জিহাদের পথে টিকে থাকার জন্যে করনীয়
আমরা যারা জিহাদের পথে আসতে চাই, আমাদের সবাইকে তিনিটা স্তর পাড়ি দিয়ে আসতে হয়। প্রথমত প্রয়োজন হয় দ্বীনের প্রচন্ড জজবা। দ্বীনের প্রতি আবেগ, আগ্রহ বা মহাব্বত না থাকলে কারো মধ্যে দ্বীন রক্ষার মানসিকতা তৈরি হবে না। দ্বিতীয় স্তির হচ্ছে জিহাদের ইচ্ছা, যদি দ্বীনের জজবা আছে কিন্তু জিহাদের ইচ্ছা না থাকে তাহলে এই জজবা বা দ্বীনের বুঝ তাকে ময়দানে আনতে পারবে না। হয়ত নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকবে অথবা জজবাকে জিহাদ ভিন্ন অন্য কোন পন্থায় ব্যয় করবে।
তৃতিয় স্তর হচ্ছে জিহাদের আকীদা ও মানহাজ বুঝা। আমাদের সমাজেও অনেকেই জিহাদের ইচ্ছা রাখেন কিন্তু কর্মপদ্ধতি না বুঝার কারণে জিহাদে অংশ নিতে পারছেন না। আর এই তিনটা স্তর নিয়েই শাইখ আবু মুসয়াব সূরী উনার দাওয়াতুল মুকাওয়ামাহতে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যা পড়ে নেয়া সবার জন্যে আবশ্যক।
এগুলো তো হল জিহাদের আসার ধাপ। কিন্তু এখন বিষয় হচ্ছে, জিহাদের পথে টিকে থাকা ও দৃঢ় থাকার মাধ্যম কি?
অনেকেই ভাবেন উপরে তিনটা জিনিস কাউকে জিহাদের পথে দৃঢ় রাখে, তাই সেগুলোকে বাড়ানোর ফিকিরকে গুরুত্ব দেন। যেমন যার যত বেশি জিহাদের জজবা আছে তারা তত বেশি টিকে থাকবে। তাই সর্বদা জজবা বৃদ্ধির জন্যে বয়ান, আলোচনা ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকেন। আবার অনেকে জিহাদের ইচ্ছা-আগ্রহকে মূল মনে করেন। তাই জিহাদ-শাহাদাতের তামান্না আছে কিনা সেটা যাচাই করেন।
কিন্তু এগুলো দ্বীনের পথে আসার মাধ্যমে হলেও টিকিয়ে রাখার মূল মাধ্যম নয়। যার সবচেয়ে বড় উদাহারণ হরকতুল জিহাদ সহ পূর্বের জিহাদী দলগুলোর অধিকাংশ সাথীর ঝরে যাওয়া। তাদের জজবা আবশ্যই কোন দিকে কম ছিল না, কিন্তু টিকে থাকার মূল মাধ্যম গ্রহন না করায় ঝরে পরেছেন।
অন্যদিকে অনেক ভাই মনে করেন কারো মধ্যে জিহাদের আকীদা-মানহাজের বুঝ থাকলে সে এই পথে টিকে থাকবে। হ্যাঁ, এটা আবশ্যক কিন্তু টিকিয়ে রাখার মাধ্যম নয়। আকীদা-মানহাজ বুঝেও ঝরে পরেছেন বিশেষ করে সামরিক কাজে গিয়েও ঝরেছেন এমন উদাহারন আছে। এর কারণ যত দিন আমরা জিহাদের পথে টিকে থাকার কুরআনী সমাধান গ্রহন না করব ততদিন এটা সমস্যা হতেই থাকবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ
হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।
আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতে আমাদের জিহাদের পথের মূল দুইটা প্রয়োজন পূরনের মাধ্যম বলে দিয়েছেন। আর তা হল আল্লাহ দ্বীনকে নিজের সর্বোচ্চ সাধ্য অনুজায়ী সাহায্য করা। তাহলে প্রথমত আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সর্বক্ষেত্রে সাহায্য করবেন। জিহাদের কাজ, প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ইত্যাদি সর্ব বিষয়ে।
আর দ্বিতীয়ত এই পথের দৃঢ়তা, একমাত্র জিহাদের পথের সাধ্যনুজায়ী কাজই আমাদেরকে দৃঢ় রাখবে। যে যত বেশি কাজ করবে তার দৃঢ়তা ততবেশি বাড়বে। কাজ বলতে এটা নয় যে শুধু তানজীমের সাথে লেগে থাকা। বরং কাজ বলতে বুঝাবে এমন কোন নির্দিষ্ট কাজ যা দ্বীনের সাহায্যের জন্যে করা হয়েছে। হয়ত দাওয়াত দেয়া, মিডিয়ার কাজ করা, সামরিক কোন কাজ করা ইত্যাদি। প্রত্যেক দিন কিছু হলেও কাজ করতেই হবে যত অল্পই হোক। যদি কোন বিপদের কারনে বাহ্যিক কাজ করা যাচ্ছে না তাহলে নরমাল হলেও কোন কাজ করতে হবে। যে যেটা পারেন তাই করবেন তবে আমীর থাকলে অবশ্যই তার আদেশ অনুজায়ী।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আকীদা-মানহাজ বুঝার পরে সাধারন কারো হয়ত কোন কাজ দেয়া হয় না অথবা যে কাজে লিপ্ত আছে সেখানের কাজ আপাদত নেই ফলে বসে থাকেন। এটা চরম পর্যায়ের ভুল, কখনোই উচিত নয়। আমীরের উপর আবশ্যক অন্য ধরনের কোন কাজ দিয়ে হলেও তাকে ব্যস্ত করে রাখা, কারণ জিহাদের পথে কখনোই শুধু তার জজবা বা আকীদার বুঝ দিয়ে টিকে থাকতে পারবে না। বরং অবশ্যই ইলাহী সমাধান হিসেবে তাকে সাধ্য অনুজায়ী আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য করেই যেতে হবে।
তানজীমের পক্ষ থেকে কাজ না পেলে নিজেকে নিজে কাজ দিতে হবে। যেভাবেই হোক, কারণ আপনার দ্বীনের জন্যে আল্লাহ আপনাকেই ধরবেন। কাজ হতে পারে জিহাদের দাওয়াত বা প্রচারের কাজ, অনলাইনে দাওয়াত, জিহাদের পক্ষে লেখালিখি করা, আরবী বা উর্দু বুঝলে অনুবাদের কাজ করা ইত্যাদি আরো যত আম কাজ রয়েছে তাতে নিজেকে লাগিয়ে রাখতে হবে যদি নির্দিষ্ট কোন কাজ না থাকে।
এখানে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, শুধু এটাই একমাত্র ঝরে যাওয়ার কারণ নয়। আরো অনেক কারণ রয়েছে। আবার কাজ করলেই টিকে যাবে এমন নয় বরং নিফাক সহ অন্যান্য বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ রোগ ও সমস্যা থেকে বেচে থাকতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তার দ্বীনের জন্যে কবুল করুন। সর্বদা দ্বীনের কাজে লেগে থাকার তাউফীক দান করুন।
Comment