ঈমানের ৭৭ শাখা===== পর্ব ৫
এমনিভাবে আহলে কিতাবও আল্লাহ তায়ালকে প্রভু হিসাবে মানতো। এবং রাসূলের রিসালাত সম্পর্কেও ভালোভাবে জানতো।কিন্তু তারা আল্লাহর সাথে শরিক করতো। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللَّهِ وَقَالَتِ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللَّهِ ذَلِكَ قَوْلُهُمْ بِأَفْوَاهِهِمْ يُضَاهِئُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَبْلُ قَاتَلَهُمُ اللَّهُ أَنَّى يُؤْفَكُونَ (30) اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ.( التوبة) (31)
অর্থ: ইহুদিরা বলে ‘উযায়র আল্লাহর পুত্র’ এবং খৃষ্টানরা বলে ‘মাসীহ আল্লাহর পুত্র’।এসব ওদের মুখের কথা। ওরা পুর্ববর্তি কাফেরদের কথার অনুকরণ করছে। আল্লাহ ওদেরে ধ্বংস করুক। ওরা (সত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কোথায় চলে যাচ্ছে? (৩০) ওরা আল্লাহকে ছেড়ে নিযেদের আলেমদের ও সংসারবিরাগীদের প্রভু বানিয়ে নিয়েছে, এবং মাসীহ ইবনে মারয়ামকেও। অথচ ওদের এই আদেশই দেয়া হয়েছিলো যে, ওরা এক ম‘বুদের ইবাদাত করবে- যিনি ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই। তিনি ওদের শিরক থেকে পবিত্র। (৩১) সুরা তাওবা)এবং রাসূলের রিসালাত সম্পর্কেও ভালোভাবে জানতো। যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলেন,
1: الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ وَإِنَّ فَرِيقًا مِنْهُمْ لَيَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ (البقرة(146)
অর্থ: আমি যাদের কিতাব দিয়েছি ওরা তাঁকে তদ্রুপ চেনে, যেরূপ আপন পুত্রদের চেনে। আর নিশ্চয়ই ওদের একটি দল জেনেশুনে সত্য গোপন করে। ( সুরা আল বাকারা, ১৪৬) এবং রাসূলের রিসালাতের স্বীকিৃতি দিতো না। যেমন: উপরোল্ল্যেখীত আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইমাদুদ্দীন ইবনে কসির রহ: বলেন।
يخبر تعالى (1) أنّ علماء أهل الكتاب يعرفون صِحّة ما جاءهم به الرسول صلى الله عليه وسلم [كما يعرفون أبناءهم] …………………..
ثم أخبر تعالى أنهم مع هذا التحقق (5) والإتقان العلمي { لَيَكْتُمُونَ الْحَقَّ } أي: ليكتمون الناس ما في كتبهم من صفة النبي صلى الله عليه وسلم { وَهُمْ يَعْلَمُونَ }
অর্থ: আল্লহ তায়ালা এই সংবাদ দিচ্ছেন যে, আহলে কিতাবের আলেমগন রাসূল সা: এর আনিতো বিষায়াবলীর শুদ্ধতা এবং সত্যতা এমনভাবে জানতো, যেমন, তারা তাদের সন্তানদেরকে চিনতো।ثم أخبر تعالى أنهم مع هذا التحقق (5) والإتقان العلمي { لَيَكْتُمُونَ الْحَقَّ } أي: ليكتمون الناس ما في كتبهم من صفة النبي صلى الله عليه وسلم { وَهُمْ يَعْلَمُونَ }
অথঃপর আল্লাহ তায়ালা এই সংবাদ দিচ্ছেন যে, তাদের বাস্তবতা সম্পর্কে এমন এক্বীন থাকা সত্যেও তারা মানুষদের থেকে তাদের কিতাবে বর্নিত রাসূল সা: এর সম্পর্কে গুনাবলিকে গোপন করতো। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
ইমাম জাছ্ছাস তার প্রসিদ্ধ তাসফীর গ্রন্থ আহকামুল কোরআন এর মধে উল্ল্যেখ করেন:
قوله تعالى إنهم كانوا إذا قيل لهم لا إله إلا الله يستكبرون واليهود والنصارى يوافقون المسلمين على إطلاق هذه الكلمة وإنما يخالفون في نبوة النبي( احكام القرأن للجصاص,( 3\225)
অর্থ: আল্লাহ তায়ালার কওল: ‘ যখন তা¬¬¬¬দেরকে বলা হয় আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তখন তারা অহংকার করে। আর ইহুদী- খৃষ্টানরা এই কালিমার ক্ষেত্রে মুসলমানদের সাথে একমত, কিন্তু তারা বিরোধীতা করে রাসূল সা: এর নবুওতের ক্ষেত্রে। আহলে কিতাবদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা আরো বলতেছেন:
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ قَالُوا نُؤْمِنُ بِمَا أُنْزِلَ عَلَيْنَا وَيَكْفُرُونَ بِمَا وَرَاءَهُ وَهُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِمَا مَعَهُمْ قُلْ فَلِمَ تَقْتُلُونَ أَنْبِيَاءَ اللَّهِ مِنْ قَبْلُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ (91)
অর্থ: যখন ওদের বলা হয়, ‘আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তার প্রতি ঈমান আন’, তখন ওরা বলে, ‘আমাদের প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে আমরা তার প্রতি ঈমান রাখি। আর তা ছাড়া যা রয়েছে তা ওরা অস্বীকার করে, অথচ সেই কিতাব (সম্পুর্ণ) সত্য- তাদের নিকট যে কিতাব আছে তার সমর্থনকারী। আপনি বলুন, ‘যদি তোমরা ঈমানদার ছিলে, তবে কেন ইতিপুর্বে আল্লাহর নবীগনকে হত্যা করেছো?( সুরা বাকারা, ৯১) { إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ } (4) .
এই আয়াদের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে কাসির রহ: বলেন: قال: يؤتى باليهود يوم القيامة فيقال لهم: ما كنتم تعبدون؟ فيقولون: الله وعُزَيرًا. فيقال لهم: خذوا ذات الشمال، ثم يؤتى بالنصارى فيقال لهم: ما كنتم تعبدون؟ فيقولون: نعبد الله والمسيح. فيقال لهم: خذوا ذات الشمال. ثم يؤتى بالمشركين فيقال لهم: "لا إله إلا الله"، فيستكبرون. ثم يقال لهم: "لا إله إلا الله"، فيستكبرون. ثم يقال لهم: "لا إله إلا الله" فيستكبرون. فيقال لهم: خذوا ذات الشمال -قال أبو نضرة: فينطلقون أسرع من الطير-قال أبو العلاء: ثم يؤتى بالمسلمين فيقال لهم: ما كنتم تعبدون؟ فيقولون: كنا نعبد الله. فيقال لهم: هل تعرفونه إذا رأيتموه؟ فيقولون: نعم. فيقال لهم: فكيف تعرفونه ولم تروه؟ قالوا: نعلم أنه لا عِدْلَ له. قال: فيتعرف لهم تبارك وتعالى، وينجي الله المؤمنين.
__________তিনি বলেন: কিয়ামতের দিন ইহুদীদেরকে আনা হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কোন জিনিসের ইবাদাত করতে? তারা বলবে: আল্লাহ এবং উযাইরকে। অথপর তাদেরকে বলা হবে: তোমরা বাম পাশে যাও, অথপর খৃষ্টানদেরকে আনা হবে এবং তাদেরকে বলা হবে: তোমরা কোন জিনিসের ইবাদাত করতে? তারা বলবে: আমরা আল্লাহ এবং মাসীহ এর ইবাদাত করতাম। তাদেরকে বলা হবে: তোমরা বাম পাশে যাও। অথপর আনা হবে মুশরিকদেরকে তাদেরকে বলা হবে: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই, তখন তারা অহংকার করবে। তাদেরকে আবার বলা হবে: তখনও তারা অহংকার করবে। আবার বলা হবে তখনও তারা অহংকার করবে। অথপর তাদেরকে বলা হবে: তোমরা বাম পাশে যাও।- আবু নাজরা বলেন: তারা পাখির চেয়েও দ্রুত গতিতে প্রস্থান করবে- আবুল আলা বলেন: অথপর মুসলিমদেরকে আনা হবে এবং বলা হবে: তোমরা কার ইবাদাত করতে? তারা বলবে, আমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করতাম। অথপর বলা হবে: যখন তোমরা তাকে দেখবে তখন কি তাকে চিনতে পারবে? তারা বলবে: হা, চিনতে পারবো। তাদেরকে বলা হবে: তোমরা তাকে কেমনে চিনবে অথচ তাকেতো কখনো দেখনি? তারা বলবে: আমরা জানতাম যে, তার সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি বলেন: অথপর আল্লাহ তায়ালা তাদের এই কথার স্বীকিৃতি দেবেন এবং আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে নাজাত দান করবেন।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
Comment