এলাকার একটি বাসা গভীর রাতে ঘিরে রাখে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। সকালে "আবু ফুলান" নামে এক জঙ্গি কে গ্রেফতার করা হয় এবং তার কাছ থেকে প্রচুর জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়।
এমন খবর আমরা সবাই দেখে দেখে এমন অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে এখন এগুলো আমাদের মনে কোন প্রভাব ফেলেনা। কিন্তু এগুলো আমাদের মনে শুধু প্রভাবই নয় বরং এগুলো নিয়ে আমাদের সর্বোচ্চ সচেতন থাকার দরকার ছিলো, কারন এগুলোই হচ্ছে সেই ভয়ংকর চক্রান্ত যার শিকার পুরা মুসলিম উম্মাহ। এই বিষয় গুলোর উপরে হাজার হাজার লেখা আছে, বই আছে, ভিডিও আছে লেকচার আছে কিন্তু দিন শেষে আমাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়না, কারন এগুলো আমাদের উপরে কোন প্রভাব ফেলেনা। কিংবা আমরা এগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হতে চাইনা। আমরা কচ্ছপের খোলের মত নিজের একটা ছোট্ট জগত বানিয়ে নিয়েছি এর বাইরে আমরা কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত হতে চাইনা। মজার ব্যাপার হচ্ছে এমন কি ঐ ছোট্ট খোল, যেটাকে আমি আমার নিজের আপন জগত মনে করছি এমনকি সেটাও আমার নিজের না। বরং সেটাও ঐ সিস্টেমের করে দেয়া একটা সীমানা, যেন আমি এর বাইরে না তাকাই, এর বাইরে কোন কিছু নিয়ে না ব্যাস্ত হই। খুব অবাক লাগে যখন এই খোলের বাসিন্দারাই আবার স্বাধীনতার কথা বলে! বড় অদ্ভুত!
আজ জাতি হিসেবে আমাদের কে নিঃশেষ করে ফেলা হয়েছে। বরাবরের মত এখনও আমাকে এই কথাই বলতে হচ্ছে, - এখানে আমাদের যেমন দোষ আছে কাফেরদেরও চক্রান্তের কোন শেষ ছিলোনা। অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন,
ভাই আপনার কথায় ঘুরে ফিরে একই কথা কেন আসে! কিংবা আপনি একই কথা কেন বারবার বলেন?
বারবার বলেও যখন এর প্রভাব শূন্য তখন আল্লাহ ভালো জানেন যদি সবাই শুধু একবার করে বলেই হাল ছেড়ে দিত না জানি কি হত!
জাতির পিতা শেখ মুজিব এই কথাটি, শুধু মাত্র এই কথাটি আপনি জীবনে কত বার শুনেছেন? কিন্তু জাতির পিতা অন্তত মুসলিম জাতির পিতা, তা সে যে ভুখন্ডেরই হোক না কেন, হ্যা এমন কি বাংলাদেশেরও হোক না কেন, আমাদের জাতির পিতা কক্ষনোই মুজিব না, আমাদের জন্য জাতির পিতা ইবরাহিম আঃ। আপনি এই কথা কয়বার শুনেছেন? যদি কম শুনে থাকেন তবে ন্যায্য প্রশ্ন হতে পারে কেন কম শুনেছেন?
তাহলে আমাদের কে একই কথা বারবার বলতে দেন।
যা বলছিলাম - জাতি হিসেবে আমাদেরকে নিঃশেষ করে ফেলা হয়েছে। আমরা শুধুমাত্র নিজেদের সামান্য স্বার্থ রক্ষার জন্য নিজেদের কে বিক্রি করে দিয়েছি। হ্যা, ঠিক তাই বিক্রি করে দিয়েছি। দাস বনে গেছি। প্রকৃত দাস। জালিমদের কে আমাদের উপরে প্রভু হিসেবে মেনে নিয়েছি। এরপরে এই জালিমরা যখন আমাদের উপরে জুলুম, অত্যাচার আর নির্যাতন চালায় তখন অসহায়ের মত নিজেকে তাদের জুলুমের সামনে সমর্পন করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা।
এখানে কেউ প্রশ্ন করার অধিকার রাখেনা এমন কি যদি নির্যাতিত, ধর্ষিত, লুন্ঠিত কিংবা খুন পর্যন্ত হয়ে যায়! তেমন সাহস কোথায়? তেমন মেরুদন্ড কার আছে? আর যাদের থাকে তাদের টা ভেঙ্গে দেয়া হয়। এটা আমাকে কেন তত্ত্ব কথা বলতে হবে? এটাও কি আসলে বলার মত কোন কথা! এটি তো আমাদের শিরা উপশিরায় রক্ত প্রবাহিত হবার মতই বাস্তবতা! কেউ একে অস্বীকার করেনা, ঠিক। আবার কেউ এটাকে উপলব্ধিও করেনা, ঠিক। উপলব্ধি হচ্ছে তা যার ফলে একজন মানুষের চিন্তাধারা এবং কাজের ধরন পরিবর্তন হয় উপলব্ধি অনুযায়ী। যারাই দাড়ানোর সাহস দেখিয়েছে, কিংবা আসলে সাহস নয় বরং নুন্যতম মৌলিক অধিকার এবং বিবেকের দাবী থেকে যারাই এর প্রতিবাদ করেছে তারাই খুব দ্রুত গল্প হয়ে গেছে। এবং এটার কারন, সর্বপ্রথম আমাদেরই একদল যথেষ্ট কাপুরুষ, বেঈমান এবং স্বার্থপর ছিল।
সাইয়েদ কুতুব রহঃ বলেন, অল্প কিছু তাগুত কখনই বিপুল পরিমান সাধারন জনগণের উপরে কখনই জয়ী হতে পারেনা, যদিনা এই সাধারন মানুষ নিজেরাই এই সামান্য কিছু তাগুতের কাছে নিজেদের কে বিক্রি করে দেয়। আপনি তাকিয়ে দেখেন এই বিভীষিকাময় জানোয়াররা কিভাবে আমাদের উপরে প্রবল হল? নিজেকে প্রশ্ন করেন? বিবেকের শেষ খুটি টা ধরে নাড়া দেন! আর পাশ কাটিয়ে কোথায় যেতে পারবেন? এরপরে আপনি, আজ অথবা কাল যদি নিজের বিবেকের দাবির উপরে টিকে থাকতে চান। যদি নিজের ঈমান এবং আমল নিয়ে বেচে থাকতে চান তবে এর পরের টার্গেট আপনি। জি আপনাকেই বলছি!
যে লাইন টা দিয়ে শুরু করেছিলাম -... বিপুল পরিমানে জিহাদি বই... আজ পর্যন্ত আপনাদের কয়জন জিহাদি বই এর সংজ্ঞা পেয়েছেন? কিংবা তারা ব্যাখ্যা দিয়েছে যে জিহাদি বই বলতে আসলে সেগুলো কি? জিহাদি বই এর সীমা কি? কিসের ভিত্তিতে একটা বই জিহাদি বই হবে? এমন প্রশ্ন করার সাহস কিংবা সামর্থ্য কারো নাই।
চলেন দেখা যাক আমি কিংবা আপনি এই মুহূর্তে আমাদের কাছে জিহাদি বই আছে কিনা? চলেন আমরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ দিয়ে দেখি কি কি বই জিহাদি বই হতে পারে?
আসেন - কুরআন। এই কুরআনে ৪০০ এর ও অধিক আয়াত আছে জিহাদ নিয়ে। ধরা যাক সুরা তাওবা। ৯ নাম্বার সুরা। আপনি এই সুরার একটি তাফসির কিংবা কিছু আয়াত এর ব্যাখ্যা লেখা আছে এমন কোন বই, খাতা নোট নিয়ে কোথাও যাচ্ছেন,কিংবা আপনার বাসায় এমন কিছু আছে। কোন এক সুন্দর মুহূর্তে শুধু মাত্র এই সুরা তাওবার তাফসির রাখার কারনে আপনি জিহাদি হয়ে যেতে পারেন, আমি বলে দিচ্ছি লিখে নেন, তারা কখনই বলবেনা আপনার কাছে সুরা তাওবার তাফসির পাওয়া গেছে যেখানে জিহাদের ব্যাপারে আলোচনা ছিলো, বরং তারা বলবে আপনার কাছে জিহাদি বই/লেখা পাওয়া গেছে!
আর যেখানে কুরআনে ৪০০ এর ও অধিক আয়াত আছে শুধু জিহাদ নিয়ে, রাসুল সাঃ নিজে বলেছেন আমি হচ্ছি যুদ্ধের নবী, তাহলে আমাদের কাছে জিহাদের বই থাকবেনা তো কিসের বই থাকবে?
এমনকি আর রাহিকুল মাখতুম ও জিহাদি বই! কারন সেখানে রাসুল সাঃ এর জিহাদি জীবনের বর্ণনা আছে, বিস্তারিত। এমনকি আপনি আপনার কোন এক সুন্দর দিনে শুধু মাত্র আমার এবং আপনার রাসুল সাঃ এর সিরাত এর বই রাখার জন্য জিহাদি হয়ে যেতে পারেন! আমি আপনাকে উৎসাহ দিচ্ছি আপনি আমার কথা বিশ্বাস করেন কারন বিশ্বাস না করলে আপনি ই ধোঁকায় পড়ে যাবেন।
আমাদের মধ্যে এই পরিমান সাহস কি আছে যে আমরা এই প্রশ্ন করতে পারি - সেই জিহাদি বই/লেখা গুলো আসলে কি ছিল? না, না না - তেমন কেউ নাই। থাকলে আজ কেন জানোয়ারদের শক্তি এত বৃদ্ধি পাবে!
তাহলে একটা সুন্দর দিনে আপনি কিংবা আপনার ভাই কিংবা আপনারই কোন আত্মীয় গ্রেফতার হয়ে গেলো, জিহাদি বই রাখার জন্য। গতকাল আপনি যাকে নিয়ে এক সাথে বসে নাস্তা খেয়েছেন আজ সে জিহাদি, জঙ্গি! এবং আপনি এর বাইরে অন্য কোন কিছুই জানেন না, এর ব্যতিক্রম অন্য কোন কিছু প্রমান করার সামর্থ্য, সাহস কোনটাই আপনার নাই। গল্প কি এখানেই শেষ? না, জজ মিয়াদের গল্প এই দেশে বার বার লেখা হতে থেকে প্রতি দিনে, প্রতি ঘন্টায় যদিও না হয় প্রতি মিনিটে।
এটি ছিলো দৃশ্যমান দিক, যা দেখা যায়, বলা যায়, অনুভব করা যায়, হয়ত আরো একধাপ সাহসী হয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা যায়। কিন্তু আরো একটি দিক আছে যা দেখা যায়না। যা হচ্ছে সাইকোলজিক্যাল। এমনকি অধিকাংশ সময়ে এই ব্যাপারটা বুঝাও যায়না। কেমন?
এই যে আমাদের ভাইকে ধরে নিয়ে চলে গেল, জিহাদি বইয়ের নাটক সাজিয়ে জঙ্গি বানিয়ে দিল, আর আমি বা আপনি কিছুই করতে পারলাম না, এই বিষয় টি আমাদের বিবেক মানতে পারেনা, যদি না সে মরে গিয়ে থাকে। এমন ঘটনা গুলো আমাদের বিবেক কে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। কিন্তু এভাবে একের পর এক যখন আমরা কিছুই করতে পারিনা বিবেক নিজের ভিতরে গুমরে গুমরে কাদতে থাকে একদিন এই বিবেক আমাদের অজান্তেই মরে যায়, কিংবা আমরা নিজেরাই গলা টিপে মেরে ফেলি। আর সেদিন আমাদের মানুষ স্বত্বার মৃত্যু হয়! এভাবেই আমরা সময়ের স্রোতে "লিভিং ডেড" চলে ফিরে বেড়ানো মৃত তে পরিনত হই! যদি তা নাই হবে তবে আমাকে বলতে হবে কেন হাজার হাজার খুন ধর্ষণ এর একটি প্রতিকারও আমরা করতে পারিনা, আমি বলছিনা প্রতিবাদ, কারন এখন প্রতিবাদ হচ্ছে সেলুলয়েডের ঘটনা। এভাবে আমরা এক মৃত জাতিতে পরিনত হয়েছি। এবার যখন আমাদের শরীর থেকে ফিলিস্তিন কে, কিংবা গাজা কে কিংবা কাশ্মির কে,কিংবা আরাকান কে কেটে নিয়ে চলে যায় কিংবা সেখানে আগুন জালিয়ে দেয় তখন তা আর আমাদের কে প্রভাবিত করতে পারেনা! আমার প্রিয় শায়েখ আওলাকি রহিমাহুল্লাহ (আল্লাহ শায়েখ কে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন) কত সুন্দর করেই না বলেছিলেন - .. and they (kuffars) have successfully desencetized us! অবশেষে কাফের রা আমাদের কে অনুভূতিশূন্য করে দেয়ার ব্যাপারে সফল গেলো!
এখনো শেষ হয়নি, বরং যখন এমন পরাজয় এবং বিবেকের মৃত্যু অহরহই ঘটতে থাকে তখন আমাদের মধ্যেই অনেকে ক্যামেলিওন এর মত নিজেদের রং পরিবর্তন করে ফেলি। ঐ যারা আমার ভাইকে ধরে নিয়ে চলে গেলো তারা যেমন রং দেখতে পছন্দ করে তেমন রঙে নিজেকে রঙিন করে রাখি! সেই রঙে নয় যা আল্লাহ পছন্দ করেন। আর এভাবেই নিজেদের চূড়ান্ত ধ্বংস আমরা ডেকে আনি আর তা হচ্ছে, নিজেদের ঈমান এবং আকিদাহ কে বিক্রি করে দিয়ে তাদের মত মুসলিম হয়ে যাই, যেমন তারা পছন্দ করে, সুরা তাওবার তাফসির না পড়া, যেখানে জিহাদের আলোচনা করা হয়েছে। কিংবা কি দরকার ঐ কুরআনের তাফসির দেখার। এটা যেমন আছে রেখে দাও, এখন সময় অনেক কঠিন!
আর এভাবেই আমরা নিজেদের স্বত্বাকে নিজেদের অজান্তেই বিক্রি করে দেই, ইসলামের সীমানার বাইরে গিয়ে নিজেদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুজি, আল্লাহ কে ভুলে গিয়ে জালিমের কাছে নিরাপত্তা আশা করি! আল্লাহর উপরে জালিম কেই নিজের জন্য অধিক যথেষ্ট মনে করি। আল্লাহ অপেক্ষা জালিমকেই বেশি ভয় করি!
ব্যাস! শেষ? না, কক্ষনই না। বরং সত্যি হচ্ছে এখান থেকেই আরেক নতুন শুরু। আল্লাহর কিছু বান্দা তো এমন থাকেনই যারা আল্লাহর দুশমনদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর। যারা নিজেদের জান, মাল এবং আর সমস্ত কিছুকে আল্লাহর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন এই জানোয়ারদের জুলুমের মসনদ কে ধসিয়ে দেয়ার জন্য, আর আল্লাহর দ্বীন কে সমুন্নত করার জন্য। বান্দা কে বান্দার গোলামির জুলুম থেকে মুক্তি দিয়ে এক আল্লাহর প্রকৃত গোলামি করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
এখন কথা হচ্ছে আমার ভাইদের প্রতি - আপনি কি করবেন?
Comment