পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুরা মুমিনুনে মুমিদের গুনগুলোর বর্ননা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ
قَدۡ اَفۡلَحَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ۙ﴿۱﴾
الَّذِیۡنَ ہُمۡ فِیۡ صَلَاتِہِمۡ خٰشِعُوۡنَ ۙ﴿۲﴾
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ عَنِ اللَّغۡوِ مُعۡرِضُوۡنَ ﴿ۙ۳}.
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ لِلزَّکٰوۃِ فٰعِلُوۡنَ ۙ﴿۴﴾
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ لِفُرُوۡجِہِمۡ حٰفِظُوۡنَ ۙ﴿۵﴾
اِلَّا عَلٰۤی اَزۡوَاجِہِمۡ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُمۡ فَاِنَّہُمۡ غَیۡرُ مَلُوۡمِیۡنَ ۚ﴿۶﴾
فَمَنِ ابۡتَغٰی وَرَآءَ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡعٰدُوۡنَ ۚ﴿۷﴾
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ لِاَمٰنٰتِہِمۡ وَ عَہۡدِہِمۡ رٰعُوۡنَ ۙ﴿۸﴾
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ عَلٰی صَلَوٰتِہِمۡ یُحَافِظُوۡنَ ۘ﴿۹﴾
1.মুমিনগন সফল হয়ে গেছে।
২.যারা নিজেদের নামাযে বিনয় নম্র
৩.যারা অনর্থক কথা বার্তায় নির্লিপ্ত।
৪.যারা যাকাত আদায় করে থাকে।
৫.যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।
৬.তবে স্ত্রী বা মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না।
৭.অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘন কারী হবে।
৮.যারা নামায সমুহের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করে
উপরোক্ত সুরা মুমিনুনের আয়াত সমূহে মুমিনের গুনগুলোর আলোচনা করা হয়েছে।প্রথম আয়াতেই মুমিনদের সফলতার ঘোষনা দেয়া হয়েছে।বলা হয়েছে মুমিনরা সফল হয়ে গেছে।এর পরেই তাদের গুনগুলোর কথা বলা হয়েছে।প্রথম গুন বলা হয়েছে তারা নামায বিনয়ের সাথে আদায় করে।আর মাঝখানে আরো কিছু গুনের কথা বলা হয়েছে।আবার শেষে ৯নং আয়াতেও নামাযের কথা বলা হয়েছে।এখন লক্ষনীয় বিষয় হলো প্রথমেও নামাযের কথা বলা হয়েছে আবার শেষেও নামাযের কথাই বলা হলে কেন? এর উত্তরে তাফসীরে বলা হয়েছেঃ এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে,নামাযকে নামাযের মত পাবন্দী ও নিয়ম নীতি সহকারে আদায় করলে অবশিষ্ট গুনগুলো আপনা আপনি নামাযীর মধ্যে সৃষ্টি হতে থাকবে।
দেখুন অনর্থক কথা বলা, লজ্জাস্থানের হেফাজত না করা, আমানতের খেয়ানত করা, এবং ওয়াদা রক্ষা না করা এসবই পাপের কাজ গুনাহের কাজ।আপনি যখন নামায ঠিক ভাবে আদায় করবেন তখন এসকল গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকতে পারবেন।কেননা মহান আল্লাহ বলেনঃ اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ مِنَ الۡکِتٰبِ وَاَقِمِ الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَالۡمُنۡکَرِ ؕ وَلَذِکۡرُ اللّٰہِ اَکۡبَرُ ؕ وَاللّٰہُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ
আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।(সুরা আনকাবুত৪৫)
আয়াতে বলা হয়েছে নামায অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে।যে সকল যুবক অনেক পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার বহু চেষ্টা করেও পারতেছেন না তারা নামায কে সুন্দর করে আদায় করুন আপনার সব ঠিক হয়ে যাবে।
একটা কথা ভালো ভাবে মনে রাখবেন আপনার নামায যত সুন্দর হবে আপনার অন্যান্য কাজগুলো তত বেশি সুন্দর হবে।
ইমান আনার পরইতো একজন মানুষের উপর সর্বপ্রথম ফরয নামায। মহান আল্লাহ এটাকে প্রথম ফরয করেছেন।কারন এই ফরয সঠিক ভাবে আদায় করতে পারলে অন্যান্য ফরয ঠিক হয়ে যাবে।মুনাফিকরা এই প্রথম ফরযটা ঠিক মত পড়তে পারে না।তারা মানুষ দেখানোর জন্য পড়ে।তারা এশা এবং ফজর নামায পড়তে পারে না।
আপনি দ্বীনের অন্যান্য কাজে বরকত পাবেন না যদি নামায ঠিক না হয়।আপনার নামায ঠিক হলেই সব কাজ আপনি ঠিক মত করতে পারবেন।
যিনি নামায যত সুন্দর করে পড়তে পারেন তিনি ততবেশি দ্বীনি কাজ করতে পারেন।
রাসুল সাঃ এর উপর নবুওতের শুরুতেই ইসলামের অনেক বিধান নাযিল হয় নি।কিন্তু শুরুতেই নামায ফরয হয়েছে।যদিও পাঁচ ওয়াক্ত নামায শুরুতে ফরয হয় নি।কিন্তু এমন নামায ফরয হয়েছে যেটা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার চেয়ে কঠিন৷তা হলো তাহাজ্জুদ।আল্লাহ তা ' য়ালা জানেন যে তাঁর হাবীব দ্বীনের কাজ করতে গেলে অনেক ক্লান্ত হবে অনেক কষ্ট হবে। মার খাবে,প্রাথমিক অবস্থা কষ্ট অনেক বেশিই হবে।কিন্তু তবুও কেন অন্যান্য নামায ফরয না করে তাহাজ্জুদ ফরয করলেন? কারন তাহাজ্জুদের সাথে দাওয়াতি কাজের সাথে এবং দ্বীনি কাজের সাথে এমন রহস্য লুকায়িত আছে যেটা হয়ত আমরা জানি না।কিন্তু এটা জানা গেলো দাওয়াতি কাজের সাথে তাহাজ্জুদের এক গভীর সম্পর্ক লুকায়িত আছে।
তাই যারা দাওয়াতি কাজ করতে চাই তাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায বিনয়ের সাথে সুন্দর ভাবে আদায় করার পাশাপাশি তাহাজ্জুদের অভ্যাস করতে হবে।প্রয়োজনে এ অভ্যাস করার জন্য আলাদা প্রদক্ষেপ নিতে হবে।দূরে এমন কারো কাছে যেতে হবে যারা তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস আছে।
একটু চিন্তা করুন, অন্যান্য ফরয বিধান রাসুল (সাঃ) এর উপর নাযিল হয়েছে দুনিয়াতে।কিন্তু নামায এমন এক ফরয যেটা আল্লাহ তার হাবীবকে সরাসরি মিরাজের রাতে দিয়েছেন।
নামায কত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত।
আপনি মারাত্নক অসুস্থ হলে বা পঙ্গু হলে ইসলামের অনেক বিধান ফরয হয় না।কিন্তু নামাযের ব্যাপারে মাফ নাই। আপনার যদি জ্ঞান থাকে অবশ্যই পড়তে হবে এবং বিনয়ের সাথে পড়তে হবে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
নামাযের সময় আল্লাহ তা'য়ালা বান্দার প্রতি সর্বক্ষণ দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন যতক্ষণ না নামাযী অন্য কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ করে। যখন সে অন্য কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ করে, তখন আল্লাহ তা' য়ালা তার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন।- ( আহমদ, নাসায়ী, আবু দাউদ, - মাযহারী)
আপনি যখন ফরয নামায পড়তে ইমামের পিছনে দাড়ান তখন আপনি নামাযে মনোযোগ দিয়ে সুন্দর করে পড়লে যে সময় লাগবে মনোযোগ না দিয়ে আপনি ভেতরে ভেতরে তাড়াহুড়া করলেও সে সময় লাগবে।তাই মনোযোগ সহই নামায পড়ুন।অনেকে শত শত ঘন্টা সময় বেহুদা কাজে ব্যায় করলেও নামাযে দাড়ালে তার কত কাজের চিন্তা মাথায় চলে আসে কত ব্যাস্ততা চলে আসে।এটা শয়তানের ধোকা ছাড়া আর কিছুই নয়।
মানুষ যখন পাপ করে তখন শুধু আখেরাতেই শাস্তি হয় না।বরং দুনিয়াতেই অনেক পেরেশানি ও কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়।কিন্তু নামায মানুষকে অশ্লীল ও পাপ কাজ থেকে ফিরায়।আপনি নামায পড়লে যখন পাপ কাজ থেকে ফিরতে পারবেন। তখন আখেরাতের শাস্তির পাশাপাশি দুনিয়ার পেরেশানি ও কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন।এ জন্যই বলা হয়েছে মুমিনরা সফল হয়ে গেছে। আর এ সফলতা আখরাতেও এবং দুনিয়াতেও
নামায সুন্দর করে আদায় করার একটা উপায়ঃ
আপনি যে মসজিদে নামায খুব বেশি পড়েন সেটা কোন বড় কাগজে নামায সম্পর্কে এমন কিছু লিখে রাখলেন যেটা প্রতিদিন আপনার চোখের সামনে পড়বে। এবং নামায মনোযোগ সহ পড়তে আপনি উৎসাহ পাবেন।
যেমন ঃ আপনি কাগজে মুমিনের গুনগুলো, মনোযোগসহ নামায না পড়লে কি হয় বা যারা নামায যত সুন্দর তার দ্বারা দ্বীনের কাজ তত বেশি হয় ইত্যাদি লেখা লিখে রাখতে পারেন।
যদি মসজিদে এরকম বড় অক্ষরে লিখেন তাহলে অনেক মানুষই এটা দ্বারা উপকৃত হবে।আর মসজিদে লিখা সম্ভব না হলে ঘরে মধ্যে এমন কোথাও লিখেন যেটাতে সব সময় নজর পড়বে।
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি উপায়।
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির অন্যতম উপায় হলো সিজদা দেওয়া এবং সিজদাকে দীর্ঘায়িত করা।আপনি যখন অন্তরের কাঠিন্যতা অনুভব করবেন।তখন দীর্ঘ সিজদা করুন। খুব আস্তে আস্তে মনোযোগ সহ সিজদার তাসবীহ পাঠ করুন।আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি হবে।
স্বস্তি অর্জনে নামাযের ভুমিকাঃ
রাসুল (সাঃ) বলেনঃ
يا بلال اقم الصلاة ارحنا بها
হে বেলাল সালাত কায়িম করো।আমরা এর মাধ্যমে স্বস্তি লাভ করতে পারবো।(আবু দাউদ৪৯৮৫)
রাসুল (সাঃ)আরো বলেনঃ
حبب الى من الدنيا والنساءوالطيب,وجعلت قرة عينى فى الصلاة.
দুনিয়ার তুলনায় নারী ও সুগন্ধিকে আমার কাছে প্রিয় করে দেওয়া হয়েছে।আর আমার চোখের শীতিলতা রাখা হয়েছে নামাযের মধ্যে।(নাসায়ি৩৯৩৯)
আমরা অনেক নামাযীরা নামায পড়ি ঠিকই কিন্তু আগ্রহ ও ভালোবাসার সাথে পড়ি না।অথচ হযরত আলী (রাঃ)কত আগ্রহ ও ভালোবাসা, বিনয়ের সাথে নামায পড়েছিলেন যে,পা থেকে তীর খুলে ফেলেছে অথচ তিনি বলতেই পারেন নি।তিনি নামাযে কত মজা পাচ্ছিলেন! আমরা হাজারো কষ্ট দুঃখ মাঝেও যদি নামায ঠিক মত পড়তাম তাহলে আমরাও এমন স্বস্তি লাভ করতাম যার ফলে আমরা দ্বীনি অন্যান্য কাজ প্রশান্তির সাথে খুব বেশি করতে পারতাম।দ্বীনি কাজ আরও বেশি করতে পারতাম।
মানুষ যাকে ভালোবাসে তার নিকটবর্তী হলে মানুষ আনন্দ লাভ করে।মুমিনরাতো আল্লাহকেই বেশি ভালোবাসে। আর সিজদা মুমিন আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয়।তাই মুমিনরা যখন নামায পড়বে তখন তারা তো বেশি স্বস্তি লাভ করবে। সবচেয়ে বেশি শান্তি লাভ করবে।
এক আল্লাহর ওলী বলেছিলেন আমি দুনিয়াতে তিন কারনে বেঁচে থাকতে চাই।তার মধ্যে এক কারণ হলো আমি রাতের নামাযে এত মজা পাই যার কারনে বেঁচে থাকতে চাই।
আত্মশুদ্ধি অর্জনে নামাযের ভুমিকাঃ
সুরা মুমিনুনের চার নং আয়াতে বলা হয়েছেঃوَالَّذِیۡنَ ہُمۡ لِلزَّکٰوۃِ فٰعِلُوۡنَ ۙ
যারা যাকাত দান করে থাকে।
এ আয়াতের তাফসীরে মুফতী তাকী উসমানী বলেনঃ
"যাকাত’-এর আভিধানিক অর্থ পাক-পবিত্র করা। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উপর ফরয করেছেন যে, তারা যেন তাদের সম্পদের একটা অংশ গরীবদের দান করে। এটা ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদত। পরিভাষায় একে যাকাত বলে। এই আর্থিক ইবাদতকে যাকাত বলার কারণ এর ফলে ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পদ পবিত্র হয়ে যায় এবং পরিশুদ্ধ হয় তার অন্তরও। এস্থলে যাকাত দ্বারা যেমন আর্থিক প্রদেয়কে বােঝানাে হতে পারে তেমনি বােঝানাে হতে পারে তাযকিয়া’-ও। তাযকিয়া মানে নিজেকে মন্দ কাজ ও মন্দ চরিত্র থেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করা। কুরআন মাজীদ এস্থলে যাকাত আদায়কারী’ না বলে যে যাকাত সম্পাদনকারী বলেছে, এ কারণে অনেক মুফাসসির দ্বিতীয় অর্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
এছাড়াও বলা হয়েছেঃকোরআনে যেখানেই ফরয যাকাতের কথা বলা হয়েছে সেখানেই ايتاء،وىوتون الزكوة،واتوا الزكوةইত্যাদি শিরোনামে বর্ননা করা হয়েছে। এখানে শিরোনাম পরিবর্তন করে
لِلزَّکٰوۃِ فٰعِلُوۡنَ
বলাই ইঙ্গিত করে এখানে পরিভাষিক অর্থ বোঝানো হয় নি।
মোটকথা এখানে যাকাতের অর্থ আত্নশুদ্বি নেওয়া হলো তাও ফরযই। কেননা শেরক, রিয়া,হিংসা, শত্রুতা,লোভ লালসা,কাপর্ন্য, ইত্যাদি থেকে নফসকে পবিত্র রাখাও আত্নশুদ্বি বলা হয়।
সুতরাং অনেক মুফাসসিররাই বলেছেন যে,এখানে যাকাত দ্বারা তাযকিয়া বুঝানো হয়েছে।
আর আমরা শুরুতেই পড়লাম যে,নামাযকে মুমিনের গুনগুলোর প্রথমে ও শেষে উল্লেখ করার দ্বারা বুঝা যায় যখন নামায ঠিক হবে তখন মাঝখানের গুনগুলোও চলে আসবে।যেহেতু অনেক মুফাসসিরের মত অনু্যায়ী মাঝখানের যাকাত দ্বারা তাযকীয়া বুঝানো হয়েছে সেহেতু আপনি যখন নামায ঠিক মত পড়বেন তখন আপনার ভিতর অন্তর পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে।তাযকীয়া অর্জন করতে পারবেন।
আর রাতের নামায সম্পর্কেতো বলাই হয়েছে
اِنَّ نَاشِئَۃَ الَّیۡلِ ہِیَ اَشَدُّ وَطۡاً وَّاَقۡوَمُ قِیۡلًا ؕ
নিশ্চয় এবাদতের জন্যে রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল সুরা মুজ্জামমিল।৬
এআয়াতে রাতের নামায সম্পর্কে বলা হয়েছে তা প্রবৃত্তি দমন করে।
আপনি যখন বিনয়ের সাথে মনোযোগ সহ নামায আদায় করবেন আপনার আত্মশুদ্ধি হবে।প্রবৃত্তি দমন হবে।
আপনি শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ুন। যদি না পারেন ঘুমের আগে চার ছয় রাকাত নামায মনোযোগ সহ আদায় করুন। সিজদাকে এত দীর্ঘয়িত করুন যেন প্রতি সিজদায় চার পাঁচ মিনিট বা তারও অধিক সময় লাগে।এভাবে নামায কয়েক দিন পড়লেই নিজের ভিতর আলাদা এক পরিবর্তন অনুভব করবেন ইনশাআল্লাহ। এখন প্রশ্ন হলো ঘুমের আগে কি কিয়ামুল লাইল পড়া যাবে?
তাফসিরে আছে রাতের যেকোন অংশে যে নামায পড়া হয়, বিশেষত এশার পর যে নামায পড়া হয় তাই نَاشِئَۃَ الَّلیۡلِ বা قيام الليلএর মধ্যে দাখিল। তবে রাসুল (সাঃ), সাহাবী, তাবেয়ীরা এই নামায নিদ্রার পরে শেষ রাতে জাগ্রত হয়ে পড়তেন। তাই এটা উত্তম ও অধিক বরকতের কারন।
মোটকথা আমরা রাতের নামায যত সুন্দর করে যত দীর্ঘায়িত করবো আমাদের তত আত্মশুদ্ধি হবে।
বিশেষ করে আমরা যারা দাওয়াতি কাজ করি তারা ঘুমানোর আগে বা ঘুম থেকে উঠে অবশ্যই কিছু নামায পড়া নিজের জন্য আবশ্যক করে নিবো।তবে ঘুম থেকে উঠে পড়তে পারলে সওয়াব ও ফজিলত অনেক বেশি।
আল্লাহ আমাদের মনোযোগ সহ সুন্দরভাবে বিনয়ের সাথে নামায আদায় করার তাওফিক দান করুন।আমিন।
قَدۡ اَفۡلَحَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ۙ﴿۱﴾
الَّذِیۡنَ ہُمۡ فِیۡ صَلَاتِہِمۡ خٰشِعُوۡنَ ۙ﴿۲﴾
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ عَنِ اللَّغۡوِ مُعۡرِضُوۡنَ ﴿ۙ۳}.
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ لِلزَّکٰوۃِ فٰعِلُوۡنَ ۙ﴿۴﴾
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ لِفُرُوۡجِہِمۡ حٰفِظُوۡنَ ۙ﴿۵﴾
اِلَّا عَلٰۤی اَزۡوَاجِہِمۡ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُمۡ فَاِنَّہُمۡ غَیۡرُ مَلُوۡمِیۡنَ ۚ﴿۶﴾
فَمَنِ ابۡتَغٰی وَرَآءَ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡعٰدُوۡنَ ۚ﴿۷﴾
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ لِاَمٰنٰتِہِمۡ وَ عَہۡدِہِمۡ رٰعُوۡنَ ۙ﴿۸﴾
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ عَلٰی صَلَوٰتِہِمۡ یُحَافِظُوۡنَ ۘ﴿۹﴾
1.মুমিনগন সফল হয়ে গেছে।
২.যারা নিজেদের নামাযে বিনয় নম্র
৩.যারা অনর্থক কথা বার্তায় নির্লিপ্ত।
৪.যারা যাকাত আদায় করে থাকে।
৫.যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।
৬.তবে স্ত্রী বা মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না।
৭.অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘন কারী হবে।
৮.যারা নামায সমুহের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করে
উপরোক্ত সুরা মুমিনুনের আয়াত সমূহে মুমিনের গুনগুলোর আলোচনা করা হয়েছে।প্রথম আয়াতেই মুমিনদের সফলতার ঘোষনা দেয়া হয়েছে।বলা হয়েছে মুমিনরা সফল হয়ে গেছে।এর পরেই তাদের গুনগুলোর কথা বলা হয়েছে।প্রথম গুন বলা হয়েছে তারা নামায বিনয়ের সাথে আদায় করে।আর মাঝখানে আরো কিছু গুনের কথা বলা হয়েছে।আবার শেষে ৯নং আয়াতেও নামাযের কথা বলা হয়েছে।এখন লক্ষনীয় বিষয় হলো প্রথমেও নামাযের কথা বলা হয়েছে আবার শেষেও নামাযের কথাই বলা হলে কেন? এর উত্তরে তাফসীরে বলা হয়েছেঃ এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে,নামাযকে নামাযের মত পাবন্দী ও নিয়ম নীতি সহকারে আদায় করলে অবশিষ্ট গুনগুলো আপনা আপনি নামাযীর মধ্যে সৃষ্টি হতে থাকবে।
দেখুন অনর্থক কথা বলা, লজ্জাস্থানের হেফাজত না করা, আমানতের খেয়ানত করা, এবং ওয়াদা রক্ষা না করা এসবই পাপের কাজ গুনাহের কাজ।আপনি যখন নামায ঠিক ভাবে আদায় করবেন তখন এসকল গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকতে পারবেন।কেননা মহান আল্লাহ বলেনঃ اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ مِنَ الۡکِتٰبِ وَاَقِمِ الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَالۡمُنۡکَرِ ؕ وَلَذِکۡرُ اللّٰہِ اَکۡبَرُ ؕ وَاللّٰہُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ
আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।(সুরা আনকাবুত৪৫)
আয়াতে বলা হয়েছে নামায অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে।যে সকল যুবক অনেক পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার বহু চেষ্টা করেও পারতেছেন না তারা নামায কে সুন্দর করে আদায় করুন আপনার সব ঠিক হয়ে যাবে।
একটা কথা ভালো ভাবে মনে রাখবেন আপনার নামায যত সুন্দর হবে আপনার অন্যান্য কাজগুলো তত বেশি সুন্দর হবে।
ইমান আনার পরইতো একজন মানুষের উপর সর্বপ্রথম ফরয নামায। মহান আল্লাহ এটাকে প্রথম ফরয করেছেন।কারন এই ফরয সঠিক ভাবে আদায় করতে পারলে অন্যান্য ফরয ঠিক হয়ে যাবে।মুনাফিকরা এই প্রথম ফরযটা ঠিক মত পড়তে পারে না।তারা মানুষ দেখানোর জন্য পড়ে।তারা এশা এবং ফজর নামায পড়তে পারে না।
আপনি দ্বীনের অন্যান্য কাজে বরকত পাবেন না যদি নামায ঠিক না হয়।আপনার নামায ঠিক হলেই সব কাজ আপনি ঠিক মত করতে পারবেন।
যিনি নামায যত সুন্দর করে পড়তে পারেন তিনি ততবেশি দ্বীনি কাজ করতে পারেন।
রাসুল সাঃ এর উপর নবুওতের শুরুতেই ইসলামের অনেক বিধান নাযিল হয় নি।কিন্তু শুরুতেই নামায ফরয হয়েছে।যদিও পাঁচ ওয়াক্ত নামায শুরুতে ফরয হয় নি।কিন্তু এমন নামায ফরয হয়েছে যেটা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার চেয়ে কঠিন৷তা হলো তাহাজ্জুদ।আল্লাহ তা ' য়ালা জানেন যে তাঁর হাবীব দ্বীনের কাজ করতে গেলে অনেক ক্লান্ত হবে অনেক কষ্ট হবে। মার খাবে,প্রাথমিক অবস্থা কষ্ট অনেক বেশিই হবে।কিন্তু তবুও কেন অন্যান্য নামায ফরয না করে তাহাজ্জুদ ফরয করলেন? কারন তাহাজ্জুদের সাথে দাওয়াতি কাজের সাথে এবং দ্বীনি কাজের সাথে এমন রহস্য লুকায়িত আছে যেটা হয়ত আমরা জানি না।কিন্তু এটা জানা গেলো দাওয়াতি কাজের সাথে তাহাজ্জুদের এক গভীর সম্পর্ক লুকায়িত আছে।
তাই যারা দাওয়াতি কাজ করতে চাই তাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায বিনয়ের সাথে সুন্দর ভাবে আদায় করার পাশাপাশি তাহাজ্জুদের অভ্যাস করতে হবে।প্রয়োজনে এ অভ্যাস করার জন্য আলাদা প্রদক্ষেপ নিতে হবে।দূরে এমন কারো কাছে যেতে হবে যারা তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস আছে।
একটু চিন্তা করুন, অন্যান্য ফরয বিধান রাসুল (সাঃ) এর উপর নাযিল হয়েছে দুনিয়াতে।কিন্তু নামায এমন এক ফরয যেটা আল্লাহ তার হাবীবকে সরাসরি মিরাজের রাতে দিয়েছেন।
নামায কত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত।
আপনি মারাত্নক অসুস্থ হলে বা পঙ্গু হলে ইসলামের অনেক বিধান ফরয হয় না।কিন্তু নামাযের ব্যাপারে মাফ নাই। আপনার যদি জ্ঞান থাকে অবশ্যই পড়তে হবে এবং বিনয়ের সাথে পড়তে হবে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
নামাযের সময় আল্লাহ তা'য়ালা বান্দার প্রতি সর্বক্ষণ দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন যতক্ষণ না নামাযী অন্য কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ করে। যখন সে অন্য কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ করে, তখন আল্লাহ তা' য়ালা তার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন।- ( আহমদ, নাসায়ী, আবু দাউদ, - মাযহারী)
আপনি যখন ফরয নামায পড়তে ইমামের পিছনে দাড়ান তখন আপনি নামাযে মনোযোগ দিয়ে সুন্দর করে পড়লে যে সময় লাগবে মনোযোগ না দিয়ে আপনি ভেতরে ভেতরে তাড়াহুড়া করলেও সে সময় লাগবে।তাই মনোযোগ সহই নামায পড়ুন।অনেকে শত শত ঘন্টা সময় বেহুদা কাজে ব্যায় করলেও নামাযে দাড়ালে তার কত কাজের চিন্তা মাথায় চলে আসে কত ব্যাস্ততা চলে আসে।এটা শয়তানের ধোকা ছাড়া আর কিছুই নয়।
মানুষ যখন পাপ করে তখন শুধু আখেরাতেই শাস্তি হয় না।বরং দুনিয়াতেই অনেক পেরেশানি ও কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়।কিন্তু নামায মানুষকে অশ্লীল ও পাপ কাজ থেকে ফিরায়।আপনি নামায পড়লে যখন পাপ কাজ থেকে ফিরতে পারবেন। তখন আখেরাতের শাস্তির পাশাপাশি দুনিয়ার পেরেশানি ও কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন।এ জন্যই বলা হয়েছে মুমিনরা সফল হয়ে গেছে। আর এ সফলতা আখরাতেও এবং দুনিয়াতেও
নামায সুন্দর করে আদায় করার একটা উপায়ঃ
আপনি যে মসজিদে নামায খুব বেশি পড়েন সেটা কোন বড় কাগজে নামায সম্পর্কে এমন কিছু লিখে রাখলেন যেটা প্রতিদিন আপনার চোখের সামনে পড়বে। এবং নামায মনোযোগ সহ পড়তে আপনি উৎসাহ পাবেন।
যেমন ঃ আপনি কাগজে মুমিনের গুনগুলো, মনোযোগসহ নামায না পড়লে কি হয় বা যারা নামায যত সুন্দর তার দ্বারা দ্বীনের কাজ তত বেশি হয় ইত্যাদি লেখা লিখে রাখতে পারেন।
যদি মসজিদে এরকম বড় অক্ষরে লিখেন তাহলে অনেক মানুষই এটা দ্বারা উপকৃত হবে।আর মসজিদে লিখা সম্ভব না হলে ঘরে মধ্যে এমন কোথাও লিখেন যেটাতে সব সময় নজর পড়বে।
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি উপায়।
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির অন্যতম উপায় হলো সিজদা দেওয়া এবং সিজদাকে দীর্ঘায়িত করা।আপনি যখন অন্তরের কাঠিন্যতা অনুভব করবেন।তখন দীর্ঘ সিজদা করুন। খুব আস্তে আস্তে মনোযোগ সহ সিজদার তাসবীহ পাঠ করুন।আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি হবে।
স্বস্তি অর্জনে নামাযের ভুমিকাঃ
রাসুল (সাঃ) বলেনঃ
يا بلال اقم الصلاة ارحنا بها
হে বেলাল সালাত কায়িম করো।আমরা এর মাধ্যমে স্বস্তি লাভ করতে পারবো।(আবু দাউদ৪৯৮৫)
রাসুল (সাঃ)আরো বলেনঃ
حبب الى من الدنيا والنساءوالطيب,وجعلت قرة عينى فى الصلاة.
দুনিয়ার তুলনায় নারী ও সুগন্ধিকে আমার কাছে প্রিয় করে দেওয়া হয়েছে।আর আমার চোখের শীতিলতা রাখা হয়েছে নামাযের মধ্যে।(নাসায়ি৩৯৩৯)
আমরা অনেক নামাযীরা নামায পড়ি ঠিকই কিন্তু আগ্রহ ও ভালোবাসার সাথে পড়ি না।অথচ হযরত আলী (রাঃ)কত আগ্রহ ও ভালোবাসা, বিনয়ের সাথে নামায পড়েছিলেন যে,পা থেকে তীর খুলে ফেলেছে অথচ তিনি বলতেই পারেন নি।তিনি নামাযে কত মজা পাচ্ছিলেন! আমরা হাজারো কষ্ট দুঃখ মাঝেও যদি নামায ঠিক মত পড়তাম তাহলে আমরাও এমন স্বস্তি লাভ করতাম যার ফলে আমরা দ্বীনি অন্যান্য কাজ প্রশান্তির সাথে খুব বেশি করতে পারতাম।দ্বীনি কাজ আরও বেশি করতে পারতাম।
মানুষ যাকে ভালোবাসে তার নিকটবর্তী হলে মানুষ আনন্দ লাভ করে।মুমিনরাতো আল্লাহকেই বেশি ভালোবাসে। আর সিজদা মুমিন আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয়।তাই মুমিনরা যখন নামায পড়বে তখন তারা তো বেশি স্বস্তি লাভ করবে। সবচেয়ে বেশি শান্তি লাভ করবে।
এক আল্লাহর ওলী বলেছিলেন আমি দুনিয়াতে তিন কারনে বেঁচে থাকতে চাই।তার মধ্যে এক কারণ হলো আমি রাতের নামাযে এত মজা পাই যার কারনে বেঁচে থাকতে চাই।
আত্মশুদ্ধি অর্জনে নামাযের ভুমিকাঃ
সুরা মুমিনুনের চার নং আয়াতে বলা হয়েছেঃوَالَّذِیۡنَ ہُمۡ لِلزَّکٰوۃِ فٰعِلُوۡنَ ۙ
যারা যাকাত দান করে থাকে।
এ আয়াতের তাফসীরে মুফতী তাকী উসমানী বলেনঃ
"যাকাত’-এর আভিধানিক অর্থ পাক-পবিত্র করা। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উপর ফরয করেছেন যে, তারা যেন তাদের সম্পদের একটা অংশ গরীবদের দান করে। এটা ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদত। পরিভাষায় একে যাকাত বলে। এই আর্থিক ইবাদতকে যাকাত বলার কারণ এর ফলে ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পদ পবিত্র হয়ে যায় এবং পরিশুদ্ধ হয় তার অন্তরও। এস্থলে যাকাত দ্বারা যেমন আর্থিক প্রদেয়কে বােঝানাে হতে পারে তেমনি বােঝানাে হতে পারে তাযকিয়া’-ও। তাযকিয়া মানে নিজেকে মন্দ কাজ ও মন্দ চরিত্র থেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করা। কুরআন মাজীদ এস্থলে যাকাত আদায়কারী’ না বলে যে যাকাত সম্পাদনকারী বলেছে, এ কারণে অনেক মুফাসসির দ্বিতীয় অর্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
এছাড়াও বলা হয়েছেঃকোরআনে যেখানেই ফরয যাকাতের কথা বলা হয়েছে সেখানেই ايتاء،وىوتون الزكوة،واتوا الزكوةইত্যাদি শিরোনামে বর্ননা করা হয়েছে। এখানে শিরোনাম পরিবর্তন করে
لِلزَّکٰوۃِ فٰعِلُوۡنَ
বলাই ইঙ্গিত করে এখানে পরিভাষিক অর্থ বোঝানো হয় নি।
মোটকথা এখানে যাকাতের অর্থ আত্নশুদ্বি নেওয়া হলো তাও ফরযই। কেননা শেরক, রিয়া,হিংসা, শত্রুতা,লোভ লালসা,কাপর্ন্য, ইত্যাদি থেকে নফসকে পবিত্র রাখাও আত্নশুদ্বি বলা হয়।
সুতরাং অনেক মুফাসসিররাই বলেছেন যে,এখানে যাকাত দ্বারা তাযকিয়া বুঝানো হয়েছে।
আর আমরা শুরুতেই পড়লাম যে,নামাযকে মুমিনের গুনগুলোর প্রথমে ও শেষে উল্লেখ করার দ্বারা বুঝা যায় যখন নামায ঠিক হবে তখন মাঝখানের গুনগুলোও চলে আসবে।যেহেতু অনেক মুফাসসিরের মত অনু্যায়ী মাঝখানের যাকাত দ্বারা তাযকীয়া বুঝানো হয়েছে সেহেতু আপনি যখন নামায ঠিক মত পড়বেন তখন আপনার ভিতর অন্তর পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে।তাযকীয়া অর্জন করতে পারবেন।
আর রাতের নামায সম্পর্কেতো বলাই হয়েছে
اِنَّ نَاشِئَۃَ الَّیۡلِ ہِیَ اَشَدُّ وَطۡاً وَّاَقۡوَمُ قِیۡلًا ؕ
নিশ্চয় এবাদতের জন্যে রাত্রিতে উঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল সুরা মুজ্জামমিল।৬
এআয়াতে রাতের নামায সম্পর্কে বলা হয়েছে তা প্রবৃত্তি দমন করে।
আপনি যখন বিনয়ের সাথে মনোযোগ সহ নামায আদায় করবেন আপনার আত্মশুদ্ধি হবে।প্রবৃত্তি দমন হবে।
আপনি শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ুন। যদি না পারেন ঘুমের আগে চার ছয় রাকাত নামায মনোযোগ সহ আদায় করুন। সিজদাকে এত দীর্ঘয়িত করুন যেন প্রতি সিজদায় চার পাঁচ মিনিট বা তারও অধিক সময় লাগে।এভাবে নামায কয়েক দিন পড়লেই নিজের ভিতর আলাদা এক পরিবর্তন অনুভব করবেন ইনশাআল্লাহ। এখন প্রশ্ন হলো ঘুমের আগে কি কিয়ামুল লাইল পড়া যাবে?
তাফসিরে আছে রাতের যেকোন অংশে যে নামায পড়া হয়, বিশেষত এশার পর যে নামায পড়া হয় তাই نَاشِئَۃَ الَّلیۡلِ বা قيام الليلএর মধ্যে দাখিল। তবে রাসুল (সাঃ), সাহাবী, তাবেয়ীরা এই নামায নিদ্রার পরে শেষ রাতে জাগ্রত হয়ে পড়তেন। তাই এটা উত্তম ও অধিক বরকতের কারন।
মোটকথা আমরা রাতের নামায যত সুন্দর করে যত দীর্ঘায়িত করবো আমাদের তত আত্মশুদ্ধি হবে।
বিশেষ করে আমরা যারা দাওয়াতি কাজ করি তারা ঘুমানোর আগে বা ঘুম থেকে উঠে অবশ্যই কিছু নামায পড়া নিজের জন্য আবশ্যক করে নিবো।তবে ঘুম থেকে উঠে পড়তে পারলে সওয়াব ও ফজিলত অনেক বেশি।
আল্লাহ আমাদের মনোযোগ সহ সুন্দরভাবে বিনয়ের সাথে নামায আদায় করার তাওফিক দান করুন।আমিন।
Comment