জামাআহ্ প্রসঙ্গে এক ভাই কিছু বিষয় জানতে চাচ্ছিলেন। মুহতারাম ভাইয়ের প্রশ্নগুলো দেখে আসছিলাম। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে জওয়াব দেয়ার সুযোগ হয়নি। ইনশাআল্লাহ জামাআর বিষয়ে মৌলিক কিছু কথা বলছি। বিস্তারিত কিতাবাদিতে খোঁজ করা যেতে পারে। সুযোগ পেলে তানজীমের কোন আলেমের সাথে কথাও বলে নেয়া যেতে পারে।
প্রথমত: আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চান। ঐক্যবদ্ধ থাকলেই শত্রুর বিরুদ্ধে কামিয়াব হওয়া যাবে। অন্যথায় সম্ভব নয়। এজন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে ঐক্যবদ্ধ থাকতে আদেশ দিয়েছেন। সব ধরণের বিচ্ছিন্নতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
অন্যত্র ইরশাদ করেন,
পারস্পরিক বিবাদে লিপ্ত হলে আল্লাহর নুসরত কমে যাবে। শত্রুর সামনে হীনমন্য হয়ে পরাজিত হতে হবে।
আল্লাহ তাআলার বাণী,
হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন। যে ব্যক্তি বিচ্ছিন্ন থেকে মারা যাবে, সে জাহিলী যামানার লোকদের মতো মারা যাবে বলে সতর্ক করেছেন।
এক হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
অন্য হাদিসে ইরশাদ করেন,
মুসলমানদের পারস্পরিক ঐক্য এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, মুসলমানগণ শরয়ী কোন এক খলিফার অধীনে ঐক্যবদ্ধ থাকাবস্থায় যদি দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি খেলাফতের দাবি করে, তাহলে তাকে হত্যা করে দিতে বলা হয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
অন্য হাদিসে ইরশাদ করেন,
« من أتاكم وأمركم جميع على رجل واحد يريد أن يشق عصاكم أو يفرق جماعتكم فاقتلوه »
“তোমরা এক ব্যক্তির (অর্থাৎ এক খলিফার) উপর ঐক্যবদ্ধ থাকাবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি তোমাদের ঐক্য বিনষ্ট করতে আসে বা জামাতে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে আসে, তাহলে তাকে হত্যা করে দাও।” (মুসলিম: ৪৯০৪)
অতএব, সারা মুসলিম উম্মাহকে এক খলিফার অধীনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এটাই শরীয়তের নির্দেশ।
তবে এ বিধান হল তখন, যখন খেলাফত কায়েম থাকবে এবং একজন শরয়ী ইমাম বিদ্যমান থাকবেন। তখন তার কাছে বাইয়াত না দিয়ে বিচ্ছিন্ন থাকা গোমরাহি।
পক্ষান্তরে যদি খেলাফত কায়েম না থাকে, তাহলে খেলাফত কায়েম করতে হবে। এজন্য যুদ্ধ-জিহাদ যা কিছু লাগে করতে হবে। যেমন বর্তমান মুজাহিদ কাফেলাগুলো খেলাফত কায়েমের জন্য জিহাদ করে যাচ্ছেন।
স্পষ্ট যে, খেলাফত কায়েমের জিহাদে নামতে হলে জামাতবদ্ধ হওয়া আবশ্যক। জামাত ছাড়া জিহাদ সম্ভব না। ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রচেষ্টার দ্বারা দ্বীনের কিছু খেদমত হলেও দ্বীন কায়েম সম্ভব না। খেলাফত প্রতিষ্ঠাও সম্ভব না।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. জামাতের গুরুত্বটা এভাবে তুলে ধরেছেন-
ইমাম আবু দাউদ রহ. হাদিসটি হযরত আবু সায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম আহমদ রহ. মুসনাদে আহমদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
সফরের হালতে সৃষ্টি হওয়া ছোট্ট একটি জামাআতের বেলায়ও একজনকে আমীর বানিয়ে নেয়ার আদেশ দিয়েছেন একথা বুঝানোর জন্য যে, সব ধরণের জামাআতের ক্ষেত্রেই আমীর বানিয়ে নেয়া আবশ্যক।
তাছাড়া আল্লাহ তাআলা ‘আমর বিল মা’রুফ ও নাহি আনিল মুনকার’ ফরয করেছেন। আর তা প্রভাব প্রতিপত্তি ও নেতৃত্ব ব্যতীত পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
তদ্রূপ: জিহাদ, ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা; হজ্ব, জুমআ ও ঈদ কায়েম করা; মাজলুমকে সাহায্য করা, হদসমূহ কায়েম করা ইত্যাদিসহ আল্লাহ তাআলার ফরযকৃত যাবতীয় বিধান প্রভাব প্রতিপত্তি ও নেতৃত্ব ব্যতীত পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।” (মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/৩৯০)
জামাতবদ্ধ হওয়ার গুরুত্বের ব্যাপারে হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর বক্তব্য সর্বদা স্বরণ রাখা চাই।
তিনি বলেন:
অতএব, কোন এক জিহাদি কাফেলার সাথে মিলে যেতে হবে। জিহাদি কাফেলা না থাকলে কাফেলা গঠন আবশ্যক। আর আগে থেকেই থেকে থাকলে তার সাথে মিলে যাওয়া আবশ্যক।
তবে যেকোন কাফেলার ক্ষেত্রেই এটা অত্যাবশ্যক যে, তা শরীয়তের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। শরীয়তমতে পরিচালিত হতে হবে। কুরআন হাদিসে যত জায়গায় জামাতের সাথে মিলে থাকার কথা এসেছে, সবখানে জামাত দ্বারা এমন জামাতই উদ্দেশ্য। আল্লাহর রাসূল ও তার সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত জামাত উদ্দেশ্য। পক্ষান্তরে কাফেলা যদি জাতিয়তাবাদি বা ধর্ম নিরপেক্ষ হয় বা অন্য কোন গোমরাহির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে তার সাথে যোগ দেয়া যাবে না। তদ্রূপ যদি পরিষ্কার জানা না থাকে যে, তা শরীয়তের উপর প্রতিষ্ঠিত কি’না- তাহলেও তার সাথে যোগ দেয়া যাবে না। এমন গোলক ধাঁধায় যুক্ত হওয়া নিষেধ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
সারকথা দাঁড়াল: আপনি যে জামাতের সাথে যুক্ত হবেন, তাতে আবশ্যকীয়ভাবেই দু’টি বৈশিষ্ট থাকতে হবে,
ক. সঠিক আকীদা মানহাজ বিশিষ্ট জিহাদি জামাত হতে হবে।
খ. শরীয়ত অনুযায়ী পরিচালিত হতে হবে।
এ দুই বৈশিষ্ট পাওয়া গেলে আপনি ইনশাআল্লাহ তাতে যুক্ত হতে পারেন।
প্রশ্ন: যদি একাধিক জামাত থাকে তাহলে কি করবো?
উত্তর: সকল জিহাদি কাফেলার উচিৎ সকলে মিলে এক কাফেলা গঠন করা। বিচ্ছিন্নতা আল্লাহ তাআলার পছন্দ নয়। তবে যদি বিশেষ পরিস্থিতি ও ওজরের কারণে এক হওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে আলাদা আলাদা থেকেই কাজ করে যাবে। এমতাবস্থায় যার জন্য যে জামাতে যুক্ত হওয়া সহজ এবং উম্মাহ ও জিহাদের জন্য অধিক উপকারী- সেটাতে যুক্ত হয়ে যাবে।
আলেম সমাজ প্রসঙ্গ:
আমাদের বর্তমান আলেম সমাজ মূলত কোন জামাতের উপর প্রতিষ্ঠিত নেই যাতে যোগ দেয়া যাবে। ব্যক্তি পর্যায়ে যে যেভাবে পারছেন দ্বীনের খেদমত করার চেষ্টা করছেন। অবশ্য ছোটখাট কিছু সংগঠন-ঐক্য আছে। তবে সেগুলো জিহাদি নয়। আর রাজনৈতিক দলগুলো স্পষ্টই গোমরাহিতে লিপ্ত। অতএব, বর্তমান আলেম সমাজ যেভাবে আছেন, এমতাবস্থায় তাদের গণ্ডির মাঝে সীমাবদ্ধ থেকে জিহাদের দায়িত্ব আদায় সম্ভব না। জিহাদের জন্য জিহাদি কাফেলায় যোগ দিতে হবে। তবে আলেম উলামাদের দ্বীনি খেদমতমূলক শরীয়তসম্মত যেসব জামাত বা সংগঠন আছে, জিহাদের কাজের ক্ষতি না হয় এমনভাবে তাতে মিলে কাজ করতেও সমস্যা নেই। বরং সামর্থ্যানুযায়ী তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করা উচিৎ। কেননা, আলেম উলামারাই জাতির রাহবার। যদি আলেম উলামারা নেতৃত্বে না থাকেন, তাহলে আমাদের জিহাদি কাফেলাগুলোও হক পথে চলতে পারবে না।
উল্লেখ্য, আলেম উলামারা জামাতবদ্ধ না থাকার কারণে ঢালাওভাবে তারা গোমরাহিতে লিপ্ত আছেন- এমনটা নয়। কারণ, এখন খেলাফত প্রতিষ্ঠিত নেই। খেলাফত প্রতিষ্ঠিত থাকলে খলিফার হাতে বাইয়াত না দিয়ে বিচ্ছিন্ন থাকলে সেটা গোমরাহি হতো। হাদিসে যেখানে বলা হয়েছে যে, বাইয়াত ছাড়া মারা গেলে জাহিলী মরা মরবে- সেখানে এটাই উদ্দেশ্য। তবে খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদে যোগ দেয়া, জিহাদি কাফেলা গড়ে তোলা বা থেকে থাকলে তার সাথে মিলে যাওয়া এবং তাকে শরীয়ত অনুযায়ী পরিচালিত করা আলেম সমাজের দায়িত্ব। সামর্থ্যানুযায়ী প্রত্যেককে তার দায়িত্ব আদায় করা জরুরী। যার জন্য তানজীমে যুক্ত হওয়া সম্ভব, তাকে তানজীমে যুক্ত হতে হবে। আর যার জন্য সম্ভব নয় বা অতিশয় কষ্টসাধ্য, তিনি সামর্থ্যানুযায়ী দ্বীনের খেদমত করে যাবেন। যতদূর পারেন, জিহাদ ও মুজাহিদদের নুসরত করবেন। এতেই তিনি মাফ পাবেন ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয়ত: সাধারণ জনগণকে হকপন্থী আলেম উলামার কথামতো চলতে হবে- চাই তারা বাহ্যত তানজীমে যুক্ত থাকুন না থাকুন। বর্তমান পরিস্থিতি বড়ই কঠিন। আলেম উলামা সকলের জন্য প্রকাশ্যে তানজীমে যুক্ত হওয়া কঠিন। কাজেই তানজীমে যুক্ত থাকা না থাকাকে আনুগত্যের মানদণ্ড বানানো যাবে না। তবে অবশ্যই হকপন্থী হতে হবে। জিহাদ বিরোধী না হতে হবে। সামর্থ্যানুযায়ী হকপন্থী মুজাহিদদের সমর্থন ও নুসরত করেন এমন হতে হবে।
এ হল সাধারণ মাসআলা মাসায়েলের ক্ষেত্রে। আর যেসব বিষয় তানজীমি কাজের সাথে জড়িত, সেগুলো তানজীমের উলামায়ে কেরাম ও উমারাদের থেকেই নিতে হবে। একান্ত তানজীমি বিষয়ে বাহিরের উলামাদের কথা ধর্তব্য নয়। তানজীমের উলামা ও উমারাগণ যারা এ ময়দানে অভিজ্ঞ, তাদের কথাই মেনে চলতে হবে।
তৃতীয়ত: আলেম যদি জিহাদ বিরোধী হয়, তাহলে তার থেকে দূরে থাকা উচিৎ। তবে শরীয়তের যেসব বিষয় তারা ছাড়া অন্যদের কাছে পাবো না, সেগুলো তাদের কাছ থেকে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। সেগুলো তাদের কাছ থেকে নিতে হবে। আর জিহাদ সংক্রান্ত বিষয়াশয় সরাসরি মুজাহিদ বা হকপন্থী আলেম উলামা থেকে নিতে হবে।
শায়েখ আবু মুহাম্মদ আলমাকদিসি হাফিজাহুল্লাহ বলেন,
যদি সঠিক আকীদা-মানহাজের আলেমদের কাছ থেকে ইলম শিক্ষা করা সম্ভব হতো তাহলে আমরা এধরণের আলেমদের থেকে ইলম অর্জন করতে বাধ্য হতাম না। তখন আমরা সালাফের এই বাণী: إن هذا العلم دين، فانظر عمن تأخذ دينك (এই ইলম দ্বীনের অংশ। সুতরাং তুমি কার থেকে তোমার দ্বীন শিখছো তা লক্ষ্য রেখ) -র উপর আমল করতে আগ্রহী হতাম। কিন্তু এ যমানায় তা কি করে সম্ভব?
আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া যে, তিনি আমাদেরকে ঐ সকল বিষয় শিখার তাওফিক দিয়েছেন, যা দ্বারা আমরা তাওহিদের সাহায্য ও শিরকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। এ কারণেই আমরা যাদের কাছ থেকে ইলমের চাবিকাঠি বা মাধ্যমগুলো শিখেছি তাদের অনেক ভুলের উপর আমরা ধের্য ধারণ করেছি”। (ইরশাদুল মুবতাদী ইলা কাওয়ায়িদিস সা’দী; পৃ: ৪)
তালেবান প্রসঙ্গ:
মুহতারাম ভাই তালেবান প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছেন,
“অনেকেই বলে থাকেন যে, তালেবান হক না। কারণ তারা শিশুদেরকেও হত্যা করে। দলিল হিসেবে পেশ করে পেশওয়ারের ঘটনাকে। এখন প্রশ্ন হলো, তালেবান যদি এরকম আক্রমণ করেই থাকে তাহলে কেন করেছে?”
উত্তর: তালেবানদের বিষয়টা দুনিয়া অবধি সুস্পষ্ট যে, তারা হক জামাত। আর তারা শিশু হত্যা করেন কথাটা নির্জলা মিথ্যা। তবে কোন কোন অপারেশনে অনাকাঙ্খিতভাবে কিছু শিশু নিহত হয়ে থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। তালেবানরা যেহেতু এমন ভূমিতে জিহাদরত, যেখানকার অধিকাংশ জনগণ মুসলমান- তাই মুরতাদদের উপর হামলা হলে অনাকাঙ্খিতভাবে কিছু মুসলমান নিহত হতেই পারে। সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরও যদি কিছু মুসলমান নিহত হয়ে যায়, তাহলে এটা সমালোচনার কিছু নয়। এ ধরণের হামলা সম্পূর্ণ শরীয়তসম্মত। মুজাহিদিনে কেরাম সর্বাত্মক চেষ্টা করেন, যেন কোন মুসলমানের বা কোন শিশুর প্রাণ না ঝরে। এরপরও অনাকাঙ্খিতভাবে হয়ে গেলে এর জন্য মুজাহিদিনে কেরাম দায়ী থাকবেন না। এই আশঙ্কায় যদি হামলা বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে কোনো দিন জিহাদ করা সম্ভব হবে না। হাদিস ও ফিকহের কিতাবাদিতে এসব বিষয় সুস্পষ্ট বিধৃত আছে। একটু কষ্ট করে চোখ বুলালেই পাওয়া যাবে। কিন্তু দ্বীনের দুশমনেরা এ ধরণের কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ফলাও করে অপপ্রচার করে মুজাহিদিনে কেরামের মুড নষ্ট করার চেষ্টায় থাকে। অনেক সময় তারা নিজেরাই হত্যা করে মুজাহিদদের নামে চালিয় দেয়।
অধিকন্তু মুজাহিদগণ তো আর মাছুম নন যে, তাদের কোন ভুল-ভ্রান্তি বা কোন গুনাহ হতে পারে না। অন্য দশজন মানুষের মতো তাদেরও গুনাহ হতে পারে। কিছু মুজাহিদের ভুল বা গুনাহের কারণে তো আর গোটা জামাত বাতিল হয়ে যায় না। যে গুনাহ করেছে, তার গুনাহের বুঝা তাকে বইতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে মাফও করতে পারেন। এ কারণে গোটা জামাত বাতিল হয়ে যাবে না। এ ধরণের বাহানা খুঁজে জিহাদ থেকে সরে দাঁড়ানোরও কোন অবকাশ নেই। ওয়াল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআলা আ’লাম।
প্রথমত: আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চান। ঐক্যবদ্ধ থাকলেই শত্রুর বিরুদ্ধে কামিয়াব হওয়া যাবে। অন্যথায় সম্ভব নয়। এজন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে ঐক্যবদ্ধ থাকতে আদেশ দিয়েছেন। সব ধরণের বিচ্ছিন্নতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا
“আর তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (আলে ইমরান: ১০৩) অন্যত্র ইরশাদ করেন,
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন, যারা সারিবদ্ধ হয়ে তার রাস্তায় যুদ্ধ করে যেন তারা সীসাঢালা প্রাচীর।” (সফ: ৪) পারস্পরিক বিবাদে লিপ্ত হলে আল্লাহর নুসরত কমে যাবে। শত্রুর সামনে হীনমন্য হয়ে পরাজিত হতে হবে।
আল্লাহ তাআলার বাণী,
وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ وَاصْبِرُوا إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
“পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা`আলা ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।” (আনফাল: ৪৬) হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন। যে ব্যক্তি বিচ্ছিন্ন থেকে মারা যাবে, সে জাহিলী যামানার লোকদের মতো মারা যাবে বলে সতর্ক করেছেন।
এক হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
« من فارق الجماعة شبرا فقد خلع ربقة الإسلام من عنقه »
“যে ব্যক্তি জামাত থেকে এক বিঘতও সরে গেল, যেন সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রজ্জু খোলে ফেলল।” (আবু দাউদ: ৪৭৬০) অন্য হাদিসে ইরশাদ করেন,
من كره من أميره شيئا فليصبر فإنه من خرج من السلطان شبرا مات ميتة جاهلية
“কারো কাছে তার আমীরের কোন কিছু অপছন্দনীয় মনে হলে সে যেন সবর করে। কেননা, যে ব্যক্তি সুলতান থেকে এক বিঘতও সরে গিয়ে মারা গেল, সে জাহিলী মরা মরল।” (বুখারী: ৭০৫৩) মুসলমানদের পারস্পরিক ঐক্য এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, মুসলমানগণ শরয়ী কোন এক খলিফার অধীনে ঐক্যবদ্ধ থাকাবস্থায় যদি দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি খেলাফতের দাবি করে, তাহলে তাকে হত্যা করে দিতে বলা হয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
« إذا بويع لخليفتين فاقتلوا الآخر منهما »
“যদি দুই খলিফার বাইয়াত হয়, তাহলে দ্বিতীয় জনকে হত্যা করে দাও।” (মুসলিম: ৪৯০৫)অন্য হাদিসে ইরশাদ করেন,
« من أتاكم وأمركم جميع على رجل واحد يريد أن يشق عصاكم أو يفرق جماعتكم فاقتلوه »
“তোমরা এক ব্যক্তির (অর্থাৎ এক খলিফার) উপর ঐক্যবদ্ধ থাকাবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি তোমাদের ঐক্য বিনষ্ট করতে আসে বা জামাতে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে আসে, তাহলে তাকে হত্যা করে দাও।” (মুসলিম: ৪৯০৪)
অতএব, সারা মুসলিম উম্মাহকে এক খলিফার অধীনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এটাই শরীয়তের নির্দেশ।
তবে এ বিধান হল তখন, যখন খেলাফত কায়েম থাকবে এবং একজন শরয়ী ইমাম বিদ্যমান থাকবেন। তখন তার কাছে বাইয়াত না দিয়ে বিচ্ছিন্ন থাকা গোমরাহি।
পক্ষান্তরে যদি খেলাফত কায়েম না থাকে, তাহলে খেলাফত কায়েম করতে হবে। এজন্য যুদ্ধ-জিহাদ যা কিছু লাগে করতে হবে। যেমন বর্তমান মুজাহিদ কাফেলাগুলো খেলাফত কায়েমের জন্য জিহাদ করে যাচ্ছেন।
স্পষ্ট যে, খেলাফত কায়েমের জিহাদে নামতে হলে জামাতবদ্ধ হওয়া আবশ্যক। জামাত ছাড়া জিহাদ সম্ভব না। ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রচেষ্টার দ্বারা দ্বীনের কিছু খেদমত হলেও দ্বীন কায়েম সম্ভব না। খেলাফত প্রতিষ্ঠাও সম্ভব না।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. জামাতের গুরুত্বটা এভাবে তুলে ধরেছেন-
يجب ان يعرف ان ولاية أمر الناس من أعظم واجبات الدين بل لاقيام للدين ولا للدنيا إلا بها فان بنى آدم لا تتم مصلحتهم إلا بالاجتماع لحاجة بعضهم الى بعض ولابد لهم عند الاجتماع من رأس حتى قال النبى إذا خرج ثلاثة فى سفر فليؤمروا أحدهم رواه أبو دواد من حديث أبى سعيد وابى هريرة
وروى الامام أحمد فى المسند عن عبد الله بن عمرو ان النبى قال لا يحل لثلاثة يكونون بفلاة من الأرض إلا أمروا عليهم أحدهم فأوجب تأمير الواحد فى الاجتماع القليل العارض فى السفر تنبيها بذلك على سائر أنواع الاجتماع ولأن الله تعالى اوجب الأمر بالمعروف والنهى عن المنكر ولا يتم ذلك إلا بقوة وإمارة وكذلك سائر ما أوجبه من الجهاد والعدل وإقامة الحج والجمع والأعياد ونصر المظلوم وإقامة الحدود لا تتم إلا بالقوة والامارة.اهـ
“জানা আবশ্যক যে, জনগণের নেতৃত্ব দেয়া দ্বীনের অন্যতম সুমহান আবশ্যক দায়িত্ব। শুধু তাই নয়, নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব ব্যতীত বরং দ্বীন-দুনিয়া কোনটাই চলতে পারে না। কেননা, পারস্পরিক ঐক্যবদ্ধ হওয়া ব্যতীত মানব জাতির মাসলাহাতসমূহের পরিপূর্ণতা সম্ভব নয়। কারণ, তারা একে অপরের মুখাপেক্ষী। আর ঐক্যবদ্ধ হতে গেলে তাদের একজন নেতা আবশ্যক। রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো এমনটি পর্যন্ত বলেছেন:وروى الامام أحمد فى المسند عن عبد الله بن عمرو ان النبى قال لا يحل لثلاثة يكونون بفلاة من الأرض إلا أمروا عليهم أحدهم فأوجب تأمير الواحد فى الاجتماع القليل العارض فى السفر تنبيها بذلك على سائر أنواع الاجتماع ولأن الله تعالى اوجب الأمر بالمعروف والنهى عن المنكر ولا يتم ذلك إلا بقوة وإمارة وكذلك سائر ما أوجبه من الجهاد والعدل وإقامة الحج والجمع والأعياد ونصر المظلوم وإقامة الحدود لا تتم إلا بالقوة والامارة.اهـ
إذا خرج ثلاثة فى سفر فليؤمروا أحدهم
‘তিন ব্যক্তি সফরে বের হলে তারা যেন তাদের একজনকে তাদের আমীর বানিয়ে নেয়।’ইমাম আবু দাউদ রহ. হাদিসটি হযরত আবু সায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম আহমদ রহ. মুসনাদে আহমদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
لايحل لثلاثة يكونون بفلاة من الأرض إلا أمروا عليهم أحدهم
‘যে কোন তিন ব্যক্তির জন্য কোন মরু ময়দানে অবস্থান করা জায়েয হবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের একজনকে তাদের আমীর বানিয়ে নেয়।’সফরের হালতে সৃষ্টি হওয়া ছোট্ট একটি জামাআতের বেলায়ও একজনকে আমীর বানিয়ে নেয়ার আদেশ দিয়েছেন একথা বুঝানোর জন্য যে, সব ধরণের জামাআতের ক্ষেত্রেই আমীর বানিয়ে নেয়া আবশ্যক।
তাছাড়া আল্লাহ তাআলা ‘আমর বিল মা’রুফ ও নাহি আনিল মুনকার’ ফরয করেছেন। আর তা প্রভাব প্রতিপত্তি ও নেতৃত্ব ব্যতীত পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
তদ্রূপ: জিহাদ, ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা; হজ্ব, জুমআ ও ঈদ কায়েম করা; মাজলুমকে সাহায্য করা, হদসমূহ কায়েম করা ইত্যাদিসহ আল্লাহ তাআলার ফরযকৃত যাবতীয় বিধান প্রভাব প্রতিপত্তি ও নেতৃত্ব ব্যতীত পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।” (মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/৩৯০)
জামাতবদ্ধ হওয়ার গুরুত্বের ব্যাপারে হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর বক্তব্য সর্বদা স্বরণ রাখা চাই।
তিনি বলেন:
لا إسلام إلا بجماعة ولا جماعة إلا بإمارة ولا إمارة إلا بطاعة
“জামাআতবদ্ধ হওয়া ব্যতীত দ্বীনে ইসলামের প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আর জামাআত হয় না নেতৃত্ব (তথা আমীর নির্ধারণ) ব্যতীত। আর (আমীরের) আনুগত্য ব্যতীত নেতৃত্বের কোন ফায়েদা নেই।” (জামিউ বয়ানিল ইলম: ১/২৬৩)অতএব, কোন এক জিহাদি কাফেলার সাথে মিলে যেতে হবে। জিহাদি কাফেলা না থাকলে কাফেলা গঠন আবশ্যক। আর আগে থেকেই থেকে থাকলে তার সাথে মিলে যাওয়া আবশ্যক।
তবে যেকোন কাফেলার ক্ষেত্রেই এটা অত্যাবশ্যক যে, তা শরীয়তের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। শরীয়তমতে পরিচালিত হতে হবে। কুরআন হাদিসে যত জায়গায় জামাতের সাথে মিলে থাকার কথা এসেছে, সবখানে জামাত দ্বারা এমন জামাতই উদ্দেশ্য। আল্লাহর রাসূল ও তার সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত জামাত উদ্দেশ্য। পক্ষান্তরে কাফেলা যদি জাতিয়তাবাদি বা ধর্ম নিরপেক্ষ হয় বা অন্য কোন গোমরাহির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে তার সাথে যোগ দেয়া যাবে না। তদ্রূপ যদি পরিষ্কার জানা না থাকে যে, তা শরীয়তের উপর প্রতিষ্ঠিত কি’না- তাহলেও তার সাথে যোগ দেয়া যাবে না। এমন গোলক ধাঁধায় যুক্ত হওয়া নিষেধ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ومن قاتل تحت راية عمية يغضب لعصبة أو يدعو إلى عصبة أو ينصر عصبة فقتل فقتلة جاهلية
“যে ব্যক্তি এমন ঝাণ্ডা তলে যুদ্ধ করে যা হক না বাতিল জানা নেই, যে তার আপন গোত্রের স্বার্থে ক্রোধান্বিত হয় কিংবা গোত্রের দিকে আহবান করে বা অন্যায়ভাবে গোত্রের সহায়তা করে আর এভাবেই মারা যায়, তাহলে সে জাহিলী মরা মরল।” (মুসলিম: ৪৮৯২) সারকথা দাঁড়াল: আপনি যে জামাতের সাথে যুক্ত হবেন, তাতে আবশ্যকীয়ভাবেই দু’টি বৈশিষ্ট থাকতে হবে,
ক. সঠিক আকীদা মানহাজ বিশিষ্ট জিহাদি জামাত হতে হবে।
খ. শরীয়ত অনুযায়ী পরিচালিত হতে হবে।
এ দুই বৈশিষ্ট পাওয়া গেলে আপনি ইনশাআল্লাহ তাতে যুক্ত হতে পারেন।
প্রশ্ন: যদি একাধিক জামাত থাকে তাহলে কি করবো?
উত্তর: সকল জিহাদি কাফেলার উচিৎ সকলে মিলে এক কাফেলা গঠন করা। বিচ্ছিন্নতা আল্লাহ তাআলার পছন্দ নয়। তবে যদি বিশেষ পরিস্থিতি ও ওজরের কারণে এক হওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে আলাদা আলাদা থেকেই কাজ করে যাবে। এমতাবস্থায় যার জন্য যে জামাতে যুক্ত হওয়া সহজ এবং উম্মাহ ও জিহাদের জন্য অধিক উপকারী- সেটাতে যুক্ত হয়ে যাবে।
আলেম সমাজ প্রসঙ্গ:
আমাদের বর্তমান আলেম সমাজ মূলত কোন জামাতের উপর প্রতিষ্ঠিত নেই যাতে যোগ দেয়া যাবে। ব্যক্তি পর্যায়ে যে যেভাবে পারছেন দ্বীনের খেদমত করার চেষ্টা করছেন। অবশ্য ছোটখাট কিছু সংগঠন-ঐক্য আছে। তবে সেগুলো জিহাদি নয়। আর রাজনৈতিক দলগুলো স্পষ্টই গোমরাহিতে লিপ্ত। অতএব, বর্তমান আলেম সমাজ যেভাবে আছেন, এমতাবস্থায় তাদের গণ্ডির মাঝে সীমাবদ্ধ থেকে জিহাদের দায়িত্ব আদায় সম্ভব না। জিহাদের জন্য জিহাদি কাফেলায় যোগ দিতে হবে। তবে আলেম উলামাদের দ্বীনি খেদমতমূলক শরীয়তসম্মত যেসব জামাত বা সংগঠন আছে, জিহাদের কাজের ক্ষতি না হয় এমনভাবে তাতে মিলে কাজ করতেও সমস্যা নেই। বরং সামর্থ্যানুযায়ী তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করা উচিৎ। কেননা, আলেম উলামারাই জাতির রাহবার। যদি আলেম উলামারা নেতৃত্বে না থাকেন, তাহলে আমাদের জিহাদি কাফেলাগুলোও হক পথে চলতে পারবে না।
উল্লেখ্য, আলেম উলামারা জামাতবদ্ধ না থাকার কারণে ঢালাওভাবে তারা গোমরাহিতে লিপ্ত আছেন- এমনটা নয়। কারণ, এখন খেলাফত প্রতিষ্ঠিত নেই। খেলাফত প্রতিষ্ঠিত থাকলে খলিফার হাতে বাইয়াত না দিয়ে বিচ্ছিন্ন থাকলে সেটা গোমরাহি হতো। হাদিসে যেখানে বলা হয়েছে যে, বাইয়াত ছাড়া মারা গেলে জাহিলী মরা মরবে- সেখানে এটাই উদ্দেশ্য। তবে খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদে যোগ দেয়া, জিহাদি কাফেলা গড়ে তোলা বা থেকে থাকলে তার সাথে মিলে যাওয়া এবং তাকে শরীয়ত অনুযায়ী পরিচালিত করা আলেম সমাজের দায়িত্ব। সামর্থ্যানুযায়ী প্রত্যেককে তার দায়িত্ব আদায় করা জরুরী। যার জন্য তানজীমে যুক্ত হওয়া সম্ভব, তাকে তানজীমে যুক্ত হতে হবে। আর যার জন্য সম্ভব নয় বা অতিশয় কষ্টসাধ্য, তিনি সামর্থ্যানুযায়ী দ্বীনের খেদমত করে যাবেন। যতদূর পারেন, জিহাদ ও মুজাহিদদের নুসরত করবেন। এতেই তিনি মাফ পাবেন ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয়ত: সাধারণ জনগণকে হকপন্থী আলেম উলামার কথামতো চলতে হবে- চাই তারা বাহ্যত তানজীমে যুক্ত থাকুন না থাকুন। বর্তমান পরিস্থিতি বড়ই কঠিন। আলেম উলামা সকলের জন্য প্রকাশ্যে তানজীমে যুক্ত হওয়া কঠিন। কাজেই তানজীমে যুক্ত থাকা না থাকাকে আনুগত্যের মানদণ্ড বানানো যাবে না। তবে অবশ্যই হকপন্থী হতে হবে। জিহাদ বিরোধী না হতে হবে। সামর্থ্যানুযায়ী হকপন্থী মুজাহিদদের সমর্থন ও নুসরত করেন এমন হতে হবে।
এ হল সাধারণ মাসআলা মাসায়েলের ক্ষেত্রে। আর যেসব বিষয় তানজীমি কাজের সাথে জড়িত, সেগুলো তানজীমের উলামায়ে কেরাম ও উমারাদের থেকেই নিতে হবে। একান্ত তানজীমি বিষয়ে বাহিরের উলামাদের কথা ধর্তব্য নয়। তানজীমের উলামা ও উমারাগণ যারা এ ময়দানে অভিজ্ঞ, তাদের কথাই মেনে চলতে হবে।
তৃতীয়ত: আলেম যদি জিহাদ বিরোধী হয়, তাহলে তার থেকে দূরে থাকা উচিৎ। তবে শরীয়তের যেসব বিষয় তারা ছাড়া অন্যদের কাছে পাবো না, সেগুলো তাদের কাছ থেকে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। সেগুলো তাদের কাছ থেকে নিতে হবে। আর জিহাদ সংক্রান্ত বিষয়াশয় সরাসরি মুজাহিদ বা হকপন্থী আলেম উলামা থেকে নিতে হবে।
শায়েখ আবু মুহাম্মদ আলমাকদিসি হাফিজাহুল্লাহ বলেন,
وأوصي إخواني دوما بأن لا يحرموا أنفسنهم من خير يستفيدونه من كائن من كان، ولا يمنعنا انحراف بعض العلماء في أبواب من الدين: أن نستفيد منهم في أبواب لم ينحرفوا فيها؛ خصوصا في زمن شح العلماء الربانيين وندرتهم، وحاجة طالب العلم إلى تلقي بعض أنواع العلوم من أفواه العلماء؛ ولو كان في الأمر سعة وتوفر لنا العلماء الربانيون الذين نرتضي دينهم ونهجهم؛ لما لجأنا لمثل هذا ولما اضطررنا إليه؛ ولَحَرِصنا على تطبيق مقالة السلف: ( إن هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينكم ) ولكن هيهات ذاك في مثل زماننا ... فالحمد لله أولا وآخرا أن علّمنا ويسر التعلم لنا؛ فهدانا إلى تعلم ما نحتاجه لنصرة التوحيد ومحاربة الشرك وإبطال التنديد، فذلك هو المقصود وهو الهدف المنشود؛ ولأجله درسنا وتعلمنا وصبرنا على أخطاء كثير ممن أخذنا عنهم مفاتيح العلوم. اهـ
“আমি সর্বদা ভাইদের অসিয়্যত করি, তারা যেন ইলম অর্জন করা থেকে নিজেদের বঞ্চিত না করে- তা যার কাছ থেকেই হোক। ইলমের কিছু অধ্যায়ে কিছু আলেমের বিচ্যুতি অন্যান্য বিষয় তাদের কাছ থেকে শিখার প্রতিবন্ধক নয়। বিশেষ করে প্রকৃত আলেমদের সল্পতার এ সময়ে। কেননা কিছু কিছু বিষয় আলেমদের থেকে সরাসরিই শিখতে হয়। যদি সঠিক আকীদা-মানহাজের আলেমদের কাছ থেকে ইলম শিক্ষা করা সম্ভব হতো তাহলে আমরা এধরণের আলেমদের থেকে ইলম অর্জন করতে বাধ্য হতাম না। তখন আমরা সালাফের এই বাণী: إن هذا العلم دين، فانظر عمن تأخذ دينك (এই ইলম দ্বীনের অংশ। সুতরাং তুমি কার থেকে তোমার দ্বীন শিখছো তা লক্ষ্য রেখ) -র উপর আমল করতে আগ্রহী হতাম। কিন্তু এ যমানায় তা কি করে সম্ভব?
আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া যে, তিনি আমাদেরকে ঐ সকল বিষয় শিখার তাওফিক দিয়েছেন, যা দ্বারা আমরা তাওহিদের সাহায্য ও শিরকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। এ কারণেই আমরা যাদের কাছ থেকে ইলমের চাবিকাঠি বা মাধ্যমগুলো শিখেছি তাদের অনেক ভুলের উপর আমরা ধের্য ধারণ করেছি”। (ইরশাদুল মুবতাদী ইলা কাওয়ায়িদিস সা’দী; পৃ: ৪)
তালেবান প্রসঙ্গ:
মুহতারাম ভাই তালেবান প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছেন,
“অনেকেই বলে থাকেন যে, তালেবান হক না। কারণ তারা শিশুদেরকেও হত্যা করে। দলিল হিসেবে পেশ করে পেশওয়ারের ঘটনাকে। এখন প্রশ্ন হলো, তালেবান যদি এরকম আক্রমণ করেই থাকে তাহলে কেন করেছে?”
উত্তর: তালেবানদের বিষয়টা দুনিয়া অবধি সুস্পষ্ট যে, তারা হক জামাত। আর তারা শিশু হত্যা করেন কথাটা নির্জলা মিথ্যা। তবে কোন কোন অপারেশনে অনাকাঙ্খিতভাবে কিছু শিশু নিহত হয়ে থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। তালেবানরা যেহেতু এমন ভূমিতে জিহাদরত, যেখানকার অধিকাংশ জনগণ মুসলমান- তাই মুরতাদদের উপর হামলা হলে অনাকাঙ্খিতভাবে কিছু মুসলমান নিহত হতেই পারে। সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরও যদি কিছু মুসলমান নিহত হয়ে যায়, তাহলে এটা সমালোচনার কিছু নয়। এ ধরণের হামলা সম্পূর্ণ শরীয়তসম্মত। মুজাহিদিনে কেরাম সর্বাত্মক চেষ্টা করেন, যেন কোন মুসলমানের বা কোন শিশুর প্রাণ না ঝরে। এরপরও অনাকাঙ্খিতভাবে হয়ে গেলে এর জন্য মুজাহিদিনে কেরাম দায়ী থাকবেন না। এই আশঙ্কায় যদি হামলা বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে কোনো দিন জিহাদ করা সম্ভব হবে না। হাদিস ও ফিকহের কিতাবাদিতে এসব বিষয় সুস্পষ্ট বিধৃত আছে। একটু কষ্ট করে চোখ বুলালেই পাওয়া যাবে। কিন্তু দ্বীনের দুশমনেরা এ ধরণের কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ফলাও করে অপপ্রচার করে মুজাহিদিনে কেরামের মুড নষ্ট করার চেষ্টায় থাকে। অনেক সময় তারা নিজেরাই হত্যা করে মুজাহিদদের নামে চালিয় দেয়।
অধিকন্তু মুজাহিদগণ তো আর মাছুম নন যে, তাদের কোন ভুল-ভ্রান্তি বা কোন গুনাহ হতে পারে না। অন্য দশজন মানুষের মতো তাদেরও গুনাহ হতে পারে। কিছু মুজাহিদের ভুল বা গুনাহের কারণে তো আর গোটা জামাত বাতিল হয়ে যায় না। যে গুনাহ করেছে, তার গুনাহের বুঝা তাকে বইতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে মাফও করতে পারেন। এ কারণে গোটা জামাত বাতিল হয়ে যাবে না। এ ধরণের বাহানা খুঁজে জিহাদ থেকে সরে দাঁড়ানোরও কোন অবকাশ নেই। ওয়াল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআলা আ’লাম।
Comment