বিসমিল্লাহ ওয়াস সালাতু আস সালাম আলা রাসুলিল্লাহ
আমার জন্য এবং আমাদের জন্য নিজের কিছু কথা - আমি আশা রাখি আল্লাহ এর মধ্য থেকে আমাকে কল্যান কিছু দান করবেন।
দ্বীন বুঝার প্রথম দিকে কিছু আয়াত আমাকে খুব হিট করে - সুরা আস সফ এর ১০ থেকে ১৩ এই আয়াত ৩ টা আমার কাছে এত ভালো লাগে যে, বলার মত না। খুব ছোট ছোট আয়াত অথচ অনেক অনেক ভারী - আসলে আমরা আল্লাহর কথার দিকে মনোযোগ দেইনা যে কথা টা কি এবং আরো যেটা মনোযোগ দেইনা সেটা হচ্ছে কথা টা কার!
আল্লাহ মুমিনদের জন্য জিব্রিল আলাইহিস সালাম কে দিয়ে একটা ব্যাবসার অফার পাঠালেন - শুধু মুমিনদের জন্য - ইয়া আইয়ু হাল্লাজিনা আমানু হাল আদুল্লুকুম আল তিজারাত - মানে এই অফার অন্য কারও জন্য না। শুধুই মুমিনদের জন্য। আর এই অফার আল্লাহ শেষও করেছেন মুমিনদের উল্লেখ করে - ওয়াবাশশিরিল মুউ'মিনিন।
আলহামদুলিল্লাহ আশা রাখি যে আমরা আল্লাহর সেই ব্যাবসার উপরে আছি ইনশাআল্লাহ - আমরা অন্য কারো ব্যাবসা করিনা, সরাসরি আল্লাহর ব্যাবসা করি। বাস্তব! ওয়াল্লাহি আল্লাহ তাই বলেছেন - "তিজারাত" এই এই আয়াত জিবরিল আমীন আলাহিস সালাম ই নিয়ে এসেছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য!
কোন এক দিন কুরআন পড়ছিলাম - হঠাত একটা আয়াত চোখে পড়ল - সুরা আলইমরান ১৭৫ -
إِنَّمَا ذَٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
এই যে এই শয়তান তোমাদের কে তার আউলিয়াদের ব্যাপারে ভয় দেখায় - তাদের কে ভয় পাবার কোন দরকার নাই - বরং আমাকেই ভয় কর যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো! আজিব এক আয়াত!!!
আল্লাহ বলতেসেন - এই র*্যাব, ডিবি, হেনো তেনো এদের ব্যাপারে শয়তান তোমাদের ভয় দেখায় - তাদের ভয় পাবার দরকার নাই, বরং আমাকেই ভয় কর। অদ্ভুত - আল্লাহ সোজা সাপ্টা বলে দিচ্ছেন - তারা হচ্ছে শয়তানের চ্যালা চামুন্ডা তাদের কে ভয় পাবার কোন দরকার নাই। ভাই এখানেও সেই একই সমস্যা। আল্লাহ বলে দিলেন ভয় পাবার দরকার নাই, কিন্তু আমরা আবার ও মিস করি কথাটা কার। আল্লাহ বলে দিয়েছেন ভয় পাবার দরকার নাই - ব্যাস কথা এখানেই শেষ। আমাদের কে আল্লাহর কালামের উপর ইয়াকিন রাখতে হবে। আর ইয়াকিন হচ্ছে বিশ্বাসের সেই ধরন যা বিশ্বাস কে কাজে পরিনত করে। যেমন স্মরন করেন - রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালাম বলছিলেন বদর এর আগে, আল্লাহ আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ২ টি দলের যে কোন একটির উপরে আমাদের বিজয় দিবেন, আমি যেন মক্কার কাফের পরাজয় দেখতে পাচ্ছি (আও কামা কলা আলাইহিস সালাম)। এটা হল ইয়াকিন।
সুবহান আল্লাহ - আল্লাহ জানেন এমনও হাল হয়ত আসবে তাঁর দুর্বল বান্দারা খুব ভয় পাবে, আল্লাহ জিব্রিল আলাইহিস সালাম কে পাঠায়ে দিলেন যাও বলে দাও - তাদের ভয় পাবার কোন দরকার নাই।
ট্রিক অফ হুদ আলাইহিস সালাম - হুদ আলাইহিস সালাম এর কওম যখন হুদ আলাইহিস সালাম কে থ্রেট দেয়া শুরু করলো, হুদ আলাইহিস সালাম বললেন, ওকে আমাকে কোন সুযোগ দিওনা, দিনে কিংবা রাতে তোমরা আমাকে আক্রমন কর। বছরের পর বছর ধরে তারা হুদ আলাইহিস সালাম এর সাথে ফাইট করতে থাকলো কিন্তু ক্ষতি করা তো অনেক দুরের কথা, তারা হুদ আলাইহিস সালাম কে ছুঁয়েও ও দেখতে পারলোনা!! আর শেষে হুদ আলাইহিস সালাম কাফিরদের কে তাঁর ফর্মুলা টা বলে দিলেন - ইন্নি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি রব্বি ওয়া রব্বুকুম। আমি তো ভরসা করেছি আমার এবং তোমাদের রব্ব এর উপরে !!! (তোমাদের মত নিজের বাহুর আর পেশির শক্তির উপরে না)
প্রিয় ভাই আমার - তারা তো ইব্রাহীম আঃ কে আগুনে ফেলে দিলো আর সবার চিন্তা ছিলো কিভাবে আগুন কে নিভানো যায়! আর আল্লাহ বলে দিলেন আগুন তুমি ইব্রাহীম এর জন্য আরামদায়ক হয়ে যাও, সাগর ডুবাতে পারেনি মুসা আলাইহিস সালাম কে, তিমি হজম করতে পারেনি ইউনুস আলাইহিস সালাম কে –আল্লাহ বলছেন, ফা'লামু - আন্নাল্লাহা মাওলাকুম নি'মাল মাওলা ওয়া নি'মান নাসির - জেনে রাখো আল্লাহ তোমার জন্য অভিভাবক/রক্ষাকারী, আর সাহায্যকারী/রক্ষাকারী হিসেবে আল্লাহ কতই না উত্তম!!
একটা হাদিস শুনেছিলাম - জিবরিল আলাইহিস সালাম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতেসেন ইয়া রাসুলাল্লাহ আপনার উম্মতের সব আমল পরিমাপ করা হয়/লিপি বদ্ধ করা হয় কিন্তু তাদের চোখের পানি লিপিবদ্ধ করা হয়না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চাইলেন কেন? জিবরিল আলাইহিস সালাম উত্তর দিলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনার উম্মতের এক ফোটা চোখের পানি জাহান্নামের আগুনের সমুদ্র কে নিভিয়ে দেয় - তা কিভাবে লিপিবদ্ধ অরা সম্ভব! (আও কামা কলা আলাইহিস সালাম)
এই দ্বীনের পথ কিছু টা তো কঠিনই, তবে এমন আহামরি কঠিন কিছু না। আল্লাহ আপনার বেপারে বেখায়াল নন আমার ভাই। ওয়াল্লাহি আল্লাহ আপনাকে যত মুহাব্বাত করেন আপনি নিজে নিজেকে তত মুহাব্বাত করেন না। আল্লাহ আপনার জন্য জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন, আপনাকে যদি বলা হত নিজের জন্য কিছু বানাও আর সমস্ত উপকরন দিয়ে দেয়া হত, নিজের জন্য আমি আপনি আলসেমি করে এক সময়ে হয়ত বসে যেতাম, কারন এটাই আমাদের ফিতরাত কিন্তু আল্লাহ আমাদের জন্য জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন আমাদের জন্য ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ বলেন - লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআআহা - আল্লাহ তার উপরে ততটুকুই দেন যে যতটুকু সহ্য করতে পারবে। বালা মুসিবত যা আসে তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই আসে, কল্যানের জন্যই আসে। হয়ত ঈমান এ মজবুত করে অথবা সম্মান কে বৃদ্ধি করে।
আল্লাহ তার পসন্দের কোন বান্দার জন্য জান্নাতে অনেক মর্যাদার একটি স্তর নির্ধারন করে রাখেন, এতই মর্যাদাবান যে বান্দা নেক আমল দিয়ে কখনই সেখানে যেতে পারবেনা। কিন্তু আল্লাহর এটা পসন্দ যে এই বান্দা সেখানে যাক, আল্লাহ তখন বান্দা কে কিছু পরিক্ষার মধ্যে ফেলে দেন, আর বান্দা যখন এই হালাত এ সবর করে আল্লাহ নিজ দয়ায় তার মর্যাদা বৃদ্ধি করতে থাকেন।
হাদিসে কুদিসেত পড়েছিলাম - আল্লাহ বলেন বান্দা যখন ঠোঁট নাড়ে এবং আমেক স্মরন করে আমি তার সাথেই (আমি আছিই তোমার সাথে)
প্রিয় ভাই আমার -এই দুনিয়া আমাদের জন্য না। এই দুনিয়া এই তাগুত আর মুরতাদ দের জন্য! পরকালে তাদের কিছুই নাই। হায় আফসোস, তারা তো এক গ্লাস পানিও পাবেনা। তারা তো খাবে গলিত পুঁজ আর দুর্গন্ধ ময় কাঁটাযুক্ত জাক্কুম। (আল্লাহর পানাহ) আমাদেরই কতক এখন জান্নাতে তাদের নিজ ঠিকানা দেখে নিয়েছেন ইনশাআল্লাহ - আর আল্লাহর আরশের নিচে ঝুলে থাকেন সবুজ পাখি হয়ে!!! আহ! কতই না সফল সেই জিদেগী!
সাহাবাদের এমন এক দল বলছিলেন আমাদের এই হাল কেউ যদি আমাদের ভাইদের জানিয়ে দিত! আল্লাহ বলছেন আমি জানিয়ে দিব - আল্লাহ বলছেন তোমরা তাদের কে মৃত বলোনা তারা জিবিত! আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক প্রাপ্ত !!!
প্রিয় ভাই আমার - তারা তো আমাদের হত্যা করে জান্নাতে পাঠিয়ে দিবে ইনশাআল্লাহ আর প্রতি টা জুলুমের সাথে আমকে আল্লাহর আরশের নিকটবর্তি করবে ইনশাআল্লাহ।
আজ আর কথা বাড়াবোনা ভাই -
আল্লাহ বলছেন আমি বান্দার আমল নষ্ট করিনা, আল্লাহ আরো বলছেন, সাওয়াবাম মিন ইনদিল্লাহ ওয়াল্লাহু ইনদাহু হুসনুস সাওয়াব! প্রিয় ভাই আমার আমরা তো আশা রাখি এক দিন আল্লাহ আমাদের দিকে তাকায়ে হাসবেন, একদিন আমাদের জন্য জান্নাতের দরজা গুলো খুলে দেয়া হবে আর ফেরেশতারা বলবে সালামুন আলাইকা, এক দিন আমাদের জান্নাতী স্ত্রী গন দৌড়ে আমাদের দিকে আসবে, একদিন রাসুলে আকরাম সাঃ আমাদের সাথে কথা বলবেন। রাসুল কে বলব আস সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ আপনি আমাদের জন্য কত দুয়া করেছেন আজ আমাদের দেখ হয়ে গেল! ও ভাই আমাদের জন্য তো আছে আমাদের রব্ব এর খুশি - আজকের পর থেকে আমি আর কোনদিন ও তোমাদের উপরে নারাজ হবোনা !!!
প্রিয় ভাই –আল্লাহ আমাদের ভুল গুলো ক্ষমা করুন, এই দুয়া করি। আল্লাহ আমাদের সকল বন্দী ভাইদের উপরে রহম করুন, তাদের পরিবারকে সম্মানিত করুন এবং নিরাপত্তা নসিব করুন। আল্লাহ তাঁর রাসুল সাঃ কে বলেছিলেন – আপনি আমাদের চোখের সামনেই আছেন। আল্লাহ বলছেন আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির কোন কিছুর বেপারেই গাফেল নন, ওয়ামা কুন্না আনিল খালকি গফিলুন।
ভাই সবশেষে আমি খাস ভাবে আপনার কাছে দুয়ার দরখাস্ত করেতসি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করবেন, আল্লাহ যেন আমাকে মাফ করে দেন, আল্লাহ যেন আমাকে কবুল করে নেন এবং আল্লাহ যেন আমাকে শাহাদাত নসিব করেন। আল্লাহ যেন আমাদের কে তাঁর সন্তুষ্টির জান্নাতে একত্রিত করেন আমীন।
Comment