বিভ্রান্তি দূর করুন , দরবারী আলিমদের থেকে সতর্ক থাকুন...
বিষয়ঃ- জিহাদের জন্য পিতা-মাতার অনুমতি শর্ত কিনা।
.বিষয়ঃ- জিহাদের জন্য পিতা-মাতার অনুমতি শর্ত কিনা।
সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَاسْتَأْذَنَهُ فِي الجِهَادِ، فَقَالَ: «أَحَيٌّ وَالِدَاكَ؟» ، قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «فَفِيهِمَا فَجَاهِدْ»“
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে জিহাদে বের হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তাকে বললেন তোমার পিতামাতা কি বেঁচে আছে? সে বলল, হ্যাঁ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তবে তাদের নিকট জিহাদ করো।”অন্য একটি হাদীসে এসেছে “রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো কোন আমল শ্রেষ্ঠ? তিনি প্রথমে বললেন সময় মতো নামাজ আদায় করা, পরে বললেন পিতা-মাতার সাথে ভাল আচরণ করা তারপর বললেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।” (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)এই হাদীস দুটির মাধ্যমে অনেকে বিভিন্নরকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে থাকেন এবং সর্বাবস্থায় জিহাদে যাওয়ার জন্য বাবা-মার অনুমতি জরুরী মনে করেন। সাধারন অবস্থায় জিহাদ ফরজে কেফায়া কিন্তু বিশেষ কিছু অবস্থায় ফরজে আইন হয়ে যায়। জিহাদ যখন ফরজে কিফায়া থাকে এবং যথেষ্ট সংখক মুসলিম জিহাদে অংশগ্রহন করে তবে বাকীদের উপর জিহাদে অংশগ্রহন করা বাধ্যতামুলক থাকেনা তারা ইচ্ছা করলে অংশগ্রহণ করে গনীমত ও সূউচ্চ মর্যাদা হাসীল করতে পারে আবার ইচ্ছা করলে অংশগ্রহণ নাও করতে পারে। এই অবস্থায় পিতামাতার অনুমতি ছাড়া জিহাদ করা বৈধ নয়। কিন্তু জিহাদ যখন ফরজে আইন হয়ে যায় বা যথেষ্ট সংখক মুজাহিদ জিহাদে যোগদান না করেন, তখন জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যায়। তখন পিতা মাতার অনুমতির কোনো প্রয়োজন নেই যেভাবে নামাজ, রোযার জন্য পিতামাতার অনুমতির প্রয়োজন হয় না।
ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেন,
قَالَ جُمْهُورُ الْعُلَمَاءِ يَحْرُمُ الْجِهَادُ إِذَا مَنَعَ الْأَبَوَانِ أَوْ أَحَدُهُمَا بِشَرْطِ أَنْ يَكُونَا مُسلمين لِأَنَّ بِرَّهُمَا فَرْضُ عَيْنٍ عَلَيْهِ وَالْجِهَادُ فَرْضُ كِفَايَةٍ فَإِذَا تَعَيَّنَ الْجِهَادُ فَلَا إِذْنَ
জমহুর আলেম বলেছেন পিতামাতা যদি মুসলমান হয় তবে তারা নিষেধ করলে জিহাদ করা বৈধ হবে না কেননা পিতামাতার সাথে সৎ ব্যবহার করা ফরজে আইন আর জিহাদ ফরজে কিফায়া। তবে যখন জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যায় তখন কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই। (ফাতহুল বারী)
পরবর্তী হাদীসে যে জিহাদকে পিতামাতার সাথে সৎ ব্যবহারের পরে উল্লেখ করা হয়েছে এটাও ঐ অবস্থায় যখন জিহাদ ফরজে কিফায়া থাকে কিন্তু যখন জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যায় তখন পিতামাতার খেদমতের চেয়ে জিহাদ করা অধিক ফজীলতের আমল হবে। এ বিষয়ে বহু হাদীস বর্ণিত আছে।
যেমনঃجاء رجل إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال دلني على عمل يعدل الجهاد قال ( لا أجده ) . قال ( هل تستطيع إذا خرج المجاهد أن تدخل مسجدك فتقوم ولا تفتر وتصوم ولا تفطر ) قال ومن يستطيع ذلك“
একজন ব্যক্তি রসুলুল্লাহ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বলল হে আল্লাহর রসুল আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন যার মাধ্যমে আমি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত মুজাহিদদের সমান পুরুষ্কার পেতে পারি। তিনি বললেন, তুমি কি (মুজাহিদ ফিরে না আসা পর্যন্ত) অনবরত ক্লানি-হীনভাবে নামাজ আদায় করতে ও কোনোরুপ পানাহার ব্যতিরেখেই রোযা রাখতে সক্ষম? উক্ত ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রসুল, কে এই কাজ করতে সক্ষম? (সহীহ বুখারী)
আর যদি আমরা মেনেও নিই যে পিতামাতার সাথে ভাল আচরন করা জিহাদের চেয়ে উত্তম তবে এর অর্থ কি এই যে পিতামাতার সাথে ভাল আচরণ করলেই জিহাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া যাবে। একই হাদীসে তো নামাজকে পিতামাতার সাথে ভাল আচরণের পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ কি এ যে যেহেতু নামাজ পিতামাতার সাথে ভাল আচরণের তুলনায় উত্তম আমল তাই একজন মুসল্লির জন্য পিতামাতার খেদমতের প্রয়োজন নেই? একটি কাজ অন্য একটি কাজ থেকে উত্তম হলেই অন্য কাজটির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায় না। বরং মুক্তি পেতে হলে প্রতিটি ফরজ দায়িত্বই নিষ্ঠার সাথে আদায় করতে হবে।
দরবারী আলিম সমাজ এবং তাদের অনুসারীদের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না, জিহাদের প্রতি যুব সমাজকে নিরুৎসাহিত করাই হল এদের দাওয়াতের প্রধান লক্ষ্য। এরা সুস্পষ্ট বিষয়ে মানুষের অন্তরে সন্দেহের বীজ বপন করে দেয়। তবে খাওয়ারিজ আক্বীদা থেকেও আমাদের সর্তক থাকা উচিৎ।
আল্লাহ্ আমাদের নেক নিয়ত ও আমল কবুল করুক, আমীন।
Comment