Announcement

Collapse
No announcement yet.

মানুষ যে মহান দায়িত্ব সেচ্ছায় কাঁধে নিয়েছে:

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মানুষ যে মহান দায়িত্ব সেচ্ছায় কাঁধে নিয়েছে:

    اِنَّا عَرَضۡنَا الۡاَمَانَۃَ عَلَی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ الۡجِبَالِ فَاَبَیۡنَ اَنۡ یَّحۡمِلۡنَہَا وَ اَشۡفَقۡنَ مِنۡہَا وَ حَمَلَہَا الۡاِنۡسَانُ ؕ اِنَّہٗ کَانَ ظَلُوۡمًا جَہُوۡلًا ﴿ۙ۷۲﴾ لِّیُعَذِّبَ اللّٰہُ الۡمُنٰفِقِیۡنَ وَ الۡمُنٰفِقٰتِ وَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ وَ الۡمُشۡرِکٰتِ وَ یَتُوۡبَ اللّٰہُ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا {۷۳}
    অর্থঃ যাতে আল্লাহ্ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীকে শাস্তি দেন এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকে ক্ষমা করেন। আর আল্লাহ্ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আমরা তো আসমান, যমীন ও পর্বতমালার প্রতি এ আমানত পেশ করেছিলাম, কিন্তু তারা এটা বহন করতে অস্বীকার করল এবং তাতে শংকিত হল, আর মানুষ তা বহন করল; সে অত্যন্ত যালিম, খুবই অজ্ঞ। (সুরাহ আহযাবঃ ৭২-৭৩)

    এখানে আমানত শব্দের তাফসীর প্রসঙ্গে সাহাবী ও তাবেয়ী প্রমুখ তাফসীরবিদগণের অনেক উক্তি বর্ণিত আছে; যেমন শরী’ইয়াতের ফরয কর্মসমূহ, লজ্জাস্থানের হেফাযত, ধন-সম্পদের আমানত, অপবিত্রতার গোসল, সালাত, যাকাত, সওম, হজ ইত্যাদি। এ কারণেই অধিকাংশ তাফসীরবিদ বলেন যে, দ্বীনের যাবতীয় কর্তব্য ও কর্ম এই আমানতের অন্তর্ভুক্ত। শরীয়তের যাবতীয় আদেশ নিষেধের সমষ্টিই আমানত। আমানতের উদ্দেশ্য হচ্ছে শরীয়তের বিধানাবলী দ্বারা আদিষ্ট হওয়া, যেগুলো পুরোপুরি পালন করলে জান্নাতের চিরস্থায়ী নেয়ামত এবং বিরোধিতা অথবা ক্ৰটি করলে জাহান্নামের আযাব প্রতিশ্রুত। কেউ কেউ বলেন: আমানতের উদ্দেশ্য আল্লাহর বিধানাবলীর ভার বহনের যোগ্যতা ও প্রতিভা, যা বিশেষ স্তরের জ্ঞান-বুদ্ধি ও চেতনার উপর নির্ভরশীল। উন্নতি এবং আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা এই বিশেষ যোগ্যতার উপর নির্ভরশীল। মোটকথা, এখানে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য ও তাঁদের আদেশাবলী পালনকে “আমানত" শব্দের মাধ্যমে প্ৰকাশ করা হয়েছে। এ আমানত কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও দুৰ্বহ সে ধারণা দেবার জন্য আল্লাহ বলেন, আকাশ ও পৃথিবী তাদের সমস্ত শ্রেষ্ঠত্ব এবং পাহাড় তার বিশাল ও বিপুলায়তন দেহাবয়ব ও গভীরতা সত্ত্বেও তা বহন করার শক্তি ও হিম্মত রাখতো না কিন্তু দুর্বল দেহাবয়বের অধিকারী মানুষ নিজের ক্ষুদ্রতম প্ৰাণের ওপর এ ভারী বোঝা উঠিয়ে নিয়েছে। সম্ভবত মানুষের সহজাত দুর্বলতা, তদুপরি তার সেই গুরুদায়িত্ব, যা বহন করতে আকাশ, পৃথিবী ও পাহাড় পর্বত পর্যন্ত সাহস করেনি, সে নিজের হাজারাে রকমের আবেগ, অনুভূতি, রিপু ও প্রবৃত্তির তাড়না, জ্ঞানের স্বল্পতা, আয়ুষ্কালের স্বল্পতা, স্থানগত ও কালগত বাধা-বিপত্তি এবং এই সব বাধা-বিপত্তির ওপারে কী আছে, তা সম্পূর্ণরূপে না জেনেই নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়েছে। এসব দেখেই আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি এতােবড় অনুগ্রহ করেছেন ও এতােবড় সাফল্য দান করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আমি আকাশ, পৃথিবী ও পাহাড় পর্বতের সামনে আমানত বা গুরুদায়িত্ব রেখেছিলাম। তারা সবাই এ গুরুদায়িত্ব বহন করতে অস্বীকার করেছে এবং মানুষ তা বহন করেছে...'(আয়াত ৭১) আল কোরআন অন্যান্য সৃষ্টিকে বাদ দিয়ে আকাশ, পৃথিবী ও পাহাড় পর্বত এই কটা সৃষ্টিকে বাছাই করার কথা উল্লেখ করেছে। কারণ এগুলাে এতাে বড়ো যে, মানুষ এগুলোর ভেতরে বা আশেপাশে বাস করে এবং এ গুলাের তুলনায় মানুষকে খুবই ছােট ও নগণ্য মনে হয়। এসব বড়াে বড়াে সৃষ্টি তাদের স্রষ্টাকে বিনা চেষ্টাতেই চেনে এবং তার সেই সব নিয়ম-কানুনের আনুগত্য করে, যা তার ওপর সৃষ্টিগত প্রক্রিয়াতেই চালু হয়, এরা মহান স্রষ্টার নিয়ম-কানুন ও প্রাকৃতিক বিধিকে সরাসরি ও কোনাে চিন্তা পরিকল্পনা বা মাধ্যম ছাড়াই মেনে চলে। এই নিয়ম কানুন-অনুসারে তারা নিজ কর্তব্য পালন করে এবং এক মুহূর্তের জন্যে তার বিরুদ্ধাচরণ করে না বা শৈথিল্য দেখায় না। তারা কোনাে ইচ্ছা বা অনুভূতি ছাড়াই তাদের হভাব প্রকৃতি অনুসারেই নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে। সূর্য তার জন্যে নির্দিষ্ট কক্ষপথে নিয়মিত আবর্তন সম্পন্ন করে এবং তাতে কখনাে ত্রুটি করে না। আল্লাহ তায়ালা তার জন্যে যে দায়িত্ব নির্ধারণ করেছেন, সে অনুসারে সে তার উত্তাপ বিকিরণ করে এবং তার গ্রহ-উপগ্রহগুলােকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে রাখে। এভাবে সে তার মহাজাগতিক দায়িত্ব পূর্ণভাবে পালন করে। পৃথিবী তার কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে, ফসল ফলায়, তার অধিবাসীদের খাদ্য যােগায়, মৃতদের লাশ নিজের বুকে ধারণ করে এবং নদ-নদী ও জলাশয়গুলোর জন্ম দেয়। এসব দায়িত্ব পালনে তার ইচ্ছার কোনাে ভূমিকা নেই, আল্লাহর বিধান অনুসারেই সে এসব কাজ করে। চাঁদ-তারা ও গ্রহ-উপগ্রহ, বাতাস, মেঘ, জলবায়ু, পানি, পাহাড়-পর্বত, আর্দ্রতা- এই সবকিছুই মহান আল্লাহর হুকুমে নিজ নিজ কাজ করে যাচ্ছে। তারা তাদের স্রষ্টাকে চেনে এবং তার ইচ্ছামতাে চলে। অথচ এ জন্যে তার কোনাে চেষ্টা বা কষ্ট করতে হয় না। কিন্তু তারা একটা বিশেষ দায়িত্ব বহনে ভয় পেয়ে গেলাে। সে দায়িত্বটা হলাে ইচ্ছা শক্তি প্রয়ােগের দায়িত্ব, ব্যক্তিগত জ্ঞান অর্জনের দায়িত্ব এবং ব্যক্তিগত চেষ্টা সাধনার দায়িত্ব। মানুষ সে দায়িত্ব বহন করে। মানুষ সচেতনভাবে আল্লাহ তায়ালাকে চেনে ও জানে। সে তার নিয়ম কানুনের আনুগত্য করে আপন প্রজ্ঞা, অন্তর্দৃষ্টি ও বােধশক্তি প্রয়ােগের মাধ্যমে। আর এই নিয়মবিধি অনুসারে সে কাজ করে নিজস্ব চেষ্টা-সাধনার মাধ্যমে। নিজ ইচ্ছা অনুসারে, নিজ প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে, বিপথগামিতার প্রবণতা প্রতিরােধের মাধ্যমে এবং প্রবৃত্তির খেয়াল খুশী নিয়ন্ত্রণ ও সংযমের মাধ্যমে সে আল্লাহর আনুগত্য করে। এই সব পদক্ষেপে সে নিজের ইচ্ছাকে কাজে লাগায়, নিজের বিবেক-বুদ্ধিকে প্রয়ােগ করে এবং কোনাে পথ তাকে কোথায় নিয়ে যাবে তা জেনে বুঝেই একটা পথ অনুসর করে। এটা একটা বিরাট গুরুদায়িত্ব, যা এই ক্ষুদ্র, সীমিত শক্তিসম্পন্ন সীমিত আয়ুষ্কালসম্পন্ন এবং রকমারি লােভ-লালসা, প্রবণতা ও প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার সাথে যুদ্ধরত জীব-মানুষ গ্রহণ করেছে। সে ভারী বােঝা নিজের কাঁধে চড়িয়ে এক দুঃসাহসিক কাজ করেছে। এজন্যে বলা হয়েছে যে, 'সে যালেম ও অজ্ঞ।' অর্থাৎ সে নিজের ওপর যুলুম করেছে এবং নিজের শক্তি সম্পর্কে অজ্ঞ। তার দায়িত্বের বিরাটত্বের বিবেচনায় এ কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সে যখন তার দায়িত্ব পালনে উদ্যোগেী হয়, আপন স্রষ্টার পরিচয় লাভ করে, তার নিয়ম-বিধির প্রত্যক্ষ আনুগত্য করে, তার প্রতিপালকের ইচ্ছা অনুসারে পুরােপুরিভাবে চলে, তখন সে নিশ্চিতভাবে এমন এক স্তরে উন্নীত হয়, যেখানে সে পরম সম্মানের মর্যাদা লাভ করে এবং আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে একটা অনন্য স্থানে পৌছে যায়। কারণ সে আল্লাহর সেই পরিচয় লাভ করে ও সেই আনুগত্য যা আকাশ পৃথিবী ও পাহাড়ের আনুগত্যের ন্যায় সহজ, পূর্ণাংগ ও সর্বাত্মক। এ সব সৃষ্টি প্রত্যক্ষভাবে ও স্বতস্ফূর্তভাবে আল্লাহর পরিচয় লাভ করে, প্রত্যক্ষ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহর সন্ধান লাভ করে। প্রত্যক্ষ ও স্বতস্ফূর্তভাবে আল্লাহর আনুগত্য করে। তাদের মাঝে ও তাদের স্রষ্টার মাঝে এবং স্রষ্টার ইচ্ছা ও হুকুমের মাঝে কোনাে অন্তরায় থাকে না। তাদেরকে আনুগত্য থেকে ও কর্তব্য পালন থেকে কেউ বিরত রাখতে বা উদাসীন করতে পারে না। মূলত এই উপলব্ধি, ইচ্ছাশক্তি, চেষ্টা সাধনা এবং দায়িত্ব ও কর্মফলের চেতনাই হলাে আল্লাহর অন্যান্য বহ সৃষ্টির সাথে মানুষের পার্থক্য ও বৈশিষ্ট। এ জিনিসগুলােই তাকে সেই সম্মানের যােগ্য বানায়, যা আল্লাহ তায়ালা আদমকে সেজদা করতে ফেরেশতাদের বাধ্য করার সময় ঘােষণা করেছিলেন। এ কথা আল্লাহ তায়ালা কোরআনেও সংরক্ষণ করেছেন, 'আমি আদমের বংশধর সম্মানিত করেছি।' অতপর মানুষের জানা উচিত কিসের জন্যে সে আল্লাহর কাছে এতো সম্মানিত। তার সেচ্ছায় গ্রহণ করা সেই আমানত তথা গুরুদায়িত্ব তার পালন করা উচিত, যা আকাশ, পৃথিবী ও পাহাড় পর্বত গ্রহণ করার সাহস পায়নি। এর উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ তায়ালা মুনাফিক পুরুষ ও মহিলাদেরকে এবং মােশরেক পুরুষ ও মহিলাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং মােমেন নারী ও পুরুষকে ক্ষমা করবেন, আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও দয়ালু। বস্তুত একমাত্র মানুষকে আল্লাহর আমানত গ্রহণের জন্যে বাছাই করা এবং নিজেকে চেনা, নিজেরই সঠিক পথের সন্ধান পাওয়া, নিজেই কাজ করা ও নিজেকে গন্তব্যে পৌছানাের দায়িত্ব নিজের কাঁধে চাপানাের উদ্দেশ্য শুধু এই যে, সে যেন নিজের স্বেচ্ছাকৃত দায়িত্বের ফলাফল বহন করে এবং তার শাস্তি বা পুরস্কার যেন তার নিজের কাজ অনুসারেই হয়। তারপর মােনাফেক ও মােশরেক নারী-পুরুষের ওপর তার আযাব নেমে আসে এবং আল্লাহর সাহায্য তার মােমেন বান্দাদের ওপর বর্ষিত হয়। ফলে বিভিন্ন অক্ষমতা ও দুর্বলতার চাপে, বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির কারণে এবং বিভিন্ন আকর্ষণ ও বােঝার কারণে যেসব ভুলত্রুটি তাদের দ্বারা সংঘটিত হয়, তা আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেবেন। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সাহায্য। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি নিজের ক্ষমা ও দয়া নিয়ে অধিকতর অগ্রসর। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও দয়ালু।' এই গুরু গন্ভীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সূরাটা শেষ হচ্ছে। এই সূরা শুরু হয়েছিলাে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর রসূলকে তার আনুগত্য করা, কাফের ও মােনাফেকদের আনুগত্য না করা, আল্লাহর ওহীর অনুসরণ করা এবং একমাত্র তার ওপর তাওয়াক্কুল করার নির্দেশের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে এ সূরায় ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রের অতীব প্রয়ােজনীয় আইন-কানুন ও নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং একাগ্র চিত্তে এগুলাে অনুসরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে মানুষের ওপর অর্পিত দায়িত্ব বা আমানতের গুরুত্ব ও বিরাটত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর মানুষের আল্লাহর সঠিক পরিচয় লাভ, তার বিধি-বিধান ও তার ইচ্ছা অনুসরণের মধ্যেই এই আমানতের বিরাটত্বকে সীমিত করা হয়েছে। অন্যকথায়, আল্লাহর বিধান অনুসরণই মানুষের ওপর অর্পিত সেই আমানত বা গুরুদায়িত্ব। এই গুরুগম্ভীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সূরাটা এবার শেষ হয়ে যাচ্ছে। সূরার শুরু ও শেষের বিষয়বস্তু ও বক্তব্যের মধ্যে চমৎকার একটা সমন্বয় বিদ্যমান। এই অলৌকিক সমন্বয়ই এই মহাগ্ৰন্থের উৎসের সন্ধান দেয়।

  • #2
    মাশাআল্লাহ, খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা । আল্লাহ তায়ালা ভাইয়ের মেধা ও যোগ্যতায় আরো সমৃদ্ধি দান করুন। আমীন

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ ভাই আপনি এত অধিক পরিমাণে সাহিত্য ব্যবহার করেছেন।।। কোন পত্র পত্রিকায়ও এত সাহিত্য কেউ ব্যবহার করতে দেখিনি।

      Comment

      Working...
      X