বিসমিল্লাহ - ওয়াস সালাতু আস সালাম আলা রাসুলিল্লাহ
জাতি হিসেবে আমরা একসময়ে নিশ্চয়ই মানবিকতা, শিক্ষা এবং সভ্যতার দিক থেকে সবেচেয়ে উন্নত ছিলাম, যখন আমরা ইসলামের মধ্যে ছিলাম। এটা শুনলে আজ মুসলিম ঘরের অনেক সন্তান হেসে উড়িয়ে দেয় আমি তাদের ব্যাপারে বলব তারা উদ্ধত, এবং বঞ্চিত; ইসলামের স্পর্শ থেকে। অনেকে ভদ্র ভাবে চুপ থাকে আর তারা আসলে ভদ্র তাই চুপ থাকাকেই শ্রেয় মনে করে। আর অনেকে বিশ্বাস করতে চায় কিন্তু পারেনা তাদের ব্যাপারেই আমার এই লেখা। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য এই না যে আমি আমাদের গৌরবজ্জল ইতিহাসের উপরে অনেক অনেক আলোচনা করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে চাই, বরং কিছুটা ইতিহাস এজন্য সামনে নিয়ে আসা যেন তা চিন্তাশীলদের জন্য কিছু চিন্তার খোরাক জোগায়। আজ আমরা মুসলিম হিসেবে যতটুকু ইসলামের ইতিহাস জানি দুঃখজনক ভাবে সত্য যে অনেক কাফের আমাদের চেয়ে এই ব্যাপারে বেশি জানে! তারা ইসলাম কে এই জন্য জানার চেস্টা করেনা যে তারা মুসলিম হয়ে যাবে বা তারা এই ধর্মের অনুসারী হবে বরং তারা গৌরবময় ইসলামের ব্যাপারে আরো বেশি জানতে চায়। আমরা নিজেরা আজ আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্মৃত হয়ে গেছি। কবে কোথায় ঠিক কোন জায়গা থেকে কি কারনে আমাদের এই অধঃপতন শুরু হয়েছিল তা অন্য আরেকদিনের আলোচনা হতে পারে, তবে এতটুকু নিশ্চিত যে আমরা যেদিন থেকে আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে গেছিলাম সেদিন থেকেই আমাদের অধঃপতন শুরু। আর হ্যা, এখানে একটি বিষয় অবশ্যই উল্লেখ করা দরকার - যখন বলা হয় দ্বীন বা ইসলাম এর অর্থ আজকের দিনের পশ্চিমা ইসলাম (islam of west) নয়, বরং এই ইসলাম অর্থ রাসুল সাঃ এবং তাঁর সাহাবী গন যে ইসলাম পালন করেছেন প্রচার করেছেন এবং যেই ইসলামের উপরে তাঁরা জীবিত ছিলেন।
ইসলাম কে পরিত্যাগ করার কারনে, ইসলামের ব্যাপারে অবহেলা এবং উদাসিনতার কারনে আমাদের কি ক্ষতি হয়েছে তা প্রকাশ করা অসম্ভব! শুধু এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, আজ সারা দুনিয়ায় মুসলিম উম্মাহ'র যে করুন অবস্থা এর মূল কারন আমরা ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছি। এখানে আমাদের যেমন উদাসীনতা এবং গাফেলতি আছে তেমনি কাফেরদের চেষ্টারও কোন কমতি ছিলোনা। এখনো নাই। এই দুই মিলেই আমাদের আজ এই অবস্থা! আল্লাহ আমাদের মাফ করুন, আমিন।
ঠিক যে বিষয়টি আজকে বলার উদ্দেশ্য তা হচ্ছে -
প্রতিনিয়ত ইসলাম কে বিভিন্ন ভাবে আঘাত করা হয়। এই আঘাতের একটি ধরন হচ্ছে আমাদের ঈমান আকিদাহ এবং আদর্শের উপরে আঘাত। তারা যা করে তা হচ্ছে প্রতিনিয়ত সম্ভাব্য সমস্ত রকম পদ্ধতিতে তারা আমাদের ঈমান এবিং আকিদাহ এর উপরে আঘাত করতে থাকে। কখনো আপনি তা বুঝতে পারবেন, অধিকাংশ সময়েই পারবেন না। কখনো এটা সরাসরি আঘাত যেমন বাকস্বাধীনতার নামে রাসুল সাঃ কে কটুক্তি করা আবার কখনো এটা সরাসরি নয় যেমন সংস্কৃতির নামে আমাকে এবং আপনাকে দ্বীনের মৌলিক আদর্শ থেকে এমন বিচ্যুত করে দেয় যে লিভ টুগেদার বা সমকামিতার মত বিষয় গুলো ব্যাক্তিস্বাধীনতার নামে প্রসার পায়। আবার কখনো তারা আমাদেরকে অনেক জরুরী বিষয় থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অপ্রয়োজনীয় কোন বিষয়ে ব্যাস্ত করে দেয়। যেমন জিহাদের ব্যাপারে মনোযোগ নষ্ট করে দিয়ে মাজহাব নিয়ে ব্যাস্ত করে দেয়া।
প্রথম বিষয় টি হচ্ছে সরাসরি আমাদের ঈমান এবং আকিদাহ এর উপরে আক্রমন। এই বিষয়টি মূলত দুই ভাবে ঘটে।
এক - তারা অনবরত আমাদের দিকে বিভিন্ন সন্দেহ ছুঁড়ে দিতে থাকে। আমাদের মনে অসংখ্য সন্দেহ তৈরি করতে পারাই তাদের মূল লক্ষ্য। আর বিষয়টি এমন না যে - কিছু মানুষ এই সন্দেহ গুলো তৈরি করে। বরং পুরা একটি সমাজ ব্যাবস্থা, একটি রাস্ট্র ব্যাবস্থা, শিক্ষা ব্যাবস্থা, একটি পুরা সিস্টেম এই কাজ করতে থাকে। তাদের এই সমন্বিত টিম আপনাকে বলবে আরে এটা কি ইসলামে আছে? কই কুরআনের কোন জায়গায় লেখা আছে দেখাও? তাদের আলেম রা আপনার সামনে সুন্দর লেবাসে এসে আপনাকে কুরআন থেকেই ব্যাখ্যা দিয়ে দিবে, তাদের মিডিয়া অনবরত আপনাকে সন্দিহান করে তুলবে। তাদের বুদ্ধিজীবীরা আপনার মাথায় অসংখ্য প্রশ্ন সৃষ্টি করবে।
এগুলো করে তাদের লাভ কি? তারা চায় আপনার এবং আমার বিশ্বাসের ভিত কে নড়বড় করে দিতে। কারন সেটা করতে পারলেই তারা তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে। ঈমানই হচ্ছে তাদের পথে একমাত্র অন্তরায়। তারা খুব ভালো করেই জানে আমি কিংবা আপনি পুরা কুরআন পড়িনি, আমি বা আপনি প্রতিটি আয়াতের অর্থ শানে নুযূল এবং এগুলোর প্রয়োগ বিস্তারিত জানিনা। আর তারা এই সুযোগটাই কাজে লাগায়। তারা জানে আমরা অন্ধ হয়ে আছি আর এজন্য তারা যেদিক দিয়ে ইচ্ছা আমাদের কে আঘাত করে।
কিন্তু আমি তো চুপচাপ এই আঘাত সয়ে নিজের ঈমান বিক্রি করে দেয়ার জন্য আসিনি, না আমাদের অবস্থান তেমন হওয়া উচিত। দেখেন কাফেররা তাদের পরিকল্পনায় আপাতত মোটামুটি সফল কিন্তু তারা সামগ্রিক ভাবে পুরাপুরি ব্যার্থ। কারন তারা একটি বিষয় হয় জানে না অথবা জানলেও উপেক্ষা করা ছাড়া তাদের কোন গতি নাই সেটি হচ্ছে - আল্লাহ মুমিনদের সাথেই আছেন। আর আল্লাহর এই কথার উপরে বিশ্বাস করেই আমার এই লেখা - এত সহজে কাফেরদের ছেড়ে দেয়ার বা তাদের চালে পা দেয়ার কোন কারন নাই।
হ্যা আমরা নিজেরাই নিজেদের উপরে জুলুম করেছি, কিন্তু ইনশাআল্লাহ এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি। কাফেররা কিংবা তাদের দালালরা আমাদের সামনে বিক্ষিপ্ত সন্দেহ ছুঁড়ে দেয়। যেগুলো অধিকাংশই প্রেক্ষাপট ছাড়া। কিংবা তারা কোন একটি বিষয়ে আগে থেকে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে এর পরে আমাদের কে সেই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। এমন ক্ষেত্রে আমরা অধিকাংশই যা করি তা হচ্ছে, আমি নিজে কি মনে করি তা দিয়ে কাজ চালানোর চেস্টা করি। অথবা কাফেররা আমাদের মুখ থেকে যা শুনতে চায় কোন রকমে সেরকম কিছু একটা শুনিয়ে আপাতত তাদের হাত থেকে নিজেকে বাচিয়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি। দুটিই ভুল।
প্রথম কথা - আপনাকে মনে রাখতে হবে যখন আপনি একজন কাফের বা তার দালালদের কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তখন তার অবস্থান থেকে আপনি উত্তর দিলে হবে না। বরং আপনাকে আপনার নিজের অবস্থান থেকে উত্তর দিতে হবে। একজন কাফের চাইবে আপনি তার কথায় সন্দিহান হয়ে তার জায়গায় নেমে উত্তর দেন তাহলেই আপনি হেরে গেলেন। বরং আপনি আপনার ঈমানের জায়গায় স্থির থেকে উত্তর দেন। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে অই শয়তানরা আপনার চেয়েও হয়ত দ্বীনের ব্যাপারে কম জানে কিন্তু হয়তা তারা আপনাকে এমন ব্যাপারে প্রশ্ন করেছে যে ব্যাপারে আপনার জ্ঞান নাই। আপনার এই পরাজয়ের উপরে ভিত্তি করে তারা আদর্শ হিসেবে ইসলাম কে ভুল প্রমান করতে চাইবে। এটিই তাদের ফাদ। কিন্তু আপনি টেবিল ঘুরিয়ে দেন এবং তাকে আপনার ফাঁদে টেনে নিয়ে আসেন।
কেউ যদি আপনাকে প্রশ্ন করে -
ইসলাম জঙ্গিবাদ কে সমর্থন করে - হ্যা অথবা না?
এখন এই কথার ব্যাপারে আপনার যদি পূর্ণ জ্ঞান থাকে আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু যদি না থাকে তবে এই প্রশ্নের ফাঁদে পা দেয়ার আগে আপনি তার মানসিক অবস্থান চিন্তা করে নেন। সে চাচ্ছে আপনি স্বীকার করেন ইসলাম জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে তাহলেই সে আপনাকে পরের ফাঁদে ফেলতে পারবে।
বরং আপনি তার দিকে টেবিল ঘুরিয়ে দেন, জিজ্ঞেস করেন - আপনি কি জঙ্গিবাদ সম্পর্কে জানতে চান নাকি ইসলাম সম্পর্কে? যদি হয় জঙ্গিবাদ তবে তার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই আমি ইসলাম ছাড়াই জঙ্গিবাদ সম্পর্কে আরো অনেক অনেক বেশি বলতে পারব। আমার উত্তর শুনার আগে আপনি ই বরং আমাকে বলেন জঙ্গিবাদ এর সংজ্ঞা কি? আপনি যা জানেন সেই সংজ্ঞার উপরে ভিত্তি করে আমি আপনাকে জঙ্গিবাদের ব্যাপারে বলব। আর আপনি যদি ইসলাম সম্পর্কে জানতে চান তবে আপনার প্রশ্ন টা আবার করুন কারন আপনার প্রশ্ন সঠিক ছিলোনা।
মনে রাখবেন তার ভরসা যেমন প্রতারনা আপনার ভরসা ঈমান। সে যেমন কোন অবস্থাতেই তার প্রতারনা কে ছাড়তে চাইবেনা। আপনি তেমনি কোন অবস্থাতেই আপনার ঈমান কে ছাড়তে চাইবেন না। সে আপনাকে তার প্রতারনার দিকে টানতে চাইবে আপনি তাকে আপনার ঈমানের দিকে টেনে নিয়ে আসেন। এবং আপনি যখন তাকে ঈমানের দিকে টানবেন সে তেমনি দিশেহারা বোধ করবে যেমন আপনি তার প্রতারনার সামনে করেন।
আরেকটি বিষয় কখন কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আর কখন দিতে হবেনা এটিও আমাদের শিখতে হবে। আপনার কাছে জানতে চাইলো ইসলাম নারীদের বোরকা পরিয়ে নারীদের অধিকার নষ্ট করে। আপনি বলেন -
আপনি কি বোরকার ব্যাপারে আগ্রহী নাকি নারীদের অধিকারের ব্যাপারে। সে যদি বলে নারী অধিকারের ব্যাপারে। আপনি তাকে জিজ্ঞেস করেন যেহেতু ইসলাম নারীদের কে কেমন অধিকার দেয় এই ব্যাপারে আপনার যথেষ্ট আগ্রহ দেখা যাচ্ছে তাহলে আপনি বলেন ইসলামে সম্পদ বন্টনে নারীর অধিকার কতটুকু। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনি সঠিক উত্তর পাবেন না। এবার তাকে বলেন, আপনি যদি সত্যি ইসলামে নারীর অধিকার সম্পর্কে জানতে চান তবে আগে এই ব্যাপারে জেনে আসেন এবং একই সাথে ইসলাম ব্যাতিত আর কোন ধর্ম এই ব্যাপারে আর কি বলেছে তাও জেনে আসেন। তখন আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিব।
তাদের ২য় পদ্ধতি
অনেক সময়ে তারা আমাদের কে ফালতু বিবাদের জড়িয়ে ফেলতে চাইবে, যেন আমাদের যুবকদের মেধা সামর্থ্য সময় সবচেয়ে উপযোগী স্থানে ব্যায় না হয়। তাই আমাদের এটিও জানা জরুরী যে এই মুহূর্তে আমার জন্য জরুরী কি? আপনাকে এটা সুস্পষ্ট ভাবে জানতে হবে যে আমি এবং আপনি আমরা সবাই ঈমান বনাক কুফর এর যুদ্ধে লিপ্ত আছি। এখানে অন্য ছোট বিষয়ে ব্যাস্ত হওয়া পরাজয় ছাড়া আর কিছুই না। আপনি যখন বক্সিং রিং এ নেমে গেছেন, আপনার প্রতিপক্ষ আপনাকে একের পর এক ঘুষি মেরেই যাচ্ছে এমন অবস্থায় রেফারি যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে রিং এর নিয়ম কি কি? আপনার উচিত হবে তার পেটে আগে একটা লাথি মারা। কারন নিঃসন্দেহে সে আপনার মনোযোগ নষ্ট করার কাজে ব্যাস্ত। কাফেররা শুধু নিজেরাই মাঠে নেমেছে এমন না, বরং তাদের দালালরা ও এ কাজে ব্যাস্ত। আর তাদের দালালরা সংখ্যায় অনেক। আপনি হয়ত অধিকাংশকেই পাবেন তাদের দিকে ঝুকে পড়তে - কিন্তু তাই বলে আমার কিংবা আপনার সেদিকে ঝুকে পড়া যাবেনা।
কারন আল্লাহ বলেন -
وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلاَّ الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلاَّ يَخْرُصُونَ
আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে।
আর সবশেষে - যে বিষয়ের প্রতি অবহেলা আর গাফেলতির কারনে আমাদেরেই দুর্দশা সেই দ্বীনের ব্যাপারে আমাদের যত্নবান হতে হবে। অতিদ্রুত আমাদেরকে আবার দ্বীনের মধ্যেই ফিরে যেতে হবে। কারন এই দ্বীনই হচ্ছে আমাদের সুরক্ষা বর্ম। উমর রাঃ বলেছিলেন আমরা ছিলাম এক লাঞ্চিত জাতি, এর পরে আল্লাহ আমাদের কে এই দ্বীনের দ্বারা সম্মানিত করেছেন। আর আজ যদি আমরা এই দ্বীন ব্যাতিত অন্য কিছুর মাধ্যমে আমাদের সম্মান খুজার চেষ্টা করি তাহলে আল্লাহ আমাদের কে আবার লাঞ্চিত করবেন।
জাতি হিসেবে আমরা একসময়ে নিশ্চয়ই মানবিকতা, শিক্ষা এবং সভ্যতার দিক থেকে সবেচেয়ে উন্নত ছিলাম, যখন আমরা ইসলামের মধ্যে ছিলাম। এটা শুনলে আজ মুসলিম ঘরের অনেক সন্তান হেসে উড়িয়ে দেয় আমি তাদের ব্যাপারে বলব তারা উদ্ধত, এবং বঞ্চিত; ইসলামের স্পর্শ থেকে। অনেকে ভদ্র ভাবে চুপ থাকে আর তারা আসলে ভদ্র তাই চুপ থাকাকেই শ্রেয় মনে করে। আর অনেকে বিশ্বাস করতে চায় কিন্তু পারেনা তাদের ব্যাপারেই আমার এই লেখা। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য এই না যে আমি আমাদের গৌরবজ্জল ইতিহাসের উপরে অনেক অনেক আলোচনা করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে চাই, বরং কিছুটা ইতিহাস এজন্য সামনে নিয়ে আসা যেন তা চিন্তাশীলদের জন্য কিছু চিন্তার খোরাক জোগায়। আজ আমরা মুসলিম হিসেবে যতটুকু ইসলামের ইতিহাস জানি দুঃখজনক ভাবে সত্য যে অনেক কাফের আমাদের চেয়ে এই ব্যাপারে বেশি জানে! তারা ইসলাম কে এই জন্য জানার চেস্টা করেনা যে তারা মুসলিম হয়ে যাবে বা তারা এই ধর্মের অনুসারী হবে বরং তারা গৌরবময় ইসলামের ব্যাপারে আরো বেশি জানতে চায়। আমরা নিজেরা আজ আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্মৃত হয়ে গেছি। কবে কোথায় ঠিক কোন জায়গা থেকে কি কারনে আমাদের এই অধঃপতন শুরু হয়েছিল তা অন্য আরেকদিনের আলোচনা হতে পারে, তবে এতটুকু নিশ্চিত যে আমরা যেদিন থেকে আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে গেছিলাম সেদিন থেকেই আমাদের অধঃপতন শুরু। আর হ্যা, এখানে একটি বিষয় অবশ্যই উল্লেখ করা দরকার - যখন বলা হয় দ্বীন বা ইসলাম এর অর্থ আজকের দিনের পশ্চিমা ইসলাম (islam of west) নয়, বরং এই ইসলাম অর্থ রাসুল সাঃ এবং তাঁর সাহাবী গন যে ইসলাম পালন করেছেন প্রচার করেছেন এবং যেই ইসলামের উপরে তাঁরা জীবিত ছিলেন।
ইসলাম কে পরিত্যাগ করার কারনে, ইসলামের ব্যাপারে অবহেলা এবং উদাসিনতার কারনে আমাদের কি ক্ষতি হয়েছে তা প্রকাশ করা অসম্ভব! শুধু এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, আজ সারা দুনিয়ায় মুসলিম উম্মাহ'র যে করুন অবস্থা এর মূল কারন আমরা ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছি। এখানে আমাদের যেমন উদাসীনতা এবং গাফেলতি আছে তেমনি কাফেরদের চেষ্টারও কোন কমতি ছিলোনা। এখনো নাই। এই দুই মিলেই আমাদের আজ এই অবস্থা! আল্লাহ আমাদের মাফ করুন, আমিন।
ঠিক যে বিষয়টি আজকে বলার উদ্দেশ্য তা হচ্ছে -
প্রতিনিয়ত ইসলাম কে বিভিন্ন ভাবে আঘাত করা হয়। এই আঘাতের একটি ধরন হচ্ছে আমাদের ঈমান আকিদাহ এবং আদর্শের উপরে আঘাত। তারা যা করে তা হচ্ছে প্রতিনিয়ত সম্ভাব্য সমস্ত রকম পদ্ধতিতে তারা আমাদের ঈমান এবিং আকিদাহ এর উপরে আঘাত করতে থাকে। কখনো আপনি তা বুঝতে পারবেন, অধিকাংশ সময়েই পারবেন না। কখনো এটা সরাসরি আঘাত যেমন বাকস্বাধীনতার নামে রাসুল সাঃ কে কটুক্তি করা আবার কখনো এটা সরাসরি নয় যেমন সংস্কৃতির নামে আমাকে এবং আপনাকে দ্বীনের মৌলিক আদর্শ থেকে এমন বিচ্যুত করে দেয় যে লিভ টুগেদার বা সমকামিতার মত বিষয় গুলো ব্যাক্তিস্বাধীনতার নামে প্রসার পায়। আবার কখনো তারা আমাদেরকে অনেক জরুরী বিষয় থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অপ্রয়োজনীয় কোন বিষয়ে ব্যাস্ত করে দেয়। যেমন জিহাদের ব্যাপারে মনোযোগ নষ্ট করে দিয়ে মাজহাব নিয়ে ব্যাস্ত করে দেয়া।
প্রথম বিষয় টি হচ্ছে সরাসরি আমাদের ঈমান এবং আকিদাহ এর উপরে আক্রমন। এই বিষয়টি মূলত দুই ভাবে ঘটে।
এক - তারা অনবরত আমাদের দিকে বিভিন্ন সন্দেহ ছুঁড়ে দিতে থাকে। আমাদের মনে অসংখ্য সন্দেহ তৈরি করতে পারাই তাদের মূল লক্ষ্য। আর বিষয়টি এমন না যে - কিছু মানুষ এই সন্দেহ গুলো তৈরি করে। বরং পুরা একটি সমাজ ব্যাবস্থা, একটি রাস্ট্র ব্যাবস্থা, শিক্ষা ব্যাবস্থা, একটি পুরা সিস্টেম এই কাজ করতে থাকে। তাদের এই সমন্বিত টিম আপনাকে বলবে আরে এটা কি ইসলামে আছে? কই কুরআনের কোন জায়গায় লেখা আছে দেখাও? তাদের আলেম রা আপনার সামনে সুন্দর লেবাসে এসে আপনাকে কুরআন থেকেই ব্যাখ্যা দিয়ে দিবে, তাদের মিডিয়া অনবরত আপনাকে সন্দিহান করে তুলবে। তাদের বুদ্ধিজীবীরা আপনার মাথায় অসংখ্য প্রশ্ন সৃষ্টি করবে।
এগুলো করে তাদের লাভ কি? তারা চায় আপনার এবং আমার বিশ্বাসের ভিত কে নড়বড় করে দিতে। কারন সেটা করতে পারলেই তারা তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে। ঈমানই হচ্ছে তাদের পথে একমাত্র অন্তরায়। তারা খুব ভালো করেই জানে আমি কিংবা আপনি পুরা কুরআন পড়িনি, আমি বা আপনি প্রতিটি আয়াতের অর্থ শানে নুযূল এবং এগুলোর প্রয়োগ বিস্তারিত জানিনা। আর তারা এই সুযোগটাই কাজে লাগায়। তারা জানে আমরা অন্ধ হয়ে আছি আর এজন্য তারা যেদিক দিয়ে ইচ্ছা আমাদের কে আঘাত করে।
কিন্তু আমি তো চুপচাপ এই আঘাত সয়ে নিজের ঈমান বিক্রি করে দেয়ার জন্য আসিনি, না আমাদের অবস্থান তেমন হওয়া উচিত। দেখেন কাফেররা তাদের পরিকল্পনায় আপাতত মোটামুটি সফল কিন্তু তারা সামগ্রিক ভাবে পুরাপুরি ব্যার্থ। কারন তারা একটি বিষয় হয় জানে না অথবা জানলেও উপেক্ষা করা ছাড়া তাদের কোন গতি নাই সেটি হচ্ছে - আল্লাহ মুমিনদের সাথেই আছেন। আর আল্লাহর এই কথার উপরে বিশ্বাস করেই আমার এই লেখা - এত সহজে কাফেরদের ছেড়ে দেয়ার বা তাদের চালে পা দেয়ার কোন কারন নাই।
হ্যা আমরা নিজেরাই নিজেদের উপরে জুলুম করেছি, কিন্তু ইনশাআল্লাহ এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি। কাফেররা কিংবা তাদের দালালরা আমাদের সামনে বিক্ষিপ্ত সন্দেহ ছুঁড়ে দেয়। যেগুলো অধিকাংশই প্রেক্ষাপট ছাড়া। কিংবা তারা কোন একটি বিষয়ে আগে থেকে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে এর পরে আমাদের কে সেই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। এমন ক্ষেত্রে আমরা অধিকাংশই যা করি তা হচ্ছে, আমি নিজে কি মনে করি তা দিয়ে কাজ চালানোর চেস্টা করি। অথবা কাফেররা আমাদের মুখ থেকে যা শুনতে চায় কোন রকমে সেরকম কিছু একটা শুনিয়ে আপাতত তাদের হাত থেকে নিজেকে বাচিয়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি। দুটিই ভুল।
প্রথম কথা - আপনাকে মনে রাখতে হবে যখন আপনি একজন কাফের বা তার দালালদের কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তখন তার অবস্থান থেকে আপনি উত্তর দিলে হবে না। বরং আপনাকে আপনার নিজের অবস্থান থেকে উত্তর দিতে হবে। একজন কাফের চাইবে আপনি তার কথায় সন্দিহান হয়ে তার জায়গায় নেমে উত্তর দেন তাহলেই আপনি হেরে গেলেন। বরং আপনি আপনার ঈমানের জায়গায় স্থির থেকে উত্তর দেন। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে অই শয়তানরা আপনার চেয়েও হয়ত দ্বীনের ব্যাপারে কম জানে কিন্তু হয়তা তারা আপনাকে এমন ব্যাপারে প্রশ্ন করেছে যে ব্যাপারে আপনার জ্ঞান নাই। আপনার এই পরাজয়ের উপরে ভিত্তি করে তারা আদর্শ হিসেবে ইসলাম কে ভুল প্রমান করতে চাইবে। এটিই তাদের ফাদ। কিন্তু আপনি টেবিল ঘুরিয়ে দেন এবং তাকে আপনার ফাঁদে টেনে নিয়ে আসেন।
কেউ যদি আপনাকে প্রশ্ন করে -
ইসলাম জঙ্গিবাদ কে সমর্থন করে - হ্যা অথবা না?
এখন এই কথার ব্যাপারে আপনার যদি পূর্ণ জ্ঞান থাকে আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু যদি না থাকে তবে এই প্রশ্নের ফাঁদে পা দেয়ার আগে আপনি তার মানসিক অবস্থান চিন্তা করে নেন। সে চাচ্ছে আপনি স্বীকার করেন ইসলাম জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে তাহলেই সে আপনাকে পরের ফাঁদে ফেলতে পারবে।
বরং আপনি তার দিকে টেবিল ঘুরিয়ে দেন, জিজ্ঞেস করেন - আপনি কি জঙ্গিবাদ সম্পর্কে জানতে চান নাকি ইসলাম সম্পর্কে? যদি হয় জঙ্গিবাদ তবে তার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই আমি ইসলাম ছাড়াই জঙ্গিবাদ সম্পর্কে আরো অনেক অনেক বেশি বলতে পারব। আমার উত্তর শুনার আগে আপনি ই বরং আমাকে বলেন জঙ্গিবাদ এর সংজ্ঞা কি? আপনি যা জানেন সেই সংজ্ঞার উপরে ভিত্তি করে আমি আপনাকে জঙ্গিবাদের ব্যাপারে বলব। আর আপনি যদি ইসলাম সম্পর্কে জানতে চান তবে আপনার প্রশ্ন টা আবার করুন কারন আপনার প্রশ্ন সঠিক ছিলোনা।
মনে রাখবেন তার ভরসা যেমন প্রতারনা আপনার ভরসা ঈমান। সে যেমন কোন অবস্থাতেই তার প্রতারনা কে ছাড়তে চাইবেনা। আপনি তেমনি কোন অবস্থাতেই আপনার ঈমান কে ছাড়তে চাইবেন না। সে আপনাকে তার প্রতারনার দিকে টানতে চাইবে আপনি তাকে আপনার ঈমানের দিকে টেনে নিয়ে আসেন। এবং আপনি যখন তাকে ঈমানের দিকে টানবেন সে তেমনি দিশেহারা বোধ করবে যেমন আপনি তার প্রতারনার সামনে করেন।
আরেকটি বিষয় কখন কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আর কখন দিতে হবেনা এটিও আমাদের শিখতে হবে। আপনার কাছে জানতে চাইলো ইসলাম নারীদের বোরকা পরিয়ে নারীদের অধিকার নষ্ট করে। আপনি বলেন -
আপনি কি বোরকার ব্যাপারে আগ্রহী নাকি নারীদের অধিকারের ব্যাপারে। সে যদি বলে নারী অধিকারের ব্যাপারে। আপনি তাকে জিজ্ঞেস করেন যেহেতু ইসলাম নারীদের কে কেমন অধিকার দেয় এই ব্যাপারে আপনার যথেষ্ট আগ্রহ দেখা যাচ্ছে তাহলে আপনি বলেন ইসলামে সম্পদ বন্টনে নারীর অধিকার কতটুকু। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনি সঠিক উত্তর পাবেন না। এবার তাকে বলেন, আপনি যদি সত্যি ইসলামে নারীর অধিকার সম্পর্কে জানতে চান তবে আগে এই ব্যাপারে জেনে আসেন এবং একই সাথে ইসলাম ব্যাতিত আর কোন ধর্ম এই ব্যাপারে আর কি বলেছে তাও জেনে আসেন। তখন আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিব।
তাদের ২য় পদ্ধতি
অনেক সময়ে তারা আমাদের কে ফালতু বিবাদের জড়িয়ে ফেলতে চাইবে, যেন আমাদের যুবকদের মেধা সামর্থ্য সময় সবচেয়ে উপযোগী স্থানে ব্যায় না হয়। তাই আমাদের এটিও জানা জরুরী যে এই মুহূর্তে আমার জন্য জরুরী কি? আপনাকে এটা সুস্পষ্ট ভাবে জানতে হবে যে আমি এবং আপনি আমরা সবাই ঈমান বনাক কুফর এর যুদ্ধে লিপ্ত আছি। এখানে অন্য ছোট বিষয়ে ব্যাস্ত হওয়া পরাজয় ছাড়া আর কিছুই না। আপনি যখন বক্সিং রিং এ নেমে গেছেন, আপনার প্রতিপক্ষ আপনাকে একের পর এক ঘুষি মেরেই যাচ্ছে এমন অবস্থায় রেফারি যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে রিং এর নিয়ম কি কি? আপনার উচিত হবে তার পেটে আগে একটা লাথি মারা। কারন নিঃসন্দেহে সে আপনার মনোযোগ নষ্ট করার কাজে ব্যাস্ত। কাফেররা শুধু নিজেরাই মাঠে নেমেছে এমন না, বরং তাদের দালালরা ও এ কাজে ব্যাস্ত। আর তাদের দালালরা সংখ্যায় অনেক। আপনি হয়ত অধিকাংশকেই পাবেন তাদের দিকে ঝুকে পড়তে - কিন্তু তাই বলে আমার কিংবা আপনার সেদিকে ঝুকে পড়া যাবেনা।
কারন আল্লাহ বলেন -
وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلاَّ الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلاَّ يَخْرُصُونَ
আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে।
আর সবশেষে - যে বিষয়ের প্রতি অবহেলা আর গাফেলতির কারনে আমাদেরেই দুর্দশা সেই দ্বীনের ব্যাপারে আমাদের যত্নবান হতে হবে। অতিদ্রুত আমাদেরকে আবার দ্বীনের মধ্যেই ফিরে যেতে হবে। কারন এই দ্বীনই হচ্ছে আমাদের সুরক্ষা বর্ম। উমর রাঃ বলেছিলেন আমরা ছিলাম এক লাঞ্চিত জাতি, এর পরে আল্লাহ আমাদের কে এই দ্বীনের দ্বারা সম্মানিত করেছেন। আর আজ যদি আমরা এই দ্বীন ব্যাতিত অন্য কিছুর মাধ্যমে আমাদের সম্মান খুজার চেষ্টা করি তাহলে আল্লাহ আমাদের কে আবার লাঞ্চিত করবেন।
Comment