টাইটেলটা হয়ত হওয়া উচিত ছিল- "তারা ভুলেনি কিন্তু মুসলিমরা ঠিকই ভুলে গিয়েছে।"
কিন্তু এই টাইটেলটা দেওয়া গেলনা কারণ, বাস্তবতা হল-মুসলিমরা জানেই না", ভুলে যাবে কোন জিনিস? যে তাঁদের নিজেদের কি অতীত ছিল কোন এক সময়!
যারা জানে তাঁদের জানার সীমানা হয়ত মক্কা বিজয় কিনবা বিদায় হজ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ কিংবা খুব বেশি হলে খুলাফায়ে রাশেদিন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কিনবা মুভি/উপন্যাস এর আলোকে ২/১ টা বিচ্ছিন্ন ঘটনা যেমন সালাহুদ্দিন আইয়উবি (রাহিঃ) এর ফিলিস্তিন জয় করার ঘটনা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কিন্তু মুসলিমদের অধিকাংশই জানেনা তাঁদের প্রায় দেড় হাজার বছরের একটি গৌরবোজ্জল ইতিহাস আছে। উমাইয়া,আব্বাসীয় এবং উসমানী খিলাফতের এক বিশাল স্বর্ণোজ্জল ইতিহাস আছে মুসলিমদের। এই দেড় হাজার বছর তাঁদের ভয়ে বর্তমান আমেরিকা/ইউরোপের বাপ দাদা তথা রোমান সাম্রাজ্য থরথর করে কাঁপত। থরথর করে কাঁপত ইহুদিরা, মুশরিকরা। শুধু স্থলভাগের বিশাল সম্পদের মালিক মুসলিমরা ছিল এমন নয়, বিশাল সমুদ্র অঞ্চলগুলি দাপিয়ে বেড়াত মুসলিমরা, এখন যেমন আমেরিকা/রাশিয়া বেড়ায়।
আর এখন, স্থলভাগের অগণিত খনিজ সম্পদ স্বর্ণ, হিরা, কয়লা, ইউরোনিয়াম,তেল,গ্যাস ইত্যাদি সহ সমুদ্রের বিশাল মৎস সম্পদ সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ সবই এখন কুফফারদের দখলে। যে সমুদ্র এলাকা তাদের ট্রিলিয়ন, ট্রিলিয়ন ডলার এনে দেয় প্রতিবছর! আর মুসলিমরা ব্যস্ত ক্রিকেট, নাটক সিরিয়াল, গান বাজনা নিয়ে। অথচ এইতো, বেশিদিন নয়, ১৭৯৫ সালেও আমেরিকা উসমানী খিলাফতকে জিজিয়া কর দিত! বিশ্বাস হয় এই কথা?
এছাড়াও ভারতবর্ষে মুসলিমদের একটি সভ্যতা তো ছিলই, আর সেটাও প্রায় হাজার বছরের। এমনকি রোহিঙ্গাদেরও একটি স্বাধীন মুসলিম সভ্যতা ছিল, তাঁদের নিজস্ব সেনাবাহিনী ছিল, ছিল নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থাও! অথচ এই রোহিঙ্গারাই আজ পরাধীন শরনার্থি। ভারতবর্ষের কিছু মুসলিম হয়ত স্পেন বা বাগদাদের সভ্যতা নিয়ে কিছুটা হলেও জানেন কিন্তু, স্পেন-বাগদাদ সভ্যতা নিয়ে যারা পড়ে থাকেন তাঁরা জানেই না নিজেদের ভারতবর্ষের অতীত সম্পর্কে! যে একসময় আমরা কি ছিলাম আর এখন কি হয়েছি। সবাই, হোক সেটা ইহুদি, হোক সেটা খ্রিস্টান, হোক সেটা হিন্দু, হোক সেটা নাস্তিক, সবাই চায় তাদের নিজেদের প্রাচীন যুগকে ফিরিয়ে আনতে, কিন্তু আফসোসের ব্যাপার হল শুধুমাত্র মুসলিমরা, শুধু এবং একমাত্র মুসলিমরা চায় না তাঁদের প্রাচীন সেই সভ্যতা, সেই স্বর্ণযুগকে ফিরিয়ে আনতে। চাইবে কি? এরা জানেই না এদের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে!! এরা চায় অন্যের উচ্ছিষ্ট, লাথি গোতা, অপমান, লাঞ্ছনা নিয়ে বেঁচে থাকতে, এর চাইতে আফসোসের ব্যাপার আর কি হতে পারে?
গতকাল নিউজিল্যান্ডের মসজিদে এক খ্রিস্টান সন্তাসী হামলা করে ৪৯ জন মুসলিমকে হত্যা করল। কি ছিল এর কারণ?
আসুন একটু বিশ্লেষণ করে দেখি-
হামলা করা সেই খ্রিস্টান সন্ত্রাসির অস্ত্রে লেখা দেখলাম 'MALTA 1565', যে রেফারেন্স আসলে বোঝাচ্ছে যে অনেক দীর্ঘ পরিকল্পনা আর রিসার্চ করেই মাঠে নেমেছিল সে (আর তার সঙ্গী যে বা যারা আছে)। ইতিহাসের আরও অনেক কিছুই লেখা আছে (, সে ভালোই ইতিহাস ঘেঁটে নামে এ গণহত্যায়। দু'দিন আগেই সে তার একাউন্ট থেকে এগুলো প্রকাশ করেছিল। মাল্টা দ্বীপে ১৫৬৫ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্য যে অবরোধ করেছিল সে ঘটনার রোমন্থন এই লেখাটা, সেই অবরোধ রুখে দিয়েছিল মাল্টার ২৪০০ মানুষ, নারী ও শিশুসহ। এ ঘটনার পরই আসলে ইউরোপীয়রা বুঝতে পারে, অটোম্যানরা মোটেও অজেয় নয়। সেমিঅটোম্যাটিকের গায়ে 'VIENNA 1683'-ও লেখা ছিল। অটোম্যান সেনাবাহিনীর হাতে দু মাস ধরে অবরুদ্ধ ভিয়েনা ১৬৮৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর হোলি রোমান এম্পায়ার আর কমনওয়েলথের যুগ্ম খ্রিস্টান শক্তির সাহায্যে পরাজিত করে মুসলিমদের কালেনবার্গ পাহাড়ের পাদদেশে। এই দুই যুদ্ধ মুসলিমদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করত। [বাকি লেখাগুলোর অর্থও পোস্টের শেষে দিয়ে দিলাম।] বন্দুকের এক জায়গায় Ebba Akerlund লিখা, যে কিনা ছিল ২০১৭ সালে সুইডেনের স্টকহোমে লরি অ্যাটাকে নিহত ১২ বছরের এক মেয়ে; তার সেই মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই এবার মুসলিমদের উপর এই আক্রমণ (ম্যানিফেস্টোতে তাই লেখা)। অনেকেই বন্দুকের গায়ে '14' এর অর্থ জানতে চেয়েছেন। 14 বলতে বোঝায় 14 শব্দের হোয়াইট সুপ্রিমিস্ট স্লোগান- “We must secure the existence of our people and a future for white children,”
কয়েকশ বছর বাদে আজ আবারও সে ঘটনাগুলো উদ্দীপক। যে গানটা শুনতে পাচ্ছিলেন, সেটাও পরিকল্পনা করা! গানটার নাম 'রিমুভ কেবাব'। বসনিয়া সার্বদের যুদ্ধে বসনিয়ান মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অনুপ্রেরণা দেবার জন্য লেখা গান। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে ইতোমধ্যে ৪৯ জন মারা গেছেন, অন্তত বিশজন আহত। নিহতদের মধ্যে আছেন তিনজন বাংলাদেশি বা বাঙালি, আহতদের মধ্যেও আছেন; আর নিহত ভারতীয় ছয়জন। তাদের দোষ ছিল, তারা নামাজ পড়তে এসেছিলেন। আল-নূর মসজিদে মারা যান ৪১ জন আর লিনউড মসজিদে ৮ জন। তবে এর মধ্যে একজন অস্ট্রেলীয় এমপি খুঁজে বের করতে চেষ্টা করেছেন কে বা কারা আসলে দায়ী এই নৃশংসতার জন্য। কুইন্সল্যান্ড এর সেই সেনেটর ফ্রেজার অ্যানিং বলছেন, "এ আক্রমণ যেটাকে জোর দিচ্ছে সেটা হলো অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধি পাওয়া। বরাবরের মতো, বামপন্থীরা আর মিডিয়া এ ঘটনার জন্য দায়ী করবে গান ল'কে। কিন্তু এর পেছনে আসল কারণ হলো, নিউজিল্যান্ডের ইমিগ্রেশন প্রোগ্রাম, যেটার মাধ্যমে মুসলিমদেরকে এদেশে আসতে দেয়া হয়েছে গোড়াতে। আজকে মুসলিমরা ভিক্টিম হলেও, সাধারণত তারাই এরকম ঘটনায় হত্যাকারী হয়ে থাকে। বিশ্বজুড়ে ধর্মের নাম দিয়ে মানুষ হত্যা করে চলেছে মুসলিমরা। পুরো ইসলাম ধর্মটাই ধর্মীয় নেতার মুখোশে এক ষষ্ঠ শতকের উৎপীড়কের আগ্রাসী চেতনা, যা কিনা এর সকল বিরোধী, অবিশ্বাসী আর ত্যাগীদের খুন প্রত্যাশায় যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইসলাম আসলে অন্য ধর্মের মতো না, এটা ধর্মের নামে ফ্যাসিবাদ। কেবল এই ঘটনায় তারা কিছু করেনি বিধায় কিন্তু তারা নির্দোষ নয়।"
তবে এবার অবশ্য বরাবরের মতো শ্বেতাঙ্গ খুনী ব্রেন্টন ট্যারান্ট'কে মানসিক ভারসাম্যহীন বলা হচ্ছে না, সন্ত্রাসীই বলা হচ্ছে অফিসিয়ালি। কারণ, তার পরিকল্পনার প্রতিটি ধাপ ছিল নিখুঁত।
ব্রেন্টন নিজেই মাথায় আটকে রাখা গো-প্রো ক্যামেরা দিয়ে লাইভ টেলিকাস্ট করে পুরো গণহত্যার ভিডিও। ১৬ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ধ্বংসযজ্ঞ ভিডিওতে কোনো পুলিশ আসতে দেখিনি, ব্যাপারটা যেন সেও জানত এমনটিই হবার কথা! মসজিদে ঢুকে নারী-শিশু-পুরুষ নির্বিশেষে কাউকেই মারতে তার দ্বিধা হয়নি। ৮৭ পৃষ্ঠার ম্যানিফেস্টো নিজেই প্রকাশ করেছে সে, যেখানে বারবার সে বলেছে, এটা সে করেছে তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্য, যেন বাইরে থেকে আসা ইমিগ্র্যান্ট বা বহিরাগত থেকে তারা বাঁচতে পারে।(আর এই বহিরাগত বলতে অবশ্যই মুসলিম) নিজেকে সে বারবার ইউরোপীয় বলেছে, তার শরীরে ইউরোপীয় রক্ত। কারণ, এই অঞ্চলে আসলে মানুষ ইউরোপ থেকেই এসেছিল। তবে, অস্ট্রেলীয় আদিবাসীদের কাছে তারা (ইউরোপীয়রা) নিজেরা কী ছিল সে বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই। Fortnite স্টাইলে (তার ম্যানিফেস্টোতে এ গেমের কথাই বলা ঠাট্টাচ্ছলে, PUBG না) গণহত্যা চালানো নিয়ে তার বক্তব্য, এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গান কন্ট্রোল নিয়ে হওয়া কথাবার্তা বিষয়ে তার একটি প্রতিবাদ। জনপ্রিয়তম ইউটিউবার পিউডিপাই'কেও সাবস্ক্রাইব করতে বলে সে, কারণ স্যাটায়ার করে হলেও ইহুদি-মুসলিম বিরোধী কন্টেন্ট ছিল তার। ব্রেন্টন বলেছে, সে একজন ফ্যাসিবাদী, তাকে যেন এটাই ডাকা হয়। তার বন্দুকের লেখাগুলো আর মুসলিমদের উপর আক্রমণ নিঃসন্দেহে তার রিলিজিওন-ড্রিভেন মোটিভকে নির্দেশ করে, সে মুখে বলুক আর না বলুক। অবশ্য ঘটনার গোড়ার দিকে মিডিয়া তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পরে তার ম্যানিফেস্টো প্রকাশ হলে ব্রেন্টন নিজেই সে উপায় রাখেনি।
এছাড়াও-
বন্দুকে আর যা যা লেখা ছিল, সেই লেখাগুলোর অর্থ-
'CHARLES MARTEL', 'TOURS 732'- ফ্রান্সের এই রাজা ইসলামি খেলাফত সাম্রাজ্য পশ্চিম ইউরোপে অগ্রসর হওয়া রুখে দেন ৭৩২ সালে Tours যুদ্ধে, এ কারণে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের কাছে খুবই পূজনীয় ছিলেন তিনি।
'CALIVIJO 844'- ৮৪৪ সালে খ্রিস্টানরা কালিভিহোর যুদ্ধে মুসলিমদের পরাজিত করে- এমন তথ্য ইতিহাসে নেই, কিন্তু মিথে আছে। এই মিথ এতই জনপ্রিয় ছিল যে এই বানানো যুদ্ধটা হয়ে পড়ে ক্রুসেডারদের অনুপ্রেরণা।
'ALEXANDRE BISSONNETTE'- এই খুনী লোক ক্যানাডায় Quebec City মসজিদে গুলি চালান ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি।
'SKANDERBEG'- পঞ্চদশ শতকের এই লোক প্রথমে অটোম্যান সাম্রাজ্যের লোক ছিলেন, পরে বিশ্বাসঘাতকতা করে অটোম্যান সুলতানদের বিরুদ্ধে চলে যান, আর ছিলেন গেরিলা যুদ্ধে খুবই নির্মম। এই লোক এতই ভয়ংকর ছিল যে শেষমেশ খ্রিস্টানরাও অটোম্যান সুলতান মেহমেতকে অনুরোধ করেন একে শেষ করে দিতে।
'ODO THE GREAT'- ৭২১ সালে উমাইয়া খেলাফতকে পরাজিত করা প্রথম ফ্রেঞ্চ শাসক।
'FOR BERLIN, FOR MADRID'- এগুলো এই শহরগুলোতে নিকট অতীতের সন্ত্রাসী হামলার রোমন্থন।এটা খারেজি আইসিসের আক্রমণ ছিল।
'ANTON LUNDID PETTERSSON'- সুইডেনের Trollhattan স্কুলে ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর এই ২১ বছর বয়সী ছেলে উগ্র খ্রিস্টধর্মী শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে হামলা চালায়।
'MARCO ANTONIO BRAGADIN'- ষোড়শ শতকের ভেনিসের এই মিলিটারি অফিসার মুসলিমদের হজগামী জাহাজগুলো ডোবাতেন আর হজগামীদের ধরে এনে নির্যাতন করতেন। পরে অটোম্যান সাম্রাজ্য তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
পরিশেষে এটাই আবারো বলতে চাই- তারা ভুলেনি, কিন্তু মুসলিমরা জানেই না। এটাই বাস্তবতা।
কিন্তু এই টাইটেলটা দেওয়া গেলনা কারণ, বাস্তবতা হল-মুসলিমরা জানেই না", ভুলে যাবে কোন জিনিস? যে তাঁদের নিজেদের কি অতীত ছিল কোন এক সময়!
যারা জানে তাঁদের জানার সীমানা হয়ত মক্কা বিজয় কিনবা বিদায় হজ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ কিংবা খুব বেশি হলে খুলাফায়ে রাশেদিন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কিনবা মুভি/উপন্যাস এর আলোকে ২/১ টা বিচ্ছিন্ন ঘটনা যেমন সালাহুদ্দিন আইয়উবি (রাহিঃ) এর ফিলিস্তিন জয় করার ঘটনা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কিন্তু মুসলিমদের অধিকাংশই জানেনা তাঁদের প্রায় দেড় হাজার বছরের একটি গৌরবোজ্জল ইতিহাস আছে। উমাইয়া,আব্বাসীয় এবং উসমানী খিলাফতের এক বিশাল স্বর্ণোজ্জল ইতিহাস আছে মুসলিমদের। এই দেড় হাজার বছর তাঁদের ভয়ে বর্তমান আমেরিকা/ইউরোপের বাপ দাদা তথা রোমান সাম্রাজ্য থরথর করে কাঁপত। থরথর করে কাঁপত ইহুদিরা, মুশরিকরা। শুধু স্থলভাগের বিশাল সম্পদের মালিক মুসলিমরা ছিল এমন নয়, বিশাল সমুদ্র অঞ্চলগুলি দাপিয়ে বেড়াত মুসলিমরা, এখন যেমন আমেরিকা/রাশিয়া বেড়ায়।
আর এখন, স্থলভাগের অগণিত খনিজ সম্পদ স্বর্ণ, হিরা, কয়লা, ইউরোনিয়াম,তেল,গ্যাস ইত্যাদি সহ সমুদ্রের বিশাল মৎস সম্পদ সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ সবই এখন কুফফারদের দখলে। যে সমুদ্র এলাকা তাদের ট্রিলিয়ন, ট্রিলিয়ন ডলার এনে দেয় প্রতিবছর! আর মুসলিমরা ব্যস্ত ক্রিকেট, নাটক সিরিয়াল, গান বাজনা নিয়ে। অথচ এইতো, বেশিদিন নয়, ১৭৯৫ সালেও আমেরিকা উসমানী খিলাফতকে জিজিয়া কর দিত! বিশ্বাস হয় এই কথা?
এছাড়াও ভারতবর্ষে মুসলিমদের একটি সভ্যতা তো ছিলই, আর সেটাও প্রায় হাজার বছরের। এমনকি রোহিঙ্গাদেরও একটি স্বাধীন মুসলিম সভ্যতা ছিল, তাঁদের নিজস্ব সেনাবাহিনী ছিল, ছিল নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থাও! অথচ এই রোহিঙ্গারাই আজ পরাধীন শরনার্থি। ভারতবর্ষের কিছু মুসলিম হয়ত স্পেন বা বাগদাদের সভ্যতা নিয়ে কিছুটা হলেও জানেন কিন্তু, স্পেন-বাগদাদ সভ্যতা নিয়ে যারা পড়ে থাকেন তাঁরা জানেই না নিজেদের ভারতবর্ষের অতীত সম্পর্কে! যে একসময় আমরা কি ছিলাম আর এখন কি হয়েছি। সবাই, হোক সেটা ইহুদি, হোক সেটা খ্রিস্টান, হোক সেটা হিন্দু, হোক সেটা নাস্তিক, সবাই চায় তাদের নিজেদের প্রাচীন যুগকে ফিরিয়ে আনতে, কিন্তু আফসোসের ব্যাপার হল শুধুমাত্র মুসলিমরা, শুধু এবং একমাত্র মুসলিমরা চায় না তাঁদের প্রাচীন সেই সভ্যতা, সেই স্বর্ণযুগকে ফিরিয়ে আনতে। চাইবে কি? এরা জানেই না এদের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে!! এরা চায় অন্যের উচ্ছিষ্ট, লাথি গোতা, অপমান, লাঞ্ছনা নিয়ে বেঁচে থাকতে, এর চাইতে আফসোসের ব্যাপার আর কি হতে পারে?
গতকাল নিউজিল্যান্ডের মসজিদে এক খ্রিস্টান সন্তাসী হামলা করে ৪৯ জন মুসলিমকে হত্যা করল। কি ছিল এর কারণ?
আসুন একটু বিশ্লেষণ করে দেখি-
হামলা করা সেই খ্রিস্টান সন্ত্রাসির অস্ত্রে লেখা দেখলাম 'MALTA 1565', যে রেফারেন্স আসলে বোঝাচ্ছে যে অনেক দীর্ঘ পরিকল্পনা আর রিসার্চ করেই মাঠে নেমেছিল সে (আর তার সঙ্গী যে বা যারা আছে)। ইতিহাসের আরও অনেক কিছুই লেখা আছে (, সে ভালোই ইতিহাস ঘেঁটে নামে এ গণহত্যায়। দু'দিন আগেই সে তার একাউন্ট থেকে এগুলো প্রকাশ করেছিল। মাল্টা দ্বীপে ১৫৬৫ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্য যে অবরোধ করেছিল সে ঘটনার রোমন্থন এই লেখাটা, সেই অবরোধ রুখে দিয়েছিল মাল্টার ২৪০০ মানুষ, নারী ও শিশুসহ। এ ঘটনার পরই আসলে ইউরোপীয়রা বুঝতে পারে, অটোম্যানরা মোটেও অজেয় নয়। সেমিঅটোম্যাটিকের গায়ে 'VIENNA 1683'-ও লেখা ছিল। অটোম্যান সেনাবাহিনীর হাতে দু মাস ধরে অবরুদ্ধ ভিয়েনা ১৬৮৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর হোলি রোমান এম্পায়ার আর কমনওয়েলথের যুগ্ম খ্রিস্টান শক্তির সাহায্যে পরাজিত করে মুসলিমদের কালেনবার্গ পাহাড়ের পাদদেশে। এই দুই যুদ্ধ মুসলিমদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করত। [বাকি লেখাগুলোর অর্থও পোস্টের শেষে দিয়ে দিলাম।] বন্দুকের এক জায়গায় Ebba Akerlund লিখা, যে কিনা ছিল ২০১৭ সালে সুইডেনের স্টকহোমে লরি অ্যাটাকে নিহত ১২ বছরের এক মেয়ে; তার সেই মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই এবার মুসলিমদের উপর এই আক্রমণ (ম্যানিফেস্টোতে তাই লেখা)। অনেকেই বন্দুকের গায়ে '14' এর অর্থ জানতে চেয়েছেন। 14 বলতে বোঝায় 14 শব্দের হোয়াইট সুপ্রিমিস্ট স্লোগান- “We must secure the existence of our people and a future for white children,”
কয়েকশ বছর বাদে আজ আবারও সে ঘটনাগুলো উদ্দীপক। যে গানটা শুনতে পাচ্ছিলেন, সেটাও পরিকল্পনা করা! গানটার নাম 'রিমুভ কেবাব'। বসনিয়া সার্বদের যুদ্ধে বসনিয়ান মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অনুপ্রেরণা দেবার জন্য লেখা গান। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে ইতোমধ্যে ৪৯ জন মারা গেছেন, অন্তত বিশজন আহত। নিহতদের মধ্যে আছেন তিনজন বাংলাদেশি বা বাঙালি, আহতদের মধ্যেও আছেন; আর নিহত ভারতীয় ছয়জন। তাদের দোষ ছিল, তারা নামাজ পড়তে এসেছিলেন। আল-নূর মসজিদে মারা যান ৪১ জন আর লিনউড মসজিদে ৮ জন। তবে এর মধ্যে একজন অস্ট্রেলীয় এমপি খুঁজে বের করতে চেষ্টা করেছেন কে বা কারা আসলে দায়ী এই নৃশংসতার জন্য। কুইন্সল্যান্ড এর সেই সেনেটর ফ্রেজার অ্যানিং বলছেন, "এ আক্রমণ যেটাকে জোর দিচ্ছে সেটা হলো অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধি পাওয়া। বরাবরের মতো, বামপন্থীরা আর মিডিয়া এ ঘটনার জন্য দায়ী করবে গান ল'কে। কিন্তু এর পেছনে আসল কারণ হলো, নিউজিল্যান্ডের ইমিগ্রেশন প্রোগ্রাম, যেটার মাধ্যমে মুসলিমদেরকে এদেশে আসতে দেয়া হয়েছে গোড়াতে। আজকে মুসলিমরা ভিক্টিম হলেও, সাধারণত তারাই এরকম ঘটনায় হত্যাকারী হয়ে থাকে। বিশ্বজুড়ে ধর্মের নাম দিয়ে মানুষ হত্যা করে চলেছে মুসলিমরা। পুরো ইসলাম ধর্মটাই ধর্মীয় নেতার মুখোশে এক ষষ্ঠ শতকের উৎপীড়কের আগ্রাসী চেতনা, যা কিনা এর সকল বিরোধী, অবিশ্বাসী আর ত্যাগীদের খুন প্রত্যাশায় যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইসলাম আসলে অন্য ধর্মের মতো না, এটা ধর্মের নামে ফ্যাসিবাদ। কেবল এই ঘটনায় তারা কিছু করেনি বিধায় কিন্তু তারা নির্দোষ নয়।"
তবে এবার অবশ্য বরাবরের মতো শ্বেতাঙ্গ খুনী ব্রেন্টন ট্যারান্ট'কে মানসিক ভারসাম্যহীন বলা হচ্ছে না, সন্ত্রাসীই বলা হচ্ছে অফিসিয়ালি। কারণ, তার পরিকল্পনার প্রতিটি ধাপ ছিল নিখুঁত।
ব্রেন্টন নিজেই মাথায় আটকে রাখা গো-প্রো ক্যামেরা দিয়ে লাইভ টেলিকাস্ট করে পুরো গণহত্যার ভিডিও। ১৬ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ধ্বংসযজ্ঞ ভিডিওতে কোনো পুলিশ আসতে দেখিনি, ব্যাপারটা যেন সেও জানত এমনটিই হবার কথা! মসজিদে ঢুকে নারী-শিশু-পুরুষ নির্বিশেষে কাউকেই মারতে তার দ্বিধা হয়নি। ৮৭ পৃষ্ঠার ম্যানিফেস্টো নিজেই প্রকাশ করেছে সে, যেখানে বারবার সে বলেছে, এটা সে করেছে তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্য, যেন বাইরে থেকে আসা ইমিগ্র্যান্ট বা বহিরাগত থেকে তারা বাঁচতে পারে।(আর এই বহিরাগত বলতে অবশ্যই মুসলিম) নিজেকে সে বারবার ইউরোপীয় বলেছে, তার শরীরে ইউরোপীয় রক্ত। কারণ, এই অঞ্চলে আসলে মানুষ ইউরোপ থেকেই এসেছিল। তবে, অস্ট্রেলীয় আদিবাসীদের কাছে তারা (ইউরোপীয়রা) নিজেরা কী ছিল সে বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই। Fortnite স্টাইলে (তার ম্যানিফেস্টোতে এ গেমের কথাই বলা ঠাট্টাচ্ছলে, PUBG না) গণহত্যা চালানো নিয়ে তার বক্তব্য, এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গান কন্ট্রোল নিয়ে হওয়া কথাবার্তা বিষয়ে তার একটি প্রতিবাদ। জনপ্রিয়তম ইউটিউবার পিউডিপাই'কেও সাবস্ক্রাইব করতে বলে সে, কারণ স্যাটায়ার করে হলেও ইহুদি-মুসলিম বিরোধী কন্টেন্ট ছিল তার। ব্রেন্টন বলেছে, সে একজন ফ্যাসিবাদী, তাকে যেন এটাই ডাকা হয়। তার বন্দুকের লেখাগুলো আর মুসলিমদের উপর আক্রমণ নিঃসন্দেহে তার রিলিজিওন-ড্রিভেন মোটিভকে নির্দেশ করে, সে মুখে বলুক আর না বলুক। অবশ্য ঘটনার গোড়ার দিকে মিডিয়া তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পরে তার ম্যানিফেস্টো প্রকাশ হলে ব্রেন্টন নিজেই সে উপায় রাখেনি।
এছাড়াও-
বন্দুকে আর যা যা লেখা ছিল, সেই লেখাগুলোর অর্থ-
'CHARLES MARTEL', 'TOURS 732'- ফ্রান্সের এই রাজা ইসলামি খেলাফত সাম্রাজ্য পশ্চিম ইউরোপে অগ্রসর হওয়া রুখে দেন ৭৩২ সালে Tours যুদ্ধে, এ কারণে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের কাছে খুবই পূজনীয় ছিলেন তিনি।
'CALIVIJO 844'- ৮৪৪ সালে খ্রিস্টানরা কালিভিহোর যুদ্ধে মুসলিমদের পরাজিত করে- এমন তথ্য ইতিহাসে নেই, কিন্তু মিথে আছে। এই মিথ এতই জনপ্রিয় ছিল যে এই বানানো যুদ্ধটা হয়ে পড়ে ক্রুসেডারদের অনুপ্রেরণা।
'ALEXANDRE BISSONNETTE'- এই খুনী লোক ক্যানাডায় Quebec City মসজিদে গুলি চালান ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি।
'SKANDERBEG'- পঞ্চদশ শতকের এই লোক প্রথমে অটোম্যান সাম্রাজ্যের লোক ছিলেন, পরে বিশ্বাসঘাতকতা করে অটোম্যান সুলতানদের বিরুদ্ধে চলে যান, আর ছিলেন গেরিলা যুদ্ধে খুবই নির্মম। এই লোক এতই ভয়ংকর ছিল যে শেষমেশ খ্রিস্টানরাও অটোম্যান সুলতান মেহমেতকে অনুরোধ করেন একে শেষ করে দিতে।
'ODO THE GREAT'- ৭২১ সালে উমাইয়া খেলাফতকে পরাজিত করা প্রথম ফ্রেঞ্চ শাসক।
'FOR BERLIN, FOR MADRID'- এগুলো এই শহরগুলোতে নিকট অতীতের সন্ত্রাসী হামলার রোমন্থন।এটা খারেজি আইসিসের আক্রমণ ছিল।
'ANTON LUNDID PETTERSSON'- সুইডেনের Trollhattan স্কুলে ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর এই ২১ বছর বয়সী ছেলে উগ্র খ্রিস্টধর্মী শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে হামলা চালায়।
'MARCO ANTONIO BRAGADIN'- ষোড়শ শতকের ভেনিসের এই মিলিটারি অফিসার মুসলিমদের হজগামী জাহাজগুলো ডোবাতেন আর হজগামীদের ধরে এনে নির্যাতন করতেন। পরে অটোম্যান সাম্রাজ্য তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
পরিশেষে এটাই আবারো বলতে চাই- তারা ভুলেনি, কিন্তু মুসলিমরা জানেই না। এটাই বাস্তবতা।
Comment