বিসমিল্লাহ , ওয়াস সালাতু আস সালাম আলা রাসুলিল্লাহ
আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা আমাদের কে এক বিশাল বড় নিয়ামত দান করেছেন - সেটা হচ্ছে আল কুরআন। আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা বলেন -
يَاأَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ
হে মানব সম্প্রদায়, তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য।
আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা আরো বলেন -
كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُوا الْأَلْبَابِ
এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা নিজে কুরআনের অনেক জায়গায় কুরআনের ব্যাপারে প্রসংশা করেছেন।
আল্লাহ বলেছেন এই কুরআন হচ্ছে -
এটা মানুষের জন্যে জ্ঞানের কথা এবং বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়েত ও রহমত। (সুরা জাসিয়া - ২০)
এতে এবাদতকারী সম্প্রদায়ের জন্যে পর্যাপ্ত বিষয়বস্তু আছে। (সুরা আম্বিয়া - ১০৬)
আমি তোমাদের প্রতি একটি কিতাব অবর্তীর্ণ করেছি; এতে তোমাদের জন্যে উপদেশ রয়েছে। তোমরা কি বোঝ না? (সুরা আম্বিয়া - ১০)
এরকম আরো অনেক!
প্রশ্ন হচ্ছে - আমরা কুরআন থেকে কতটুকু ফায়দা নিতে পারছি? কুরআনের ভিতরে আল্লাহ আমাদের জন্য সমস্ত সমস্যার সমাধান রেখেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা সেই সমাধানের কতটুকু নিতে পারছি? কুরআন শুধু আমাদের ধর্মীয় জীবন নিয়ে কথা বলেনি, বরং এর বাইরে ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, সমরনীতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, চিকিৎসা সমস্ত কিছু ব্যাপারে কথা বলেছে। কুরআন যেমন বাদ দেয়নি মহাকাশ এর মত বিশাল বিষয়বস্তু তেমনি বাদ দেয়নি অনু পরমানুর মত সূক্ষ বিষয়বস্তু। কুরআন যেমন দুনিয়ার জীবনকে বর্ণনা করেছে তেমনি বর্ণনা করেছে আখিরাতের জীবন। কুরআন যেমন আমাদের সূচনা বর্ণনা করেছে, তেমনি করেছে এই সৃষ্টি জগতের, তেমনি করেছে অন্য মাখলুকের। এতে যেমন সমাধান আছে তেমনি আছে চ্যালেঞ্জ। এতে যেমন ভয় আছে তেমনি ভালোবাসা আছে।
আমার মত অধমের জন্য কুরআনের ব্যাপারে বর্ণনা করার চেষ্টা করা হাস্যকর ।
আল্লাহ কুরআনের ব্যাপারে কেমন চ্যালেঞ্জ দিচ্ছেন দেখেন -
তারা কি বলে? কোরআন তুমি তৈরী করেছ? তুমি বল, তবে তোমরাও অনুরূপ দশটি সূরা তৈরী করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পার ডেকে নাও, যদি তোমাদের কথা সত্য হয়ে থাকে। (হুদ - ১৩)
মানুষ কি বলে যে, এটি বানিয়ে এনেছ? বলে দাও, তোমরা নিয়ে এসো একটিই সূরা, আর ডেকে নাও, যাদেরকে নিতে সক্ষম হও আল্লাহ ব্যতীত, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো। (ইউনুস - ৩৮)
এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো। (বাকারা - ২৩)
আজ পর্যন্ত কি কেউ পেরেছে? কেউ? দুনিয়ার যে কোন প্রান্তে। সারা দুনিয়ায় মানুষ কত কি করে দেখাচ্ছে? কেন তারা একটা সুরা বানিয়ে দেখাতে পারলোনা! আল্লাহ নাজিল করলেন সুরা বুরুজ এর প্রথম আয়াত - ওয়াস সামা ইজা তিল বুরুজ। রাসুল সাঃ এই আয়াত কে কাবার দরজায় ঝুলিয়ে দিতে বললেন আর মক্কার কাফের কবিদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললেন - যাও পারলে এই আয়াতের পরের আয়াত নিয়ে আসো। মক্কার কাফেররা পেরেশান হয়ে গেলো, ওয়াস সামা ইজা তিল বুরুজ - ওয়াস সামা ইজা তিল বুরুজ ... এর পরে কি হবে! কোন কিছুই বের করতে পারেনা। সব শেষে তাদের সব চেয়ে শ্রেষ্ঠ কবি নিয়ে আসলো -<< ওয়াস সামা ইজা তিল বুরুজ >> // ওয়ান নিসা ইজা তিল ফুরুজ! // - এর পরে আল্লাহর আয়াত আসলো
ওয়াস সামা ইজা তিল বুরুজ
ওয়া ইয়াওমিল মাওউদ
ওশাহিদিও ওয়া মাশহুদ ...
মক্কার কাফের রা পর্যন্ত তাদের কবিকে বললো - তুমি এইটা কি লাইন নিয়ে তৈরি করলা! তোমার জন্য লজ্জা ছাড়া আর কিছুই না!!! এরকম আরও আছে - মিথ্যা নবি মুসায়ালামা ও কুরআনের অনুকরনে সুরা বানানোর চেস্টা করেছিলো - যা হাস্যরস ছাড়া আর কিছুই না।
এই উদাহরন আমি এই জন্য পেশ করলাম যেন - এতদিন আমরা শুনে এসেছি এই কুরআনের মত আরেক টা সুরা কেউ বানাতে পারেনি, পারবে না। কিন্তু কেন? আমাদের জানতে হবে কেন পারবে না? এটা না জানলে এই বেপারে আমাদের ইয়াকিন আসা হয়ত কঠিন হতে পারে। এমন না যে কেউ চেষ্টা করেনি! করেছে আপ্রান চেষ্টা করেছে। আরবের বিখ্যাত বিখ্যাত কবিরা আপ্রান চেষ্টা করেছে কিন্তু তারা মুসায়ালামার সুরা তুফা এর অপেক্ষা উত্তম কিছু আনতে পারেনি! জি পারেনি - স্রেফ পারেনি। আর এটাও মনে রাখা দরকার মুসায়ালামর আরবি যেন তেন কিছু ছিলনা, সেই যুগে আরবদের মধ্যে সম্মানিত হতে হলে তার আবশ্যিক যোগ্যতার মধ্যে একটি হচ্ছে আরবি সাহিত্য/ভাষার উপরে দক্ষতা। কারন আরবরা তাদের সাহিত্য এবং ভাষা নিয়ে গর্বিত ছিল!
আর আর কোন দিন পারবেও না। কারন সাহিত্যবিদ দের মতে - কুরআন এর যে আরবি এই আরবি এখন আর নেই - এই আরবির পারদর্শিতা এখন আর কারো নেই!
যাই হোক - এটা আমার মূল কথা ছিলোনা। আমি যা বলতে চাচ্ছিলাম তা আসলে অন্য প্রসঙ্গ। তবে এই কথাগুলো এজন্য বললাম যেন কুরআন সম্পর্কে আমাদের সামনে কিছু তথ্য হাজির থাকে।
মূল কথাঃ
মূল কথায় যাবার আগে একটা ঘটনা বলি। ডক্টর মরিস বুকাইল এর নাম তো আপনারা অনেকে শুনেছেন। তাকে ফিরাউনের মমি পরীক্ষা করার জন্য প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিলো। ডক্টর মরিস গবেষণা থেকে যা পেলেন তা হচ্ছে - ফিরাউনের দেহ সাগরে ডুবেছিলো। এবং তার অনুসারীরা সাগর থেকে ফিরাউনের দেহ তুলে নিয়ে এসে মমি করে। ডক্টর মরিসের মনে যে প্রশ্ন ছিলো তা হচ্ছে - সাগর থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসা এই শরীরকে কিভাবে মমি করা গেলো! আর করা হলেও কিভাবে তা এতদিন পর্যন্ত টিকে থাকলো! কারন - পানিতে ডুবে গেছে এমন দেহ মমি করে সংরক্ষন করা অসাধ্য! ইতিমধ্যে ডক্টর মরিস কোন ভাবে জানতে পারলেন যে কুরআনে এই কথা ১৪০০ বছর আগেই উল্লেখ করা আছে - আল্লাহ বলেছেন - তিনি ফিরাউনের দেহকে সংরক্ষন করবেন যেন তা মানব জাতির জন্য নিদর্শন হতে পারে! ডক্টর মরিস এই কথা শুনে - কোন ভাবেই বিশ্বাস করতে চান নি, এর পরে তিনি নিজে কুরআন খুলে এর সত্যতা যাচাই করেন এবং মুসলমান হয়ে যান!
এরকম ঘটনা এক, দুই টা নয় বরং অনেক রয়েছে।
তাহলে আমরা কেন কুরআন থেকে উপকৃত হতে পারছিনা? আমরা কেন কুরআন দ্বারা প্রভাবিত হতে পারছিনা? বিধর্মীরা এই কুরআন নিয়ে গবেষণা করে এর থেকে উপকৃত হচ্ছে, কুরআনের বিজ্ঞান, কুরআনের সাহিত্য, কুরআনের সৌন্দর্য অনুভব করছে কিন্তু কেন আমরা অধিকাংশ মুসলিম এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি? কেন কুরআনের দ্বারা আমাদের জিন্দেগীতে কোন প্রভাব তৈরি হয়না? অথচ আমরাই সর্বপ্রথম এই কিতাবের থেকে উপকৃত হবার হক্কদার ছিলাম।
সাহাবাগন তাদের জিন্দেগীর সাথে কুরআন কে এক করে নিয়েছিলেন। তাদের জিন্দেগী আর কুরআন আলাদা কিছু ছিলোনা। কিন্তু আমরা আজ আমাদের জিন্দেগী থেকে কুরআন কে আলাদা করে ফেলেছি। আর এটাই কাফেরদের সফলতা যে তারা আমাদেরকে কুরআন থেকে আলাদা করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একবার এক মন্ত্রী কুরআন হাতে নিয়ে বলেছিলো যতদিন মুসলিমরা এই কুরআন কে ধরে রাখবে - তোমরা তাদেরকে শাসন করার কথা ভুলে যাও। আর এভাবে যখন আমরা কুরআন থেকে আলাদা হয়ে গেলাম তখনই আমরা অন্ধ দিশেহারা জাতিতে পরিনত হয়েছি আর জালিমরা আমাদের উপরে চেপে বসতে সক্ষম হয়েছে।
আল্লাহ সুরা হাদিদে - এমন কথাই বলেছেন -
أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ
যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী। (হাদিদ - ১৬)
কুরআন থেকে দূরে সরে গেলে আমাদের হাল কি হতে পারে সে ব্যাপারে আল্লাহ আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে কুরআন থেকে অনেক অনেক দূরে সরে গেছি!
যে কোন ভাবেই হোক সাধারন ভাবে আমাদের মধ্যে ধারনা হয়ে গেছে - কুরআন শুধু তিলাওয়াত করার জন্য। কিন্তু এ কথা কে বলেছে? আল্লাহ বলেছেন? রাসুল সঃ বলেছেন? সাহাবারা এমন কিছু করেছেন? তাহলে আমাদের মনে এমন ধারনা কে দিলো? কেন আমরা কুরআনের ব্যাপারে এত সংকীর্ণ হয়ে গেলাম! কুরআন হচ্ছে হিদায়েতের জন্য, রহমতের জন্য, শিফা'র জন্য। আমি বা আপনি যদি কুরআন কে নাই ই বুঝি তাহলে কিভাবে এর রহমত, হেদায়েত, শিফা আশা করতে পারি? যে হার্টের ডাক্তার সার্জারির বই এ কি লেখা আছে তাই বুঝেনা সে কিভাবে হার্টের চিকিৎসা করবে! তাহলে জাতি হিসেবে আমরা যদি কুরআন কে বুঝতে ব্যার্থ হই তাহলে এটাই নিশ্চিত যে - আমরা হেদায়েত, রহমত, শিফা, বিজ্ঞান এগুলো সব কিছু থেকে বঞ্চিত হব। আর বাস্তবেও হচ্ছি।
হায়, মুসলিম তো আজ কুরআন কে বিজ্ঞানময় ভাবতেই লজ্জা পায়! আল্লাহ বলছেন - ইয়া সিন, ওয়াল কুরআনিল হাকিম। (প্রজ্ঞাময় কোরআনের কসম)। মরিস বুকাইল এর কথা - কুরআন বিজ্ঞানের যা কিছু উল্লেখ করেছে তার সবই সত্য, তবে কুরআনের মধ্যে এমন আরো অনেক কিছুই আছে যা এখনো বিজ্ঞানের আয়ত্তের বাইরে!
তাহলে কেন আমরা এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি? নিচে আমি আমার খেয়াল থেকে কিছু কারন উল্লেখ করছি এ ব্যাপারে যা আমাদের সাথে কুরআনের দূরত্ব কমানোর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
১। আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি। কুরআনের দিকে আমাদের যেভাবে তাকানো দরকার আমরা সেভাবে তাকাইনা। আমাদের মনে কুরআনের ব্যাপারে যে বদ্ধমূল ধারনা রয়ে গেছে সেটা নিয়েই আমরা টিকে আছি। কুরআনের সর্বোচ্চ ব্যাবহার শুধু তিলাওয়াত, কিছু সুরা মুখস্ত। আর এটা সম্ভবত আমরা আমাদের বাবা মা পরিবার সমাজ থেকেই শিখেছি। কিন্তু দ্বীন শেখার উৎস পরিবার নয়! এটাও একটা সমস্যা যে - দ্বীন কোথা থেকে শিখতে হবে কার থেকে শিখতে হবে এটা পর্যন্ত কেউ আমাদের শিক্ষা দেয়না!
২। কুরআনের ব্যাপারে ইয়াকিনের অভাব। আল্লাহ যে কুরআন কে হেদায়েত, রহমত, শিফা হিসেবে নাজিল করেছেন, কুরআন যে সত্যই শিফা - এই ব্যাপারে আমাদের ইয়াকিন এর অভাব আছে। আরে ভাই আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই কুরআন দিয়ে শিফার প্রয়োগ দেখিয়েছেন। আমরা পারিনা এটা আমাদের ব্যার্থতা, কুরআনের নয়! এই কুরআন প্রতিনিয়ত মানুষ কে হেদায়েতের পথ দেখাচ্ছে!
আল্লাহ বলেন -
যা তোমার পালকর্তা বলেন তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য। কাজেই তোমরা সংশয়বাদী হয়ো না। (আল ইমরান - ৬০)
আল্লাহ আরো বলেন -
আলিফ-লাম-মীম-রা; এগুলো কিতাবের আয়াত। যা কিছু আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, তা সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এতে বিশ্বাস করে না। (রাদ - ১)
৩। কুরআনের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভাব। কুরআনের সাথে আমাদের সময় খুব কম কাটে। খুব সম্ভব কুরআন কে আমরা সবচেয়ে কম সময় দেই! অথচ উমার রাঃ ১০ বছরের ও অধিক সময় দিয়েছিলেন শুধু সুরা বাকারা মুখস্ত করার জন্য। আমরা দুনিয়ার যে কোন সস্তা কিছুর জন্য সময় ব্যায় করতে কার্পণ্য করিনা কিন্তু কুরআনের সাথে আমাদের কোন সময় দেয়া হয়না। রমাদান ব্যাতিত হয়ত কুরআনের সাথে আমাদের কোন সম্পর্কই থাকেনা।
৪। শিক্ষার অভাব। খোদ কুরআনের ব্যাপারেই আমাদের শিক্ষার অভাব। কুরআন কি বলেছে এই বুঝ তো অনেক পরের কথা, শুদ্ধ ভাবে তিলাওয়াত পর্যন্ত আমরা করতে পারিনা। কিন্তু এর চেয়েও যা দুঃখজনক তা হচ্ছে এই ব্যাপারে আমাদের কোন আগ্রহ দেখা যায়না! হায় আমি কত দুর্বল কুরআন শিক্ষার জরুরত আপনাদের সামনে তুলে ধরার ব্যাপারে! আরে ভাই - এটা কুরআন - কুরআন। একবার এটার দিকে ফিরে তাকান। এটা আপনার রব্ব এর কালাম! দুনিয়ার সমস্ত কিছু শেখার ব্যাপারে আমাদের সময় হয় কিন্তু কুরআন শেখার জন্য আমাদের সময় হয়না!
আল্লাহ বলেন -
এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে। (স্বদ - ২৯)
৫। প্রয়োগ এর অভাব। যাদের জন্য কুরআন এর শিক্ষা, কুরআনের বুঝ সহজ করে দিয়েছেন তারা সাম্ন্য দুনিয়ার স্বার্থে এই কুরআনের শিক্ষা কে আমল পর্যন্ত নিয়ে আসেনা। কুরআন কোন তত্ত্ব কথা না। বা আগের দিনের গল্পকথা ও না। কুরআন হচ্ছে এর প্রতিটি কথা জীবন্ত! এর নাজিলের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব জাতির মুতির জন্য। তাহলে কেমন করে কুরআন বাস্তব প্রয়োগ ব্যাতিত থাকতে পারে! কিন্তু যে মানবেনা যে - কুরআন মানব জাতির মুক্তির দিশারী তার কথা ভিন্ন! আফসোস আমরা অনেকে মুসলিম হয়েও এটি মানতে পারিনা! অনেকে তো দুনিয়ার জন্য - কুরআনের শিক্ষাকে বিক্রি করে দেয়। খুব সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে! আল্লাহ তাদের ব্যাপারেও বলেছেন -
নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। (বাকারা - ১৭৪)
এরাই হল সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করেছে এবং (খরিদ করেছে) ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব। অতএব, তারা দোযখের উপর কেমন ধৈর্য্য ধারণকারী। (বাকারা - ১৭৫)
অধিক অনাচারী কে হবে, যে আল্লাহর আয়াত সমূহকে মিথ্যা বলে এবং গা বাঁচিয়ে চলে। অতি সত্ত্বর আমি তাদেরকে শাস্তি দেব। যারা আমার আয়াত সমূহ থেকে গা বাঁচিয়ে চলে-জঘন্য শাস্তি তাদের গা বাঁচানোর কারণে। (আনয়াম - ৫৭)
৬। তাফাক্কুর এর অভাব। আমরা কুরআন এর ব্যাপারে তাফাক্কুর/তাদাব্বুর করিনা। এটা নিয়ে চিন্তা গবেষণা করিনা। দুখের কথা অনেক বিধর্মী যেটা করে থাকে। আল্লাহ সুবহানাহুওতায়ালা এই কুরআনের মধ্যে যে কত কি রেখেছেন কোন দিনও আমরা তা খুজে পাবোনা যদি না আমরা কুরআন নিয়ে চিন্তা গবেষণা না করি।
আল্লাহ বলেন -
এতে এবাদতকারী সম্প্রদায়ের জন্যে পর্যাপ্ত বিষয়বস্তু আছে। (আম্বিয়া - ১০৬)
আমি এ কোরআনে মানুষের জন্যে সব দৃষ্টান্তই বর্ণনা করেছি, যাতে তারা অনুধাবন করে (ঝুমার - ২৭)
এই কুরআনের মধ্যেই আমাদের জন্য সফলতা আছে। আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করতে হলেও তা এই কুরআন এর সাহায্যেই করতে হবে। আপনি আল্লাহ কে ভালোবাসতে চান? তাহলে তার আগে আমাকে আপনাকে কুরআন কে ভালোবাসতে হবে। আপনি আল্লাহ সম্পর্কে না জানলে আল্লাহ কে ভালোবাসবেন কিভাবে? আর কুরআন ব্যাতিত অন্য কি এমন আছে যা আপনাকে আল্লাহর ব্যাপারে জানাতে পারে?
এই কুরআন ই আমাদের জন্য সবকিছু, মানব জাতির জন্য মুক্তির দিশা। কুরআন ই আমাদের জীবন বিধান, আমাদের সংবিধান। যে কেউ এই কুরআন থেকে বঞ্চিত হল সে তো সমস্ত নিয়ামত থেকেই বঞ্চিত হল, আর যে কেউ এই কুরআন এর স্বাদ আস্বাদন করতে পারলো সে যেন সফল হয়ে গেল!
ইয়া আল্লাহ আপনি আমাদের জন্য আপনার কিতাব কে সহজ করে দেন আর কুরআনের বুঝ কে আমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।
আল্লাহ বলেন -
এখন আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; ফলে তাদের কাছে ফুটে উঠবে যে, এ কোরআন সত্য। আপনার পালনকর্তা সর্ববিষয়ে সাক্ষ্যদাতা, এটা কি যথেষ্ট নয়? (হা মিম - ৫৩)
পরিশেষে -
এগুলো হলো আল্লাহর নিদর্শন, যা আমরা তোমাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে থাকি। আর আপনি নিশ্চিতই আমার রসূলগণের অন্তর্ভুক্ত। (বাকারা - ২৫২)
আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা আমাদের কে এক বিশাল বড় নিয়ামত দান করেছেন - সেটা হচ্ছে আল কুরআন। আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা বলেন -
يَاأَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ
হে মানব সম্প্রদায়, তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য।
আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা আরো বলেন -
كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُوا الْأَلْبَابِ
এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা নিজে কুরআনের অনেক জায়গায় কুরআনের ব্যাপারে প্রসংশা করেছেন।
আল্লাহ বলেছেন এই কুরআন হচ্ছে -
এটা মানুষের জন্যে জ্ঞানের কথা এবং বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়েত ও রহমত। (সুরা জাসিয়া - ২০)
এতে এবাদতকারী সম্প্রদায়ের জন্যে পর্যাপ্ত বিষয়বস্তু আছে। (সুরা আম্বিয়া - ১০৬)
আমি তোমাদের প্রতি একটি কিতাব অবর্তীর্ণ করেছি; এতে তোমাদের জন্যে উপদেশ রয়েছে। তোমরা কি বোঝ না? (সুরা আম্বিয়া - ১০)
এরকম আরো অনেক!
প্রশ্ন হচ্ছে - আমরা কুরআন থেকে কতটুকু ফায়দা নিতে পারছি? কুরআনের ভিতরে আল্লাহ আমাদের জন্য সমস্ত সমস্যার সমাধান রেখেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা সেই সমাধানের কতটুকু নিতে পারছি? কুরআন শুধু আমাদের ধর্মীয় জীবন নিয়ে কথা বলেনি, বরং এর বাইরে ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, সমরনীতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, চিকিৎসা সমস্ত কিছু ব্যাপারে কথা বলেছে। কুরআন যেমন বাদ দেয়নি মহাকাশ এর মত বিশাল বিষয়বস্তু তেমনি বাদ দেয়নি অনু পরমানুর মত সূক্ষ বিষয়বস্তু। কুরআন যেমন দুনিয়ার জীবনকে বর্ণনা করেছে তেমনি বর্ণনা করেছে আখিরাতের জীবন। কুরআন যেমন আমাদের সূচনা বর্ণনা করেছে, তেমনি করেছে এই সৃষ্টি জগতের, তেমনি করেছে অন্য মাখলুকের। এতে যেমন সমাধান আছে তেমনি আছে চ্যালেঞ্জ। এতে যেমন ভয় আছে তেমনি ভালোবাসা আছে।
আমার মত অধমের জন্য কুরআনের ব্যাপারে বর্ণনা করার চেষ্টা করা হাস্যকর ।
আল্লাহ কুরআনের ব্যাপারে কেমন চ্যালেঞ্জ দিচ্ছেন দেখেন -
তারা কি বলে? কোরআন তুমি তৈরী করেছ? তুমি বল, তবে তোমরাও অনুরূপ দশটি সূরা তৈরী করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পার ডেকে নাও, যদি তোমাদের কথা সত্য হয়ে থাকে। (হুদ - ১৩)
মানুষ কি বলে যে, এটি বানিয়ে এনেছ? বলে দাও, তোমরা নিয়ে এসো একটিই সূরা, আর ডেকে নাও, যাদেরকে নিতে সক্ষম হও আল্লাহ ব্যতীত, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো। (ইউনুস - ৩৮)
এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো। (বাকারা - ২৩)
আজ পর্যন্ত কি কেউ পেরেছে? কেউ? দুনিয়ার যে কোন প্রান্তে। সারা দুনিয়ায় মানুষ কত কি করে দেখাচ্ছে? কেন তারা একটা সুরা বানিয়ে দেখাতে পারলোনা! আল্লাহ নাজিল করলেন সুরা বুরুজ এর প্রথম আয়াত - ওয়াস সামা ইজা তিল বুরুজ। রাসুল সাঃ এই আয়াত কে কাবার দরজায় ঝুলিয়ে দিতে বললেন আর মক্কার কাফের কবিদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললেন - যাও পারলে এই আয়াতের পরের আয়াত নিয়ে আসো। মক্কার কাফেররা পেরেশান হয়ে গেলো, ওয়াস সামা ইজা তিল বুরুজ - ওয়াস সামা ইজা তিল বুরুজ ... এর পরে কি হবে! কোন কিছুই বের করতে পারেনা। সব শেষে তাদের সব চেয়ে শ্রেষ্ঠ কবি নিয়ে আসলো -<< ওয়াস সামা ইজা তিল বুরুজ >> // ওয়ান নিসা ইজা তিল ফুরুজ! // - এর পরে আল্লাহর আয়াত আসলো
ওয়াস সামা ইজা তিল বুরুজ
ওয়া ইয়াওমিল মাওউদ
ওশাহিদিও ওয়া মাশহুদ ...
মক্কার কাফের রা পর্যন্ত তাদের কবিকে বললো - তুমি এইটা কি লাইন নিয়ে তৈরি করলা! তোমার জন্য লজ্জা ছাড়া আর কিছুই না!!! এরকম আরও আছে - মিথ্যা নবি মুসায়ালামা ও কুরআনের অনুকরনে সুরা বানানোর চেস্টা করেছিলো - যা হাস্যরস ছাড়া আর কিছুই না।
এই উদাহরন আমি এই জন্য পেশ করলাম যেন - এতদিন আমরা শুনে এসেছি এই কুরআনের মত আরেক টা সুরা কেউ বানাতে পারেনি, পারবে না। কিন্তু কেন? আমাদের জানতে হবে কেন পারবে না? এটা না জানলে এই বেপারে আমাদের ইয়াকিন আসা হয়ত কঠিন হতে পারে। এমন না যে কেউ চেষ্টা করেনি! করেছে আপ্রান চেষ্টা করেছে। আরবের বিখ্যাত বিখ্যাত কবিরা আপ্রান চেষ্টা করেছে কিন্তু তারা মুসায়ালামার সুরা তুফা এর অপেক্ষা উত্তম কিছু আনতে পারেনি! জি পারেনি - স্রেফ পারেনি। আর এটাও মনে রাখা দরকার মুসায়ালামর আরবি যেন তেন কিছু ছিলনা, সেই যুগে আরবদের মধ্যে সম্মানিত হতে হলে তার আবশ্যিক যোগ্যতার মধ্যে একটি হচ্ছে আরবি সাহিত্য/ভাষার উপরে দক্ষতা। কারন আরবরা তাদের সাহিত্য এবং ভাষা নিয়ে গর্বিত ছিল!
আর আর কোন দিন পারবেও না। কারন সাহিত্যবিদ দের মতে - কুরআন এর যে আরবি এই আরবি এখন আর নেই - এই আরবির পারদর্শিতা এখন আর কারো নেই!
যাই হোক - এটা আমার মূল কথা ছিলোনা। আমি যা বলতে চাচ্ছিলাম তা আসলে অন্য প্রসঙ্গ। তবে এই কথাগুলো এজন্য বললাম যেন কুরআন সম্পর্কে আমাদের সামনে কিছু তথ্য হাজির থাকে।
মূল কথাঃ
মূল কথায় যাবার আগে একটা ঘটনা বলি। ডক্টর মরিস বুকাইল এর নাম তো আপনারা অনেকে শুনেছেন। তাকে ফিরাউনের মমি পরীক্ষা করার জন্য প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিলো। ডক্টর মরিস গবেষণা থেকে যা পেলেন তা হচ্ছে - ফিরাউনের দেহ সাগরে ডুবেছিলো। এবং তার অনুসারীরা সাগর থেকে ফিরাউনের দেহ তুলে নিয়ে এসে মমি করে। ডক্টর মরিসের মনে যে প্রশ্ন ছিলো তা হচ্ছে - সাগর থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসা এই শরীরকে কিভাবে মমি করা গেলো! আর করা হলেও কিভাবে তা এতদিন পর্যন্ত টিকে থাকলো! কারন - পানিতে ডুবে গেছে এমন দেহ মমি করে সংরক্ষন করা অসাধ্য! ইতিমধ্যে ডক্টর মরিস কোন ভাবে জানতে পারলেন যে কুরআনে এই কথা ১৪০০ বছর আগেই উল্লেখ করা আছে - আল্লাহ বলেছেন - তিনি ফিরাউনের দেহকে সংরক্ষন করবেন যেন তা মানব জাতির জন্য নিদর্শন হতে পারে! ডক্টর মরিস এই কথা শুনে - কোন ভাবেই বিশ্বাস করতে চান নি, এর পরে তিনি নিজে কুরআন খুলে এর সত্যতা যাচাই করেন এবং মুসলমান হয়ে যান!
এরকম ঘটনা এক, দুই টা নয় বরং অনেক রয়েছে।
তাহলে আমরা কেন কুরআন থেকে উপকৃত হতে পারছিনা? আমরা কেন কুরআন দ্বারা প্রভাবিত হতে পারছিনা? বিধর্মীরা এই কুরআন নিয়ে গবেষণা করে এর থেকে উপকৃত হচ্ছে, কুরআনের বিজ্ঞান, কুরআনের সাহিত্য, কুরআনের সৌন্দর্য অনুভব করছে কিন্তু কেন আমরা অধিকাংশ মুসলিম এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি? কেন কুরআনের দ্বারা আমাদের জিন্দেগীতে কোন প্রভাব তৈরি হয়না? অথচ আমরাই সর্বপ্রথম এই কিতাবের থেকে উপকৃত হবার হক্কদার ছিলাম।
সাহাবাগন তাদের জিন্দেগীর সাথে কুরআন কে এক করে নিয়েছিলেন। তাদের জিন্দেগী আর কুরআন আলাদা কিছু ছিলোনা। কিন্তু আমরা আজ আমাদের জিন্দেগী থেকে কুরআন কে আলাদা করে ফেলেছি। আর এটাই কাফেরদের সফলতা যে তারা আমাদেরকে কুরআন থেকে আলাদা করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একবার এক মন্ত্রী কুরআন হাতে নিয়ে বলেছিলো যতদিন মুসলিমরা এই কুরআন কে ধরে রাখবে - তোমরা তাদেরকে শাসন করার কথা ভুলে যাও। আর এভাবে যখন আমরা কুরআন থেকে আলাদা হয়ে গেলাম তখনই আমরা অন্ধ দিশেহারা জাতিতে পরিনত হয়েছি আর জালিমরা আমাদের উপরে চেপে বসতে সক্ষম হয়েছে।
আল্লাহ সুরা হাদিদে - এমন কথাই বলেছেন -
أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ
যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী। (হাদিদ - ১৬)
কুরআন থেকে দূরে সরে গেলে আমাদের হাল কি হতে পারে সে ব্যাপারে আল্লাহ আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে কুরআন থেকে অনেক অনেক দূরে সরে গেছি!
যে কোন ভাবেই হোক সাধারন ভাবে আমাদের মধ্যে ধারনা হয়ে গেছে - কুরআন শুধু তিলাওয়াত করার জন্য। কিন্তু এ কথা কে বলেছে? আল্লাহ বলেছেন? রাসুল সঃ বলেছেন? সাহাবারা এমন কিছু করেছেন? তাহলে আমাদের মনে এমন ধারনা কে দিলো? কেন আমরা কুরআনের ব্যাপারে এত সংকীর্ণ হয়ে গেলাম! কুরআন হচ্ছে হিদায়েতের জন্য, রহমতের জন্য, শিফা'র জন্য। আমি বা আপনি যদি কুরআন কে নাই ই বুঝি তাহলে কিভাবে এর রহমত, হেদায়েত, শিফা আশা করতে পারি? যে হার্টের ডাক্তার সার্জারির বই এ কি লেখা আছে তাই বুঝেনা সে কিভাবে হার্টের চিকিৎসা করবে! তাহলে জাতি হিসেবে আমরা যদি কুরআন কে বুঝতে ব্যার্থ হই তাহলে এটাই নিশ্চিত যে - আমরা হেদায়েত, রহমত, শিফা, বিজ্ঞান এগুলো সব কিছু থেকে বঞ্চিত হব। আর বাস্তবেও হচ্ছি।
হায়, মুসলিম তো আজ কুরআন কে বিজ্ঞানময় ভাবতেই লজ্জা পায়! আল্লাহ বলছেন - ইয়া সিন, ওয়াল কুরআনিল হাকিম। (প্রজ্ঞাময় কোরআনের কসম)। মরিস বুকাইল এর কথা - কুরআন বিজ্ঞানের যা কিছু উল্লেখ করেছে তার সবই সত্য, তবে কুরআনের মধ্যে এমন আরো অনেক কিছুই আছে যা এখনো বিজ্ঞানের আয়ত্তের বাইরে!
তাহলে কেন আমরা এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি? নিচে আমি আমার খেয়াল থেকে কিছু কারন উল্লেখ করছি এ ব্যাপারে যা আমাদের সাথে কুরআনের দূরত্ব কমানোর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
১। আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি। কুরআনের দিকে আমাদের যেভাবে তাকানো দরকার আমরা সেভাবে তাকাইনা। আমাদের মনে কুরআনের ব্যাপারে যে বদ্ধমূল ধারনা রয়ে গেছে সেটা নিয়েই আমরা টিকে আছি। কুরআনের সর্বোচ্চ ব্যাবহার শুধু তিলাওয়াত, কিছু সুরা মুখস্ত। আর এটা সম্ভবত আমরা আমাদের বাবা মা পরিবার সমাজ থেকেই শিখেছি। কিন্তু দ্বীন শেখার উৎস পরিবার নয়! এটাও একটা সমস্যা যে - দ্বীন কোথা থেকে শিখতে হবে কার থেকে শিখতে হবে এটা পর্যন্ত কেউ আমাদের শিক্ষা দেয়না!
২। কুরআনের ব্যাপারে ইয়াকিনের অভাব। আল্লাহ যে কুরআন কে হেদায়েত, রহমত, শিফা হিসেবে নাজিল করেছেন, কুরআন যে সত্যই শিফা - এই ব্যাপারে আমাদের ইয়াকিন এর অভাব আছে। আরে ভাই আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই কুরআন দিয়ে শিফার প্রয়োগ দেখিয়েছেন। আমরা পারিনা এটা আমাদের ব্যার্থতা, কুরআনের নয়! এই কুরআন প্রতিনিয়ত মানুষ কে হেদায়েতের পথ দেখাচ্ছে!
আল্লাহ বলেন -
যা তোমার পালকর্তা বলেন তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য। কাজেই তোমরা সংশয়বাদী হয়ো না। (আল ইমরান - ৬০)
আল্লাহ আরো বলেন -
আলিফ-লাম-মীম-রা; এগুলো কিতাবের আয়াত। যা কিছু আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, তা সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এতে বিশ্বাস করে না। (রাদ - ১)
৩। কুরআনের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভাব। কুরআনের সাথে আমাদের সময় খুব কম কাটে। খুব সম্ভব কুরআন কে আমরা সবচেয়ে কম সময় দেই! অথচ উমার রাঃ ১০ বছরের ও অধিক সময় দিয়েছিলেন শুধু সুরা বাকারা মুখস্ত করার জন্য। আমরা দুনিয়ার যে কোন সস্তা কিছুর জন্য সময় ব্যায় করতে কার্পণ্য করিনা কিন্তু কুরআনের সাথে আমাদের কোন সময় দেয়া হয়না। রমাদান ব্যাতিত হয়ত কুরআনের সাথে আমাদের কোন সম্পর্কই থাকেনা।
৪। শিক্ষার অভাব। খোদ কুরআনের ব্যাপারেই আমাদের শিক্ষার অভাব। কুরআন কি বলেছে এই বুঝ তো অনেক পরের কথা, শুদ্ধ ভাবে তিলাওয়াত পর্যন্ত আমরা করতে পারিনা। কিন্তু এর চেয়েও যা দুঃখজনক তা হচ্ছে এই ব্যাপারে আমাদের কোন আগ্রহ দেখা যায়না! হায় আমি কত দুর্বল কুরআন শিক্ষার জরুরত আপনাদের সামনে তুলে ধরার ব্যাপারে! আরে ভাই - এটা কুরআন - কুরআন। একবার এটার দিকে ফিরে তাকান। এটা আপনার রব্ব এর কালাম! দুনিয়ার সমস্ত কিছু শেখার ব্যাপারে আমাদের সময় হয় কিন্তু কুরআন শেখার জন্য আমাদের সময় হয়না!
আল্লাহ বলেন -
এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে। (স্বদ - ২৯)
৫। প্রয়োগ এর অভাব। যাদের জন্য কুরআন এর শিক্ষা, কুরআনের বুঝ সহজ করে দিয়েছেন তারা সাম্ন্য দুনিয়ার স্বার্থে এই কুরআনের শিক্ষা কে আমল পর্যন্ত নিয়ে আসেনা। কুরআন কোন তত্ত্ব কথা না। বা আগের দিনের গল্পকথা ও না। কুরআন হচ্ছে এর প্রতিটি কথা জীবন্ত! এর নাজিলের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব জাতির মুতির জন্য। তাহলে কেমন করে কুরআন বাস্তব প্রয়োগ ব্যাতিত থাকতে পারে! কিন্তু যে মানবেনা যে - কুরআন মানব জাতির মুক্তির দিশারী তার কথা ভিন্ন! আফসোস আমরা অনেকে মুসলিম হয়েও এটি মানতে পারিনা! অনেকে তো দুনিয়ার জন্য - কুরআনের শিক্ষাকে বিক্রি করে দেয়। খুব সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে! আল্লাহ তাদের ব্যাপারেও বলেছেন -
নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। (বাকারা - ১৭৪)
এরাই হল সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করেছে এবং (খরিদ করেছে) ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব। অতএব, তারা দোযখের উপর কেমন ধৈর্য্য ধারণকারী। (বাকারা - ১৭৫)
অধিক অনাচারী কে হবে, যে আল্লাহর আয়াত সমূহকে মিথ্যা বলে এবং গা বাঁচিয়ে চলে। অতি সত্ত্বর আমি তাদেরকে শাস্তি দেব। যারা আমার আয়াত সমূহ থেকে গা বাঁচিয়ে চলে-জঘন্য শাস্তি তাদের গা বাঁচানোর কারণে। (আনয়াম - ৫৭)
৬। তাফাক্কুর এর অভাব। আমরা কুরআন এর ব্যাপারে তাফাক্কুর/তাদাব্বুর করিনা। এটা নিয়ে চিন্তা গবেষণা করিনা। দুখের কথা অনেক বিধর্মী যেটা করে থাকে। আল্লাহ সুবহানাহুওতায়ালা এই কুরআনের মধ্যে যে কত কি রেখেছেন কোন দিনও আমরা তা খুজে পাবোনা যদি না আমরা কুরআন নিয়ে চিন্তা গবেষণা না করি।
আল্লাহ বলেন -
এতে এবাদতকারী সম্প্রদায়ের জন্যে পর্যাপ্ত বিষয়বস্তু আছে। (আম্বিয়া - ১০৬)
আমি এ কোরআনে মানুষের জন্যে সব দৃষ্টান্তই বর্ণনা করেছি, যাতে তারা অনুধাবন করে (ঝুমার - ২৭)
এই কুরআনের মধ্যেই আমাদের জন্য সফলতা আছে। আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করতে হলেও তা এই কুরআন এর সাহায্যেই করতে হবে। আপনি আল্লাহ কে ভালোবাসতে চান? তাহলে তার আগে আমাকে আপনাকে কুরআন কে ভালোবাসতে হবে। আপনি আল্লাহ সম্পর্কে না জানলে আল্লাহ কে ভালোবাসবেন কিভাবে? আর কুরআন ব্যাতিত অন্য কি এমন আছে যা আপনাকে আল্লাহর ব্যাপারে জানাতে পারে?
এই কুরআন ই আমাদের জন্য সবকিছু, মানব জাতির জন্য মুক্তির দিশা। কুরআন ই আমাদের জীবন বিধান, আমাদের সংবিধান। যে কেউ এই কুরআন থেকে বঞ্চিত হল সে তো সমস্ত নিয়ামত থেকেই বঞ্চিত হল, আর যে কেউ এই কুরআন এর স্বাদ আস্বাদন করতে পারলো সে যেন সফল হয়ে গেল!
ইয়া আল্লাহ আপনি আমাদের জন্য আপনার কিতাব কে সহজ করে দেন আর কুরআনের বুঝ কে আমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।
আল্লাহ বলেন -
এখন আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; ফলে তাদের কাছে ফুটে উঠবে যে, এ কোরআন সত্য। আপনার পালনকর্তা সর্ববিষয়ে সাক্ষ্যদাতা, এটা কি যথেষ্ট নয়? (হা মিম - ৫৩)
পরিশেষে -
এগুলো হলো আল্লাহর নিদর্শন, যা আমরা তোমাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে থাকি। আর আপনি নিশ্চিতই আমার রসূলগণের অন্তর্ভুক্ত। (বাকারা - ২৫২)
Comment