Announcement

Collapse
No announcement yet.

আজকের তারাবীহ - প্রতিদিন তারাবীহ তে তিলাওয়াকৃত কোরআন কারীমের সারসংক্ষেপ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • #16
    রামাদান - ১৫



    ২৩। সূরা মুমিনুন, আয়াত ১ থেকে ১১৮

    জান্নাত লাভকারী সফল মুমিনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে- বিনীতভাবে সালাত আদায়কারী, অনর্থক বিষয়ে নির্লিপ্ত, যাকাতদাতা, লজ্জাস্থান হেফাজতকারী, আমানতদার, প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী, সালাতের রক্ষণাবেক্ষণকারী

    প্রথমে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি, তারপর মাতৃগর্ভে মানুষের পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন আল্লাহর কুদরত। তিনি আখিরাতেও এসব পুনঃসৃষ্টি করতে সক্ষম

    বৃষ্টির পানি জমিনে সংরক্ষণ, উদ্ভিদ ও গবাদি পশু থেকে প্রাপ্ত উপকার এবং নৌযানের নিয়ামাত স্মরণ করানো হয়েছে

    পরপর কয়েকজন নবীর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে- নূহ, নাম অনুল্লেখিত একজন, মূসা, হারুন, ঈসা (আলাইহিমুসসালাম)। তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে তাঁদের কওমকে দাওয়াত দিলে কওমের নেতারা তাঁদেরকে পাগল আখ্যায়িত করতো। ফেরেশতার বদলে একজন মানুষ কেন নবী হলেন তা নিয়ে ঠাট্টা করতো। আখিরাতের কনসেপ্ট অবাস্তব আখ্যায়িত করতো, অহংকার করতো। কোনো কওমের নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহ এদের এমন আযাব দিয়ে ধ্বংস করেন যে, এরা কেবল গল্প-ইতিহাস হয়ে যায়। সে জায়গায় নতুন কওমের বিস্তার করা হয় এবং তাদের পরীক্ষা শুরু হয়

    সকল নবীগণ একই দ্বীন প্রচার করেছেন। কাফিররা নানা মতাদর্শ উদ্ভাবন করে নিজ নিজ মতাদর্শ নিয়ে খুশিতে আছে। কাফিররা নিজেদের অর্থবিত্তের প্রাচুর্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলে তারাই সঠিক পথে আছে। আল্লাহ জানিয়ে দেন যে দুনিয়াবি প্রাচুর্য হক-বাতিলের মানদণ্ড নয়। এসব ঐশ্বর্যশালী লোকদের যখন আযাবে পাকড়াও করা হবে, তারা দিশাহারা হয়ে যাবে। তাদেরকে সংকট ও প্রাচুর্য উভয় অবস্থা দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে, কখনোই তারা আল্লাহর দিকে ফেরে না

    রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দীর্ঘদিন চেনার পরও তাঁকে পাগল, লোভী ইত্যাদি অপবাদ আরোপ করে কাফিররা যে স্ববিরোধিতামূলক কথা বলতো, তা খণ্ডন করা হয়েছে

    মুশরিকরা সৃষ্টিকর্মে আল্লাহকেই একক মানতো। কিন্তু আল্লাহরই হুকুম তাওহীদ ও আখিরাতের বিশ্বাসকে তারা অস্বীকার করে। বলে যে এসব হুমকি তাদের বাপদাদাদের কাছেও এসেছে, এসব আদিকালের উপকথা মাত্র। একাধিক ইলাহ থাকলে যে তারা পরস্পর বিবাদ করে সৃষ্টিজগত বিশৃঙ্খল করে ফেলতো, তা উল্লেখ করে তাদের শিরকি আকিদার অসারতা দেখানো হয়েছে

    আল্লাহ চাইলে সাথে সাথেই আযাব দিয়ে কাফিরদের ধ্বংস করতে পারেন। কিন্তু তিনি তা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত বিলম্বিত করে পরীক্ষা নেন। কিয়ামাত দিবসে এমন বিপদ হবে যে কেউ কারো আত্মীয়তার খবর রাখবে না। কাফিররা দুনিয়ায় আল্লাহর বিধান ও মুমিনদের উপহাস করতো। জাহান্নামে ঝলসানোর সময় তারা দুআ করবে তাদের যেন দুনিয়ায় আবার ফেরত পাঠানো হয়, এবার তারা নেক আমল করবে। এটা আসলে মুখের কথা। তাদের পুনরায় পাঠালেও তারা বদ আমলই করতো। শাস্তির দীর্ঘতা উপলব্ধি করে তাদের কাছে মনে হবে দুনিয়ার সুখশান্তিতে তারা একদিন বা তারও কম সময় ছিলো। কতই না ভালো হতো যদি তারা তা আগেই উপলব্ধি করতো

    মুমিনদেরকে হুকুম করা হয় আল্লাহর মাগফিরাত ও রহমত কামনা করে দুআ করতে


    ২৪। সূরা নূর, আয়াত ১ থেকে ৬৪

    সূরা নূরের শুরুতে ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর শাস্তি, তাদের বিবাহের বিধান, সতী নারীর উপর ব্যভিচারের অপবাদ আরোপকারীর শাস্তির বিধান, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে লিআন-এর বিধান আলোচিত হয়

    বনু মুস্তালিকের যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে এক ঘটনায় মুনাফিকরা আয়িশা (রাঃ) এর উপর ব্যভিচারের অপবাদ দেয়। এটি 'ইফক' এর ঘটনা নামে খ্যাত। এ ঘটনার আলোকে মিথ্যা অপবাদের ভয়াবহতা, মুখে মুখে গুজব ছড়ানোর ভয়াবহতা, প্রমাণবিহীন অপবাদ কানে আসলে মুমিনদের করণীয়, মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতার প্রসার কামনার ভয়াবহতা বর্ণিত হয়েছে

    মুনাফিকদের অপপ্রচারে যেসকল সরলমনা মুসলিম বিভ্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের একজনকে আবু বকর (রাঃ) আর্থিক সাহায্য করতেন। এ ঘটনার পর তিনি তাঁকে আর সাহায্য না করার ব্যাপারে কসম করে ফেলেন। ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে অপর মুমিনকে সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার এ আচরণ আল্লাহ নিষেধ করেন। ফলে আবু বকর (রাঃ) আর্থিক সাহায্য প্রদান জারি রাখেন

    দুশ্চরিত্র নারী-পুরুষ পরস্পরের উপযুক্ত আর সচ্চরিত্র নারী-পুরুষ পরস্পরের উপযুক্ত

    অন্যের ঘরে ঢুকতে অনুমতি নেওয়ার বিধান বর্ণনা করা হয়। নারী-পুরুষের পর্দার বিধান, কাদের সামনে পর্দা করতে হবে না তার বিধান আলোচিত হয়। বিবাহের গুরুত্ব, অভাবগ্রস্ত অবস্থায় বিবাহের বিধান বর্ণিত হয়। জাহিলি যুগে মনিবরা দাসীদের দিয়ে বেশ্যাবৃত্তি করিয়ে টাকা রোজগার করতো, এটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়

    আল্লাহর নূরের ব্যাপারে একটি চমৎকার উপমা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ যাকে চান, তাঁর নূরের দিকে পথ দেখান। এসব লোকের চাকরি-ব্যবসা তাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করতে পারে না। আল্লাহ তাদের যথাযথ প্রতিদান দিবেন। আর কাফিরদের কাজগুলো হলো মরিচীকার মতো, অথবা সাগরতলের কয়েক স্তরের আঁধারের মতো, যার কোনো ভালো প্রতিদান নেই

    সমগ্র সৃষ্টিজগত আল্লাহর শেখানো তরিকায় নিজ নিজ জায়গায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে

    মুনাফিকরা মুখে ঈমানের দাবি করে। যখন নিজের সুবিধা দেখে, তখন কুরআন-সুন্নাহর বিচার মানে। আর তাদের স্বার্থের বিপরীতে গেলে কুরআন-সুন্নাহর ফায়সালা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। মুমিনরা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুম শুনলেই মেনে নেয়

    যখন জিহাদ থাকতো না, তখন মুনাফিকরা কসম করে বলতো জিহাদের ঘোষণা আসলে তারা বের হবে। অথচ আসল সময়ে নানা অজুহাত দেয়

    ঈমানদার ও নেক আমলকারীরা জুলুম-অত্যাচারের যুগ কাটিয়ে একদিন নিরাপত্তার সহিত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে- এ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়

    ঘরে প্রবেশের সময় অনুমতি নেওয়ার আরো কিছু বিধান, একত্রে ও আলাদা খাওয়ার বিধান ও সালামের ফজিলত বর্ণিত হয়

    খন্দক যুদ্ধের প্রস্তুতির সময় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সবাইকে কাজ ভাগ করে দেন। মুমিনগণের কোনো দরকার পড়লে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনুমতি নিয়ে যেতেন। আর মুনাফিকরা এমনি এমনিই ফাঁকি দিয়ে সটকে পড়তো। এ ঘটনার আলোকে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ মানার গুরুত্ব, অনুমতি নেওয়া ও দেওয়ার বিধান আলোচিত হয়


    ২৫। সূরা ফুরক্বান, আয়াত ১ থেকে ২০

    সূরা ফুরক্বানের শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করে বলা হয় যে তিনি রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর ফুরক্বান [(সত্য-মিথ্যার মাঝে) পার্থক্যকারী মানদণ্ড] নাযিল করেছেন
    আল্লাহকে ছেড়ে এমন উপাস্য গ্রহণ করাকে তিরস্কার করা হয়, যারা নিজেরই কোনো উপকার-অপকারের ক্ষমতা রাখে না

    কাফিররা এত রকমের অভিযোগ তুলতো যে তারা নিজেরাই জানে না কোনটা সঠিক। একবার বলতো কোনো ইহুদী রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসব শেখায়, একবার বলে তিনি যাদুগ্রস্ত, একবার বলে এ কেমন রাসূল যে খাবার খায়-হাটবাজারে যায়, তাঁকে আল্লাহর ধনভাণ্ডার দেওয়া হলো না কেন ইত্যাদি। অথচ আগের নবীগণও মানুষ ছিলেন

    আল্লাহ চাইলেই যাকে-তাকে অকল্পনীয় ধনভাণ্ডার দিতে পারেন। কিন্তু আসল প্রতিদান তো আখিরাতে। সেখানে কাফিররা জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করতে করতে মৃত্যুকে ডাকবে। কিন্তু তারা মরবেও না, শাস্তিও কমবে না। বিপরীতে মুত্তাকীরা পাবে স্থায়ী জান্নাত

    কাফিররা যেসব মিথ্যা উপাস্যের উপাসনা করতো, তারা নিজেরাই আখিরাতে তাদের উপাসকদের সাথে বিচ্ছিন্নতা ঘোষণা করবে

    Comment


    • #17
      রামাদান - ১৬



      ২৫। সূরা ফুরক্বান, আয়াত ২১ থেকে ৭৭

      কাফিররা চায় আল্লাহ নিজে অথবা ফেরেশতা এসে যেন তাদের ঈমান আনতে বলে। কিন্তু এ ঘটনা যেদিন সত্যিই ঘটবে, তারা হাত কামড়াবে আর চাইবে এমনটা যেন না ঘটে। কিয়ামাতের দিন এক মেঘে আল্লাহ আসবেন (যেভাবে 'আসা'টা তাঁর শানের উপযোগী, সেভাবে। এই 'আসা'র স্বরূপ প্রকৃতি আমাদের অজানা) আর সকল আসমানের ফেরেশতারা আসবেন এবং বিচার শুরু হবে। কাফিররা হা-হুতাশ করবে, হায় আমি যদি নবীকে মানতাম, যদি অমুককে বন্ধু না বানাতাম!

      শয়তান এমন এক বন্ধু যে দরকারের সময় ছেড়ে যায়। নবীগণ কাফিরদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন

      কুরআনকে অল্প অল্প করে নাযিল করার হিকমাহ বর্ণিত হয়

      পূর্বেকার কিছু জাতির নাফরমানির পরিণতি সংক্ষেপে বলা হয়। আযাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত কিছু জনপদের উপর দিয়ে মক্কাবাসীদের চলাফেরা করা লাগে। তবু এসব নিদর্শন তাদের মনে আল্লাহভীতি জাগায় না

      কাফিরদের কুফরির কারণে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে অতিরিক্ত মনোঃকষ্ট পেতে নিষেধ করা হয়। এরা চতুষ্পদ জন্তুরও অধম

      মানুষের প্রতি আল্লাহর বিভিন্ন নিয়ামাত সূর্যের আবর্তন, দিন-রাত, রোদ-ছায়া, বৃষ্টিবাহী বায়ু, পানিচক্র, মিঠা ও লোনা পানির মাঝে অদৃশ্য আড়াল ইত্যাদির কথা স্মরণ করানো হয়েছে

      রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুসংবাদদতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। তিনি কোনো পার্থিব প্রতিদান চান না

      কাফিররা আল্লাহকে স্বীকার করে। কিন্তু তাঁর সিফাতি নামগুলো অস্বীকার করে। 'রহমান' নাম উল্লেখ করলে তারা আপত্তি জানায়

      রহমানের বান্দাদের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়- নম্র চলাফেরা, অজ্ঞদের সাথে তর্ক না করা, সালাত আদায়, দু’আ করা, অপব্যয় ও কৃপণতার মাঝামাঝি পথ অবলম্বন করা, শির্ক না করা, অন্যায় হত্যা না করা, ব্যভিচার না করা, অন্যায় কাজে না জড়ানো, অর্থহীন কাজকারবার থেকে গাম্ভীর্য বজায় রেখে সরে আসা, রবের নির্দেশ মন দিয়ে শোনা, নেককার জীবনসঙ্গী ও সন্তানের জন্য দু’আ করা, মুত্তাকীদের নেতা হতে দু’আ করা। এরা জান্নাতে সুউচ্চ প্রাসাদের অধিকারী হবে

      বান্দারা আল্লাহর ইবাদাত না করলে আল্লাহর কোনো ক্ষতি নেই, বান্দারই ক্ষতি


      ২৬। সূরা শু’আরা

      কাফিররা নিত্যনতুন মু’জিযা দেখার দাবি জানায়। পূর্বেকার উম্মতরা কীভাবে মু’জিযা অস্বীকার করে ধ্বংস হয়েছে আর সৃষ্টিজগতে ছড়ানো নিদর্শন দেখেই কীভাবে ঈমান আনা যায়, তা বর্ণিত হয়েছে সূরা শু’আরায়

      মূসা (আঃ) নবুওয়ত পেয়ে কথার জড়তা কাটানোর দু’আ করেন, হারুন (আঃ)-কেও নবুওয়ত দিয়ে তাঁর উজির বানানো হয়। তাঁরা ফিরআউনের কাছে গিয়ে তাওহীদের দাওয়াত দেন এবং বনী ইসরাইলকে মুক্তি দিতে বলেন। ফিরআউন মূসাকে লালনপালন করা ও তাঁর হাতে ভুলক্রমে একটি খুন সংঘটিত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে খোঁটা দেয়। মূসা (আঃ) অজ্ঞতার কারণে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন এবং মনে করিয়ে দেন বনী ইসরাইলের উপর ফিরআউনের অত্যাচার এর চেয়ে বহুগুণে বেশি। ফিরআউন এবার মু’জিযা দেখতে চায়। তাকে লাঠি সাপে পরিণত হওয়া ও আলোকিত হাতের মু’জিযা দেখানো হয়। সে ভড়কে যায় যে মূসা (আঃ) জাদু করে তাদেরকে দেশ থেকে উৎখাত করবেন। সে সারা দেশের জাদুকরদের ডেকে নানা লোভ দেখিয়ে মূসার সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করে। জাদুকররা ফিরআউনের নামে লাঠি-দড়ি ইত্যাদি নিক্ষেপ করে। মূসা (আঃ) তাঁর লাঠি নিক্ষেপ করলে তা সাপ হয়ে গিয়ে জাদুকরদের লাঠি-দড়িকে গিলে ফেলে। তাদের জাদু ও মূসার মু’জিযার পার্থক্য স্পষ্ট বুঝতে পেরে জাদুকররা ঈমান এনে সেজদায় পড়ে যায়। ফিরআউন রাগে দিশেহারা হয়ে বলে, মূসাই তোমাদের সর্দার। সে তোমাদের জাদু শিখিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করাচ্ছে। ইত্যাদি। সে জাদুকরদের শাস্তির ভয় দেখায়। জাদুকররা ঈমানদীপ্ত জবাব দেয়। মূসা (আঃ) বনী ইসরাইলকে নিয়ে যাত্রা করেন। ফিরআউন তার বাহিনী নিয়ে ধাওয়া করে। এভাবে আল্লাহ ফিরআউন বাহিনীকে তাদের কমফোর্ট জোন থেকে বের করে আনেন। লোহিত সাগরের পাড়ে এসে বনী ইসরাইল ভাবে যে তারা ধরা পড়ে যাবে। মূসা (আঃ) আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল করতে বলেন। আল্লাহ লোহিত সাগরে পথ করে দিয়ে বনী ইসরাইলকে পার করে নেন আর ফিরআউনের লস্করকে ডুবিয়ে মারেন

      ইবরাহীম (আঃ) এর সাথে তাঁর কওমের মুশরিকদের বাদানুবাদ উল্লেখ করা হয়। মুশরিকরা দেবদেবীর উপাসনা করে, কারণ তারা তাদের বাপদাদাদের তা করতে দেখেছে। আর ইবরাহীম (আঃ) সৃষ্টিজগতের ওপর আল্লাহর সর্বব্যাপী ক্ষমতার উল্লেখ করে কল্পিত দেবদেবী ও পূজারীদের সাথে শত্রুতা ঘোষণা করেন

      কাফিরদেরকে তাদের মিথ্যা দেবদেবীসহ উপুড় করে জাহান্নামে নেওয়া হবে (যেসব নবী, ফেরেশতা ও বুজুর্গদের উপাসনা করা হয়, তাঁরা এর অন্তর্ভুক্ত নন)। সেখানে তারা নিজেদের নেতাদের দোষারোপ করতে থাকবে আর মুমিন না হওয়ার কারণে আফসোস করতে থাকবে

      নূহ (আঃ) তাঁর কওমকে দাওয়াত দিলে সেখানকার নেতারা খোঁটা দেয় যে নূহের সাথে কেবল সমাজের নিচু স্তরের মানুষেরাই যোগ দেয়। তাদের অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ তাদেরকে নিমজ্জিত করেন এবং ঈমানদারদের রক্ষা করেন

      আদ জাতিকেও হুদ (আঃ) একইভাবে বিনা পারিশ্রমিকে তাওহীদের দাওয়াত দেন। আদ জাতি অযথা দাপট দেখাতে বিভিন্ন সৌধ ও ইমারত বানাত যেন সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর অন্যান্য জাতিকে জুলুম করত। হুদ (আঃ) স্মরণ করিয়ে দেন এসব ক্ষমতা প্রতিপত্তি পরীক্ষাস্বরূপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা ঈমান আনতে অস্বীকার করে ধ্বংস হয়

      সামুদ জাতিকে সালিহ (আঃ) একইভাবে দাওয়াত দেন। তারা তাদের প্রস্রবণ, বাগান, পাহাড় কেটে বানানো সুদৃঢ় আবাসে চিরকাল থাকবে- এরকম ধ্যান ধারণা নিয়ে চলত। সালিহ (আঃ)-কে তারা জাদুগ্রস্ত আখ্যায়িত করে। মু’জিযাস্বরূপ আনীত উটনীকে হত্যা করে ফেলে। সালিহ (আঃ)-কেও হত্যার পরিকল্পনা করে। ফলে তারা আযাবে নিপতিত হয়

      লূত (আঃ) একইভাবে তাঁর কওমকে দাওয়াত দেন ও সমকামিতা হতে বিরত থাকতে বলেন। তারা হঠকারিতা দেখায়। পাথরবৃষ্টির মাধ্যমে তাদের সকলকে ধ্বংস করা হয়। লূত (আঃ) এর স্ত্রী তাদের প্রতি সহানুভূতিশীলা হওয়ায় সেও আযাবে পতিত হয়

      আয়কা (মাদইয়ান) এর অধিবাসীদের শুআইব (আঃ) একইভাবে দাওয়াত দেন, মাপে কমবেশি করে লোক ঠকাতে ও দস্যুবৃত্তি করতে নিষেধ করেন। তারা তাঁকে জাদুগ্রস্ত বলে এবং নিজেদের মতোই একজন মানুষকে নবী মানতে অস্বীকার করে। প্রতিশ্রুত আযাব নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ করে। ফলে তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়

      কাফিররা দাবি করত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে শয়তান এসব বাণী নিয়ে আসে। অথবা তিনি কোনো কবি। তাদেরকে খণ্ডন করে বলা হয় এখানে যেসকল উত্তম কথাবার্তা বলা আছে, এগুলো তো শয়তানের ঘোর অপছন্দের জিনিস। শয়তান বরং নাযিল হয় মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠদের ওপর। আসলে কাফিররা ঈমান না আনার প্রতিজ্ঞা করে বসে আছে। কোনো অনারব এসেও যদি তাদের সামনে আরবি কুরআন শুনিয়ে দিত, তবু তারা ঈমান আনত না। বনী ইসরাইলের আলেমরা জানে যে তাদের কিতাবে এই কুরআনের ব্যাপারে বলা আছে। আর কবিরা তো কেবল কাল্পনিক কথাবার্তা বলে। যা বলে, নিজেরাই তা করে না। কুরআন তো এমন নয়। (তবে ইসলামের পক্ষে রচিত কবিতার কথা আলাদা। যেমন হাসসান বিন সাবিত (রাঃ) এরকম কবিতা লিখে কাফিরদের ইসলামবিদ্বেষী কবিতার জবাব দিতেন।)


      ২৭। সূরা নামল, আয়াত ১ থেকে ৫৯

      সূরা নামলের শুরুতে দুইটি এমন জাতির পার্থক্য দেখানো হয়েছে যারা সম্পদ-রাজত্ব-প্রতিপত্তি নিয়ে দুই রকমের আচরণ করেছে। প্রথমে মূসা (আঃ) কর্তৃক ফিআউনের কাছে দাওয়াহ প্রদান ও তার প্রতি ফিরআউনের কুফরির ঘটনা বলা হয়। শয়তানের প্ররোচনায় দুনিয়াবি চাকচিক্যকে তারা উত্তম মনে করেছিল। ফলে আল্লাহর আয়াতের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে

      অপরদিকে সুলায়মান (আঃ) ছিলেন সাচ্চা তাওহীদবাদী। তাঁকে জ্বীন, মানুষ ও পাখির এক বিশাল সেনাবাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়। পশুপাখির কথা বোঝার ক্ষমতা দেওয়া হয়। এক পিঁপড়ার উপত্যকার কাছে দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি শুনতে পান একটি পিঁপড়া তার জাতিকে বলছে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে, নাহলে সুলাইমানের বাহিনী তাদের পিষ্ট করে ফেলতে পারে। সুলাইমান (আঃ) স্মিত হেসে ফেলেন, আল্লাহর কাছে দু’আ করেন শোকরগুজার ও নেককার বান্দা হওয়ার জন্য

      তাঁর কাছে হুদহুদ পাখি সাবা রাজ্যের খবর নিয়ে আসে। সেখানকার শাসক ছিলেন এক রাণী (বিলকিস) আর সে জাতি ছিলো সূর্যপূজারী। সুলাইমান (আঃ) বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করা একটি চিঠি পাঠিয়ে তাদের তাওহীদ গ্রহণ করার আদেশ দেন এবং আত্মসমর্পণ করে তাঁর দরবারে আসতে বলেন। বিলকিস তাঁর সভাসদদের সাথে পরামর্শ করেন। তারা বলে যে তারা লড়াকু জাতি, রাণী যদি সুলাইমানের সাথে যুদ্ধের আদেশ দেন, তাহলে তারা প্রস্তুত আছে। রাণী বরং যুদ্ধের ভয়াবহতা বিবেচনা করে সুলাইমানের নিকট উপঢৌকন সহ দূত পাঠান। সুলাইমান (আঃ) বলে দেন যে আল্লাহ তাঁকে যা দিয়েছেন, তা এরচেয়ে উত্তম

      বিলকিস সুলাইমানের দরবারে আসার জন্য রওনা দেন। বিলকিসের সিংহাসনটি সুলাইমান (আঃ) নিজ দরবারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন। একজন শক্তিশালী জ্বীন এ কাজে রাজি হয়। তবে তার আগেই আসমানী কিতাবের জ্ঞানধারী এক ব্যক্তি আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতায় এ কাজটি সম্পাদন করে দেন। সুলাইমান (আঃ) সিংহাসনটির আকৃতি কিছুটা পরিবর্তন করে দেন। বিলকিস এসে চিনতে পারেন যে তাঁর সিংহাসন তিনি আসার আগেই এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া তিনি সুলাইমানের প্রাসাদের স্বচ্ছ কাঁচনির্মিত মেঝে দেখেন, যা দেখলে জলাশয় মনে হয়। তাওহীদের প্রতি আগেই তাঁর মন ঝুঁকি গিয়েছিল। সুলাইমানের সম্পদ-প্রতিপত্তি দেখে আরো ঈমান বৃদ্ধি পায়। এভাবে সুলাইমান ও বিলকিস প্রচুর ক্ষমতার মালিক হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর দ্বীনের সাথে কোনো অহংকার প্রদর্শন করেননি

      সালিহ (আঃ) এর ঘটনা পূর্বের মতোই বর্ণিত হয়। নয়জন লোক যে উটনী হত্যায় ভূমিকা পালন করে, তা বলা হয়

      লূত (আঃ) এর ঘটনা পূর্বের মতো বলা হয়। তাঁর কওম তাঁর দাওয়াহ শুনে বলেছিলো এদেরকে এখান থেকে বের করে দাও, এরা তো বেশি পাকপবিত্র থাকতে চায়!

      Comment


      • #18
        রামাদান - ১৭



        ২৭। সূরা নামল, আয়াত ৬০ থেকে ৯৩

        আল্লাহর বিভিন্ন নিয়ামাতের কথা স্মরণ করিয়ে বারবার জিজ্ঞেস করা হয়েছে কী করে অন্য কোনো ইলাহ থাকতে পারে। বৃষ্টিবর্ষণ, উদ্ভিদ জন্মানো, বসবাসের পৃথিবী, পাহাড়, পৃথক পৃথক জলাধার সৃষ্টি, দোয়া কবুল করা, বৃষ্টিবাহী বায়ু প্রেরণ, রিযিক সরবরাহ। আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েবের জ্ঞান রাখে না, তিনিই আখিরাতে পুনঃসৃষ্টি করতে সক্ষম

        কাফিররা আখিরাতের পুনরুত্থান অবাস্তব মনে করে। বলে যে এসব কিসসা কাহিনী তাদের বাপদাদাদেরকেও শোনানো হতো। এসকল কাফিরদেরকে বলা হয় জমিনে ভ্রমণ করে অপরাধী জাতিগুলোর পরিণাম দেখে নিতে। তারা প্রতিশ্রুত আযাব নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ করে, অথচ হয়তো সত্যিই আযাবের সময় নিকটে চলে এসেছে। আল্লাহ দয়ালু বলেই এখনো সুযোগ দিয়ে রেখেছেন। গুপ্ত ও প্রকাশ্য সকল বিষয় আল্লাহর জানা। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগমন আহলে কিতাবদের নিকট একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ। তবু যারা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করে, তাদেরকে বধির, মৃত ও অন্ধের সাথে তুলনা করা হয়। কিয়ামাত নিকটে চলে আসলে আলামত হিসেবে জমিন থেকে কোনো একটি প্রাণী বের করা হবে যা তাদের সাথে কথা বলবে। (কিছু রেওয়ায়ত থেকে জানা যায় এ ঘটনার পর ঈমান আনলে আর তা গৃহীত হবে না।)

        কিয়ামাতের দিন প্রত্যেক উম্মত থেকে কাফিরদের দলগুলোকে এনে সমবেত করা হবে। সেদিন এরা ঘাবড়ানো অবস্থায় থাকবে। ঈমানদার নেকআমলকারীরা ভয়ভীতি থেকে মুক্ত থাকবে। আজ যে পাহাড়গুলো নিশ্চল দেখা যাচ্ছে, শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়ার পর তারা মেঘের মতো সঞ্চালিত হবে। যে ব্যক্তি হিদায়াতের পথে আসলো, সে নিজের কল্যাণার্থেই আসলো


        ২৮। সূরা ক্বাসাস, আয়াত ১ থেকে ৮৮

        সূরা ক্বাসাস শুরু হয়েছে মূসা (আঃ) এর শুরুর দিকের কাহিনীর বর্ণনা দিয়ে। ফিরআউন বনী ইসরাইলের পুত্র সন্তানদের মেরে ফেলতো। মূসার জন্মের পর তাঁর মা পেরেশান হয়ে যান। আল্লাহ তাঁকে ইলহাম করেন তিনি যেন শিশুটিকে দুধ পান করাতে থাকেন, আর আল্লাহর নির্দেশ আসলে নদীতে ফেলে দেন। কথামতো কাজ করার পর ফিরআউনের লস্কর শিশু মূসাকে তুলে নেয়। তারা বুঝতে পারেনি এ শিশু তাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হবে। আসিয়া (আঃ) এর অনুরোধে ফিরআউন শিশু মূসাকে রেখে দেয়। মূসা (আঃ) বড় হলে আল্লাহ তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করেন

        এক কিবতী আর এক ইসরাইলীকে ঝগড়া করতে দেখে মূসা (আঃ) কিবতীকে আঘাত করেন, এতেই সে মরে যায়। মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করেন। মূসা (আঃ) বলেন, আল্লাহ যেহেতু একবার তাঁকে মাফ করেছেন, তিনি আর কখনো জালিমদের সহযোগী হবেন না

        পরদিন ওই ইসরাইলীকে আরেক কিবতীর সাথে ঝগড়া করতে দেখা যায়। সে মূসাকে (আঃ) সাহায্যের জন্য ডাকে। ওই ইসরাইলীই যে আসল ঝামেলা পাকানো লোক, তা মূসা (আঃ) বুঝতে পারেন ও তাকে তা বলেন। তারপরও কিবতীর বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করতে হাত বাড়ান। ইসরাইলী ভাবে তাকেই মারতে আসছে। সে মূসাকে (আঃ) অকৃতজ্ঞের মতো তিরস্কার করে। শহরের দূর প্রান্ত থেকে এক লোক এসে খবর দেয় যে গতকালের হত্যার বদলা নিতে নেতারা মূসাকে (আঃ) খুঁজছে

        মূসা (আঃ) পালিয়ে মাদায়েনে আসেন। সেখানে একদল রাখাল তাদের পশুদের পানি পান করাতে কুয়ো থেকে পানি নিতে ভিড় করে ছিলো। দুজন নারী তাদের পশুগুলো নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মূসা (আঃ) জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন তাঁদের পিতা অতিবৃদ্ধ বলে পশু চড়াতে পারেন না। আর ঠেলাঠেলির কারণে নারীদ্বয়কে সবার পরে পানি নেওয়া লাগে। মূসা (আঃ) তাঁদেরকে পানি সংগ্রহ করে দেন
        তারপর তিনি এক জায়গায় বসে দুআ করেন, আল্লাহ তাঁকে যে অনুগ্রহই করবেন, তিনি তার মুখাপেক্ষী। নারীদ্বয়ের একজন যথাযথ লজ্জাশীলতা বজায় রেখে এসে বলেন তাঁর পিতা দেখা করতে চান। দেখা করার পর ওই বৃদ্ধ ব্যক্তি মূসা (আঃ) এর সাথে এক মেয়ের বিয়ে দিতে চান এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে তাঁর জন্য কাজ করতে বলেন। মূসা (আঃ) রাজি হন

        মেয়াদ শেষে স্ত্রী সহ মিশরে ফেরার পথে তূর পাহাড়ে নবুওয়ত ও মুজিযা প্রাপ্তি, মিশরে গিয়ে ফিরআউনকে দাওয়াত দেওয়া পর্যন্ত কাহিনী বর্ণিত হয়। ফিরআউন ঠাট্টা করে তার পরিষদ হামানকে বলে, আমার জন্য উঁচু ইমারত বানাও তো, আসমানে উঁকি মেরে মূসার রবকে দেখে আসি! পরের ঘটনাচক্রে ফিরআউন ও তার লস্কর সাগরে নিমজ্জিত হয়। আর আখিরাতের শাস্তি তো কঠিনতর

        এসব কাহিনী রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানতেন না, আল্লাহ ওয়াহী করে জানিয়েছেন। মক্কার মুশরিকরা মুজিযা দেখতে চাইতো। অথচ ফিরআউন এত বড় দুটি মুজিযা দেখেও ঈমান আনেনি। মুশরিকদের বলা হয় তাওরাত ও কুরআনের চেয়ে বেশি হিদায়াত সম্পন্ন কোনো কিতাব রচনা করে আনতে, কিন্তু তারা যে তা করতে অপারগ, তা তো জানা কথা

        আল্লাহ একের পর এক হিদায়াত পাঠান। এক কিতাবে ঈমান রাখা অবস্থায় যারা পরবর্তী নবীর প্রতি ঈমান আনে, তাদের জন্য দ্বিগুণ পুরষ্কার। অনেকে বলতো ঈমান আনলে জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। অথচ কাফিররা যে বিত্ত বৈভবে আছে, তা অল্প কয়েকদিনের নিরাপত্তা মাত্র। তাদের আগে কত জাতি কুফরি করে ধ্বংস হয়ে গেছে! আখিরাতের প্রতিদানই স্থায়ী

        কিয়ামাতের দিন আল্লাহ সেসব সত্ত্বাকে উপস্থিত করতে বলবেন, যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করা হতো। তারা তাদের উপাসকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্নতার ঘোষণা দেবে

        কাফিররা বলতো তাদের মাঝ থেকে কোনো বিত্তবানকে নবী বানানো হলো না কেন। জবাবে বলা হয়, আল্লাহ যাকে চান তাকেই নবুওয়ত দিবেন, অন্য কারো ইখতিয়ার নেই

        আল্লাহ আমাদের কল্যাণার্থে রাত আর দিনের বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি যদি কোনো একটিকে কিয়ামাত পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, কোনো মিথ্যা উপাস্য তা পরিবর্তন করতে পারবে না

        কারুনের কাহিনী বর্ণিত হয়। সে বনী ইসরাইলের একজন। তার সম্পদের চাবিগুলো বহন করতেও একদল শক্তিশালী লোক লাগতো। অথচ সে নিজ সম্প্রদায়ের উপরই জুলুম করতো। তাকে নসিহত করা হলো অহংকার না করতে, আল্লাহর দেওয়া নিয়ামাতের শোকরগুজার হতে, এ সম্পদ দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাত কামাই করতে। সে বলতো, এসব সম্পদ সে নিজ জ্ঞানবলে কামাই করেছে। দুনিয়ালোভীরা আশা করতো, ইশ আমরাও যদি কারুনের মতো ধনী হতাম। ঈমানদাররা তাদের ধিক্কার দিতো ও আখিরাতের প্রতিদানের কথা বলতো। কারুন ও তার প্রাসাদকে আল্লাহ ভূগর্ভে ধসিয়ে দেন। কালকেই যারা তার মতো হতে চাইছিলো, তারাই কারুনের মতো হতে না পারায় খুশি হয়ে গেলো

        এ সূরা নাযিলের সময় মুসলিমরা হিজরত করা শুরু করেছিলেন। তাঁদেরকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে তাঁদেরকে এ ভূমিতে আবার ফিরিয়ে আনা হবে। তা যদি অকল্পনীয় হয়ে থাকে, এর আগে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুওয়ত প্রাপ্তিও তো এক অপ্রত্যাশিত নিয়ামাত ছিলো। কাজেই চিন্তার কিছু নেই


        ২৯। সূরা আনকাবুত, আয়াত ১ থেকে ৪৪

        মক্কার মুশরিকদের উৎপীড়নে অতিষ্ঠ মুমিনদেরকে সূরা আনকাবুতের শুরুতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, ঈমান এনেছি বললেই পার পাওয়া যাবে না। পূর্ববর্তী উম্মতদেরকেও আল্লাহ বিপদআপদের মধ্য দিয়ে পার করিয়ে প্রকৃত ঈমানদারদের বের করে এনেছেন

        মুশরিক পিতামাতারা তাদের মুসলিম সন্তানদেরকে দ্বীন ত্যাগ করার জন্য চাপ দিতো। এ প্রসঙ্গে বলা হয় পিতামাতার আনুগত্য ও সদাচরণ করতে হবে ঠিক, কিন্তু তারা শির্কের দিকে ডাকলে সে কথা মানা যাবে না

        সুসময়ে দিন মানা আর দুঃসময়ে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার স্বভাবকে তিরস্কার করা হয়েছে

        কাফিররা মুসলিমদের বলতো দ্বীন ত্যাগ করলে কোনো বিপদ যদি আসেই, তাহলে তারাও তাদের সাথে তা শেয়ার করবে। আল্লাহ জানিয়ে দেন, বরং কাফিররাই নিজেদের প্রাপ্য আযাব ভোগ করবে, সেই সাথে যাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে তাদের আযাবের অংশও ভোগ করবে

        নূহ (আঃ), ইবরাহীম (আঃ), লূত (আঃ), হুদ (আঃ), সালিহ (আঃ), শুআইব (আঃ) ও মূসা (আঃ) কর্তৃক দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে দুঃখকষ্ট ভোগ করার কাহিনী সংক্ষেপে বলা হয়। তারপর তাঁদের শত্রুদের উপর এমন আযাব এসেছে যে, পার্থিব জীবনের অল্প সময়ের ভোগবিলাস তাদের কোনো উপকারে আসেনি। এর মাঝেই ইবরাহীম (আঃ) ও লূত (আঃ) এর হিজরত এবং হিজরতের পর আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ লাভের কাহিনী বলে মুমিনদের হিজরতে উৎসাহিত করা হয়

        আল্লাহকে ছেড়ে যারা অন্য অভিভাবক গ্রহণ করেছে, তারা যেন মাকড়সার (আনকাবুত) মতো দুর্বল ঘর বানিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে

        Comment


        • #19
          রামাদান - ১৮



          ২৯। সূরা আনকাবুত, আয়াত ৪৫ থেকে ৬৯

          সালাত অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে

          আহলে কিতাবদের সাথে উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ক করতে বলা হয়, তবে তাদের মাঝে যারা সীমালঙ্ঘন করে তাদেরকেও সমুচিত জবাব দিতে হবে

          রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগে কখনো কিতাব পড়েনওনি, লেখেনওনি। অথচ আল্লাহ তাঁর মুখ দিয়েই কুরআন পড়াচ্ছেন। এটিই মুজিযা হিসেবে যথেষ্ট যা জ্ঞানীরা ঠিকই বুঝতে পেরে ঈমান আনছে। কাফিররা যে আযাব নিয়ে আসতে বলে, তার জন্য সময় নির্ধারিত করা না থাকলে তা চলেই আসতো

          নিপীড়িত মুমিন বান্দাদেরকে হিজরতের উৎসাহ দেওয়া হয়। আল্লাহর জমিন প্রশস্ত। সকল পশুপাখিকেই তিনি রিযক দিয়ে থাকেন। মৃত্যু তো একদিন না একদিন হবেই

          মুশরিকরা সৃষ্টিকর্তা, বৃষ্টিদাতা হিসেবে আল্লাহকেই মানে, কিন্তু বিধান মানার ক্ষেত্রে শির্ক করে। বিপদের মুহূর্তে এমনভাবে আল্লাহকে ডাকে যেন একমাত্র তাঁর উপরই ঈমান রাখে। আল্লাহ উদ্ধার করার পর ঠিকই শির্ক করে।

          বায়তুল্লাহর অস্তিত্বের কারণেই মক্কায় কোনো শত্রুদল আক্রমণ করতো না। অথচ মুশরিকরা আল্লাহর শোকরগুজার না হয়ে মূর্তিপূজা করে

          যারা আল্লাহর দিকে প্রচেষ্টা চালায়, আল্লাহ অবশ্যই তাদের হিদায়াত দিবেন


          ৩০। সূরা রূম, আয়াত ১ থেকে ৬০

          তৎকালীন বিশ্বের দুই সুপারপাওয়ার- খ্রিষ্টান অধ্যুুষিত রোমান সাম্রাজ্য এবং অগ্নিপূজক অধ্যুষিত ইরান পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লেগে থাকতো। ইরানের মুহুর্মুহু আক্রমণে রোম সাম্রাজ্য পর্যুদস্ত হয়ে যায়। মক্কার মুশরিকরা খোঁটা দিতো যে তারাও মুসলিমদেরকে সেভাবে পর্যুদস্ত করবে। আল্লাহ সূরা রূমে ভবিষৎবাণী করেন যে কয়েক বছর পর রোমানরাই বিজয় লাভ করবে, সেই সাথে মুমিনরাও। আয়াত নাযিলের সাত বছর পর রোমানদের হাতে ইরানী সাম্রাজ্য রোমানদের পাল্টা আক্রমণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আর মুমিনরা বদরে জয়লাভ করে। আপাত অসম্ভব দুটি ভবিষৎবাণী বাস্তবায়িত হয়

          মুশরিকদের সতর্ক করা হয় যে তাদের পূর্বে তাদের চেয়েও সমৃদ্ধ অনেক জাতি আল্লাহর নাফরমানী করে ধ্বংস হয়ে গেছে। আখিরাতে মুশরিকরা নিজেদের উপাস্যদের অস্বীকার করবে। জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের পরস্পর বিপরীত দৃশ্যাবলী বর্ণিত হয়েছে

          সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর তাসবীহ পাঠে লিপ্ত থাকার আদেশ করা হয়

          সৃষ্টিজগতে আল্লাহর নিয়ামতরাজির বর্ণনা করে চিন্তার খোরাক দেওয়া হয়। মানবসৃষ্টি, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, আসমান-জমিন, ভাষা-বর্ণের বৈচিত্র্য, রাতদিনের আবর্তন, বিজলী, বৃষ্টি, প্রাণশীল থেকে প্রাণহীন ও প্রাণহীন থেকে প্রাণশীল বস্তু বের করা

          মানুষ নিজেদের দাসদাসীদেরকেই অর্থ-সম্পদ দিয়ে নিজেদের সমান করে দেয় না। অথচ আল্লাহর বান্দাদের ঠিকই আল্লাহর সাথে শরীক করে

          মানুষের মাঝে অন্তর্নিহিতভাবে সত্য বোঝার যে ফিতরাত আল্লাহ দিয়েছেন, তার উপর অবিচল থাকতে বলা হয়। মুশরিকরা বিভিন্ন মিথ্যা ধর্ম তৈরি করে নিজ নিজ ধর্মমত নিয়ে উৎফুল্ল হয়ে আছে
          মানুষ বিপদে পড়ে এক আল্লাহকে ডাকে, আল্লাহ তাদের উদ্ধার করলে আবার শির্কে লিপ্ত হয়। আল্লাহর দেওয়া নিয়ামাত ভোগ করে উৎফুল্ল থাকে, অথচ নিজেদের কৃতকর্মের ফলে বিপদ আসলে আবার হতাশ হয়ে যায়। আল্লাহ এসব বিপদ এজন্য দেন যেন মানুষ তওবা করে নেয়। আত্মীয়, মুসাফির ও অভাবগ্রস্তের হক আদায় করার হুকুম দেওয়া হয়। সুদের অপকারিতা ও যাকাতের উপকারিতা বর্ণিত হয়

          বায়ুপ্রবাহ শুরু হওয়া থেকে শুরু করে বৃষ্টি হয়ে মৃত জমিন পুনরায় সজীব হয়ে ওঠা পর্যন্ত প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়ে আখিরাতের পুনরুত্থানের ব্যাপারে চিন্তা করতে বলা হয়

          আল্লাহর আয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া লোকদের মৃত, বধির ও অন্ধের সাথে তুলনা করা হয়

          কিয়ামাতের আকস্মিকতায় কাফিররা উদ্ভ্রান্ত হয়ে ভাববে তারা দুনিয়ায় বা বারযাখে খুব অল্প সময় ছিলো। মুমিনরা জানবে যে আল্লাহর প্রতিশ্রুত সময় পর্যন্তই তারা সেখানে ছিলো। এসকল কাফির দুনিয়ার জীবনে স্পষ্ট প্রমাণ দেখেও ঈমান আনে না। যারা জ্ঞান বুদ্ধি কাজে লাগায় না, এভাবে আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেন


          ৩১। সূরা লুক্বমান, আয়াত ১ থেকে ৩৪

          কুরআনের মনোহর বর্ণনাভঙ্গি থেকে মানুষের মন ঘোরাতে কিছু কাফির দেশবিদেশের গল্প-উপকথা সংগ্রহ করে এনে সেসব প্রচার করতো। সূরা লুক্বমানের শুরুতে এ কাজকে তিরস্কার করা হয় ও শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়

          এমন এক সম্মানিত মনীষী ছিলেন লুক্বমান হাকিম। মুশরিকরা নিজেরাও শির্ক করে, সন্তানদেরও শির্ক করতে বাধ্য করে। এর বিপরীতে লুক্বমান কেমন শোকরগুজার ছিলেন এবং তাঁর সন্তানকে কী উপদেশ দিয়েছেন তা তুলে ধরা হয়। পিতামাতা শির্কের আদেশ দিলে কেমন আচরণ করতে হবে তার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়

          লুক্বমান তাঁর ছেলেকে শেখান- শির্ক সবচেয়ে বড় অপরাধ, আল্লাহ ছোটবড় সকল কাজের হিসাব নিবেন, সালাত কায়েম করা, নেককাজের আদেশ ও বদকাজের নিষেধ, বিপদে সবর করা, অহংকার না করা, চলাফেরা ও কথাবার্তায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন

          সৃষ্টিজগতের সবকিছুকে আল্লাহই মানুষের খেদমতে নিযুক্ত করেছেন, অথচ মানুষ শির্ক করে। এমনকি সৃষ্টিকর্তা ও বিপদে উদ্ধারকারী হিসেবে আল্লাহকে মানার পরও। একজন মানুষকে সৃষ্টি করা যেমন, সকল মানুষকে পুনর্জীবিত করাও আল্লাহর কাছে তেমন। তিনি কোনো ক্লান্তি বোধ করা থেকে মুক্ত। মানুষ জানে না আগামীকাল কী অর্জন করবে, কোথায় মারা যাবে। আল্লাহ এর চেয়ে গুপ্ত বিষয়ও জানেন


          ৩২। সূরা সিজদাহ, আয়াত ১ থেকে ৩০

          সূরা সাজদাহর শুরুতে তাদের দাবিকে রদ করা হয়েছে, যারা বলে কুরআন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিজের রচনা

          সৃষ্টিজগতের উপর আল্লাহর ক্ষমতা বর্ণিত হয়েছে। ছয় সময়কালে আসমান জমিন সৃষ্টি, আরশে সমাসীন হওয়া, যাবতীয় সৃষ্টির দেখভাল, মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি, তুচ্ছ পানি হতে বংশধারা সৃষ্টি, রুহ প্রদান, শ্রবণ-দর্শন-চিন্তাশক্তি প্রদান - মানুষ এসবের কমই শুকরিয়া আদায় করে থাকে

          আখিরাত অস্বীকারকারীরা পুনরুত্থান দিবসে দুনিয়ায় ফেরত আসতে চাইবে, যাতে ভালো কাজ করতে পারে। কিন্তু তারা যেভাবে দুনিয়ায় আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিলো, সেভাবে আল্লাহ তাদের অবজ্ঞা করে স্থায়ী শাস্তি দেবেন

          ঈমানদাররা আল্লাহর কালাম শুনলে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে, নিরহংকারী, ভয় ও আশা সহ রাতের বেলা সালাত পড়ে, আল্লাহর দেওয়া সম্পদ থেকে দান করে। আখিরাতে মুমিন ও কাফিরের পরিণতি স্বভাবতই ভিন্ন রকম হবে

          আখিরাতের বড় আযাবের আগে দুনিয়ার ছোট বিপদ দিয়ে আল্লাহ সতর্ক করেন। মূসা (আঃ) এর কওমের ঈমানদারগণ কীভাবে জমিনে নেতৃত্ব লাভ করেন, তা স্মরণ করানো হয়। আর কাফির জাতিগুলো কীভাবে ধ্বংস হয়েছে, তা তো চোখের সামনে বিদ্যমান। এখন কাফিররা বলছে আযাব নিয়ে আসতে, কিন্তু যেদিন তা সত্যিই চলে আসবে সেদিন পালানোর কোনো পথ পাবে না। অতএব, তারাও অপেক্ষা করছে, মুমিনরাও অপেক্ষা করুক


          ৩৩। সূরা আহযাব, আয়াত ১ থেকে ৩০

          সূরা আহযাবের শুরুতে জাহিলি যুগের একটি তালাক পদ্ধতি 'যিহার' এবং পালকপুত্রকে রক্তসম্পর্কের পুত্রের মতো গণ্য করার জাহিলি প্রথাদ্বয় রদ করা হয়। এছাড়া, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি উম্মাহর ভালোবাসা ও তাঁর স্ত্রীগণ উম্মতের মা এ কথা ঠিক। কিন্তু সম্পদের উত্তরাধিকারে রক্তসম্পর্কীয়দের অগ্রাধিকারের বিধান আলোচিত হয়

          আহযাব অর্থ বাহিনীসমূহ। বদর ও উহুদে পরাজয়ের পর কাফিররা এক বিশাল যৌথ বাহিনী গঠন করে মদীনার দিকে অগ্রসর হয়। সালমান ফারসির (রাঃ) এর পরামর্শ অনুযায়ী মুসলিমরা পরিখা (খন্দক) খনন করে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধটি ছিলো অত্যন্ত কঠিন। মদীনার ভেতরে-বাইরে ছিলো শত্রুতে ভরা। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে মনে সন্দেহ চলে আসার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছিলো। আল্লাহ এসময় মুমিনদের কীভাবে গায়েবি সাহায্য করেন, তা স্মরণ করানো হয়

          মুনাফিকরা তাদের ঘরবাড়ি অরক্ষিত থাকার দোহাই দিয়ে যুদ্ধ থেকে সরে যেতে চাইছিলো। আল্লাহ জানিয়ে দেন যে, শত্রুরা এসে যদি তাদের বিদ্রোহ করার লোভ দেখাতো, ঠিকই তারা ঘর ছেড়ে এসে বিদ্রোহে লিপ্ত হতো। এরা নিজেরা তো যুদ্ধের নাম শুনলে ভয়ে মূর্ছা যায় ও অন্যদেরও বাধা দেয়, কিন্তু যুদ্ধলব্ধ গনিমত বণ্টনের সময় ঠিকই নিজের হিস্যা চায়। কাফিরদের প্রকাশ্য পরাজয় দেখেও তারা ভয়ে ভয়ে থাকে কখন আবার আক্রমণ হয়, কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেওয়া যায়

          বিরাট শত্রুদল থেকে মুমিনরা বিচলিত হননি, বরং তারা বুঝতে পেরেছিলেন এটাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওয়াদা। শাহাদাত বরণ করার যে ওয়াদা তাঁরা আল্লাহকে দিয়েছিলেন, কেউ তা পূর্ণ করে এবারই শহীদ হয়েছেন। আর কেউ অপেক্ষায় আছেন পরবর্তী কোনো যুদ্ধে শহীদ হওয়ার জন্য

          ইহুদী গোত্র বনু কুরায়যা সন্ধি করেছিলো মুসলিমদের শত্রুদের সাহায্য করবে না বলে। তাদের বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তিস্বরূপ দীর্ঘদিন তাদের দূর্গ অবরোধ করে আত্মসমর্পণ করানো হয়। তাদের পুরুষদের হত্যা করে নারী-শিশু ও সম্পদ গনিমত হিসেবে বণ্টিত হয়। ভবিষ্যতে খাইবার গিরিপথ বিজয়ও সহজ হয়ে যায়

          বিপুল গনিমত লাভের পর নবীপত্নীগণের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্না) অন্তরে একটু সচ্ছল জীবনের বৈধ বাসনা জাগে। কিন্তু তাঁদের মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্য রাখতে তাঁদেরকে এরকম দুনিয়াবি কামনা না করতে বলা হয় এবং আখিরাতের প্রতিদানের কথা স্মরণ করানো হয়

          Comment


          • #20
            রামাদান - ১৯



            ৩৩। সূরা আহযাব, আয়াত ৩১ থেকে ৭৩

            নবীপত্নীগণের বিশেষ মর্যাদার কারণে তাঁদের জন্য মন্দ কাজের দ্বিগুণ শাস্তি ও নেক কাজের দ্বিগুণ প্রতিদানের কথা বলা হয়

            পর্দার কিছু বিধিবিধান এবং জাহিলি যুগের সাজসজ্জা নিষিদ্ধ করে কিছু বিধান বর্ণিত হয়

            মুসলিম, মুমিন, ইবাদতগুজার, সত্যবাদী, ধৈর্যশীল, বিনীত, দানশীল, রোজাদার, লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী, আল্লাহর যিকিরকারী নারী-পুরুষ উভয়ের পুরষ্কার বর্ণিত হয়
            বংশীয় ও আর্থিক বৈষম্য রোধে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কতিপয় সাহাবার মাঝে বিবাহ দেন, যেখানে উচ্চতর পরিবারটি প্রথমদিকে রাজি ছিলো না। আল্লাহ আয়াত নাযিল করে এসকল সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার আদেশ দেন

            রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগেই ওয়াহীর মাধ্যমে জানানো হয়েছিলো যে রাসূলের পোষ্যপুত্র যায়েদ (রাঃ) ও ফুফাতো বোন যায়নাব (রাঃ) এর মাঝে বনিবনা হবে না, পরবর্তী সময়ে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথেই তাঁর বিবাহ হবে। কিন্তু রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সংকোচের কারণে তা প্রকাশ না করে সে দুজনকে সম্পর্ক ঠিকঠাক করার পরামর্শ দিতেন। আল্লাহ আয়াত নাযিল করে এমনটা করতে নিষেধ করেন যেখানে আল্লাহর ভয়ের চেয়ে লোকলজ্জা প্রাধান্য পায়। তাই যায়দ (রাঃ) যায়নাব (রাঃ)-কে তালাক দিলে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথেই যায়নাবের বিবাহ হয়। পোষ্যপুত্রকে আপন পুত্রের মতো ভাবার যে জাহিলি প্রথা চলে আসছিলো, সেটির এভাবে মূলোৎপাটন হয়

            রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাঠানো হয়েছে সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী হিসেবে আল্লাহর নির্দেশে আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী আলোকিত প্রদীপরূপে
            তালাকের কিছু বিধান বর্ণিত হয়

            বিবাহের ক্ষেত্রে শুধু রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জন্যই বিশেষভাবে প্রযোজ্য কিছু নিয়ম বর্ণিত হয়

            যায়নাব (রাঃ)-কে বিবাহ করার ওয়ালিমা অনুষ্ঠানে কিছু অতিথি আগেভাগে এসে বসে ছিলেন, কেউ কেউ খাওয়াদাওয়া শেষেও অনেকক্ষণ থেকে গল্পসল্প করছিলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মূল্যবান মুহূর্তগুলো নষ্ট হলেও তিনি স্বভাবসুলভ কোমলতার কারণে বলতে পারছিলেন না। আল্লাহ আয়াত নাযিল করে অতিথির সামাজিক আদবকেতার ব্যাপারে সুস্পষ্ট বিধান জানিয়ে দেন
            রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর দরুদ পাঠের হুকুম, আল্লাহর রাসূল ও মুমিন নরনারীদের অযথা কষ্ট দেওয়ার ব্যাপারে সাবধানবাণী বলা হয়েছে

            বিশেষভাবে নবীপত্নী এবং সাধারণভাবে সকল মুমিনা নারীর পর্দার কিছু বিধান বর্ণিত হয়েছে

            মুনাফিকরা মুমিন নারীদের ব্যাপারে গুজব ছড়াতো ও উত্যক্ত করতো। তাদের সাবধান করা হয় যে এখন তো তারা মুসলিম সমাজে নিরাপদেই আছে। কিন্তু এরকম কাজ থেকে বিরত না হলে তাদের পরিচয় প্রকাশ করে দিয়ে তাদের সাথেও কাফিরদের মতোই আচরণ করা শুরু হবে। বনী ইসরাইলের কিছু লোক মূসা (আঃ) এর ব্যাপারে মিথ্যা রটনা করে তাঁকে কষ্ট দিতো। তাদের মতো হতে নিষেধ করা হয়

            কাফিররা কিয়ামাতের দিন তাদের নেতাদের গালমন্দ করবে এবং তাদের জন্য দ্বিগুণ আযাবের দুআ করবে

            কুরআনের আমানত আকাশমণ্ডল, পৃথিবী ও পাহাড়ের কাছে পেশ করা হয়েছিলো। তারা তা বহন করতে অস্বীকার করে। কিন্তু মানুষ তা গ্রহণ করে নেয়। এই আমানতের খিয়ানতকারী মুনাফিক ও মুশরিক নারীপুরুষদেরকে আল্লাহ শাস্তি দেবেন, আর মুমিন নারীপুরুষদের রহমতের দৃষ্টি দেবেন


            ৩৪। সূরা সাবা, আয়াত ১ থেকে ৫৪

            আখিরাতের পুনরুত্থানের যৌক্তিকতা, সম্ভাব্যতা ও বাস্তবতাকে অস্বীকারকারীদের বিভিন্ন কথার জবাব দেওয়া হয়েছে সূরা সাবা'র শুরুতে। তারা আল্লাহর জ্ঞান ও ক্ষমতাকে মানবীয় মাপকাঠি দিয়ে বিচার করে বলেই এমন ভ্রান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়

            রাজ্যক্ষমতা পেয়ে দুই রকমের আচরণকারী দুটি পক্ষের বর্ণনা দেওয়া হয়। একদিকে দাউদ ও সুলাইমান (আঃ), অন্যদিকে সাবা রাজ্য। দাউদকে (আঃ) যেসব মুজিযা প্রদান করা হয় তা হলো সুন্দর কণ্ঠ যার সাথে পাহাড় ও পাখিরাও তাসবীহ পড়তো, লোহাকে ইচ্ছামতো বাঁকিয়ে মাপে মাপে বর্ম ও কড়া তৈরি। আর সুলাইমান (আঃ) এর জন্য বাতাসকে আজ্ঞাধীন করে দেওয়া হয় যাতে তিনি সহজে একমাসের পথ অতিক্রম করতেন। জিনেরা তাঁর আজ্ঞাধীন হয়ে কাজ করতো এবং বড় বড় ইমারত, পাত্র ইত্যাদি তৈরি করে দিতো। এ উভয় নবী বিশুদ্ধ তাওহীদপন্থী ছিলেন

            আল্লাহ সাবা রাজ্যকেও ভৌগলিক সুবিধা এবং প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর করেছিলেন। কিন্তু তারা আল্লাহর অকৃতজ্ঞতা করে। ফলে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ নিকৃষ্টতর বিকল্প দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং কালক্রমে তাদের রাজ্য ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এভাবে মুমিনদের একটি দল ছাড়া বাকি মানবজাতিকে ইবলীস নিজের অনুসারী হিসেবে পায়

            মুশরিকদের বিভিন্ন রকম বিশ্বাসকে খণ্ডন করা হয়। কেউ সরাসরি প্রতিমাকে ইলাহ মনে করতো, কেউ এসব দেবদেবীকে আল্লাহর সাথে শরীক মনে করতো, আর কেউ সরাসরি শরীক না করলেও এদেরকে আল্লাহর কাছে সুপারিশকারী ভাবতো

            আখিরাতে কাফিরদের নেতা ও অনুসারীরা পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকবে, কিন্তু ঠিকই বুঝবে যে তারা সকলেই নিজ নিজ জায়গায় দোষী। যুগে যুগে বিত্তশালী লোকেরা নবীদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেছে। পার্থিব সম্পদকে তারা হকপন্থী হওয়ার মানদণ্ড ভেবে ভুল করেছে। সম্পদ ও সন্তান নয়, বরং ঈমান ও আমল হলো হকের মানদণ্ড। মক্কার মুশরিকরা যে সম্পদের বড়াই করছে, তাদের আগে তাদের চেয়েও বিত্তবান অনেক কওম আল্লাহর নাফরমানি করে ধ্বংস হয়েছে

            যেসব মুশরিক ফেরেশতাদের ইবাদাত করতো, আখিরাতে ফেরেশতাগণ তাদের এসকে কাজকর্ম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দিবেন। প্রকৃতপক্ষে এরকম শির্ক করে তারা আসলে শয়তানদেরই উপাসনা করতো

            রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাগল, বিকারগ্রস্ত ইত্যাদি বলে তারা যে অপবাদ দিতো, সেগুলো সম্পর্কে তাদেরকেই আবার ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে বলা হয়। নিজেরাই নিজেদের অপবাদের অসারতা বুঝতে পারবে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তো এ কাজের বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিকও চান না। আর আখিরাতে কাফিররা বলবে, এখন আমরা ঈমান আনলাম। কিন্তু ঈমানন আনার প্রকৃত জায়গা দুনিয়া থেকে এত দূরে এসে এই ঘোষণা কোনো কাজে আসবে না


            ৩৫। সূরা ফাত্বির, আয়াত ১ থেকে ৪৫

            সূরা ফাত্বিরের শুরুতে আল্লাহর ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। তিনি ইচ্ছামতো সৃষ্টিকারী, রহমত দাতা, রহমত রুদ্ধকারী, নিয়ামত দাতা, রিযকদাতা। এ ব্যাপারে যেন আমরা শয়তানের ধোঁকাবাজির শিকার না হই। সে আমাদের শত্রু, তাকে শত্রু বলেই গণ্য করতে হবে

            কাফিরদের ঈমান আনতে না দেখে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেন অতিরিক্ত মনস্তাপে না ভোগেন, সে হুকুম করা হয়। তারা তো এ কাজের দ্বারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে

            বৃষ্টির মাধ্যমে নির্জীব ভূমিকে সজীব করার উপমা দিয়ে আখিরাতের পুনরুত্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছে

            ঈমান ও নেক আমলের মাধ্যমে মানুষের মর্যাদা বাড়ে

            মানুষের সৃষ্টি, জন্ম, বৃদ্ধি, মিঠা ও লোনা পানিতে বিস্তৃত খাদ্য ও সম্পদ, রাতদিন, চন্দ্রসূর্যের আবর্তন- সবই এক আল্লাহর দান। মিথ্যা উপাস্যরা তো তাদের উপাসকদেরকেই অস্বীকার করে

            বান্দার প্রতি আল্লাহর অমুখাপেক্ষিতা ও আল্লাহর প্রতি বান্দার মুখাপেক্ষিতা বর্ণনা করা হয়

            কিয়ামাতের দিন কেউ কারো আমলের বোঝা বহন করবে না

            যারা তাওহীদের দাওয়াত গ্রহণ করে ও যারা করে না, তাদের পার্থক্য যেন অন্ধ-চক্ষুষ্মান, অন্ধকার-আলো, ছায়া-রোদ, মৃত-জীবিতের মতো

            আল্লাহ কর্তৃক বৃষ্টিবর্ষণ, সমতল ও পাহাড়ে রঙবেরঙয়ের ফল সৃষ্টি, মানুষ ও পশুপাখিতে অনুরূপ সৃষ্টিবৈচিত্র্য- এসব নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে বলা হয়

            আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত, সালাত কায়েম, আল্লাহ প্রদত্ত রিযক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে সৎকাজে ব্যয়কারীদের সুসংবাদ দেওয়া হয়। মুসলিমদের কেউ গুনাহগার, কেউ মধ্যমপন্থী আর কেউ সৎকাজে অগ্রগামী। এরা সকলে যথাযথ সময়ে জান্নাতে প্রবেশ করে নিয়ামাত ভোগ করবে। অপরদিকে কাফিররা মৃত্যুহীনভাবে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। তারা দ্বিতীয় সুযোগ চাইলে বলে দেওয়া হবে যে দুনিয়ার জীবনে তারা ঈমান আনার জন্য যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিলো

            মক্কার মুশরিকরা ইহুদী-নাসারাদের সাথে বিতর্ককালে বলতো কোনো নবী আসলে তারাই বেশি হিদায়াতের অনুসারী হবে। অথচ নবী আসার পর তারাই অহংকার দেখিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আল্লাহ কৃতকর্মের জন্য সাথে সাথে পাকড়াও করলে জমিনে কাউকেই ছাড় দিতেন না। কিন্তু তাঁর শাস্তির নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত আছে


            ৩৬। সূরা ইয়াসীন, আয়াত ১ থেকে ২১

            সূরা ইয়াসীনে হিকমতপূর্ণ কুরআনের কসম করে মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সত্য রাসূল ঘোষণা করা হয়েছে। মুশরিকরা এমন জিদ ধরে সত্য অস্বীকার করছে, যেন তাদের গলায় বেড়ি ও চারদিকে দেওয়াল থাকার কারণে তারা সত্যকে দেখতে পারছে না

            এক জনপদের কথা উল্লেখ করা হয় যেখানে একে একে তিনজন রাসূল পাঠিয়ে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিলো। তারা তো দাওয়াত গ্রহণ করেইনি, উল্টো তাঁদেরকে অশুভ আখ্যায়িত করে হত্যার হুমকি দেয়। রাসূলগণ জানান এসব অশুভতা তাদের শির্ক কুফরেরই ফল। শহরের প্রান্ত থেকে এক নেককার ঈমানদার ব্যক্তি ছুটে আসে। সে রাসূলদের অনুসরণ করতে বলে, যারা কোনো প্রতিদান চান না অথচ সঠিক পথে আছে। কাহিনীর বাকি অংশ আগামী তারাবীহতে

            Comment


            • #21
              রামাদান - ২০



              ৩৬। সূরা ইয়াসীন, আয়াত ২২ থেকে ৮৩

              সেই ঈমানদার লোকটি তাওহীদের যৌক্তিকতা ও শির্কের অসারতা বলে ঈমান আনার ঘোষণা দেয়। তার কওম তাকে হত্যা করে ফেলে। মৃত্যুর পর সে পরকালের প্রতিদান পেয়ে আফসোস করে, হায়! আমার জাতি যদি জানতো আল্লাহ আমাকে কী কী দিয়েছেন! আল্লাহ তার কওমকে বিনাক্লেশে আযাব দিয়ে ধ্বংস করে দেন

              আল্লাহর বিভিন্ন নিয়ামাত বর্ণিত হয়- মৃত ভূমিকে সজীব করে শস্য ও প্রস্রবণ তৈরি, প্রাণী-উদ্ভিদ ও মানুষের জানা-অজানা বহু জিনিস জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি, দিনরাত ও সূর্যচন্দ্র পরস্পরকে অতিক্রম করতে না পেরে নির্দিষ্ট নিয়মে আবর্তন, মানুষের জানা-অজানা বাহন। এ সবই নির্দিষ্ট কালের জন্য। আল্লাহ তা না দিলে আমরা এসব সৃষ্টি করতে পারতাম না, আল্লাহ এসব ধ্বংস করে দিলে আমরা বাঁচাতে পারবো না

              আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দানসদকা করতে বললে কাফিররা বলে, আমরা কি তাকে খাওয়াবো যাকে আল্লাহ চাইলেই খাওয়াতে পারতেন? যখন কিয়ামাত হয়ে যাবে, তখন তারা এসব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কোনো সময় পাবে না

              জান্নাতবাসীরা জান্নাতের নিয়ামাত ভোগ করবে, রবের পক্ষ থেকে তাদের সালাম দেওয়া হবে। আর কাফিররা শয়তানের আনুগত্যের মাধ্যমে তার উপাসনা করতো বলে তিরস্কার করে তাদের জাহান্নামে পাঠানো হবে। আল্লাহ চাইলে ইহকালেই তাদের দৃষ্টি ও চলনক্ষমতা লোপ করে শাস্তি দিতে সক্ষম

              কাফিররা রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবি বলে দাবি করতো, এ অপবাদ খণ্ডন করা হয়

              আল্লাহর সৃষ্ট বিভিন্ন পশু থেকে মানুষ বিভিন্ন উপায়ে উপকৃত হয়, তারপরও তারা শির্ক করে

              সামান্য শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্ট মানুষ বড় হয়েই আল্লাহর ক্ষমতার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে থাকে! আখিরাতের পুনরুত্থান অসম্ভব বলে দাবি করে। অথচ আল্লাহ তাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, শুকনো গাছ থেকে আগুন প্রজ্জ্বলনের গুণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি শুধু হওয়ার আদেশ করেন, আর তা হয়ে যায়


              ৩৭। সূরা সফফাত, আয়াত ১ থেকে ১৮২

              সূরা সফফাতের শুরুতে ফেরেশতা, আসমান, জমিন, নক্ষত্র ইত্যাদি সৃষ্টির উপমা দিয়ে মানুষকে প্রশ্ন করা হয়েছে- এসব যিনি সৃষ্টি করলেন, তিনি কেন আখিরাতে মানুষকে পুনর্জীবিত করতে অক্ষম হবেন?
              আখিরাতে কাফিরদেরকে উপহাস করে জিজ্ঞেস করা হবে তারা কেন একে অপরকে সাহায্য করছে না। তাদের নেতা ও অনুসারীরা পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকবে। সকলেই শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত হবে। তাদের খাদ্য হবে যাক্কুম গাছ ও তপ্ত পানি

              জান্নাতিরা থাকবে আতিথেয়তা ও পবিত্র সঙ্গীদের সাথে। দুনিয়াতে তাদেরকে কুফরের দিকে ডাকতো, এরকম সঙ্গীদেরকে তারা জাহান্নামে দেখতে পাবে। তার কথার ফাঁদে পড়েনি বলে আনন্দ করবে
              জাহান্নামের আগুনে গাছ থাকবে শুনে কাফিররা হাসিঠাট্টা করা শুরু করে। মূলত এ গাছের কথা উল্লেখ করাও তাদের জন্য একটি পরীক্ষা যে আল্লাহর ক্ষমতায় তারা বিশ্বাসী কিনা। তাদের বাপদাদারাও বিপথগামী মুশরিক ছিলো, এর নিজেরাও সানন্দে সেই ভ্রান্তির অনুসরণ করছে

              বিভিন্ন যুগে নবী ও মুমিনদের আল্লাহ কীভাবে রক্ষা করেছেন ও সম্মানিত করেছেন, তার কয়েকটি কাহিনী বর্ণিত হয়। নবীগণের নামের সাথে শান্তির দুআ করা বা আলাইহিসসালাম বলার নিয়ম করে দেওয়াও এর অন্তর্ভুক্ত

              নূহ (আঃ) এর কাহিনী সংক্ষেপে বলা হয়। মূর্তিপূজক কওম কর্তৃক আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ষড়যন্ত্র থেকে ইবরাহীম (আঃ) এর মুক্তি, হিজরত ও সন্তান লাভের কাহিনী বর্ণিত হয়

              ইবরাহীম (আঃ) স্বপ্নে ওয়াহী পান যে ইসমাইল (আঃ)-কে যবেহ করতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি ইসমাইল (আঃ) এর মত জানতে চাইলে তিনিও আল্লাহর হুকুমের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করেন। উভয়ের আনুগত্যে সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ অন্য এক কুরবানির মাধ্যমে শিশু ইসমাইলকে রক্ষা করেন। অতঃপর ইবরাহীমকে (আঃ) আরেক পুত্র ইসহাক (আঃ) দান করেন

              মূসা ও হারুন (আঃ)-কে আল্লাহ কর্তৃক কিতাব প্রদান ও তাঁদের কওমকে মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করার কথা বর্ণিত হয়

              ইলইয়াস (আঃ) এর কওম বা'ল নামক মূর্তির পূজা করতো। তিনি তাদের দাওয়াহ দেন। তাঁকে ও তাঁর অনুসারী মুমিনদের আল্লাহ রক্ষা করেন এবং বিরোধিতাকারীদের শাস্তি দেন

              লূত (আঃ) এর ধ্বংসপ্রাপ্ত কওমের বসতির নিকট দিয়ে মক্কাবাসীরা সফর ও যাতায়াত করে। তাদেরকে এ থেকে শিক্ষা নিতে বলা হয়

              ইউনুস (আঃ)-কে এক লাখের বেশি মানুষের কাছে নবী করে পাঠানো হয়। তারা ঈমান না আনায় তিনদিন পর আযাব আসার ঘোষণা দেওয়া হয়। আল্লাহর হুকুম আসার আগেই তিনি তাঁর কওমকে ছেড়ে চলে গিয়ে এক নৌযানে সওয়ার হন। নৌযান বেশি বোঝাই হওয়ায় বারবার লটারি করা হয় কোনো একজনকে ফেলে দেওয়ার ব্যাপারে। বারবার ইউনুস (আঃ) এর নাম আসে। এমন নেক লোককে কেউ ফেলতে চাইছিলো না। কিন্তু ইউনুস (আঃ) স্বীকার করেন তিনি আল্লাহর একটি হুকুমের অন্যথা করেছেন বলে আল্লাহই এ ফলাফল দেখাচ্ছেন

              তাঁকে পানিতে নিক্ষেপ করার পর মাছ তাঁকে গিলে ফেলে। দুআ ইউনুস নামে যা আমরা চিনি, তা পাঠ করার কারণে আল্লাহ তাঁকে মুক্তি দিয়ে একটি ভূমিতে ফেলেন এবং সেখানে তাঁর জন্য উৎকৃষ্ট রিযকের ব্যবস্থা করেন। এদিকে তাঁর কওম আযাবের লক্ষণ দেখে অনুতপ্ত হয়ে ঈমান আনে, ফলে তাদেরকেও আল্লাহ মাফ করে দেন

              মুশরিকরা ফেরেশতা ও জিনদের সাথে আল্লাহর আত্মীয়তায় বিশ্বাস করে। এই শির্কি বিশ্বাসকে খণ্ডন করা হয়। জিনেরাও তো মানুষদের মতো বিচারের সম্মুখীন হবে। আর ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন কাজে লিপ্ত আছেন


              ৩৮। সূরা সোয়াদ, আয়াত ১ থেকে ৮৮

              সূরা সোয়াদের শুরুতে নবুওয়তের বিষয়ে মক্কার কাফিরদের কতিপয় আপত্তির খণ্ডন করে বলা হয়েছে, তারা আগেকার বড় বড় নাফরমান জাতিগুলোর মাঝে ক্ষুদ্র একটি দল যারা নিজ বসতভূমিতেই একদিন পরাজিত হবে

              রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সান্ত্বনা দিয়ে পূর্বের কতিপয় নবীর কাহিনী জানানো হয়। দাউদ (আঃ) এ ছিলেন বিজ্ঞ বিচারক। একবার বিবাদমান দুই ব্যক্তি তাঁর কাছে মামলা নিয়ে আসে। তাদের মাঝে আপাত বৈষম্য দেখে দাউদ (আঃ) দুর্বলতর লোকের পক্ষে রায় দেন। কিন্তু এরপর বুঝতে পারেন যে এক পক্ষের বক্তব্য শুনে রায় দিয়ে দেওয়া ন্যায়বিচার হয়নি, তৎক্ষণাৎ তাওবা করে ফেলেন

              সুলাইমান (আঃ) ছিলেন প্রাচুর্য ও বিপদ উভয় অবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারী এবং তাঁর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনাকারী। আল্লাহ তাঁকে বাতাস ও জিনের উপর নিয়ন্ত্রণ দেন, এমন রাজত্ব আর কাউকে দেওয়া হয়নি

              আইয়ুব (আঃ) দীর্ঘদিন রোগে জর্জরিত থেকেও সবর করেন ও দুআ করেন। আল্লাহ তাঁকে গোসল ও পান করার জন্য মুজিযা স্বরূপ পানি দান করেন এবং আগের চেয়েও বেশি পরিবার ও সম্পদ ফিরিয়ে দেন

              ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়াকুব, ইসমাইল, আলইয়াসা, যুলকিফল আলাইহিমুসসালাম এর কথা বলা হয়

              জান্নাতবাসীদের জান্নাতি নায নিয়ামাত এবং কাফিরদের জাহান্নামের কষ্টের বর্ণনা দেওয়া হয়। কাফিররা একে অপরকে দোষারোপ করবে। দুনিয়ায় যেসব মুমিনদের ঠাট্টা করতো, তাদেরকে জাহান্নামে দেখতে না পেয়ে বিস্মিত হয়ে যাবে

              আদম (আঃ) এর সৃষ্টি, ইবলীসের সেজদা করতে অস্বীকৃতি ও অহংকার, বিতাড়িত হওয়া, আল্লাহর খাঁটি বান্দাদের ছাড়া কিয়ামাত পর্যন্ত সকলকে পথভ্রষ্ট করার ওয়াদা, আল্লাহ কর্তৃক শয়তান ও তার অনুসারীদের দ্বারা জাহান্নাম ভর্তি করার ওয়াদা পর্যন্ত কাহিনী বর্ণিত হয়

              নবীগণ কোনো পারিশ্রমিক চান না, মানুষের নিজেদের কল্যাণের জন্যই তাঁদের অনুসরণ করা উচিত


              ৩৯। সূরা যুমার, আয়াত ১ থেকে ৩১

              সূরা যুমারের শুরুতে মুশরিকদের কয়েকটি আকিদা খণ্ডন করা হয়- দেবদেবীর সুপারিশক্ষমতা এবং আল্লাহ কর্তৃক সন্তানগ্রহণ

              গবাদি পশু আল্লাহরই পক্ষ থেকে মানুষের জন্য নিয়ামাত। তিনিই মানুষকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, মাতৃগর্ভে হ্রাস-বৃদ্ধি তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। আল্লাহ বান্দার মুখাপেক্ষী নন, বান্দারা তাঁর মুখাপেক্ষী। বান্দারা বিপদে পড়ে আল্লাহকে একনিষ্ঠ হয়ে ডাকে, আল্লাহ তাদের উদ্ধার করার পর শির্ক করে বসে। এসব মুশরিক কখনোই বিশুদ্ধ তাওহীদবাদীর সমান হতে পারে না। এদের মাঝে ন্যায়বিচারের জন্য আখিরাতের অস্তিত্ব অবশ্যম্ভাবী

              মুমিনদের হিজরত করতে উৎসাহিত করা হয়। এতে অভাব অনটন হতে পারে বটে। কিন্তি দুনিয়ায় বিত্তবান হলেও আখিরাতে যদি ব্যর্থ হতে হয়, এটাই আসল ব্যর্থতা। এরকম লোকদের জন্য আখিরাতে উপর-নিচ থেকে আগুন গ্রাস করার জন্য আসবে। সবুজ ফসল যেভাবে কোনো রোগ বা দুর্যোগে হলুদ হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়, কাফিরদের দুনিয়ার আনন্দ এভাবে শেষ হয়ে যাবে। আর যারা তাগুতকে বর্জন করে এক আল্লাহ অভিমুখী হয়, তারা জান্নাতে উঁচু উঁচু অট্টালিকায় থাকবে

              দুইজন দাসের উপমা দেওয়া হয়। একজন পরস্পর বিরূপ ভাবাপন্ন একাধিক মালিকের অধীনে। আরেকজন একজন মালিকেরই অধীনে। এই দুইজনের মাঝে শেষের জনই ভালো অবস্থায় আছে। মুশরিক ও মুসলিমদের পার্থক্যও এমনই

              Comment


              • #22
                রামাদান - ২১



                ৩৯। সূরা যুমার, আয়াত ৩২ থেকে ৭৫

                আল্লাহপ্রদত্ত সত্যকে প্রত্যাখ্যানকারীরা থাকবে জাহান্নামে। অন্যদিকে মুত্তাকীদের মন্দ কাজ মাফ করে দিয়ে উত্তম কাজের পুরষ্কার দেওয়া হবে। কাফিররা মুসলিমদেরকে আল্লাহ ছাড়া অন্যদের ভয় দেখায়। অথচ ক্ষতি ও অনুগ্রহ করার মালিক কেবল আল্লাহ

                ঘুমের সময় সাময়িকভাবে এবং মৃত্যুর সময় স্থায়ীভাবে মানুষের রুহ আল্লাহর হুকুমেই কবয হয়

                দেবদেবীদেরকে আল্লাহর নিকট সুপারিশকারী মনে করার শির্কি বিশ্বাসকে খণ্ডন করা হয়

                মুশরিকরা আল্লাহকে বিশ্বাস করলেও তাদের সামনে আল্লাহর কথা বলা হলে বিরক্ত হয় আর দেবদেবীদের আলোচনা করলে খুশি হয়। আখিরাতে তারা দুনিয়ার সব সম্পদ মুক্তিপণ দিয়ে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চাইবে। অথচ দুনিয়ায় তারা এসব সম্পদের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখায় না

                বান্দা যত গুনাহ করুক, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে মানা করা হয়। শাস্তি চলে আসার আগেই আল্লাহ অভিমুখী হতে বলা হয় যাতে সময় চলে যাওয়ার পর আফসোস না করা লাগে
                কিয়ামাতের দিন আসমান জমিন আল্লাহর হাতের মুঠিতে থাকা (যেরকম 'হাত' আল্লাহর শানের উপযুক্ত, সেরকম হাত। এর কোনো স্বরূপ প্রকৃতি আমাদের পক্ষে জানা অসম্ভব), মাখলুকদের মূর্ছা যাওয়া, আমলনামা পেশ করা ইত্যাদি ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়

                কাফিরদেরকে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করা হবে তাদের কাছে কি কোনো সতর্ককারী (নবী) আসেনি। তারা বলবে হ্যাঁ এসেছিলো, কিন্তু তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো

                মুত্তাকীদেরকে জান্নাতের দিকে নিয়ে ফেরেশতারা সালাম জানাবেন। মুত্তাকীরা আল্লাহর প্রশংসা ঘোষণা করবে। ফেরেশতাগণ আল্লাহর আরশ ঘিরে তাঁর প্রশংসা সহকারে তাসবীহ পড়বেন


                ৪০। সূরা মুমিন, আয়াত ১ থেকে ৮৫

                সূরা মুমিনের শুরুতে কুরআন নাযিলকারী আল্লাহর কতিপয় বৈশিষ্ট্য বলা হয়- মহাক্ষমতাবান, সর্বজ্ঞ, ক্ষমাকারী, তাওবা কবুলকারী, কঠিন শাস্তিদাতা, সর্বশক্তিমান। কাফিরদের দুনিয়াবি আয়েশি জীবন দেখে বিভ্রান্ত হতে মানা করা হয়। নূহ (আঃ) এর সম্প্রদায় ও তৎপরবর্তী অনেক জাতিই নবীকে অস্বীকার করে আযাবে ধৃত হয়। আরশ বহনকারী ও এর আশপাশের নিকটবর্তী ফেরেশতারা মুমিনদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করেন

                আখিরাতে কাফিরদেরকে বলা হবে- আজ তাদের নিজেদের উপর যত রাগ হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি রাগ আল্লাহর হতো যখন তারা দুনিয়ায় তাঁর আয়াত অস্বীকার করতো। আজ বাঁচার কোনো পথ নেই। দুনিয়ায়ও আল্লাহই রিযক দেন। খালেসভাবে তাঁরই আনুগত্য করতে হবে। কিয়ামাতের দিন আল্লাহ ছাড়া আর কারো রাজত্ব থাকবে না। চোরা চাহনি ও বক্ষে গোপন করা কথারও বিচার হবে

                এখন যারা কুফরি করছে, তাদের চেয়ে শক্তি ও কীর্তিতে অগ্রগামী অনেক জাতিই কুফরি করে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। যেমন- ফিরআউন, হামান, কারুন ও তাদের লস্কর। ফিরআউনের দরবারের এক ব্যক্তি নিজের ঈমান গোপন রেখেছিলেন। মূসা ও বনী ইসরাইলের (আঃ) প্রতি অত্যাচারের হুমকি এবং আল্লাহর দ্বীন নিয়ে ফিরআউনের মশকরা শুনে তিনি কথা বলে উঠেন

                তাওহীদের ব্যাপারে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষণ দেন। পূর্বেকার ধ্বংসপ্রাপ্ত কাফিরগোষ্ঠীগুলোর কথা বলেন। আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখান। ফিরআউনের চক্রান্ত থেকে আল্লাহ সে মুমিনকে রক্ষা করেন।

                বারযাখের জীবনে কাফিরদেরকে তাদের গন্তব্য জাহান্নাম দেখানো হবে। জাহান্নামে কাফির নেতা ও অনুসারীরা পরস্পরকে দোষারোপ করবে। রক্ষী ফেরেশতাদের তারা বলবে আল্লাহর কাছে দুআ করে একদিনের আযাব কমিয়ে দিতে। ফেরেশতারা বলবেন
                , তোমরাই দুআ করো, কাফিরদের দুআ তো নিষ্ফলই হয়

                দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ মুমিনদের সাহায্য করেন। কাফিরদের উৎপীড়নে ভ্রূক্ষেপ না করে ইস্তিগফার, তাসবীহ পাঠ করতে বলা হয়। মুশরিকরা এটা বিশ্বাস করতো যে আসমান-জমিন আল্লাহর সৃষ্টি। অথচ কিয়ামাতের দিন তিনি মানুষকে পুনরুত্থিত করবেন, এটা তাদের বিশ্বাস হয় না। এই দ্বিমুখিতাকে খণ্ডন করা হয়

                রাতদিনের আবর্তন, আসমান-জমিন সৃষ্টি, রিযক প্রদান, মানুষের সৃষ্টি-জন্ম-বৃদ্ধি, জন্ম-মৃত্যু সবই আল্লাহ নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর ইবাদাত খালেসভাবে করতে হবে, মিথ্যা উপাস্যদের মানা যাবে না

                কিয়ামাতের দিন কাফিরদেরকে শাস্তি দিতে দিতে তাদের উপাস্যগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। শাস্তি থেকে বাঁচতে তারা মিথ্যা কথা বলবে যে কোনো উপাস্যকে তারা ডাকতো না

                আল্লাহর নিয়ামাত গবাদি পশু ও যানবাহনের কথা স্মরণ করানো হয়। পূর্বেকার অধিক শক্তিশালী কাফির জাতিগুলোর পরিণামের কথা স্মরণ করানো হয়। কোনো নবীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেবল কাফিরদের আবদার রক্ষার্থে মুজিযা দেখাতেন না। সুস্পষ্ট আযাব দেখার পর অনেকে ঈমান আনে, কিন্তু তখন তা গ্রহণযোগ্য হয় না


                ৪১। সূরা হা-মীম সিজদাহ, আয়াত ১ থেকে ৪৬

                সূরা হা-মীম সিজদাহ (অপর নাম সূরা ফুসসিলাত)-তে বলা হয় কুরআন হলো সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। কাফিররা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দাওয়াহ শুনতে চায় না। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরই মতো মানুষ, শুধু তাঁর কাছে ওয়াহী পাঠানো হয়। এক আল্লাহর ইবাদাত করতে, তাওবা করতে ও যাকাত দিতে বলা হয়

                আল্লাহ কর্তৃক আসমান-জমিন ও এতে বিদ্যমান নিয়মকানুন, তারকারাজি, পাহাড়, রিযক সৃষ্টির বর্ণনা দেওয়া হয়। আদ ও সামুদ জাতির কথা বলা হয় যাদের কাছে সর্বপন্থায় নবীগণ দাওয়াত পৌঁছেছেন। তারা ঠাট্টা করতো যে ফেরেশতার বদলে মানুষ কেন নবী হলো। নিজেদের শক্তিমত্তা নিয়ে গর্ব করতো, অথচ তাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অবাধ্য হতো। ফলে তাদের উপর আযাব আসলো

                কিয়ামাতের দিন পাপীদের চামড়া ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তাদের পাপের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিবে। আল্লাহর হুকুমে এসব অঙ্গ কথা বলছে দেখে তারা বিস্মিত হয়ে যাবে। আল্লাহর ক্ষমতার ব্যাপারে দুনিয়ার জীবনে ভুল ধারণা পোষণ করতো বলেই তো আজ তাদের এ পরিণতি হলো। তাদের সহচর শয়তানেরা তাদের এসব কাজে উদ্বুদ্ধ করতো

                কাফিররা কিয়ামাতের দিন সেসব জিন ও মানুষকে খোঁজ করবে, যারা তাদেরকে বিপথগামী করেছিলো। তাদেরকে পায়ের নিচে দলিত করতে চাইবে। অপরদিকে যারা আল্লাহর ইবাদাতে একনিষ্ঠ ছিলো, তাদের প্রতি ফেরেশতা নাযিল হয়ে অভয় দেয়, দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপারে সুসংবাদ শোনায়

                তার কথাই সবচেয়ে উত্তম যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক আমল করে এবং নিজেকে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত বলে। মন্দকে ভালো দিয়ে মোকাবেলা করতে বলা হয়, তাহলে শত্রুও বন্ধু হয়ে যায়। রাত-দিন, চন্দ্র-সূর্য কেবল আল্লাহর নিদর্শন, এদের সেজদা না করে এদের সৃষ্টা আল্লাহকে সেজদা করতে বলা হয়। আরেকটি নিদর্শন হলো মৃত ভূমিতে বৃষ্টির মাধ্যমে প্রাণ সঞ্চার, এভাবে মৃত মানুষদেরও পুনরুত্থিত করা হবে

                কাফিররা দাবি করে আরব নবীর মুখে অনারবী ভাষায় কুরআন নাযিল হলে সেটা একটা মুজিযা হতো, তারা তা দেখে ঈমান আনতো। আল্লাহ জানিয়ে দেন এখন যেমন তারা ঈমান না আনার ব্যাপারে অজুহাত দিচ্ছে, তখনও অজুহাত দিতো যে অনারবী ওয়াহী তারা বুঝতে পারছে না

                Comment


                • #23
                  রামাদান - ২২



                  ৪১। সূরা হা-মীম সিজদাহ, আয়াত ৪৭ থেকে ৫৪

                  আল্লাহর জ্ঞান সর্বব্যাপী, কিয়ামাত কবে হবে তাও তিনিই জানেন।

                  পুনরুত্থানের পর কাফিররা তাদের মিথ্যা উপাস্যগুলোকে অস্বীকার করবে। মানুষ দুনিয়াবি কল্যাণ পেলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করে ভাবে এটা তার প্রাপ্য, আবার বিপদে পড়লে ঠিকই আল্লাহর কাছে দুআ করতে থাকে। বিশ্বজগতে ও মানুষের নিজেদের মধ্যে আল্লাহ এমন বহু নিদর্শন দেখাবেন যাতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে এই দ্বীনই সত্য


                  ৪২। সূরা শুরা, আয়াত ১ থেকে ৫৩

                  সূরা শুরা'য় বলা হয়েছে, আসমানসমূহে ফেরেশতারা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ ও দুনিয়াবাসীর জন্য ইস্তিগফার করায় এমনভাবে লিপ্ত আছেন যে আসমান ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়

                  আল্লাহ চাইলে সকলকে জোরপূর্বক মুসলিম বানিয়ে দিতেন, কিন্তু এটা দুনিয়াবি পরীক্ষার পরিপন্থী হতো। ওয়াহী পাঠিয়ে তিনি জানিয়ে দেন যেন তাঁর সাথে শির্ক না করা হয়

                  সৃষ্টি এবং রিযক বণ্টনের উপর আল্লাহর ক্ষমতা বর্ণিত হয়। নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা (আঃ)-কে যে দ্বীন অনুসরণ করতে বলা হয়েছিলো, সেই একই দ্বীনের ব্যাপারেই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে ওয়াহী দেওয়া হয়। মুশরিকরা বিভিন্ন মনগড়া ধর্মমত উদ্ভাবন করে একে খণ্ডবিখণ্ড করেছে

                  যারা কিয়ামাতে বিশ্বাস করে না, তারা তা দ্রুত নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ করে। আর মুমিনরা কিয়ামাতের ব্যাপারে ভীত থাকে। আল্লাহ একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে না রাখলে কাফিরদের উপর ধ্বংস চলেই আসতো

                  যে আখিরাতের ফসল চায়, আল্লাহ তাকে সেটিই বাড়িয়ে দেন। আর যে দুনিয়া চায়, আল্লাহ তাকে দুনিয়ারই কিছু অংশ দেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাওয়াতের কাজের বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক চান না। তারপরও এতটুকু তো তাঁর পাওনা আছেই যে আত্মীয়তার মর্যাদা রক্ষা করে মুশরিকরা তাঁকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। তিনি মিথ্যা নবী হলে আল্লাহই তাঁর মিশনকে ব্যর্থ করে দিতেন।

                  আল্লাহ যদি সকল বান্দার জন্য রিযক অবারিত করে দিতেন, তারা অবাধ্যতায় লিপ্ত হতো। তিনি যাকে যতটুকু চান, ততটুকু রিযক দেন

                  বড় বড় জাহাজ বানিয়ে চলাফেরা করা মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত বাতাস ও বিপদআপদের সামনে কতটা অসহায়, তা তুলে ধরা হয়

                  মুমিনদের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়- কবিরা গুনাহ ও অশ্লীল কাজ পরিহার, রাগ উঠলে ক্ষমা করা, সালাত কায়েম, পরামর্শক্রমে কাজ করা, আল্লাহপ্রদত্ত রিযক হতে সৎকাজে ব্যয়, জুলুমকে প্রতিহত করা, সমপরিমাণ প্রতিশোধ নেওয়া বা ক্ষমা করা

                  আখিরাতে কাফিরদের পরিণতি বর্ণনা করে সেই দিন আসার আগেই সাবধান হতে বলা হয়েছে। আল্লাহ যাকে চান তাকে পুত্র বা কন্যা দেন, কাউকে উভয়ই মিলিয়ে দেন, কাউকে বন্ধ্যা করেন। দুনিয়ায় মানুষকে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি যে তারা সরাসরি আল্লাহর সাথে কথা বলবে। ওয়াহী দ্বারা, কোনো পর্দার আড়াল থেকে বা বার্তাবাহক পাঠিয়ে তিনি তাঁর বার্তা জানান। আর এভাবেই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি ইসলামের ব্যাপারে ওয়াহী পাঠানো হয়েছে


                  ৪৩। সূরা যুখরুফ, আয়াত ১ থেকে ৮৯

                  সূরা যুখরুফে বলা হয়, কুরআন পূর্বে থেকেই লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত। মানুষের অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ হিদায়াতের বাণী পাঠানো বন্ধ করবেন না। পূর্বেকার শক্তিশালীতর নাফরমান জাতিগুলোর ধ্বংসপ্রাপ্তির কথা স্মরণ করানো হয়। আসমান জমিন সৃষ্টি, জমিনে পথ তৈরি, বৃষ্টি বর্ষণ করে মৃত ভূমিকে পুনর্জীবিত করা, জড় ও জীব যানবাহনগুলোকে মানুষের অধীন করে দেওয়া- সবই আল্লাহর নিয়ামাত

                  মুশরিকরা ফেরেশতাদের আল্লাহর কন্যা আখ্যায়িত করে পূজা করে, অথচ তাদেরকে আল্লাহ কন্যাসন্তান দান করলে মন খারাপ করে। তারা তাদের বাপদাদাদের এসব পূজা করতে দেখেছে বলে এটাকেই সঠিক মানে। পূর্বেকার মুশরিকরাও এই বাপদাদার অযৌক্তিক অজুহাতই হাজির করতো। আরবদের পূর্বপুরুষ ইবরাহীম (আঃ) মূর্তিপূজক ছিলেন না, বরং এর ঘোর বিরোধী ছিলেন

                  কাফিররা আপত্তি করে বড় কোনো বিত্তশালীকে নবুওয়ত দেওয়া হলো না কেন। আল্লাহ জানিয়ে দেন পার্থিব বিত্ত বৈভব হকের মানদণ্ড নয়। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ একে অপরের সেবা নিয়ে একটি সুষম সমাজ গড়ে, এজন্যই আল্লাহ সম্পদে পার্থক্য রেখেছেন। সকলে কাফির হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকলে আল্লাহ কাফিরদের ঘরের ছাদ, দরজা, খাট, পালঙ্ক সোনারূপা দিয়ে গড়ে দিতেন। আখিরাতের দিন কাফিররা তাদের সঙ্গী শয়তানদের দেখে আফসোস করবে যে তাদের সাথে যদি দুনিয়ায় ঘনিষ্ঠতা না করতো!

                  ফিরআউন তার কওমকে বোকা বানানোর জন্য নিজের রাজত্ব আর মূসার (আঃ) গরিবির দিকে ইঙ্গিত করতো। আল্লাহপ্রদত্ত বালা-মুসিবত আসলে ঠিকই মূসাকে (আঃ) দুআ করতে বলতো

                  ঈসা (আঃ) যে নিজেকে রব্ব দাবি করেননি, বরং আল্লাহর ইবাদাত করতে বলেছেন, তা বর্ণনা করা হয়। তাঁর আগমন কিয়ামাতের একটি আলামত। দুনিয়ার অন্তরঙ্গ বন্ধুরা কিয়ামাতের দিন পরিণত হবে শত্রুতে, তবে মুত্তাকীগণ ব্যতীত

                  মুত্তাকীরা জান্নাতে বিবিধ নিয়ামাত ভোগ করবে। কাফিররা নিজেদের মৃত্যু কামনা করবে, কিন্তু তার বদলে অনন্তকাল তারা শাস্তি ভোগ করতে থাকবে

                  কাফিররা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ব্যাপারে যে গোপন চক্রান্ত করতো, তা উন্মোচন করে দিয়ে সাবধান করা হয় যে আল্লাহর জ্ঞান থেকে কোনো কিছু আড়াল করা অসম্ভব


                  ৪৪। সূরা দুখান, আয়াত ১ থেকে ৫৯

                  সূরা দুখানের শুরুতে কুরআন নাযিলের রাত্রি শবে কদর সম্পর্কে বলা হয়েছে

                  মক্কার কাফিরদেরকে এক চরম দুর্ভিক্ষ দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এমনকি তারা ক্ষুধার জ্বালায় চামড়া খেতো এবং আসমানকে ধোঁয়ার মতো দেখতো। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে তারা দুআ করতে বলে এবং বিপদ সরে গেলে ঈমান আনার প্রতিশ্রুতি দেয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা করেন, কিন্তু এরপর কাফিররা ঈমান আনেনি। আল্লাহ তাদেরকে আখিরাতের স্থায়ী আযাবের ব্যাপারে জানিয়ে দেন

                  ফিরআউনের কওমের ধ্বংস হওয়ার বিবরণ দেওয়া হয়। তারা তাদের কত বাগান, প্রস্রবণ, শস্যক্ষেত্র আর সুরম্য অট্টালিকা ফেলে রেখে ধ্বংস হয়ে গেলো, যা অন্য জাতি ভোগ করলো। তাদের জন্য না আসমান কাঁদলো, না জমিন কাঁদলো

                  এছাড়া তুব্বার সম্প্রদায়ের ধ্বংস হওয়ার দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়। তুব্বা ইয়ামানের রাজাদের উপাধি। তাদের কোনো এক রাজা মূসা (আঃ) এর দ্বীনের অনুসারী ছিলেন, কিন্তু তৎপরবর্তী লোকেরা শির্কে লিপ্ত হয়ে আযাবে ধ্বংস হয়

                  বিচারদিবসের অস্তিত্ব না থাকলে সমগ্র সৃষ্টিজগত এক অনর্থক লীলাখেলা হতো। কিন্তু আল্লাহ একে যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন

                  কাফিররা যাক্কুম গাছ ও তপ্ত পানির আযাব ভোগ করবে, সেই সাথে তাদের দুনিয়াবি প্রতিপত্তির কথা স্মরণ করিয়ে খোঁটা দেওয়া হবে। আর মুত্তাকীরা জান্নাতি পোশাক পরে ডাগর চোখের হুরদের সাথে অনন্তকাল জান্নাতি উদ্যানরাজি ও প্রস্রবণে থাকবে


                  ৪৫। সূরা জাসিয়া, আয়াত ১ থেকে ৩৭

                  সূরা জাসিয়ার শুরুতে আসমান ও জমিনে ছড়ানো আল্লাহর বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে বলা হয়। মানুষ ও পশুপাখির সৃষ্টি, রাতদিনের আসাযাওয়া, বৃষ্টি, ফসল, বায়ু, সাগর, নৌযান- সবই আল্লাহর নির্দেশে মানুষের খেদমতে নিয়োজিত

                  আল্লাহর আয়াতকে ঠাট্টা বিদ্রুপকারীদের চরম শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এদের প্রতিশোধ না নিতে বলা হয় এবং আল্লাহর হাতে এদের ফলাফল ছেড়ে দিতে বলা হয় (মাক্কি যুগে)

                  বনী ইসরাইলকে কিতাব, রাজত্ব ও নবুওয়তের মতো দৌলব দেওয়ার পরও তারা নিজেদের মাঝে শত্রুতা করে বিভিন্ন মতভেদ সৃষ্টি করেছে

                  জালিমগণ একে অন্যের বন্ধু। আর আল্লাহ মুত্তাকীদের বন্ধু। আখিরাত অস্বীকারকারীদের মতে ভালো-খারাপ সকলের পরিণতি একই, মরে গেলে সব শেষ। সৃষ্টির যথাযথ উদ্দেশ্য বর্ণনা করে তাদের এ অযৌক্তিক বিশ্বাস খণ্ডন করা হয়

                  কিয়ামাত দিবসে কাফিরদের অবস্থার ভয়াবহ বর্ণনা দেওয়া হয়

                  Comment


                  • #24
                    রামাদান - ২৩



                    ৪৬। সূরা আহক্বাফ, আয়াত ১ থেকে ৩৫

                    সূরা আহক্বাফের শুরুতে বলা হয়, আল্লাহ আসমান জমিনকে যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। অপরদিকে মিথ্যা উপাস্যরা কোনো কিছুই সৃষ্টি (শূন্য থেকে অস্তিত্বে আনয়ন) করেনি। দেবদেবীর অস্তিত্বের পক্ষে আসমানী কিতাব বা বুদ্ধিবৃত্তিক কোনো প্রমাণও নেই। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যদি মিথ্যা নবী হতেনই, তাহলে আল্লাহই তাঁর কর্মকাণ্ড রুদ্ধ করে দিতেন। আহলে কিতাবদের মাঝে অনেকে ঈমান আনবে এ ভবিষৎবাণী করে মুশরিকদের সতর্ক করা হয়

                    কাফিররা পার্থিব বৈভবের কারণে ভাবতো সত্যিকার ওয়াহী যদি আসেই, তাহলে তাদের মতো ধনীদের কাছেই আসা উচিত। অথচ আরবি কিতাবে পূর্বেকার ইসরাইলি নবীদের কাহিনী পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণিত হচ্ছে, এটাই রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবুয়তের প্রমাণ। পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও শির্ক না করার হুকুম বর্ণিত হয়। কাফিররা তাদের ভোগ্যবস্তু দুনিয়ায় শেষ করে ফেলেছে, আখিরাতে কোনো প্রতিদান পাবে না

                    আদ জাতির বর্ণনা দেওয়া হয়। তারা দৃষ্টি, শ্রবণ ও চিন্তাশক্তি কাজে লাগিয়ে তাওহীদ বোঝার চেষ্টা করেনি। আযাবের মেঘ দেখে তারা ভেবেছিলো এটা উপকারী বৃষ্টি। এছাড়া আরবের আশপাশের আরো অনেক জাতিরই এমন পরিণাম হয়েছে

                    জিনদের একটি দল কর্তৃক কুরআন শুনার কাহিনী বর্ণিত হয়। তারা বুঝতে পারে এটি পূর্বেকার নবীদের নিকট পাঠানো ওয়াহীরই সিলসিলা। তারা নিজ জাতির নিকট ফিরে গিয়ে তাদেরও ইসলামের দাওয়াত দেয়


                    ৪৭। সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত ১ থেকে ৩৮

                    সূরা মুহাম্মাদের (অপর নাম সূরা ক্বিত্বাল) শুরুতে জানানো হয়েছে যে কাফিরদের ভালো কাজের কোনো প্রতিদান আখিরাতে নেই। আর মুমিনদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়

                    জিহাদ ও যুদ্ধবন্দী সংক্রান্ত বিধান, সরাসরি আযাব না দিয়ে জিহাদের বিধানের হেকমত ও শহীদের মর্যাদা বর্ণিত হয়

                    মুমিনদের জন্য জান্নাতের বর্ণনা দেওয়া হয়। চতুষ্পদ জন্তুর মতো দুনিয়া ভোগ করা কাফিরদের পরিণাম বর্ণিত হয়

                    মুনাফিকরা রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কথার গুরুত্ব দেয় না। এদের তিরস্কার করা হয়েছে। নিজের ও অন্য মুমিনদের ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য ইস্তিগফার করার হুকুম করা হয়েছে

                    অত্যাচারিত হওয়ার সময় জিহাদের বিধানের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকা কিন্তু বিধান আসার পর ভয়ে মূর্ছা যাওয়ার স্বভাবকে তিরস্কার করা হয়। জিহাদবিমুখতার ফলে দুনিয়ায় অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে

                    মুনাফিকরা মুসলিম ও কাফির উভয় জাতির কিছু কিছু বিধান মানে। মৃত্যুর সময় এদের ভয়াবহ অবস্থার কথা বর্ণিত হয়

                    শত্রুর সামনে হীনবল হয়ে সন্ধি প্রস্তাব দিতে নিষেধ করা হয় (সাধারণভাবে সন্ধি নিষিদ্ধ নয়) এবং জিহাদে সম্পদ ব্যয় করতে বলা হয়। আল্লাহ যদি সমুদয় সম্পদ দাবি করতেন, তাও দিতে তৈরি থাকা উচিত। কিন্তু তিনি অল্পই চেয়েছেন। আল্লাহ অভাবমুক্ত, মানুষ অভাবী। নিজেদের আখিরাতি ফায়দার জন্যই তাই সম্পদ ব্যয় করতে হবে


                    ৪৮। সূরা ফাতহ, আয়াত ১ থেকে ২৯

                    সূরা ফাতহ নাযিল হয় হুদায়বিয়ার ঘটনার আলোকে। হুদয়বিয়া চুক্তিকে আপাতদৃষ্টে অপমানজনক মনে হলেও দুনিয়া ও আখিরাতে যে তা কল্যাণকর হবে, সে কথা বলা হয়। আল্লাহর সর্বব্যাপী ক্ষমতা এবং মুশরিক ও মুনাফিকদের জন্য নির্ধারিত শাস্তির কথা বলা হয়

                    উসমান (রাঃ)-কে হত্যার সংবাদ শুনে সাহাবাগণ প্রতিশোধের জন্য যে শপথ করেন (বায়আতে রিযওয়ান), তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়

                    মুসলিমরা কাফিরদের হাতে মরে গিয়ে আর ফেরত আসবে না- এই ভেবে মুনাফিকরা পেছনে রয়ে গিয়েছিলো। মুসলিমদের ফিরে আসতে দেখে তারা বলে পরিবার পরিজনের দেখভাল করার জন্য থেকেছিলো। গনিমত সংগ্রহের সময় ঠিকই আবার সাথে যেতে চাইবে। এদেরকে দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও আখিরাতের শাস্তির কথা বলা হয়। জিহাদে না যেতে পারার বৈধ ওজরসমূহ বর্ণিত হয়

                    আল্লাহ সেই বছরের জন্য মুসলিমদের হাতকে মক্কা আক্রমণ থেকে যথাযথ কারণে বিরত রেখেছেন। এতে মক্কায় বসবাসরত মুসলিমরা কোল্যাটেরাল ড্যামেজ হওয়া থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু শীঘ্রই যে মুসলিমরা মক্কা, হুনাইন ইত্যাদি বিজয় করে প্রচুর গনিমত এবং আখিরাতের পুরষ্কার পাবে, তার ভবিষৎবাণী করা হয়

                    রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বপ্নে দেখেছিলেন তিনি সাহাবিদের নিয়ে উমরা করছেন, কিন্তু সে বছর উমরা না করে ফিরতে হয়। আল্লাহ জানিয়ে দেন স্বপ্নে প্রদত্ত ওয়াহী সত্যই ছিলো, পরবর্তীতে ঠিকই তাঁরা উমরা করবেন

                    সাহাবা ও মুমিনগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মাঝে দয়ার্দ্র। আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় তাঁরা রুকু সিজদা করেন। তাওরাত ইঞ্জিলেও তাঁদের প্রশংসা করা হয়েছে


                    ৪৯। সূরা হুজুরাত, আয়াত ১ থেকে ১৮

                    সূরা হুজুরাতের শুরুতে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সামনে আওয়াজ উঁচু করা ও তাঁকে বেয়াদবির সাথে ডাকার ব্যাপারে বিধিনিষেধ বর্ণিত হয়েছে

                    পাপাচারীর আনীত সংবাদে বিশ্বাস করার আগে যথাযথভাবে যাচাই করতে বলা হয়েছে

                    সমস্ত মুসলিম ভাই-ভাই। মুসলিমদের দুটি পক্ষের কলহ বাঁধলে সমাধানের নিয়ম বর্ণিত হয়েছে

                    মুসলিমগণ একে অপরকে উপহাস, দোষারোপ, মন্দ নামে ডাকা, ধারণা-অনুমান, গোপন ত্রুটি অন্বেষণ, গীবত নিষিদ্ধ করা হয়। বর্ণ-বংশ-লিঙ্গ দিয়ে নয়, তাকওয়া দিয়ে আল্লাহর নিকট মর্যাদাবান হওয়া যায়

                    বেদুইনদের অনেকে মৌখিক কালেমা পড়ে নিজেকে মুমিন দাবি করতো। প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়- ঈমান আনার পর কোনো সন্দেহ না করা ও জানমাল দিয়ে জিহাদ করা

                    ইসলাম গ্রহণ করে আমরা আল্লাহর উপকার করিনি, আল্লাহই আমাদের ইসলাম দান করে অনুগ্রহ করেছেন


                    ৫০। সূরা ক্বাফ, আয়াত ১ থেকে ৪৫

                    সূরা ক্বাফে কুরআন মাজীদের কসম করে আখিরাতের ব্যাপারে কাফিরদের অাপত্তির জবাব দেওয়া হয়। চারপাশের সৃষ্টিরাজির বর্ণনা দিয়ে বলা হয় আল্লাহ তো এসব সৃষ্টি করে ক্লান্ত হয়ে যাননি। তাহলে আখিরাতের পুনঃসৃষ্টি অবাস্তব হবে কেন?

                    আল্লাহর সর্বব্যাপী জ্ঞান ও আমল লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। কিয়ামাতের পরও দুজন ফেরেশতা সাথে থাকবেন যাদের একজন হাশরের মাঠের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবেন, আরেকজন আমলনামা বর্ণনা করবেন। কাফির ও তাকে বিভ্রান্তকারী শয়তান পরস্পরকে দোষারোপ করবে। তাদের ঝগড়া করতে মানা করে জাহান্নামে পাঠানো হবে

                    মুত্তাকীদের জন্য জান্নাতের মনোহর বর্ণনা দেওয়া হয়

                    ফরয সালাত ও নফল তাসবীহ পাঠের হুকুম করা হয়েছে


                    ৫১। সূরা যারিয়াত, আয়াত ১ থেকে ৩০

                    সূরা যারিয়াতে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় আখিরাতের বাস্তবতার কথা তুলে ধরে কাফিরদের অনুমানভিত্তিক কথাবার্তা খণ্ডন করা হয়েছে। মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে তাহাজ্জুদ পড়া, সাহরির সময় ইস্তিগফার করা, যাচক ও বঞ্চিতকে দান করার কথা বলা হয়

                    যে ফেরেশতাগণ ইবরাহীম (আঃ) ও সারা (আঃ) এর বৃদ্ধ বয়সেও ইসহাক (আঃ) এর জন্মের সুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন, তার বৃত্তান্ত বর্ণিত হয়

                    Comment


                    • #25
                      রামাদান - ২৪


                      ৫১। সূরা যারিয়াত, আয়াত ৩১ থেকে ৬০

                      কওমে লূত, ফিরআউন, আদ, সামূদ এবং কওমে নূহের অবাধ্যতা, বর্তমানের কাফিরদের সাথে তাদের সাদৃশ্য ও পরিণাম বর্ণিত হয়েছে

                      আসমান-জমিন এবং জোড়ায় জোড়ায় বস্তু সৃষ্টিকারী এক আল্লাহর ইবাদাত করতে এবং তাঁর সাথে শরীক না করতে হুকুম করা হয়

                      পূর্বের ও বর্তমানের কাফিররা নিজ নিজ যুগের নবীদের উন্মাদ, যাদুকর ইত্যাদি অপবাদ দেয়। এদের সকলেরই শাস্তির পালা এসেছে বা আসবে

                      জিন ও মানুষকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের কাছে রিযক চান না, তিনি নিজেই রিযকদাতা


                      ৫২। সূরা তূর, আয়াত ১ থেকে ৪৯

                      সূরা তূরে বিভিন্ন বস্তুর কসম করে আসন্ন অবশ্যম্ভাবী আযাবের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। কাফিরদের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। জান্নাতে মুত্তাকী এবং তাদের অনুগামী সন্তান সন্ততির মধুর পুনর্মিলন, বাসস্থান, পানাহার, বসার জায়গা, সঙ্গী ও খুনসুটির বর্ণনা দেওয়া হয়। পৃথিবীর ভয়ের জীবন থেকে এই নিরাপদ জীবনে আনায় তারা আল্লাহর শোকরগুজার হবে

                      কাফিররা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে কবি বলে যে অপবাদ দিতো, সে ব্যাপারে তাদের বুদ্ধিমত্তার কাছেই প্রশ্ন রাখা হয়েছে। কারণ স্বভাষী হিসেবে তারা স্পষ্টতই বুঝতে পারছিলো কবিদের স্বরচিত কথাবার্তা এরকম হয় না। মুজিযা দেখার আবদার করলেও এরা যে সেগুলোকে প্রাকৃতিক কোনো ব্যাখ্যা দিয়ে এড়িয়ে যাবে, তা উল্লেখ করা হয়

                      ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা, আর তাদের নিজেদের পছন্দ পুত্রসন্তান- এরকম হাস্যকর আকিদাকে তিরস্কার করা হয়। আসন্ন আযাবের অপেক্ষায় তাদেরকে ছেড়ে দিতে বলা হয়। ইবাদাত ও তাসবীহ পাঠ করে আত্মিক শক্তি লাভ করার নিয়ম জানানো হয়, যাতে এসব যন্ত্রণা মোকাবেলা সহজ হয়


                      ৫৩। সূরা নাজম, আয়াত ১ থেকে ৬২

                      সূরা নাজমে নক্ষত্রের (যা দেখে মানুষ পথ চেনে) কসম করে বলা হয়েছে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পথভ্রষ্ট নন। জিবরীল (আঃ) তাঁর নিকট ওয়াহী নিয়ে আসার দৃশ্য বর্ণিত হয়। জীবরীলকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুবার তাঁর প্রকৃত আকৃতিতে দেখেছেন। একবার ওয়াহী আনার সময়, আরেকবার মিরাজে সিদরাতুল মুনতাহা নামক কুল গাছের নিকটে

                      লাত, মানাত, উযযা দেবীকে কাফিররা আল্লাহর কন্যা বলতো। তাদের এ শির্কি বিশ্বাস খণ্ডন করে বলা হয় এগুলো অস্তিত্বহীন সত্ত্বা, তাদের বাপদাদার রাখা কাল্পনিক কিছু নাম মাত্র। ফেরেশতাদেরও তারা কল্পিত মেয়েলি নামে ডাকে। দেবদেবীদের তারা আল্লাহর নিকট সুপারিশকারী ভাবে, অথচ সম্মানিত ফেরেশতারাও এরকম সুপারিশের অধিকার রাখেন না

                      দুনিয়ার জীবনকে সবকিছু মনে করা ব্যক্তিদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা দেখানো হয়েছে। কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, কদাচিৎ ভুল করা মুমিনদের ক্ষমার ঘোষণা দেওয়া হয়। আত্মপ্রশংসা করতে নিষেধ করা হয়

                      মানুষ যা চায় তা-ই পাবে না। সে যা কর্মপ্রচেষ্টা করবে, তার প্রতিদানই পাবে। আখিরাতে সব কাজের প্রতিফল দিয়ে দেওয়া হবে

                      হাসি-কান্নার উপলক্ষ দান, জীবন-মৃত্যু দান, তুচ্ছ পানি হতে নারী-পুরুষ সৃষ্টি, পূর্বেকার অবাধ্য জাতিসমূহের ধ্বংস আল্লাহই ঘটান। একদল কাফির শি'রা নামক এক বিশাল নক্ষত্রের পূজা করে, সেই নক্ষত্রের মাবুদও আল্লাহ।

                      অতএব হাসিঠাট্টা ও অহংকার ত্যাগ করে আল্লাহর আযাবের ভয় ও দয়ার আশায় ক্রন্দন এবং সেজদা করতে হবে


                      ৫৪। সূরা ক্বমার, আয়াত ১ থেকে ৫৫

                      সূরা ক্বমারের শুরুতে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করার মুজিযার কথা উল্লেখ করা হয়। এর সংঘটন কিয়ামাত নিকটবর্তী হওয়ার আলামত। তা দেখেও কাফিরদের ঈমান না আনাকে তিরস্কার করা হয়। এর আগেও কিতাবের জ্ঞানগর্ভ বাণী শুনেও তারা কুফরে অটল থেকেছে। কিয়ামাত দিবসের ভয়াবহতা দেখে তারা বিমূঢ় হয়ে যাবে

                      কওমে নূহ, আদ, সামূদ, কওমে লূত ও ফিরআউনের অবাধ্যতা ও পরিণাম বর্ণিত হয়। মুজিযা যে তারা কীভাবে কুফরি করতো, তা বলা হয়। এখনকার কাফিররা তো তাদেরই একটা দল, শক্তিতেও তাদের চেয়ে কম। এদের জন্য দুনিয়ার আযাব তো আছেই, সেই সাথে আছে আখিরাতের ভয়াবহতা। আল্লাহ কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। অতএব আছে কি কেউ উপদেশ গ্রহণ করার?


                      ৫৫। সূরা আর-রহমান, আয়াত ১ থেকে ৭৮

                      সূরা আর-রহমানে জিন ও মানুষের প্রতি দয়াময় আল্লাহর বিবিধ নিয়ামাতের কথা স্মরণ করানো হয়েছে যেগুলো অস্বীকারের উপায় নেই। কুরআন শিক্ষা দান, মাটি থেকে মানুষ ও আগুন থেকে জিন সৃষ্টি, ভাবপ্রকাশের ক্ষমতা, চাঁদ, সূর্য, বৃক্ষ, আকাশ, জমিন, ফলমূল, ফসল, উদয়াচল, অস্তাচল, সাগরতলের দ্রব্যাদি ও তাতে চলমান যান

                      আল্লাহ ছাড়া এ সবই ধ্বংস হবে। মানুষ ও জিন এই দুই ওজনদার সৃষ্টিকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। কিয়ামাত সংঘটন জাহান্নামের ভেতর কাফিরদের ছুটোছুটির ভয়াল চিত্র আঁকা হয়

                      মুত্তাকীদের জন্য জান্নাতে রাখা একাধিক উদ্যান, প্রস্রবণ, এগুলোতে বিদ্যমান ফলমূল, কার্পেট, বসার জায়গা এবং পূর্বে কেউ স্পর্শ করেনি এমন পবিত্র সঙ্গীর বর্ণনা দেওয়া হয়


                      ৫৬। সূরা ওয়াক্বিয়া, আয়াত ১ থেকে ৯৬

                      সূরা ওয়াক্বিয়া'য় বলা হয় অবশ্যম্ভাবী কিয়ামাত সবকিছুকে উঁচুনিচু করে দিবে, দুনিয়ার অহংকারীরা নীচু হয়ে যাবে, অবহেলিত মুমিনরা উঁচু মর্যাদার হবে। বিচারের পর সকলে তিন দলে ভাগ হবে- ডান হাতের দল, বাম হাতের দল ও অগ্রগামী দল

                      অগ্রগামীরা তাকওয়ার উঁচু পর্যায়ের লোক। তাঁদের অধিকাংশ হবেন পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে, অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের থেকে। তাঁদের পাওনা জান্নাতের বাগান, প্রস্রবণ, ফলমূল, গোশত, পানপাত্র, পানীয়, চিরকিশোর ওয়েটার, বসার জায়গা, হুর ইত্যাদির বর্ণনা দেওয়া হয়

                      ডান হাতে আমলনামা পাওয়া ব্যক্তিরাও নেককার। তাঁদের অনেকে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে, অনেকে পরবর্তীদের মধ্য হতে। তাঁদের জান্নাতেরও বর্ণনা দেওয়া হয়। নবযৌবনশীলা কুমারী প্রেমময়ী নারীদের কথা বলা হয়, যা দ্বারা দুনিয়ার নেককার নারীও বোঝানো হতে পারে, হুরও বোঝানো হতে পারে

                      বাম হাতে আমলনামা প্রাপ্তরা হলো কাফিররা। তাদের প্রাপ্য জাহান্নামী কাঁটাদার গাছ ও তপ্ত পানির বর্ণনা দেওয়া হয়

                      মানুষের জন্ম-মৃত্যু, ফসল উদগমন, বারিপাত সবই আল্লাহর হুকুমের অধীন। তিনি দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করে আখিরাত কায়েম করতে পারবেন না- এটা কেমন করে কেউ বিশ্বাস করতে পারে?

                      জ্যোতিষীরা খবরাদি পায় নাপাক জিনশয়তানদের কাছ থেকে। অথচ কুরআন নিয়ে আসেন পবিত্র ফেরেশতাগণ। এতে বর্ণিত আখিরাত সত্য। সেদিন ডানদল, বামদল, অগ্রগামী দল সবাই নিজ নিজ প্রতিদান পাবে


                      ৫৭। সূরা হাদীদ, আয়াত ১ থেকে ২৯

                      সূরা হাদীদ নাযিল হয় মক্কা বিজয় করে রাষ্ট্র ক্ষমতা অধিকার করে মুসলিমদের শক্তিশালী অবস্থা চলে আসার পর। মুসলিমদেরকে দুনিয়াবিমুখ করতে আল্লাহপ্রদত্ত সম্পদ থেকে দানসদকা করার হুকুম করা হয়। এগুলো তো আল্লাহরই দেওয়া সম্পদ, তাই দান করতে কার্পণ্য করা অনুচিত। দানসদকা হলো আল্লাহকে প্রদত্ত উত্তম ঋণ, যার যথাযথ প্রতিদান তিনি দিবেন

                      কিয়ামাতের দিন মুমিন নারীপুরুষদের নূর দেওয়া হবে, যা দিয়ে তারা পথ চলবে। মুনাফিকরা সেই আলো দিয়ে পথ চলতে চাইবে। কিন্তু তাদের মাঝে অন্তরাল সৃষ্টি করে মুমিনদের রহমতে রাখা হবে আর মুনাফিকদের আযাব দেওয়া হবে

                      মুমিনদেরকে দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত থাকতে বলা হয়। দুনিয়ার ভোগবিলাস তো সবুজ থেকে হলুদ হয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ফসলের মতো যার জৌলুস অস্থায়ী। আর দুনিয়ায় যা বিপদআপদ আসে, তা আমাদের সৃষ্টির আগেই তাকদিরে লেখা ছিলো। তাই ভালো কিছু পেয়ে আত্মহারা হওয়া যাবে না, বিপদে পড়লে একেবারে ভেঙে পড়া যাবে না। আল্লাহর রাস্তায় দানসদকা করতে হবে। কৃপণ ও কৃপণতায় উৎসাহদাতা অহংকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না

                      আল্লাহ রাসূল ও কিতাব পাঠানোর পাশাপাশি তুলাদণ্ড ও লোহা নাযিল করেছেন। যাতে মুমিনরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে এবং ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে

                      খ্রিষ্টান সন্ন্যাসীরা বৈরাগ্যবাদী জীবনযাপন করে আল্লাহকে খুশি করতে চাইতো। কিন্তু এভাবে সাংসারিক দায়িত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া আল্লাহর হুকুম নয়

                      Comment


                      • #26
                        রামাদান - ২৫



                        ৫৮। সূরা মুজাদালাহ, আয়াত ১ থেকে ২২

                        সূরা মুজাদালাহ'র শুরুতে জাহিলি যুগের একটি তালাক রীতি 'যিহার' এর অসারতা এবং যিহার করে ফেললে এর কাফফারার বিধান আলোচিত হয়

                        কাফির-মুনাফিকরা মুসলিমদের সাথে শান্তিচুক্তির পরও নিজেদের মাঝে কানাকানি করে ষড়যন্ত্র করতো। আল্লাহ তা উন্মোচন করে দেন। মুসলিমদের নিজেদের মাঝে কানাকানি করে কথা বলা সংক্রান্ত আদব-শিষ্টাচার বর্ণিত হয়েছে

                        মজলিসে বসা, অন্যদের জায়গা করে দেওয়া, আমিরের নির্দেশে প্রয়োজনে একজন উঠে গিয়ে আরেকজনকে বসানো সংক্রান্ত বিধান বর্ণিত হয়েছে

                        মুনাফিকরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলার নাম করে তাঁর সময়ক্ষেপণ করতো। এভাবে সময় চাওয়ার আগে সদকা করার হুকুম করা হয়। ফলে সাহাবাগণ তো তা পালন করেন, মুনাফিকরা খরচের ভয়ে রাসূলের সময় নষ্ট করা ছেড়ে দেয়

                        মুনাফিকরা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে। তারা এ দলেরও নয়, সে দলেরও নয়। এদেরকে বলা হয়েছে হিযবুশ শয়তান বা শয়তানের দল। আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধাচারী যদি পিতা, পুত্র বা ভাইও হয়, তবুও মুমিনরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখেন না। এঁরা আল্লাহর দল বা হিযবুল্লাহ


                        ৫৯। সূরা হাশর, আয়াত ১ থেকে ২৪

                        সূরা হাশর নাযিল হয় ইহুদী গোত্র বনু নাযিরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। শান্তিচুক্তি সত্ত্বেও তারা রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হত্যাচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তাদেরকে মদীনা থেকে নির্বাসনে যেতে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। মুনাফিকদের সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে ডেডলাইনের পরও তারা রয়ে যায়। মুসলিমরা তাদের দূর্গ অবরোধ করে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন। অবরোধের উদ্দেশ্যে মুসলিমরা কিছু গাছ কাটেন। অনেকে ভেবেছিলেন কাজটা ঠিক হয়নি।

                        আল্লাহ জানিয়ে দেন এমন প্রয়োজনের মুহূর্তে গাছ কাটা দোষের নয়। এছাড়া বনু নাযিরের ফেলে যাওয়া সম্পদ ফাই হিসেবে মুসলিমদের হস্তগত হয়। জিহাদ করে অর্জিত হয় গনিমত, আর আক্রমণ ছাড়াই হস্তগত সম্পদ ফাই। ফাই বণ্টনের বিধান বর্ণিত হয়

                        মুনাফিকদের স্বভাব উন্মোচন করা হয়। তারা বনু নাযিরকে আশ্বস্ত করেছিলো মুসলিমরা আক্রমণ করলে তারা প্রতিরোধ করবে বলে। কিন্তু শেষে কোনো সাহায্য করেনি। এরা অত্যন্ত ভীতু একটা জাতি। শয়তান যেভাবে মানুষকে দুনিয়াবি লোভ দেখিয়ে কাফির বানিয়ে তাদের ছেড়ে চলে যায়, মুনাফিকরাও এমন। এদের বাইরে থেকে দেখতে মনে হয় ঐক্যবদ্ধ, আসলে তাদের নিজেদের মাঝে অনেক বিরোধ। আখিরাতে এরা কাফিরদের সাথে জাহান্নামি হবে


                        ৬০। সূরা মুমতাহিনা, আয়াত ১ থেকে ১৩

                        সূরা মুমতাহিনা নাযিল হয় হুদায়বিয়া সন্ধি ও মক্কা বিজয়ের মাঝামাঝি সময়ে। কাফিররা ততদিনে সন্ধি ভেঙে ফেলেছে আর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কা আক্রমণের গোপন প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মক্কার এক গায়িকা ইসলাম গ্রহণ না করে মদীনায় এসে আর্থিক সাহায্য চায়। কারণ মক্কায় এখন আর গানের আসর জমার অবস্থা নেই। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে সাহায্য দিয়ে বিদায় করেন। বদর যুদ্ধে অংশ নেওয়া এক সাহাবি হাতিব (রাঃ)। তিনি ইয়ামান থেকে মক্কায় এসেছিলেন, পরে মদীনায় হিজরত করেন। অন্য সাহাবাদের যেসব আত্মীয় মক্কায় রয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের ভরসা ছিলো যে আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে কুরাইশ কাফিররা তাঁদের আত্মীয়দের ক্ষতি করবে না। হাতিবের (রাঃ) সেই সুবিধা ছিলো না

                        তিনি ভাবলেন আল্লাহ তো মক্কা বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েই দিয়েছেন। এখন তিনি যদি সেই গায়িকার হাতে চিঠি দিয়ে মক্কাবাসীদেরকে আক্রমণের খবর জানিয়ে দেন, তাহলে তাঁরা হয়তো তাঁর আত্মীয়দের ক্ষতি করবে না। আল্লাহ ওয়াহী নাযিল করে জানিয়ে দেন সেই নারী চিঠি নিয়ে কোথায় পৌঁছেছে। তাকে ধাওয়া করে চিঠি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর হাতিব (রাঃ) স্বীকার করেন। তাঁকে আল্লাহ মাফ করে দেন

                        সেইসাথে যুদ্ধরত কাফিরদের সাথে এরকম বন্ধুত্বের ভয়াবহতা আলোচিত হয়। ইবরাহীম (আঃ) কীভাবে তাঁর কাফির আত্মীয়দের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ও শত্রুতা ঘোষণা করেছিলেন, তা বর্ণিত হয়। এই আদর্শ অনুসরণ করলে আশা করা যায় কিছু কাফিরকে ঈমান আনিয়ে আল্লাহ মুমিনদের বন্ধু বানিয়ে দিবেন। আর যেসব কাফির যুদ্ধরত নয়, তাদের সাথে সদাচারের অনুমতি দেওয়া হয়

                        হুদায়বিয়ার একটি শর্ত ছিলো মক্কা থেকে মদীনায় গেলে তাকে মক্কায় ফিরিয়ে দিতে হবে। নারীরা এ শর্তের আওতার বাইরে। তাদের কেউ ঈমান আনার দাবি করে মদীনায় আসলে তাদের যাচাই করা, কাফির স্বামীর সাথে মুমিন নারীর বিবাহবিচ্ছেদের বিধান জানানো হয়। এছাড়া কাফির নারীদের সাথে মুসলিম পুরুষদের যেসব বিবাহ বহাল ছিলো, সেগুলো বাতিল ঘোষিত হয়


                        ৬১। সূরা সফ, আয়াত ১ থেকে ১৪

                        সূরা সফ এর শুরুতে কথা ও কাজে মিল রাখার গুরুত্ব আলোচিত হয়

                        আল্লাহর রাস্তায় সীসাঢালা প্রাচীরের মতো জিহাদ করার ফযিলত বর্ণিত হয়। জানমাল দিয়ে জিহাদ করা এমন এক ব্যবসা, যা দ্বারা মাগফিরাত পাওয়া যায়, আখিরাতের আযাব থেকে বাঁচা যায়

                        বনী ইসরাইলীরা মূসা (আঃ) এর সাথে যে দুর্ব্যবহার করতো, তার ফলে আল্লাহ তাদের অন্তর বক্র করে দেন। ফলে পরবর্তী নবীর উপর তারা ঈমান আনতে পারেনি

                        ঈসা (আঃ) তাঁর হাওয়ারী (সাহাবি)-গণকে জিজ্ঞেস করেন কারা আল্লাহর রাস্তায় সাহায্যকারী হবে। তাঁরা আনসারুল্লাহ (আল্লাহর রাস্তায় সাহায্যকারী) হওয়ার ওয়াদা করেন। এ ঘটনা বলে মুমিনদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। কাফিররা অপছন্দ করলেও আল্লাহ এ দ্বীনকে বিজয়ী করে ছাড়বেন


                        ৬২। সূরা জুমুআহ, আয়াত ১ থেকে ১১

                        সুরা জুমুআতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আগমনের হিকমত এবং সমগ্র মানবজাতির উপর তাঁর নবুওয়তের কথা বলা হয়। কিতাবের জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও যেসব ইহুদী খ্রিষ্টান ঈমান আনছে না, তাদেরকে কিতাব বহনকারী গাধার সাথে তুলনা করা হয়

                        জুমুআর সালাতে দ্রুত আসা এবং খুতবার সময় অন্য কাজে ব্যস্ত না থেকে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনার হুকুম করা হয়


                        ৬৩। সূরা মুনাফিকুন, আয়াত ১ থেকে ১১

                        সূরা মুনাফিকুনে মুনাফিকদের স্বভাব বর্ণিত হয়। তারা ঈমান আনার মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়। ঠেকনা দেওয়া কাঠের মতো অন্যের উপর নির্ভর করে। যেকোনো কোলাহলকে নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে। তাদের কথা খুব আকর্ষণীয় মনে হয়

                        বনু মুস্তালিক যুদ্ধ জয়ের পর কুয়া থেকে পানি তোলা নিয়ে বিরোধের জের ধরে মুহাজির-আনসার হাতাহাতি লাগার উপক্রম হয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা মিটিয়ে দেন। গনিমতের লোভে জিহাদে আসা মুনাফিকরা এ সুযোগ নিয়ে আনসারদের ভেতর জাতিয়তাবাদী চেতনা উস্কে দিতে চেষ্টা করে। সাহাবি যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) তা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জানিয়ে দেন। তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করলে মুনাফিকরা জোরেশোরে অস্বীকার করে। আল্লাহ আয়াত নাযিল করে অভিযোগের সত্যতা জানিয়ে দিয়ে মুনাফিকদের তিরস্কার করেন

                        হায়াত বাকি থাকতেই নেক আমল ও দানসদকা করার জন্য বলা হয়।

                        সন্তানসন্ততি ও সম্পদের টানে পড়ে কেউ যেন দ্বীন থেকে গাফেল না হয়


                        ৬৪। সূরা তাগাবুন, আয়াত ১ থেকে ১৮

                        সূরা তাগাবুনের শুরুতে সৃষ্টিজগতে আল্লাহর সর্বব্যাপী জ্ঞান ও ক্ষমতার বর্ণনা এবং পূর্ববর্তী জাতিসমূহের অবাধ্যতার কথা বলে কিয়ামাতের সত্যতা ঘোষিত হয়। সেদিন একদল লোক আরেকদলকে দেখে আক্ষেপ করবে

                        কোনো বিপদআপদ আল্লাহর হুকুম ছাড়া আসে না, তাই ধৈর্য ধরে দ্বীনের উপর থাকতে হবে

                        পরিবার পরিজন হলো পরীক্ষাস্বরূপ। তারা যদি আল্লাহর নাফরমানি করতে উদ্বুদ্ধ করে, তাহলে তারা শত্রুর মতো। তবে তাওবাহ করে শুধরে গেলে ভিন্ন কথা

                        আল্লাহর রাস্তায় দানসদকায় উৎসাহিত করে একে উত্তম ঋণ বলা হয়, যা আল্লাহ বহুগুণ বাড়িয়ে ফেরত দেবেন


                        ৬৫। সূরা ত্বালাক, আয়াত ১ থেকে ১২

                        সূরা ত্বালাকের বিষয়বস্তু হলো তালাক, ইদ্দত, ইদ্দতকালীন স্বামীর ঘরে থাকা, ঈদ্দতকারিণীর ভরণপোষণ, স্বামী গরীব হলে সেক্ষেত্রে ভরণপোষণের নিয়ম, সাক্ষী রাখা, সত্য সাক্ষ্য দেওয়া ইত্যাদি হুকুম আহকাম। সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে বলা হয়। তাহলে আল্লাহ সমাধানের পথ খুলে দিবেন এবং ধারণাতীত উৎস থেকে রিযক দিবেন


                        ৬৬। সূরা তাহরীম, আয়াত ১ থেকে ১২

                        সূরা তাহরীম নাযিল হয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর একটি কসমের ভিত্তিতে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্ত্রীদের ঘরে ঘরে যাচ্ছিলেন। যায়নাব (রাঃ) তাঁকে এক জাতের মধু খেতে দেন। পরে তিনি আয়িশা (রাঃ) ও হাফসা (রাঃ) এর ঘরে গেলে দুজনই তাঁর মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসার কথা বলেন। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুর্গন্ধ খুব অপছন্দের। তিনি আর কখনো মধু না খাওয়ার কসম করেন। এটা যেন আর কাউকে না জানানো হয়, তা বলে দেন। কারণ যায়নাব (রাঃ) জানলে কষ্ট পাবেন। কিন্তু হাফসা (রাঃ) এটি আয়িশা (রাঃ)-কে বলে দেন। এই বলে দেওয়ার ঘটনা আবার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানতে পারেন। কিন্তু হাফসা (রাঃ) লজ্জা পাবেন বলে চুপ থাকেন

                        আল্লাহ আয়াত নাযিল করে রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেই অপ্রয়োজনীয় কসমের কাফফারা আদায় করতে বলেন। আর নবীপত্নীদেরকে নসিহত করেন

                        মুমিনদেরকে পরিবার পরিজন মিলে ইবাদাত করে সকলে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে বলা হয়। এ মর্মে কয়েকজন নারীর কথা বলা হয়, যারা বিভিন্নরকম। একদিকে লূত (আঃ) ও নূহ (আঃ) এর স্ত্রীদ্বয়, যারা ছিলো নেক লোকের পাপাচারী স্ত্রী। আরেকদিকে আসিয়া (আঃ) যিনি ছিলেন পাপাচারী লোকের নেক স্ত্রী। আর মারইয়াম (আঃ) যিনি সতীত্ব রক্ষা করেন এবং অলৌকিকভাবে ঈসা (আঃ) এর মা হন

                        Comment


                        • #27
                          রামাদান - ২৬



                          ৬৭। সূরা মুলক, আয়াত ১ থেকে ৩০

                          সূরা মুলকে বলা হয় আল্লাহ মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন মানুষের নেক আমলের পরীক্ষা নিতে। তিনি নিখুঁতভাবে আসমান সৃষ্টি করেছেন। তাঁরই সৃষ্ট জাহান্নাম ও জান্নাতে এর অধিবাসীরা কী অবস্থায় থাকবে তা বর্ণিত হয়। তিনি শুধু স্রষ্টাই নন, গোপন-প্রকাশ্য সবকিছুর ব্যাপারে জ্ঞানীও। তিনিই পশুপাখিকে আমাদের বশ করে দিয়েছেন যাতে আমরা এ থেকে উপকৃত হই। দিয়েছেন শ্রবণ, দর্শন ও চিন্তাশক্তি। তিনি যদি এসব রিযক বন্ধ করে দেন বা ভূগর্ভস্থ পানি আমাদের নাগালের বাইরে নামিয়ে দেন, তাহলে কে আছে যে তা পুনরায় এনে দিবে? তিনিই যদি আচমকা আযাব দেন, তা ঠেকানোর কেউ নেই। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুমিনরা যদি মরেই যায়, তাহলেও কাফিরদের যে পাওনা আযাব- তা কি কেউ ঠেকাতে পারবে? যে দ্বীনের পথে চলে সে সোজা হয়ে চলা ব্যক্তির মতো, আর বেদ্বীনরা মুখে ভর দিয়ে চলা ব্যক্তির মতো। কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাবে দ্বীনদার ব্যক্তিই


                          ৬৮। সূরা ক্বলাম, আয়াত ১ থেকে ৫২

                          রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উন্মাদ বলে কাফিররা যে অপবাদ দিতো, সূরা ক্বলামে তা খণ্ডন করে বলা হয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চরিত্রের সর্বোচ্চ স্তরে আছেন। তাঁর বিরোধিতাকারী কাফিররাই তো বরং নিন্দুক, চোগলখোর, কৃপণ এরকম মন্দ চরিত্রের। শেষবিচারের অস্তিত্ব না থাকা মানে ভালো-খারাপ সবার পরিণতি একই মৃত্যু

                          একদল লোকের উপমা দেওয়া হয় যারা নিজেদের শস্যক্ষেত্র নিয়ে বড়াই করতো। যেদিন ফসল কাটতে আসলো তার আগের রাতে এক উপদ্রব হানা দিয়ে ফসল ধ্বংস করে দেয়। তারা দেখে ভাবে ভুলপথে চলে এসেছে। পরে নিজেদের অহংকারের কথা স্মরণ করে তাওবাহ করে

                          কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাঁর পায়ের গোছা (যেমন 'পা' তাঁর শানের উপযোগী, সেরকম পা। এর আকৃতি-প্রকৃতি আমাদের অজানা) উন্মুক্ত করবেন। খাঁটি মুমিনরা সেজদায় লুটিয়ে পড়বে। আর যারা লোক দেখাতে সালাত পড়তো, তাদের পিঠ শক্ত হয়ে থাকবে, সেজদা করতে না পেরে অপমানিত হবে

                          ইউনুস (আঃ) যেভাবে আল্লাহর হুকুম আসার আগেই কওমকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তেমনটা করতে মানা করা হয়


                          ৬৯। সূরা আল-হাক্বক্বাহ, আয়াত ১ থেকে ৫২

                          সূরা আল-হাক্বক্বাহ'তে কিয়ামাতকে এক অবশ্যম্ভাবী ব্যাপার বলা হয়েছে, যা আদ, সামুদ, কওমে লূত, ফিরআউন ও কওমে নূহ অস্বীকার করে আযাবে পাকড়াও হয়। কিয়ামাত দিবসের ভয়াবহ বর্ণনা দেওয়া হয়। যার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে সে খুশিতে সবাইকে তা দেখাবে। আর যার আমলনামা বাম হাতে দেওয়া হবে, সে আফসোস করবে মৃত্যুই যদি শেষ পরিণাম হতো! সে দুনিয়ায় দানসদকা করতো না, আজ জাহান্নামে তার খাদ্য হবে পুঁজের মতো পানি গিসলীন। কুরআন কোনো কবি বা জ্যোতিষীর বাণী নয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যদি নিজে বানিয়ে এসব কথা আল্লাহর নামে চালাতেন, তাহলে আল্লাহই তাকে শাস্তি দিতেন


                          ৭০। সূরা মাআরিজ, আয়াত ১ থেকে ৪৪

                          কাফিররা যে প্রতিশ্রুত আযাব নিয়ে আসতে বলে টিটকারি দিতো, তার জবাব দিয়ে সূরা মাআরিজ শুরু হয়। তারা ভাবছে এটা অসম্ভব, অথচ আল্লাহর সময়ের হিসেবে এটি নিকটে। সেদিন আসমান জমিনের চেহারাই পাল্টে যাবে। পাপাচারী, কৃপণ মানুষেরা নিজের বন্ধু, স্ত্রী, পুত্র, খান্দান সবকিছু মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে হলেও নিজে বাঁচতে চাইবে। কিন্তু যারা নামাযি, যাকাত-সদকা দাতা, আখিরাত বিশ্বাসী, ব্যভিচার করে না, আমানত রক্ষাকারী, সত্যবাদী- তারা নিরাপদ থাকবে


                          ৭১। সূরা নূহ, আয়াত ১ থেকে ২৮

                          নূহ (আঃ) এর দাওয়াতি কার্যক্রমের কথা এসেছে সূরা নুহ-এ। তিনি তাঁর কওমকে দিনেরাতে, প্রকাশ্যে-গোপনে, সবরকমে তাওহীদের দাওয়াত দেন। আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করলে তিনি দুনিয়াবি সম্পদও বাড়িয়ে দিবেন। তিনি মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করে আবার তাতেই ফিরিয়ে নিবেন। অবশেষে তাদের মাঝে যখন ঈমান আনার মতো আর কেউ বাকি থাকলো না, নূহ (আঃ) ঈমানদারদের নাজাত ও কাফিরদের ধ্বংস কামনা করে দুআ করলেন


                          ৭২। সূরা জিন, আয়াত ১ থেকে ২৮

                          রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট কুরআন শুনে জিনদের একটি দল ঈমান এনে নিজ জাতির নিকট গিয়ে কীভাবে ঈমানের দাওয়াত দেয়, তা বর্ণিত হয়েছে সূরা জিন এ। এ পর্যন্ত তাদের মাঝেও আল্লাহ সম্পর্কে অনেক শির্কি বিশ্বাস ছিলো। তারা ভেবেছিলো এত মানুষ আর জিন যেহেতু এগুলো বিশ্বাস করছে, এগুলো সত্যিই হবে হয়তো। এছাড়া আরবরা বনজঙ্গলে গেলে সেখানকার জিনদের কাছে আশ্রয় চাইতো। এতে জিনেরা আরো অহংকারী হয়ে উঠেছিলো। দুষ্ট জিনদের থেকে ওয়াহীকে রক্ষা করতে আসমানের দ্বারগুলোতে প্রহরা বসতে দেখেই তারা ধারণা করেছিলো কিছু একটা ঘটতে চলেছে। এভাবে অনেক জিন মুসলিম হলো। এ ঘটনার দৃষ্টান্ত দিয়ে মক্কার মুশরিকদেরও ঈমান আনতে বলা হয়। তাহলে তাদের দুনিয়াবি অভাবও মিটিয়ে দেওয়া হবে


                          ৭৩। সূরা মুযযাম্মিল, আয়াত ১ থেকে ২০

                          নবুওয়ত প্রাপ্তির পর চরম মানসিক চাপে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চাদর আবৃত করে শুয়ে ছিলেন। সূরা মুযযাম্মিলে তাঁকে প্রীতিভরে ডেকে তুলে তাহাজ্জুদ পড়তে বলা হয়। এর সময় ও ফজিলত বলে দেওয়া হয়। কাফিররা আখিরাতে কী পরিণাম ভোগ করবে তা বলা হয় এবং ফিরআউনের অবাধ্যতা ও পরিণামের দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়। সূরার শেষে সফর, যুদ্ধ ইত্যাদি পরিস্থিতি উল্লেখ করে তাহাজ্জুদের বিধান শিথিল করে সহজতা দান করা হয়। সালাত, যাকাত ও সদকা করতে উৎসাহ দেওয়া হয়


                          ৭৪। সূরা মুদ্দাস্সির, আয়াত ১ থেকে ৫৬

                          সূরা মুদ্দাস্সিরের শুরুতে বলা হয় মানুষকে আখিরাত সম্পর্কে সতর্ক করতে, আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা করতে, শারীরিক সহ সবরকম পবিত্রতা গ্রহণ করতে, উপহার দিয়ে বিনিময় পাওয়ার লোভ না রাখতে
                          কাফিররা কুরআনকে কবিতা, জ্যোতিষীর কথা ইত্যাদি কিছু বলেই সন্তুষ্ট হতে পারছিলো না। কারণ অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন তা তারা বুঝতে পারছিলো। ধনকুবের ওয়ালীদ বিন মুগীরা অনেক ভাবনাচিন্তা করে বলে কুরআনকে যাদুকরের কথা বলে আখ্যা দিতে। তাকে এ সূরায় রূঢ় তিরস্কার করে আখিরাতের ভয়ংকর পরিণতি জানানো হয়

                          জাহান্নামে মাত্র ১৯ জন প্রহরী আছে শুনে কাফিররা ঠাট্টা করে। জানিয়ে দেওয়া হয় এরা ১৯ জন শক্তিশালী ফেরেশতা, তাই শক্তিতে পরাস্ত করা যাবে ভেবে খুশি হওয়ার কিছু নেই। এছাড়া আহলে কিতাবদের কিতাবেও এ সংখ্যাটির ইঙ্গিত আছে, ফলে তারা বুঝতে পারবে এটি আল্লাহরই বাণী

                          জান্নাতিরা জাহান্নামিদের ডেকে জানতে চাইবে কীসে তাদের আগুনে নিয়ে আসলো। তারা বলবে তারা বেনামাজি ছিলো, মিসকীনদের খাবার দিতো না, অসার কথাবার্তা বলতো এবং আখিরাতে অবিশ্বাসী ছিলো। আল্লাহর বাণী থেকে এরা এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয় যেভাবে সিংহ থেকে বন্য গাধা পালায়


                          ৭৫। সূরা ক্বিয়ামাহ, আয়াত ১ থেকে ৪০

                          সূরা ক্বিয়ামাহ-তে কিয়ামাত এবং নফসে লাওয়ামার কসম করে বলা হয়েছে কিয়ামাত সত্য। এর কয়েকটি আলামত বলা হয়েছে। মানুষকে আল্লাহ এক বিন্দু শুক্র থেকে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করিয়ে পূর্ণাঙ্গ মানুষ বানান। তিনিই চাইলে আখিরাতে এদের আঙুলের ডগাসহ একইরকমভাবে পুনঃসৃষ্টি করতে পারেন। সেদিন মানুষকে তার কৃতকর্ম দেখানো হবে। বরং নিজের পাওনা কি জান্নাত না জাহান্নাম, তা নিজেই ভালো বুঝতে পারবে

                          রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআন মুখস্থ করার জন্য যেন ব্যস্ত না হন, সে কথা বলা হয়েছে। কুরআন সংরক্ষণ করানো ও ব্যাখ্যা জানানো আল্লাহরই দায়িত্ব


                          ৭৬। সূরা দাহর, আয়াত ১ থেকে ৩১

                          সূরা দাহর-এ (আরেক নাম সূরা ইনসান) মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, সে একসময় বলার মতো কোনো কিছুই ছিলো না। ক্রমে বীর্য থেকে সে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়েছে

                          জান্নাতিদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য ও প্রাপ্য বর্ণিত হয়েছে। তারা ওয়াদা পূর্ণ করে, কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় মিসকীন, ইয়াতীম ও কয়েদীদের খাবার খাওয়ায়। তারা জান্নাতে পাবে রেশমি কাপড়, আরামদায়ক নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া, হেলান দেওয়ার সুউচ্চ বসার জায়গা, আয়ত্তাধীন ফল, রূপা ও স্ফটিকের পানপাত্র, আদা মেশানো এক জাতের পানীয়, সালসাবীল নামক এক প্রস্রবণ, চিরকিশোর খাদেম, রূপার কাঁকন

                          কাফিরদের পক্ষ হতে আসা বিরোধিতাকে পাত্তা না দিয়ে তাসবীহ পাঠ, তাহাজ্জুদ আদায় ইত্যাদি ইবাদাতে রত থাকতে রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ দেওয়া হয়


                          ৭৭। সূরা মুরসালাত, আয়াত ১ থেকে ৫০

                          সূরা মুরসালাতে আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গি দিয়ে কিয়ামাতের সত্যতা ঘোষণা করা হয়। মানুষকে শুক্রবিন্দু থেকে ক্রমান্বয়ে পূর্ণাঙ্গ করা হয়, জমিনে একইসাথে সজীব ও নির্জীব বস্তু থাকে, এগুলোর স্রষ্টা আল্লাহ আখিরাতের পুনরুত্থান ঘটাবেন। অস্বীকারকারীদের জন্য সেদিন বড় দুর্ভোগ। জাহান্নামে ছায়া থাকবে না। বিশাল অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দেখে মনে হবে হলুদ রঙয়ের উট। কোনো অজুহাত দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। আর মুত্তাকীদের জন্য থাকবে জান্নাতি ছায়া, প্রস্রবণ ও ফলমূল

                          Comment


                          • #28
                            রামাদান - ২৭



                            ৭৮। সূরা নাবা

                            কাফিররা আখিরাতের যৌক্তিকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ও হাসিঠাট্টা করতো। সূরা নাবা'য় আল্লাহর বিভিন্ন সৃষ্টিরাজি ভূমি, পাহাড়, জোড়া জোড়া সৃষ্টি, রাত, দিন, আকাশ, সূর্য, মেঘ, বৃষ্টি ইত্যাদির উপকারিতা বর্ণিত হয়। আল্লাহ এসব সৃষ্টি করেছেন, কিয়ামাতের পর সকলকে পুনরুত্থিত করাও তাঁর জন্য সহজ। কিয়ামাতের দিন শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে, আসমানের দরজাগুলো খুলে যাবে, পাহাড়গুলো মরীচিকার মতো উড়ে যাবে। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ শাফায়াত করতে পারবে না, আর শাফায়াতকারীরা শুধু সঠিক কথাই বলবে। জাহান্নাম ওঁত পেতে আছে কাফিরদের জন্য যেখানে অনন্তকাল ধরে তারা কেবল তপ্ত পানি ও রক্ত-পুঁজ পান করবে। আর মুত্তাকীদের জন্য থাকবে জান্নাতি উদ্যান, সঙ্গী, খাদ্য ও পানীয়। কোনো মিথ্যা ও অসার কথা তাদের বিনোদনের অংশ হবে না


                            ৭৯। সূরা নাযিআত

                            সূরা নাযিআতে কিয়ামাতের আকস্মিকতা ও কাফিরদের অপ্রস্তুত অবস্থায় পুনরুত্থানের বর্ণনা দেওয়া হয়। ফিরআউনের ঔদ্ধত্যের করুণ পরিণতি থেকে শিক্ষা নিতে বলা হয়েছে। আল্লাহ সুউচ্চ আসমান, রাত, দিন, পৃথিবী, তৃণ, পাহাড়ের মতো বিশাল বিশাল জিনিস বানিয়েছেন যাতে মানুষ ও পশু তা থেকে উপকার পায়। তিনি তাহলে কেন আখিরাতে পুনঃসৃষ্টি করতে অক্ষম হবেন? দুনিয়াকে প্রাধান্যদাতাদের ঠিকানা জাহান্নাম। আর আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোকে যারা ভয় করে চলেছে, তাদের ঠিকানা জান্নাত। কিয়ামাতের নির্দিষ্ট সময় জানানো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দায়িত্ব নয়। পুনরুত্থানের পর মনে হবে দুনিয়ার জীবন এক সকাল বা এক বিকালের সমান ছিলো


                            ৮০। সূরা আবাসা

                            রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক বড় কুরাইশ নেতাকে ইসলামের দাওয়াহ দিচ্ছিলেন এই আশায় যে মুসলিম হলে ইসলামের বড় খেদমত করবে। এমনসময় এক অন্ধ সাহাবি (রাঃ) রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে এসে কিছু একটা জানতে চান। কথায় ছেদ পড়ায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর একটু বিরক্ত হন। সূরা আবাসা নাযিল করে আল্লাহ জানিয়ে দেন যে ইসলাম ওইসকল অহংকারী নেতার মুখাপেক্ষী নয়। পাকপবিত্র মুসলিমের দুনিয়াবি প্রতিপত্তি কম হলেও আল্লাহর নিকট তার গুরুত্বই বেশি। আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দেন মানুষকে কত তুচ্ছ বস্তু থেকে সৃষ্টি করে ক্রমান্বয়ে মৃত্যু ও পুনরুত্থানের দিকে নেওয়া হয়। কত বিস্ময়করভাবে ভূমি থেকে খাদ্য দেওয়া হয়। তারপরও কী করে অহংকার করে! কিয়ামাতের দিন মানুষ নিজের ভাই, বাপ, মা, জীবনসঙ্গী ও সন্তান থেকে পালানোর চেষ্টা করবে। কেউ জান্নাত পেয়ে খুশি হবে। কাফির-পাপাচারীরা জাহান্নাম পেয়ে হতাশ হবে


                            ৮১। সূরা তাকভীর

                            সূরা তাকভীরে কিয়ামাতের সময়ে দুনিয়ার ভয়াবহ অবস্থা বর্ণনা করা হয়। মানুষ তার দামী দামী সম্পদের কথা ভুলে যাবে। যেসব কন্যাসন্তান জীবিত প্রোথিত করা হয়েছিলো, পুনরুত্থানের পর তাদেরকে অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ দেওয়া হবে। তারপর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবুওয়তের সত্যতার সাক্ষ্য দেওয়া হয়। জ্যোতিষীরা শয়তানদের দ্বারা খবরাখবর আনিয়ে টাকার বিনিময়ে মানুষকে জানায়। অন্যদিকে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে পবিত্র ফেরেশতা ওয়াহী নিয়ে আসেন এবং তিনি তা বিনা পারিশ্রমিকে প্রচার করেন


                            ৮২। সূরা ইনফিতার

                            সূরা ইনফিতারের শুরুতেও কিয়ামাতের বর্ণনা দেওয়া হয়। মানুষকে সুচারুভাবে সৃষ্টিকারী আল্লাহ কিয়ামাত ঘটাতে অক্ষম হবেন, এমনটা ভাবা নিতান্তই বোকামি। কিরামান কাতিবীন আমাদের আমলনামা লেখছেন। আখিরাতে সবাই তার কাজের খতিয়ান বুঝে পাবে। সেদিন রাজত্ব হবে শুধুই আল্লাহর, কেউ কারো কোনো উপকার করতে পারবে না


                            ৮৩। সূরা মুতাফফিফীন

                            নিজ হক কড়ায়গণ্ডায় বুঝে নেওয়া এবং অন্যের হক আদায়ের সময় ঠকানোর স্বভাবকে নিন্দা করা হয়েছে সূরা মুতাফফিফীনের (আরেক নাম 'তাতফীফ') শুরুতে। বদ আমলকারীর আমলনামা রাখা হবে সিজ্জীন নামক কারাগারে, আর নেক আমলকারীর আমলনামা থাকবে ইল্লিয়্যীন নামক স্থানে। আখিরাতে তারা কস্তুরীর আবরণে ঢাকা সুপেয় পানীয়, তাসনীম ঝর্ণা, হেলান দিয়ে বসার জায়গা পাবে। দুনিয়াতে যে কাফিররা তাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করতো, তাদের পরিণতি দেখে জান্নাতিরা সেদিন উল্টো তাদেরকেই ঠাট্টা করবে


                            ৮৪। সূরা ইনশিক্বাক্ব

                            সূরা ইনশিক্বাক্ব ক্বিয়ামাতের বর্ণনা দিয়ে শুরু হয়। যাদের আমলনামা সেদিন ডানহাতে দেওয়া হবে, তারা সন্তুষ্টচিত্তে জান্নাতে তাদের নেককার পরিবার পরিজন নিয়ে থাকবে। আর যাদের আমলনামা পেছন দিক থেকে দেওয়া হবে, তারা মৃত্যু কামনা করবে। দুনিয়ায় তারা পরিবার নিয়ে খুব সুখেশান্তিতে ছিলো, এখন জাহান্নামের উত্তাপে থাকবে


                            ৮৫। সূরা বুরুজ

                            যারা মুমিনদেরকে তাদের ইসলামের কারণে অত্যাচার করে, অতঃপর তাওবাহ না করে মারা যায়, তাদের দুর্ভোগের কথা বলা হয়েছে সূরা বুরুজে। অন্যদিকে মুমিনদের দুনিয়াবি দৃষ্টিতে পরাজিত মনে হলেও তাদের জান্নাতপ্রাপ্তিই বড় বিজয়। এ প্রসঙ্গে একটি কাহিনীর দিকে ইঙ্গিত করা হয়। জনৈক কাফির রাজার এক জাদুকর ছিলো। জাদুকরটি মৃত্যুর আগে এক বালককে তার বিদ্যা শিখিয়ে দেয়। বালকটি একই সময়ে এক মুসলিম দরবেশেরও সন্ধান পায় এবং তার ধর্মের সত্যতা বুঝতে পারে। রাজা বালকটিকে নানাভাবে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বালকটি প্রস্তাব দেয় রাজা যেন এক উন্মুক্ত ময়দানে জনসমক্ষে "এই বালকের রবের নামে" বলে তীর মেরে বালককে হত্যা করে। এতে সত্যিই বালকটি মারা যায় এবং তা দেখে সমবেত দর্শকেরা মুসলিম হয়ে যায়। রাজা ক্রোধান্ধ হয়ে সকলকে আগুনে ফেলে হত্যা করে। অনুরূপভাবে ফিরআউন ও সামুদ বাহিনীর কথাও বলা হয়


                            ৮৬। সূরা ত্বরিক্ব

                            সূরা ত্বরিক্বে উজ্জ্বল নক্ষত্রের শপথ করে মানুষের সৃষ্টির উপমা দিয়ে আখিরাতের পুনঃসৃষ্টির বাস্তবতা দেখানো হয়। কাফিরদের ষড়যন্ত্র ও তার বিপরীতে আল্লাহর কৌশলের কথা বলা হয়। ষড়যন্ত্রকারী কাফিরদের কিছু কালের জন্য তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দিতে বলা হয়


                            ৮৭। সূরা আ'লা

                            সূরা আ'লা-তে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করতে বলা হয়। তিনি সবকিছু সৃষ্টি করে পরিমিতি দান করেছেন। দুনিয়াবি জিনিসের জৌলুস অস্থায়ী। কুরআনের উপদেশ গ্রহণ না করলে আখিরাতের স্থায়ী শাস্তিতে জীবন্মৃত অবস্থায় থাকতে হবে। পবিত্রতা অর্জনকারী, যিকিরকারী ও সালাত আদায়কারীরা সফল। তাই দুনিয়ার উপরে আখিরাতকে প্রাধান্য দিতে হবে


                            ৮৮। সূরা গাশিয়াহ

                            সূরা গাশিয়ার শুরুতে আখিরাতে কাফিরদের বিপর্যস্ত চেহারা, তাদের প্রাপ্য তপ্ত পানীয় ও কাঁটাদার খাদ্যের কথা বলা হয়। নেককারদের সজীব চেহারা, প্রাপ্য জান্নাত, প্রস্রবণ, আসন, কার্পেটের বর্ণনা দেওয়া হয়। জীবজন্তু, আকাশ, পাহাড়, ভূমি নিয়ে গবেষণা করে আখিরাতের বাস্তবতা ভাবতে বলা হয়। কাউকে জবরদস্তি ঈমান আনানো তো রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দায়িত্ব নয়


                            ৮৯। সূরা ফাজর

                            সূরা ফাজর-এ আদ, সামুদ ও ফিরআউনের মতো শক্তিশালী জাতিসমূহের পরিণতির কথা বলা হয়। আল্লাহ মানুষকে প্রাচুর্য ও সংকট দিয়ে পরীক্ষা করেন। ইয়াতীম, মিসকীন ও হকদারকে সঠিকভাবে প্রাপ্য দিতে বলা হয়। এ ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। সেদিন আফসোস কোনো কাজে আসবে না। আল্লাহ সেদিন এমন শাস্তিতে পাকড়াও করবেন, যা কেউ কোনোদিন করেনি। আল্লাহর নেককার বান্দারা প্রশান্ত আত্মা নিয়ে জান্নাতে যাবে


                            ৯০। সূরা বালাদ

                            সূরা বালাদ -এ সেসব মানুষকে তিরস্কার করা হয়েছে যারা নিজ শক্তি সম্পদ ইচ্ছামতো খরচ করে, আল্লাহকে ভয় করে না। মানুষকে আল্লাহ ভালো-খারাপ দুটি পথই দেখিয়েছেন। দাসমুক্তি, দানসদকা, ইয়াতীম, আত্মীয়, মিসকীনের হক আদায়, ঈমান আনা, সবর করার কঠিন পথটি বেছে নিলে ডানদিকের দল (জান্নাতি) হওয়া যাবে। আর কাফিররা হলো বামদিকের দল (জাহান্নামি)


                            ৯১। সূরা শামস

                            সূরা শামস-এ বিভিন্ন বস্তুর কসম করে আল্লাহ বলেন যে তিনি মানুষকে ভালো-মন্দের জ্ঞান দিয়েছেন। যে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, সে সফলকাম। যে একে গুনাহের দ্বারা ধ্বংস করে, সে ব্যর্থ। সামুদ জাতির অবাধ্যতা ও পরিণতির কথা জানানো হয়। মানুষ কোনো জায়গা জয় করলে পাল্টা আক্রমণের ভয় থাকে, আল্লাহর এমন কোনো ভয় নেই


                            ৯২। সূরা লাইল

                            সূরা লাইল-এ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দানশীলতা দেখাতে বলা হয়েছে, কৃপণতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। যে দান করে, আল্লাহকে ভয় করে, ইসলাম মেনে চলে, সে জান্নাতি। যে কৃপণতা করে, বেপরোয়া ভাব দেখায়, ইসলাম মানে না, জাহান্নামে দগ্ধ হওয়ার সময় তার সম্পদ কোনো কাজে আসবে না


                            ৯৩। সূরা দুহা

                            রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বিশ্রাম দিয়ে বেশ কিছুদিন ওয়াহী আসা বন্ধ থাকায় আবু লাহাবের স্ত্রী কটাক্ষ করে যে, আল্লাহ রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ত্যাগ করেছেন। সূরা দুহায় আল্লাহ জানান যে তিনি রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ত্যাগ করেননি। ইয়াতীম, পথ সম্পর্কে অনবহিত ও নিঃস্ব মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তো আল্লাহ এমনিতেও আশ্রয়, ইসলামের জ্ঞান ও সচ্ছলতা দিয়েছেন। ইয়াতীম ও সাহায্যপ্রার্থীকে ফিরিয়ে না দেওয়ার হুকুম করা হয়, আল্লাহর নিয়ামাতের কথা প্রচার করতে বলা হয়


                            ৯৪। সূরা ইনশিরাহ

                            সূরা ইনশিরাহ-তে বলা হয়, রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে নবুওয়তের দায়িত্ব প্রথমে কঠিন মনে হলেও পরে আল্লাহ তা সহজ করে দিয়েছেন, তাঁর মর্যাদা সমুচ্চ করেছেন। কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে। দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে অবসর হলেই নফল ইবাদাতে মনোযোগী হতে বলা হয়


                            ৯৫। সূরা তীন

                            সূরা তীনে বলা হয়, মানুষ সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি হওয়ার পর বার্ধক্যে বা পাপাচারের মাধ্যমে শারিরীক ও আত্মিকভাবে নীচু হয়ে যায়। কিন্তু ঈমানদার ও নেক আমলকারীরা যেমন জানে দুনিয়ার বার্ধক্য ক্ষণস্থায়ী, তেমনি আখিরাতে তাদের জন্য প্রতিদানও ভালো


                            ৯৬। সূরা আলাক্ব

                            সূরা আলাক্ব এর প্রথম ৫ আয়াত হলো প্রথম নাযিলকৃত ওয়াহী। এতে মানুষের স্রষ্টা ও তাকে অজানা জিনিস শিক্ষাদাতা আল্লাহর নামে পড়তে বলা হয়। পরের আয়াতগুলোতে আবু জাহল সম্পর্কে বলা হয়, যে মক্কায় তার প্রভাবশালীত্ব ও সম্পদের কারণে ঠাটবাট দেখিয়ে হুমকি দিতো রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাবার প্রাঙ্গনে সেজদা দিতে দেখলে ঘাড়ে পাড়া দিয়ে দেবে। আল্লাহ জানিয়ে দেন তিনি সবই দেখছেন। সে তার লোকলস্কর ডাকলে আল্লাহও জাহান্নামের ফেরেশতাদের ডেকে আবু জাহলকে হেঁচড়ে নিয়ে যাবেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেন তার কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং সেজদার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে থাকেন


                            ৯৭। সূরা ক্বদর

                            সূরা ক্বদরে লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে বলা হয় যাতে কুরআন নাযিল হয় এবং এর মর্যাদা হাজার মাস থেকে বেশি। এ রাতে ফেরেশতাগণ অবতীর্ণ হন এবং ফজর পর্যন্ত শান্তি বিরাজ করে


                            ৯৮। সূরা বাইয়্যিনাহ

                            সূরা বাইয়্যিনাহ-তে বলা হয়, সুস্পষ্ট প্রমাণ আসমানী কিতাব নিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগমন করে এক আল্লাহর ইবাদাত, সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদানের হুকুম দিচ্ছেন। আহলে কিতাব ও মুশরিকরা কুফরি করতে থাকলে তারা হবে নিকৃষ্ট সৃষ্টি। ঈমানদার ও নেক আমলকারীরা সৃষ্টির সেরা, তারা অনন্তকাল জান্নাতে থাকবে


                            ৯৯। সূরা যিলযাল

                            সূরা যিলযালে বলা হয়, কিয়ামাতের দিন পৃথিবী প্রবলভাবে কম্পিত হয়ে ভেতরের বোঝা বের করে দিয়ে তার উপর সংঘটিত ভালো খারাপ কাজগুলোর ব্যাপারে আল্লাহর আদেশে সাক্ষ্য দিতে শুরু করবে। অণু পরিমাণ সৎ-অসৎ কর্মেরও বিচার হবে


                            ১০০। সূরা আদিয়াত

                            মালিকের অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও আরবে সুপরিচিত যুদ্ধ ঘোড়ার শপথ করে সূরা আদিয়াতে মানুষের রব্বের প্রতি তার অকৃতজ্ঞতার কথা বলা হয়। কারণ সে বিচারদিবসের ব্যাপারে গাফেল হয়ে ধনসম্পদ-প্রতিপত্তির প্রতি চরম আসক্ত


                            ১০১। সূরা ক্বারিয়াহ

                            সূরা ক্বারিয়াহ-তে বলা হয়, কিয়ামাতের দিন পাহাড়গুলো ধুনিত পশমের মতো উড়ে যাবে। শেষবিচারে নেক আমলের পাল্লা ভারি হলে সন্তোষজনক জীবনলাভ হবে। আর পাল্লা হালকা হলে হাওয়িয়া জাহান্নাম হবে আশ্রয়


                            ১০২। সূরা তাকাসুর

                            মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত একে অন্যের সাথে সম্পদ ইত্যাদির আধিক্যের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকাকে সূরা তাকাসুরে তিরস্কার করা হয়। বিচারদিনে জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করলে তাদের এই প্রতিযোগিতার অসারতা উপলব্ধি হবে


                            ১০৩। সূরা আসর

                            সূরা আসরে ক্রমহ্রাসমান সময়ের শপথ করে বলা হয়, ঈমানদার নেক আমলকারী সত্য ও ধৈর্যের দাওয়াহ দানকারী ব্যতীত সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত


                            ১০৪। সূরা হুমাযাহ

                            কোনো ব্যক্তির জ্ঞাতসারে ও অজ্ঞাতসারে তার অপ্রয়োজনীয় নিন্দা-সমালোচনা করা এবং অযথা সম্পদ জমা করাকে নিন্দা করা হয়েছে সূরা হুমাযাহ-তে। এমন কাজের প্রতিদান হলো হুতামা জাহান্নামের আগুন যা স্তম্ভের মতো বিশাল


                            ১০৫। সূরা ফীল

                            সূরা ফীলের প্রেক্ষাপট হলো, ইয়ামানের বাদশাহ আবরাহা এক আলিশান গীর্জা বানিয়ে মক্কার বদলে সেখানে হাজ্জ করতে বলে। মূর্তিপূজক হলেও কাবার ব্যাপারে আত্মমর্যাদাশালী আরবরা সেই গীর্জার কিছু ক্ষতিসাধন করে আসে। ক্রোধান্বিত আবরাহা বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে কাবা ধ্বংস করতে অগ্রসর হয়, যেখানে সে হাতির পিঠে সওয়ার ছিলো। আরবদের তখন বলার মতো কোনো সামরিক শক্তি ছিলো না। তারা কাবার ভেতরকার দেবদেবীর মূর্তিগুলোকে ভুলে গিয়ে দিনরাত আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানায়। প্রস্তরবাহী পাখি পাঠিয়ে আবরাহার বাহিনীকে আল্লাহ ধ্বংস করেন। সে সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুশরিকদেরকে এক আল্লাহর ইবাদাত করতে বলা হয়


                            ১০৬। সূরা ক্বুরাইশ

                            সূরা ক্বুরাইশেও এই বংশটির প্রতি এক আল্লাহর নিয়ামাত স্মরণ করানো হয়। আল্লাহর ঘরের খাদেম হওয়ার কারণেই ডাকাতসংকুল আরবে তারা নিরাপদে ব্যবসা কাফেলা নিয়ে চলাফেরা করতো, ইয়ামান ও শামে আসাযাওয়া করতো। অতএব তারা যেন এ ঘরের রব্বের ইবাদাত করে


                            ১০৭। সূরা মা'উন

                            সূরা মা'উনে মুনাফিক্বদের (কোনো মুফাসসিরের মতে কাফিরদের) আচরণ সম্পর্কে বলা হয়। তারা ইয়াতীমদের গলাধাক্কা দেয়, মিসকীনদের খাবার দিতে উৎসাহ দেয় না, সালাতে অমনোযোগী, লোক দেখাতে সালাত পড়ে, প্রতিবেশীরা যেসব ছোটখাটো জিনিস একে অন্যের থেকে প্রয়োজনে নিয়েই থাকে (থালাবাসন, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র), তাও দিতে চায় না


                            ১০৮। সূরা কাউসার

                            রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সকল পুত্রসন্তান মারা যাওয়ার পর কাফিররা তাঁকে শিকড়কাটা (আবতার) বলে উপহাস করতে থাকে। ভাবে যে রাসূলের মৃত্যুর পর তাঁর দাওয়াতের প্রভাব শেষ হয়ে যাবে। আল্লাহ সূরা কাউসারে জানিয়ে দেন তাঁর শত্রুরাই শেকড়কাটা। এছাড়া রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাউজে কাউসারের মতো বিরাট নিয়ামাত দেওয়ার কথাও বলা হয়, যেখান থেকে আখিরাতে তিনি উম্মতদের পানি পান করাবেন


                            ১০৯। সূরা কাফিরূন

                            মক্কার কাফিররা একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রস্তাব নিয়ে আসে যে, বছরের একটা সময়ে মুসলিমরা দেবদেবীর উপাসনা করুক আর আরেকটা সময়ে মুশরিকরা এক আল্লাহর উপাসনা করুক। সূরা কাফিরূনে তাদের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার হুকুম নাযিল হয়


                            ১১০। সূরা নাসর

                            আরব উপদ্বীপের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিমদের মক্কা আক্রমণের পরিণতি দেখার অপেক্ষায় ছিলো। আল্লাহর সাহায্যে মক্কা বিজয় হওয়ার পর দলে দলে সকলে ইসলাম গ্রহণ করে। দুনিয়ায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মিশন সফল হয়ে মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে। সূরা নাসর-এ তাঁকে বলা হয় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ, তাঁর প্রশংসা ও ইস্তিগফারে লিপ্ত থাকতে। নেক আমল করার পর তাই মুসলিমদের দায়িত্ব হলো আল্লাহ তাওফিক দিয়েছেন বলে তাঁর প্রশংসা করা এবং নিজ কাজের ভুলত্রুটির জন্য ইস্তিগফার করা


                            ১১১। সূরা লাহাব

                            রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কার লোকদের জরুরি ভিত্তিতে ডেকে এনে তাওহীদের দাওয়াহ দেন। তাঁর চাচা আবু লাহাব রেগে গিয়ে তাঁর ধ্বংসের বদদোয়া দেয় (আগুনের মতো উজ্জ্বল গায়ের রঙ হওয়ায় তাকে আবু লাহাব ডাকা হতো)। আল্লাহ সূরা লাহাব (অপর নাম সূরা মাসাদ)-এ আবু লাহাব ও তার কৃতকর্মের ধ্বংসের কথা বলেন। বদর যুদ্ধের কিছুদিন পর সে কোনো এক ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তাকে দূর থেকে লাঠি দিয়ে ঠেলে কবরে ফেলা হয়। তার সম্পদ ও সন্তান কোনো কাজে আসলো না। সে ও তার স্ত্রী দুজনই আগুনে (লাহাব) পুড়বে। কারণ তার স্ত্রীও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে কষ্ট দিতে নানা কূটচাল করতো। তার গয়না পরা গলা জাহান্নামে মোটা রশির বেড়িতে বাঁধা থাকবে


                            ১১২। সূরা ইখলাস

                            কিছু কাফির জিজ্ঞেস করতো আল্লাহর বংশ পরিচয় কী, তিনি দেখতে কেমন ইত্যাদি। সূরা ইখলাসে জানিয়ে দেওয়া হয় আল্লাহ এক ও অমুখাপেক্ষী (আহাদ ও সামাদ শব্দ দুটি বিশাল ব্যাখ্যাপূর্ণ, এক শব্দে অনুবাদ হয় না)। তিনি জন্ম দেন না ও জন্ম নেননি। কোনো কিছুই তাঁর সমকক্ষ বা সদৃশ নয়। মানুষ যতরকম কল্পনা করতে পারে, আল্লাহ তার কোনোটির মতোই নন


                            ১১৩-১১৪। সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস

                            রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর ইয়াহুদীরা একবার শক্তিশালী জাদু করে। ওয়াহীতে তার প্রভাব না পড়লেও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানবীয় জীবনে তার কিছু প্রভাব দেখা যায়। তাঁর মনে হতো কোনো একটা কাজ তিনি করেছেন, কিন্তু আসলে তা করা বাকি আছে। একবার তিনি ঘুমন্ত থাকা অবস্থায় দুজন ফেরেশতা স্বপ্নে তাঁর মাথা ও পায়ের কাছে বসে কথোপকথনের ভঙ্গিতে জাদুকর, কী দিয়ে জাদু করা হয়েছে, জাদুর বস্তু কোথায় লুকানো আছে, কীভাবে তা নষ্ট করতে হবে- তা বলে দেন। এরপর সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস নাযিল হয়। এ সূরা দুটি বিশেষ করে জাদুটোনার বিরুদ্ধে ঝাড়ফুঁকে ব্যবহৃত হয়। আল্লাহর যে কোনো সৃষ্টি দ্বারা ক্ষতি, জাদুকরের জাদু, হিংসুকের হিংসা, কুমন্ত্রণাদাতা শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়া হয়

                            Comment


                            • #29
                              শেয়ার করে সাওয়াবের ভাগিদার হই ইনশাআল্লাহ

                              Comment

                              Working...
                              X