Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইসলাম প্রচারে তরবারীর ভূমিকা (পর্ব-২ আক্রমণাত্মাক জিহাদের হিকমত ও তাৎপর্য)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইসলাম প্রচারে তরবারীর ভূমিকা (পর্ব-২ আক্রমণাত্মাক জিহাদের হিকমত ও তাৎপর্য)

    আক্রমণাত্মাক জিহাদের হিকমত

    অনেকেই প্রশ্ন করেন, ইসলাম প্রচারের জন্য জিহাদের কি প্রয়োজন? কাফেরদের দাওয়াত দিলে এবং তাদের সাথে উত্তম আচরণ করলেই তো তারা মুসলমান হয়ে যাবে। শুধু শুধু যুদ্ধ-বিগ্রহ ও মারামারি-কাটাকাটির কি প্রয়োজন? কিন্তু বাস্তবতা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা মানুষ শুধু হককে না চেনা, সত্য ধর্মকে উপলব্ধি করতে না পারা এ কারণেই সত্যগ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়- বিষয়টা মোটেও এমন নয়, বরং বেশিরভাগ লোকই সত্যকে বুঝার পরেও নানা প্রতিবন্ধকতা ও পারিপার্শ্বিক কারণে সত্যধর্ম গ্রহণ করে না। তাই কাফেরদের যতই দাওয়াত দেওয়া হোক, তাদের সাথে যতই উত্তম আচরণ করা হোক এবং ইসলামের সত্যতা তাদের সামনে যত উজ্জ্বল করেই তুলে ধরা হোক, এর দ্বারা খুব কম সংখ্যক লোকই ইসলাম গ্রহণ করবে। কুরআন থেকে এ বিষয়টা সুষ্পষ্টরুপে বুঝে আসে। পুরো কুরআনে একবার সাধারণভাবে নজর বুলিয়ে যে কেউ বুঝতে পারবে, প্রধাণত তিন কারণে মানুষ সত্য ধর্মগ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়,

    ১. বাপদাদার অন্ধ অনুসরণ।
    আল্লাহ তায়ালা বলেন,
    وَكَذَلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِي قَرْيَةٍ مِنْ نَذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى آثَارِهِمْ مُقْتَدُونَ (سورة الزخرف:23)
    (হে রাসূল) আমি তোমার পূর্বে যখনই কোন জনপদে কোন সতর্ককারী (রাসূল) পাঠিয়েছি, তখন সেখানকার বিত্তবানেরা একথাই বলেছে যে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে একটা মতাদর্শের অনুসারী পেয়েছি। আমরা তাদেরই পদচিহ্ন অনুসরণ করে চলছি। -সূরা যুখরুফ, ২৩

    ২. সত্যধর্ম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অহংকার ও জাত্যভিমান। প্রত্যেক জাতি সাধারণত নিজেদেরকে অন্য জাতির চেয়ে উত্তম মনে করে, এমনকি যদি তাদের শ্রেষ্ঠত্বের তেমন কোন কারণ না থাকে তথাপিও। (যেমন বর্তমান কাঙ্গাল বাঙ্গালীরা দূর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ান হওয়ার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এতটাই অনুন্নত যে, কোন ধরণের মেশিনারি উৎপাদনের সক্ষমতা তাদের নেই। এমনকি সামান্য কেঁচিটাও চীন-পাকিস্তান থেকে আমদানি করতে হয়। তা সত্ত্বেও তারা দিনরাত বাঙ্গালী হওয়ার কারণে নিজেদের বন্দনা গাইতে থাকে।) আর যদি এর সাথে তাদের কিছুটা শক্তি-সামর্থ্যও থাকে তবে তো তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে। অন্য কোন জাতির ধর্ম, বিশেষত যদি সেই ধর্মের অনুসারীরা দুর্বল হয় তবে তা গ্রহণ করা দূরে থাক- তাদের পাত্তাই দিতে চায় না। তাই তাদের নিকট সত্যধর্ম গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হলে এবং তারা তা সত্য বলে উপলব্ধি করতে পারলেও মেনে নিতে অস্বীকার করে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ইহুদীরা, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
    الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ(146)
    “যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি তারা তাকে (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) এতটা ভালোভাবে চেনে যেমন চেনে নিজেদের সন্তানদেরকে।” -সুরা বাকারা, ২৫৭

    ফেরআউন ও তার জাতি মূসা আলাইহিস সালামকে সত্য নবী বলে বিশ্বাস করতো। কিন্তু অহংকারের কারণে তারা মুসার আনিত ধর্ম গ্রহণ করেনি। কুরআন তাদের ব্যাপারে বলেছে,
    وَجَحَدُوا بِهَا وَاسْتَيْقَنَتْهَا أَنْفُسُهُمْ ظُلْمًا وَعُلُوًّا (سورة النمل: 14)
    “তারা সীমালঙ্ঘন ও অহমিকা বশত তা সব অস্বীকার করলো, যদিও তাদের অন্তর সেগুলো (সত্য বলে) বিশ্বাস করে নিয়েছিলো।” -সূরা নামল, ১৪

    মক্কার কাফেররা ইসলামের সত্যত্যা উপলব্ধি করা সত্ত্বেও কেবলমাত্র অহংকার ও হঠকারিতা বশতই নবীজির দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন,
    بَلِ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي عِزَّةٍ وَشِقَاقٍ
    “যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তারা কেবল এ কারণেই তা অবলম্বন করেছে যে, তারা আত্মম্ভরিতা ও হঠকারিতায় লিপ্ত রয়েছে।” (সূরা সোয়াদ, ২ আয়াতের তরজমার জন্য দেখুন, তাওযীহুল কুরআন, ৩/১৮৬)

    আয়াতের তাফসীরে ইমাম আলূসী রহ. বলেন,
    وجعلها –يعني كلمة (بل) - بعضُهم للإضراب عما يُفهم مما ذُكر ونحوِه، مِن أن مَن كفر لم يكفر لخلل فيه، فكأنه قيل: من كفر لم يكفر لخلل فيه، بل كفر تكبرا عن اتباع الحق وعنادا، وهو أظهر من جعل ذلك إضرابا عن صريحه ….
    ويمكن أن يكون الجواب الذي عنه الإضراب: ما أنت بمقصر في تذكير الذين كفروا وإظهار الحق لهم، ويشعر به الآيات بعد وسبب النزول الآتي ذكره إن شاء الله تعالى، فكأنه قيل: "ص والقرآن ذي الذكر، ما أنت بمقصر في تذكير الذين كفروا وإظهار الحق لهم، بل الذين كفروا مقصرون في اتباعك والاعتراف بالحق" …. والمراد بالعزة ما يظهرونه من الاستكبار عن الحق.(روح المعاني 12/ 156)

    সংক্ষেপে এর সারমর্ম হলো, “কাফেররা ইসলামগ্রহণ না করার কারণ এটা নয় যে, কুরআনের মাঝে কোন ক্রটি রয়েছে, কিংবা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া এবং তাদের নিকট সত্যকে স্পষ্ট করার ক্ষেত্রে কোন কমতি করেছেন, বরং তারা অহংকারের কারণে সত্যকে বুঝেও গ্রহণ করছে না।” -রুহুল মাআনী, ১২/১৫৭

    তেমনিভাবে কুরআন থেকে আমরা জানতে পারি, প্রত্যেক নবীর দাওয়াতের বিরোধীতা নেতৃস্থানীয় অহংকারী লোকেরাই করেছে, তারা নবীদের দাওয়াতকে নিচুশ্রেণীর লোকদের দাওয়াত বলে প্রত্যাখ্যান করেছে, নিচের আয়াতগুলো লক্ষ্য করুন।

    وَقَالُوا لَوْلَا نُزِّلَ هَذَا الْقُرْآنُ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ (31سورة الزخرف)
    “তারা বললো, এ কুরআন দুই জনপদের কোন বড় ব্যক্তির উপর নাযিল করা হল না কেন? (‘দুই জনপদ’ দ্বারা ‘মক্কা মুকাররামা’ ও ‘তায়েফ’ বোঝানো হয়েছে। এতদঞ্চলে এ দু’টিই ছিল বড় শহর। তাই মুশরিকরা বললো, এ দুই শহরের কোন বিত্তবান সর্দারের উপরই কুরআন নাযিল হওয়া উচিত ছিল। (দেখুন, সূরা যুখরুফ, ৩১ তাওযীহুল কুরআন, ৩/২৯৬ আরো দেখুন, সূরা সদ, ৮)

    قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا مِنْ قَوْمِهِ لِلَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِمَنْ آمَنَ مِنْهُمْ أَتَعْلَمُونَ أَنَّ صَالِحًا مُرْسَلٌ مِنْ رَبِّهِ قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلَ بِهِ مُؤْمِنُونَ (75) قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا بِالَّذِي آمَنْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ (سورة الأعراف: 76)

    “তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক নেতৃবর্গ, যে সকল দুর্বল লোক ইমান এনেছিল, তাদেরকে জিজ্ঞেস করলো, তোমরা কি এটা বিশ্বাস করো যে, সালিহ নিজ প্রতিপালকের পক্ষ হতে প্রেরিত রাসূল? তারা বললো, নিশ্চয়ই আমরা তো তাঁর মাধ্যমে প্রেরিত বাণীতে ইমান রাখি। সেই দাম্ভিক লোকেরা বললো, তোমরা যে বাণীতে ইমান এনেছো আমরা তো তা প্রত্যাখ্যান করি।” -সূরা আ’রাফ, ৭৬

    قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا مِنْ قَوْمِهِ لَنُخْرِجَنَّكَ يَاشُعَيْبُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَكَ مِنْ قَرْيَتِنَا أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا قَالَ أَوَلَوْ كُنَّا كَارِهِينَ (سورة الأعراف: 88)
    “তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক সর্দারগণ বললো, হে শুয়াইব! আমরা পাকাপাকিভাবে ইচ্ছা করেছি, তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ইমান এনেছে তাদের সকলকে আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেব, অন্যথায় তোমাদের সকলকে আমাদের দ্বীনে ফিরে আসতে হবে। শুয়াইব বললো, আমরা যদি (তোমাদের দ্বীনকে) ঘৃণা করি তবুও কি?”-সূরা আরাফ, ৮৮

    فَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَوْمِهِ مَا نَرَاكَ إِلَّا بَشَرًا مِثْلَنَا وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ إِلَّا الَّذِينَ هُمْ أَرَاذِلُنَا بَادِيَ الرَّأْيِ وَمَا نَرَى لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ بَلْ نَظُنُّكُمْ كَاذِبِينَ (سورة هود 27)

    “তার সম্প্রদায়ের যারা কুফর অবলম্বন করেছিলো, তারা বলতে লাগলো, আমরা তো তোমাকে আমাদের মতই মানুষ দেখছি, এর বেশি কিছু নয়। আমরা আরও দেখছি তোমার অনুসরণ করছে কেবল সেই সব লোক, যারা আমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বহীন, এবং তাও ভাসা-ভাসা চিন্তার ভিত্তিতে এবং আমরা তোমার মাঝে এমন কিছু দেখতে না, যার কারণে আমাদের উপর তোমার কিছু শ্রেষ্ঠত্ব অর্জিত হবে। বরং আমাদের ধারণা তোমরা সকলে মিথ্যাবাদী।” -সূরা হুদ, ২৭

    অহংকার সত্যধর্ম গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায় হওয়ার ব্যাপারে কুরআনে শত শত আয়াত রয়েছে। যারা কিছুটা হলেও কুরআন অধ্যয়ন করেন তাদের নিকট বিষয়টা অস্পষ্ট থাকার কথা নয়। তাই এ বিষয়ে আর উদ্ধৃতি বাড়িয়ে প্রবন্ধ দীর্ঘ করতে চাচ্ছি না।

    ৩. রাজা-বাদশাহ ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের অনুসরণ। মানুষ সাধারণভাবেই রাজা-বাদশাহদের অনুসরণ করে, বিজয়ী জাতি ও প্রভাবশালী লোকদের কথা অনুযায়ী চলে। তেমনিভাবে রাজা-বাদশাহ ও শক্তিশালী জাতিবর্গও অধীনস্ত ও দুর্বলদের কৌশলে ও চাপপ্রয়োগ করে তাদের ধর্মের অনুসারী বানিয়ে রাখে, এ ব্যাপারে অনেক আয়াত ও হাদিস রয়েছে, উদাহরণস্বরুপ দুয়েকটি উল্লেখ করছি। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
    وَبَرَزُوا لِلَّهِ جَمِيعًا فَقَالَ الضُّعَفَاءُ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنْتُمْ مُغْنُونَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ. (سورة إبراهيم : 21)

    “সমস্ত মানুষ আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। যারা (দুনিয়ায়) দুর্বল ছিল, তারা বড়ত্ব প্রদর্শনকারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদেরই অনুগামী ছিলাম। এখন কি তোমরা আমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে একটু বাঁচাবে?” -সূরা ইবরাহীম, ২১

    কিয়ামতের দিন কাফেররা বলবে,
    رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا (سورة الأحزاب : 67)

    ‘হে আমাদের প্রতিপালক! প্রকৃতপক্ষে আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও আমাদের গুরুজনদের আনুগত্য করেছিলাম, তারাই আমাদেরকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করেছে। ফলে তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছে। -সূরা আহযাব, আয়াত: ৬৭ (আরো দেখুন, সূরা গাফির, ৪৭)

    অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন-
    وَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ يَتَسَاءَلُونَ قَالُوا إِنَّكُمْ كُنْتُمْ تَأْتُونَنَا عَنِ الْيَمِينِ )سورة الصافات : 27 - 28 (

    তারা একে অন্যের অভিমুখী হয়ে পরস্পরে সওয়াল-জওয়াব করবে। (অধিনস্তরা তাদের নেতৃবর্গকে) বলবে, তোমরাই তো অত্যন্ত শক্তিমানরুপে আমাদের কাছে আসতে। (অর্থাৎ আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে যেন আমরা কিছুতেই ইমান আনি। (সুরা সাফফাত, ২৭-২৮ তাওযীহুল কুরআন, আল্লামা তাকী উসমানী ৩/১৬১-১৬২)

    আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন,
    وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ مَوْقُوفُونَ عِنْدَ رَبِّهِمْ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ الْقَوْلَ يَقُولُ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا لَوْلَا أَنْتُمْ لَكُنَّا مُؤْمِنِينَ (سورة سبأ31)

    “তুমি যদি সেই সময়ের দৃশ্য দেখতে যখন যালেমদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে দাঁড় করানো হবে আর তারা একে অন্যের কথা রদ করবে। (দুনিয়ায়) যাদেরকে দুর্বল মনে করা হয়েছিল তারা ক্ষমতা-দর্পীদেরকে বলবে, তোমরা না হলে আমরা অবশ্যই মুমিন হয়ে যেতাম।” –সূরা সাবা, ৩১

    এ মর্মে কয়েকটি হাদীস
    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কায়সারের নিকট প্রেরিত দাওয়াতি পত্রে লিখেন,
    أسلم تسلم، يؤتك الله أجرك مرتين، فإن توليت فإن عليك إثم الأريسيين
    ‘ইসলাম গ্রহণ করো, শান্তি পাবে। আল্লাহ তায়ালা তোমাকে বহুগুণ সওয়াব দান করবেন। আর যদি তুমি (ইসলাম থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে জনসাধারণের (ইসলাম গ্রহণ না করার) গুনাহও তোমার উপর বর্তাবে। -সহিহ বুখারী: ৭ সহিহ মুসলিম: ১৭৭৩

    এ হাদিসের ব্যাখায় হাফেয ইবনে হাজার রহ. ফাতহুল বারীতে বলেন,
    قال الخطابي: أراد أن عليك إثم الضعفاء والأتباع إذا لم يسلموا تقليدا له لأن الأصاغر أتباع الأكابر. (فتح الباري: 1/39 ط. دار المعرفة)

    “খত্তাবী রহ. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্য হলো, যদি তুমি ইসলাম গ্রহণ না করো তাহলে তোমার অনুসারী ও দুর্বল প্রজাদের ইসলাম গ্রহণ না করার গুনাহের ভারও তোমার উপর বর্তাবে। কেননা তারা তোমার অনুসরণ করেই ইসলাম গ্রহণ করবে না। কারণ দুর্বলরা প্রভাবশালীদের অনুসরণই করে থাকে।” -ফাতহুল বারী: ১/৩৯

    ইমাম বুখারী কায়েস বিন আবী হাযেম থেকে বর্ণণা করেন,
    دخل أبو بكر على امرأة من أحمس يقال لها زينب، ... قالت: ما بقاؤنا على هذا الأمر الصالح الذي جاء الله به بعد الجاهلية؟ قال: «بقاؤكم عليه ما استقامت بكم أئمتكم»، قالت: وما الأئمة؟ قال: «أما كان لقومك رءوس وأشراف، يأمرونهم فيطيعونهم؟» قالت: بلى، قال: «فهم أولئك على الناس». صحيح البخاري: (3834)

    আবু বকর রাযিআল্লাহু আনহু একদিন আহমাস গোত্রের যয়নাব নামী এক মহিলার সাথে সাক্ষাৎ হয়। …. মহিলা তাকে প্রশ্ন করে, জাহেলী যমানার পর যে উত্তম দীন ও কল্যাণময় জীবন বিধান আল্লাহ তায়ালা আমাদের দান করেছেন, সে দীনের উপর আমরা কতদিন সঠিকভাবে টিকে থাকতে পারবো? আবু বকর রাযি. বললেন, যতদিন তোমাদের নেতৃবর্গ তোমাদের নিয়ে দীনের উপর অবিচল থাকবেন। মহিলা জিজ্ঞাসা করলো, নেতৃবর্গ কারা? আবু বকর রাযিআল্লাহু বললেন, তোমার গোত্রে কি এমন সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় লোক নেই, যাদের আদেশ-নিষেধ মানুষ মেনে চলে? মহিলা উত্তর দিল, হাঁ, আছে। আবু বকর বললেন, তারাই নেতৃবর্গ। -সহিহ বুখারী, ৭/৩৭৩ ইসলামী ফাউন্ডেশন

    হাদিসের ব্যাখায় হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,
    قوله: «ما استقامت بكم ...أئمتكم» أي لأن الناس على دين ملوكهم، فمن حاد من الأئمة عن الحال مال وأمال. (فتح الباري 7 : 151ط: دار الفكر، مصور عن الطبعة السلفية).

    “(তোমরা ইসলামের উপর থাকবে) যতদিন তোমাদের নেতৃবর্গ তোমাদের নিয়ে দীনের উপর অবিচল থাকবেন”, কেননা মানুষ তাদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অনুসরণ করে, সুতরাং নেতৃস্থানীয় কোন ব্যক্তি সঠিক পথ থেকে সরে গেলে সে নিজেও পথভ্রষ্ট হয়, মানুষকেও পথভ্রষ্ট করে।” ফাতহুল বারী, ৭/১৫১

    উপরোক্ত আলোচনা হতে বুঝা গেল, হক বুঝার পরও গোঁড়ামি-অহংকার, বাপ-দাদা ও নেতাদের অনুসরণ বা কুফরী ধর্ম বিজয়ী হওয়ার কারণে বেশীরভাগ লোক ইসলাম গ্রহণ করে চিরস্থায়ী শান্তির পথে আসে না। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার নিমিত্তে ইসলাম ইকদামী তথা আক্রমণাত্মক জিহাদের নির্দেশ দিয়েছে এবং কাফেরদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের হত্যা করার পাশাপাশি যুদ্ধে সক্ষম সাধারণ কাফেরদেরও ব্যাপকভাবে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছে, যেন ওদের শক্তি সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায়। এরপর ওদেরকে লাঞ্চিত-অপদস্থ করে জিযয়া গ্রহণের কিংবা বন্দী করে দাস-দাসী বানানোর আদেশ দিয়েছে। তখন অন্যদেরকে ইসলাম গ্রহণে বাধাপ্রদান করার মতো কোন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিও থাকবে না এবং নিজেদের গর্ব ও জাত্যভিমানও ওদের ইসলাম গ্রহণের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। বরং তখন তারা লাঞ্চনা হতে মুক্তির জন্য বাপদাদার অন্ধ অনুসরণ ছেড়ে ইসলাম গ্রহণে সম্মত হয়ে যাবে।

    উপরোক্ত বিধানগুলোর বাস্তব ফলাফল আমরা ইতিহাসে সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাই যে, যখনই মুসলমানরা যুদ্ধ করে কাফেরদের দেশ দখল করে নেয়, তাদের প্রভাবশালী লোকদের হত্যা করে এবং ইসলাম বিজয়ী ধর্ম হিসেবে আভির্ভূত হয় তখন খুব সহজেই মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। এ ব্যাপারে *সুরা নাসরের আয়াতগুলো সবচেয়ে উৎকৃষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
    إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ (1) وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا (2) فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ
    ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং তুমি মানুষকে দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে দেখবে, তখন তুমি আল্লাহর প্রশংসা সহ তাসবীহ পাঠ করবে। -সুরা নাসর, আয়াত : ১-৩

    আয়াতে সুষ্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে যে, বিজয়ের দ্বারা দ্রুততম সময়ে বিপুল পরিমান মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে।

    সামনে কয়েকটি আয়াতের তাফসীরসহ উলামায়ে কেরামের আরো কিছু বক্তব্য তুলে ধরছি যেগুলোতে ইকদামী জিহাদ, নেতৃস্থানীয় কাফেরদেরকে হত্যা করার উপকারিতা ও পরোক্ষ চাপপ্রয়োগের ব্যাপারটি খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। সম্মানিত পাঠকদের মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করার সবিনয় অনুরোধ করছি।

    আল্লাহ তায়ালা বলেন,
    كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ
    “তোমরা সর্বোত্তম উত্তম, তোমাদের বের করা হয়েছে মানুষের কল্যাণার্থে। তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজে বাধা দিবে এবং আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে।” -সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০

    ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,
    السؤال الأول: من أي وجه يقتضي الأمر بالمعروف والنهي عن المنكر والإيمان بالله كون هذه الأمة خير الأمم مع أن هذه الصفات الثلاثة كانت حاصلة في سائر الأمم؟.
    والجواب: قال القفال: تفضيلهم على الأمم الذين كانوا قبلهم إنما حصل لأجل أنهم يأمرون بالمعروف وينهون عن المنكر بآكد الوجوه وهو القتال لأن الأمر بالمعروف قد يكون بالقلب وباللسان وباليد، وأقواها ما يكون بالقتال، لأنه إلقاء النفس في خطر القتل وأعرف المعروفات الدين الحق والإيمان بالتوحيد والنبوة، وأنكر المنكرات: الكفر بالله، فكان الجهاد في الدين محملا لأعظم المضار لغرض إيصال الغير إلى أعظم المنافع، وتخليصه من أعظم المضار، فوجب أن يكون الجهاد أعظم العبادات، ولما كان أمر الجهاد في شرعنا أقوى منه في سائر الشرائع، لا جرم صار ذلك موجبا لفضل هذه الأمة على سائر الأمم، وهذا معنى ما روي عن ابن عباس أنه قال في تفسير هذه الآية: قوله كنتم خير أمة أخرجت للناس تأمرونهم أن يشهدوا أن لا إله إلا الله ويقروا بما أنزل الله، وتقاتلونهم عليه و «لا إله إلا الله» أعظم المعروف، والتكذيب هو أنكر المنكر.
    ثم قال القفال: فائدة القتال على الدين لا ينكره منصف، وذلك لأن أكثر الناس يحبون أديانهم بسبب الألف والعادة، ولا يتأملون في الدلائل التي تورد عليهم فإذا أكره على الدخول في الدين بالتخويف بالقتل دخل فيه، ثم لا يزال يضعف ما في قلبه من حب الدين الباطل، ولا يزال يقوى في قلبه حب الدين الحق إلى أن ينتقل من الباطل إلى الحق، ومن استحقاق العذاب الدائم إلى استحقاق الثواب الدائم. (الفتسير الكبير: 8/324 دار إحياء التراث العربي)

    প্রশ্ন: সৎকাজের আদেশ, অসৎ কাজে বাধা দেওয়া এবং আল্লাহর প্রতি ইমান আনা কিভাবে সর্বোত্তম জাতি হওয়ার মাধ্যম হলো, অথচ এ গুণাবলী তো সব উম্মতের মধ্যেই বিদ্যমান ছিল?
    উত্তর: কাফফাল রহ. বলেন, অন্যান্য উম্মতের উপর এ উম্মতকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণ হলো এ উম্মত সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা তথা যুদ্ধের মাধ্যমে করবে, কেননা সৎকাজের আদেশ অন্তর, মুখ, ও হাতের মাধ্যমেও হয়, কিন্তু তা সবচেয়ে কার্যকরীভাবে হয় যু্দ্ধের মাধ্যমে, কেননা এতে নিহত হওয়ার আশংকা থাকে। আর সবচেয়ে বড় সৎকাজ হলো সত্য ধর্ম এবং তাওহিদ ও নবুওয়াতের প্রতি ইমান আনা। আর সবচেয়ে বড় অন্যায় হলো কুফর। সুতরাং ধর্মের জন্য জিহাদ হলো অন্যকে সবচেয়ে বড় কল্যাণের পথে নিয়ে আসা এবং সবচেয়ে ক্ষতিকর বিষয় থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেকে সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন করা। এ কারণেই জিহাদ সবচেয়ে বড় ইবাদত। আর যেহেতু আমাদের ধর্মে পূর্ববর্তী ধর্মের তুলনায় জিহাদের গুরুত্ব বেশি তাই এই জিহাদই অন্যান্য উম্মতের উপর আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ। এ বিষয়টিই ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এ আয়াতের ব্যাখায় বলেন, ‘তোমরা সর্বোত্তম জাতি, যাদের উত্থান হয়েছে মানুষের কল্যাণার্থে। তোমরা মানুষকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য দেওয়ার এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধিবিধান মেনে নেওয়ার আদেশ দিবে, এজন্য তাদের সাথে যুদ্ধ করবে। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহার সাক্ষ্যপ্রদান হলো সবচেয়ে বড় সৎকাজ আর কুফর হলো সবচেয়ে মন্দ কাজ।’
    এরপর কফফাল বলেন, দীনের জন্য যুদ্ধ করার উপকারিতা কোন ন্যায়পরায়ণ মানুষ অস্বীকার করতে পারে না। কেননা অধিকাংশ মানুষই ঘনিষ্টতা ও অভ্যাসের কারণে নিজের ধর্মকে ভালোবাসে, এবং (ইসলামের সত্যতার ব্যাপারে) তাদের সামনে যে দলিল পেশ করা হয় তা নিয়ে তারা চিন্তাভাবনা করে না। যখন তাদেরকে হত্যার ভয় দেখিয়ে ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করানো হয় তখন সে ইসলাম গ্রহণ করে। এরপর তাদের অন্তরে বাতিল ধর্মের প্রতি লালিত ভালোবাসা ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে এবং সত্য ধর্মের ভালোবাসা দৃঢ় হতে থাকে। ফলে এক পর্যায়ে তারা বাতিল ধর্ম ছেড়ে সত্য ধর্মকে আপন করে নেয় এবং চিরস্থায়ী শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে চিরস্থায়ী পুরস্কার লাভের হকদার হয়। -তাফসীরে রাযী: ৮/৩২৪

    শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী রহ. বলেন,
    اعلم أن أتم الشرائع وأكمل النواميس هو الشرع الذي يؤمر فيه بالجهاد، وذلك لأن تكليف الله عباده بما أمر ونهى - مثله كمثل رجل مرض عبيده، فأمر رجلا من خاصته أن يسقيهم دواء، فلو أنه قهرهم على شرب الدواء، وأوجره في أفواههم لكان حقا، لكن الرحمة اقتضت أن يبين لهم فوائد الدواء؛ ليشربوه على رغبة فيه، وأن يخلط معه العسل؛ ليتعاضد فيه الرغبة الطبيعية والعقلية.
    ثم إن كثيرا من الناس يغلب عليهم الشهوات الدنية والأخلاق السبعية ووساوس الشطان في حب الرياسات، ويلصق بقلوبهم رسوم آبائهم، فلا يسمعون تلك الفوائد، ولا يذعنون لما يأمر به النبي صلى الله عليه وسلم، ولا يتأملون في حسنة، فليست الرحمة في حق أولئك أن يقتصر على إثبات الحجة عليهم، بل الرحمة في حقهم أن يقهروا؛ ليدخل الإيمان عليهم على رغم أنفهم بمنزلة إيجاد الدواء المر، ولا قهر إلا بقتل من له منهم بكناية شديدة وتمنع قوى، أو تفريق منعتهم وسلب أموالهم حتى يصيروا لا يقدرون على شيء، فعند ذلك يدخل أتباعهم وذراريهم في الإيمان برغبة وطوع، ولذلك كتب رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى قيصر كان عليك إثم الأريسيين.
    وربما كان أسرهم وقهرهم يؤدي إلى إيمانهم، وإلى هذا أشار النبي صلى الله عليه وسلم حيث قال: عجب الله من قوم يدخلون الجنة في السلاسل.
    وأيضا فالرحمة التامة الكاملة بالنسبة إلى البشر أن يهديهم الله إلى الاحسان، وأن يكبح ظالمهم عن الظلم، وأن يصلح ارتفاقاتهم وتدبير منزلهم وسياسة مدينتهم، فالمدن الفاسدة التي يغلب عليها نفوس السبعية، ويكون لهم تمنع شديد إنما هو بمنزلة الأكلة في بدن الإنسان لا يصح الإنسان إلا بقطعه، والذي يتوجه إلى إصلاح مزاجه وإقامة طبيعته لا بد له من القطع، والشر القليل إذا كان مفضيا إلى الخير الكثير واجب فعله،
    ولك عبرة بقريش ومن حولهم من العرب كانوا أبعد خلق الله عن الاحسان وأظلمهم على الضعفاء، وكانت بينهم مقاتلات شديدة، وكان بعضهم يأسر بعضا، وما كان أكثرهم متأملين في الحجة ناظرين في الدليل فجاهدهم النبي صلى الله عليه وسلم وقتل أشدهم بطشا وأحدهم نفسا حتى ظهر أمر الله، وانقادوا له، فصاروا بعد ذلك من أهل الإحسان، واستقامت أمورهم، فلو لم يكن في الشريعة جهاد أولئك لم يحصل اللطف في حقهم. (حجة الله البالغة: 2/264 ط. دار الجيل: 1426 هـ)

    সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ শরিয়ত তাই যাতে জিহাদের বিধান রয়েছে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের যে আদেশ-নিষেধ দিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হলো ঐ ব্যক্তির মতো যার গোলামরা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাই সে তার ঘনিষ্ঠ কাউকে গোলামদের ওষুধ খাওয়াতে বলে, এখন যদি সেই ব্যক্তি ওদেরকে ওষুধ খেতে বাধ্য করে এবং (জোরপূর্বক) তাদের মুখে ওষুধ ঢেলে দেয় তাহলে তা ভালো কাজই হবে। কিন্তু রহমতের তাকাযা হলো তাদেরকে ওষুধের উপকারিতা বুঝিয়ে দেওয়া, যেন তারা সাগ্রহে তা সেবন করে, এবং ওষুধের সাথে মধু মিশিয়ে দেওয়া যেন বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রহের পাশাপাশি স্বভাবগত আগ্রহও সৃষ্টি হয় এবং একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে।

    কিন্তু অনেক মানুষের উপর নিকৃষ্ট প্রবৃত্তি, পশুত্ব ও শয়তানের কুমন্ত্রণা প্রবল হয়ে যায়, এবং তাদের অন্তর বাপ-দাদার আচার-রীতির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। তাই তারা (ইসলামের ধর্মের) উপকারিতাগুলো শুনতে চায় না, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আদেশ দেন তা মেনে নেয় না, কল্যাণকর বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করে না। সুতরাং তাদের ক্ষেত্রে শুধু ইসলামের সত্যত্যার প্রমাণ পেশ করাই যথেষ্ট নয়। বরং রহমতের তাকাযা হলো তাদেরকে পর্যুদস্ত করা হবে যেন ইমান তাদের অন্তরে প্রবেশ করে, অনেকটা (জোরপূর্বক) তিক্ত ওষুধ পান করানোর মত। আর তাদেরকে পর্যুদস্ত করার পদ্ধতি হলো তাদের মধ্যে যারা শক্তিশালী ও প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারী তাদের হত্যা করা হবে কিংবা তাদের দলকে বিক্ষিপ্ত করে দেওয়া হবে এবং ধনসম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া হবে, যেন (ইসলামের বিপক্ষে) তাদের কোমর সোজা করে দাঁড়ানোর মত কোন শক্তিই অবশিষ্ট না থাকে। তখন তাদের অনুসারী ও সন্তান-সন্ততিরা স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করবে।
    এজন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কায়সারের নিকট প্রেরিত চিঠিতে লিখেন, (যদি তুমি ইসলাম গ্রহণ না কর) তাহলে তোমাকে তোমার অনুসারীদের (ইসলাম গ্রহণ না করার) গুনাহের ভারও বহন করতে হবে।
    কখনো তাদেরকে বন্দী ও পর্যুদস্ত করা তাদের ইমানের কারণ হয়। এ দিকে ইঙ্গিত করেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
    عجب الله من قوم يدخلون الجنة في السلاسل
    ‘আল্লাহ তায়ালা ঐ ব্যক্তিদের দেখে অবাক হন যাদেরকে শিকলেবন্দী করে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়’। [সহিহ বুখারী: ৩০১০]

    তাছাড়া এটাও মানবজাতির প্রতি রহমতের দাবী যে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাদেরকে (একে অপরের প্রতি) অনুগ্রহ করার দিকে পথপ্রদর্শন করবেন, যালেমদের যুলুম হতে বিরত রাখবেন, এবং মানুষের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, ও শহর-নগর পরিচালনার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু যে শহরগুলোর ক্ষমতা মন্দ লোকেরা দখল করে নেয় এবং তাদের প্রতাপ ও শক্তি থাকে তারা মানব দেহের পচনশীল ক্ষতের ন্যায়, তা কেটে ফেলা ব্যতীত মানুষ সু্স্থতা লাভ করতে পারে না। চিকিৎসক তা কেটে ফেলতে বাধ্য। কেননা সামান্য ক্ষতির বিনিময়ে প্রভুত কল্যাণ অর্জন করা গেলে তো সেই ক্ষতিকে মেনে নিতেই হয়।

    এ ব্যাপারে কুরাইশ ও তাদের পাশ্ববর্তী আরবদের ঘটনা আমাদের জন্য দৃ্ষ্টান্ত। তারা একে অপরের প্রতি অনুগ্রহ করা থেকে যোজন যোজন দূরে ছিল। দুর্বলদের উপর সবচেয়ে বেশি জুলুম করত। পরস্পর ঘোরতর যুদ্ধ লিপ্ত হতো, একে অপরকে বন্দী করত। তাদের অধিকাংশই দলিল-প্রমাণ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতো না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে জিহাদ করলেন এবং তাদের মধ্যে যারা প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারী ছিল তাদের হত্যা করলেন। ফলে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হলো এবং কুরাইশ ও অন্যান্য আরবরা রাসূলের অনুগত হয়ে একে অপরের প্রতি অনুগ্রহশীল হয়ে গেল। তাদের অবস্থার সংশোধন হয়ে গেল। যদি শরিয়তে তাদের সাথে যুদ্ধের আদেশ না থাকতো তাহলে তাদের প্রতি দয়া করা হতো না।
    ” -হুজ্জাতুল্লাহির বালেগা: ২/২৬৪

    নেতৃস্থানীয় কাফেরদের হত্যা করার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহয় উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে فَقَاتِلُوا أَئِمَّةَ الْكُفْرِ “তোমরা কুফর নেতৃবর্গের সাথে যুদ্ধ করো।” -সূরা তাওবা, আয়াত, ১২
    বদরের যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করলে আবু বকর রাযি. তাদের থেকে মুক্তিপণের বিনিমেয়ে ছেড়ে দিতে বলেন, কিন্তু উমর রাযি. বলেন,
    أرى أن تمكنا فنضرب أعناقهم، فتمكن عليا من عقيل فيضرب عنقه، وتمكني من فلان نسيبا لعمر، فأضرب عنقه، فإن هؤلاء أئمة الكفر وصناديدها
    ‘আমার মত হলো, আমরা নিজ হাতে তাদেরকে হত্যা করবো, আলী তার ভাই আকীলকে হত্যা করবে, এবং আমি আমার আত্মীয় অমুককে হত্যা করবো। কেননা এরাই কুফরীর নেত্ববর্গ’। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবুবকরের পরামর্শ গ্রহণ করে বন্দীদের মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেন। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়,
    مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَنْ يَكُونَ لَهُ أَسْرَى حَتَّى يُثْخِنَ فِي الْأَرْضِ
    “কোন নবীর পক্ষে এটা শোভনীয় নয় যে, যমিনে (শত্রুদের) রক্ত ব্যাপকভাবে প্রবাহিত করার পূ্র্বে তার কাছে কয়েদী থাকবে।” -সূরা আনফাল, আয়াত: ৬৭

    অর্থাৎ কাফেরদের পাইকারী হারে হত্যা করে তাদের শক্তি খর্ব করতে হবে এবং ওদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিতে হবে, যেন ওরা মুসলমানদের বিপক্ষে আর কখনো কোমর সোজা করে দাঁড়াতে না পারে। এর পূর্ব পর্যন্ত ওদেরকে বন্দী করা এবং মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। এ বিষয়টিই অপর আয়াতে সুস্পষ্টরুপে এসেছে, ইরশাদ হয়েছে,

    فَإِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا فَضَرْبَ الرِّقَابِ حَتَّى إِذَا أَثْخَنْتُمُوهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَ فَإِمَّا مَنًّا بَعْدُ وَإِمَّا فِدَاءً
    “কাফেরদের সাথে তোমাদের মোকাবেলা হলে তাদের গর্দান উড়াতে থাকো। অবশেষে যখন তোমরা তাদেরকে ব্যাপকভাবে হত্যা করবে তখন তাদেরকে (বন্দী করে) শক্তভাবে বাঁধবে। তারপর হয়তো (তাদেরকে) মুক্তি দিবে অনুকম্পা দেখিয়ে অথবা মুক্তিপণ নিয়ে।” -সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ৪

    ইবনে কাসীর রহ. বলেন,
    أي: إذا واجهتموهم فاحصدوهم حصدا بالسيوف
    অর্থাৎ তোমরা শত্রুদের মুখোমুখী হলে তাদের কচুকাটা করো। -তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৭/৩০৭

    আয়াতটির তাফসীর করতে গিয়ে ইমাম জাসসাস রহিমাহুল্লাহু বলেন,
    لأن الله تعالى أمر نبيه صلى الله عليه وسلم بالإثخان في القتل وحظر عليه الأسر - إلا بعد إذلال المشركين وقمعهم - وكان ذلك وقت قلة عدد المسلمين وكثرة عدد عدوهم من المشركين، فمتى أثخن المشركون وأذلوا بالقتل والتشريد جاز الاستبقاء. (أحكام القرآن: 5 : 269 ط. دار إحياء التراث العربي: 1405 هـ)

    “আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত করতে বলেছেন এবং মুশরিকদের লাঞ্চিত করা ও তাদের শক্তি খর্ব করার পূর্বে বন্দী করতে নিষেধ করেছেন, ... সুতরাং মুশরিকদের পাইকারীহারে হত্যা করা, ওদেরকে হত্যা ও নির্বাসনের মাধ্যমে অপদস্থ করার পরই ওদেরকে জানে বাঁচানো জায়েয হবে।”-আহকামুল কুরআন, ৫/২৬৯

    গত শতাব্দীর বরেণ্য আলেম শায়েখ আব্দুর রহমান সা’দী বলেন,
    يقول تعالى مرشدا عباده إلى ما فيه صلاحهم، ونصرهم على أعدائهم {فَإِذا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا} في الحرب والقتال، فاصدقوهم القتال، واضربوا منهم الأعناق، حَتَّى تثخنوهم وتكسروا شوكتهم وتبطلوا شرتهم، فإذا فعلتم ذلك، ورأيتم الأسر أولى وأصلح، {فَشُدُّوا الْوَثَاقَ} أي: الرباط، وهذا احتياط لأسرهم لئلا يهربوا، فإذا شد منهم الوثاق اطمأن المسلمون من هربهم ومن شرهم، فإذا كانوا تحت أسركم، فأنتم بالخيار بين المن عليهم، وإطلاقهم بلا مال ولا فداء، وإما أن تفدوهم بأن لا تطلقوهم حتى يشتروا أنفسهم، أو يشتريهم أصحابهم بمال، أو بأسير مسلم عندهم. (تفسير السعدي ص 784 ط. مؤسسة الرسالة)

    ‘আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের কল্যাণ এবং শত্রুদের উপর বিজয়ী হওয়ার পদ্ধতি বাতলে দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, যখন যুদ্ধে তোমরা কাফেরদের মুখোমুখি হও তখন ওদের বিরুদ্ধে বীরবিক্রমে যুদ্ধ কর, ওদের গর্দান উড়াতে থাকো, যতক্ষণ না তাদেরকে ব্যাপকহারে হত্যা করে তাদের শক্তি খর্ব করতে পার এবং তাদের অনিষ্ট হতে তোমরা নিরাপদ হয়ে যাও। এরপর তোমাদের নিকট বন্দী করা ভালো মনে হলে তাদের কষে বাধো। কষে বাধতে বলা হয়েছে যেন ওরা পলায়ন করতে না পারে এবং মুসলমানরা তাদের পলায়ন ও অনিষ্ট হতে নিরাপদ হয়ে যায়। বন্দী করার পর তোমাদের ইখতিয়ার থাকবে তোমরা চাইলে তাদের উপর অনুগ্রহ করে মুক্তিপণ ব্যতিতই তাদের ছেড়ে দিতে পারো আর চাইলে তাদের থেকে মুক্তিপণ নিতে কিংবা তাদের মাধ্যমে বন্দী বিনিময় করতে পারো।” -তাফসীরে সা’দী, পৃ: ৭৮৪

    হাকিমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. ও একই তাফসীর করেছেন, তিনি বলেন,
    تمهارا جب كفار سے مقابله هو جاۓ تو ان كي گردنيں مارو (يعني قتل كرو) يها ں تك كے جب تم ان كي خوب خون ريزي كر چكو (جس كي حد يه هے كے اب اگر قتل موقوف كر كے بجاۓ اس كے قيد پر اكتفاء كيا جاۓ تو محتمل مضرتِ مسلمين وغلبہ كفار نه هو) تو (اس وقت كفار كو قيد كر کے) خوب مضبوط باندھ لو پھراس كے بعد (على سبيل منع الجمع تم كو دو باتو كا اختيار هے) يا تو بلا معاوضه چھوڑ دينا اور يا معاوضه لے كر چھو ڑدينا (بيان القرآن: 3/409)

    “কাফেরদের সাথে তোমাদের যুদ্ধ হলে তোমরা তাদের হত্যা করো, যখন তোমরা তাদের প্রচুর পরিমানে হত্যা করবে (যার সীমা হলো এখন তাদের হত্যা করার পরিবর্তে বন্দী করা হলেও কাফেরদের বিজয় কিংবা তাদের দ্বারা মুসলমানদের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না) তখন তাদের বন্দী করে মযবুত ভাবে বাধো। এরপর হয়তো বিনামূল্যে ছেড়ে দিবে কিংবা মুক্তিপণ নিয়ে ছাড়বে।” -বয়ানুল কুরআন ৩/৪০৯

    শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাব্বীর আহমদ উসমানী রহ. বলেন,
    یعنی حق اورباطل کا مقابلہ تو رہتا ہی ہے۔ جس وقت مسلمانوں اور کافروں میں جنگ ہو جائے تو مسلمانوں کو پوری مضبوطی اور بہادری سے کام لینا چاہئے۔ باطل کا زور جب ہی ٹوٹے گا کہ بڑے بڑے شریر مارے جائیں اور انکے جتھے توڑ دیے جائیں۔ اس لئے ہنگامہ کارزار میں کسل، سستی، بزدلی اور توقف و تردد کو راہ نہ دو۔ اور دشمنان خدا کی گردنیں مارنے میں کچھ باک نہ کرو۔ کافی خونریزی کے بعد جب تمہاری دھاک بیٹھ جائے اور ان کا زور ٹوٹ جائے اس وقت قید کرنا بھی کفایت کرتا ہے۔ قال تعالى: [مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَنْ يَكُونَ لَهُ أَسْرَى حَتَّى يُثْخِنَ فِي الْأَرْضِ] یہ قید وبند ممکن ہے ان کے لئے تازیانہ عبرت کا کام دے اور مسلمانوں کے پاس رہ کر انکو اپنی اور تمہاری حالت کے جانچنے اور اسلامی تعلیمات میں غور کرنے کا موقع بہم پہنچائے شدہ شدہ وہ لوگ حق و صداقت کا راستہ اختیار کر لیں۔ یا مصلحت سمجھو تو بدون کسی معاوضہ کے ان پر احسان کر کے قید سے رہا کرو۔ اس صورت میں بہت سے افراد ممکن ہے تمہارے احسان اور خوبی اخلاق سے متاثر ہو کر تمہاری طرف راغب ہوں اور تمہارے دین سے محبت کرنے لگیں۔ اور یہ بھی کر سکتے ہو کہ زر فدیہ لے کر یا مسلمان قیدیوں کے مبادلہ میں ان قیدیوں کو چھوڑ دو اس میں کئ طرح کے فائدے ہیں۔ بہرحال اگر ان اسیران جنگ کو انکے وطن کی طرف واپس کر و تو دو ہی صورتیں ہیں۔ معاوضہ میں چھوڑنا یا بلامعاوضہ رہا کرنا۔ ان میں جو صورت امام کے نزدیک اصلح ہو اختیار کر سکتا ہے۔ حنفیہ کے ہاں بھی فتح القدیر اور شامی وغیرہ میں اس طرح کی روایات موجود ہیں ہاں اگر قیدیوں کو ان کے وطن کی طرف واپس کرنا مصلحت نہ ہو تو پھر تین صورتیں ہیں۔ ذِمّی بنا کر بطور رعیت کے رکھنا یا غلام بنا لینا، یا قتل کر دینا۔ (فوائد عثماني ص 216-217 ط. فريد بك ڈپو)

    “অর্থাৎ হক ও বাতিলের লড়াই তো চিরন্তন। সুতরাং মুসলামনদের কাফেরদের সাথে যুদ্ধের সময় বীরত্বের সাথে অটল থেকে যুদ্ধ করতে হবে। বাতিলের শক্তি তখনই খর্ব হবে যখন ধাড়ি শয়তানগুলোকে হত্যা করা হবে এবং তাদের বাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হবে।
    তাই কাফেরদের সাথে যুদ্ধে ভীরুতা বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব করো না এবং তাদের গর্দান উড়াতে ভয় করো না। যথেষ্ট পরিমান রক্তপাত করার পর যখন কাফেরদের অন্তরে তোমাদের ভয় জমে যায় এবং কাফেরদের শক্তি খর্ব হয়ে যায় তখন বন্দী করাও যথেষ্ট। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “কোন নবীর পক্ষে এটা শোভনীয় নয় যে, যমিনে (শত্রুদের) রক্ত ব্যাপকভাবে প্রবাহিত করার পূ্র্বে তার কাছে কয়েদী থাকবে।”
    এই বন্দীত্ব তাদের জন্য উপদেশ ও দৃষ্টান্ত হতে পারে। পাশাপাশি মুসলমানদের সংস্পর্শে এসে তাদের জীবনাচার প্রত্যক্ষ করা এবং ইসলামের শিক্ষা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সুযোগ হবে, ধীরে ধীরে তারা ইসলাম গ্রহণ করবে। আর যদি ভালো মনে করো তাহলে মুক্তিপণ ব্যতীত বা মুক্তিপণ নিয়ে তাদের ছেড়ে দিতে পারো। এতে অনেকেই তোমাদের অনুগ্রহ ও উত্তম চরিত্র দেখে তোমাদের ধর্মের প্রতি আগ্রহী হবে এবং তোমাদের মহব্বত করবে ।” -তাফসীরে উসমানী: পৃ: ২১৬-২১৭

    দেখুন, কাফেরদের সাথে শুধু দাওয়াত ও উত্তম আচরণই যদি তাদের ইসলাম গ্রহণের জন্য যথেষ্ট হতো তাহলে নবীজির দশ বছরের দাওয়াতে মক্কাবাসীরা মুসলিম হলো না কেন? রাসূল কি -নাউযুবিল্লাহ- তাদের দাওয়াতের ক্ষেত্রে কোন ক্রটি করেছেন, না তাদের সাথে উত্তম আচরণ করেননি? আসলে দয়া-উত্তম আচরণের দ্বারা কাজ হয় বিজয়ী হওয়া, বন্দী করা ও দাসদাসী বানানোর পরে। কেননা বিজয়ী জাতি ও মনিবরা যখন বিজিত জাতি, তাদের যুদ্ধ বন্দী ও দাসদাসীদের প্রতি দয়া করে তখন তা তাদের উত্তম আখলাক ও নৈতিকতার পরিচয় হয়। এজন্যই যখন মক্কা বিজয়ের পরে রাসূল কাফেরদের প্রতি অনুগ্রহ করে তাদের সকল অপরাধ ক্ষমা করে দিলেন তখন তারা খুব দ্রুত মুসলমান হয়ে যায়। পক্ষান্তরে পরাজিত জাতি বিজয়ী জাতির সাথে উত্তম আচরণ করলে সেটা তাদের উত্তম আখলাকের দলিল হওয়া তো দূরে থাক, বরং অনেক সময়ই বিজয়ীরা মনে করে তারা আমাদের শক্তির ভয়ে ভীত হয়ে তোষামোদ স্বরুপ উত্তম আচরণ করছে। তাই বিজয়ের পূর্বে উত্তম আচরণ তেমন ফলদায়ক হয় না।

    উপরোক্ত আলোচনার আলোকে পাঠক আপনি নিজেই বিবেচনা করুন ইসলাম প্রচারে তরবারীর ভূমিকা আছে কি না এবং থাকলে তার মাত্রা কতখানি। আরো দেখুন কৌশলে তাদের উপর ইসলাম গ্রহণের চাপপ্রয়োগ করা হচ্ছে কি না।
    চলবে ইনশাআল্লাহ।


    প্রথম পর্বের লিংক-
    الجهاد محك الإيمان

    জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

  • #2
    জাযাকাল্লাহ ভাই পর্বগুলো দেয়ার জন্য। আশা করছি বাকি পর্বগুলোও দ্রুত পাব ইনশাআল্লাহ।

    Comment


    • #3
      Originally posted by আদনানমারুফ View Post
      আসলে দয়া-উত্তম আচরণের দ্বারা কাজ হয় বিজয়ী হওয়া, বন্দী করা ও দাসদাসী বানানোর পরে। কেননা বিজয়ী জাতি ও মনিবরা যখন বিজিত জাতি, তাদের যুদ্ধ বন্দী ও দাসদাসীদের প্রতি দয়া করে তখন তা তাদের উত্তম আখলাক ও নৈতিকতার পরিচয় হয়।
      ————————————————————————
      পক্ষান্তরে পরাজিত জাতি বিজয়ী জাতির সাথে উত্তম আচরণ করলে সেটা তাদের উত্তম আখলাকের দলিল হওয়া তো দূরে থাক, বরং অনেক সময়ই বিজয়ীরা মনে করে তারা আমাদের শক্তির ভয়ে ভীত হয়ে তোষামোদ স্বরুপ উত্তম আচরণ করছে।
      ভাই!চমৎকার একটা কথা বলেছেন ৷ কথাগুলো স্বর্ণের অক্ষর দিয়ে লিখে রাখা দরকার ৷
      "জিহাদ ঈমানের একটি অংশ ৷"-ইমাম বোখারী রহিমাহুল্লাহ

      Comment


      • #4
        Originally posted by আলী ইবনুল মাদীনী View Post
        ভাই!চমৎকার একটা কথা বলেছেন ৷ কথাগুলো স্বর্ণের অক্ষর দিয়ে লিখে রাখা দরকার ৷
        জাযাকুমুল্লাহ। *ঠিকই বলেছেন।

        Comment


        • #5
          মাশাল্লাহ! এ লেখা লিখতে ভাইকে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে! আল্লাহ আপনাকে এর উত্তম প্রতিদান দিন।

          Comment


          • #6
            এ পর্বের সবগুলো পোস্ট পিডিএফ চাই।

            Comment


            • #7
              Originally posted by mohammod bin maslama View Post
              এ পর্বের সবগুলো পোস্ট পিডিএফ চাই।
              এখনোও পর্ব বাকী আছে, শেষ হওয়ার পর পিডিএফ দিবো ইনশাআল্লাহ। শুকরান।
              الجهاد محك الإيمان

              জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

              Comment


              • #8
                মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর পোষ্ট

                Comment


                • #9
                  Ami Jihad jabo. Inshallah

                  Comment


                  • #10
                    - হকবাতিলের লড়াই তো চিরন্তন।
                    সুতরাং মুসলামনদের কাফেরদের সাথে যুদ্ধের সময় বীরত্বের সাথে অটল থেকে যুদ্ধ করতে হবে। বাতিলের শক্তি তখনই খর্ব হবে যখন ধাড়ি শয়তানগুলোকে হত্যা করা হবে এবং তাদের বাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হবে।

                    Comment

                    Working...
                    X