মুজাহিদদের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যধি
ধরুন আপনার কাছে ১০ কেজি দুধ আছে যা আপনি সংরক্ষন করবেন। এখন প্রথমে এটাকে এমন একটা পাত্রে রাখতে হবে যা পূর্ন ভাবে পরিষ্কার ও পবিত্র। কিন্তু যদি আপনি তা এমন কোন পাত্রে রাখেন যাতে ময়লা ছিল অথবা বেখেয়ালে ময়লা পরেছে, তাহলে আপনার সমস্ত দুধ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই দুধ সংগ্রহের আগে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে পাত্রটাকে পবিত্র করা। যদি পাত্র পবিত্র থাকে তাহলে অল্প দুধ রাখলেও ফায়দা পাবেন আর পাত্র খারাপ হলে অনেক দুধ রাখলে কোন লাভ নেই, খেতে পারবেন না।
ঠিক তেমনি জিহাদের ইবাদাত দ্বীনের শ্রেষ্ঠ কাজ এবং মুজাহিদ হচ্ছে ভূপৃষ্ঠের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। কোন ভূমিতে যখন জিহাদের ময়দান প্রতিষ্ঠা হয় তখন শুরুতে সর্ব প্রকারের মানুষ এতে মিলিত হয়। কিন্তু একটা সময় দেখা যায় যত বিপদ বাড়ে তত মানুষ কমতে থাকে। যার স্পষ্ট প্রমান শামের ময়দান। ঠিক তেমনি আমাদের ভূমির দাওয়াতী কাজেও শুরুতে অনেক সাথী কাজে জরিত হয়। কিন্তু কয়েক বছর যাওয়ার পর দেখা যায় কিছু সাথী নিজেদেরকে ধরে রাখতে পারে না।
এই সমস্ত ক্ষেত্রে আমরা অবাক হয়ে যাই যে, উনাকে এত ভাল মনে করতাম, তিনি এত ভাল মাসূল ছিলেন, এখন উনিই কাজ থেকে সরে যাচ্ছেন! এত ভাল আকীদা-মানহাজ বুঝতেন কিন্তু এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন! এত বড় কমান্ডার ছিলেন অথচ এখন দুনিয়ার জন্যে নিজের মানহাজ ছেড়ে দিচ্ছেন! তাগুতদের সাথে মিলে মুজাহিদদের উপর হামলা করছে!
আসলে এখানে মূল বিষয় হচ্ছে উনার অন্তরটা আগে থেকেই ভাল ছিল না, হয়ত নিফাকী ছিল অথবা নতুন করে নিফাকী জন্ম নিয়েছে। যা তার এত বছরের আকীদা-মানহাজ বুঝা, আগ্রহ-চেতনা ও জিহাদের কাজকে নষ্ট করে দিয়েছে। আর আল্লাহ তায়ালা কখনোই কোন মুনাফিকের দ্বারা জিহাদের কাজ নেন না। বরং তাদেরকেই টিকিয়ে রাখবেন যাদেরকে উনি পছন্দ করেন। যাদেরকে উনি অপছন্দ করেন তারা জিহাদে আসার যতই চেষ্টা করুন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে যেকোন উজর দিয়ে বসিয়ে রাখেন। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ وَلَٰكِن كَرِهَ اللَّهُ انبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ (তাদের উত্থান আল্লাহর পছন্দ নয়, তাই তাদের নিবৃত রাখলেন)। আর আল্লাহ তায়ালা কখনোই কোন মুনাফিকের কাজকে পছন্দ করবেন না।
অনেকেই মনে করে, নিফাক বলতে শুধু জিহাদ বিমুখতা। আসলে জিহাদ থেকে দূরে থাকা হচ্ছে ফলাফল কিন্তু মূল সমস্যা অন্য জায়গায়। এমন অনেক নিফাক আছে যা জিহাদ বিমুখতা তৈরি করে।
যে সমস্ত নিফাকগুলো আমাদের ভাইদেরকে সবচেয়ে বেশি জিহাদের পথ থেকে সরিয়ে নেয় তার মধ্যে হচ্ছেঃ দুনিয়ার লোভ অর্থাৎ সম্পদ, সম্মান বা জৈবিক চাহিদার লোভ, নিজের ক্যারিয়ারের ফিকির, আরামের ফিকির, বিপদ-কষ্ট থেকে দূরে থাকা, ধারাবাহিক গুনাহে লিপ্ত থাকা, দ্বীনের কাজে অলসতা ইত্যাদি।
উদাহারন সরূপঃ আমাদের মাদরাসার বা জেনারেল সাথীরা সবচেয়ে বেশি পদস্খলিত হয় ক্যারিয়ারের চিন্তায়। এটা হতে পারে ভাল আলেম-মুফতি হওয়ার আশায় অথবা পড়াশুনা শেষ করার পরে ভবিষ্যতের চিন্তায়। আবার অনেকে পরিবারের চাপে বা পরিবারের চিন্তায় জিহাদের কাজে ছেড়ে দেন। তারা ভাবেন আমরা তো জিহাদের আকীদা-মানহাজ ছেড়ে দিচ্ছি না। কিন্তু প্রিয় ভাই, আপনি যত বড় সাথী বা মাসূলই হন আর আপনার ভিতরে দ্বীনের যত বুঝই থাকুক, এই ক্যন্সারটা আপনাকে অকার্যকর করে দিবে। কত কত ভাই অনেক দ্বীন বুঝেছিলেন কিন্তু এখন তারা সামনে দিয়েই ঘুরে কিন্তু দ্বীনের পথে নেই।
সুতরাং এই ক্যারিয়ারের ফিকির এত বড় নিফাক যার ক্ষতি চিন্তা করলেই শিউরে উঠি। এটা বলছি না যে নিজের ক্যারিয়ার ধ্বংস করে কাজে নামতে হবে। এখানে মূল বিষয় হচ্ছে যত কষ্টই হোক জিহাদের কাজ ছেড়ে দিয়ে ক্যারিয়ারের জন্যে আলাদা কোন ফিকির করা যাবে না বরং আল্লাহ তার দ্বীনের কাজসহ যতটুকু দেন ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে এবং দ্বীনের কাজের যখন প্রয়োজন হবে নির্দিধায় ক্যারিয়ারের ফিকির ছেড়ে কাজে লেগে যেতে হবে।
আরেকটা নিফাক হচ্ছে সম্পদ অর্জনের ফিকির। এটার লোভ যার মধ্যে থাকবে সে কখনোই নিজে দ্বীনের পথে ধরে রাখতে পারবে না বরং চাকরী-ব্যবসার জন্যে নির্দিধায় দ্বীনের কাজ ছেড়ে দিবে। আমরা যদি পূর্বের জিহাদী দলগুলোর দিকে তাকাই তাহলে তো এগুলো ব্যপক ভাবেই পাব। এখন যারা কাজ করে তাদের মধ্যেও অনেকে কাজ ছেড়ে চাকরী বা বিদেশে চলে যান। যদি পর্যন্ত কোন ভাই অন্তর থেকে এই সম্পদ অর্জনের লোভ ছাড়তে না পারে, তাহলে অবশ্যই তা একদিন তাকে জিহাদ থেকে দূরে সরিয়ে দিবে, সে যত বড় দ্বীনের দায়ীই হোক না কেন, আল্লাহ্* আমাদের রক্ষা করুন।
আরেকটা বড় নিফাক হচ্ছে সম্মান বা জান বাচানোর চিন্তা। এতে জিহাদবিরোধী আলেমরা ব্যপকভাবে পতিত। যার মধ্যে জান বাচানোর ফিকির বা ভয় থাকবে তাকে আপনি যতই জিহাদ বুঝান শেষ পর্যন্ত আপনার সাথে টিকে থাকতে পারবে না।
আবার অনেকের মধ্যে থাকে দ্বীনের কাজে অলসতা। যা তাকে দ্বীনের জন্যে কুরবানী করা, নিজের সবকিছুকে বিলিয়ে দেয়া থেকে বিরত রাখে। এমনকি তাদের অনেকে ফরজ নামাজ জামাতের সাথে আদায় থেকেও অলসতা করে। তাদের মধ্যে দ্বীনের কাজে লেগে থাকার প্রচন্ড আগ্রহ থাকে না বরং অনায়াসেই ভিবিন্ন গুনাহে লিপ্ত থাকে। এগুলোও অনেক বড় বড় নিফাক। বিশেষ করে যারা ধারাবাহিক গুনাহে লিপ্ত থাকে তা তাদের দ্বীনী জজবাকে পূর্নভাবেই ধ্বংস করে দেয়।
তাই প্রত্যেকটা দায়ী, মাদয়ূ ও জিহাদের পথের পথিকের জন্যে আবশ্যক, সবাই আমরা নিজেদের এবং সাথীদের নিফাকী দূর করার পিছনে ভালভাবে চেষ্টা করব। বিশেষ করে কাউকে দাওয়াত দেয়ার পূর্বে তার জজবা বা মাসায়েল বুঝার দিকে না তাকিয়ে নিফাকী আছে কিনা সেটা গুরুত্ব দিব। কারণ নিফাক না থাকলে আল্লাহ জজবা তৈরি করে হলেও তাকে কাজে লাগাবেন ইনশাআল্লাহ। আর নিফাকী থাকলে তার এত জজবা বা বুঝ কোন কাজে আসবে না। কারণ যদি কোন একটা নিফাকীও থাকে তাহলে আল্লাহর পছন্দশীল হতে পারবে না, আর আল্লাহ কাউকে অপছন্দ করলে সে দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে।
আমরা এমন কেহই নাই যার মধ্যে কিছু হলেও নিফাক নেই, তবে চেষ্টা করতে হবে যাতে এগুলো শক্তিশালী হয়ে আমাদের পিছনে টেনে না নেয়। নিফাক দূর করার অনেক কাজ আছে। সর্বপ্রথম হচ্ছে ইলম অর্জন করা অর্থাৎ দ্বীন কি, কিভাবে দ্বীনের কাজ করতে হবে তা ভাল করে জানা। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। দ্বীনের কাজের প্রচুর কষ্ট করা, বিশেষত ইচ্ছাকৃত কষ্ট করা ও নিজ থেকে বানিয়ে বানিয়ে কষ্ট করা। যে দিকে লোভ আছে সে জিনসগুলো বেশি বেশি ত্যাগ করা বা সেগুলোর ফিকির দূর করার চেষ্ঠা করতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে মুত্তাকী বানিয়ে দিন এবং দ্বীনের জন্যে কবুল করুন।
Comment