গণতন্ত্রের মাধ্যমে কি ইসলামী বিপ্লব সম্ভব?
‘বিষয়টি খুবই গুরুত্বর্পূণ, এবং এ ব্যাপারে যথেষ্ট চিন্তা ও গবেষনার প্রয়োজন। এখানে যে বক্তব্যটি পেশ করছি তা মূলত জামায়াতে ইসলামীর সাথে ভালোভাবে যুক্ত দু’জন বিজ্ঞ ব্যক্তির মধ্যকার আলোচনা। তাঁরা জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কেই আলোচনা করেছেন। কিন্তু আমরা মনে করি যে, এি আলোচনাটির পরিধি ব্যাপক। এ বিষয়টি পাকিস্তানের সকল ইসলামী দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ; বরং এক দৃষ্টিকোণ থেকে গোটা পৃথিবীর ইসলামী দলসমূহের সাথেই বিষয়টি জড়িত। তুরস্কে রয়েছে একটি ইসলামী শক্তিশালী দল, তিউনিসিয়ায় ইসলামী একটি দল আধিক্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, এ দিকে মিসরসহ অন্যান্য জায়গায় ইসলামী আন্দোলনের চেষ্ট চলছে। খোদ পাকিস্তানের এক অংশে ইসলামী দলগুলো বেশ শক্তি অর্জন করে ফেলেছে। এজন্য এ প্রশ্নের উপর যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন যে, পশ্চিমা গণতন্ত্রের মাধ্যমে (বাহ্যিক কিছু পরিবর্তন এনে ‘ইসলামী গণতন্ত্র’ নাম দিয়ে) কি ইসলামী বিপ্লব (অথবা ইসলামের বিজয়, শরিয়ত প্রতিষ্ঠা, নেযামে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইত্যাদি) অর্জন করা সম্ভব? এ বিষয়ে আপনিও একটি মন্তব্য বলুন; আমরা ইনশাআল্লাহ ‘আল-বুরহান’-এর আগামী সংখ্যায় এ বিষয়ে আলোচনা করব।’ – ড.মুহাম্মদ আমিন
৯ থেকে ১৫ পর্যন্ত বিশেষ তারিখে শাহ নেওয়াজ ফারুকী সাহেবের শুক্রবারের আলোচনায় ‘জামায়াতে ইসলামীর অতুলনীয় গবেষনামূলক, ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক চেষ্টা-প্রচেষ্টা।’ শিরোনামে যে আলোচনাটি পেশ করেছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জামায়াতে ইসলামীর শক্তি বর্ণনা করতে গিয়ে যা বললেন, তা এই,
১. মাওলানা মওদুদী রহ. এর চিন্তাধারা হল, ইসলাম একটি জীবনব্যবস্থা, যা গোটা পৃথিবীর উপর কর্তৃত্ব বিস্তারের দাবি রাখে। যা কার্যতও সম্ভব; এমন কি তা এখন পৃথিবীব্যাপী একটি কাজে পরিণত হয়েছে। জনাব ফারুকী সাহেবের বক্তব্য, ‘জামায়াতে ইসলামীর শক্তি পৃথিবীর অন্য যে কোনো দলের চেয়ে বেশি।’ [পৃষ্ঠা:১১]
২. পাকিস্তানে ইসলামী দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর আগমনকে কেন্দ্র করে যে সব প্রোপাগান্ডা ছড়ান হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। বরং পকিস্তানের আদর্শপরিচয়, প্রতিরক্ষা ও উন্নতির ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর বড় একটি অবস্থান রয়েছে। অন্যদিকে (পাকিস্তানের) লিবারেল ও কমিউনিস্টরা জামায়াতে ইসলামীকে নিজেদের আসল শত্রু মনে করে। [পৃষ্ঠা:১১]
৩. জামায়াতে ইসলামী ছাত্র ও শ্রমিকদলসমূহে কমিউনিস্ট ও লিবারেলদের আধিপত্য উপড়ে ফেলেছে। [পৃষ্ঠা:১১]
৪. জামায়াতে ইসলামী সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতা ছাড়া গণতান্ত্রিক ও ইসলামিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। [পৃষ্ঠা:১২]
৫. জামায়াতে ইসলামী উম্মতের ঐক্যের প্রতীক। সেইসাথে জামায়াতে ইসলামী গোটা মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার যোগ্যতা রাখে। [পৃষ্ঠা:১১]
৬. জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে বারবার নির্বাচনী পরাজয়কে বরণ করার অসাধারণ সক্ষমতা রয়েছে। [পৃষ্ঠা:১২]
প্রথম কথা তো এই, শক্তি একটি বহুমুখী ভাবনা। শক্তির শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, উদ্দেশ্য অর্জনে সফল হওয়ার যোগ্যতা। জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য হল, রেযায়ে ইলাহী অর্জন; এ অর্থে জামায়াতে ইসলামী নিশ্চিত একটি শক্তিশালী দল। মুখলেস লোকেরা এর সঙ্গ দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইনশাআল্লাহ এই লক্ষ্য অর্জনে সফলও হয়ে যেতে পারে। কিন্তু জামায়েতে ইসলামী এ অর্থে শক্তিশালী নয় যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তারা দীনের যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে তা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রধান্য বিস্তার করছে। আসলে বাস্তবতা হল, যত দিন যাচ্ছে এ নেযামটি ততই দুর্বল হয়ে পড়ছে।
আমার ধারণা, জামায়াতে ইসলামী অনেক সাধনা করে যে শক্তি অর্জন করেছে তা দিনদিন কমেই চলেছে। আমরা যদি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রচলিত কার্য পরিকল্পনার উপর দ্বিতীয়বার নযর না দিই তাহলে অচিরেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমরা নিশ্চিত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ব।
মুহতারাম ফারুকী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর যেসব শক্তির কথা আলোচনা করলেন, যদি আমরা তার পর্যালোচনা করি তাহলে জামায়াতে ইসলামীর কর্মপদ্ধতির দুর্বলতাগুলো আরো পরিস্কার হয়ে যাবে। কর্ম পদ্ধতির দুর্বলতার মূল কারণ হল, মাওলানা মওদুদী রহ. পশ্চিমাকে খালেস জাহিলিয়্যাত সাব্যস্ত করলেও, পশ্চিমা চিন্তা-চেতনা ও কর্মপদ্ধতির উপর তিনি যে পর্যালোচনা পেশ করেছেন তা অপরিপূর্ণ ও আবেগী একটি পর্যালোচনা ছিল। মাওলানা মওদুদী রহ এর আবেগী পর্যালোচনার সবচে’ বড় দৃষ্টান্ত তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার মধ্যেই বিদ্যমান। তিনি ইসলামকে একটি পরির্পূণ জীবনব্যবস্থারূপে পেশ করেছেন ঠিক; কিন্তু এই জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকেই তিনি যথেষ্ট মনে করেছেন। তিনি যে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছেন তা এ দৃষ্টিকোণ থেকে সীমাবদ্ধ যে, তাঁর চিন্তাধারা হল, এর জন্য পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ধ্বংস হওয়া জরুরী নয়। বরং তিনি এ ধরণের সরকারব্যবস্থাকেই দীন বিজয়ের মাধ্যম হিসাবে জোর দিয়ে থাকেন। তিনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রনীতি ও পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থাকে গতানুগাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মত মনে করেন না। বরং তিনি যখন ইসলামী নেতৃত্বের রূপরেখার কথা আলোচনা করেন তখন গণতান্ত্রিক ধারার সম্রাটদের ব্যাপারে তারদীদের কথা বললেও গণতন্ত্রের ব্যাপারে তারদীদ ফাতওয়া দেন না। তাঁর মতে খেলাফতে রাশেদাও শরী’য়া ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থা ভিন্ন অন্য কিছু নয়।
মাওলানা মওদুদীর চিন্তাধারাকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে (চাই তা পাকিস্তানে হোক, বাংলাদেশে হোক কিংবা হিন্দুস্তানে) প্রকৃত পক্ষে তা গণতান্ত্রিক সেসব বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। এই চেষ্টা-প্রচেষ্টার ফলে নবী কারীম সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকে সুলতান আব্দুল হামিদ সানী পর্যন্ত ইসলামী শাসন যেভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল, তা কোনোদিন আনা সম্ভব নয়। বরং এটি উল্টো গণতান্ত্রিক নেযামকে ইসলামী নেযাম নাম দিয়ে জায়েয সাব্যস্ত করার নামান্তর। গণতান্ত্রিক কাজকর্ম জনগণের শাসনেরই বহিঃপ্রকাশ। আর জনগণের শাসন স্বাধীনতা ও প্রবৃত্তির উন্নতি দান করে, রবের ইবাদত ও আল্লাহর সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে উন্নতি দান করতে পারে না।
গতানুগতিক ও গণতান্তিক প্রচেষ্টার সফলতা- চাই তার ধরণ ইসলামী হোক বা গাইরে ইসলামী- রেযায়ে ইলাহীর প্রচেষ্টাকে উন্নত করতে পারে না। এসব আন্দোলন সফল যখন হয় তখন ইসলামী বিপ্লবের প্রচেষ্টা সোশাল ডেমোক্র্যাট ও লেবারেল আদর্শের সঙ্গে মিলে যায়। এ কথাটি লিয়াকত আলী খান সাহেব ১৯৪৯ সালে খুব ভালভাবে অনুধাবন করে ছিলেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ইসলামী নাম দিয়ে জায়েয সাব্যস্ত করা, পাকিস্তানে একটি আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে সবচে’ বড় বাধা”।
তুরস্কের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রমাণিত হয়েছে যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করে কোনো ইসলামী দল রাষ্ট্রের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে না; বরং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ইসলামী দলের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। আর এ কাজ পাকিস্তানে তো অসম্ভবই; কারণ আমরা নির্বাচনে শুধু হেরেই যাচ্ছি (এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের উপর বড় এহসান)। এ দিকে আরববিশ্বের বর্তমান অবস্থার ফলাফল তো পরিস্কার। যদি এ কথা সঠিক হয়ে থাকে যে, আরবের ইসলামী আন্দোলনগুলো মাওলানা মওদুদী রহ. এর গবেষনার ফসল, তাহলে আমি আবারো বলব যে, এই চিন্তাধারা ও মানসিকতা এক দিক থেকে গোটা মুসলিম বিশ্বে গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থাকে ইসলামের নাম দিয়ে জায়েয সাব্যস্ত করা, ও অপর দিকে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বড় অবদান রেখেছে। এই কথাটি এ বিষয়ের কারণেও পরিস্কার যে, ইসলামী দল, ছাত্র ও শ্রমিক দল, জাতীয়তাবাদী দল, সোশাল ডেমোক্র্যাট পার্টি বা ইউনিয়নসমূহের ইশতেহার ও কার্যপদ্ধতির মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না।
গণতন্ত্রিক ব্যবস্থা আচরণগতভাবে সেক্যুলারাইজেশনকে বাস্তবায়ন করার সর্বোৎকৃষ্ট প্রক্রিয়া। আসলে যখন থেকে গণতন্ত্র সবার কাছে গৃহিত হতে শুরু করেছে, সেভাবে দ্বীনের মজবুতিও নিঃশেষ হতে শুরু করেছে। এ কারণে সেক্যুলার দলগুলতো তো বটেই ইসলামী দলগুলোর জন্যও তাদের কর্মীদের থেকে কুরবানী চাওয়াও মুশকিল হয়ে পড়েছে। এক দিকে খালেস ইসলামী দলগুলোর আলোচনা মতাদর্শহীনভাবে থেকে যাচ্ছে; অপরদিকে তাঁরা তাদের কর্মপন্থা ধীরে ধীরে সেক্যুলার বানাতে বাধ্য হচ্ছে; কেননা, সেক্যুলার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয় গৃহিত হওয়া শুধু জনসাধারণের অধিকার ও স্বার্থের সাথেই নির্ধারিত। এ অবস্থাগুলোতে খালেস ইসলামী দলসমূহ নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য নেযামের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির স্থলে দল থেকে পলায়ন করার উপর বাধ্য হচ্ছে। এ আশঙ্কার কথা মাওলানা আমিন আহসান ইসলাহী ১৯৫৭ সালে মাছিগোটের ইজতেমায় আলোচনা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘কত দল প্রতিষ্ঠা হচ্ছে মহান লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য; কিন্তু দলগুলো প্রতিষ্ঠা লাভের পর ধাপে ধাপে তা নিজেই স্বতন্ত্র একটি লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে পরিণত হয়ে যাচ্ছে, আর আসল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।’
আজ জামায়াতে ইসলামী (বিশেষকরে করাচীতে) নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সেক্যুলার শক্তিগুলোর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া থেকে পালাতে শুরু করেছে এবং গণতান্ত্রিক কাজকর্ম থেকেও পানাহ চাচ্ছে। এ বিষয়টি এ কথার প্রমাণ যে, কর্মীদের মধ্যে ইসলামের মজবুতী ও শাহাদাতের আগ্রহ নিঃশেষ হতে শুরু করেছে। যত দিন যাবে সেক্যুলারাইজেশনের কাজকর্ম জামায়াতে ইসলামীকে ততই একটি সাধারণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে থাকবে। চলমান প্রক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর শক্তি বেড়েও যেতে পারে এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে, তখন গণতান্ত্রিক কাজকর্ম ইসলামের নামে জায়েয হিসাবে জনসাধারণ সবাই মেনে নিবে। এ অর্থে নয় যে, হুকুমতে ইলাহী প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে। কেননা, জনসাধারণের ইচ্ছার সাথে সম্পর্কিত বিধান আবশ্যকীয়ভাবে আল্লাহর ইবাদতকে নাকচ করে দেয়। যদি ইসলামী বিপ্লবকে স্থায়ী করতে হয় এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে, যেন আমাদের শক্তি হুকুমতে ইলাহীর জন্য ব্যয় হয়, তাহলে আবশ্যকীয়ভাবে মাওলানা মওদুদী রহ. এর গবেষনার পূর্ণতা দানের প্রতি আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। আর যদি হয় ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা , তাহলে তাকে বাস্তবায়ন করার জন্য একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। যে ইসলামী রাষ্ট্রের নাম হচ্ছে খেলাফত, ইমারত, সালতানাত; কিন্তু গণতন্ত্র নয়। বাস্তবতা হল, গণতান্ত্রিক ধারায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব।
জামায়াতে ইসলামীর জন্য এমন চেষ্টা-সাধনা শুরু করা দরকার, যার প্রভাবে বরং সেক্যুলার প্রতিষ্ঠানসমূহও ইসলামী শাসনের অধীনস্ত হওয়ার যোগ্য হয়ে যাবে। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা গতানুগতিক কোনো মতবাদের অনুসরণ করতে পারে না। না এই ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা শুরু করার জন্য অন্য একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকা বা পাওয়া আবশ্যক। মসজিদ ভিত্তিক ইত্তেহাদ হচ্ছে এসব ইদারার ভিত্তি। জামায়াতে ইসলামীর এ কথাটি খুব ভালভাবে বোঝা দরকার যে, এর মূল সম্বোধিত ব্যক্তি জনসাধারণ নয়; বরং গোটা দেশের ইসলামী তানযীম ও ইদারাসমূহের কর্মীরা। ইসলামী বিপ্লব এ বিষয়ের দাবি রাখে যে, তার কর্মীদেরকে দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ মসজিদে সমাবেশ করবে এবং মহল্লা ও বাজারের প্রঙ্গনসমূহে আলোচনার মাধ্যমে এ শক্তিকে সেক্যুলার রাষ্ট্রীয় ইদারার পরিবর্তে মসজিদে স্থানান্তর করবে। এ পদ্ধতিকে ইসলামী বিপ্লবের কাজকর্মের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। শক্তির এ নতুন ধারায় আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উপর প্রভাব বিস্তার করে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে চাই।
‘বিষয়টি খুবই গুরুত্বর্পূণ, এবং এ ব্যাপারে যথেষ্ট চিন্তা ও গবেষনার প্রয়োজন। এখানে যে বক্তব্যটি পেশ করছি তা মূলত জামায়াতে ইসলামীর সাথে ভালোভাবে যুক্ত দু’জন বিজ্ঞ ব্যক্তির মধ্যকার আলোচনা। তাঁরা জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কেই আলোচনা করেছেন। কিন্তু আমরা মনে করি যে, এি আলোচনাটির পরিধি ব্যাপক। এ বিষয়টি পাকিস্তানের সকল ইসলামী দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ; বরং এক দৃষ্টিকোণ থেকে গোটা পৃথিবীর ইসলামী দলসমূহের সাথেই বিষয়টি জড়িত। তুরস্কে রয়েছে একটি ইসলামী শক্তিশালী দল, তিউনিসিয়ায় ইসলামী একটি দল আধিক্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, এ দিকে মিসরসহ অন্যান্য জায়গায় ইসলামী আন্দোলনের চেষ্ট চলছে। খোদ পাকিস্তানের এক অংশে ইসলামী দলগুলো বেশ শক্তি অর্জন করে ফেলেছে। এজন্য এ প্রশ্নের উপর যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন যে, পশ্চিমা গণতন্ত্রের মাধ্যমে (বাহ্যিক কিছু পরিবর্তন এনে ‘ইসলামী গণতন্ত্র’ নাম দিয়ে) কি ইসলামী বিপ্লব (অথবা ইসলামের বিজয়, শরিয়ত প্রতিষ্ঠা, নেযামে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইত্যাদি) অর্জন করা সম্ভব? এ বিষয়ে আপনিও একটি মন্তব্য বলুন; আমরা ইনশাআল্লাহ ‘আল-বুরহান’-এর আগামী সংখ্যায় এ বিষয়ে আলোচনা করব।’ – ড.মুহাম্মদ আমিন
৯ থেকে ১৫ পর্যন্ত বিশেষ তারিখে শাহ নেওয়াজ ফারুকী সাহেবের শুক্রবারের আলোচনায় ‘জামায়াতে ইসলামীর অতুলনীয় গবেষনামূলক, ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক চেষ্টা-প্রচেষ্টা।’ শিরোনামে যে আলোচনাটি পেশ করেছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জামায়াতে ইসলামীর শক্তি বর্ণনা করতে গিয়ে যা বললেন, তা এই,
১. মাওলানা মওদুদী রহ. এর চিন্তাধারা হল, ইসলাম একটি জীবনব্যবস্থা, যা গোটা পৃথিবীর উপর কর্তৃত্ব বিস্তারের দাবি রাখে। যা কার্যতও সম্ভব; এমন কি তা এখন পৃথিবীব্যাপী একটি কাজে পরিণত হয়েছে। জনাব ফারুকী সাহেবের বক্তব্য, ‘জামায়াতে ইসলামীর শক্তি পৃথিবীর অন্য যে কোনো দলের চেয়ে বেশি।’ [পৃষ্ঠা:১১]
২. পাকিস্তানে ইসলামী দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর আগমনকে কেন্দ্র করে যে সব প্রোপাগান্ডা ছড়ান হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। বরং পকিস্তানের আদর্শপরিচয়, প্রতিরক্ষা ও উন্নতির ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর বড় একটি অবস্থান রয়েছে। অন্যদিকে (পাকিস্তানের) লিবারেল ও কমিউনিস্টরা জামায়াতে ইসলামীকে নিজেদের আসল শত্রু মনে করে। [পৃষ্ঠা:১১]
৩. জামায়াতে ইসলামী ছাত্র ও শ্রমিকদলসমূহে কমিউনিস্ট ও লিবারেলদের আধিপত্য উপড়ে ফেলেছে। [পৃষ্ঠা:১১]
৪. জামায়াতে ইসলামী সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতা ছাড়া গণতান্ত্রিক ও ইসলামিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। [পৃষ্ঠা:১২]
৫. জামায়াতে ইসলামী উম্মতের ঐক্যের প্রতীক। সেইসাথে জামায়াতে ইসলামী গোটা মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার যোগ্যতা রাখে। [পৃষ্ঠা:১১]
৬. জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে বারবার নির্বাচনী পরাজয়কে বরণ করার অসাধারণ সক্ষমতা রয়েছে। [পৃষ্ঠা:১২]
প্রথম কথা তো এই, শক্তি একটি বহুমুখী ভাবনা। শক্তির শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, উদ্দেশ্য অর্জনে সফল হওয়ার যোগ্যতা। জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য হল, রেযায়ে ইলাহী অর্জন; এ অর্থে জামায়াতে ইসলামী নিশ্চিত একটি শক্তিশালী দল। মুখলেস লোকেরা এর সঙ্গ দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইনশাআল্লাহ এই লক্ষ্য অর্জনে সফলও হয়ে যেতে পারে। কিন্তু জামায়েতে ইসলামী এ অর্থে শক্তিশালী নয় যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তারা দীনের যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে তা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রধান্য বিস্তার করছে। আসলে বাস্তবতা হল, যত দিন যাচ্ছে এ নেযামটি ততই দুর্বল হয়ে পড়ছে।
আমার ধারণা, জামায়াতে ইসলামী অনেক সাধনা করে যে শক্তি অর্জন করেছে তা দিনদিন কমেই চলেছে। আমরা যদি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রচলিত কার্য পরিকল্পনার উপর দ্বিতীয়বার নযর না দিই তাহলে অচিরেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমরা নিশ্চিত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ব।
মুহতারাম ফারুকী সাহেব জামায়াতে ইসলামীর যেসব শক্তির কথা আলোচনা করলেন, যদি আমরা তার পর্যালোচনা করি তাহলে জামায়াতে ইসলামীর কর্মপদ্ধতির দুর্বলতাগুলো আরো পরিস্কার হয়ে যাবে। কর্ম পদ্ধতির দুর্বলতার মূল কারণ হল, মাওলানা মওদুদী রহ. পশ্চিমাকে খালেস জাহিলিয়্যাত সাব্যস্ত করলেও, পশ্চিমা চিন্তা-চেতনা ও কর্মপদ্ধতির উপর তিনি যে পর্যালোচনা পেশ করেছেন তা অপরিপূর্ণ ও আবেগী একটি পর্যালোচনা ছিল। মাওলানা মওদুদী রহ এর আবেগী পর্যালোচনার সবচে’ বড় দৃষ্টান্ত তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার মধ্যেই বিদ্যমান। তিনি ইসলামকে একটি পরির্পূণ জীবনব্যবস্থারূপে পেশ করেছেন ঠিক; কিন্তু এই জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকেই তিনি যথেষ্ট মনে করেছেন। তিনি যে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছেন তা এ দৃষ্টিকোণ থেকে সীমাবদ্ধ যে, তাঁর চিন্তাধারা হল, এর জন্য পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ধ্বংস হওয়া জরুরী নয়। বরং তিনি এ ধরণের সরকারব্যবস্থাকেই দীন বিজয়ের মাধ্যম হিসাবে জোর দিয়ে থাকেন। তিনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রনীতি ও পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থাকে গতানুগাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মত মনে করেন না। বরং তিনি যখন ইসলামী নেতৃত্বের রূপরেখার কথা আলোচনা করেন তখন গণতান্ত্রিক ধারার সম্রাটদের ব্যাপারে তারদীদের কথা বললেও গণতন্ত্রের ব্যাপারে তারদীদ ফাতওয়া দেন না। তাঁর মতে খেলাফতে রাশেদাও শরী’য়া ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থা ভিন্ন অন্য কিছু নয়।
মাওলানা মওদুদীর চিন্তাধারাকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে (চাই তা পাকিস্তানে হোক, বাংলাদেশে হোক কিংবা হিন্দুস্তানে) প্রকৃত পক্ষে তা গণতান্ত্রিক সেসব বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। এই চেষ্টা-প্রচেষ্টার ফলে নবী কারীম সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকে সুলতান আব্দুল হামিদ সানী পর্যন্ত ইসলামী শাসন যেভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল, তা কোনোদিন আনা সম্ভব নয়। বরং এটি উল্টো গণতান্ত্রিক নেযামকে ইসলামী নেযাম নাম দিয়ে জায়েয সাব্যস্ত করার নামান্তর। গণতান্ত্রিক কাজকর্ম জনগণের শাসনেরই বহিঃপ্রকাশ। আর জনগণের শাসন স্বাধীনতা ও প্রবৃত্তির উন্নতি দান করে, রবের ইবাদত ও আল্লাহর সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে উন্নতি দান করতে পারে না।
গতানুগতিক ও গণতান্তিক প্রচেষ্টার সফলতা- চাই তার ধরণ ইসলামী হোক বা গাইরে ইসলামী- রেযায়ে ইলাহীর প্রচেষ্টাকে উন্নত করতে পারে না। এসব আন্দোলন সফল যখন হয় তখন ইসলামী বিপ্লবের প্রচেষ্টা সোশাল ডেমোক্র্যাট ও লেবারেল আদর্শের সঙ্গে মিলে যায়। এ কথাটি লিয়াকত আলী খান সাহেব ১৯৪৯ সালে খুব ভালভাবে অনুধাবন করে ছিলেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ইসলামী নাম দিয়ে জায়েয সাব্যস্ত করা, পাকিস্তানে একটি আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে সবচে’ বড় বাধা”।
তুরস্কের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রমাণিত হয়েছে যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করে কোনো ইসলামী দল রাষ্ট্রের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে না; বরং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ইসলামী দলের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। আর এ কাজ পাকিস্তানে তো অসম্ভবই; কারণ আমরা নির্বাচনে শুধু হেরেই যাচ্ছি (এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের উপর বড় এহসান)। এ দিকে আরববিশ্বের বর্তমান অবস্থার ফলাফল তো পরিস্কার। যদি এ কথা সঠিক হয়ে থাকে যে, আরবের ইসলামী আন্দোলনগুলো মাওলানা মওদুদী রহ. এর গবেষনার ফসল, তাহলে আমি আবারো বলব যে, এই চিন্তাধারা ও মানসিকতা এক দিক থেকে গোটা মুসলিম বিশ্বে গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থাকে ইসলামের নাম দিয়ে জায়েয সাব্যস্ত করা, ও অপর দিকে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বড় অবদান রেখেছে। এই কথাটি এ বিষয়ের কারণেও পরিস্কার যে, ইসলামী দল, ছাত্র ও শ্রমিক দল, জাতীয়তাবাদী দল, সোশাল ডেমোক্র্যাট পার্টি বা ইউনিয়নসমূহের ইশতেহার ও কার্যপদ্ধতির মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না।
গণতন্ত্রিক ব্যবস্থা আচরণগতভাবে সেক্যুলারাইজেশনকে বাস্তবায়ন করার সর্বোৎকৃষ্ট প্রক্রিয়া। আসলে যখন থেকে গণতন্ত্র সবার কাছে গৃহিত হতে শুরু করেছে, সেভাবে দ্বীনের মজবুতিও নিঃশেষ হতে শুরু করেছে। এ কারণে সেক্যুলার দলগুলতো তো বটেই ইসলামী দলগুলোর জন্যও তাদের কর্মীদের থেকে কুরবানী চাওয়াও মুশকিল হয়ে পড়েছে। এক দিকে খালেস ইসলামী দলগুলোর আলোচনা মতাদর্শহীনভাবে থেকে যাচ্ছে; অপরদিকে তাঁরা তাদের কর্মপন্থা ধীরে ধীরে সেক্যুলার বানাতে বাধ্য হচ্ছে; কেননা, সেক্যুলার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয় গৃহিত হওয়া শুধু জনসাধারণের অধিকার ও স্বার্থের সাথেই নির্ধারিত। এ অবস্থাগুলোতে খালেস ইসলামী দলসমূহ নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য নেযামের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির স্থলে দল থেকে পলায়ন করার উপর বাধ্য হচ্ছে। এ আশঙ্কার কথা মাওলানা আমিন আহসান ইসলাহী ১৯৫৭ সালে মাছিগোটের ইজতেমায় আলোচনা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘কত দল প্রতিষ্ঠা হচ্ছে মহান লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য; কিন্তু দলগুলো প্রতিষ্ঠা লাভের পর ধাপে ধাপে তা নিজেই স্বতন্ত্র একটি লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে পরিণত হয়ে যাচ্ছে, আর আসল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।’
আজ জামায়াতে ইসলামী (বিশেষকরে করাচীতে) নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সেক্যুলার শক্তিগুলোর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া থেকে পালাতে শুরু করেছে এবং গণতান্ত্রিক কাজকর্ম থেকেও পানাহ চাচ্ছে। এ বিষয়টি এ কথার প্রমাণ যে, কর্মীদের মধ্যে ইসলামের মজবুতী ও শাহাদাতের আগ্রহ নিঃশেষ হতে শুরু করেছে। যত দিন যাবে সেক্যুলারাইজেশনের কাজকর্ম জামায়াতে ইসলামীকে ততই একটি সাধারণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে থাকবে। চলমান প্রক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর শক্তি বেড়েও যেতে পারে এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে, তখন গণতান্ত্রিক কাজকর্ম ইসলামের নামে জায়েয হিসাবে জনসাধারণ সবাই মেনে নিবে। এ অর্থে নয় যে, হুকুমতে ইলাহী প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে। কেননা, জনসাধারণের ইচ্ছার সাথে সম্পর্কিত বিধান আবশ্যকীয়ভাবে আল্লাহর ইবাদতকে নাকচ করে দেয়। যদি ইসলামী বিপ্লবকে স্থায়ী করতে হয় এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে, যেন আমাদের শক্তি হুকুমতে ইলাহীর জন্য ব্যয় হয়, তাহলে আবশ্যকীয়ভাবে মাওলানা মওদুদী রহ. এর গবেষনার পূর্ণতা দানের প্রতি আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। আর যদি হয় ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা , তাহলে তাকে বাস্তবায়ন করার জন্য একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। যে ইসলামী রাষ্ট্রের নাম হচ্ছে খেলাফত, ইমারত, সালতানাত; কিন্তু গণতন্ত্র নয়। বাস্তবতা হল, গণতান্ত্রিক ধারায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব।
জামায়াতে ইসলামীর জন্য এমন চেষ্টা-সাধনা শুরু করা দরকার, যার প্রভাবে বরং সেক্যুলার প্রতিষ্ঠানসমূহও ইসলামী শাসনের অধীনস্ত হওয়ার যোগ্য হয়ে যাবে। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা গতানুগতিক কোনো মতবাদের অনুসরণ করতে পারে না। না এই ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা শুরু করার জন্য অন্য একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকা বা পাওয়া আবশ্যক। মসজিদ ভিত্তিক ইত্তেহাদ হচ্ছে এসব ইদারার ভিত্তি। জামায়াতে ইসলামীর এ কথাটি খুব ভালভাবে বোঝা দরকার যে, এর মূল সম্বোধিত ব্যক্তি জনসাধারণ নয়; বরং গোটা দেশের ইসলামী তানযীম ও ইদারাসমূহের কর্মীরা। ইসলামী বিপ্লব এ বিষয়ের দাবি রাখে যে, তার কর্মীদেরকে দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ মসজিদে সমাবেশ করবে এবং মহল্লা ও বাজারের প্রঙ্গনসমূহে আলোচনার মাধ্যমে এ শক্তিকে সেক্যুলার রাষ্ট্রীয় ইদারার পরিবর্তে মসজিদে স্থানান্তর করবে। এ পদ্ধতিকে ইসলামী বিপ্লবের কাজকর্মের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। শক্তির এ নতুন ধারায় আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উপর প্রভাব বিস্তার করে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে চাই।
Comment