দারসুল কুরআন-৫
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَٰٓئِكَةِ ٱسْجُدُوا۟ لِءَادَمَ فَسَجَدُوٓا۟ إِلَّآ إِبْلِيسَ أَبَىٰ وَٱسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ ٱلْكَٰفِرِينَ
অর্থঃ এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।
{সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ৩৪}
আয়াতের হেদায়েত/শিক্ষা
���� আল্লাহ তাআলার নিয়ামতের কথা স্মরণ করে উপদেশ গ্রহণ করা এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
���� হিংসা ও অহংকার থেকে দূরে থাকা। কেননা এগুলো ছিল শয়তানের লাঞ্ছনার কারণ এবং ইহুদীদের ইসলাম থেকে দূরে থাকার কারণ।
���� শয়তানের সঙ্গে শত্রুতা মনে গেঁথে নেওয়া। একথা মনে রাখা যে, সে এমন শত্রু যার সঙ্গে সবসময় শত্রুতা রাখা আবশ্যক।
���� কিছু কিছু গুনাহ কুফর আর কিছু কিছু গুনাহ কুফরের দিকে নিয়ে যায়।
وَقُلْنَا يَٰٓـَٔادَمُ ٱسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ ٱلْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ
فَأَزَلَّهُمَا ٱلشَّيْطَٰنُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِ وَقُلْنَا ٱهْبِطُوا۟ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ وَلَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَٰعٌ إِلَىٰ حِينٍ
فَتَلَقَّىٰٓ ءَادَمُ مِن رَّبِّهِۦ كَلِمَٰتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ
অর্থঃ এবং আমি আদমকে হুকুম করলাম যে, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং ওখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে।
অনন্তর শয়তান তাদের উভয়কে ওখান থেকে পদস্খলিত করেছিল। পরে তারা যে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল এবং আমি বললাম, তোমরা নেমে যাও। তোমরা পরস্পর একে অপরের শক্র হবে এবং তোমাদেরকে সেখানে কিছুকাল অবস্থান করতে হবে ও লাভ সংগ্রহ করতে হবে। অতঃপর হযরত আদম (আঃ) স্বীয় পালনকর্তার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শিখে নিলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি (করুণাভরে) লক্ষ্য করলেন। নিশ্চয়ই তিনি মহা-ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু।
{সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ৩৫-৩৭}
আয়াতের হেদায়েত/শিক্ষা
���� আল্লাহ তাআলার কাছে আদম আলাইহিস সালাম ও তার সন্তানদের মর্যাদা।
���� গুনাহের ক্ষতি এবং এর পরিণতি হলো,সুখ দুঃখে রুপান্তর হওয়া।
���� মানুষের সাথে শয়তানের শত্রুতা ভালো করে উপলব্ধি করা,যেন তার কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকা যায়।
���� পাপ থেকে তাওবা করা আবশ্যক।তা হলো,পাপ স্বীকার করার পর,তা ছেড়ে দেওয়া, অনুতপ্ত হওয়া এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা।
قُلْنَا ٱهْبِطُوا۟ مِنْهَا جَمِيعًا فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّى هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدَاىَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَكَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَآ أُو۟لَٰٓئِكَ أَصْحَٰبُ ٱلنَّارِ هُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ
অর্থঃ আমি হুকুম করলাম, তোমরা সবাই নীচে নেমে যাও। অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না (কোন কারণে) তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্তপ্ত হবে। আর যে লোক তা অস্বীকার করবে এবং আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার প্রয়াস পাবে, তারাই হবে জাহান্নামবাসী; অন্তকাল সেখানে থাকবে।
{সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ৩৮-৩৯}
আয়াতের হেদায়েত/শিক্ষা
���� আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা দুর্ভাগ্যের কারণ।
���� কুরআন ও সুন্নাহর উপর আমল করা নিরাপত্তা ও সৌভাগ্যের উপায়।আর এগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ভয়,অকল্যাণ, দুর্ভাগ্য ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ।
���� কুফর ও মিথ্যারোপের পরিণতি হলো চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
يَٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱذْكُرُوا۟ نِعْمَتِىَ ٱلَّتِىٓ أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَوْفُوا۟ بِعَهْدِىٓ أُوفِ بِعَهْدِكُمْ وَإِيَّٰىَ فَٱرْهَبُونِ
وَءَامِنُوا۟ بِمَآ أَنزَلْتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُمْ وَلَا تَكُونُوٓا۟ أَوَّلَ كَافِرٍۭ بِهِۦ وَلَا تَشْتَرُوا۟ بِـَٔايَٰتِى ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّٰىَ فَٱتَّقُونِ
وَلَا تَلْبِسُوا۟ ٱلْحَقَّ بِٱلْبَٰطِلِ وَتَكْتُمُوا۟ ٱلْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرْكَعُوا۟ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ
অর্থঃ হে বনী-ইসরাঈলগণ, তোমরা স্মরণ কর আমার সে অনুগ্রহ যা আমি তোমাদের প্রতি করেছি এবং তোমরা পূরণ কর আমার সাথে কৃত প্রতিজ্ঞা, তাহলে আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। আর ভয় কর আমাকেই। আর তোমরা সে গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমি অবতীর্ণ করেছি সত্যবক্তা হিসেবে তোমাদের কাছে। বস্তুতঃ তোমরা তার প্রাথমিক অস্বীকারকারী হয়ো না আর আমার আয়াতের অল্প মূল্য দিও না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ। তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বে সত্যকে তোমরা গোপন করো না। আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়।
{সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ৪০-৪৩}
আয়াতের হেদায়েত/শিক্ষা
���� আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের আলোচনা করা এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আবশ্যক।
���� অঙ্গীকার পূরণ করা আবশ্যক, বিশেষ করে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের থেকে যে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন।
���� সত্য প্রকাশ করা ওয়াজিব আর তা গোপন করা হারাম।
���� মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণ ঘটানো হারাম।যেমনটা ইহুদীরা করেছিল, তারা বলেছিল,
মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবী তো ঠিক আছে। কিন্তু তিনি কেবল আরবের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। তাই ইহুদীরা তার প্রতি ঈমান না আনলেও সমস্যা নাই।
أَتَأْمُرُونَ ٱلنَّاسَ بِٱلْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ ٱلْكِتَٰبَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
وَٱسْتَعِينُوا۟ بِٱلصَّبْرِ وَٱلصَّلَوٰةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى ٱلْخَٰشِعِينَ
ٱلَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلَٰقُوا۟ رَبِّهِمْ وَأَنَّهُمْ إِلَيْهِ رَٰجِعُونَ
অর্থঃ তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভূলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না? ধৈর্য্যর সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাযের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব। যারা একথা খেয়াল করে যে, তাদেরকে সম্মুখীন হতে হবে স্বীয় পরওয়ারদেগারের এবং তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।
{সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ৪৪-৪৭}
আয়াতের হেদায়েত/শিক্ষা
���� অন্যকে ভালো কাজের আদেশ করে নিজে ভালো কাজ থেকে বিরত থাকা খুবই জঘন্য কাজ।
���� মন্দ তো এমনিতেই কদর্য, কিন্তু তার কদর্যতা বৃদ্ধি পায় যদি তা কোনো আলেমের কাছ থেকে প্রকাশ পায়।
���� কঠিন সময়ে সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই পেরেশান হতেন, তখনই সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন।
���� আল্লাহ তাআলার প্রতি বিনয়াবনত হওয়া, মৃত্যুর আলোচনা করা এবং হিসাব-নিকাশের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে প্রত্যবর্তানের কথা স্মরণ করা অনেক ফযিলতপূর্ণ কাজ।
يَٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱذْكُرُوا۟ نِعْمَتِىَ ٱلَّتِىٓ أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّى فَضَّلْتُكُمْ عَلَى ٱلْعَٰلَمِينَ
وَٱتَّقُوا۟ يَوْمًا لَّا تَجْزِى نَفْسٌ عَن نَّفْسٍ شَيْـًٔا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَٰعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ
অর্থঃ হে বনী-ইসরাঈলগণ! তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি এবং (স্মরণ কর) সে বিষয়টি যে, আমি তোমাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি সমগ্র বিশ্বের উপর।
আর সে দিনের ভয় কর, যখন কেউ কারও সামান্য উপকারে আসবে না এবং তার পক্ষে কোন সুপারিশও কবুল হবে না; কারও কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও নেয়া হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যও পাবে না।
{সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ৪৭-৪৮}
আয়াতের হেদায়েত/শিক্ষা
���� আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের আলোচনা করা এবং তার কৃতজ্ঞতাসহ আনুগত্য করা ওয়াজিব।
���� শিরক ও অবাধ্যতা ছেড়ে ঈমান ও আমলে সালেহ'এর মাধ্যমে নিজেকে কিয়ামত দিবসের আযাব থেকে রক্ষা করা আবশ্যক।
���� কিয়ামতের দিন কোনো কাফেরের জন্য সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং কারো মুক্তিপণও গ্রহণ করা হবে না।
(শায়খ আবু বকর আল জাযায়েরী রাহিমাহুল্লার ايسر التفاسير অবলম্বনে লিখিত)
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَٰٓئِكَةِ ٱسْجُدُوا۟ لِءَادَمَ فَسَجَدُوٓا۟ إِلَّآ إِبْلِيسَ أَبَىٰ وَٱسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ ٱلْكَٰفِرِينَ
অর্থঃ এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।
{সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ৩৪}
আয়াতের হেদায়েত/শিক্ষা
���� আল্লাহ তাআলার নিয়ামতের কথা স্মরণ করে উপদেশ গ্রহণ করা এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
���� হিংসা ও অহংকার থেকে দূরে থাকা। কেননা এগুলো ছিল শয়তানের লাঞ্ছনার কারণ এবং ইহুদীদের ইসলাম থেকে দূরে থাকার কারণ।
���� শয়তানের সঙ্গে শত্রুতা মনে গেঁথে নেওয়া। একথা মনে রাখা যে, সে এমন শত্রু যার সঙ্গে সবসময় শত্রুতা রাখা আবশ্যক।
���� কিছু কিছু গুনাহ কুফর আর কিছু কিছু গুনাহ কুফরের দিকে নিয়ে যায়।
وَقُلْنَا يَٰٓـَٔادَمُ ٱسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ ٱلْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ
فَأَزَلَّهُمَا ٱلشَّيْطَٰنُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِ وَقُلْنَا ٱهْبِطُوا۟ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ وَلَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَٰعٌ إِلَىٰ حِينٍ
فَتَلَقَّىٰٓ ءَادَمُ مِن رَّبِّهِۦ كَلِمَٰتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ
অর্থঃ এবং আমি আদমকে হুকুম করলাম যে, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং ওখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে।
অনন্তর শয়তান তাদের উভয়কে ওখান থেকে পদস্খলিত করেছিল। পরে তারা যে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল এবং আমি বললাম, তোমরা নেমে যাও। তোমরা পরস্পর একে অপরের শক্র হবে এবং তোমাদেরকে সেখানে কিছুকাল অবস্থান করতে হবে ও লাভ সংগ্রহ করতে হবে। অতঃপর হযরত আদম (আঃ) স্বীয় পালনকর্তার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শিখে নিলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি (করুণাভরে) লক্ষ্য করলেন। নিশ্চয়ই তিনি মহা-ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু।
{সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ৩৫-৩৭}
আয়াতের হেদায়েত/শিক্ষা
���� আল্লাহ তাআলার কাছে আদম আলাইহিস সালাম ও তার সন্তানদের মর্যাদা।
���� গুনাহের ক্ষতি এবং এর পরিণতি হলো,সুখ দুঃখে রুপান্তর হওয়া।
���� মানুষের সাথে শয়তানের শত্রুতা ভালো করে উপলব্ধি করা,যেন তার কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকা যায়।
���� পাপ থেকে তাওবা করা আবশ্যক।তা হলো,পাপ স্বীকার করার পর,তা ছেড়ে দেওয়া, অনুতপ্ত হওয়া এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা।
قُلْنَا ٱهْبِطُوا۟ مِنْهَا جَمِيعًا فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّى هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدَاىَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَكَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَآ أُو۟لَٰٓئِكَ أَصْحَٰبُ ٱلنَّارِ هُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ
অর্থঃ আমি হুকুম করলাম, তোমরা সবাই নীচে নেমে যাও। অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না (কোন কারণে) তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্তপ্ত হবে। আর যে লোক তা অস্বীকার করবে এবং আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার প্রয়াস পাবে, তারাই হবে জাহান্নামবাসী; অন্তকাল সেখানে থাকবে।
{সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ৩৮-৩৯}
আয়াতের হেদায়েত/শিক্ষা
���� আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা দুর্ভাগ্যের কারণ।
���� কুরআন ও সুন্নাহর উপর আমল করা নিরাপত্তা ও সৌভাগ্যের উপায়।আর এগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ভয়,অকল্যাণ, দুর্ভাগ্য ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ।
���� কুফর ও মিথ্যারোপের পরিণতি হলো চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
يَٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱذْكُرُوا۟ نِعْمَتِىَ ٱلَّتِىٓ أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَوْفُوا۟ بِعَهْدِىٓ أُوفِ بِعَهْدِكُمْ وَإِيَّٰىَ فَٱرْهَبُونِ
وَءَامِنُوا۟ بِمَآ أَنزَلْتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُمْ وَلَا تَكُونُوٓا۟ أَوَّلَ كَافِرٍۭ بِهِۦ وَلَا تَشْتَرُوا۟ بِـَٔايَٰتِى ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّٰىَ فَٱتَّقُونِ
وَلَا تَلْبِسُوا۟ ٱلْحَقَّ بِٱلْبَٰطِلِ وَتَكْتُمُوا۟ ٱلْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرْكَعُوا۟ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ
অর্থঃ হে বনী-ইসরাঈলগণ, তোমরা স্মরণ কর আমার সে অনুগ্রহ যা আমি তোমাদের প্রতি করেছি এবং তোমরা পূরণ কর আমার সাথে কৃত প্রতিজ্ঞা, তাহলে আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। আর ভয় কর আমাকেই। আর তোমরা সে গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যা আমি অবতীর্ণ করেছি সত্যবক্তা হিসেবে তোমাদের কাছে। বস্তুতঃ তোমরা তার প্রাথমিক অস্বীকারকারী হয়ো না আর আমার আয়াতের অল্প মূল্য দিও না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ। তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বে সত্যকে তোমরা গোপন করো না। আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়।
{সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ৪০-৪৩}
আয়াতের হেদায়েত/শিক্ষা
���� আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের আলোচনা করা এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আবশ্যক।
���� অঙ্গীকার পূরণ করা আবশ্যক, বিশেষ করে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের থেকে যে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন।
���� সত্য প্রকাশ করা ওয়াজিব আর তা গোপন করা হারাম।
���� মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণ ঘটানো হারাম।যেমনটা ইহুদীরা করেছিল, তারা বলেছিল,
মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবী তো ঠিক আছে। কিন্তু তিনি কেবল আরবের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। তাই ইহুদীরা তার প্রতি ঈমান না আনলেও সমস্যা নাই।
أَتَأْمُرُونَ ٱلنَّاسَ بِٱلْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ ٱلْكِتَٰبَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
وَٱسْتَعِينُوا۟ بِٱلصَّبْرِ وَٱلصَّلَوٰةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى ٱلْخَٰشِعِينَ
ٱلَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلَٰقُوا۟ رَبِّهِمْ وَأَنَّهُمْ إِلَيْهِ رَٰجِعُونَ
অর্থঃ তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভূলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না? ধৈর্য্যর সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাযের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব। যারা একথা খেয়াল করে যে, তাদেরকে সম্মুখীন হতে হবে স্বীয় পরওয়ারদেগারের এবং তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।
{সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ৪৪-৪৭}
আয়াতের হেদায়েত/শিক্ষা
���� অন্যকে ভালো কাজের আদেশ করে নিজে ভালো কাজ থেকে বিরত থাকা খুবই জঘন্য কাজ।
���� মন্দ তো এমনিতেই কদর্য, কিন্তু তার কদর্যতা বৃদ্ধি পায় যদি তা কোনো আলেমের কাছ থেকে প্রকাশ পায়।
���� কঠিন সময়ে সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই পেরেশান হতেন, তখনই সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন।
���� আল্লাহ তাআলার প্রতি বিনয়াবনত হওয়া, মৃত্যুর আলোচনা করা এবং হিসাব-নিকাশের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে প্রত্যবর্তানের কথা স্মরণ করা অনেক ফযিলতপূর্ণ কাজ।
يَٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱذْكُرُوا۟ نِعْمَتِىَ ٱلَّتِىٓ أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّى فَضَّلْتُكُمْ عَلَى ٱلْعَٰلَمِينَ
وَٱتَّقُوا۟ يَوْمًا لَّا تَجْزِى نَفْسٌ عَن نَّفْسٍ شَيْـًٔا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَٰعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ
অর্থঃ হে বনী-ইসরাঈলগণ! তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি এবং (স্মরণ কর) সে বিষয়টি যে, আমি তোমাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি সমগ্র বিশ্বের উপর।
আর সে দিনের ভয় কর, যখন কেউ কারও সামান্য উপকারে আসবে না এবং তার পক্ষে কোন সুপারিশও কবুল হবে না; কারও কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও নেয়া হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যও পাবে না।
{সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ৪৭-৪৮}
আয়াতের হেদায়েত/শিক্ষা
���� আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের আলোচনা করা এবং তার কৃতজ্ঞতাসহ আনুগত্য করা ওয়াজিব।
���� শিরক ও অবাধ্যতা ছেড়ে ঈমান ও আমলে সালেহ'এর মাধ্যমে নিজেকে কিয়ামত দিবসের আযাব থেকে রক্ষা করা আবশ্যক।
���� কিয়ামতের দিন কোনো কাফেরের জন্য সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং কারো মুক্তিপণও গ্রহণ করা হবে না।
(শায়খ আবু বকর আল জাযায়েরী রাহিমাহুল্লার ايسر التفاسير অবলম্বনে লিখিত)
Comment