আপনাদেরকে নিয়ে যাই আজ থেকে ১৫০০ বছর আগে। মক্কা। মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (সাঃ) তখনও নবুয়ত পাননি। মক্কার সবাই তাকে এক নামে চিনে, আল আমিন। সবাই যাকে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে, পছন্দ করে। কোন বিবাদে যখন কেউ কোন সমাধানে পৌঁছাতে পারেনা তখন মুহাম্মাদ (সাঃ) কে সবাই মধ্যস্থতাকারী মেনে নেয়। কারন তারা জানে মুহাম্মাদ (সাঃ) বেইনসাফ করবেন না।
কিন্তু এই মুহাম্মাদ (সাঃ) ঠিক যেদিন থেকে তাওহিদের কথা বলতে শুরু করলেন, এক আল্লাহর কথা বলতে শুরু করলেন, সমস্ত কিছুর উপরে শুধু মাত্র এক আল্লাহর বড়ত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব, মালিকানার কথা বলতে শুরু করলেন তখনই তাকে বিভিন্ন ভাবে আক্রমন করা শুরু হল।
প্রথমে তারা হাসি তামাশা উপহাস দিয়ে শুরু করল, এর পরে আস্তে আস্তে তারা রাসুল (সাঃ) পাগল, জাদুকর, পরিবারের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটনকারী, এমন সব জঘন্য অপবাদ দিতে শুরু করল! (নাউজুবিল্লাহ)। এর পরে তারা আরো এক ধাপ অগ্রসর হয়ে রাসুল (সাঃ) কে হত্যা করে ফেলার পরিকল্পনা করল। এর কারন ছিলো যদি মুহাম্মাদ (সাঃ) জীবিত থাকেন তবে কাফেরদের বাপ দাদার দ্বীন/ধর্ম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ তাঁর রাসুল কে নিরাপদে মক্কা থেকে বের করে নিয়ে গেলেন। এর পরে মদিনাতে যাবার পরেও কাফের রা বদর প্রান্তে জমায়েত হয়েছিলো এই উদ্দেশ্য নিয়ে যে, ইসলাম এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) কে দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা রাসুল (সাঃ) কে সান্তনা দিয়ে বলছেন, (ভাবার্থে) - তাদের শত্রুতা আপনার সাথে নয় বরং তাদের শত্রুতা তো আল্লাহর দ্বীনের সাথে, অর্থাৎ আমি আপনার কাছে যে ওহী/মেসেজ পাঠিয়েছি এটির সাথে তাদের শত্রুতা। যেহেতু তারা এই মেসেজ বা ওহির সাথে সরাসরি কিছু করতে পারছেনা তাই এই ওহীর সাথে শত্রুতার উদ্দেশ্যেই তারা আপনার সাথে শত্রুতা করছে।
আমি আপনাদের বলব, সতর্কতার সাথে লক্ষ্য করেন কি ভাবে ঘটনা গুলো ঘটে, কারন একটু পরেই আমি রাসুল (সাঃ) এর এই ১৫০০ বছর আগের ঘটনার মত আরেকটি ঘটনা বলব, যা আমদের বর্তমান সময়ের। আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নেইনা!
এবার চলে আসি হাল আমলে। আপনারা হয়ত বিডিএস মুভমেন্ট এর নাম অনেকেই শুনেছেন। এটি মূলত দখলদার জায়নবাদী ইহুদীদের জুলুমদের প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী ইজরায়েল কে বয়কট এর আন্দোলন। এই আন্দোলন জায়নবাদী ইজরায়েলের সবচেয়ে বড় ভীতির কারন ছিলো। আল্লাহ চাইলে ইনশাআল্লাহ সামনে কোনদিন সেই ব্যাপারে আলোচনা হবে। পয়েন্ট হচ্ছে ইহুদিরা এই বিডিএস মুভমেন্ট এর বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছিলো। সাইকোলজিক্যাল ওয়ার। এই যুদ্ধে তাদের একটি মেইন স্লোগান ছিলো - সেটি হচ্ছে
You discredit the messenger as a way of discredit the messege. - তুমি মেসেজ কে হেয়/তুচ্ছ করার জন্য মেসেঞ্জার কে হেয়/তুচ্ছ কর।
বিডিএস মুভমেন্টের যে মেসেজ তা খুবই সত্য, যে কোন সুস্থ বিবেকবান মানুষের কাছে এর সত্যতা এবং যৌক্তিকতা খুব পরিষ্কার। অ্যান্টি বিডিএস মুভমেন্ট কিংবা প্রো ইজরায়েল, জায়নবাদী মুভমেন্ট প্রথম থেকেই জানত তারা কখনই নীতিগত ভাবে এই সত্যতা কে খন্ডন করতে পারবেনা। তাহলে কি করা! যেহেতু বিডিএস মুভমেন্টের মেসেজের সত্যতা কে খন্ডন করা যাচ্ছেনা তাই এই মেসেজের মেসেঞ্জার দেরকে খলনায়ক বানিয়ে দাও। তাদেরকে টেরোরিস্ট উপাধি দিয়ে দাও। [অনেক বড় গল্প, যারা আগ্রহী তারা ইউটিউবে আল জাজিরার ডকুমেন্টারি আছে - The Lobby USA part 1,2,3,4 এগুলো দেখে নিতে পারেন]
এবার চলেন হাল আমলে একেবারে নিজের দেশের মাটিতে -
দেশের মানুষ প্রথম যখন একটি শব্দ শুনলো - জঙ্গি, তখন তারা আসলে এই শব্দটির সাথে খুব বেশি জড়িত হয়নি, বা বলা যায় সে সুযোগ পায়নি। হ্যা, দীর্ঘ দিন থেকে টেরোরিস্ট, জঙ্গি এই শব্দ গুলো শুনে এসেছে এটা ঠিক, কিন্তু এগুলো সাধারন জনগনের উপরে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। কারন তখনো এই ট্যাগ গুলো অনেকটা ইরাক, আফগান টাইপ মনে হত। কিন্তু তাগুতের মাথারা বুঝতে পারলো এখন এই ট্যাগ কে দেশে আমদানি করতে হবে। বিশ্বাস করেন এই যে আমি বললাম "এই ট্যাগ কে আমদানি করতে হবে" আমি এটা মোটেও কোন মেটাফোরিক উদাহরন হিসেবে বলিনি, বরং আপনি বিশ্বাস করেন সারা দুনিয়াতেই এই ট্রেড চলে। "কনসেপ্ট অফ টেরোরিজম" এর এখন এত বিশাল উপযোগিতা আছে যে তা রীতিমত থিঙ্ক ট্যাঙ্কদের গবেষণার বিষয়! যাই হোক, দেশে পরিচিত হল একটি ট্যাগ - "জঙ্গি"। এরপরে জনগণের সামনে এই জঙ্গি ট্যাগ কে বদ্ধমূল করার জন্য নাটক সিনেমার কোন অভাব ছিলোনা। অবশেষে জনগণ মেনে নিলো "জঙ্গি" বিষয় টা।
তবে এই গল্পে আমি যে দৃশ্য আপনাদের দেখাতে চাই সেটা একটু ভিন্ন। আপনি বা আমি যখন সাধারন জনগণ, তখন আমরা উপর থেকে যা শুনি, একটা বিশাল সিস্টেম, সমাজ ব্যাবস্থা যা প্রচার করে তখন আমরা সেটা নিয়ে প্রশ্ন খুব কমই করি, কারন অনুগত দাস রা প্রশ্ন কম করে, আর আমরা খুব ভালো অনুগত দাস হয়ে থাকার চেস্টা করি, কারন সেটা করতে পারলেই আমার এবং আমার পরিবারের স্বার্থ রক্ষা হয়, বাকি সব গোল্লায় যাক এমনকি যদি এর জন্য আমাকে দাসত্বের শিকল গলায় পরতে হয়! কিভাবে? সে গল্প না হয় আরেক দিন করা যাবে ইনশাআল্লাহ। এই সিস্টেমের অনুগত দাস হিসেবে আমরা প্রশ্ন খুব কম করি, আর সেক্ষেত্রে এমন কাউকে খুজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব যিনি এই কাজের পিছনে উদ্দেশ্য কি তা জানার চেষ্টা করবেন!
আমি আপনাদের আজ সেই উদ্দেশ্য টাই দেখাতে চাই এবং সাথে এটাও কিভাবে হাজার হাজার বছর ধরে ইতিহাস আমাদের সামনে দিয়ে ঘুরতে থাকে কিন্তু আমরা শিক্ষা নেইনা!
কথা হচ্ছিলো জঙ্গি নিয়ে। আসেন দেখা যাক এই জঙ্গিরা কি বলে? এই জঙ্গিরা যা বলে তা এক লাইনে যদি আমি বলতে চাই তবে সেটা হচ্ছে, দুনিয়া আল্লাহর, এখানে মালিকানাও চলবে শুধু মাত্র আল্লাহর। আল্লাহর বান্দাদের উপরে কারো কোন নিজের মনগড়া মতবাদের ভিত্তিতে মালিকানা চলবেনা। শুধু মাত্র আল্লাহর আইনই চলবে, অন্য কারো নয়। এটাই হতে হবে, অন্য কিছু নয়।
কোন মিল খুজে পাচ্ছেন? সেই ১৫০০ বছর আগে যখন এই কথাই বলা হয়েছিলো, মক্কার কাফেররা খুব রাগ করেছিলো। কারন এটা মেনে নিলে তো আর তাদের শাসন শোষণ থাকেনা। মক্কার কাফেররা এই কারনে মূর্তি পুজা করত না, যে মূর্তি গুলো দেখতে খুব সুন্দর ছিলো বরং আপনি বিশ্বাস করেন তাদের এই মূর্তি পূজা প্রথার পিছনে অনেক বড় কারন ছিলো, এই প্রথা থেকে, এই প্রথাকে দেখিয়ে, এই প্রথার দোহাই দিয়ে অন্যান্য এলাকার মানুষের থেকে তারা প্রচুর কামাই করতে পারত! এখন আপনি যখন বলবেন, আল্লাহর হুকুম ছাড়া আর কোন হুকুম চলবেনা, তাহলে হাসিনার কি হবে! তার গুন্ডা বাহিনীর কি হবে! আপনি যদি জঙ্গির কথা মেনে নেন তাহলে জঙ্গির সাথে আর কোন বুঝা পড়া নাই। হায়! তাহলে আমাদের বীরপুরুষ বাহিনীর কি হবে! এবার আপনিই বলেন তারা কি এমন কথা মানতে পারে? না কক্ষনোই না! কিন্তু তারা তো আল্লাহর এই কথাকে কোন ভাবে মাটি চাপা দিয়ে নিঃশেষ করে দিতে পারবেনা। ১৫০০ বছরেও কেউ পারেনি! তাহলে কি করা?
মেসেজ কে তো কোন কিছু করা যাচ্ছেনা, তাহলে করনীয় কি? করনীয় সেই ১৫০০ বছর আগের মতই। মেসেঞ্জার কে আঘাত কর। যে কেউই আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নের কথা বলে তাকেই জঙ্গি বানিয়ে দাও। যে কেউ হাসিনার আদর্শের সাথে মিলবেনা সেইই জঙ্গি, এর উদাহরন আপনারা সবাই নিউজ দেখেছেন। এমনকি নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করলেও হাসিনা জঙ্গির গন্ধ পায়! নিউজে যেসব জঙ্গিদের প্রোফাইল আপনারা দেখেছেন জঙ্গি উপাধি পাবার আগ পর্যন্ত কেউ কোনদিন কাউকে আঘাত করেনি, চুরি ডাকাতি করেনি, বখাটেদের মত কোন নারীকে উত্যক্ত করেনি, কোন ক্লাবে, বারে গিয়ে মাতাল হয়ে বেলেল্লাপনা করেনি। বরং সবাই তাদেরকে ভদ্র, শান্ত হিসেবেই স্বীকৃত দিয়ে আসছিলো। কিন্তু ঠিক যে মুহূর্তে সমস্ত তাগুতি বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে আল্লাহর বিধানের কথা বলা শুরু করল, সাথে সাথেই সে তাগুতের বিধানের জন্য হুমকি হয়ে গেল! এখন তাগুতের পক্ষে সরাসরি সম্ভব নয় সাথে সাথেই এই ছেলেকে এই কারনে ধরে নিয়ে যাবে যে শুধু বলে -হাসিনা তোমার বিধান মানিনা, আল্লাহর বিধান চলবে। কিন্তু তাই বলে হাসিনা তাকে ছেড়েও দিতে পারেনা! তাহলে তাকে জঙ্গি বানিয়ে দাও। একবার যখন সে জঙ্গি উপাধি পেয়েই গেছে এবার তাকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যাবে।
জঙ্গি যুগের প্রথম দিকে সমস্ত জঙ্গি শুধু মাত্র মাদ্রসাতেই তৈরি হত, অন্তত এমনটাই হাসিনা বাহিনীর দাবি ছিলো। মাদ্রাসা গুলো জঙ্গি তৈরির কারখানা! নিশ্চয়ই আপনারা ভুলে যাননি। কেন মাদ্রসার উপরে এই আক্রমন? কারন অন্তত এই মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যাবস্থা এমন কিছু কথা বলে যা তাগুতি সিস্টেমের জন্য হুমকি। কিন্তু যখন এই মাদ্রাসা গুলো তাগুতি সিস্টেমের অধীনে চলে আসলো তখন কিন্তু সেখানে আর একটা জঙ্গিও নাই, বরং তখন জঙ্গি তৈরির ফ্যাক্টরি হয়ে গেলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গুলো! কি অদ্ভুত তাই না!
পর্দার পেছনের কথা গুলো হচ্ছে -
তাগুতের সাথে আপনার শত্রুতা এইজন্য যে - আপনি তার জুলুমের মসনদ ধসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন! আর এজন্যই আপনি আজ জঙ্গি, এজন্যই জঙ্গিদের সাথে তাদের যত যুদ্ধ। তাদের এই যুদ্ধ আসলে আল্লাহর দ্বীনের সাথে কিন্তু যা প্রকাশ্য ভাবে সামনে উপস্থাপন করার সাহস তাদের নাই!
পরিচিত মনে হচ্ছে? ১৫০০ বছর আগের সেই মক্কার কাফেরদের জঘন্য নকশা!
আর হ্যা, একটা শেষ কথা, আল্লাহ কাফেরদের চক্রান্ত নস্যাৎ করেই ছাড়বেন, আর সবশেষে জাহান্নামেই তাদের কে একত্রিত করা হবে।
Comment