জিহাদ ও মুজাহিদদের ব্যাপারে সংশয়ে পতিত হওয়া
অনেক আছেন যারা, জিহাদের ব্যাপারে সবকিছু স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্নজনের কথায় বা তথ্যের ভিত্তিতে সংশয়ে পরে যান। হয়ত তাঁর উস্তাদ বা বড় কেহ তাঁকে কোন যুক্তি দিয়েছে তো সে তাই বিশ্বাস করে জিহাদের ব্যাপারে সংশয়ে পতিত হয়ে গেছেন। অথবা ফুরুয়ী কোন অংশ বা মাসয়ালা না বুঝার কারণে জিহাদী কাজ ও মানহাজ থেকে দূরে সরে গেছে বা বিরত রয়েছে।
যেমন কেহ বলল, জিহাদের ব্যাপারে সব স্পষ্ট কিন্তু কিছু মানহাজী ব্যাপারে অস্পষ্টতা আছে। তাই জিহাদী তানজিমে সংযুক্ত হচ্ছি না বা জিহাদে কাজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরে কোন ফুরুয়ী বিষয়ে সন্দেহে পরে এই কাজই ছেড়ে দিয়েছেন।
আবার কিছু মানুষ আছেন, যারা মুজাহিদদের ব্যাপারে সংশয়গ্রস্থ। তারা জানে জিহাদ ফরজ কিন্তু কিছু সন্দেহের ফলে মুজাহিদদের সাথে সংযুক্ত হচ্ছে না। অথবা সংযুক্তির পরেও কোন তাদের কাজ নিজের যুক্তির অনুযায়ী না হওয়াতে বা তাদের ব্যাপারে কারো কোন অভিযোগ শুনেই তাদের সমালোচনা করছেন, বিরোধিতা করছেন। অথচ জানেন যে তারা জিহাদের পথে আছেন।
আবার অনেকে তানজীমের ব্যাপারে কোন সন্দেহ বা অভিযোগ তুলার সাথে সাথেই প্রভাবিত হয়ে যাচ্ছেন, প্রতিক্রিয়া সরূপ তাদের উপরে বিশ্বাসে ঘাটতি হয়ে যাচ্ছে। তাদের সামষ্টিক মাশওয়ারার ভিত্তিতে গৃহীত কোন সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারছেন না। অথবা তানজীমের কোন ভাই বা মাসুলকে নিফাকী বা খিয়ানতের অভিযোগ করছেন, শরয়ী মাহকামার মধ্যে প্রমাণিত হওয়া ছাড়াই। *এই অংশটা গুরুত্বপূর্ণ*
এই সবই হচ্ছে আল্লাহ্ তায়ালার ব্যাপারে ঈমানে ঘাটতির আলামত। এটার ফলাফল অনেক ভয়াবহ, যা তাঁকে একটা সময় দ্বীন থেকে সরিয়ে দেয়। এর কারণ বুঝার জন্যে, সামনের বিষয়গুলো একটু ফিকির করুন ইনশা আল্লাহ
আল্লাহ্ তায়ালা কুরআনে তায়েফায়ে মানসুরার সিফাত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ [٥:٥٤]
হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরেই আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী। এখানে আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা বলছেন, যখন সমাজের মধ্যে ইরতিদাদ ছড়িয়ে যাবে তখন একটা দলকে আল্লাহ্ তায়ালা স্বয়ং তৈরি করে নিয়ে আসবেন। নিজে যাচাই-বাছাই করে নিয়ে আসবেন। সেই দলকে চিনার আলামত হচ্ছে ৬ টা। আর এই আলামতগুলো পুর্ণ বাস্তবায়ন হচ্ছে মুজাহিদগণ। যার ফলে মুজাহিদগন হচ্ছেন তায়েফায়ে মানসুরার সঠিক উদ্দেশ্য।
এখন যখন মুজাহিদদেরকে আল্লাহ্ তায়ালার বাছাইকৃত তায়েফা হিসেবে গ্রহন করে নিয়েছি, তখন কর্তব্য হচ্ছে, তাদের সমস্ত আদেশ-নিষেধ, চিন্তা, কর্মপদ্ধতি, মানহাজ বা যে কোন সিদ্ধান্তকে পূর্ণরূপে গ্রহন ও বিশ্বাস করে নেয়া এবং অন্তর থেকে তা মেনে নেয়া। যতক্ষণ শরিয়াতের বিপরীত স্পষ্ট ও প্রমাণিত কোন ভুল না করবে, কোন ধরনের সংশয়, সন্দেহ, অসন্তুষ্টি বা বিরোধিতা করা যাবে না। যে যত কথা আর প্রশ্ন উত্তাপিত করুক, প্রভাবিত হওয়া যাবে না। তাদের উপর বিশ্বাসে কোন রূপ ঘাটতি বা কমতি আসা যাবে না।
কেহ যদি তাদের প্রতি কোন রূপ সন্দেহে পতিত হয়ে যায়, তাহলে এটা প্রমাণ করবে সে আল্লাহ্ তায়ালার বাছায়ের উপর সন্দেহ করছেন। সে ভাবছে, আল্লাহ্ তায়ালা এমন দলকে কাফেরদের বিপরীতে সাহায্য করছেন যারা সাহায্য পাওয়ার উপযুক্ত না। কারণ তারা তো আমার দৃষ্টিতে ভুল কাজ করছে।
রাসুলুল্লাহর হাদীস থেকেও এটা স্পষ্ট হয়, আমিরকে মান্য করার ব্যাপারে হাদীসের মধ্যে বলা হয়েছে,
إسمعو و أطيعوا و ان أمر عليكم عبد حبشي يقودكم بكتاب الله
তোমরা শ্রবন ও আনুগত্য কর যদিও তোমাদের উপর কোন হাবসী গোলামকে আমীর বানানো হোক, যতক্ষণ সে আল্লাহ্ তায়ালার কিতাব অনুযায়ী পরিচালনা করবে। এখানে এটা বলা হয়নি, যতক্ষণ তোমার যাচাই ও মনমত নীতিমালা বা ফতোয়া দিয়ে পরিচালনা করবেন বরং বলেছেন যদি কিতাবুল্লাহর অনুযায়ী হয় তাহলেই যথেষ্ট। চাই সেটা আমার ফতোয়া, যাচাই বা মনের বিরুদ্ধে যাক বা মুয়াফেক হোক।
কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের মধ্যে তায়েফায়ে মানসুরার সিফাত পাওয়া যাচ্ছে ততক্ষণ স্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া তাদের কোন কিছুর উপর সন্দেহ-সংশয় বা প্রভাবিত হওয়া জায়েজ নয়। হ্যাঁ, আপনি এটা করতে পারেন যে শত-শত কিতাব ঘেটে নিশ্চিত হয়ে নিন যে তারা আসলেই তায়েফায়ে মানসুরার সিফতের অধীকারী কিনা? এরপর যখন নিশ্চিত হলেন তখন আর সন্দেহ করা বা বিরোধিতা করার অধিকার নেই।
ঠিক তেমনিভাবে, কোন মুজাহিদ ব্যক্তিগতভাবে অনেক গোনাহ করতে পারে, কিন্তু যতক্ষণ জিহাদের পথে আছে, নিশ্চিত হওয়া ছাড়া তাঁকে মুনাফিক ভাবা, খেয়ানতকারী বা গোমরাহিতে লিপ্ত ভাবার কোন অধিকার নেই। শরয়ী মাহকামায় প্রমাণিত হওয়া ছাড়া তাঁকে তাঁর প্রতি সন্দেহের অর্থ হবে, আল্লাহ্ তায়ালার সাহায্যপ্রাপ্ত কাউকে সাহায্যের উপযুক্ত নয় ভাবা হচ্ছে। যদি কারো ব্যাপারে কোন অভিযোগ থাকে, তাহলে সঠিক মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিন, আর যদি সমস্যা থেকেই থাকে তাঁকে শুধরানোর সুযোগ দিন। কিন্তু তা না করে এটা ছড়াতে থাকা বা ক্ষতি করার চেষ্টা করা ভয়াবহ অপরাধ।
আবার অনেকে জিহাদের কোন মাসয়ালার ব্যাপারে সংশয়গ্রস্থ হয়ে পরে। যেমন কেহ জিহাদ করতে হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহে পরে অথচ সে এক সময় নিশ্চিত ভাবেই জানত জিহাদের বিধান ফরজ। এটা ঈমানের পরিপন্থী।
বিষয়টা স্পষ্টের জন্যে একটা উদাহারণ, যখন আমরা বিশ্বাস করলাম আল্লাহ্ তায়ালা এক ও একক, তখন পৃথিবীর কোন নাস্তিকের যুক্তি যতই শক্তিশালী হোক, ঈমানের ব্যাপারে সন্দেহ তৈরি করতে পারবে? কখনোই না। ঠিক তেমন আল্লাহ তায়ালাকে বিশ্বাসের সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার সমস্ত হুকুমকেও এমনভাবে বিশ্বাস করতে হবে, যাতে কোন সংশয়-সন্দেহে পতিত না হয়। শরিয়তের সমস্ত দলীল খুঁজে নিশ্চিত হয়ে নিন, জিহাদ ফরজে আইন। কিন্তু একবার যখন বিশ্বাস করেছেন তো যত দলীল আর যুক্তিই দেয়া হোক, জিহাদের বিধানের উপর ঈমান টলানো যাবে না।
যদি এমন হয় যে অমুক উস্তাদ এই বলেছেন, তমুক শাইখ সেই বলেছেন তো আপনার বিশ্বাস টলমল হয়ে যাচ্ছে, এর অর্থ আল্লাহ তায়ালার হুকুমের উপরেই আপনার ঈমান পূর্ণ হয়নি, আবার ঈমানকে শুধরিয়ে নিতে হবে। আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করুন।
পূর্বের সমস্ত উপরাধের শাস্তি হচ্ছে সম্মানিত এক মুজাহিদ শাইখের ভাষ্যমতে, যখন আপনি একটা সন্দেহ বা সংশয়ে পতিত হবেন, অন্তরে একটা কাল দাগ পরবে, আরেকটা করবেন তো আরেকটা পরে। এই ভাবে পূরা ক্বলব কাল হয়ে যাবে। ফলে আর জিহাদ ও মুজাহিদদের সাথে থাকা সম্ভব হবে না। আল্লাহ্ তায়ালাই এই কাজ থেকে সরিয়ে দিবেন।
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
হে আল্লাহ্, আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দিন, বাড়াবাড়িগুলোকেও ক্ষমা করে দিন।
হে আল্লাহ্, আপনি ক্ষমা না করলে কেহ ক্ষমা করবে না, করতে পারবেও না।
হে আল্লাহ্, আমাদের ঈমানের ঘাটতির কারণে দ্বীনের পথ থেকে সরিয়ে দিয়েন না, ধ্বংস করে ফেলেন না।
হে আল্লাহ্, আমাদের দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথে সর্বোচ্চ খেদমত ও মেহনত করার তাওফীক দান করুন। শহীদ হয়ে জান্নাতে যাওয়ার জন্যে কবুল করুন। আমীন।
Comment