বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইন্নাল হামদালিল্লাহ ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রসুলিল্লাহ
রামাদান: মুজাহিদীনের পথ ও পাথেয়
ইন্নাল হামদালিল্লাহ ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রসুলিল্লাহ
রামাদান: মুজাহিদীনের পথ ও পাথেয়
ভূমিকা: রমজান মাস ইবাদাতের এক ভরা মৌসুম মাস । আর এ বিষয়ে সম্মানিত সকল ভাইয়েরা অফলাইন অনলাইনে ব্যাপক কথাবার্তা লিখালিখি লেকচার দেন বা দিচ্ছেন আলহামদুলিল্লাহ । ফলশ্রুতিতে আমরা অনেক উপকৃত হচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ্* । সেদিন ফোরামে সম্মানিত এক ভাই একটি পোস্ট দিয়েছেন “ রামাদান: মুমিনের পথ ও পাথেয় ” নামে । লিখাটি খুব ভালো লেগেছে আলহামদুলিল্লাহ । আমি ওটা পড়ে ভাবলাম - আমি যেহেতু এক জঙ্গি

শুরুতেই বলে নেওয়া ভালো যে আমি এখানে আম ইবাদাতের বিষয় নিয়ে কোন কিছু বলবোনা । কারণ আমার ইল্মের অবস্থা হল মাইনাস ওয়ান এর মতো প্রায় , এছারা এসব বিষয়ে অনলাইন অফলাইনে প্রচুর রত্নভাণ্ডার রয়েছে আলহামদুলিল্লাহ্* । আমি এখানে শুধু একটু ভিন্নতা আনতে চেষ্টা করবো আল্লাহর ইচ্ছায় যা একান্তই আমার বিক্ষিপ্ত আর এলোমেলো কিছু ভাবনামাত্র । যদি এর মাঝে কল্যাণকর কিছু থাকে তাহলে তা একান্তই আপন রবের অনুগ্রহ যা তিনি স্বীয় অন্তরে ঢেলে দিয়েছেন দয়া করে । আর যদি অনিষ্টই বিদ্যমান থাকে এর মাঝে তাহলে তা কেবলই আমার আর ইবলিস নামক খবিসের পক্ষ থেকে , যে আমাকে নেক সুরতে ধোঁকা দিয়ে আমার সময় ও শ্রম নষ্ট করালো । আল্লাহর কাছেই পানা চাই যাবতীয় অনিষ্ট থেকে ।
১। রামাদান মাস কুরআন নাজিলের মাস: আর তাই এ মাসে বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত অনেক সওয়াবের এবং সম্মানের কাজ । আর আলহামদুলিল্লাহ্* আমরা সকলেই হয়তো এ মাসে কুরআন তেলাওয়াত বাড়িয়ে দেই। তবে আমি আমার প্রিয় ভাইদেরকে মাসোয়ারা দিবো - যেহেতু এ মাসে আমাদের কুরআন তেলাওয়াত আল্লাহর ইচ্ছায় বেশি হয়ে থাকে কারণ এ মাসে আগ্রহ বেশী থাকে , আর তাই এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে যদি নরমালি কুরআন খতম করার চাইতে আমরা কুরআনের সুরাতুল আনফাল এবং সুরাতুত তাওবাহসহ জ্বিহাদের অন্যান্য সব আয়াতগুলো মুখস্ত করে নিতে পারি [সম্ভব হলে অর্থ এবং তাফসিরসহ] তাহলে ভালো হয়না ভাই ? এতে করে আমাদের দাওয়াতি কাজ করতে এবং ভাইদের তাহ্রিদ করতে সুবিধা হবে ইনশাআল্লাহ্* । এবং নিজের মধ্যেও জ্বিহাদী কর্মস্পৃহা বাড়বে বিয়িজনিল্লাহ , যদি ইল্ম অনুযায়ী আমল হয়ে থাকে ।
২। রামাদান মাস তাকওয়া অর্জনের মাস: যেহেতু আমি উপরে বলেছি যে আমি এখানে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে কথা বলতে চেষ্টা করবো , সুতরাং তাকওয়া অর্জনের মাস এটাকে ভিন্নভাবে বললে নিজ ঈমানী দুর্বলতা কাটানোর মাস । আর আমাদের তাঞ্জিমের কাজে অধিকাংশ ভাই যারা নিষ্ক্রিয় তাদের একটা বড় অংশ এই ঈমানী দুর্বলতার কারণেই নিষ্ক্রিয় । আপনি হয়তো প্রশ্ন করবেন তা কিভাবে ? তার উত্তর দয়াময় রবের কিতাব থেকে ।
বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর- আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। [ তাওবাহ ২৪]
এখানে আল্লাহ বলে দিয়েছেন যে পিতা , সন্তান , ভাই , স্ত্রী , গোত্র , ধন-সম্পদ , ব্যবসা , বাসস্থান এই বিষয়গুলি যদি “ আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জ্বিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয় ” । কথা হল আমরা কিন্তু কেউ এ কথা বলিনা যে আমরা উপরের বিষয়গুলিকে আল্লাহর পথে জ্বিহাদের চাইতে বেশী পছন্দ করি কিন্তু আমাদের কর্ম দ্বারাই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় । কারণ চাকরি-বাকরি ব্যবসা-বাণিজ্য পরিবার সন্তানাদি ইত্যাদি নিয়ে এক ছকে বাঁধা জীবন থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে প্রতিনিয়ত কিছু সময় বের করে নিয়ে আসতে পারিনা কেন ? লা ইলাহা ইল্লাহ এর শাসন কায়েমের জন্য আমি তাঞ্জিমে কেন প্রতিনিয়ত একটিভ কিছু সময় ও শ্রম দিতে পারিনা ? বরং প্রতিনিয়তই আমার কাছে জ্বিহাদের কাজের চাইতে পার্থিব বিষয়াদি গুলোই অধিক প্রাইওরিটি পাচ্ছে , এর ফলেই তো আমি তাঞ্জিমের কাজে রেগুলার টাইম দিতে পারিনা । আমরা আসলে তাঞ্জিমের কাজকে তেমন গুরুত্ব বা অগ্রাধিকার দেইনা যেমন দিয়ে থাকি পরিবার বা নিজেদেরে পার্সোনাল বিষয়াদিতে । তাহলে এটা কি নিজ ঈমানী দুর্বলতা নয় ? আমার মতে অবশ্যই এটা ইমানী দুর্বলতা । কারণ আমার নিকট তো জ্বিহাদী একটিভিটির চাইতে অলয়েস সেগুলোই অগ্রাধিকার পাচ্ছে যেগুলোর কথা আল্লাহর উপরেউল্লেখিত আয়াতে বলে দিয়েছেন । আর যেহেতু রামাদান ইমানি দুর্বলতা কাটানোর এক মোক্ষম মাস সেহেতু আমরা কি আমাদের এই ইমানি দুর্বলতা কাটানোর জন্য এ মাসে আন্তরিকভাবে আপ্রাণ চেষ্টা জারী রাখতে পারিনা আমার ভাই জ্বিহাদী কাজে প্রতিনিয়ত দৈনিক ধারাবাহিকভাবে কয়েক ঘণ্টা সময় ও শ্রম দিয়ে ? যাতে করে তা এক স্থায়ী অভ্যাস বা রুটিনে পরিণত হয়ে যায় ।
৩। রামাদান অধিক আমলের মাস: তাই আমরা আলহামদুলিল্লাহ্* রামাদানে আমাদের আমলের পরিমাণ যথাসম্ভব বাড়িয়ে দেই । একটু দেখি কোন কোন আমল আমরা বাড়াই । কুরআন তেলাওয়াত , জিকির আজকার , অন্যান্য নফল নামাজ , কিয়ামুল লাইল ,সালাতুতু তারাবী , দান সাদাকা । এগুলোই তো নরামালি আমরা বাড়িয়ে থাকি তাই না ? আর ফরজ নামাজ তো বাড়ানোর কিছু নাই । তো যেই ইবাদাতগুলো আমরা রমাদান উপলক্ষে বাড়িয়ে থাকি বা খুব গুরুত্তের সাথে আদায় করি তার কোনটাই কিন্তু ফরজ নয় । তার মানে আমি বিলকুল এই ইবাদাতগুলোকে ছোট করছিনা বা এগুলোর প্রতি কোনভাবেই আমি নিরুৎসাহিত করছিনা। আল্লাহর পানাহ চাই তা থেকে । আমি জাস্ট ভিন্ন এঙ্গেল থেকে আমার মতামত বা পর্যালোচনা তুলে ধরাছি মাত্র । যা বলছিলাম , এগুলোর কোনটাই ফরজ নয় সবই সুন্নাহ নফল বা মুস্তাহাব । কিন্তু মহান রব প্রদত্ত এক অমোঘ ফরজ বিধান জ্বিহাদী আমল কি আমরা বাড়িয়েছি রমাদান কে কেন্দ্র করে ? তাঞ্জিমের কাজে কি আমি পূর্বের চাইতে সময় ও শ্রম দেওয়ার পরিমাণ কিছুটাও বাড়িয়েছি ? কিংবা উপরে উল্লেখতি ইবাদাতগুলোকে আমরা রমাদান উপলক্ষে যতটা গুরুত্তের সাথে আদায় করে থাকি [যা করা উচিৎ], আর আল্লাহর ফরজ বিধান জ্বিহাদের কাজ তথা তাঞ্জিমের কাজে সময় ও শ্রম দেওয়া কি তার চাইতে বেশী গুরুত্ব পাওয়া উচিত না ? কিন্তু তা কি দেই আমরা ? তাহলে এবার আপনি একটু চিন্তা করুন আজ তাঞ্জিমের কাজে সময় ও শ্রম দেওয়া আপনি পূর্বের চাইতে কিছুটা বাড়িয়েছেন কিনা । বা যারা এখনো কাজে নিষ্ক্রিয় তারা কাজে আন্তরিকতার সাথে সক্রিয় হওয়ার জন্য বাস্তবিকই চেষ্টা ফিকির মেহনত করছি কিনা ।
আসলে আমাদের প্রতিটা কাজ বা আমলের গুরুত্বের মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখা উচিৎ । কিন্তু আমরা তা করিনা । এই কারণেই আমরা চাকরিবাকরি অর্থ উপার্জন আর পরিবারেই আমাদের সমস্ত সময় দিয়ে দেই , ফলে জ্বিহাদের কাজে সময় কেউ দিতে চাইলেও আর সময় খুজে পাইনা বা বের করতে পারিনা । কারণ কাকে বা কোন কাজকে কেমন গুরুত্ব দিতে হবে এবং প্রত্যেকের গুরুত্ব অনুযায়ী কাকে বা কোন কাজে কেমন সময় দিতে হবে তার ভারসাম্য আমরা ঠিক রাখিনা । উপরেউল্লেখিত আমলগুলো নিঃসন্দেহে অনেক ফজিলতপূর্ণ । যার প্রতিটির ফজিলত বা পুরষ্কারের ব্যাপারে হাদিসে উল্লেখ আছে । কিন্তু আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হল – উল্লেখিত আমলগুলো আমরা পুরষ্কারের আশায় করে যাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ্* কিন্তু অপরদিকে আমি আল্লাহ্* প্রদত্ত এক ফরয বিধানে অলসতা বা গাফলতি করছি । আর ফরজ ইবাদাতে অলসতা বা গাফলতি কি ভালো লক্ষণ ! এরই নাম কি অগ্রাধিকার বা গুরুত্বের ভারসাম্যতা বজায় রাখা ? এছাড়াও যদি পুরষ্কারের কথা বলি তাহলে-
যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর রাহে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জেহাদ করেছে, তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর কাছে আর তারাই সফলকাম। তাদের সুসংবাদ দিচ্ছেন তাদের পরওয়ারদেগার স্বীয় দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের, সেখানে আছে তাদের জন্য স্থায়ী শান্তি। তথায় তারা থাকবে চিরদিন। নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে আছে মহাপুরস্কার। [ তাওবাহ ২০-২২]
তাই আমার ভাই , আমরা যেন যেকোনো কাজে বা খাস করে আমাদের আমলসমূহে গুরুত্বের ভারসাম্যতা বজায় রাখি । চাকরি পরিবার এগুলোতে সময় দিতে হবে সত্য , এই দুনিয়াটা এমনই , এখানে নানা ব্যস্ততা লেগেই থাকবে কিন্তু তার মাঝেও জ্বিহাদের কল্যাণে তাঞ্জিমের কাজের জন্য সময় বের করে নিতে হবে । কারণ এ দুনিয়াটা এমন যে , যদি আপনি পার্থিব সব বিষয়াদি থেকে একটু ফারেগ হয়ে কিছু সময় বের করে না নেন তাঞ্জিমে একটিভ হয়ে সময় দেওয়ার জন্য তাহলে কেউ আপানাকে সময় বের করে দিবেনা বা বের করতেও দিবেনা , সবাই সবার হক আপনার থেকে ঠিকই আদায় করে নিবে বা বুঝে নিবে , আর সেগুলো পূরণ করতে করতেই দেখবেন আপনার দিন সাপ্তাহ মাস বছর এমনকি জীবন অন্তিম মুহূর্তে চলে এসেছে । সারাজীবন অন্য সবার হক ঠিকই আদায় করে গেলেন কিন্তু পারলেন না শুধু নিজ দ্বীনী হক পূর্ণভাবে আদায় করে জেতে । যদি এমনই হয় বাস্তব অবস্থা তাহলে হয়তো একসময় আফসোসের কোন সীমা থাকবেনা বাট তখন আর কিছু করারও থাকবেনা । তাই আমার ভাই , তাঞ্জিমের কাজের জন্য প্রতিনিয়ত দৈনিক অন্তত কয়েক ঘণ্টা সময় হলেও বাজেট করে রাখা চাই । আর যারা আরও বেশী পারবে তারা আরও বেশী বেশী দেওয়া উচিৎ । স্মরণ রাখা চাই যারা এখানে তথা দুনিয়াতে এখন দ্বীন কায়েমের জন্য যত বেশী ইনপুট দিবে তারা পরকালে ততবেশি আউটপুট পাবে । এবং দ্বীনের পথে ততোবেশী অগ্রগামী হবে । আর দ্বীনের পথে যে যতো বেশী অগ্রগামী হবে আল্লাহর কাছে সে ততো বেশী প্রিয় সম্মানিত আর মর্যাদাবান হবে । এছাড়াও আমাদের জান মাল তো আল্লাহর কাছে অলরেডি সেলড । সে হিসেবেও তো আমার এ জীবন তথা হায়াত আমার নয় । আর তাই তা সম্পূর্ণই তো আল্লাহর পথে উৎসর্গ করে দেওয়াই ঈমানের দাবি । এরপরও যদি বর্তমান এই নব্য জাহিলিয়াতে আল্লাহ্*র জমিনে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর কালিমা বা দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে আমি একটিভ না থাকি তাহলে এই জমিনের উপরে থাকার চাইতে তার নিচে থাকাই অনেক উত্তম যেই জমিনে প্রতিনিয়ত আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ করা হচ্ছে , আর একমাত্র বিধানদাতা আল্লাহর বিধান কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যতসব তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে মুসলিম উম্মাহকে শাসন করা হচ্ছে । আর আমি এতোসব কিছুর পরও এখনো নিজ জ্বিহাদী দায়িত্ব পালনে নিষ্ক্রিয়ই থেকে যাচ্ছি ! এখনো ছকে বাধা এক যান্ত্রিক জীবন থেকে বের হয়ে আসতে পারিনা ! তাহলে এই জমিনের উপরে থেকে কি লাভ হচ্ছে এই দ্বীনের আমাকে দিয়ে ! আমার ভাই একটু চিন্তা করুন প্লীজ......
৪। রমাদান সিয়ামের পালনের মাস: আমরা সবাই সিয়াম পালন করি , কেন ? কারন – কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম । কিন্তু কিতুবা আলাইকুমুল কিতালের বেলাতেই আমরা নীরব অলস আর গাফেল কেন ! দয়াময় রব একই শব্দ দিয়ে সিয়াম ও কিতাল কে ফরজ করলেন । কিন্তু এক ফরজিয়াত আমরা আদায় করছি আলহামদুলিল্লাহ্* কিন্তু অন্য ফরজিয়াতের বেলাতেই যতোসব বাঁধা-প্রতিবন্ধকা , ওজুহাত বাহানা আরও অনেক কিছুই অগ্রে এসে আমার আর জ্বিহাদের কাজে একটিভ হওয়ার মাঝে প্রাচীর হয়ে দাড়ায় । আমার ভাই আমি আপনাকে দরদের সাথে দাওয়াত দিচ্ছি আপনি তাঞ্জিমের কাজে এখন থেকেই পূর্ণ একটিভ হয়ে যান । প্রতিনিয়ত দৈনিক ধারাবাহিকভাবে তাঞ্জিমের কাজে সময়, শ্রম , মেধা , যোগ্যতা দিয়ে বা কাজে লাগিয়ে এদেশে তামকিন কায়েমের পথ সুগম করতে মুজাহিদিনের অগ্রগামী কাতারে চলে আসুন । আপনার মাঝে যেই যোগ্যতাই আছে তা-ই পূর্ণভাবে কাজে লাগান জ্বিহাদের পথে । আমাদের স্মরণ রাখা চাই , একসময় হয়তো আপনি খুব চাইবেন আপনার যোগ্যতাগুলো দ্বীনের পথে লাগাতে এবং দ্বীনের পথে একটিভ হয়ে সময় শ্রম ও মেহনত করতে কিন্তু হয়তো তখন আপনার রব আপনাকে সুযোগ নাও দিতে পারেন যেকোনো কারণে । কারণ এ জীবন বড়ই অনিশ্চিত , বড়ই ঝুঁকিপূর্ণ । কখন কোন দিক থেকে মালাকুল মাউত চলে আসবে বা যেকোনো বড় ধরনের বিপদআপদ চলে আসবে আমরা তা টেরও পাবেন না । আর তখন দ্বীনের কল্যাণে নিজ সময় শ্রম মেধা আর যোগ্যাতাগুলো কাজে লাগানোর সুযোগও আমাদের হয়ে উঠবেনা । তাই আমরা ভাই , সময় ও সুযোগ থাকতে এখনই ঝাঁপিয়ে পড়ুন জ্বিহাদী কর্মযজ্ঞে , ঝেড়ে ফেলুন সব নিষ্ক্রিয়তা অলসতা গাফলত আর নানা বাঁধা-প্রতিবন্ধকা । আবারো বলছি - সময় ও সুযোগ থাকতে এখনই ঝাঁপিয়ে পড়ুন জ্বিহাদী কর্মযজ্ঞে , ঝেড়ে ফেলুন সব নিষ্ক্রিয়তা অলসতা গাফলত আর নানা বাঁধা-প্রতিবন্ধকা । হে আল্লাহ ! আপনি সাক্ষী থাকুন আমি চেষ্টা করেছি দুর্বল ইল্মহীন আর অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ।
৫। রামাদান দাওয়াতি কাজের উপযুক্ত সময়: এ মাসে তুলনামূলকভাবে সব ভাইদের ঈমানী হালত ভালো থাকে আলহামদুলিল্লাহ । ইবাদাতের আগ্রহ থাকে , কুরআন তেলাওয়াত বা দ্বীনী ইল্ম বা বিভিন্ন লেকচার , কিতাবাদি পড়ার আগ্রহও একটু বেশী থাকে অন্যসব মাসের তুলনাও । তাই আমাদের উচিৎ এ মাসকে পুঁজি করে এর থেকে পূর্ণ ফায়দা হাসিল করা দাওয়াতি কাজের দ্বারা । যদি সম্ভব হয় এমন টার্গেট নেওয়া যে এ মাসেই কয়েকজন ভাই রেডি করে ফেলা বা রিক্রুট করা। এ মাসে দাওয়াতের ভালো পরিবেশ বিরাজমান থাকে । এবং ভাইদের অবস্থাও তুলনামূলক ভালো থাকে । তাই এমন সুযোগ থেকে আমাদের মাহরুম হওয়া উচিত হবে কি ? তাই আশা করি হে ইল্মওয়ালাগণ , আপনারা আপনাদের ইল্মের শুকরিয়া আদায় করবেন । আর শুকরিয়া আদায় তো বাস্তব কর্ম দ্বারাই আদায় হয়ে থাকে ।
৬। রমাদান দান সাদাকার মাস: এ মাসে দান সাদাকার ফজিলত নিয়ে সবাই কথা বলেন আলহামদুলিল্লাহ । আর আমরাও জানি এই ফজিলতগুলো । তো আমি এখানে এগুলো কিছু বলছিনা । বরং আমাদের একটা ঐতিহ্য বা রেওয়াজ তুলে ধরি । এক জুমায়ায় সম্মানিত মুফতি খতিব সাব খুৎবায় বলছিলেন যে – সাদাকাতুল ফিতরা আদায় সর্বনিম্ন পঁয়ষট্টি টাকা থেকে দুই হাজার বা এর চাইতে বেশী পর্যন্ত আদায় করা যায় । এমাউন্টটা ডিপেন্ড করবে ব্যক্তির সামর্থ্যের উপর । অর্থাৎ যে যেমন সামর্থ্যবান সে তেমন এমাউন্ট দিয়ে ফিতরা আদায় করা উচিত । কিন্তু আমাদের এই সমাজের বাস্তব অবস্থা হল – কোটিপতি সেও আদায় করছে পঁয়ষট্টি টাকা দিয়ে , লক্ষপতি সেও দিচ্ছে পঁয়ষট্টি টাকা ,আর যে রিকশাওয়ালা সেও দিচ্ছে পঁয়ষট্টি টাকাই । কিন্তু এদের সবার সামর্থ্য কি এক ? কিন্তু এটাই আমাদের দেশের এক অঘোষিত ঐতিহ্য বা রেওয়াজ হয়ে গেছে যে ঐ রিক্সাওালা শ্রমিকরাও দেয় পঁয়ষট্টি , বাড়িওয়ালাও দেয় পঁয়ষট্টি , শিল্পপতিও সেই পঁয়ষট্টি-ই দেয় ।
ঠিক একইভাবে আমাদের তাঞ্জিমের কিছু ভাইদের মাঝেও [ সবাই না ] এমন একটা অঘোষিত রেওয়াজ আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে , যেই ভাই মাসে আট/দশ হাজার টাকা সাদাকা করার সামর্থ্য রাখেন তিনি দেন তিন/চার/ হাজার টাকা , আবার যেই ভাই চার পাঁচ হাজারই দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন তিনিও দেন চার/পাঁচ হাজার । যিনি তিন হাজার সাদাকা দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন তিনি দেন এক হাজার আবার যেই ভাই এক হাজার দেওয়ারই সামর্থ্য রাখেন তিনিও এক হাজার দেন । যেই ভাই দুই হাজার দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন তিনি দেন হাজার বা চার পাঁচশ আবার যিনি হাজার বা চার পাঁচশ দেওয়ারই সামর্থ্য রাখেন তিনিও তাই দিচ্ছেন । কিন্তু সকলের সামর্থ্য তো একরকম না । এ যেন এক অঘোষিত রেওয়াজ হয়ে গেছে । তাই আমার ভাই আমরা সবাই যেন নিজেদের সামর্থ্যকে বিবেচনা বা বিচার করে জ্বিহাদে অর্থ ডোনেট করতে সচেষ্ট হই আমার সামর্থ্য যাই থাক না কেন । যদি আমার সামর্থ্য হয় একশ টাকা তাহলে আপনি এটাই দিন । এতেই আল্লাহ বরকত দিবেন ইনশাআল্লাহ্* । কারণ আপনার তো এর বেশী আর সামর্থ্য ছিলোনা । আপনি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করেছেন । এতেই আল্লাহ্* আপনার উপর খুশি হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ্* । আর নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সকলের সামর্থ্য বা প্রকৃত অবস্থা অবশ্যই জানেন । আর যদি আপনার সামর্থ্য হয় দশ বিশ হাজার ডোনেট করা তাহলে আপনি তাই করুন ভাই । কেননা আপনি স্মরণ রাখুন ভাই , আপনি যতোই ইনকাম করুন না কেন বা আপনি যতোই সম্পদ গাড়ি বাড়ির মালিক হন কিছুই আপনার সাথে যাবেনা এবং এগুলোর কিছুই হাশরের সেই কঠিন মুহূর্তে কাজে আসবেনা শুধুমাত্র ঐগুলো বাদে যেগুলো আপনি অগ্রে প্রেরণ করেছেন আখিরাতের জন্যে ।
৭। রামাদান যাকাত আদায়ের উপযুক্ত মাস: শাইখুল হাদিস জসীমউদ্দিন রাহমানী তার এক লেকচারে বলেছেন জ্বিহাদের খাতেই যাকাত আদায় করা সর্বউত্তম । আর যখন মুজাহিদিনের বিভিন্ন জরুরত বা চাহিদা থাকে তখন তো আরও বেশী প্রযোজ্য । আর নিশ্চয়ই আপনারা অবগত যে আমাদের তাঞ্জিমের কতো জরুরত রয়েছে এবং চাহিদার তুলানাও যোগানও খুবই সীমিত । কারণ তাঞ্জিমের তো কোন ইনকাম নেই শুধুমাত্র আপনাদের দেওয়া দান সাদাকাগুলো ছাড়া । এছাড়াও শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ এর এই ফতোয়া তো আমাদের সবারই জানা । ডঃ আব্দুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ তাঁর “মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষা” নামক বইয়ে উল্লেখ করেন – “ যদি মুজাহিদিনের মালের প্রয়োজন হয় তখন একজনের মাল দ্বারা জ্বিহাদ করা ফরয । তখন মহিলা ও শিশুর মাল দ্বারাও জ্বিহাদ করা ফরজ ।” এটি ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ বলেছেন । [ফতওয়া আল কুবরা-৪/৬০৮] এই জন্যই জ্বিহাদে যখন মালের প্রয়োজন হয় তখন মাল জমা করা হারাম । আবার একটু দৃষ্টি বুলান ভাই - এই জন্যই জ্বিহাদে যখন মালের প্রয়োজন হবে তখন মাল জমা করা হারাম । ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ কে প্রশ্ন করা হয়েছিল – “ আমাদের কাছে এতো সামান্য মাল আছে যে , হয় দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের উপর খরচ করতে হবে অথবা জ্বিহাদে ব্যয় করতে হবে । এক্ষেত্রে আমরা কি করবো ? ” তিনি বলেছিলেন , “ যদিও দুর্ভিক্ষ পীড়িতরা মারা যায় তবুও আমরা জ্বিহাদকে অগ্রাধিকার দিবো । মুসলিমদেরকে যখন শত্রুরা বর্ম হিসেবে ব্যাবহার করে তখন ঐ মুসলিমরা আমাদের হাতে নিহত হয় , অথচ এখানে দুর্ভিক্ষ পীড়িতরা আল্লাহ্*র হুকুমে মারা যাচ্ছে ।”
সুতরাং আমার ভাই , আমরা যেন আমাদের সব যাকাতগুলো ফি সাবিলিল্লাহ তথা তাঞ্জিমে দিতেই সচেষ্ট হই এবং সাথে সাথে যথাসম্ভব নিরাপত্তা বজায় রেখে নিজ পরিবার , নিকট আত্মীয়স্বজন , পরিচিত বা ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের থেকেও যাকাত বা দান সাদাকা কালেকশন করি আল্লাহর রাহেই । আপনার দ্বীন বা জ্বিহাদের প্রতি দরদপূর্ণ একটু মেহনত বা প্রচেষ্টা এর কারণে যদি মাজলুম এই দ্বীনের বা জ্বিহাদের একটু ফায়দা হয় তাহলেই তো আপনি গেইনার । হতে পারে এর উসিলাতেও আপনি নাজাত পেয়ে যেতে পারেন যেহেতু তা আপনি শুধুমাত্র আল্লাহর রাহেই জ্বিহাদের কল্যাণের উদ্দেশেই করেছেন । আর আল্লাহই একমাত্র তাওফিকদাতা ।
হে আমাদের প্রতিপালক , আপনি আমাদের জান মালসহ সর্বাত্মকভাবে আমাদেরকে আপনার দ্বীনের জন্য কবুল করে নিন । আর হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু। যিনি বিচার দিনের মালিক। আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
Comment