Announcement

Collapse
No announcement yet.

আকাবিরদের সবক!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আকাবিরদের সবক!

    ভারতবর্ষে যখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে আকাবির উলামায়ে দেওবন্দের তত্ত্বাবধানে লড়াই শুরু হয়েছিল, তখনকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা অতীব প্রয়োজন।

    সে সময় শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলবি রহ. ‘দারুল হারব’-এর ফাতওয়া জারি করেছিলেন। এই ফাতওয়ার ওপর এই অঞ্চলের সবার ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আমার জানামতে এমন কোনো প্রমাণ নেই। হ্যাঁ, অনেকেই হয়তো মেনে নিয়েছিল। আবার অনেকে হয়তো ভিন্নমতও পোষণ করেছিল। থানবি রহ. তার যুগে ভারতবর্ষকে দারুল আমান ফাতওয়া দিয়েছিলেন এবং সেখানে লড়াইকে নিষিদ্ধ বলে ফাতওয়া জারি করেছিলেন। যদিও তখনো ভারত ছিল ব্রিটিশদের অধীনে, সেখানে ইসলামি শরিয়াহ প্রতিষ্ঠিত ছিল না, ছিল না রাষ্ট্রে মুসলমানদের বিজয় ও প্রাধান্য, ছিল না ইসলামের সব বিধান মান্য করা ও পালন করার অবাধ সুযোগ।

    লড়াইয়ের সূচনাকালে থানাভবনকে দারুল ইসলাম হিসেবে গণ্য করে আমিরুল মুমিনিন হিসেবে নির্ধারণ করা হয় সায়্যিদুত তায়িফাহ হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মাক্কি রহ.-কে, প্রধান সেনাপতি বানানো হয় কাসিমুল উলুম ওয়াল খায়রাত আল্লামা কাসিম নানুতবি রহ.-কে এবং প্রধান বিচারপতি বানানো হয় ফাকিহুন নাফস রশীদ আহমদ গাঙ্গুহি রহ.-কে।


    এ থেকে বোঝা যায় :

    (ক) সে যুদ্ধ ছিল প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং প্রাথমিকভাবে তার লক্ষ্য ছিল শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা।

    (খ) প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য আমির প্রয়োজন। কারণ, যুদ্ধ একক কাজ নয়; দলবদ্ধ কাজ। আর দলবদ্ধ কাজে আমির না থাকলে শৃঙ্খলা ব্যাহত হয়। যদি দারুল ইসলামের আমির সরাসরি নিজে তত্ত্বাবধান করেন তাহলে তো সবচে ভালো। আর যদি যেকোনো কারণে তা সম্ভব না হয় তাহলে নিজেদের পক্ষ থেকে কাউকে আমির হিসেবে নির্ধারণ করে হলেও লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে সকলের মধ্যে একতা প্রতিষ্ঠা করা গেলে ভালো। একান্ত তা যদি না-ও হয়, তবুও বিক্ষিপ্তভাবে হলেও লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আর মুতাআখখিরিন ফকিহদের মতানুসারে বর্তমান বিশ্বকে একই আমিরের অধীনে আনা সম্ভব না হলে একাধিক আমির থাকতে পারে এবং প্রত্যেক আমিরের অধীন আলাদা শরিয়াহভিত্তিক দাওলা হতে পারে।

    (গ) সমগ্র জমিন আল্লাহর। কেউ এটাকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বিভক্ত করতে চাইলেও তা বিভক্ত হয় না, আল্লাহর আওতা থেকে বেরিয়ে যায় না। জমিনের যেকোনো অংশের ওপর তামাক্কুন প্রতিষ্ঠা করে সে অংশে ইসলামি বিধিবিধান বাস্তবায়ন করলেই তা দারুল ইসলাম হয়ে যায়। এর জন্য বিশাল চৌহদ্দি ও অনেক বড় সীমানার অপরিহার্যতা নেই। অন্যথায় থানাভবন এলাকা আর কতটুকুই বা বড়! তৎকালীন মদিনাও বা কত বড় ছিল! যে যেখান থেকে লড়াই সূচনা করবে, তার জন্য উচিত প্রথমে সেই অঞ্চলে শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা করা; যাতে করে দারুল ইসলামের একটা রোলমডেল সবার সামনে থাকে এবং আল্লাহর নুসরতও শামিলে হাল হয়।

    (ঘ) প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়ে থাকে সাধ্য ও সামর্থ্য অনুসারে। আমাদের আকাবিররা যে সময় লড়াই করেছিলেন, সে সময় তাদের হাকিকি কুদরত কতটুকু ছিল? সংখ্যায় বা শক্তিতে তারা কি আদৌ ইংরেজ ও তাদের অনুগামীদের সমমানের বা কাছাকাছি ছিলেন? এতদ্*সত্ত্বেও লড়াই কীভাবে হলো? আর যারা এ অঞ্চলে লড়াই করেছিল, তারা সবাইও কি আদৌ এক আমিরের অধীনে বাইয়াতবদ্ধ হতে পেরেছিল? এমন কোনো অপরিহার্যতার ফাতওয়াও কি আকাবিরদের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছিল? তাহলে অর্থ দাঁড়াচ্ছে, প্রতিরোধ যুদ্ধ যখন ফরজে আইন হয়ে যায়, তখন প্রত্যেক ব্যক্তি তার সামর্থ্যে যা কিছু আছে, তা নিয়েই ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়বে। হাকিকি কুদরত আর ওহমি কুদরতের প্রসঙ্গ এখানে আসবে না।

    (ঙ) উসমানি সালতানাতের সরাসরি তত্ত্বাবধান ছাড়া আলাদা আমিরের অধীনে নিজেদের রূপরেখা অনুযায়ী লড়াই করে তারা ভারতবর্ষকে দারুল হারব থেকে বের করে পুনরায় দারুল ইসলামে রূপান্তরিত করতে চেয়েছেন; যার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে থানাভবনকে দারুল ইসলাম বানিয়ে নিয়েছেন। লড়াই যে তারাই প্রথম শুরু করেছেন, বিষয়টা তা-ও নয়। তাদের পূর্বেও লড়াই হয়েছে। ইসমাইল শহিদ ও আহমদ শহিদরাও তাদের হাতে বাইয়াতবদ্ধ ছিলেন না। সেসব লড়াইয়েও আলাদা আমির ছিল। তারাও যে তুরস্কে গিয়ে ইজাযত এনেছেন এবং তাদের তত্ত্বাবধানে থেকে লড়াই করেছেন, এমন প্রমাণও নেই। পুরো ২০০ বছরের ইতিহাস ঘাঁটলে বেরিয়ে আসবে এমন অনেক আমিরের সন্ধান, দিফায়ি লড়াইয়ে ভিন্ন ভিন্ন ফ্রন্টে যারা ইমারাহ করেছেন। তাদের অনেকের ব্যাপারে উসমানি সুলতানদের হয়তো কোনো নলেজও ছিল না। এতদ্*সত্ত্বেও এসবের ব্যাপারে কোনো অবৈধতার ফাতওয়া গোলাম আহমদ কাদিয়ানি ছাড়া কেউ জারি করেছিল বলে আমার জানা নেই।


    আকাবিরদের জীবনীর এসব দিক নিয়ে কি আমরা আদৌ ভাবি না? অন্যথায় আমাদেরকে যেসব উসুল শেখানো হয়, তার আলোকে তো এগুলোকে বৈধ ভাবার কথা নয়।

    প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভালোবাসার আরেক নাম দারুল উলুম দেওবন্দ। আমরা দারুল উলুম দেওবন্দকে ভালোবাসি। সর্বোপরি আমরা দারুল উলুম দেওবন্দের দিকে সম্পৃক্ত হওয়াকে গর্বের বিষয় মনে করি। দারুল উলুম একটি ধারা, একটি আদর্শ। তবে লক্ষণীয় যে, তা শরিয়াহর কোনো কষ্টিপাথর বা মাপকাঠি নয়।

    দারুল উলুম দেওবন্দের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এমনকি কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে খোদ দারুল উলুমেই বিভক্তি হয়েছে। একটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেওবন্দ দু-ভাগ হয়েছিল। এক পক্ষ সে বিষয়টাকে ওজর হিসেবে দেখেছিল, আরেক পক্ষ আদর্শের ওপর অবিচল ছিল। এক পক্ষ নানুতবি রহ.-এর সন্তানদেরকে দোষারোপ করছিল, আরেক পক্ষ মাদানি পরিবারকে অভিযুক্ত করছিল। ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের সময় যেমন এক পক্ষ থানবি রহ.-এর পক্ষাবলম্বন করেছিল, আরেক পক্ষ মাদানি রহ.-এর আদর্শের ওপর অবিচল ছিল।

    দারুল উলুম ভারতের মতো একটা জায়গায় প্রতিষ্ঠান টেকানোর স্বার্থে কখনোসখনো হিকমাহস্বরূপ কিছু কাজ করে থাকে; বাহ্যদৃষ্টিতে যেগুলো অসুন্দর ঠেকে। তাদের সে সকল কৌশলের ব্যাপারেও দেওবন্দি ঘরানার সব আলিম একমত, বিষয়টা তা-ও নয়। যেমন, প্রতিষ্ঠানের ভেতর বিজয় দিবস পালিত হওয়া, সেকুলারিজমের পক্ষে কথা বলা, তানজিমের বিপক্ষে বিবৃতি দেওয়া, তাবলিগের উভয় গ্রুপের সর্বপ্রকার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। সচেতন যে-কেউ বুঝবে যে, এগুলো দেওবন্দি আদর্শ নয়; প্রতিষ্ঠান বাঁচানোর কৌশলমাত্র। দারুল আমানে বসে চুক্তিবদ্ধ কুফফারকে ধোঁকা দেওয়ার পদ্ধতিমাত্র।

    তবে মজার বিষয় হলো, এগুলোকে অনেকে দলিল বানায়। দেশীয় ইসলামিক ডেমোক্রেটিকরা দলিল বানায় বিজয় দিবস পালনকে, মন্দের ভালো গ্রহণের নীতির প্রবক্তারা দলিল বানায় সেকুলারিজমের পক্ষে কথা বলাকে, ইরজাঘেঁষা বুদ্ধির ঢেঁকিরা দলিল বানায় তানজিমের বিপক্ষে বিবৃতি প্রদানকে আর এতাআতিরা দলিল বানায় তাবলিগের বিষয়টাকে। তাদের সামনে যদি বলা হয়, এ ক্ষেত্রে দেওবন্দ মাজুর। আর দেওবন্দ কোনো কষ্টিপাথর নয়। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে তুমি তোমার আদর্শের অসারতা দেখো। অমনি শুরু হয়ে যায়, ‘দেওবন্দবিরোধী’, ‘ইহুদি-খ্রিষ্টানের দালাল’ ব্লা ব্লা ট্যাগ।

    এই জাতি আবেগ দিয়ে ভাবে। বিবেক কাজে লাগায় না। যার কারণে ভালো ভালো লেবাসধারী বুদ্ধিজীবী বা চিন্তার ঢেঁকিরাও মাঝে মাঝে আবেগতাড়িত হয়ে বিবৃতি ঝাড়তে থাকে। তারা রাসুলের বদর-উহুদে নিজেদের জন্য কোনো দলিল না পেলেও ঠিকই দারুল উলুমের তানজিম-বিরোধিতার মধ্যে পেয়ে যায় অন্তর প্রশান্ত করা দলিল। ডেমোক্রেসি বা সেকুলারিজমের পক্ষের কথাবার্তায় তাদের চিত্ত হয় মোহমুগ্ধ। আনন্দের ভেলায় তারা ভাসতে থাকে। ময়ুরের মতো পেখম মেলে নাচতে থাকে।

    সংগ্রহিত।(আল্লাহ সুবঃ লেখককে সকল প্রকার বিপদাপদ থেকে হেফাযত করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।)
    বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
    কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

  • #2
    আমাদের সকলের জন্য ভারতবর্ষের ইতিহাস জানা অত্যন্ত জরুরি। সকল ভাই এই বিষয়ে মনোযোগী হবেন আশাকরি ইনশাআল্লাহ।
    বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
    কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

    Comment


    • #3
      ভাই!বর্তমানের উলামায়ে দেওবন্দের সম্পূর্ণ বিপরিত ছিলেন ৷
      "জিহাদ ঈমানের একটি অংশ ৷"-ইমাম বোখারী রহিমাহুল্লাহ

      Comment


      • #4
        Originally posted by আলী ইবনুল মাদীনী View Post
        ভাই!বর্তমানের উলামায়ে দেওবন্দের সম্পূর্ণ বিপরিত ছিলেন ৷
        জ্বি ভাই, আপনি ঠিক বলেছেন।
        বিবেক দিয়ে কোরআনকে নয়,
        কোরআন দিয়ে বিবেক চালাতে চাই।

        Comment

        Working...
        X