আমরা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থায় বেড়ে উঠেছি যা আমাদের চিন্তা চেতনা স্বাধীন ভাবে বিকশিত হওয়ার পথকে রূদ্ধ করে রেখেছে। এই অধঃপতিত শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি প্রতিভাবান মুজাহিদ প্রজন্ম গড়ে তোলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে জিহাদের ব্যস্ততার কারণে নিজের সন্তানদেরকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া এটিও একটি সমস্যা। তাই আমাদেরকে সব দিক সমন্বয় করে সন্তানের সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, কেননা এরাই আগামী দিনের মুজাহিদ। সন্তানের সুশিক্ষার ব্যাপারে আমরা অনেকেই হয়ত অনেক কিছু চিন্তা করে রেখেছি। আমরা চাই আমাদের চিন্তাগুলো সকলের সাথে শেয়ার করতে যেন এখান থেকেই একটি প্রায়োগিক সিলেবাস পাওয়া যায়।
সন্তানের শিক্ষার ব্যাপারে আমার কিছু ব্যাক্তিগত চিন্তা আমি এখানে শেয়ার করব, ইনশাআল্লাহ। আশা করব ভাইয়েরাও আমার মতামতকে পর্যালোচনা করবেন যেন এর ভুলত্রুটি গুলো বের হয়ে আসে এবং অন্য ভাইয়েরাও কমেন্টে এই ব্যাপারে আলোচনা করবেন যে, সন্তানের সুশিক্ষার ব্যাপারে আপনারা কি চিন্তা করছেন। এই আর্টিক্যালটি যেহেতু একটি চলমান গবেষণার অংশ তাই প্রায় প্রতি সপ্তাহেই এখানে কিছু নতুন কৌশল নিয়ে আলোচনা ও অভিজ্ঞতা সংযুক্ত করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। তাই যে ভাইয়েরা একবার এই আর্টিক্যালটি পড়ে ফেলেছেন তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে কিছু দিন পর পুনরায় আর্টিক্যালটি পড়ার জন্য। ফলে কোন ভুল থাকলে তা সহজেই চোখে পড়বে ইনশাআল্লাহ।
"একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সামগ্রিকভাবে কিন্তু আমাদের হাতে সময় খুব কম। কেননা আমরা একটি যুদ্ধ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছি এবং সম্মুখ যুদ্ধের দিন ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে। তাই আমাদের হাতে সময় খুব সীমিত। আমার সন্তানের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। আমি তার আগামী কয়েক বছরের পড়াশোনার জন্য একটি প্রাথমিক সিলেবাস নির্ধারণ করেছি এবং সেভাবেই তাকে শিক্ষা দিচ্ছি ইনশাআল্লাহ। আমার হাতে যথেষ্ট টাকা পয়সা নেই তাই আমি অল্প খরচে কিভাবে তাকে শিক্ষিত ও মুজাহিদদের সাহায্যকারী হিসেবে গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে অনেক গবেষণা করেছি। সব বাচ্চাই তার বাবার কম্পিউটার নিয়ে খেলা করতে পছন্দ করে। আমি এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি। আমি তাকে a b c d শিখার জন্য আলাদা কোন বই কিনে দেই নাই। আমার কম্পিউটারেই তাকে a b c d শিখাচ্ছি। এর ফলে কয়েকটি উপকার হয়েছে। আমি লক্ষ্য করেছি সে খুব আনন্দের সাথে a b c d শিখছে এবং মাত্র কয়েকদিনেই তার ইংরেজি বর্ণমালা মুখস্ত হয়ে গেছে অন্যদিকে তার ইংরেজি টাইপিং ও কিন্তু শেখা হয়ে যাচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। এর আর একটি উপকার হল সে কিন্তু এটাকে কোন বোঝা হিসেবে নিচ্ছে না এবং আমি আশা করি আগামী এক বছরের মধ্যেই সে দূর্দান্ত গতিতে টাইপিং করতে পারবে ইনশাআল্লাহ। শুধু টাইপিং করলে কিন্তু চলবে না, খাতা কলমে লিখাও শিখতে হবে। তাই খরচ সাশ্রয়ের জন্য আমি একটি সাইন-পেন/মার্কার-পেন কিনেছি (কলম/পেন্সিল কিনে দেই নাই কারণ এগুলো খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়)। খাতা না কিনে আমি তাকে লিখতে দিয়েছি ঘরের মেঝের টাইলসে। টাইলসে লেখার সুবিধা হল যে কোন কাপড় দিয়ে তা সহজেই মুছে ফেলা যায় এবং তা আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী।
কম্পিউটারে a b c d শিখার পাশাপাশি তাকে কম্পিউটারে পেইন্টিং করা শিখাচ্ছি যেন সে তার ৭/৮ বছর বয়সেই জিহাদের বিভিন্ন ভিডিও এডিটিং এর কাজ করতে পারে ইনশাআল্লাহ। বাচ্চাদের জন্য Tux Paint নামে একটি সফটওয়্যার আছে। এটা এতটাই সোজা ও আনন্দদায়ক যে মাত্র তিন বছরের বাচ্চারা সহজেই এই সফটওয়্যার দিয়ে পেইন্টিং শিখতে পারে। এরপর সে ধাপে ধাপে একদিন জিহাদি ভিডিও তৈরি করবে ইনশাআল্লাহ।
আপনার স্ত্রীকে শিখিয়ে দিন বাচ্চাদেরকে কিভাবে পড়াতে হয়। বাচ্চারা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দ্বারা খুব প্রভাবিত হয়। তাই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যাবহার করে তাদেরকে পড়ান। দেখবেন তারা খুব দ্রুত আয়ত্ব করে নিচ্ছে ইনশাআল্লাহ। আপনি ইউটিউবে WATTSENGLISH লিখে সার্চ দিলে বাচ্চাদের সাথে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখে ফেলবেন।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, কেন আমি প্রথমে আরবি না শিখিয়ে ইংরেজি শিখাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালা আমার দিলের খবর অবশ্যই জানেন, আমার তামান্না হল বাচ্চাকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা এবং কিছু দিনের মধ্যেই তার হেফজের ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমি চিন্তা করেছি, যদি আগামীকাল সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে আমার সন্তান থেকে আমি ঠিক কি ধরণের যোগ্যতা আশা করি ? অবশ্যই এর উত্তর হল- অস্ত্র চালনা। কিন্তু যেহেতু আমি এই মূহুর্তে তাকে রাইফেল চালনা শিক্ষা দিতে পারছি না বা রাইফেল আমার কাছে নেই তাই আমি এমন একটি হাতিয়ারের চিন্তা করলাম যা আমার কাছে মওজুদ আছে। সম্ভবত আপনার কাছেও সেই হাতিয়ার টি আছে, আর তা হল - কম্পিউটার। যেখানে একটি একে-৪৭ রাইফেলের দাম প্রায় চার লাখ টাকা সেখানে মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আপনি একটি অত্যন্ত ভাল মানের ব্র্যান্ড নিউ কম্পিউটার কিনতে পারবেন। আমরা প্রায় বলে থাকি মিডিয়া জিহাদের অর্ধেক। আর মিডিয়া নিয়ে কাজ করতে গেলে আপনার অবশ্যই একটি ভাল মানের কম্পিউটার লাগবে। তাছাড়া আমি চাই আলেম হওয়ার পাশাপশি আমার সন্তান একজন ভাল মানের কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও হ্যাকার হোক। বর্তমান জিহাদের ময়দানে একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও হ্যাকার কতটা গুরুত্ব রাখে তা নিচের একটি পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
হোয়াইট হাউসের একটি স্বীকারোক্তি প্রকাশিত হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয় "শুধুমাত্র অনলাইন হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে ২০১৬ সালে মার্কিন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০৯ বিলিয়ন ডলারের মত।" অথচ ২০১৯ সালের জন্য সিরিয়া যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট হল ১৫ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে আমেরিকা সিরিয়া যুদ্ধে যে ব্যায় করবে তার প্রায় ৭ গুন বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে শুধুমাত্র সাইবার এট্যাকের দ্বারা! অথচ একটি এট্যাকের জন্য প্রয়োজন শুধুমাত্র একটি কম্পিউটার, দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও প্রোগ্রামিং জ্ঞান।
আমার লেখা পড়ে অবশ্য রাইফেল বা বোমার গুরুত্বকে ছোট মনে করবেন না। আমি শুধু একটি ভয়ংকর অস্ত্র হিসেবে কম্পিউটারের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেছি মাত্র। এটি এমন একটি অস্ত্র যা আমাদের অনেকের ঘরেই আছে কিন্তু আমরা এর ব্যবহার জানি না আফসোস।
তো মূল কথা হল আমার সন্তানকে মুজাহিদ হিসেবে একজন ভাল কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও হ্যাকার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমি এখন থেকেই তার ইংরেজি ও কম্পিউটার শিক্ষা শুরু করে দিয়েছি। আমার এক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু ছিল, সে মাত্র চার বছর বয়স থেকেই কম্পিউটার চালনা শুরু করেছিল। আরও মজার কথা হল একজন ভাল প্রোগ্রামার ও হ্যাকার হওয়ার জন্য কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয় না, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি চাইলে ঘরে বসেই প্রোগ্রামার ও হ্যাকার হতে পারেন যদি আপনি কঠোর অধ্যাবসায়ী হয়ে থাকেন ইনশাআল্লাহ।
এক ভাই জানতে চেয়েছেন, ১৫ /১৬ বছরের মধ্যে সন্তানকে একজন যোগ্য মুজাহিদ হিসেবে গড়ে তুলতে একটি কার্যকর সিলেবাস কেমন হওয়া উচিৎ?
আসলে পড়াশোনা বা আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে "শিক্ষা-দীক্ষা" হল শিক্ষার পাশাপাশি দীক্ষার একটি প্রচেষ্টা। একজন আন্তরিক মুজাহিদের সন্তান নিঃসন্দেহে একজন মুজাহিদ হবেন ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আমরা চাইছি "যোগ্য মুজাহিদ"। তাই তো? তাহলে এই পয়েন্টেই আলোচনা চলুক।
যোগ্য মুজাহিদ গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটি সন্তান জন্মের আগ থেকেই শুরু হয়। তাই প্রথমে আসি বিয়ের প্রসঙ্গে। যে ভাইয়েরা বিয়ের কথা চিন্তা করছেন তাদের প্রতি আমার পরামর্ষ, শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করুন। শিক্ষিত স্ত্রী যেভাবে আপনার জিহাদের কাজে সহায়ক হবেন তেমনিভাবে শিক্ষিত মা আপনার সন্তানকে যোগ্য মুজাহিদ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবেন ইনশাআল্লাহ। বিয়ের পর সন্তান হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সময়টা খুব গুরুত্বপুর্ণ। আপনার জিহাদি চেতনা ঠিক এই সময়েই আপনার স্ত্রীর মধ্যে সঞ্চারিত হবে। কারণ ঠিক এই সময়টাতেই স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। আপনি এই সময়ে তাকে যে দীক্ষা দেবেন সে তা চিরদিন মনে রাখবে। বাসর রাতেই তাকে আপনার জীবনের স্বপ্ন সম্পর্কে কিছু কথা বলতে পারেন যেমনঃ- "আমার জীবনের স্বপ্ন হল, তুমি আর আমি সারাজীবন ইসলামের সেবা করব, অসহায় মুসলিমদের পাশে দাঁড়াব ইনশাআল্লাহ। তুমি কি বল? তুমি কি আমার পাশে থেকে আমাকে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ?" যদি রোমান্টিক ভাবে হেকমতের সাথে তাকে বোঝাতে পারেন তাহলে আপনার অর্ধেক কাজ হয়ে গেল আলহামদুলিল্লাহ। বাকি পরিবর্তনের জন্য তাকে সহযোগিতা করুন, বই পড়তে দিন, আলোচনা করুন। সন্তান হওয়ার পর স্ত্রীর মাঝে আপনার জিহাদি চেতনা নতুন করে সঞ্চারিত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কেননা সন্তান হওয়ার পরবর্তী সময়ে স্বামী স্ত্রী পরস্পরের কাছাকাছি খুব কম সময়ই অবস্থান করতে পারেন। এটাই বাস্তবতা। তাহলে বোঝা গেল, মাদয়ূ (দ্বায়ী যাকে দাওয়াত দেয়) দিন দিন উন্নতি করবেন যদি দ্বায়ী তাকে প্রয়োজন পরিমাণ সময় দেন। এইজন্য প্রথমত আমার নিজের ভাল করে মানহাজ বোঝা লাগবে দ্বিতীয়ত স্ত্রীকে বোঝানো লাগবে। এই জন্য এমন পরিবেশ সৃষ্টি করুন যেন স্ত্রী আপনাকে জিহাদ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। তাকে জিহাদি বই অধ্যায়ন করার সুযোগ দিন। আমি নিজেই যদি কিতাব না পড়ি তাহলে আমার স্ত্রী কখনই কিতাব পড়বে না। কিতাব পড়ে যে পয়েন্ট গুলো আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে স্ত্রীকে ডেকে সেটা দেখান ও তার সাথে সে ব্যাপারে আলোচনা করুন, তার মতামত নিন। সংসারের কাজে তাকে এমনভাবে সহায়তা করুন যেন সে প্রতিদিন লাগাতার কয়েক ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কিতাব পড়তে পারে। আমি বারবার বলছি, সন্তান হওয়ার পর কিন্তু আপনি বা আপনার স্ত্রী আর কক্ষনই এমন দারুণ সুযোগ আর পাবেন না, তাই সন্তান হওয়ার আগের একটি বছরকে গণিমত মনে করুন। তাই বলে সন্তান নিতে অনীহা বা দেরী করা যাবে না, খবরদার। এবং অবশ্যই পরপর দুটি সন্তান নিবেন ইনশাআল্লাহ যদি আপনার স্ত্রী শারীরিকভাবে ফিট থাকেন। এতে অনেক উপকার আছে। বিভিন্ন ভাবে আপনি যেমন আর্থিক লাভবান হবেন তেমনিভাবে আপনার উভয় সন্তানের মানসিক ও শারীরিক গঠন উন্নত হবে। অনেকে মনে করেন, আর্থিক খরচ বেড়ে যাবে, এটা শয়তানের ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয় বরং খরচ সাশ্রয় হয়। আপনি একই কাপড় দুজনকে পড়াতে পারবেন। একই সাথে তারা খেলবে, এতে আপনার ও মায়ের উপর চাপ কম পড়বে। একই সাথে তাদেরকে পড়াশোনা করাতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা হল আপনার সন্তানরা কখনো একাকী বোধ করবে না। এমনকি তাদের রোগ ব্যাধিও কম হবে, ইনশাআল্লাহ। আর একটা বিষয় হল, সব সময় টার্গেট করবেন আপনার বড় সন্তানকে। বড় সন্তানের তারবিয়ত যদি ঠিক হয় তাহলে ছোট সন্তান এমনিতেই ঠিক হবে ইনশাআল্লাহ।
আমরা সব সময় বলে থাকি "সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন"। আসলে এই বিষয়টা কেমন? যেখানে আপনি নিজেই অনেক ব্যস্ত সেখানে কিভাবে আপনি সন্তানের জন্য আলাদা সময় বের করবেন? আসলে ব্যাপারটা এত জটিল নয়। আপনি যখন নামাজ পড়েন তখন আপনার সন্তানকে ডাকুন, "বাবা আসো নামায পড়ি", এভাবে সে আস্তে আস্তে নামায শিখবে। আপনি যখন কুরআন পড়েন তখন আপনার সন্তানকে ডাকুন, "বাবা আসো কুরআন তেলায়াত করি", এভাবে সে আস্তে আস্তে কুরআন শিখবে। আপনি যখন ব্যায়াম করেন তখন আপনার সন্তানকে ডাকুন, "বাবা আসো ব্যায়াম করি", এভাবে সে ব্যায়াম শিখবে। আপনার সব কাজে সন্তানকে সাথে রাখুন, স্ত্রীকেও সাথে রাখার চেষ্টা করুন ইনশাআল্লাহ। হিসেব করে দেখুন আপনি কিন্তু পরিবারকে অনেক সময় দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ!
একটা গল্প শুনেছিলাম, "এক ব্যাক্তি প্রতিদিন একটা হাতি কাঁধে চড়িয়ে পাহাড়ে উঠা নামা করে! তাকে প্রশ্ন করা হল - আপনি কিভাবে এই অসাধ্য সাধন করলেন ? তিনি বললেন- হাতিটি যখন ছোট ছিল তখন থেকেই আমি তাকে কাঁধে নিয়ে পাহাড়ে চড়তাম। প্রতিদিন হাতিটি একটু একটু বড় হতে লাগলো আর আমারও আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে গেলো।" এই টেকনিক আমি আমার সন্তানের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করি। আমি আমার দু হাত মাটির সমান্তরালে সামনের দিকে প্রসারিত করে সন্তানকে আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠায়। এটা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যায়াম। তবে আশা করি সে ব্যাক্তির ন্যায় আমারও অভ্যাস হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আমি আমার সন্তানদেরকে লতাপাতা ও গাছগাছড়া খাদ্য ও ঔষুধ হিসেবে ব্যবহার করার অভ্যেস গড়ে তুলেছি। তারা খুব সাবলীলভাবেই উপকারী লতাপাতা কাঁচা কাঁচা খেয়ে ফেলে, আলহামদুলিল্লাহ! যা সাধারণ মানুষ কল্পনাও করে না।
দুটো বিষয়ের সমন্বয় হতে হবে,
১। আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর পর আপনার সন্তানকে আপনি জিহাদের কোন শাখা/শো'বা তে দেখতে চান।
২। সে পর্যন্ত পৌঁছে দিতে যে সকল উপকরণ প্রয়োজন তা আপনার কাছে আছে কিনা ।
আমার ক্ষেত্রে এই দুটো প্রশ্নের উত্তর হল,
১। আমি তাকে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর পর একজন দূর্দান্ত কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে দেখতে চায়, যে কিনা কাফেরদের সকল সাইবার যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিবে, মুজাহিদদের জন্য কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করবে। এতটুকু যদি নাও হয় অন্তত সে যেন মুজাহিদদের আইটি ট্রেইনার ও মিডিয়া সেক্টরের দায়িত্ব নিতে পারে।
২। তাকে এই পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে নূন্যতম আইটি যোগ্যতা ও রাস্তা আমার চেনা আছে আর পরবর্তী রাস্তা সে একাই চলতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
আপনার ক্ষেত্রেও আপনি এই দুটি বিষয়ের মাঝে সমন্বয় করে আপনার সন্তানের জিহাদি কারিকুলাম নির্ধারণ করুন। আপনি যদি ডাক্তার হয়ে থাকেন তাহলে এখনই তাকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করে দিন। কারণ ঠিক আগামীকাল যদি সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে ঠিক আগামীকালই আমাদের প্রচুর নার্স ও ডাক্তার লাগবে। যুদ্ধের ময়দানে আমাদের সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই। আপনি যদি গাড়ি চালাতে পারেন তাহলে সন্তানের জিহাদি শিক্ষা ড্রাইভিং দিয়েই শুরু করুন। বিশ্বাস করুন এটাই হল উপকারী ও সুশিক্ষা। এমন পরিকল্পনার পিছনে ব্যস্ত হবেন না যা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ আপনার হাতে নেই। তবে যে দ্বীনের জন্য আমাদের এত কর্মযজ্ঞ সে কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা থেকে যেন কোন শিশুই বঞ্চিত না হয়।
সন্তানের শিক্ষার ব্যাপারে আমার কিছু ব্যাক্তিগত চিন্তা আমি এখানে শেয়ার করব, ইনশাআল্লাহ। আশা করব ভাইয়েরাও আমার মতামতকে পর্যালোচনা করবেন যেন এর ভুলত্রুটি গুলো বের হয়ে আসে এবং অন্য ভাইয়েরাও কমেন্টে এই ব্যাপারে আলোচনা করবেন যে, সন্তানের সুশিক্ষার ব্যাপারে আপনারা কি চিন্তা করছেন। এই আর্টিক্যালটি যেহেতু একটি চলমান গবেষণার অংশ তাই প্রায় প্রতি সপ্তাহেই এখানে কিছু নতুন কৌশল নিয়ে আলোচনা ও অভিজ্ঞতা সংযুক্ত করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। তাই যে ভাইয়েরা একবার এই আর্টিক্যালটি পড়ে ফেলেছেন তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে কিছু দিন পর পুনরায় আর্টিক্যালটি পড়ার জন্য। ফলে কোন ভুল থাকলে তা সহজেই চোখে পড়বে ইনশাআল্লাহ।
"একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সামগ্রিকভাবে কিন্তু আমাদের হাতে সময় খুব কম। কেননা আমরা একটি যুদ্ধ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছি এবং সম্মুখ যুদ্ধের দিন ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে। তাই আমাদের হাতে সময় খুব সীমিত। আমার সন্তানের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। আমি তার আগামী কয়েক বছরের পড়াশোনার জন্য একটি প্রাথমিক সিলেবাস নির্ধারণ করেছি এবং সেভাবেই তাকে শিক্ষা দিচ্ছি ইনশাআল্লাহ। আমার হাতে যথেষ্ট টাকা পয়সা নেই তাই আমি অল্প খরচে কিভাবে তাকে শিক্ষিত ও মুজাহিদদের সাহায্যকারী হিসেবে গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে অনেক গবেষণা করেছি। সব বাচ্চাই তার বাবার কম্পিউটার নিয়ে খেলা করতে পছন্দ করে। আমি এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি। আমি তাকে a b c d শিখার জন্য আলাদা কোন বই কিনে দেই নাই। আমার কম্পিউটারেই তাকে a b c d শিখাচ্ছি। এর ফলে কয়েকটি উপকার হয়েছে। আমি লক্ষ্য করেছি সে খুব আনন্দের সাথে a b c d শিখছে এবং মাত্র কয়েকদিনেই তার ইংরেজি বর্ণমালা মুখস্ত হয়ে গেছে অন্যদিকে তার ইংরেজি টাইপিং ও কিন্তু শেখা হয়ে যাচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। এর আর একটি উপকার হল সে কিন্তু এটাকে কোন বোঝা হিসেবে নিচ্ছে না এবং আমি আশা করি আগামী এক বছরের মধ্যেই সে দূর্দান্ত গতিতে টাইপিং করতে পারবে ইনশাআল্লাহ। শুধু টাইপিং করলে কিন্তু চলবে না, খাতা কলমে লিখাও শিখতে হবে। তাই খরচ সাশ্রয়ের জন্য আমি একটি সাইন-পেন/মার্কার-পেন কিনেছি (কলম/পেন্সিল কিনে দেই নাই কারণ এগুলো খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়)। খাতা না কিনে আমি তাকে লিখতে দিয়েছি ঘরের মেঝের টাইলসে। টাইলসে লেখার সুবিধা হল যে কোন কাপড় দিয়ে তা সহজেই মুছে ফেলা যায় এবং তা আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী।
কম্পিউটারে a b c d শিখার পাশাপাশি তাকে কম্পিউটারে পেইন্টিং করা শিখাচ্ছি যেন সে তার ৭/৮ বছর বয়সেই জিহাদের বিভিন্ন ভিডিও এডিটিং এর কাজ করতে পারে ইনশাআল্লাহ। বাচ্চাদের জন্য Tux Paint নামে একটি সফটওয়্যার আছে। এটা এতটাই সোজা ও আনন্দদায়ক যে মাত্র তিন বছরের বাচ্চারা সহজেই এই সফটওয়্যার দিয়ে পেইন্টিং শিখতে পারে। এরপর সে ধাপে ধাপে একদিন জিহাদি ভিডিও তৈরি করবে ইনশাআল্লাহ।
আপনার স্ত্রীকে শিখিয়ে দিন বাচ্চাদেরকে কিভাবে পড়াতে হয়। বাচ্চারা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দ্বারা খুব প্রভাবিত হয়। তাই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যাবহার করে তাদেরকে পড়ান। দেখবেন তারা খুব দ্রুত আয়ত্ব করে নিচ্ছে ইনশাআল্লাহ। আপনি ইউটিউবে WATTSENGLISH লিখে সার্চ দিলে বাচ্চাদের সাথে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখে ফেলবেন।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, কেন আমি প্রথমে আরবি না শিখিয়ে ইংরেজি শিখাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালা আমার দিলের খবর অবশ্যই জানেন, আমার তামান্না হল বাচ্চাকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা এবং কিছু দিনের মধ্যেই তার হেফজের ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমি চিন্তা করেছি, যদি আগামীকাল সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে আমার সন্তান থেকে আমি ঠিক কি ধরণের যোগ্যতা আশা করি ? অবশ্যই এর উত্তর হল- অস্ত্র চালনা। কিন্তু যেহেতু আমি এই মূহুর্তে তাকে রাইফেল চালনা শিক্ষা দিতে পারছি না বা রাইফেল আমার কাছে নেই তাই আমি এমন একটি হাতিয়ারের চিন্তা করলাম যা আমার কাছে মওজুদ আছে। সম্ভবত আপনার কাছেও সেই হাতিয়ার টি আছে, আর তা হল - কম্পিউটার। যেখানে একটি একে-৪৭ রাইফেলের দাম প্রায় চার লাখ টাকা সেখানে মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আপনি একটি অত্যন্ত ভাল মানের ব্র্যান্ড নিউ কম্পিউটার কিনতে পারবেন। আমরা প্রায় বলে থাকি মিডিয়া জিহাদের অর্ধেক। আর মিডিয়া নিয়ে কাজ করতে গেলে আপনার অবশ্যই একটি ভাল মানের কম্পিউটার লাগবে। তাছাড়া আমি চাই আলেম হওয়ার পাশাপশি আমার সন্তান একজন ভাল মানের কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও হ্যাকার হোক। বর্তমান জিহাদের ময়দানে একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও হ্যাকার কতটা গুরুত্ব রাখে তা নিচের একটি পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
হোয়াইট হাউসের একটি স্বীকারোক্তি প্রকাশিত হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয় "শুধুমাত্র অনলাইন হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে ২০১৬ সালে মার্কিন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০৯ বিলিয়ন ডলারের মত।" অথচ ২০১৯ সালের জন্য সিরিয়া যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট হল ১৫ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে আমেরিকা সিরিয়া যুদ্ধে যে ব্যায় করবে তার প্রায় ৭ গুন বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে শুধুমাত্র সাইবার এট্যাকের দ্বারা! অথচ একটি এট্যাকের জন্য প্রয়োজন শুধুমাত্র একটি কম্পিউটার, দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও প্রোগ্রামিং জ্ঞান।
আমার লেখা পড়ে অবশ্য রাইফেল বা বোমার গুরুত্বকে ছোট মনে করবেন না। আমি শুধু একটি ভয়ংকর অস্ত্র হিসেবে কম্পিউটারের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেছি মাত্র। এটি এমন একটি অস্ত্র যা আমাদের অনেকের ঘরেই আছে কিন্তু আমরা এর ব্যবহার জানি না আফসোস।
তো মূল কথা হল আমার সন্তানকে মুজাহিদ হিসেবে একজন ভাল কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও হ্যাকার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমি এখন থেকেই তার ইংরেজি ও কম্পিউটার শিক্ষা শুরু করে দিয়েছি। আমার এক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু ছিল, সে মাত্র চার বছর বয়স থেকেই কম্পিউটার চালনা শুরু করেছিল। আরও মজার কথা হল একজন ভাল প্রোগ্রামার ও হ্যাকার হওয়ার জন্য কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয় না, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি চাইলে ঘরে বসেই প্রোগ্রামার ও হ্যাকার হতে পারেন যদি আপনি কঠোর অধ্যাবসায়ী হয়ে থাকেন ইনশাআল্লাহ।
এক ভাই জানতে চেয়েছেন, ১৫ /১৬ বছরের মধ্যে সন্তানকে একজন যোগ্য মুজাহিদ হিসেবে গড়ে তুলতে একটি কার্যকর সিলেবাস কেমন হওয়া উচিৎ?
আসলে পড়াশোনা বা আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে "শিক্ষা-দীক্ষা" হল শিক্ষার পাশাপাশি দীক্ষার একটি প্রচেষ্টা। একজন আন্তরিক মুজাহিদের সন্তান নিঃসন্দেহে একজন মুজাহিদ হবেন ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আমরা চাইছি "যোগ্য মুজাহিদ"। তাই তো? তাহলে এই পয়েন্টেই আলোচনা চলুক।
যোগ্য মুজাহিদ গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটি সন্তান জন্মের আগ থেকেই শুরু হয়। তাই প্রথমে আসি বিয়ের প্রসঙ্গে। যে ভাইয়েরা বিয়ের কথা চিন্তা করছেন তাদের প্রতি আমার পরামর্ষ, শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করুন। শিক্ষিত স্ত্রী যেভাবে আপনার জিহাদের কাজে সহায়ক হবেন তেমনিভাবে শিক্ষিত মা আপনার সন্তানকে যোগ্য মুজাহিদ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবেন ইনশাআল্লাহ। বিয়ের পর সন্তান হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সময়টা খুব গুরুত্বপুর্ণ। আপনার জিহাদি চেতনা ঠিক এই সময়েই আপনার স্ত্রীর মধ্যে সঞ্চারিত হবে। কারণ ঠিক এই সময়টাতেই স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। আপনি এই সময়ে তাকে যে দীক্ষা দেবেন সে তা চিরদিন মনে রাখবে। বাসর রাতেই তাকে আপনার জীবনের স্বপ্ন সম্পর্কে কিছু কথা বলতে পারেন যেমনঃ- "আমার জীবনের স্বপ্ন হল, তুমি আর আমি সারাজীবন ইসলামের সেবা করব, অসহায় মুসলিমদের পাশে দাঁড়াব ইনশাআল্লাহ। তুমি কি বল? তুমি কি আমার পাশে থেকে আমাকে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ?" যদি রোমান্টিক ভাবে হেকমতের সাথে তাকে বোঝাতে পারেন তাহলে আপনার অর্ধেক কাজ হয়ে গেল আলহামদুলিল্লাহ। বাকি পরিবর্তনের জন্য তাকে সহযোগিতা করুন, বই পড়তে দিন, আলোচনা করুন। সন্তান হওয়ার পর স্ত্রীর মাঝে আপনার জিহাদি চেতনা নতুন করে সঞ্চারিত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কেননা সন্তান হওয়ার পরবর্তী সময়ে স্বামী স্ত্রী পরস্পরের কাছাকাছি খুব কম সময়ই অবস্থান করতে পারেন। এটাই বাস্তবতা। তাহলে বোঝা গেল, মাদয়ূ (দ্বায়ী যাকে দাওয়াত দেয়) দিন দিন উন্নতি করবেন যদি দ্বায়ী তাকে প্রয়োজন পরিমাণ সময় দেন। এইজন্য প্রথমত আমার নিজের ভাল করে মানহাজ বোঝা লাগবে দ্বিতীয়ত স্ত্রীকে বোঝানো লাগবে। এই জন্য এমন পরিবেশ সৃষ্টি করুন যেন স্ত্রী আপনাকে জিহাদ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। তাকে জিহাদি বই অধ্যায়ন করার সুযোগ দিন। আমি নিজেই যদি কিতাব না পড়ি তাহলে আমার স্ত্রী কখনই কিতাব পড়বে না। কিতাব পড়ে যে পয়েন্ট গুলো আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে স্ত্রীকে ডেকে সেটা দেখান ও তার সাথে সে ব্যাপারে আলোচনা করুন, তার মতামত নিন। সংসারের কাজে তাকে এমনভাবে সহায়তা করুন যেন সে প্রতিদিন লাগাতার কয়েক ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কিতাব পড়তে পারে। আমি বারবার বলছি, সন্তান হওয়ার পর কিন্তু আপনি বা আপনার স্ত্রী আর কক্ষনই এমন দারুণ সুযোগ আর পাবেন না, তাই সন্তান হওয়ার আগের একটি বছরকে গণিমত মনে করুন। তাই বলে সন্তান নিতে অনীহা বা দেরী করা যাবে না, খবরদার। এবং অবশ্যই পরপর দুটি সন্তান নিবেন ইনশাআল্লাহ যদি আপনার স্ত্রী শারীরিকভাবে ফিট থাকেন। এতে অনেক উপকার আছে। বিভিন্ন ভাবে আপনি যেমন আর্থিক লাভবান হবেন তেমনিভাবে আপনার উভয় সন্তানের মানসিক ও শারীরিক গঠন উন্নত হবে। অনেকে মনে করেন, আর্থিক খরচ বেড়ে যাবে, এটা শয়তানের ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয় বরং খরচ সাশ্রয় হয়। আপনি একই কাপড় দুজনকে পড়াতে পারবেন। একই সাথে তারা খেলবে, এতে আপনার ও মায়ের উপর চাপ কম পড়বে। একই সাথে তাদেরকে পড়াশোনা করাতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা হল আপনার সন্তানরা কখনো একাকী বোধ করবে না। এমনকি তাদের রোগ ব্যাধিও কম হবে, ইনশাআল্লাহ। আর একটা বিষয় হল, সব সময় টার্গেট করবেন আপনার বড় সন্তানকে। বড় সন্তানের তারবিয়ত যদি ঠিক হয় তাহলে ছোট সন্তান এমনিতেই ঠিক হবে ইনশাআল্লাহ।
আমরা সব সময় বলে থাকি "সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন"। আসলে এই বিষয়টা কেমন? যেখানে আপনি নিজেই অনেক ব্যস্ত সেখানে কিভাবে আপনি সন্তানের জন্য আলাদা সময় বের করবেন? আসলে ব্যাপারটা এত জটিল নয়। আপনি যখন নামাজ পড়েন তখন আপনার সন্তানকে ডাকুন, "বাবা আসো নামায পড়ি", এভাবে সে আস্তে আস্তে নামায শিখবে। আপনি যখন কুরআন পড়েন তখন আপনার সন্তানকে ডাকুন, "বাবা আসো কুরআন তেলায়াত করি", এভাবে সে আস্তে আস্তে কুরআন শিখবে। আপনি যখন ব্যায়াম করেন তখন আপনার সন্তানকে ডাকুন, "বাবা আসো ব্যায়াম করি", এভাবে সে ব্যায়াম শিখবে। আপনার সব কাজে সন্তানকে সাথে রাখুন, স্ত্রীকেও সাথে রাখার চেষ্টা করুন ইনশাআল্লাহ। হিসেব করে দেখুন আপনি কিন্তু পরিবারকে অনেক সময় দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ!
একটা গল্প শুনেছিলাম, "এক ব্যাক্তি প্রতিদিন একটা হাতি কাঁধে চড়িয়ে পাহাড়ে উঠা নামা করে! তাকে প্রশ্ন করা হল - আপনি কিভাবে এই অসাধ্য সাধন করলেন ? তিনি বললেন- হাতিটি যখন ছোট ছিল তখন থেকেই আমি তাকে কাঁধে নিয়ে পাহাড়ে চড়তাম। প্রতিদিন হাতিটি একটু একটু বড় হতে লাগলো আর আমারও আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে গেলো।" এই টেকনিক আমি আমার সন্তানের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করি। আমি আমার দু হাত মাটির সমান্তরালে সামনের দিকে প্রসারিত করে সন্তানকে আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠায়। এটা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যায়াম। তবে আশা করি সে ব্যাক্তির ন্যায় আমারও অভ্যাস হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আমি আমার সন্তানদেরকে লতাপাতা ও গাছগাছড়া খাদ্য ও ঔষুধ হিসেবে ব্যবহার করার অভ্যেস গড়ে তুলেছি। তারা খুব সাবলীলভাবেই উপকারী লতাপাতা কাঁচা কাঁচা খেয়ে ফেলে, আলহামদুলিল্লাহ! যা সাধারণ মানুষ কল্পনাও করে না।
দুটো বিষয়ের সমন্বয় হতে হবে,
১। আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর পর আপনার সন্তানকে আপনি জিহাদের কোন শাখা/শো'বা তে দেখতে চান।
২। সে পর্যন্ত পৌঁছে দিতে যে সকল উপকরণ প্রয়োজন তা আপনার কাছে আছে কিনা ।
আমার ক্ষেত্রে এই দুটো প্রশ্নের উত্তর হল,
১। আমি তাকে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর পর একজন দূর্দান্ত কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে দেখতে চায়, যে কিনা কাফেরদের সকল সাইবার যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিবে, মুজাহিদদের জন্য কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করবে। এতটুকু যদি নাও হয় অন্তত সে যেন মুজাহিদদের আইটি ট্রেইনার ও মিডিয়া সেক্টরের দায়িত্ব নিতে পারে।
২। তাকে এই পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে নূন্যতম আইটি যোগ্যতা ও রাস্তা আমার চেনা আছে আর পরবর্তী রাস্তা সে একাই চলতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
আপনার ক্ষেত্রেও আপনি এই দুটি বিষয়ের মাঝে সমন্বয় করে আপনার সন্তানের জিহাদি কারিকুলাম নির্ধারণ করুন। আপনি যদি ডাক্তার হয়ে থাকেন তাহলে এখনই তাকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করে দিন। কারণ ঠিক আগামীকাল যদি সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে ঠিক আগামীকালই আমাদের প্রচুর নার্স ও ডাক্তার লাগবে। যুদ্ধের ময়দানে আমাদের সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই। আপনি যদি গাড়ি চালাতে পারেন তাহলে সন্তানের জিহাদি শিক্ষা ড্রাইভিং দিয়েই শুরু করুন। বিশ্বাস করুন এটাই হল উপকারী ও সুশিক্ষা। এমন পরিকল্পনার পিছনে ব্যস্ত হবেন না যা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ আপনার হাতে নেই। তবে যে দ্বীনের জন্য আমাদের এত কর্মযজ্ঞ সে কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা থেকে যেন কোন শিশুই বঞ্চিত না হয়।
Comment