ফি সাবিলিল্লাহ ও তাবলীগ— মাওলানা পালনপুরী (দা বা)
প্রশ্ন — আল্লাহর রাস্তার আম ও খাস কোন অর্থ আছে কি ?আল্লাহ রাস্তা বিষয়ক হাদিসগুলো কি শুধুই জিহাদের জন্য প্রযোজ্য এবং আল্লাহর রাস্তায় বের হলে যে ফজিলতগুলো বর্নিত হয়েছে এগুলো কি শুধুই জিহাদের জন্য প্রযোজ্য??
আর এই ফজিলত কি তাবলিগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয় কি??? জাযাকাল্লাহ খায়ের। (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
.
#উত্তর —
.
জিহাদ সংক্রান্ত কিছু সংশয় নিরসন — মুফতী সাইদ আহমাদ পালনপুরী (হাফিযাহুল্লাহ)
শাইখুল হাদীস ও মুফতী দারুল উলুম দেওবন্দ
জিহাদ কুরআন ও হাদিসের একটি বিশেষ পরিভাষা। তাঁর অর্থ হল দ্বীন ইসলামের প্রতিরক্ষা ও সমুন্নত করার লক্ষ্যে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
শব্দ বিবেচনায় জিহাদ শব্দটির দু ধরনের ব্যবহার পাওয়া যায়,
১) ﺟﺎﻫﺪ ﺍﻟﻌﺪﻭ ﻣﺠﺎﻫﺪﺓ ﺟﻬﺎﺩﺍ
অর্থাৎ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা
২) ﺟﺎﻫﺪ ﻓﻲ ﺍﻻﻣﺮ
কোন কাজে পূর্ণ শক্তি ব্যয় করা ও প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালানো।
এই অর্থেই বলা হয়ে থাকে মোজাহাদা।
কুরআন ও হাদীসে জিহাদ শব্দের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার পাওয়া যায়, কোথাও শুধু ﺟﻬﺎﺩ ﻭ ﻣﺠﺎﻫﺪﺓ এসেছে। কোথাও তার পরে ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ — অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায়) যুক্ত হয়েছে। কোথাও আবার ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ (ফি আল্লাহ) ও ﻓﻴﻨﺎ যুক্ত হয়েছে।
এমনকি ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (সাবিলিল্লাহ) শব্দটিও কখনো একাকী ব্যবহার করা হয়েছে কখনো ﺟﻬﺎﺩ এর সাথে মিলে ব্যবহৃত হয়েছে।
.
এক্ষেত্রে জিহাদের অর্থ বিভ্রাট থেকে বাঁচার জন্যে একটি একটি মূলনীতি অনুসরণ করা যেতে পারে। যা মূলত নুসূসের আলোকে গৃহিত ও অধিক নিরাপদ। এতে ভয়াবহ বিভ্রান্তি ও অনর্থক ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ।
.
যেখানে শুধু ﻣﺠﺎﻫﺪﺓ শব্দ এসেছে কিংবা তারপর ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ (ফি আল্লাহ) বা ﻓﻴﻨﺎ এসেছে, সে আয়াতগুলো “আম” (ব্যাপক)। অর্থাৎ সেখানে জিহাদ শব্দটির আভিধানিক যে অর্থে ব্যাপকতা আছে তা উদ্দেশ্য হতে পারবে। যেমন আল্লাহর বাণী —
.
ﻭَﺟَﺎﻫِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺣَﻖَّ ﺟِﻬَﺎﺩِﻩِ
অর্থঃ আর তোমরা আল্লাহর পথে সর্বশক্তি ব্যয় করো। (সূরা হজ্জ, আয়াত ৭৮)
.
অর্থাৎ ‘যারা আল্লাহর দ্বীনের জন্য পূর্ণশক্তি ব্যয় করে’। অনুরূপ আল্লাহর বাণী —
.
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺟَﺎﻫَﺪُﻭﺍ ﻓِﻴﻨَﺎ ﻟَﻨَﻬْﺪِﻳَﻨَّﻬُﻢْ ﺳُﺒُﻠَﻨَﺎ ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻤَﻊَ ﺍﻟْﻤُﺤْﺴِﻨِﻴﻦَ
অর্থঃ যারা আল্লাহর দ্বীনের জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালায় আমি তাদের বহু পথের সন্ধান দেই। (সূরা আনকাবূত, আয়াত ৬৯)
.
এই আয়াতদ্বয় এবং এ জাতীয় অন্যান্য আয়াত দ্বীনের সকল প্রচেষ্টাকে শামিল করে। যে কেউ যে কোনো পদ্ধতিতে দ্বীনের জন্য কোন প্রচেষ্টা করবে, সে এই আয়াতগুলোর উদ্দেশ্য হতে পারবে।
.
কিন্তু যেখানে জিহাদ শব্দ এসেছে কিংবা ﻣﺠﺎﻫﺪﺓ মূল ধাতুর সাথে ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) যুক্ত হয়েছে, অথবা কোথাও শুধু ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ ) বলা হয়েছে (যেমনটা যাকাতের হক্বদার ও আল্লাহর রাস্তায় খরচের আলোচন্যা এসেছে) — এ সকল আয়াত দ্বারা ﺟﻬﺎﺩ (জিহাদ) এর খাস (বিশেষ) অর্থ (অর্থাৎ যুদ্ধ) উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
এ কারনেই সূরা তাওবাহর যেখানেই ﺟﻬﺎﺩ শব্দ এসেছে সেখানেই শাহ আব্দুল কাদের দেহলবী (রহঃ) এবং তার অনুসরণে শাইখুল হিন্দ (রহঃ) যুদ্ধ করা অর্থ লিখেছেন।
.
এমনিভাবে হাদিস গ্রন্থগুলোতে ﺍﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺤﻬﺎﺩ ও ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ নামে যে শিরোনাম গুলো এসেছে সেখানেও এই বিশেষ অর্থ উদ্দেশ্য। আপনি চিন্তা শক্তিকে জাগ্রত রেখে অধ্যায়গুলো পাঠ করুন। দেখবেন ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) এর বর্ননাগুলো যেখানে উল্লেখ আছে, সেখানেই জিহাদ উদ্দেশ্য।
.
এতে বোঝা গেল ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) শব্দটিও ইসলামের একটি বিশেষ পরিভাষা। যার সুনির্দিষ্ট অর্থ হল আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা। কিন্তু শত দুঃখের বিষয় আমাদের তাবলীগী ভায়েরা এই আয়াতগুলোকে “আম” (ব্যাপক) করে দিয়েছেন।
এমনকি শুধু “আম”ই নয় বরং নিজেদের সাথে “খাস” (সীমাবদ্ধ) করে নিয়েছেন। কারন তারা দ্বীনের কাজগুলোর মধ্যে শুধু তাবলীগকেই জিহাদ বলেন। অন্যান্য দ্বীনি কাজ যেমন তা’লীম, তাদরীস, তাফসীর, তা’লিফ ইত্যাদি কিছুকেই জিহাদ বলেন না।
.
বরং তাবলীগের কিছু সাধারণ সাথী ভাই তো এমন আছে, যারা এগুলোকে দ্বীনের কাজই মনে করে না। আর যখন তারা নিজেদের কাজকেই জিহাদ নাম দিয়ে দিয়েছে তখন কুরআন ও হাদিসের জিহাদের যেসব ফজিলত বর্ণিত হয়েছে তা ঢালাওভাবে নিজেদের কাজের জন্য ব্যবহার করা শুরু করেছে।
আজ বাধ্য হয়ে শত আক্ষেপের সাথে বলতে হয় তাবলীগী ভাইদের এই কাজগুলো কোনভাবেই সহীহ হচ্ছে না।
.
জিহাদ ইসলামের একটি বিশেষ পরিভাষা। কুরআন ও হাদীসে যখন এই শব্দ উল্লেখ করা হয় তখন এর দ্বারা ﻗﺘﺎﻝ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ক্বিতাল ফি সাবিলিল্লাহ) উদ্দেশ্য হয়।
তবে হ্যাঁ কিছু কিছু কাজকে জিহাদের সাথে মিলানো হয়েছে। এ মিলানোটুকুই এ কাজগুলোর ফজিলতের জন্য যথেষ্ট। যেমন হাদীসে আছেঃ
.
.
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন যে ইলমের খোঁজার জন্য বের হয় সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় আছে।‘
.
এখানে রাসূলুল্ললাহ সাঃ ইলম অন্বেষণের পথকে ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) আখ্যা দিয়ে জিহাদের সাথে তুলনা করলেন। এই তুলনা করাটাই তালেবে ইলমের জন্য ফজিলত। এর থেকে আগে বাড়ার কোন অধিকার কারো নেই।
এমনিভাবে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজকেও ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) এর সাথে মিলানো যেতে পারে। আর মিলানোটাই তার ফজিলত হবে।
কিন্তু তাই বলে জিহাদের সমস্ত ফজিলত তার সাথে প্রয়োগ করা ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﺟﻬﺎﺩ (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ) কে তাবলীগের সাথে ‘খাস’ করা বা ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) কে ‘আম’ করে তাবলীগকেও এর উদ্দেশ্য বানানো সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন দাবি ছাড়া আর কিছুই নয়। এ কথাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বদা স্মরণ রাখা জরুরী।
.
মোট কথা এই ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) পরিভাষাটি কুরআন ও হাদীসে ‘আম’ (ব্যাপক) না ‘খাস’ (বিশেষ) এ ব্যাপারে মতানৈক্য আছে। তবে আলোচনা পর্যালোচনার পরে মাসরাফে যাকাতের (যাকাতের ব্যয়ের খাত) আলোচনায় এই কথাই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) একটি বিশেষ পরিভাষা অর্থাৎ ‘খাস’ এবং সকল মুহাদ্দিসীনের কর্ম পদ্ধতিও এটাই ছিল (অর্থাৎ সকল মুহাদ্দিসীন ফি সাবিলিল্লাহকে কে বিশেষ পরিভাষা হিসেবে ব্যবহার করেছেন)।
তারা সকলেই ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) শব্দ সম্বলিত সকল হাদীসকে কিতাবুল জিহাদ অর্থাৎ জিহাদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। তার মানে তাদের নিকটও এটা বিশেষ পরিভাষা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত ফযিলতসমূহ একটি বিশেষ কাজের জন্য নির্ধারিত।
কিন্তু তাবলীগ জামাতের ভাইয়েরা ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) সংক্রান্ত হাদীসগুলোকে ‘আম’ করে ফেলেছেন। বরং তারা নিজেদের কাজকেই ঐ সকল হাদীসের ﻣﺼﺪﺍﻕ বা প্রয়োগ ক্ষেত্র সাব্যস্ত করেছেন।
তারা মেশকাতুল মাসাবীহ হাদীসের কিতাব থেকে তাবলীগী কাজের জণ্য যে মুস্তাখাব নির্বাচিত সংকলন রচনা করেছেন, তাতে জিহাদের অধ্যায় পুরোটাই শামিল করেছেন।
এর দ্বারা স্পষ্ট উদ্দেশ্য এটাই যে , তাদের কাজও একটি জিহাদ। এ বিষয়ে মাওলানা ওমর পালনপুরী রহঃ এর সাথে অধমের আলোচনা ও চিঠি আদান প্রদান হয়েছে।
.
হযরতের মনোভাব এমন ছিল যে, আমাদের তাবলীগী কাজও জিহাদ।
তিনি এক চিঠিতে দলিল হিসাবে এ কথা আমাকে লিখেছেন যে, তিরমিযি শরীফের একটি রেওয়ায়েতে তাবেঈ উবায়াহ্ রহঃ মসজিদে যাওয়াকে ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) এর প্রয়োগ ক্ষেত্রে সাব্যস্ত করেছেন। তাহলে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে কেন তা প্রয়োগ করা যাবে না? আমি উত্তরে লিখেছি যে —
.
প্রথমতঃ
উবায়াহ্ রহঃ কোন সাহাবী নন। হানফী আলেমদের নিকট সাহাবীদের কথা ﺣﺨﺖ বা দলিল। কিন্তু তাবেঈদের ব্যাপারে স্বয়ং ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কথা হল ﻫﻢ ﺭﺧﺎﻝ ﻭﻧﺤﻦ ﺭﺧﻞ — তারাও মানুষ আমরাও মানুষ।
অর্থাৎ তাঁদের কথা আমাদের হানফী আলেমদের নিকট ﺣﺨﺖ বা স্বতন্ত্র দলিল নয়। যদি কোন সাহাবী এই পরিভাষাটি “আম” (ব্যাপক) করতেন তাহলে একটা কথা ছিল।
.
দ্বিতীয়তঃ
একমাত্র দাওয়াত ও তাবলীগই কেন এর প্রয়োগ ক্ষেত্র হবে? যদিও কোন কোন ভাইকে বলতে শুনা যায় — তাবলীগই দ্বীনি কাজ। হযরত রহঃ এমন বলতেন না। যদিও তিনি বলতেন তাবলীগও দ্বীনি কাজ। কিন্তু তাবলীগ জামাতের ভায়েরা “ও” কে “ই” দ্বারা পাল্টে দিয়েছেন।
মোটকথা, তারা নিজেদের কাজকেই জিহাদ বলেন। বরং তারা হয়তো হাকীকী জিহাদকেও জিহাদ মনে করেন না। তাঁদের মতে জিহাদের ফজিলতগুলোও দাওয়াত ও তাবলীগের মাঝে সীমাবদ্ধ।
.
তৃতীয়তঃ
অন্য সকল দ্বীনি কাজ সম্পাদনকারীরা যেমন দ্বীনি শিক্ষাদান ও লেখালেখীতে ব্যস্ত আলেমরা নিজেদের কাজের জন্য ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) ও জিহাদের ফজিলত সাব্যস্ত করেন না। এরপরেও কেন তাবলীগের ভাইরা এসকল হাদীসগুলোকে তাদের কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন?
.
এই চিঠির পর মাওলানা ওমর পালনপুরী সাহেবের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আর কোন চিঠি আসেনি। কোন এক চিঠিতে শ্রদ্ধেয় মাওলানা সাহেব একটি যুক্তি পেশ করেছিলেন যে, জিহাদ হল ﺣﺴﻦ ﻟﻐﻴﺮﻩ অর্থাৎ সত্ত্বাগতভাবে ভালো নয় অন্য কারনে ভালো।
বাহ্যিক দৃষ্টিতে জিহাদ হল জমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা। আর দাওয়াত তাবলীগ স্বয়ং ﺣﺴﻦ ﻟﺬﺍﺗﻪ ﺣﺴﻦ (সত্ত্বাগত ভালো) এটা হল আল্লাহ তা’আলা ও সৎকাজের প্রতি দাওয়াত। সুতরাং যে সব ফজিলত ও সওয়াব ﺣﺴﻦ ﻟﻐﻴﺮﻩ এর জন্যে তা ﺣﺴﻦ ﻟﺬﺍﺗﻪ ﺣﺴﻦ এর জন্যে কেন হবে না?
.
আমি উত্তরে আরজ করলাম এভাবে ক্বিয়াস (যুক্তি) দ্বারা সওয়াব সাব্যস্ত করা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ক্বিয়াসটা শরঈ আহকামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সওয়াব বা ফাজায়েল এবং এ জাতীয় অন্যান্য ﺗﻮﻗﻴﻔﻲ বিষয়ে ক্বিয়াস চলে না।
(তাওক্বীফী বলা হয় এমন বিষয়কে যার বাস্তবতা বান্দার বিবেক দ্বারা নিরূপণ করা যায় না। যেমন কোন সূরা পাঠে কি সওয়াব, কোন আমলে কি সওয়াব ও কোন আমলে কত গুনাহ এক্ষেত্রে আকল ব্যবহার করে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছার অধিকার শরীয়ত কাউকে দেয়নি। বরং কুরআন ও হাদীসে যতটুকু বলা হয়েছে তা সেভাবেই বহাল রাখতে হবে )
.
অর্থাৎ এসকম স্পষ্ট বিষয়ে কুরআন হাদীসের প্রমান আবশ্যক। তাছাড়া সওয়াবের কম বেশী কষ্টের অনুপাতে হয়ে থাকে। (যেমন হাদীসে দূর থেকে মসজিদে আগমনকারীর সওয়াবের কথা বলা হয়েছে) আর আল্লাহই ভালো জানেন, কোন কাজে কি পরিমাণ কষ্ট ও এর সওয়াব কি হবে। দুনিয়ার মানুষ এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
স্পষ্ট কথা হল, কষ্টের বিবেচনায় পারিভাষিক ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﺟﻬﺎﺩ (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ) এর ধারে কাছেও তাবলীগী কাজ পৌছাতে পারবে না।
এরপরও কিভাবে জিহাদের সওয়াব ও ফজিলত ঐ কাজের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। আজ পর্যন্ত মুহাক্কিক আলেমদের কেউই এ সকল বর্ণনাকে অন্য কোন দ্বীনি কাজে ব্যবহার করেন নি।
ফায়দাঃ
উপরোক্ত আলোচনায় “ও” এবং “ই” এর কথা হয়েছে (“তাবলীগও দ্বীনি কাজ”/ “তাবলীগই দ্বীনি কাজ” )। এটা একটা উদাহরণ দ্বারা ভালোভাবে বোঝা যায়। হিন্দুস্তানের একটি বড় হীরক খন্ড, কোহিনুর। এটা অত্যন্ত মূল্যবান হীরা। যদি তা হাত থেকে পড়ে ছোট বড় পাঁচ টুকরা হয়ে যায় তাহলেও এ টুকরাগুলো মুল্যহীন হবে না। প্রতিটি টুকরার কিছু না কিছু মূল্য থাকবেই।
.
কিন্তু কোন টুকরার এ অধিকার নেই যে সে বলবে, “আমিই ঐ কোহিনুর”। হ্যাঁ, প্রতিটি টুকরা এই কথা বলতে পারবে যে, “আমিও কোহিনুর” মানে কোহিনুরের একটি অংশ।
.
উক্ত উদাহরণ দ্বারা একথা স্পষ্ট হয় যে, নবী সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম রাযিঃ এর সকল কাজ একটি পূর্ণ কোহিনুর ছিল। তাঁরা একই সাথে দাঈ, মুবাল্লিগ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকিহ, মুজাহিদ ছিলেন এবং তাঁরা রাজ্যও চালাতেন।
কিন্তু পরবর্তীতে এই সব কাজ পৃথক পৃথক হয়ে গেছে। সুতরাং যে কোন দ্বীনি কাজকারীরা এ কথা বলতে পারেন যে, আমিও সাহাবী ওয়ালা কাজ করি। কিন্তু কারোরই একথ আবলার অধিকার নেই যে, সে বলবে, আমিই একমাত্র সাহাবী ওয়ালা কাজ করি।
.
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে এ বিষয়টি বোঝার তাউফীক দান করুন এবং যে সব ভুল-ত্রুটি হচ্ছে তার সংশোধন করুন। আমীন।
-সূত্রঃ তোহফাতুল আলমায়ী
post copy করে দেওয়া হয়েছে
copy linke
প্রশ্ন — আল্লাহর রাস্তার আম ও খাস কোন অর্থ আছে কি ?আল্লাহ রাস্তা বিষয়ক হাদিসগুলো কি শুধুই জিহাদের জন্য প্রযোজ্য এবং আল্লাহর রাস্তায় বের হলে যে ফজিলতগুলো বর্নিত হয়েছে এগুলো কি শুধুই জিহাদের জন্য প্রযোজ্য??
আর এই ফজিলত কি তাবলিগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয় কি??? জাযাকাল্লাহ খায়ের। (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
.
#উত্তর —
.
জিহাদ সংক্রান্ত কিছু সংশয় নিরসন — মুফতী সাইদ আহমাদ পালনপুরী (হাফিযাহুল্লাহ)
শাইখুল হাদীস ও মুফতী দারুল উলুম দেওবন্দ
জিহাদ কুরআন ও হাদিসের একটি বিশেষ পরিভাষা। তাঁর অর্থ হল দ্বীন ইসলামের প্রতিরক্ষা ও সমুন্নত করার লক্ষ্যে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
শব্দ বিবেচনায় জিহাদ শব্দটির দু ধরনের ব্যবহার পাওয়া যায়,
১) ﺟﺎﻫﺪ ﺍﻟﻌﺪﻭ ﻣﺠﺎﻫﺪﺓ ﺟﻬﺎﺩﺍ
অর্থাৎ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা
২) ﺟﺎﻫﺪ ﻓﻲ ﺍﻻﻣﺮ
কোন কাজে পূর্ণ শক্তি ব্যয় করা ও প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালানো।
এই অর্থেই বলা হয়ে থাকে মোজাহাদা।
কুরআন ও হাদীসে জিহাদ শব্দের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার পাওয়া যায়, কোথাও শুধু ﺟﻬﺎﺩ ﻭ ﻣﺠﺎﻫﺪﺓ এসেছে। কোথাও তার পরে ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ — অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায়) যুক্ত হয়েছে। কোথাও আবার ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ (ফি আল্লাহ) ও ﻓﻴﻨﺎ যুক্ত হয়েছে।
এমনকি ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (সাবিলিল্লাহ) শব্দটিও কখনো একাকী ব্যবহার করা হয়েছে কখনো ﺟﻬﺎﺩ এর সাথে মিলে ব্যবহৃত হয়েছে।
.
এক্ষেত্রে জিহাদের অর্থ বিভ্রাট থেকে বাঁচার জন্যে একটি একটি মূলনীতি অনুসরণ করা যেতে পারে। যা মূলত নুসূসের আলোকে গৃহিত ও অধিক নিরাপদ। এতে ভয়াবহ বিভ্রান্তি ও অনর্থক ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ।
.
যেখানে শুধু ﻣﺠﺎﻫﺪﺓ শব্দ এসেছে কিংবা তারপর ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ (ফি আল্লাহ) বা ﻓﻴﻨﺎ এসেছে, সে আয়াতগুলো “আম” (ব্যাপক)। অর্থাৎ সেখানে জিহাদ শব্দটির আভিধানিক যে অর্থে ব্যাপকতা আছে তা উদ্দেশ্য হতে পারবে। যেমন আল্লাহর বাণী —
.
ﻭَﺟَﺎﻫِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺣَﻖَّ ﺟِﻬَﺎﺩِﻩِ
অর্থঃ আর তোমরা আল্লাহর পথে সর্বশক্তি ব্যয় করো। (সূরা হজ্জ, আয়াত ৭৮)
.
অর্থাৎ ‘যারা আল্লাহর দ্বীনের জন্য পূর্ণশক্তি ব্যয় করে’। অনুরূপ আল্লাহর বাণী —
.
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺟَﺎﻫَﺪُﻭﺍ ﻓِﻴﻨَﺎ ﻟَﻨَﻬْﺪِﻳَﻨَّﻬُﻢْ ﺳُﺒُﻠَﻨَﺎ ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻤَﻊَ ﺍﻟْﻤُﺤْﺴِﻨِﻴﻦَ
অর্থঃ যারা আল্লাহর দ্বীনের জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালায় আমি তাদের বহু পথের সন্ধান দেই। (সূরা আনকাবূত, আয়াত ৬৯)
.
এই আয়াতদ্বয় এবং এ জাতীয় অন্যান্য আয়াত দ্বীনের সকল প্রচেষ্টাকে শামিল করে। যে কেউ যে কোনো পদ্ধতিতে দ্বীনের জন্য কোন প্রচেষ্টা করবে, সে এই আয়াতগুলোর উদ্দেশ্য হতে পারবে।
.
কিন্তু যেখানে জিহাদ শব্দ এসেছে কিংবা ﻣﺠﺎﻫﺪﺓ মূল ধাতুর সাথে ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) যুক্ত হয়েছে, অথবা কোথাও শুধু ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ ) বলা হয়েছে (যেমনটা যাকাতের হক্বদার ও আল্লাহর রাস্তায় খরচের আলোচন্যা এসেছে) — এ সকল আয়াত দ্বারা ﺟﻬﺎﺩ (জিহাদ) এর খাস (বিশেষ) অর্থ (অর্থাৎ যুদ্ধ) উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
এ কারনেই সূরা তাওবাহর যেখানেই ﺟﻬﺎﺩ শব্দ এসেছে সেখানেই শাহ আব্দুল কাদের দেহলবী (রহঃ) এবং তার অনুসরণে শাইখুল হিন্দ (রহঃ) যুদ্ধ করা অর্থ লিখেছেন।
.
এমনিভাবে হাদিস গ্রন্থগুলোতে ﺍﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺤﻬﺎﺩ ও ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ নামে যে শিরোনাম গুলো এসেছে সেখানেও এই বিশেষ অর্থ উদ্দেশ্য। আপনি চিন্তা শক্তিকে জাগ্রত রেখে অধ্যায়গুলো পাঠ করুন। দেখবেন ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) এর বর্ননাগুলো যেখানে উল্লেখ আছে, সেখানেই জিহাদ উদ্দেশ্য।
.
এতে বোঝা গেল ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) শব্দটিও ইসলামের একটি বিশেষ পরিভাষা। যার সুনির্দিষ্ট অর্থ হল আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা। কিন্তু শত দুঃখের বিষয় আমাদের তাবলীগী ভায়েরা এই আয়াতগুলোকে “আম” (ব্যাপক) করে দিয়েছেন।
এমনকি শুধু “আম”ই নয় বরং নিজেদের সাথে “খাস” (সীমাবদ্ধ) করে নিয়েছেন। কারন তারা দ্বীনের কাজগুলোর মধ্যে শুধু তাবলীগকেই জিহাদ বলেন। অন্যান্য দ্বীনি কাজ যেমন তা’লীম, তাদরীস, তাফসীর, তা’লিফ ইত্যাদি কিছুকেই জিহাদ বলেন না।
.
বরং তাবলীগের কিছু সাধারণ সাথী ভাই তো এমন আছে, যারা এগুলোকে দ্বীনের কাজই মনে করে না। আর যখন তারা নিজেদের কাজকেই জিহাদ নাম দিয়ে দিয়েছে তখন কুরআন ও হাদিসের জিহাদের যেসব ফজিলত বর্ণিত হয়েছে তা ঢালাওভাবে নিজেদের কাজের জন্য ব্যবহার করা শুরু করেছে।
আজ বাধ্য হয়ে শত আক্ষেপের সাথে বলতে হয় তাবলীগী ভাইদের এই কাজগুলো কোনভাবেই সহীহ হচ্ছে না।
.
জিহাদ ইসলামের একটি বিশেষ পরিভাষা। কুরআন ও হাদীসে যখন এই শব্দ উল্লেখ করা হয় তখন এর দ্বারা ﻗﺘﺎﻝ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ক্বিতাল ফি সাবিলিল্লাহ) উদ্দেশ্য হয়।
তবে হ্যাঁ কিছু কিছু কাজকে জিহাদের সাথে মিলানো হয়েছে। এ মিলানোটুকুই এ কাজগুলোর ফজিলতের জন্য যথেষ্ট। যেমন হাদীসে আছেঃ
.
.
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন যে ইলমের খোঁজার জন্য বের হয় সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় আছে।‘
.
এখানে রাসূলুল্ললাহ সাঃ ইলম অন্বেষণের পথকে ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) আখ্যা দিয়ে জিহাদের সাথে তুলনা করলেন। এই তুলনা করাটাই তালেবে ইলমের জন্য ফজিলত। এর থেকে আগে বাড়ার কোন অধিকার কারো নেই।
এমনিভাবে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজকেও ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) এর সাথে মিলানো যেতে পারে। আর মিলানোটাই তার ফজিলত হবে।
কিন্তু তাই বলে জিহাদের সমস্ত ফজিলত তার সাথে প্রয়োগ করা ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﺟﻬﺎﺩ (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ) কে তাবলীগের সাথে ‘খাস’ করা বা ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) কে ‘আম’ করে তাবলীগকেও এর উদ্দেশ্য বানানো সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন দাবি ছাড়া আর কিছুই নয়। এ কথাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বদা স্মরণ রাখা জরুরী।
.
মোট কথা এই ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) পরিভাষাটি কুরআন ও হাদীসে ‘আম’ (ব্যাপক) না ‘খাস’ (বিশেষ) এ ব্যাপারে মতানৈক্য আছে। তবে আলোচনা পর্যালোচনার পরে মাসরাফে যাকাতের (যাকাতের ব্যয়ের খাত) আলোচনায় এই কথাই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) একটি বিশেষ পরিভাষা অর্থাৎ ‘খাস’ এবং সকল মুহাদ্দিসীনের কর্ম পদ্ধতিও এটাই ছিল (অর্থাৎ সকল মুহাদ্দিসীন ফি সাবিলিল্লাহকে কে বিশেষ পরিভাষা হিসেবে ব্যবহার করেছেন)।
তারা সকলেই ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) শব্দ সম্বলিত সকল হাদীসকে কিতাবুল জিহাদ অর্থাৎ জিহাদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। তার মানে তাদের নিকটও এটা বিশেষ পরিভাষা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত ফযিলতসমূহ একটি বিশেষ কাজের জন্য নির্ধারিত।
কিন্তু তাবলীগ জামাতের ভাইয়েরা ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) সংক্রান্ত হাদীসগুলোকে ‘আম’ করে ফেলেছেন। বরং তারা নিজেদের কাজকেই ঐ সকল হাদীসের ﻣﺼﺪﺍﻕ বা প্রয়োগ ক্ষেত্র সাব্যস্ত করেছেন।
তারা মেশকাতুল মাসাবীহ হাদীসের কিতাব থেকে তাবলীগী কাজের জণ্য যে মুস্তাখাব নির্বাচিত সংকলন রচনা করেছেন, তাতে জিহাদের অধ্যায় পুরোটাই শামিল করেছেন।
এর দ্বারা স্পষ্ট উদ্দেশ্য এটাই যে , তাদের কাজও একটি জিহাদ। এ বিষয়ে মাওলানা ওমর পালনপুরী রহঃ এর সাথে অধমের আলোচনা ও চিঠি আদান প্রদান হয়েছে।
.
হযরতের মনোভাব এমন ছিল যে, আমাদের তাবলীগী কাজও জিহাদ।
তিনি এক চিঠিতে দলিল হিসাবে এ কথা আমাকে লিখেছেন যে, তিরমিযি শরীফের একটি রেওয়ায়েতে তাবেঈ উবায়াহ্ রহঃ মসজিদে যাওয়াকে ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) এর প্রয়োগ ক্ষেত্রে সাব্যস্ত করেছেন। তাহলে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে কেন তা প্রয়োগ করা যাবে না? আমি উত্তরে লিখেছি যে —
.
প্রথমতঃ
উবায়াহ্ রহঃ কোন সাহাবী নন। হানফী আলেমদের নিকট সাহাবীদের কথা ﺣﺨﺖ বা দলিল। কিন্তু তাবেঈদের ব্যাপারে স্বয়ং ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কথা হল ﻫﻢ ﺭﺧﺎﻝ ﻭﻧﺤﻦ ﺭﺧﻞ — তারাও মানুষ আমরাও মানুষ।
অর্থাৎ তাঁদের কথা আমাদের হানফী আলেমদের নিকট ﺣﺨﺖ বা স্বতন্ত্র দলিল নয়। যদি কোন সাহাবী এই পরিভাষাটি “আম” (ব্যাপক) করতেন তাহলে একটা কথা ছিল।
.
দ্বিতীয়তঃ
একমাত্র দাওয়াত ও তাবলীগই কেন এর প্রয়োগ ক্ষেত্র হবে? যদিও কোন কোন ভাইকে বলতে শুনা যায় — তাবলীগই দ্বীনি কাজ। হযরত রহঃ এমন বলতেন না। যদিও তিনি বলতেন তাবলীগও দ্বীনি কাজ। কিন্তু তাবলীগ জামাতের ভায়েরা “ও” কে “ই” দ্বারা পাল্টে দিয়েছেন।
মোটকথা, তারা নিজেদের কাজকেই জিহাদ বলেন। বরং তারা হয়তো হাকীকী জিহাদকেও জিহাদ মনে করেন না। তাঁদের মতে জিহাদের ফজিলতগুলোও দাওয়াত ও তাবলীগের মাঝে সীমাবদ্ধ।
.
তৃতীয়তঃ
অন্য সকল দ্বীনি কাজ সম্পাদনকারীরা যেমন দ্বীনি শিক্ষাদান ও লেখালেখীতে ব্যস্ত আলেমরা নিজেদের কাজের জন্য ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ (ফি সাবিলিল্লাহ) ও জিহাদের ফজিলত সাব্যস্ত করেন না। এরপরেও কেন তাবলীগের ভাইরা এসকল হাদীসগুলোকে তাদের কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন?
.
এই চিঠির পর মাওলানা ওমর পালনপুরী সাহেবের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আর কোন চিঠি আসেনি। কোন এক চিঠিতে শ্রদ্ধেয় মাওলানা সাহেব একটি যুক্তি পেশ করেছিলেন যে, জিহাদ হল ﺣﺴﻦ ﻟﻐﻴﺮﻩ অর্থাৎ সত্ত্বাগতভাবে ভালো নয় অন্য কারনে ভালো।
বাহ্যিক দৃষ্টিতে জিহাদ হল জমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা। আর দাওয়াত তাবলীগ স্বয়ং ﺣﺴﻦ ﻟﺬﺍﺗﻪ ﺣﺴﻦ (সত্ত্বাগত ভালো) এটা হল আল্লাহ তা’আলা ও সৎকাজের প্রতি দাওয়াত। সুতরাং যে সব ফজিলত ও সওয়াব ﺣﺴﻦ ﻟﻐﻴﺮﻩ এর জন্যে তা ﺣﺴﻦ ﻟﺬﺍﺗﻪ ﺣﺴﻦ এর জন্যে কেন হবে না?
.
আমি উত্তরে আরজ করলাম এভাবে ক্বিয়াস (যুক্তি) দ্বারা সওয়াব সাব্যস্ত করা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ক্বিয়াসটা শরঈ আহকামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সওয়াব বা ফাজায়েল এবং এ জাতীয় অন্যান্য ﺗﻮﻗﻴﻔﻲ বিষয়ে ক্বিয়াস চলে না।
(তাওক্বীফী বলা হয় এমন বিষয়কে যার বাস্তবতা বান্দার বিবেক দ্বারা নিরূপণ করা যায় না। যেমন কোন সূরা পাঠে কি সওয়াব, কোন আমলে কি সওয়াব ও কোন আমলে কত গুনাহ এক্ষেত্রে আকল ব্যবহার করে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছার অধিকার শরীয়ত কাউকে দেয়নি। বরং কুরআন ও হাদীসে যতটুকু বলা হয়েছে তা সেভাবেই বহাল রাখতে হবে )
.
অর্থাৎ এসকম স্পষ্ট বিষয়ে কুরআন হাদীসের প্রমান আবশ্যক। তাছাড়া সওয়াবের কম বেশী কষ্টের অনুপাতে হয়ে থাকে। (যেমন হাদীসে দূর থেকে মসজিদে আগমনকারীর সওয়াবের কথা বলা হয়েছে) আর আল্লাহই ভালো জানেন, কোন কাজে কি পরিমাণ কষ্ট ও এর সওয়াব কি হবে। দুনিয়ার মানুষ এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
স্পষ্ট কথা হল, কষ্টের বিবেচনায় পারিভাষিক ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﺟﻬﺎﺩ (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ) এর ধারে কাছেও তাবলীগী কাজ পৌছাতে পারবে না।
এরপরও কিভাবে জিহাদের সওয়াব ও ফজিলত ঐ কাজের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। আজ পর্যন্ত মুহাক্কিক আলেমদের কেউই এ সকল বর্ণনাকে অন্য কোন দ্বীনি কাজে ব্যবহার করেন নি।
ফায়দাঃ
উপরোক্ত আলোচনায় “ও” এবং “ই” এর কথা হয়েছে (“তাবলীগও দ্বীনি কাজ”/ “তাবলীগই দ্বীনি কাজ” )। এটা একটা উদাহরণ দ্বারা ভালোভাবে বোঝা যায়। হিন্দুস্তানের একটি বড় হীরক খন্ড, কোহিনুর। এটা অত্যন্ত মূল্যবান হীরা। যদি তা হাত থেকে পড়ে ছোট বড় পাঁচ টুকরা হয়ে যায় তাহলেও এ টুকরাগুলো মুল্যহীন হবে না। প্রতিটি টুকরার কিছু না কিছু মূল্য থাকবেই।
.
কিন্তু কোন টুকরার এ অধিকার নেই যে সে বলবে, “আমিই ঐ কোহিনুর”। হ্যাঁ, প্রতিটি টুকরা এই কথা বলতে পারবে যে, “আমিও কোহিনুর” মানে কোহিনুরের একটি অংশ।
.
উক্ত উদাহরণ দ্বারা একথা স্পষ্ট হয় যে, নবী সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম রাযিঃ এর সকল কাজ একটি পূর্ণ কোহিনুর ছিল। তাঁরা একই সাথে দাঈ, মুবাল্লিগ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকিহ, মুজাহিদ ছিলেন এবং তাঁরা রাজ্যও চালাতেন।
কিন্তু পরবর্তীতে এই সব কাজ পৃথক পৃথক হয়ে গেছে। সুতরাং যে কোন দ্বীনি কাজকারীরা এ কথা বলতে পারেন যে, আমিও সাহাবী ওয়ালা কাজ করি। কিন্তু কারোরই একথ আবলার অধিকার নেই যে, সে বলবে, আমিই একমাত্র সাহাবী ওয়ালা কাজ করি।
.
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে এ বিষয়টি বোঝার তাউফীক দান করুন এবং যে সব ভুল-ত্রুটি হচ্ছে তার সংশোধন করুন। আমীন।
-সূত্রঃ তোহফাতুল আলমায়ী
post copy করে দেওয়া হয়েছে
copy linke
Comment