এমন দুটি ব্যাধি যা যুবক ভাইদের জন্য জিহাদের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়
বিসমিল্লাহ ওয়াসসালাতু আস সালাম আলা রাসুলিল্লাহ।
জিহাদের পথে খাস করে যুবক ভাইদের জন্য প্রধান ২ টা বাধা। এক ভয়, দুই দুনিয়ার প্রতি মুহাব্বাত, বা দুনিয়ার সাথে লেগে থাকা। এই ২ প্রধান বাধার কারনে অনেক ভাই জিহাদ এর স্বরূপ এবং ফারজিয়াত এবং ফাজায়েল বুঝার পরেও এই কাজের সাথে জুড়তে পারেনা।
এই ২ টা বাধার বেপারে আমার কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি ইনশা আল্লাহ
ভয়:
ভয় আসলে এক মারাত্মক ব্যাধি। ভয় কম বেশি সবার ই থাকে। সেটা খুব একটা সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে দিন শেষে যদি ভয় ই আমার উপরে প্রাধান্য বিস্তার করে। আমার কাজ এবং আমার সিদ্ধান্তের উপরে যদি ভয় জয়ী হয় তবে সমস্যা। এজন্য দাওয়াহ দেয়ার পাশাপাশি ভয় কে দূর করার জন্য খাস ভাবে কিছু কাজ করা। আমার কাছে মনে হয়েছে ভয় দূর করার জন্য আল্লাহর কালামের আয়াত গুলোর বার বার মুজাকারা এবং সেগুলোর ব্যাপারে তাফাক্কুর করা এবং বার বার আলোচনা করে সেগুলো কে দিলের মধ্যে বসিয়ে নেয়া - এই পদ্ধতি খুব উপকারি। একই সাথে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতালার আসমা ওয়াস সিফাত এর উপলব্ধি ও এই ক্ষেত্রে অনেক কাজে দেয় আলহামদুলিল্লাহ। শাইখ আহমেদ মুসা জিবরীল এর এই বেপারে একটা ছোট ক্লিপ আছে যেটা আমি এখানে শেয়ার করলাম ইনশা আল্লাহ - উপকারে আসবে
Fear the Creator, Not the Creation | Sheikh Ahmad Jibril
শুধুমাত্র এই ভয়ের কারনে অনেক ভাই কাজের ব্যাপারে পিছিয়ে যান। শুধু তাই ই নয় কাজে জুড়ার পরেও অনেক ভাই এই ভয়ের কারনে ইতমিনানের সাথে কাজ করতে পারেন না। কারন শয়তান বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের কে ভয় দেখায় এবং আমাদের অন্তর কে অশান্ত করে রাখে। এটার কারনে অন্তর আস্তে আস্তে আল্লাহর দিক থেকে সরে যায়। তাই যে সব ভাই কাজের সাথে আছেন তাদের জন্যও নিয়মিত তাজকিয়া এবং তাফাক্কুর করে নিজের অন্তরের সাথে বুঝা পড়া করে নিতে হবে যে আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারো ভয় অবশিষ্ট আছে কিনা? থাকলে সেই ভয়ের সাথে আল্লাহর কালাম দিয়ে মুকাবেলা করা যতক্ষণ পর্যন্ত না দিল শুধু মাত্র আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে, অন্তত তাগুতের ব্যাপারে কোন ভয় না থাকে। এটা এমন একটা বিষয় যে - একবার করলেই হয়ে যাবে এমন না, বরং এটাকে মাঝে মাঝে ঝালাই করে নিতে হবে আর চেক দিয়ে দেখতে হবে আমার অন্তর কি আল্লাহ ব্যাতিত আর কারো ভয়ে ভয় পাচ্ছে কিনা? এটা আসলে নিজেদের কেই করতে হবে কোন মাসুল ভাই বলে বসে এই চেক দেয়া টা সম্ভব না। আল্লাহ সহজ করুন আমীন।
আল্লাহ আমাদের আদেশ দিয়েছেন শয়তান এবং তার আউলিয়াদের ভয় না করতে এবং শুধু আল্লাহকেই ভয় করতে। এটা আমাদের উপরে হুকুম। আসলে বিষয় টা তো এমন যে ভয় তো আসলে তাদের পাওয়া উচিত! যারা আল্লাহর সাথেই যুদ্ধ ঘোষণা দিয়েছে যারা আল্লাহর সাথেই যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে তারাই যদি ভয় না পেয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরাতে পারে তবে আল্লাহর বান্দা হয়ে আমাদের ভয় পাওয়া টা খুবই লজ্জাজনক!
আর একটা কথা এমন যে - খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ যখন রোমানদের সাথে কঠিন যুদ্ধে লিপ্ত এমন সময়ে তিনি রাতে টহলে বের হতেন। মুসলিম আর্মি ঘুমিয়ে গেলে তিনি একাই ঘোড়া নিয়ে বের হয়ে যেতেন শত্রু দলের খবর জানার জন্য। উনার এমন কাজ দেখে মুসলিম রা বলত আপনি এ কি করছেন! আপনি হচ্ছেন সেনাপতি, আল্লাহ না করুন যদি আপনার কিছু হয়ে যায়! অন্তত আমাদের মধ্যে থেকে কিছু সৈন্য নিয়ে তো যেতে পারেন! খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ কি বলছিলেন? তিনি বলেছিলেন - তারা আমার কি ই বা করবে? তোমরা কি রাসুল সাঃ এর সেই হাদিস শুনোনি? রাসুল সাঃ বলেছেন যারা আল্লাহর স্মরন করে আর যারা করেনা তাদের উদাহরন হচ্ছে জীবিত আর মৃতের মত। হাজার হাজার মৃত সৈন্যের এক সেনাদল আমার কি ক্ষতি করতে পারে! আমি তো জীবিত, তারা তো মৃত! শত্রুর ব্যাপারে এই ছিলো খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ বুঝ - সুবহান আল্লাহ!
খাস ভাবে ভয় দূর করার জন্য আমরা কিছু বিষয় আমল করতে পারি ইনশা আল্লাহ
১। কুরআন এর মাধ্যমেঃ কুরআনের সেই সমস্ত আয়াত যেগুলো তে আল্লাহ মুমিনদের ভয় না পেতে, হতাশ না হতে, আল্লাহ উপরেই শুধু তাওয়াক্কুল করতে বলেছেন, যেসব আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করে আল্লাহর সাহায্য, নুসরা এর কথা বলে দিয়েছেন সেগুলো কে মুখস্ত করা, বার বার আলোচনা করা, সম্ভব হলে সেগুলোর তাফসির, শানে নুজুল এগুলো জেনে রাখা। এবং এই আয়াত গুলো কে বার বার তিলাওয়াত করতে থাকা। ভয়ের মুকাবেলায় এই আয়াত গুলো কে ব্যাবহার করা। যেমন একটা আয়াত -
وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِأَعْدَائِكُمْ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَلِيًّا وَكَفَىٰ بِاللَّهِ نَصِيرًا
আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের ভালো করেই জানেন, অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট, এবং সাহায্যকারী হিসেবেও আল্লাহই যথেষ্ট। (নিসা ৪৫)
যেমন আরেকটি আয়াত হচ্ছে -
إِنَّمَا ذَٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
এই লোকেরা হচ্ছ শয়তান তোমাদের কে তার আউলিয়াদের ব্যাপারে ভয় দেখায় - তোমরা তাদের কে ভয় করোনা, আমাকেই ভয় কর, যদি তোমরা প্রকৃতই মুমিন হয়ে থাকো। (আল ইমরান ১৭৫)
এমন আরো অনেক আয়াত আছে যেগুলো তে আল্লাহ সরাসরি মুমিনদের হতাশ হতে, ভয় পেতে না করেছেন। শুধু তাই নয় কাফেরদের চক্রান্তের ব্যাপারে আল্লাহ নিজে জিম্মাদারি নিয়েছেন এবং কাফের রা আল্লাহকে পরাস্ত করতে পারেনি, পারবে না, তারা আল্লাহর পরিকল্পনার বাইরে নয়, তারা পরাজিত হবেই, আল্লাহ তাদের ব্যাপারে উদাসিন নন। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ ۚ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ ۖ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
স্মরন কর সেই সময়ের কথা যখন কাফের রা তোমাকে বন্দি করার কিংবা হত্যা করার কিংবা দেশ থেকে বের করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিলো, তারাও চক্রান্ত করছিলো আর আল্লাহও পরিকল্পনা করেছিলেন - আল্লাহই হচ্ছে সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী। (আনফাল - ৩০)
আল্লাহ মুমিনদের জন্য যথেষ্ট এমন অনেক আয়াত আল্লাহ আমাদেরজন্য নাজিল করেছেন। এই আয়াত গুলো কে বাস্তবে নিয়ে আসা, যেমন শাইখ আওলাকি রহঃ বলতেন সাহাবারা কুরআনের সাথে বাচতেন। কুরআন কে নিয়ে বাচতেন। তাই আমাদের এই আয়াত গুলো কে নিয়ে বাচতে হবে অন্তত ভয়ের সময় এই আয়াত গুলো দিয়ে ভয় কে মুকাবেলা করতে হবে।
২। আসমা ওয়াস সিফাত - এর আলোচনার মাধ্যমেঃ আল্লাহর গুনবাচক নাম গুলো ভালো ভাবে বুঝা এবং নামের সিফাত এর পরিব্যাপ্তি, আল্লাহ নাম সমুহ এবং নামের সিফাত কিভাবে আমাদের জিন্দেগী এবং আসমান এবং জমিন সমুহতে পরিব্যাপ্ত তা জানা দরকার। আসমা ওয়াস সিফাত এর উপরে ঈমান এবং ইয়াকিন থাকলে এই সমস্ত ভয় মুকাবেলা ইনশা আল্লাহ সহজ হয়ে যাবে। এছাড়া আল্লাহর গুনবাচক নাম সমুহ এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে বলা হয়েছে। আল্লাহর নাম সমুহের মধ্যে এমন কিছু নাম আছে যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসমে আজম বলেছেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এগুলো এমন কিছু নাম যা দ্বারা চাইলে তাকে দেয়া হয়, তার দুয়া কবুল করা হয়। [হাদিস দ্রষ্টব্য]
৩। নিজেকে আল্লাহর বান্দা এবং আল্লাহর সৈন্য মনে করাঃ কারন আমাদের এই যুদ্ধে দুই টা দল। একটা হচ্ছে শয়তানের দল আরেক টা হচ্ছে আর রহমানের দল। এই দুই দলের সৈন্য রা এক না। আর রহমানের সৈন্য রা আল্লাহর সাহায্য নিয়ে যুদ্ধ করে, তাদের সাথে থাকেন আল্লাহ নিজে এবং আল্লাহর এমন সেনাবাহিনী দিয়ে তাদের সাহায্য করেন যাদের ব্যাপারে কেউ জানেনা।
৪। আল্লাহর ভয় নিজের মধ্যে উপস্থিত রাখাঃ কারন আল্লাহর ব্যাপারে ভয় এমন এক অদ্ভুত নিয়ামত যে শুধু মাত্র আল্লাহকেই সব ব্যাপারে ভয় পায় আল্লাহ তার থেকে অন্য সব ভয় দূর করে দেন, বরং অন্য সব কিছু তাকে ভয় পায়।
দ্বিতীয় হচ্ছে দুনিয়ার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়াঃ
দুনিয়ার ব্যাপারে বিতৃষ্ণা আসা, দুনিয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট বিরক্ত হওয়া। আমাদের প্রায় সবারই অন্তরে দুনিয়ার মুহাব্বাত থাকে কম কিংবা বেশি। দুনিয়ার মুহাব্বাত আমাদের কে দুনিয়ার সাথে পেরেকের মত আটকায়ে রাখতে চায় আর আখিরাতের পথের দিকে হাটতে ভয় দেখায়। দুনিয়া যার দিলে যতটুকু কাছে থাকে আখিরাত তার দিল থেকে তত দূরে থাকে। জিহাদ এর কাজ এমন এক কাজ এই কাজে দুনিয়ার সাথে মুহাব্বাত থাকা খুব বিপদের কারন। এই দুনিয়া, দুনিয়ার পেরেশানি, চিন্তা আমাদের অনেক চিন্তা ভাবনা কে প্রভাবিত করে এমন কি কাজের উপরেও প্রভাব ফেলে।
আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন অধিকাংশ মানুষ ই কিন্তু দুনিয়ার উপরে হতাশ, তারা ক্লান্ত! এই দুনিয়া তাদের কে পরিততৃপ্ত করতে পারেনি, যা পারার কথাও না। কিন্তু শুধু মাত্র এই দুনিয়াতে আরো কিছু দিন টিকে থাকার জন্য এত কস্টের পরেও মানুষ দুনিয়াকে ছাড়তে চায়না, নিজেকে মিথ্যা প্রলোভন দেখায়। আজ না হোক, ৫ বছর, ১০ বছর পরে আমি সুখী হবই, আর এই ফিতনাই তাকে কবর পর্যন্ত নিয়ে চলে যায়না। আল্লাহ যা সুরা তাকাসুরে ইঙ্গিত করেছেন। তাই বলছিলাম যেহেতু মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই দুনিয়ার জিন্দেগী নিয়ে পেরেশান, এখন শুধু দরকার এই বাধন টা আলগা করে দেয়া। মানুষ দুনিয়া কে ছাড়তে চায়না কারন দুনিয়া ছেড়ে দিয়ে সে কোন দিকে তাকাবে সেটা দেখতে পায়না। তাই আমাদের কে ভাইদের সামনে দুনিয়ার বাধন আলগা করে দেয়ার জন্য আখিরাতের জিন্দগির সাথে বেশি বেশি পরিচয় করাতে হবে। উঠতে বসতে যখনই সম্ভব।
আর এক্ষেত্রে রাসুল সাঃ এর শিক্ষা পদ্ধতি আমরা গ্রহন করতে পারি রাসুল সাঃ সাহাবাদের যখনই সুযোগ পেতেন বাস্তব কোন ঘটনার সাথে মিলিয়ে শিক্ষা দিতেন। যেমন সেই হাদিস - একজন মা তার হারানো ছেলে কে ফিরে পেয়ে আদর করছিলেন আর সে ঘটনা দেখিয়ে রাসুল সাঃ আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে সাহাবাদের শিক্ষা দিলেন। তিনি সাঃ এমন ভাবে যখনই কোন বাস্তব ঘটনা আসতো যেখানে শিক্ষা আছে তিনি সেটার মাধ্যমে সাহাবাদের শিক্ষা দিতেন। আমাদের উচিত হবে এমন বাস্তব ঘটনা বা বর্তমান দুনিয়ার জীবনের নোংরা, কঠিন বাস্তবতা গুলো কে সামনে নিয়ে এসে শিক্ষা দেয়া। এই যেমন ধরেন মানুষ আজ খাচায় বন্দী, বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট - কিন্তু দেখেন সবাই খাচার ভিতরে। এক খাচা থেকে মানুষ আরেক খাচার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, এই খাচা থেকে অফিসে যায় অফিস থেকে এই খাচায় ফিরে আসে। আল্লাহ কি এই জন্যই আমাদের সৃষ্টি করেছেন? এটা ই কি আল্লাহর প্রতিনিধিদের অবস্থা হবার কথা ছিল? এরকম আমাদের প্রতিদিনের জীবনে অসংখ্য উদাহরন আছে যা একজন বিবেকবান মানুষের জন্য চিন্তা করে দেখার জন্য যথেষ্ট। এভবে বার বার এরকম আলোচনা এবং একই সাথে জান্নাতের জিন্দেগীর বর্ণনা তার সামনে থাকবে তখন ইনশা আল্লাহ সে নিজেই একদিন আল্লাহর তাউফিকে দুনিয়ার জিন্দেগি ছেড়ে দিয়ে জান্নাতের জিন্দেগী বেছে নিবে।
দুনিয়ার মুহাব্বাত কে আলগা করার বেপারে কিছু বিষয় আমল করতে পারি ইনশাআল্লাহ
১। দুনিয়াকে ভালো ভাবে চিনা দুনিয়া কি এটা বুঝাঃ আমাদের সবার আগে বুঝা উচিত এই দুনিয়া কি? এর স্বরূপ কি? এটা খুব ভালো ভাবে বুঝা এবং তা আমাদের ইয়াকিনে নিয়ে আসা জরুরী। ইয়াকিন হচ্ছে ইমানের সেই অবস্থা যা আমাদের কাজ কে নিয়ন্ত্রন করে। দুনিয়া কে বুঝা আমাদের জন্য অনেক অনেক জরুরী। কারন এই দুনিয়াই হচ্ছে আমাদের পরীক্ষার জায়গা। এখন পরীক্ষার জায়গা কেই যদি ঠিক মত আমরা না জানি তাহলে সেটা অনেক বড় ভুল হয়ে যাবে। আসলে যদি আমরা বাস্তবতা দেখি তাহলে অনেক ভাই আছেন যারা আলহামদুলিল্লাহ পাক্কা দ্বীন বুঝেন এবং আমল ও করেন মাশাআল্লাহ। কিন্তু দুনিয়ার ফিতনা উনাদের কাছে পরিষ্কার না। দুনিয়া এমন একটা কিছু যাকে মুল্য দেয়ার কিছু নাই। যার কোন মুল্য নাই, যেটা ছলনা, প্রতারনা, ধোকা, কৌতুক, নস্ট পচা গলিত মৃত পশুর দেহের মত কিংবা এর চেয়েও খারাপ। দুনিয়া সম্পর্কে আল্লাহ অনেক আয়াত নাজিল করেছেন - وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ
কিন্তু এই দুনিয়া আমাদের সামনে এক ভিন্ন বাস্তবতা নিয়ে হাজির থাকে। প্রতিটি মানুষের জীবনে যদি ১০০ টি চিন্তা থাকে তবে তার ৮০ টির অধিক চিন্তা থাকে শুধু রিজিক নিয়ে! সুবহান আল্লাহ! হয়ত সবার না, কিন্তু আম ভাবে আমাদের হাল এমনই। আর এই কথা গুলো বলা অনেক সহজ কিন্তু আমল কঠিন, কারন দুনিয়ার এই বাস্তবতা আসলে আমাদের অস্থি মজ্জায় ঢুকে যায়, আমাদের চারপাশ আমাদের পরিবেশ আমাদের সমস্ত কিছু আমাদের কে শুধু দুনিয়াই শেখায়। তাই প্রথম কাজ - দুনিয়া কে চিনা।আল্লাহ দুনিয়ার যে রুপ আমাদের সামনে বর্ণনা করেছেন তার উপরে ইয়াকিন নিয়ে আসা।
২। আখিরাত কে চিনাঃ দুনিয়ার হাল যখন পরিষ্কার হয়ে যাবে তখন এর বিপরিতে আল্লাহর ওয়াদা আখিরাত কে ও জানতে হবে। কারন আল্লাহর দুনিয়াকে ঠেলে দিয়ে জান্নাতের ব্যাপারে আগ্রহি হতে বলেছেন। তাহলে আমাদের কে অবশ্যই জান্নাত কে জানতে হবে,এবং জাহান্নামকেও। এখন শুধু জানাই যথেষ্ট না। এটা এমন হতে হবে যে দুনিয়ার কোন হাই স্যালারির চাকরি আমাকে যেমন উৎসাহিত করে জান্নাতের বর্ণনা আমাকে যেন তার চেয়েও বেশি উৎসাহিত করে যদিও আসলে এখানে এই তুলনা টাই ঠিক না। জান্নাত এবং জাহান্নাম কে আমাদের সামনে রেখে বাচতে হবে। জান্নাত এর কথা চিন্তা করে উৎসাহিত হতে হবে আর জাহান্নামের কথা চিন্তা করে নিজেকে হারাম থেকে নিয়ন্ত্রন করে রাখতে হবে। এই দুই এর ইয়াকিন ছাড়া দুনিয়ার মায়া কাটানো অনেক কঠিন।
৩। মৃত্যু কে বেশি বেশি স্মরন করাঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন - বেশি বেশি মৃত্যুর স্মরন দুনিয়ার স্বাদ কে নষ্ট করে দেয় (আও কামা কলা আলাইহিস সালাম)
৪। দুনিয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনের সীমারেখা ঠিক করাঃ আমাদের চাহিদা অফুরান, যা কখনো শেষ হবার না। এই চাহিদাই মানুষ কে দুনিয়াতে ব্যাস্ত রাখে। তাই নিজের চাহিদার উপরে লাগাম পরানো। আমরা যদি আমাদের চাহিদা গুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে পারি ইনশা আল্লাহ কমপক্ষে অর্ধেক দুনিয়া আমাদের থেকে মরে যাবে। যেমন একটা জামার দাম হতে পারে ৫০০০, আবার হতে পারে ৩০০০ আবার হতে পারে ১৫০০ আবার হতে পারে শুধুই ৩০০। এখন আমাদের কে ঠিক করতে হবে আমার দুনিয়ার জন্য আমি কত টুকু বরাদ্দ করব। এই ভাবে আস্তে আস্তে প্রতিদিন দুনিয়া কে একটু একটু করে কাটা শিখতে হবে, তাহলে একদিন দুনিয়া মরে না গেলেও অন্তত নিয়ন্ত্রনে থাকবে ইনশা আল্লাহ। এটা একদিনে হবেনা, বরং মাসের পর মাস কিংবা বছরের পর বছর এমন কি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই ভাবে দুনিয়াকে কাটতে হবে ইনশা আল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের জন্য আমাদের কাজ কে সহজ করুন, আর আমাদের ভুল ভ্রান্তি ভরা কাজকে কবুল করুন। আমীন
(সংগ্রহীত)
বিসমিল্লাহ ওয়াসসালাতু আস সালাম আলা রাসুলিল্লাহ।
জিহাদের পথে খাস করে যুবক ভাইদের জন্য প্রধান ২ টা বাধা। এক ভয়, দুই দুনিয়ার প্রতি মুহাব্বাত, বা দুনিয়ার সাথে লেগে থাকা। এই ২ প্রধান বাধার কারনে অনেক ভাই জিহাদ এর স্বরূপ এবং ফারজিয়াত এবং ফাজায়েল বুঝার পরেও এই কাজের সাথে জুড়তে পারেনা।
এই ২ টা বাধার বেপারে আমার কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি ইনশা আল্লাহ
ভয়:
ভয় আসলে এক মারাত্মক ব্যাধি। ভয় কম বেশি সবার ই থাকে। সেটা খুব একটা সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে দিন শেষে যদি ভয় ই আমার উপরে প্রাধান্য বিস্তার করে। আমার কাজ এবং আমার সিদ্ধান্তের উপরে যদি ভয় জয়ী হয় তবে সমস্যা। এজন্য দাওয়াহ দেয়ার পাশাপাশি ভয় কে দূর করার জন্য খাস ভাবে কিছু কাজ করা। আমার কাছে মনে হয়েছে ভয় দূর করার জন্য আল্লাহর কালামের আয়াত গুলোর বার বার মুজাকারা এবং সেগুলোর ব্যাপারে তাফাক্কুর করা এবং বার বার আলোচনা করে সেগুলো কে দিলের মধ্যে বসিয়ে নেয়া - এই পদ্ধতি খুব উপকারি। একই সাথে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতালার আসমা ওয়াস সিফাত এর উপলব্ধি ও এই ক্ষেত্রে অনেক কাজে দেয় আলহামদুলিল্লাহ। শাইখ আহমেদ মুসা জিবরীল এর এই বেপারে একটা ছোট ক্লিপ আছে যেটা আমি এখানে শেয়ার করলাম ইনশা আল্লাহ - উপকারে আসবে
Fear the Creator, Not the Creation | Sheikh Ahmad Jibril
শুধুমাত্র এই ভয়ের কারনে অনেক ভাই কাজের ব্যাপারে পিছিয়ে যান। শুধু তাই ই নয় কাজে জুড়ার পরেও অনেক ভাই এই ভয়ের কারনে ইতমিনানের সাথে কাজ করতে পারেন না। কারন শয়তান বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের কে ভয় দেখায় এবং আমাদের অন্তর কে অশান্ত করে রাখে। এটার কারনে অন্তর আস্তে আস্তে আল্লাহর দিক থেকে সরে যায়। তাই যে সব ভাই কাজের সাথে আছেন তাদের জন্যও নিয়মিত তাজকিয়া এবং তাফাক্কুর করে নিজের অন্তরের সাথে বুঝা পড়া করে নিতে হবে যে আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারো ভয় অবশিষ্ট আছে কিনা? থাকলে সেই ভয়ের সাথে আল্লাহর কালাম দিয়ে মুকাবেলা করা যতক্ষণ পর্যন্ত না দিল শুধু মাত্র আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে, অন্তত তাগুতের ব্যাপারে কোন ভয় না থাকে। এটা এমন একটা বিষয় যে - একবার করলেই হয়ে যাবে এমন না, বরং এটাকে মাঝে মাঝে ঝালাই করে নিতে হবে আর চেক দিয়ে দেখতে হবে আমার অন্তর কি আল্লাহ ব্যাতিত আর কারো ভয়ে ভয় পাচ্ছে কিনা? এটা আসলে নিজেদের কেই করতে হবে কোন মাসুল ভাই বলে বসে এই চেক দেয়া টা সম্ভব না। আল্লাহ সহজ করুন আমীন।
আল্লাহ আমাদের আদেশ দিয়েছেন শয়তান এবং তার আউলিয়াদের ভয় না করতে এবং শুধু আল্লাহকেই ভয় করতে। এটা আমাদের উপরে হুকুম। আসলে বিষয় টা তো এমন যে ভয় তো আসলে তাদের পাওয়া উচিত! যারা আল্লাহর সাথেই যুদ্ধ ঘোষণা দিয়েছে যারা আল্লাহর সাথেই যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে তারাই যদি ভয় না পেয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরাতে পারে তবে আল্লাহর বান্দা হয়ে আমাদের ভয় পাওয়া টা খুবই লজ্জাজনক!
আর একটা কথা এমন যে - খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ যখন রোমানদের সাথে কঠিন যুদ্ধে লিপ্ত এমন সময়ে তিনি রাতে টহলে বের হতেন। মুসলিম আর্মি ঘুমিয়ে গেলে তিনি একাই ঘোড়া নিয়ে বের হয়ে যেতেন শত্রু দলের খবর জানার জন্য। উনার এমন কাজ দেখে মুসলিম রা বলত আপনি এ কি করছেন! আপনি হচ্ছেন সেনাপতি, আল্লাহ না করুন যদি আপনার কিছু হয়ে যায়! অন্তত আমাদের মধ্যে থেকে কিছু সৈন্য নিয়ে তো যেতে পারেন! খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ কি বলছিলেন? তিনি বলেছিলেন - তারা আমার কি ই বা করবে? তোমরা কি রাসুল সাঃ এর সেই হাদিস শুনোনি? রাসুল সাঃ বলেছেন যারা আল্লাহর স্মরন করে আর যারা করেনা তাদের উদাহরন হচ্ছে জীবিত আর মৃতের মত। হাজার হাজার মৃত সৈন্যের এক সেনাদল আমার কি ক্ষতি করতে পারে! আমি তো জীবিত, তারা তো মৃত! শত্রুর ব্যাপারে এই ছিলো খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ বুঝ - সুবহান আল্লাহ!
খাস ভাবে ভয় দূর করার জন্য আমরা কিছু বিষয় আমল করতে পারি ইনশা আল্লাহ
১। কুরআন এর মাধ্যমেঃ কুরআনের সেই সমস্ত আয়াত যেগুলো তে আল্লাহ মুমিনদের ভয় না পেতে, হতাশ না হতে, আল্লাহ উপরেই শুধু তাওয়াক্কুল করতে বলেছেন, যেসব আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করে আল্লাহর সাহায্য, নুসরা এর কথা বলে দিয়েছেন সেগুলো কে মুখস্ত করা, বার বার আলোচনা করা, সম্ভব হলে সেগুলোর তাফসির, শানে নুজুল এগুলো জেনে রাখা। এবং এই আয়াত গুলো কে বার বার তিলাওয়াত করতে থাকা। ভয়ের মুকাবেলায় এই আয়াত গুলো কে ব্যাবহার করা। যেমন একটা আয়াত -
وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِأَعْدَائِكُمْ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَلِيًّا وَكَفَىٰ بِاللَّهِ نَصِيرًا
আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের ভালো করেই জানেন, অভিভাবক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট, এবং সাহায্যকারী হিসেবেও আল্লাহই যথেষ্ট। (নিসা ৪৫)
যেমন আরেকটি আয়াত হচ্ছে -
إِنَّمَا ذَٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
এই লোকেরা হচ্ছ শয়তান তোমাদের কে তার আউলিয়াদের ব্যাপারে ভয় দেখায় - তোমরা তাদের কে ভয় করোনা, আমাকেই ভয় কর, যদি তোমরা প্রকৃতই মুমিন হয়ে থাকো। (আল ইমরান ১৭৫)
এমন আরো অনেক আয়াত আছে যেগুলো তে আল্লাহ সরাসরি মুমিনদের হতাশ হতে, ভয় পেতে না করেছেন। শুধু তাই নয় কাফেরদের চক্রান্তের ব্যাপারে আল্লাহ নিজে জিম্মাদারি নিয়েছেন এবং কাফের রা আল্লাহকে পরাস্ত করতে পারেনি, পারবে না, তারা আল্লাহর পরিকল্পনার বাইরে নয়, তারা পরাজিত হবেই, আল্লাহ তাদের ব্যাপারে উদাসিন নন। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ ۚ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ ۖ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
স্মরন কর সেই সময়ের কথা যখন কাফের রা তোমাকে বন্দি করার কিংবা হত্যা করার কিংবা দেশ থেকে বের করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিলো, তারাও চক্রান্ত করছিলো আর আল্লাহও পরিকল্পনা করেছিলেন - আল্লাহই হচ্ছে সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী। (আনফাল - ৩০)
আল্লাহ মুমিনদের জন্য যথেষ্ট এমন অনেক আয়াত আল্লাহ আমাদেরজন্য নাজিল করেছেন। এই আয়াত গুলো কে বাস্তবে নিয়ে আসা, যেমন শাইখ আওলাকি রহঃ বলতেন সাহাবারা কুরআনের সাথে বাচতেন। কুরআন কে নিয়ে বাচতেন। তাই আমাদের এই আয়াত গুলো কে নিয়ে বাচতে হবে অন্তত ভয়ের সময় এই আয়াত গুলো দিয়ে ভয় কে মুকাবেলা করতে হবে।
২। আসমা ওয়াস সিফাত - এর আলোচনার মাধ্যমেঃ আল্লাহর গুনবাচক নাম গুলো ভালো ভাবে বুঝা এবং নামের সিফাত এর পরিব্যাপ্তি, আল্লাহ নাম সমুহ এবং নামের সিফাত কিভাবে আমাদের জিন্দেগী এবং আসমান এবং জমিন সমুহতে পরিব্যাপ্ত তা জানা দরকার। আসমা ওয়াস সিফাত এর উপরে ঈমান এবং ইয়াকিন থাকলে এই সমস্ত ভয় মুকাবেলা ইনশা আল্লাহ সহজ হয়ে যাবে। এছাড়া আল্লাহর গুনবাচক নাম সমুহ এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে বলা হয়েছে। আল্লাহর নাম সমুহের মধ্যে এমন কিছু নাম আছে যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসমে আজম বলেছেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এগুলো এমন কিছু নাম যা দ্বারা চাইলে তাকে দেয়া হয়, তার দুয়া কবুল করা হয়। [হাদিস দ্রষ্টব্য]
৩। নিজেকে আল্লাহর বান্দা এবং আল্লাহর সৈন্য মনে করাঃ কারন আমাদের এই যুদ্ধে দুই টা দল। একটা হচ্ছে শয়তানের দল আরেক টা হচ্ছে আর রহমানের দল। এই দুই দলের সৈন্য রা এক না। আর রহমানের সৈন্য রা আল্লাহর সাহায্য নিয়ে যুদ্ধ করে, তাদের সাথে থাকেন আল্লাহ নিজে এবং আল্লাহর এমন সেনাবাহিনী দিয়ে তাদের সাহায্য করেন যাদের ব্যাপারে কেউ জানেনা।
৪। আল্লাহর ভয় নিজের মধ্যে উপস্থিত রাখাঃ কারন আল্লাহর ব্যাপারে ভয় এমন এক অদ্ভুত নিয়ামত যে শুধু মাত্র আল্লাহকেই সব ব্যাপারে ভয় পায় আল্লাহ তার থেকে অন্য সব ভয় দূর করে দেন, বরং অন্য সব কিছু তাকে ভয় পায়।
দ্বিতীয় হচ্ছে দুনিয়ার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়াঃ
দুনিয়ার ব্যাপারে বিতৃষ্ণা আসা, দুনিয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট বিরক্ত হওয়া। আমাদের প্রায় সবারই অন্তরে দুনিয়ার মুহাব্বাত থাকে কম কিংবা বেশি। দুনিয়ার মুহাব্বাত আমাদের কে দুনিয়ার সাথে পেরেকের মত আটকায়ে রাখতে চায় আর আখিরাতের পথের দিকে হাটতে ভয় দেখায়। দুনিয়া যার দিলে যতটুকু কাছে থাকে আখিরাত তার দিল থেকে তত দূরে থাকে। জিহাদ এর কাজ এমন এক কাজ এই কাজে দুনিয়ার সাথে মুহাব্বাত থাকা খুব বিপদের কারন। এই দুনিয়া, দুনিয়ার পেরেশানি, চিন্তা আমাদের অনেক চিন্তা ভাবনা কে প্রভাবিত করে এমন কি কাজের উপরেও প্রভাব ফেলে।
আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন অধিকাংশ মানুষ ই কিন্তু দুনিয়ার উপরে হতাশ, তারা ক্লান্ত! এই দুনিয়া তাদের কে পরিততৃপ্ত করতে পারেনি, যা পারার কথাও না। কিন্তু শুধু মাত্র এই দুনিয়াতে আরো কিছু দিন টিকে থাকার জন্য এত কস্টের পরেও মানুষ দুনিয়াকে ছাড়তে চায়না, নিজেকে মিথ্যা প্রলোভন দেখায়। আজ না হোক, ৫ বছর, ১০ বছর পরে আমি সুখী হবই, আর এই ফিতনাই তাকে কবর পর্যন্ত নিয়ে চলে যায়না। আল্লাহ যা সুরা তাকাসুরে ইঙ্গিত করেছেন। তাই বলছিলাম যেহেতু মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই দুনিয়ার জিন্দেগী নিয়ে পেরেশান, এখন শুধু দরকার এই বাধন টা আলগা করে দেয়া। মানুষ দুনিয়া কে ছাড়তে চায়না কারন দুনিয়া ছেড়ে দিয়ে সে কোন দিকে তাকাবে সেটা দেখতে পায়না। তাই আমাদের কে ভাইদের সামনে দুনিয়ার বাধন আলগা করে দেয়ার জন্য আখিরাতের জিন্দগির সাথে বেশি বেশি পরিচয় করাতে হবে। উঠতে বসতে যখনই সম্ভব।
আর এক্ষেত্রে রাসুল সাঃ এর শিক্ষা পদ্ধতি আমরা গ্রহন করতে পারি রাসুল সাঃ সাহাবাদের যখনই সুযোগ পেতেন বাস্তব কোন ঘটনার সাথে মিলিয়ে শিক্ষা দিতেন। যেমন সেই হাদিস - একজন মা তার হারানো ছেলে কে ফিরে পেয়ে আদর করছিলেন আর সে ঘটনা দেখিয়ে রাসুল সাঃ আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে সাহাবাদের শিক্ষা দিলেন। তিনি সাঃ এমন ভাবে যখনই কোন বাস্তব ঘটনা আসতো যেখানে শিক্ষা আছে তিনি সেটার মাধ্যমে সাহাবাদের শিক্ষা দিতেন। আমাদের উচিত হবে এমন বাস্তব ঘটনা বা বর্তমান দুনিয়ার জীবনের নোংরা, কঠিন বাস্তবতা গুলো কে সামনে নিয়ে এসে শিক্ষা দেয়া। এই যেমন ধরেন মানুষ আজ খাচায় বন্দী, বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট - কিন্তু দেখেন সবাই খাচার ভিতরে। এক খাচা থেকে মানুষ আরেক খাচার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, এই খাচা থেকে অফিসে যায় অফিস থেকে এই খাচায় ফিরে আসে। আল্লাহ কি এই জন্যই আমাদের সৃষ্টি করেছেন? এটা ই কি আল্লাহর প্রতিনিধিদের অবস্থা হবার কথা ছিল? এরকম আমাদের প্রতিদিনের জীবনে অসংখ্য উদাহরন আছে যা একজন বিবেকবান মানুষের জন্য চিন্তা করে দেখার জন্য যথেষ্ট। এভবে বার বার এরকম আলোচনা এবং একই সাথে জান্নাতের জিন্দেগীর বর্ণনা তার সামনে থাকবে তখন ইনশা আল্লাহ সে নিজেই একদিন আল্লাহর তাউফিকে দুনিয়ার জিন্দেগি ছেড়ে দিয়ে জান্নাতের জিন্দেগী বেছে নিবে।
দুনিয়ার মুহাব্বাত কে আলগা করার বেপারে কিছু বিষয় আমল করতে পারি ইনশাআল্লাহ
১। দুনিয়াকে ভালো ভাবে চিনা দুনিয়া কি এটা বুঝাঃ আমাদের সবার আগে বুঝা উচিত এই দুনিয়া কি? এর স্বরূপ কি? এটা খুব ভালো ভাবে বুঝা এবং তা আমাদের ইয়াকিনে নিয়ে আসা জরুরী। ইয়াকিন হচ্ছে ইমানের সেই অবস্থা যা আমাদের কাজ কে নিয়ন্ত্রন করে। দুনিয়া কে বুঝা আমাদের জন্য অনেক অনেক জরুরী। কারন এই দুনিয়াই হচ্ছে আমাদের পরীক্ষার জায়গা। এখন পরীক্ষার জায়গা কেই যদি ঠিক মত আমরা না জানি তাহলে সেটা অনেক বড় ভুল হয়ে যাবে। আসলে যদি আমরা বাস্তবতা দেখি তাহলে অনেক ভাই আছেন যারা আলহামদুলিল্লাহ পাক্কা দ্বীন বুঝেন এবং আমল ও করেন মাশাআল্লাহ। কিন্তু দুনিয়ার ফিতনা উনাদের কাছে পরিষ্কার না। দুনিয়া এমন একটা কিছু যাকে মুল্য দেয়ার কিছু নাই। যার কোন মুল্য নাই, যেটা ছলনা, প্রতারনা, ধোকা, কৌতুক, নস্ট পচা গলিত মৃত পশুর দেহের মত কিংবা এর চেয়েও খারাপ। দুনিয়া সম্পর্কে আল্লাহ অনেক আয়াত নাজিল করেছেন - وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ
কিন্তু এই দুনিয়া আমাদের সামনে এক ভিন্ন বাস্তবতা নিয়ে হাজির থাকে। প্রতিটি মানুষের জীবনে যদি ১০০ টি চিন্তা থাকে তবে তার ৮০ টির অধিক চিন্তা থাকে শুধু রিজিক নিয়ে! সুবহান আল্লাহ! হয়ত সবার না, কিন্তু আম ভাবে আমাদের হাল এমনই। আর এই কথা গুলো বলা অনেক সহজ কিন্তু আমল কঠিন, কারন দুনিয়ার এই বাস্তবতা আসলে আমাদের অস্থি মজ্জায় ঢুকে যায়, আমাদের চারপাশ আমাদের পরিবেশ আমাদের সমস্ত কিছু আমাদের কে শুধু দুনিয়াই শেখায়। তাই প্রথম কাজ - দুনিয়া কে চিনা।আল্লাহ দুনিয়ার যে রুপ আমাদের সামনে বর্ণনা করেছেন তার উপরে ইয়াকিন নিয়ে আসা।
২। আখিরাত কে চিনাঃ দুনিয়ার হাল যখন পরিষ্কার হয়ে যাবে তখন এর বিপরিতে আল্লাহর ওয়াদা আখিরাত কে ও জানতে হবে। কারন আল্লাহর দুনিয়াকে ঠেলে দিয়ে জান্নাতের ব্যাপারে আগ্রহি হতে বলেছেন। তাহলে আমাদের কে অবশ্যই জান্নাত কে জানতে হবে,এবং জাহান্নামকেও। এখন শুধু জানাই যথেষ্ট না। এটা এমন হতে হবে যে দুনিয়ার কোন হাই স্যালারির চাকরি আমাকে যেমন উৎসাহিত করে জান্নাতের বর্ণনা আমাকে যেন তার চেয়েও বেশি উৎসাহিত করে যদিও আসলে এখানে এই তুলনা টাই ঠিক না। জান্নাত এবং জাহান্নাম কে আমাদের সামনে রেখে বাচতে হবে। জান্নাত এর কথা চিন্তা করে উৎসাহিত হতে হবে আর জাহান্নামের কথা চিন্তা করে নিজেকে হারাম থেকে নিয়ন্ত্রন করে রাখতে হবে। এই দুই এর ইয়াকিন ছাড়া দুনিয়ার মায়া কাটানো অনেক কঠিন।
৩। মৃত্যু কে বেশি বেশি স্মরন করাঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন - বেশি বেশি মৃত্যুর স্মরন দুনিয়ার স্বাদ কে নষ্ট করে দেয় (আও কামা কলা আলাইহিস সালাম)
৪। দুনিয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনের সীমারেখা ঠিক করাঃ আমাদের চাহিদা অফুরান, যা কখনো শেষ হবার না। এই চাহিদাই মানুষ কে দুনিয়াতে ব্যাস্ত রাখে। তাই নিজের চাহিদার উপরে লাগাম পরানো। আমরা যদি আমাদের চাহিদা গুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে পারি ইনশা আল্লাহ কমপক্ষে অর্ধেক দুনিয়া আমাদের থেকে মরে যাবে। যেমন একটা জামার দাম হতে পারে ৫০০০, আবার হতে পারে ৩০০০ আবার হতে পারে ১৫০০ আবার হতে পারে শুধুই ৩০০। এখন আমাদের কে ঠিক করতে হবে আমার দুনিয়ার জন্য আমি কত টুকু বরাদ্দ করব। এই ভাবে আস্তে আস্তে প্রতিদিন দুনিয়া কে একটু একটু করে কাটা শিখতে হবে, তাহলে একদিন দুনিয়া মরে না গেলেও অন্তত নিয়ন্ত্রনে থাকবে ইনশা আল্লাহ। এটা একদিনে হবেনা, বরং মাসের পর মাস কিংবা বছরের পর বছর এমন কি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই ভাবে দুনিয়াকে কাটতে হবে ইনশা আল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের জন্য আমাদের কাজ কে সহজ করুন, আর আমাদের ভুল ভ্রান্তি ভরা কাজকে কবুল করুন। আমীন
(সংগ্রহীত)
Comment