিত। পরিবার নিয়ে মিশরের দিকে চলার পথে মূসা (আঃ) দূরে আগুন দেখতে পান। আলো ও পথনির্দেশনা পেতে তিনি সেদিকে যান। আসলে তা ছিলো আল্লাহর প্রেরিত নূর। তুওয়া উপত্যকায় তিনি মূসা (আঃ)-কে নবুওতের আলো আর হিদায়াতের পথনির্দেশ দেন। তাঁর লাঠিকে সাপে পরিণত করা ও সূর্যের মতো ঝলমলে হাতের মুজিযা দেন। এরপর তাকে ফিরআউনের কাছে গিয়ে নম্র ভাষায় দাওয়াহ দিতে বলেন। তাঁর অনুরোধমতো হারুন (আঃ)-কেও নবী বানিয়ে পাঠানো হয়। মূসা (আঃ)-কে শিশুকালে কীভাবে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন, আল্লাহর ও তাঁর শত্রু ফিরআউনের ঘরে লালিত করেছেন, তাঁর নিজের মা-কেই দুধমা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তাঁর অন্তর জুড়িয়েছেন, পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন পরীক্ষা নিয়েছেন, এসব নিয়ামতের কথা আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দেন

                            ফিরআউনের দরবারে গিয়ে মূসা ও হারুন তাওহীদের দাওয়াত দেন। ফিরআউন কথা ঘুরানোর জন্য আগেকার জাতিদের কথা জিজ্ঞেস করে। মূসা বলেন তাদের পরিণতি আল্লাহই জানেন, এভাবে তিনি প্রসঙ্গের ভেতর থাকেন। উজ্জ্বল হাতের মুজিযা দেখান। ফিরআউন এটাকে জাদু বলে আখ্যায়িত করে। কওমের এক উৎসবের দিনে মূসার সাথে সকল জাদুকরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আয়োজন করে। জাদুকরদের সে রাজকীয় পুরষ্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু জাদুকররা যখন তাদের দড়ি ইত্যাদি দিয়ে দেখানো ভেল্কিবাজি আর মূসা (আঃ) এর লাঠির সত্যিকার সাপ হওয়ার পার্থক্য বুঝতে পারো, তারা সবাই ঈমান এনে ফেলে। ফিরআউন রাগে অন্ধ হয়ে এটাকে মূসার ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে। জাদুকরদের শূলে চড়ানোর হুমকি দেয়। ঈমান আনা জাদুকররা নির্ভীকভাবে প্রত্যুত্তর দেয়

                            বনী ইসরাইলকে ধাওয়া করতে গিয়ে ফিরআউন ও তার লস্কর লোহিত সাগরে ডুবে মরে। বনী ইসরাইল শাম ভূমিতে বসবাস শুরু করে

                            তাওরাত দানের জন্য মূসা (আঃ)-কে আল্লাহ তূর পাহাড়ে ডেকে নেন। এও জানিয়ে দেন যে তাঁর অনুপস্থিতিতে সামিরি নামের এক লোক বনী ইসরাইলকে শির্কে লিপ্ত করেছে। মূসা (আঃ) রাগান্বিত হয়ে ফেরত এসে প্রথমে হারুনকে (আঃ) জেরা করেন। পরে বুঝতে পারেন যে বনী ইসরাইল তাঁর নির্দেশ অমান্য করে মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়েছে

                            মূসা (আঃ) তাঁর কওমকে আবার সঠিক তাওহীদ শিক্ষা দেন। এরপর সামিরিকে ধরেন। সামিরি এমনকিছু দেখতো যা অন্যরা দেখতো না। জিবরীল (আঃ) এর ঘোড়া যেখানে পা ফেলতো, সেখানকার মাটিতে সে প্রাণের লক্ষণ দেখতো। স্বর্ণ দিয়ে বাছুর বানিয়ে সে তাতে ওই মাটির কিছু মিশিয়ে দেয়। ফলে বাছুরটি আওয়াজ করতো। একেই বনী ইসরাইলের মাবুদ হিসেবে সে উপস্থাপন করেছিলো। সে অভিশপ্ত হয়ে জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অস্পৃশ্য জীবনযাপন করে

                            এরপর কিয়ামাতের কিছু বর্ণনা দেওয়া হয়। পাহাড়গুলো বালুর মতো উড়ে যাবে, ভূমি একেবারে টানটান সমান করে ফেলা হবে। মানুষ ভাববে দুনিয়ার জীবন একদিনের মতো ছোট ছিলো

                            শয়তান কর্তৃক প্রতারিত হওয়ার পর আদম-হাওয়া আলাইহুমাসসালামের দুনিয়ায় আসার কাহিনী বর্ণিত হয়। আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তাঁদের কাছে হিদায়াত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। যারা এর অনুসরণ করবে, তারা জান্নাতি। যারা মুখ ফিরিয়ে নিবে, তারা জাহান্নামি। এই কুরআন সেই হিদায়াতের পূর্ণতা

                            কাফিরদের বিদ্রুপ ও প্রাচুর্যের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সালাত কায়েম করতে আদেশ করা হয়। নবী যখন এসেই গেছে, কাফিররা তো আর অজুহাত দিতে পারবে না যে তারা হিদায়াতের ব্যাপারে জানতো না

                            Comment


                            • #15
                              রামাদান - ১৪



                              ২১। সূরা আম্বিয়া, আয়াত ১ থেকে ১১২

                              কাফিররা নিজেদের মাঝে বলাবলি করতো আল্লাহ কেন নবী বানিয়ে পাঠানোর জন্য একজন মানুষকেই পেলেন! তাদের এই গোপন কানাকানির জবাবও আল্লাহ ওয়াহী নাযিল করে জানিয়ে দেন যে পূর্ববর্তী নবীগণও মানুষই ছিলেন। আহলে কিতাবগণও এ ব্যাপারে সাক্ষী। আল্লাহর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করার কারণেই আগের জাতিগুলো ধ্বংস করে নতুন জাতি আনা হয়েছে। এরাও সীমালঙ্ঘন করলে একই পরিণতি হবে

                              আল্লাহ উদ্দেশ্যহীনভাবে এ সৃষ্টিজগত তৈরি করেননি

                              মুশরিকরা বলতো একদিন না একদিন তো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মারা যাবেন, তখন তারা উল্লাস করবে। তো তারা নিজেরা কি চিরকাল বেঁচে থাকবে নাকি? সকলেই তো মৃত্যুর স্বাদ পেয়ে বিচারের মুখোমুখি হবে

                              একাধিক ইলাহ থাকলে সকলেই ধ্বংস হয়ে যেতো। এক ইলাহ'র ব্যাপারে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহে দলীল আছে। আর শির্কের পক্ষে কোনো দলীলই নেই। নবী ও ফিরিশতাগণকে যারা উলুহিয়াতের অংশীদার ভাবে, তাদের কথা খণ্ডন করে বলা হয় এঁরাও আল্লাহরই বান্দা। এদের কেউ যদি নিজেকে ইলাহ দাবি করেও বসতেন, তাঁকেও আল্লাহ জাহন্নামে দিতেন

                              মানুষের উপর আল্লাহর বিবিধ নিয়ামাত পাহাড়, আসমান, চাঁদ, সূর্য, রাত, দিনের আবর্তনের কথা স্মরণ করানো হয়েছে

                              মুশরিকরা তাদের মিথ্যা ইলাহর সমালোচনা সহ্য করে না। অথচ নিজেরা ঠিকই আল্লাহর সিফাতি নামগুলো শুনলে রেগে যায়

                              পূর্বের নবীগণকেও ঠাট্টা বিদ্রুপ করা হয়েছে। বিদ্রুপকারীরা নিজেরাই তার ফল ভোগ করেছে

                              তাওহীদের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে মুশরিকদের প্রতিপত্তি ক্রমশ কমে আসছে, এই বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করে তাদের সাবধান করা হয়

                              কিয়ামাতের দিন মীযান স্থাপন করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আমলও পরিমাপ করা হবে

                              ইবরাহীম (আঃ) এর কাহিনী বিধৃত হয়। তিনি তাঁর কওমের মূর্তিপূজার বিরোধিতা করেন। মুশরিকরা এক উৎসবের দিনে লোকালয় থেকে দূরে গেলে ইবরাহীম (আঃ) তাদের বড় মূর্তিটা ছাড়া বাকিগুলো ভেঙে ফেলেন। তারা ফিরে এসে দেখলে ইবরাহীম (আঃ)-কেই সন্দেহ করে। তিনি বলেন বড় মূর্তিকে জিজ্ঞেস করে দেখতে এ কাজ কে করেছে। এতে মুশরিকরা বিব্রত হয়ে যায়। অনেক আয়োজন করে ইবরাহীম (আঃ)-কে অগ্নিকুণ্ডে ফেলা হয়। আল্লাহর নির্দেশে আগুন স্বস্তিদায়ক ঠাণ্ডা হয়ে যায়

                              ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর ভাতিজা লূত (আঃ)-কে তাঁদের জালিম কওমের থেকে বাঁচিয়ে আল্লাহ তাঁদের শাম-ফিলিস্তিন ভূমিতে নিয়ে যান এবং নেক সন্তান দ্বারা পুরষ্কৃত করেন

                              নূহ (আঃ) ও মুমিনগণকেও আল্লাহ নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা করেন

                              দাউদ ও সুলাইমান (আলাইহুমাসসালাম) উভয়কে আল্লাহ বিচারিক প্রজ্ঞা দিয়েছেন। একবার এক মেষপালকের মেষ এক কৃষকের ক্ষেতের ক্ষতি করে। দাউদ (আঃ) রায় দেন মেষপালক ক্ষতির সমমূল্যের মেষ কৃষককে দেবে। সুলায়মান (আঃ) রায় দেন যে, কৃষক মেষপালকের মেষগুলো লালন করবে ও তার দুধ থেকে উপকৃত হবে। আর মেষপালক কৃষকের জমি পরিচর্যা করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে। তারপর উভয় নিজ নিজ সম্পদ বুঝে নিবে। এই উভয় বিচারই সঠিক ছিলো বলে আল্লাহ প্রশংসা করেন

                              দাউদ (আঃ) এর কণ্ঠের সাথে পাহাড় ও পাখিরাও আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করতো। এছাড়া আল্লাহ দাউদের হাতে লোহাকে মোমের মতো নমনীয় করে দিতেন, ফলে তিনি সুচারুভাবে লৌহবর্ম বানাতেন। আল্লাহ সুলায়মান (আঃ) এর জন্য বাতাস ও কিছু দুষ্ট জিনদেরকে অনুগত করে দেন। বাতাস তাঁকে নিয়ে সহজে সফর করাতো আর জিনেরা তাঁর জন্য ডুবুরির কাজ করতো

                              আইয়ুব (আঃ) এর ভয়ানক রোগ হয়ে পরিবার-সম্পদ সব হারালে তিনি অত্যন্ত নম্র ভাষায় আল্লাহর কাছে দুআ করেন। আল্লাহ তাঁকে সুস্থ করে আগের চেয়েও বেশি নিয়ামাত ফিরিয়ে দেন

                              ইসমাইল, ইদরীস ও যুলকিফল আলাইহিমুসসালাম ছিলেন আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত

                              ইউনুস (আঃ) আল্লাহর অনুমতির আগেই তাঁর কওমকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় ঘটনাক্রমে মাছের পেটে যান। সেই অন্ধকারে তিনি আল্লাহর কাছে দুআ করলে আল্লাহ তাঁকে নাজাত দেন

                              আল্লাহ যাকারিয়া (আঃ)-কে বৃদ্ধ বয়সে সন্তান ইয়াহইয়া (আঃ) দান করেন। সতীত্ব রক্ষাকারী মারইয়াম (আঃ)-কে রুহ ফুঁকে দিয়ে ঈসা (আঃ) এর জন্মের ব্যবস্থা করেন

                              এভাবে আল্লাহ যুগে যুগে নেক বান্দাবান্দীদের সম্মানিত করেছেন। এঁরা সকলে একই দ্বীন ইসলামের অনুসারী ছিলেন। কাফিররা সেই দ্বীনকে খণ্ডবিখণ্ড করে নতুন নতুন মতাদর্শ উদ্ভাবন করেছে। কিয়ামাতের দিন বইপত্রের মতো পৃথিবীকে গুটিয়ে ফেলা হবে। কাফিররা তাদের মিথ্যা উপাস্যসহ জাহান্নামে থাকবে। যাবুরে লেখা ভবিষৎবাণী বাস্তবায়িত হবে যে আল্লাহ শেষ পর্যন্ত মুমিনদেরকেই সৃষ্টিজগতের নিয়ামাতরাজির অধিকারী বানাবেন। তারা জান্নাত থেকে কাফিরদের কষ্টের মৃদু আওয়াজও শুনবে না, ফলে বিচলিতও হবে না। দুনিয়ায় কাফিরদেরকে এসকল সাবধানবাণী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হলো


                              ২২। সূরা হাজ্জ, আয়াত ১ থেকে ৭৮

                              সূরা হাজ্জ শুরু হয়েছে কিয়ামাত দিবসের অন্তর কাঁপিয়ে দেওয়া বর্ণনার মাধ্যমে। আল্লাহ দুনিয়াতে যেভাবে নিষ্প্রাণ ভ্রূণ ও শুষ্ক মাটি থেকে মানুষ ও ফসল বের করে আনেন, তার উদাহরণ দিয়ে বোঝানো হয়েছে আখিরাতের পুনরুত্থান বাস্তব

                              সুবিধা পেলে আল্লাহর ইবাদাত করে আর অসুবিধা দেখলে কুফরে ফিরে যায় এরকম ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত

                              সমগ্র সৃষ্টিরাজি আল্লাহকেই সেজদা করে। মুমিন, ইহুদী, নাসারা, সাবী, অগ্নিপূজক, মূর্তিপূজক সকলের ব্যাপারে আল্লাহ কিয়ামাতের দিন ফায়সালা করে দিবেন। কাফিরদের জন্য প্রস্তুতকৃত জাহান্নামের শাস্তির ভয়াবহ বর্ণনা দেওয়া হয়। মুমিনদের জন্য জান্নাতের নিয়ামাতের মনোলোভা বর্ণনা দেওয়া হয়

                              আল্লাহর নির্ধারিত পবিত্র স্থানে ইবরাহীম (আঃ) কা'বা নির্মাণ করেন। আল্লাহ একে মূর্তি থেকে পবিত্র রাখার জন্য এবং মুসলিমদের হাজ্জের জন্য পবিত্র রাখার নির্দেশ দেন। হাজ্জ, কুরবানি, কুরবানির পশুর ব্যবহার, আল্লাহর নাম নিয়ে জবাহ করা, গোশত খাওয়া ও ফকির মিসকীনদের খাওয়ানো সংক্রান্ত বিবিধ নিয়ম বর্ণিত হয়। আল্লাহর কাছে এসবের রক্ত-মাংস পৌঁছে না, পৌঁছে আমাদের তাকওয়া

                              জিহাদের অনুমতি দিয়ে প্রাথমিক আয়াত নাযিল হয়। এই ইবাদাতের দ্বারাই মুজাহিদদের হাতে জালিমদের ধ্বংস করার মাধ্যমে বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের সংঘটন প্রতিরোধ করা যায়। এসকল নেক লোকদেরকে আল্লাহ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করলে তারা ন্যায়পূর্ণ সমাজ কায়েম করবে। পূর্বের নবীদেরকেও অস্বীকার করা হয়েছিলো। ফলে অস্বীকারকারীরা আযাবে ধ্বংস হয়ে যায়। এভাবে কত কূয়া এবং বাসস্থান এখন বিরান পড়ে আছে। জালিমরা যেন এসব দেখে শিক্ষা নিয়ে সংশোধন হয়ে যায়

                              কিয়ামাতের দিন মুমিন ও কাফিরদের মাঝে আল্লাহ চূড়ান্ত ফায়সালা করে দিবেন

                              যেসকল মুহাজিরকে উৎপীড়ন করা হয়েছে, খুন করা হয়েছে, তাঁদের আখিরাতের চমৎকার প্রতিদানের কথা বর্ণিত হয়েছে। সৃষ্টিজগতের উপর আল্লাহর সর্বব্যাপী ক্ষমতার বর্ণনা দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে আল্লাহর পক্ষে তা সহজ

                              মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শরিয়তের কিছু ইবাদাতের বিধান পূর্ববর্তী নবীদের কিছু বিধান থেকে আলাদা। কাফিররা এটা দেখিয়ে ভুল ধরার চেষ্টা করতো। আল্লাহ জানিয়ে দেন যে আল্লাহই এ বিধান করেছেন। আল্লাহর হুকুমেই কোনো একটা নিয়ম ইবাদাতের পদ্ধতি বলে গণ্য হয়, নাহলে এগুলো তো সত্ত্বাগতভাবে পবিত্র কিছু নয়

                              কাফিররা যেসবের উপাসনা করে তারা সকলে মিলে একটা মাছি তৈরি করতে পারে না, এমনকি মাছি তাদের থেকে কিছু নিয়ে গেলে তারা তা রোধ করতে পারে না। উপাস্য ও উপাসক উভয়ই দুর্বল
                              মুশরিকরা কুরআনের এসব কথা শুনে রেগে গিয়ে তেড়ে আসতে চায়। তাদেরকে তাই এরচেয়েও অপছন্দের বিষয় শুনিয়ে দেওয়া হয়- জাহান্নামের আগুন

                              মুমিনদের বলা হয় সালাত পড়তে, ইবাদাত করতে, নেক আমল করতে এবং যেভাবে জিহাদ করা উচিত সেভাবে জিহাদ করতে

                              Comment

                              Working...
                              X