বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
মুসলমানদের উত্থান প্রয়োজন ঐক্য ও যোগ্য নেতৃত্বের আমরা যদি মুসলিম বিশ্বের সম্পদ অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে হতাশার কোন কারণ নেই; বরং মুসলিম বিশ্ব যদি ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে জেগে ওঠে, তাদের মধ্যে যদি নবজাগরণের স্পৃহা সৃষ্টি হয়, তাহলে তাদের অগ্রগতি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
এক,
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এখন বাহ্যিক ও মানসিক উভয় দিক দিয়েই দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। এমন কি প্রয়োজনীয় সামগ্রী থেকে শুরু করে জীবন পরিচালনার সকল শিল্প সরঞ্জামে অপরের মুখাপেক্ষী। অথচ আধুনিক অস্ত্র নির্মাণের কাজ মুসলমানরাই প্রথম শুরু করেছিল। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে এ বিষয়ে মুসলমানদের প্রতি দিক নির্দেশনা হল, 'প্রস্তুত কর যথাসাধ্য শক্তি তাদের সঙ্গে মোকাবেলার জন্য, সরঞ্জাম ও ঘোড়া থেকে। এর দ্বারা তোমরা আল্লাহর দুশমনদের ভয় দেখাবে, এছাড়াও কিছু লোক এমন আছে যাদের বিষয়ে তোমরা জানো না আল্লাহ জানেন তাদের।
আর যা কিছু তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদের দেওয়া হবে তোমাদের উপর সামান্যতম অন্যায় করা হবে না। (আনফাল 60)
এ আয়াতের ভাষ্য অনুসারে মুসলমানদের জন্য যুদ্ধোপকরণ
তৈরি করা যে ফরজ তা প্রমাণিত হয়। শক্তি সঞ্চয় করার কথা বলে মূলত মুসলমানদের শত্রু বাহিনীর মোকাবেলায় সব ধরনের শক্তি সঞ্চয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে আধুনিককালের যুদ্ধোপকরণ, সহ শরীর চর্চা, সমর বিদ্যা শিক্ষা, সবই অন্তর্ভুক্ত। আয়াতে ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ 'কুওয়াহ' তথা শক্তি শব্দটি ব্যবহার করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, শক্তি প্রত্যেক দেশ ও স্থান অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন এক সময়ে অস্ত্র ছিল তীর, তোলোয়ার,বর্ষা, প্রভৃতি। তারপর এসেছে বন্দুক, ট্যাংক, ও কামানের যুগ। আবার এখন শুরু হয়েছে যুদ্ধবিমান, মিজাইল, রকেট ও অন্তর্দেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের যুগ। সুতরাং প্রস্তুতিটা হতে হবে সর্বযুগের সর্বাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে। এজন্য দেখা যায় কুরআনের যেখানে সেকালের প্রধান যুদ্ধ সরঞ্জাম ঘুড়া প্রস্তুত করার কথা বলেছে। আধুনিককালের তাফসীরবিদগণ এর অনুবাদ করেছেন ট্যাংক, মিজাইল, যুদ্ধবিমান ও আর্টিলারি প্রস্তুত রাখা দ্বারা। এ বিষয়ে বিশ্ব বিখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন। সেকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দুই জন সাহাবী হযরত গায়লান ইবনে আসলাম ও উরওয়া ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে দামেশকে পাঠিয়েছিলেন দাব্বাবা বা ট্যাংক কিভাবে বানায় হাতে কলমে তার প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য।
এমন কি দীর্ঘ দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তারা হুনাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। সুতরাং উন্নত অস্ত্র নির্মাণের প্রশিক্ষণ নেওয়া সুন্নতে রাসুলের অন্তর্ভুক্ত। এ সূত্র ধরেই মুসলমানগন দীর্ঘদিন কাজ করেছে এমনকি বিশ্বের সর্বপ্রথম রসায়ন বিজ্ঞানী ছিলেন জাবের বিন হাইয়ান। যিনি একজন মুসলমান। ইহুদি- খ্রিস্টানদের থেকে ধার করে কিংবা কেনা অস্ত্র দিয়ে মুসলমানদের বিজয় কখনো সম্ভব নয়। নিজেদের অস্ত্র তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে পারস্পরিক সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। এই সামরিক শক্তির কারণে আজ এক কোটি ইহুদিকে 200 কোটি মুসলমানভয় পায়। আজ সামরিক প্রযুক্তি আমাদের হস্তচ্যুত হয়ে দুশমনের কবজায়। দেড় হাজার বছর আগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলে গিয়েছেন জেনে রাখ দূরে নিক্ষোপন হচ্ছে শক্তি। দূরে নিক্ষেপন প্রযুক্তি যে শিখলো অতঃপর ছেড়ে দিল সে আমার উম্মত নয়। [মুসলিম শরীফ]
আর বর্তমান বিশ্বে তাই দেখা যাচ্ছে যে অন্ত মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র যাদের হাতে তারাই সুপার পাওয়ার। তাদের কাছেই অন্যরা নতজানু।
মুসলমানদের ভিনধর্মীদের মোকাবেলায় সর্বদা সরম প্রস্তুতি করা এজন্য প্রয়োজন যে তাদের সঙ্গে মুসলমানদের দ্বন্দ্ব চিরন্তন, চলতেই থাকবে। এ বিষয়ে খুদ কোরআনে আমাদের সতর্ক করে বলেছে তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে। এমন কি পারলে তারা তোমাদের কে তোমাদের দ্বীন উচ্ছেদ করতে চেষ্টা করবে। (বাকারা) আবহমান কাল থেকে কুফুরীর শক্তিগুলো যে মুসলমানদের ক্ষতিসাধনে ঐক্যবদ্ধ এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই ।
যার ভুরি ভুরি প্রমান ইতিহাস বিদ্যমান ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি।
1, ইহুদিরা মুশরিকদেরকে রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সহযোগিতা করেছে যদিও তাদের পারস্পারিক আকিদাগত মিল ছিল না।
2, ইহুদি খ্রিস্টানদের মধ্যে চরম শত্রুতা থাকা সত্ত্বেও উসমানী সাম্রাজ্য কে ধ্বংস করতে এবং ফিলিস্তিন ইহুদিদের জায়গা করে দিতে ইংল্যান্ড ইহুদিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে।
3, সাম্প্রতিককালে জঙ্গিবাদ ধ্বংসের নামে ইরাক সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের রাশিয়া আমেরিকাকে সহযোগিতা করেছে। আরে আমেরিকা চেচনিয়ায় মুজাহিদদের দমনে রাশিয়াকে সহযোগিতা করেছে।
4, অতি সাম্প্রতিক কালে আমরা মিয়ানমারের মুসলিমের তাড়ানোর ক্ষেত্রে ভারত ও চীনের উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদানের বিষয়টি আমরা খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করেছি।
সুতরাং মুসলমানদের বিরুদ্ধে বাতিল শক্তির একটি চিরায়ত রীতি,। এটা আমাদের ভালো করে বুঝতে হবে। এবং সে মোতাবেক আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে
দুই
আমরা যদি মুসলিম বিশ্বের সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে হতাশার কোন কারণ নেই। পুরো মুসলিম বিশ্ব যদি ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে জেগে উঠে, তাদের মধ্যে যদি নব জাগরণের সৃষ্টি হয় তাহলে তাদের অগ্রগতি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। তাদের উত্থান কেউ রুখতে পারবে না। কারণ মুসলমানদের আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন অঢেল সম্পদ। ফলে প্রাকৃতিক সম্পদে মুসলিম বিশ্ব খুবই সমৃদ্ধ। একা সৌদি আরব প্রাকৃতিক সম্পদের দিক দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয়। তুরস্কের রয়েছে কৃষ্ণ সাগর জুড়ে তেল ও গ্যাসের মজুদ। গোটা দুনিয়ার 80 ভাগ তেল ও গ্যাস কয়লা 65 ভাগ স্বর্ণ রাবার 100 ভাগ খেজুরের মজুদ মুসলিম দেশের হাতে। কাতারে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মুসলিম দেশ। যার মাথাপিছু আয় 88 হাজার ডলার। প্রাকৃতিক সম্পদের দিক দিয়ে পৃথিবীর প্রথম দশটি দেশের মধ্যে রয়েছে মুসলিম বিশ্বের তিনটি দেশ। সেগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, বিশ্বের তৃতীয়, ইরান পঞ্চম। ও ইরাক নবম, তেলের প্রমাণিত রিজার্ভ এর ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম দশ টি দেশের মধ্যে 60 টি মুসলিম দেশ। সেগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, কুয়েত, আরব আমিরাত, লিবিয়া ও নাইজেরিয়া, তেল রপ্তানিকারক দেশের সংস্থা ওপেক ভুক্ত 12 টি দেশের তেল রয়েছে 81 শতাংশ। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রয়েছে 66 শতাংশ। কাজেই মুসলিম বিশ্ব তেল সম্পদের সর্বাধিক সমৃদ্ধ। আর পৃথিবীর বর্তমান অর্থ ব্যবস্থা অনেকটাই তেল নির্ভর। গ্যাস মজুদের দিক দিয়ে বিশ্বের প্রথম দশটি দেশের মধ্যে থেকে 6 টি মুসলিম দেশ। এর মধ্যে ইরান, কাতার, তুর্কিমিনিস্তান, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া, আলজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, অন্যতম কাজেই গ্যাসের দিক থেকেও মুসলিম দেশের অবস্থা খুবই সমৃদ্ধ। কয়লা মজুদ এ শীর্ষ 30 টি দেশের মধ্যে 9 টি মুসলিম দেশ। এর মধ্যে কাজাখস্তান, ইন্দোনেশিয়া, বসনিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, অন্যতম কাজী কয়লার দিক থেকে মুসলিম বিশ্ব সমৃদ্ধ। তাছাড়া অপরাপর প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন স্বর্ণ ও রৌপ্য ইউরেনিয়াম মজুদের দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই মুসলিম বিশ্ব। পৃথিবীর চল্লিশটি দেশের মধ্য 9 টি মুসলিম দেশ তুরস্ক, সৌদি আরব, লেবানন, এর অন্যতম।
শীর্ষ রুপ্য উৎপাদক 20 টি দেশের মধ্যে চারটি মুসলিম দেশ। ইউরেনিয়াম রিজার্ভ শীর্ষ 5 টি দেশের মধ্যে দুটি মুসলিম দেশ। কাজাখস্তান ও নাইজার। শীর্ষ ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী ছয়টি দেশের মধ্যে মুসলিম দেশ দুটি কাজাকাস্তান ও নাইজার।
রাবার উৎপাদনের দিক দিয়েও ইন্দোনেশিয়া দ্বিতীয়তঃ মালয়েশিয়া তৃতীয় নাইজেরিয়া নবম। সুতরাং প্রাকৃতিক সম্পদের দিক দিয়ে মুসলিম দেশগুলো যে পিছিয়ে নেই তা সহজেই আমরা বুঝতে পারি। জিডিপি হিসেবে বিশ্বের প্রথম সাতটি দেশের মধ্যে মুসলিম দেশ 15 টি।
আইএফ এর হিসাব অনুযায়ী উচ্চ আয়ের দেশ দশটির মধ্যে চারটি মুসলিম দেশ। সেগুলো হচ্ছে কাতার, ব্রুনাই, কুয়েত ও আরব আমিরাত।
তিন।
ভৌগলিক অবস্থান ও ত্যাগী রণকৌশল জন সংখ্যার দিক দিয়ে মুসলিম বিশ্ব পিছিয়ে নেই। বিষয়টি বারবার প্রমাণিত হয়েছে ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় মুসলমানদের রয়েছে বিশ্বের মধ্যস্থলে অবস্থিত ভূমি। সৌদি আরব তৎ পার্শ্ববর্তী এলাকা। রয়েছে তুরস্ক, নেপোলিয়নের ভাষায় যাত তাবৎ বিশ্বের জন্য রাজধানী হওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান।
তুরস্ক এমন একটি স্থান যার ভূমি পড়েছে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশ এখানে বসে সহজেই ইউরোপ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর উপর নজরদারি করা যায। ইতিপূর্ব কনস্টানেপোলকে রাজধানী করে তুর্কি সাম্রাজ্য এশিয়া মাইনর দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ ও দক্ষিণ আফ্রিকা মহাদেশের 52 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা যেখানে আজকের পৃথিবীর 42 টি দেশের অবস্থান তা একই সময় শাসন করেছে। মুসলমানদের হাতে আছে আফগান ভূমি যা ঐতিহ্যগতভাবে যুদ্ধের উপযুক্ত স্থান। একসময় গজনী মুসলিম বাহিনী কাছে পরাজিত হয়েছিল তাতার দুর্ধর্ষ বাহিনী। দ্বিতীয়তঃ আরেকবার তাতারি আক্রমণ করেছিল কাবুলে সেখানেও তারা পরাজয় বরণ করেছিল। ইংরেজরা অর্ধ পৃথিবী শাসন করেও তারা আফগান বহুবার পরাস্ত হয়েছে। ভারত উপমহাদেশ বিজয় ও এখানে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম ছিল তাদেরই অবদান। রাশিয়া ও প্রচুর মার কেয়েছেএ ভূমিতে আফগান এর হাতে। সুতরাং বিশ্ব রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমি মুসলমানদের হাতে। মুসলমানদের রয়েছে মিশর ভূমি যার সাথে জড়িত মুসলিম ওমর নায়ক ও বিজাতিদের ইতিহাস। নাজিম উদ্দিন, সালাহউদ্দিন আইয়ুবী , রুকনুদ্দিন, বাইবাস ও সাইফুদ্দিন কুতজ, নাজিম উদ্দিন যার হাতে গাজার যুদ্ধে সম্মিলিত খ্রিস্টান বাহিনী এবং এরপর ফ্রান্সের রাজা লুইসও তার বাহিনী পরাজিত হয়। এ মিশরকে কেন্দ্র করেই সালাহউদ্দিন আইয়ুবী থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস উদ্ধার করেছিলেন। সাইফুদ্দিন এবং তার ভয়ংকর সেনাপতি রুকনুদ্দিন বাইবার্সর হাতে ফিলিস্তিনিদের আইনে সালুতে চূড়ান্ত পরাজয় বরণ করে তাতার বাহিনী। যাদের বিষয়ে প্রবাদ বাক্য ছিল। যদি কেউ বলে তাতারীরা পরাজয় বরণ করেছে তবে তুমি তা বিশ্বাস করো না।
সিরিয়া:
মুসলমানদের ভৌগলিক সীমানায় রয়েছে সিরিয়ার অবস্থান। যদিও শত্রুদের ষড়যন্ত্র আজ তা টুকরো হয়ে গেছে। কিন্তু এক কালে সিরিয়া ফিলিস্তিন জর্ডান এবং লেবানন নিয়েই ছিল শাম বা সিরিয়া। এই সিরিয়াতে হয়েছে মানব সভ্যতার চূড়ান্ত সংঘাত। কখনো পারস্যের সাথে মিলিত রোমানদের সংঘাত। কখন ও খ্রিস্টানদের সাথে রোমানদের সংঘাত। এ ভূমিতেই মুসলিম বীর সালাউদ্দীন আইউব ইউরোপীয় বাহিনীকে পরাজিত করে মুসলমানদের হৃতগৌরব উদ্ধার করেছেন। মুসলিম ইহুদী খ্রিস্টান এ তিনটি ধর্মের লালনভূমি ও এ সিরিয়া। তৎকালীন হিজাজের গভর্নর শরীফ হোসাইন এর গাদ্দারী এবং আরবদের সহায়তা পেয়ে বৃটেনে ও ফ্রান্স সিরিয়া ফিলিস্তিন ইরাক জর্ডান লেবানন দখল কর নেয়। পরে ভাগবাটোয়ারায় ফিলিস্তিন ব্রিটেন এবং সিরিয়া ফ্রান্সের দখলে চলে যায়। আরএ ভূমিতেই ঘটবে ইমাম মাহদী ও ঈসা আলাইহিস সালাম এর আগমন। এবং চূড়ান্ত খেলাফত কায়েমের যুদ্ধ।
অতএব নানাবিধ কারণে বৃহত্তর সিরিয়া যে একটি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মুসলমানদের মধ্যে রয়েছে কুর্দি সম্প্রদায় যুদ্ধ হিসেবে এ জাতীর একটা ঐতিহ্য আছে। সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ছিলেন কুর্দি বংশভূত। এবীর জাতিকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য এদের অধ্যুষিত এলাকার কিছু অংশ ইরানে, কিছু ইরাকে, কিছু তুরস্কে, বিভক্ত করে ভৌগলিক ও মনস্তান্তিক ভাবে এদের দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ওরা এক সময় যেমন ইউরোপের সাথে যুদ্ধ করে খ্যাতি অর্জন করেছিল তেমনি রাশিয়া ও এ অঞ্চলে এদের সঙ্গে লড়াই করে পরাজয় বরণ করেছিল।
চার।
মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এরশাদ হচ্ছে আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মাঝে পালাক্রমে পরিবর্তন করে থাকি।( সূরা আল ইমরান)
এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় মানব জাতির উত্থান পতন আল্লাহ তাআলার এক অমোঘ বিধান এমন কি বাস্তবে ও তাই ঘটে চলেছে এর কারণেই আমরা দেখি পৃথিবীতে রয়েছে শত শত জাতির উত্থান পতনের ইতিহাস। অনেক জাতি উদান হওয়ার পর তারা এমন নির্মূল হয়েছে যে এখন শুধু তাদের নাম নিশানাই রয়ে গেছে। কিন্তু তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু মুসলমান এর ব্যতিক্রম আল্লামা ইকবাল বলেন। ইউনান ও মিশর রুম সব মিটগােয় জাহাজে আবতক মগর হে বাকি নাম ও নিশানা হামারা। যেমন রোম পারস্য ইউনান গ্রীক জার ও তাতার এসব সভ্যতার উত্থান হওয়ার পর তারা পরে আর কোনদিন উঠে দাঁড়াতে পারেনি। মুসলিম জাতি সাময়িকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলেও অনেক সময় তা কাটিয়ে উঠেছে। যেমন ক্রুসেড যুদ্ধ গুলোতে মুসলমানগন প্রাথমিকভাবে বিপর্যস্ত হলেও পরে এ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে। বিপুল শক্তি নিয়ে মুসলিম রাজ্য গুলোকে তছনছ করে দেওয়া তাতারীরা ও এক সময় মুসলমানদের কাছে পরাস্ত হয়েছে। প্রথম বিশ্ব যুদ্বোওর ব্রিটেন ফানস ও ইতালি কর্তৃক মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যাওয়ার পর আবার তা স্বাধীনতা লাভে সক্ষম হয়েছে।
নবীজি উম্মতের নিরাপত্তার জন্য যেসব দোয়া করেছেন এর একটি ছিল। হে আল্লাহ! তাদের উপর যেন শত্রুপক্ষের কাউকে চাপিয়ে না দেন যে তাদের সমূলে ধ্বংস করবে তখন আল্লাহ বলেন আমি তাদের উপর শত্রুপক্ষের কাউকে চাপিয়ে দিব না। যদিও ওরা সকলে একত্রিত হয় সুতরাং মুসলমানগন সমূলে ধ্বংস হবে না। তাই একটি বাস্তব সত্য অতীতে এর ভুরি ভুরি নজির রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নেতৃত্বে, ক্রুসেডদের থেকে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর নেতৃত্বে, তাতারীদের থেকে সাইফুদ্দিন কুতুজ ও রুকনুদ্দিন বাইবার্স এর নেতৃত্বে ও ঐক্য হয়ে তারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। সতরা ঐক্য ও যোগ্য নেতৃত্বের এ দুটো গুন অর্জন করতে পারলে তাদের বিজয় যে সুনিশ্চিত তা একটি বহু পরীক্ষিত বিষয়। আল্লাহ মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও যোগ্য নেতৃত্ব দান করুন।
আমিন।
মুসলমানদের উত্থান প্রয়োজন ঐক্য ও যোগ্য নেতৃত্বের আমরা যদি মুসলিম বিশ্বের সম্পদ অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে হতাশার কোন কারণ নেই; বরং মুসলিম বিশ্ব যদি ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে জেগে ওঠে, তাদের মধ্যে যদি নবজাগরণের স্পৃহা সৃষ্টি হয়, তাহলে তাদের অগ্রগতি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
এক,
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এখন বাহ্যিক ও মানসিক উভয় দিক দিয়েই দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। এমন কি প্রয়োজনীয় সামগ্রী থেকে শুরু করে জীবন পরিচালনার সকল শিল্প সরঞ্জামে অপরের মুখাপেক্ষী। অথচ আধুনিক অস্ত্র নির্মাণের কাজ মুসলমানরাই প্রথম শুরু করেছিল। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে এ বিষয়ে মুসলমানদের প্রতি দিক নির্দেশনা হল, 'প্রস্তুত কর যথাসাধ্য শক্তি তাদের সঙ্গে মোকাবেলার জন্য, সরঞ্জাম ও ঘোড়া থেকে। এর দ্বারা তোমরা আল্লাহর দুশমনদের ভয় দেখাবে, এছাড়াও কিছু লোক এমন আছে যাদের বিষয়ে তোমরা জানো না আল্লাহ জানেন তাদের।
আর যা কিছু তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদের দেওয়া হবে তোমাদের উপর সামান্যতম অন্যায় করা হবে না। (আনফাল 60)
এ আয়াতের ভাষ্য অনুসারে মুসলমানদের জন্য যুদ্ধোপকরণ
তৈরি করা যে ফরজ তা প্রমাণিত হয়। শক্তি সঞ্চয় করার কথা বলে মূলত মুসলমানদের শত্রু বাহিনীর মোকাবেলায় সব ধরনের শক্তি সঞ্চয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে আধুনিককালের যুদ্ধোপকরণ, সহ শরীর চর্চা, সমর বিদ্যা শিক্ষা, সবই অন্তর্ভুক্ত। আয়াতে ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ 'কুওয়াহ' তথা শক্তি শব্দটি ব্যবহার করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, শক্তি প্রত্যেক দেশ ও স্থান অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন এক সময়ে অস্ত্র ছিল তীর, তোলোয়ার,বর্ষা, প্রভৃতি। তারপর এসেছে বন্দুক, ট্যাংক, ও কামানের যুগ। আবার এখন শুরু হয়েছে যুদ্ধবিমান, মিজাইল, রকেট ও অন্তর্দেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের যুগ। সুতরাং প্রস্তুতিটা হতে হবে সর্বযুগের সর্বাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে। এজন্য দেখা যায় কুরআনের যেখানে সেকালের প্রধান যুদ্ধ সরঞ্জাম ঘুড়া প্রস্তুত করার কথা বলেছে। আধুনিককালের তাফসীরবিদগণ এর অনুবাদ করেছেন ট্যাংক, মিজাইল, যুদ্ধবিমান ও আর্টিলারি প্রস্তুত রাখা দ্বারা। এ বিষয়ে বিশ্ব বিখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন। সেকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দুই জন সাহাবী হযরত গায়লান ইবনে আসলাম ও উরওয়া ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে দামেশকে পাঠিয়েছিলেন দাব্বাবা বা ট্যাংক কিভাবে বানায় হাতে কলমে তার প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য।
এমন কি দীর্ঘ দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তারা হুনাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। সুতরাং উন্নত অস্ত্র নির্মাণের প্রশিক্ষণ নেওয়া সুন্নতে রাসুলের অন্তর্ভুক্ত। এ সূত্র ধরেই মুসলমানগন দীর্ঘদিন কাজ করেছে এমনকি বিশ্বের সর্বপ্রথম রসায়ন বিজ্ঞানী ছিলেন জাবের বিন হাইয়ান। যিনি একজন মুসলমান। ইহুদি- খ্রিস্টানদের থেকে ধার করে কিংবা কেনা অস্ত্র দিয়ে মুসলমানদের বিজয় কখনো সম্ভব নয়। নিজেদের অস্ত্র তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে পারস্পরিক সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। এই সামরিক শক্তির কারণে আজ এক কোটি ইহুদিকে 200 কোটি মুসলমানভয় পায়। আজ সামরিক প্রযুক্তি আমাদের হস্তচ্যুত হয়ে দুশমনের কবজায়। দেড় হাজার বছর আগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলে গিয়েছেন জেনে রাখ দূরে নিক্ষোপন হচ্ছে শক্তি। দূরে নিক্ষেপন প্রযুক্তি যে শিখলো অতঃপর ছেড়ে দিল সে আমার উম্মত নয়। [মুসলিম শরীফ]
আর বর্তমান বিশ্বে তাই দেখা যাচ্ছে যে অন্ত মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র যাদের হাতে তারাই সুপার পাওয়ার। তাদের কাছেই অন্যরা নতজানু।
মুসলমানদের ভিনধর্মীদের মোকাবেলায় সর্বদা সরম প্রস্তুতি করা এজন্য প্রয়োজন যে তাদের সঙ্গে মুসলমানদের দ্বন্দ্ব চিরন্তন, চলতেই থাকবে। এ বিষয়ে খুদ কোরআনে আমাদের সতর্ক করে বলেছে তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে। এমন কি পারলে তারা তোমাদের কে তোমাদের দ্বীন উচ্ছেদ করতে চেষ্টা করবে। (বাকারা) আবহমান কাল থেকে কুফুরীর শক্তিগুলো যে মুসলমানদের ক্ষতিসাধনে ঐক্যবদ্ধ এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই ।
যার ভুরি ভুরি প্রমান ইতিহাস বিদ্যমান ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি।
1, ইহুদিরা মুশরিকদেরকে রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সহযোগিতা করেছে যদিও তাদের পারস্পারিক আকিদাগত মিল ছিল না।
2, ইহুদি খ্রিস্টানদের মধ্যে চরম শত্রুতা থাকা সত্ত্বেও উসমানী সাম্রাজ্য কে ধ্বংস করতে এবং ফিলিস্তিন ইহুদিদের জায়গা করে দিতে ইংল্যান্ড ইহুদিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে।
3, সাম্প্রতিককালে জঙ্গিবাদ ধ্বংসের নামে ইরাক সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের রাশিয়া আমেরিকাকে সহযোগিতা করেছে। আরে আমেরিকা চেচনিয়ায় মুজাহিদদের দমনে রাশিয়াকে সহযোগিতা করেছে।
4, অতি সাম্প্রতিক কালে আমরা মিয়ানমারের মুসলিমের তাড়ানোর ক্ষেত্রে ভারত ও চীনের উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদানের বিষয়টি আমরা খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করেছি।
সুতরাং মুসলমানদের বিরুদ্ধে বাতিল শক্তির একটি চিরায়ত রীতি,। এটা আমাদের ভালো করে বুঝতে হবে। এবং সে মোতাবেক আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে
দুই
আমরা যদি মুসলিম বিশ্বের সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে হতাশার কোন কারণ নেই। পুরো মুসলিম বিশ্ব যদি ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে জেগে উঠে, তাদের মধ্যে যদি নব জাগরণের সৃষ্টি হয় তাহলে তাদের অগ্রগতি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। তাদের উত্থান কেউ রুখতে পারবে না। কারণ মুসলমানদের আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন অঢেল সম্পদ। ফলে প্রাকৃতিক সম্পদে মুসলিম বিশ্ব খুবই সমৃদ্ধ। একা সৌদি আরব প্রাকৃতিক সম্পদের দিক দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয়। তুরস্কের রয়েছে কৃষ্ণ সাগর জুড়ে তেল ও গ্যাসের মজুদ। গোটা দুনিয়ার 80 ভাগ তেল ও গ্যাস কয়লা 65 ভাগ স্বর্ণ রাবার 100 ভাগ খেজুরের মজুদ মুসলিম দেশের হাতে। কাতারে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মুসলিম দেশ। যার মাথাপিছু আয় 88 হাজার ডলার। প্রাকৃতিক সম্পদের দিক দিয়ে পৃথিবীর প্রথম দশটি দেশের মধ্যে রয়েছে মুসলিম বিশ্বের তিনটি দেশ। সেগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, বিশ্বের তৃতীয়, ইরান পঞ্চম। ও ইরাক নবম, তেলের প্রমাণিত রিজার্ভ এর ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম দশ টি দেশের মধ্যে 60 টি মুসলিম দেশ। সেগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, কুয়েত, আরব আমিরাত, লিবিয়া ও নাইজেরিয়া, তেল রপ্তানিকারক দেশের সংস্থা ওপেক ভুক্ত 12 টি দেশের তেল রয়েছে 81 শতাংশ। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রয়েছে 66 শতাংশ। কাজেই মুসলিম বিশ্ব তেল সম্পদের সর্বাধিক সমৃদ্ধ। আর পৃথিবীর বর্তমান অর্থ ব্যবস্থা অনেকটাই তেল নির্ভর। গ্যাস মজুদের দিক দিয়ে বিশ্বের প্রথম দশটি দেশের মধ্যে থেকে 6 টি মুসলিম দেশ। এর মধ্যে ইরান, কাতার, তুর্কিমিনিস্তান, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া, আলজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, অন্যতম কাজেই গ্যাসের দিক থেকেও মুসলিম দেশের অবস্থা খুবই সমৃদ্ধ। কয়লা মজুদ এ শীর্ষ 30 টি দেশের মধ্যে 9 টি মুসলিম দেশ। এর মধ্যে কাজাখস্তান, ইন্দোনেশিয়া, বসনিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, অন্যতম কাজী কয়লার দিক থেকে মুসলিম বিশ্ব সমৃদ্ধ। তাছাড়া অপরাপর প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন স্বর্ণ ও রৌপ্য ইউরেনিয়াম মজুদের দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই মুসলিম বিশ্ব। পৃথিবীর চল্লিশটি দেশের মধ্য 9 টি মুসলিম দেশ তুরস্ক, সৌদি আরব, লেবানন, এর অন্যতম।
শীর্ষ রুপ্য উৎপাদক 20 টি দেশের মধ্যে চারটি মুসলিম দেশ। ইউরেনিয়াম রিজার্ভ শীর্ষ 5 টি দেশের মধ্যে দুটি মুসলিম দেশ। কাজাখস্তান ও নাইজার। শীর্ষ ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী ছয়টি দেশের মধ্যে মুসলিম দেশ দুটি কাজাকাস্তান ও নাইজার।
রাবার উৎপাদনের দিক দিয়েও ইন্দোনেশিয়া দ্বিতীয়তঃ মালয়েশিয়া তৃতীয় নাইজেরিয়া নবম। সুতরাং প্রাকৃতিক সম্পদের দিক দিয়ে মুসলিম দেশগুলো যে পিছিয়ে নেই তা সহজেই আমরা বুঝতে পারি। জিডিপি হিসেবে বিশ্বের প্রথম সাতটি দেশের মধ্যে মুসলিম দেশ 15 টি।
আইএফ এর হিসাব অনুযায়ী উচ্চ আয়ের দেশ দশটির মধ্যে চারটি মুসলিম দেশ। সেগুলো হচ্ছে কাতার, ব্রুনাই, কুয়েত ও আরব আমিরাত।
তিন।
ভৌগলিক অবস্থান ও ত্যাগী রণকৌশল জন সংখ্যার দিক দিয়ে মুসলিম বিশ্ব পিছিয়ে নেই। বিষয়টি বারবার প্রমাণিত হয়েছে ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় মুসলমানদের রয়েছে বিশ্বের মধ্যস্থলে অবস্থিত ভূমি। সৌদি আরব তৎ পার্শ্ববর্তী এলাকা। রয়েছে তুরস্ক, নেপোলিয়নের ভাষায় যাত তাবৎ বিশ্বের জন্য রাজধানী হওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান।
তুরস্ক এমন একটি স্থান যার ভূমি পড়েছে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশ এখানে বসে সহজেই ইউরোপ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর উপর নজরদারি করা যায। ইতিপূর্ব কনস্টানেপোলকে রাজধানী করে তুর্কি সাম্রাজ্য এশিয়া মাইনর দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ ও দক্ষিণ আফ্রিকা মহাদেশের 52 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা যেখানে আজকের পৃথিবীর 42 টি দেশের অবস্থান তা একই সময় শাসন করেছে। মুসলমানদের হাতে আছে আফগান ভূমি যা ঐতিহ্যগতভাবে যুদ্ধের উপযুক্ত স্থান। একসময় গজনী মুসলিম বাহিনী কাছে পরাজিত হয়েছিল তাতার দুর্ধর্ষ বাহিনী। দ্বিতীয়তঃ আরেকবার তাতারি আক্রমণ করেছিল কাবুলে সেখানেও তারা পরাজয় বরণ করেছিল। ইংরেজরা অর্ধ পৃথিবী শাসন করেও তারা আফগান বহুবার পরাস্ত হয়েছে। ভারত উপমহাদেশ বিজয় ও এখানে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম ছিল তাদেরই অবদান। রাশিয়া ও প্রচুর মার কেয়েছেএ ভূমিতে আফগান এর হাতে। সুতরাং বিশ্ব রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমি মুসলমানদের হাতে। মুসলমানদের রয়েছে মিশর ভূমি যার সাথে জড়িত মুসলিম ওমর নায়ক ও বিজাতিদের ইতিহাস। নাজিম উদ্দিন, সালাহউদ্দিন আইয়ুবী , রুকনুদ্দিন, বাইবাস ও সাইফুদ্দিন কুতজ, নাজিম উদ্দিন যার হাতে গাজার যুদ্ধে সম্মিলিত খ্রিস্টান বাহিনী এবং এরপর ফ্রান্সের রাজা লুইসও তার বাহিনী পরাজিত হয়। এ মিশরকে কেন্দ্র করেই সালাহউদ্দিন আইয়ুবী থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস উদ্ধার করেছিলেন। সাইফুদ্দিন এবং তার ভয়ংকর সেনাপতি রুকনুদ্দিন বাইবার্সর হাতে ফিলিস্তিনিদের আইনে সালুতে চূড়ান্ত পরাজয় বরণ করে তাতার বাহিনী। যাদের বিষয়ে প্রবাদ বাক্য ছিল। যদি কেউ বলে তাতারীরা পরাজয় বরণ করেছে তবে তুমি তা বিশ্বাস করো না।
সিরিয়া:
মুসলমানদের ভৌগলিক সীমানায় রয়েছে সিরিয়ার অবস্থান। যদিও শত্রুদের ষড়যন্ত্র আজ তা টুকরো হয়ে গেছে। কিন্তু এক কালে সিরিয়া ফিলিস্তিন জর্ডান এবং লেবানন নিয়েই ছিল শাম বা সিরিয়া। এই সিরিয়াতে হয়েছে মানব সভ্যতার চূড়ান্ত সংঘাত। কখনো পারস্যের সাথে মিলিত রোমানদের সংঘাত। কখন ও খ্রিস্টানদের সাথে রোমানদের সংঘাত। এ ভূমিতেই মুসলিম বীর সালাউদ্দীন আইউব ইউরোপীয় বাহিনীকে পরাজিত করে মুসলমানদের হৃতগৌরব উদ্ধার করেছেন। মুসলিম ইহুদী খ্রিস্টান এ তিনটি ধর্মের লালনভূমি ও এ সিরিয়া। তৎকালীন হিজাজের গভর্নর শরীফ হোসাইন এর গাদ্দারী এবং আরবদের সহায়তা পেয়ে বৃটেনে ও ফ্রান্স সিরিয়া ফিলিস্তিন ইরাক জর্ডান লেবানন দখল কর নেয়। পরে ভাগবাটোয়ারায় ফিলিস্তিন ব্রিটেন এবং সিরিয়া ফ্রান্সের দখলে চলে যায়। আরএ ভূমিতেই ঘটবে ইমাম মাহদী ও ঈসা আলাইহিস সালাম এর আগমন। এবং চূড়ান্ত খেলাফত কায়েমের যুদ্ধ।
অতএব নানাবিধ কারণে বৃহত্তর সিরিয়া যে একটি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মুসলমানদের মধ্যে রয়েছে কুর্দি সম্প্রদায় যুদ্ধ হিসেবে এ জাতীর একটা ঐতিহ্য আছে। সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ছিলেন কুর্দি বংশভূত। এবীর জাতিকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য এদের অধ্যুষিত এলাকার কিছু অংশ ইরানে, কিছু ইরাকে, কিছু তুরস্কে, বিভক্ত করে ভৌগলিক ও মনস্তান্তিক ভাবে এদের দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ওরা এক সময় যেমন ইউরোপের সাথে যুদ্ধ করে খ্যাতি অর্জন করেছিল তেমনি রাশিয়া ও এ অঞ্চলে এদের সঙ্গে লড়াই করে পরাজয় বরণ করেছিল।
চার।
মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এরশাদ হচ্ছে আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মাঝে পালাক্রমে পরিবর্তন করে থাকি।( সূরা আল ইমরান)
এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় মানব জাতির উত্থান পতন আল্লাহ তাআলার এক অমোঘ বিধান এমন কি বাস্তবে ও তাই ঘটে চলেছে এর কারণেই আমরা দেখি পৃথিবীতে রয়েছে শত শত জাতির উত্থান পতনের ইতিহাস। অনেক জাতি উদান হওয়ার পর তারা এমন নির্মূল হয়েছে যে এখন শুধু তাদের নাম নিশানাই রয়ে গেছে। কিন্তু তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু মুসলমান এর ব্যতিক্রম আল্লামা ইকবাল বলেন। ইউনান ও মিশর রুম সব মিটগােয় জাহাজে আবতক মগর হে বাকি নাম ও নিশানা হামারা। যেমন রোম পারস্য ইউনান গ্রীক জার ও তাতার এসব সভ্যতার উত্থান হওয়ার পর তারা পরে আর কোনদিন উঠে দাঁড়াতে পারেনি। মুসলিম জাতি সাময়িকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলেও অনেক সময় তা কাটিয়ে উঠেছে। যেমন ক্রুসেড যুদ্ধ গুলোতে মুসলমানগন প্রাথমিকভাবে বিপর্যস্ত হলেও পরে এ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে। বিপুল শক্তি নিয়ে মুসলিম রাজ্য গুলোকে তছনছ করে দেওয়া তাতারীরা ও এক সময় মুসলমানদের কাছে পরাস্ত হয়েছে। প্রথম বিশ্ব যুদ্বোওর ব্রিটেন ফানস ও ইতালি কর্তৃক মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যাওয়ার পর আবার তা স্বাধীনতা লাভে সক্ষম হয়েছে।
নবীজি উম্মতের নিরাপত্তার জন্য যেসব দোয়া করেছেন এর একটি ছিল। হে আল্লাহ! তাদের উপর যেন শত্রুপক্ষের কাউকে চাপিয়ে না দেন যে তাদের সমূলে ধ্বংস করবে তখন আল্লাহ বলেন আমি তাদের উপর শত্রুপক্ষের কাউকে চাপিয়ে দিব না। যদিও ওরা সকলে একত্রিত হয় সুতরাং মুসলমানগন সমূলে ধ্বংস হবে না। তাই একটি বাস্তব সত্য অতীতে এর ভুরি ভুরি নজির রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নেতৃত্বে, ক্রুসেডদের থেকে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর নেতৃত্বে, তাতারীদের থেকে সাইফুদ্দিন কুতুজ ও রুকনুদ্দিন বাইবার্স এর নেতৃত্বে ও ঐক্য হয়ে তারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। সতরা ঐক্য ও যোগ্য নেতৃত্বের এ দুটো গুন অর্জন করতে পারলে তাদের বিজয় যে সুনিশ্চিত তা একটি বহু পরীক্ষিত বিষয়। আল্লাহ মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও যোগ্য নেতৃত্ব দান করুন।
আমিন।
Comment