কোরআনের আহবান:- فَاسْأَلُواْ أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ (অতএব যদি তোমাদের জানা না থাকে তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর {সূরাতুন নাহল, আয়াত নং ৪৩}
الحمد لله وكفى وسلام على عباده الذين اصطفى أما بعد- কোরআন মাজিদে জিহাদ সম্পর্কিত আয়াতগুলো চার ভাগে বিভক্ত:- (১) মাদানী সূরাগুলুতে জিহাদ সম্পর্কিত আয়াত সমুহ। (২) মাদানী সূরাগুলোতে জিহাদের প্রতি ইঙ্গিতবাচঁক আয়াত সমুহ। (৩) মাক্কী সূরাগুলোতে জিহাদের প্রতি ইঙ্গিত বহণকারী আয়াত সমুহ। (৪) জিহাদের প্রতি দূর সম্পর্কে ইঙ্গিত বহণকারী আয়াত সমুহ।
أَعُوْذُ بِاللّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
سورة البقرة
সূরাতুল বাক্বারাহ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ
سورة البقرة
সূরাতুল বাক্বারাহ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَى فِي خَرَابِهَا أُوْلَـئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَا إِلاَّ خَآئِفِينَ لهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
(২) যে ব্যাক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় যালেম আর কে? এদের পক্ষে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়। ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে।(১১৪)
সারমর্ম :-
(১) মাসজিদ আল্লাহর ঘর। যে কেউ যে কোন ভাবে তা ধ্বংস করার চেষ্টা করে অথবা তাতে সত্য কথা বলা থেকে বিরত রাখে সে বড় জালেম।
(২) মসজিদ আবাদ করা মুসলমানদের দায়িত্ব। তারা তা হেফাজত করবে এবং জিহাদের মাধ্যমে তা সংরক্ষণ করবে।
(৩) মসজিদ ধ্বংসকারীদের শাস্তি দুনিয়াতে জিহাদের মাধ্যমে দেয়া হবে। তাদের থেকে ক্ষমতা চিনিয়ে নেয়া হবে। তাদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করা হবে।
(৪) অতিতে যে কেউ আল্লাহর ঘর ধ্বংস করেছে তারা ঐ অঞ্চলের ক্ষমতা থেকে বঞ্ছিত হয়েছ।
(৫) এধরনের লোকদের জন্য আখেরাতে ভয়ানক শাস্তি রয়েছে।
তাফসীরবিদদের উক্তি:-
(১) এ আয়াতে মক্কা বিজয়ের সুসংবাদ রয়েছে।
(২) বাইতুল মাকদিস মুক্ত হওয়ার সুসংবাদ রয়েছে। (এ দুটি ওয়াদা আলহামদু লিল্লাহ পূর্ণ হয়েছে।)
(৩) মুসলমানদের বিজয়ী হওয়ার সুসংবাদ রয়েছে।
(৪) ইমাম মাহদী (على نبينا وعليه السلام.) এর আগমনের সুসংবাদ রয়েছে। (ইনশাআল্লাহ অচিরেই এ দুটিও পূর্ণ হবে।)
শানে নুযুল :-
(১) এ আয়াত মুশরিকদের ব্যাপারে অবতির্ণ হয়। কারণ, তারা হুদায়বিয়ার সন্ধির বছর মুসলমানদেরকে বাইতুল্লাহ থেকে বারণ করেছিল।
(২) খ্রীস্টানদের ব্যাপারে অবতির্ণ হয়। কারণ, তারা মসজিদ ধ্বংসের মূল হোতা।
(৩) ইয়াহুদীদের ব্যাপারে অবতির্ণ হয়। যা পূর্বের আয়াত থেকে বুঝে আসে যে, ইয়াহুদীরা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধাচরণ করতেছিল, যার ফলাফল হল মসজিদ ধ্বংস করা।
(৪) আয়াত ব্যাপক, অর্থাৎ যে কেউ যখনই আল্লাহর ঘর ধ্বংসের পায়তারা করবে তার ব্যাপারেই এ আয়াত অবতির্ণ হয়েছে।
উদ্ধৃতি :-
(১) اس كى شان نزول نصارى هين كه انهون نى....
এ আয়াত খ্রীস্টানদের ব্যাপারে অবতির্ণ হয়। তারা ইয়াহুদীদের মোকাবেলা করে তাওরাত জালিয়ে দেয় এবং বাইতুল মাকদিস নষ্ট করে ফেলে। অথবা মক্কার মুশরিকদের ব্যাপারে অবতির্ণ হয়। কারণ তারা মুসলমানদেরকে শুধু পক্ষপাতিত্ব ও বিদ্ধেসের কারণে হুদায়বিয়াতে মসজিদে হারাম তথা বাইতুল্লাহ থেকে বারণ করে। বাকি যে কেউ আল্লাহর ঘর ধ্বংস করে অথবা তা থেকে বারণ করে সেও এ হুকুম এর অন্তর্ভূক্ত। (তাফসীরে উসমানী)
(২) اس مين اس بات کی خوشخبری دی که مکه معظمه فتح هوگا- جب غلبه....
এ আয়াতে মক্কা মুআজ্জমাহ বিজয়ের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। মুসলমানরা বিজয়ী হলে মুশরিকরা তাতে ভীত অবস্থায় প্রবেশ করবে। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করে দিলেন, "সাবধান এ বছর পর যেন কোন মুশরিক আর কখনো হজ্জ না করে। (আনওয়ারুল বয়ান)
(৩) الئك ماكان لهم ان يدخلوها الاخائفين " خبر بمعنى الأمر اي خيفوهم بالجهاد فلا يدخلها أحد آمنا
"এদের পক্ষে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বৈধ নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়।" এটা জুমলায়ে খাবারিয়্যাহ আমরের অর্থ প্রদানকারি। অর্থাৎ জিহাদের মাধ্যমে তাদের কে ভীত-সন্ত্রস্ত কর। যাতে তারা তাতে নিরাপদে প্রবেশ না করে। (জালালাইন)
(৪) لهم في الدنيا خزي قيل القتل للحربي والجزية للذمي عن قتادة والسدي: الخزي لهم في الدنيا قيام المهدي وفتح عمورية ورومية وقسطنطنية وغير ذلك من مدنهم... ومن جعلها في قريش جعل الخزي عليهم في الفتح
< যারা মসজিদ সমুহ উজাড় করতে চেষ্টা করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা > অর্থাৎ হারবী কাফেরের জন্য লাঞ্ছনা হল তাকে হত্যা করা আর জিম্মীদের জন্য লাঞ্ছনা হল মুসলমানদের কে জিজ্য়া প্রদান করা। ক্বাতাদাহ ও সুদ্দী রহঃ এর মতে "দুনিয়াতে তাদের লাঞ্ছনা ইমাম মাহদীর আঃ মাধ্যমে হবে আর তাদের শহর তথা উমুরিয়্যাহ, রুমিয়্যাহ, কুসতুনতুনিয়্যাহ মুসলমানদের হাতে বিজয় হওয়ার মাধ্যমে হবে।" আর যাদের মতে এ আয়াত কুরাইশদের ব্যাপারে অবতির্ণ হয়েছে তারা দুনিয়ার লাঞ্ছনা দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন, মক্কা বিজয়। (কুরতুবী)
(৫) لهم في الدنيا خزي اي عظيم بقتل ابطالهم واقيالهم وكسر اصنامهم وتسفيه احلامهم اوخراجهم من جزيرة العرب التى هي دار قرارهم ومسقط رئوسهم او بضرب الجزية علي اهل الذمة منهم
< যারা মসজিদ সমুহ উজাড় করতে চেষ্টা করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা > অর্থাৎ এত বড় লাঞ্ছনা যে, তাদের বীর-বাহাদুর এবং নেতাদেরকে হত্যা করা হবে। তাদের মূর্তিগুলোকে ভেঙ্গে দেয়া হবে এবং তাদের নিরবুদ্ধিতা, মূর্খতা ও বেওকুফি প্রকাশ করে দেয়া হবে। তাদের কে আরব ভূখণ্ড থেকে বের করে দেয়া হবে। অথবা তাদের থেকে যারা যিম্মী তাদের উপর জিজ্য়া আবশ্যক করে দেয়া হবে। (রুহুল মাআনী)
বিস্ময়কর বিষয় :-
যখন এ আয়াত অবতির্ণ হয়েছিল তখন (১) বাইতুল্লাহ মক্কার মুশরিকদের অধিনে ছিল। তারা সেখানে নির্ভয়ে চলা-ফেরা করত। (২) বাইতুল মাকদিস এর উপর আহলে কিতাব কাফেরদের ক্ষমতা ছিল। সেখানে তাদের কোন ধরণের ভয়-ভীতি ছিল না। (৩) ইয়াহুদীরা মদীনা মুনাওওয়ারাতে গাপটি মেরে বসে ছিল এবং মুসলমানদেরকে নির্ভয়ে মুরতাদ বানানো এবং মসজিদগুলোকে উজাড় করতে সর্বাত্বক চেষ্টা করতে ছিল।
এ পরিস্থিতিতে উক্ত আয়াত অবতির্ণ হয় এবং তাতে দেয়া ভবিষ্যতবাণী বাস্তবায়নের প্রকাশ্য কোন উপায় উপকরণ বিদ্যমান ছিল না।
কিন্তু কিছু দিন অতিক্রম না হতেই সমস্ত অবস্থা পাল্টে গেল। বাইতুল্লাহ মুশরিকদের থেকে পবিত্র হয়ে গেল। মদীনা মুনাওওয়ারা ইয়াহুদীদের থেকে পরিস্কার হয়ে গেল। বাইতুল মাকদিসে আজানের ধনি বাজতে শুরু করে। যারা মুসলমানদেরকে এত দিন ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাখতো তারাই ভীত-সন্ত্রস্ত ও লাঞ্ছিত হয়ে গেল। আলহামদু লিল্লাহ এসব কিছুই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ এর মাধ্যমেই সম্ভম হয়েছে। এ আয়াত এখনও জিন্দা আছে। আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে সঠিক বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুণ! আমিন!
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:-
وَلَوْلاَ دَفْعُ اللّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الأَرْضُ وَلَـكِنَّ اللّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ
আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়। (২৫১)
وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ
আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে (খ্রীষ্টানদের) নির্ঝন গির্জা, এবাদত খানা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলাতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর। (সূরাতুল হজ্জ, আয়াত নং ৪০)
وَلَوْلاَ دَفْعُ اللّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الأَرْضُ وَلَـكِنَّ اللّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ
আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়। (২৫১)
وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ
আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে (খ্রীষ্টানদের) নির্ঝন গির্জা, এবাদত খানা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলাতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর। (সূরাতুল হজ্জ, আয়াত নং ৪০)
Comment