বিসমিল্লাহ ওয়াস সালাতু আস সালাম আলা রাসুলিল্লাহ
আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা আমাদের সামনে কুরআনকে এমন ভাবে পেশ করেছেন যেন তা এক জীবন্ত ছবি! কুরআনের বাচনভঙ্গীই এমন যে, তা ঘটনাগুলোর ছবি আমাদের সামনে বর্ণনা করে থাকে। যেমন আল্লাহ বর্ণনা করেছেন, জান্নাত, জাহান্নাম, হাশরের ময়দান, জাহান্নামের ভিতরের ছবিব, জান্নাতের ভিতরের ছবি, আল্লাহর সামনে বান্দার দন্ডায়মান হয়ে থাকা অবস্থা, পুলসিরাতের উপরে অবস্থা এমন কত কিছু। একই ভাবে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন আমাদের আগের জাতির ইতিহাস! আদ জাতি, সামুদ জাতি, নুহ আঃ এর কওম, মুসা আঃ এবং ফিরাউনের ইতিহাস।
এই ছবিগুলোর মধ্যে থেকে একটি ছবি আছে সুরা বুরুজে। আল্লাহ বলছেন -
قُتِلَ أَصْحَابُ الْأُخْدُودِ
ধ্বংস/হত্যা করা হয়েছিলো গর্ত/খন্দক ওয়ালাদের
النَّارِ ذَاتِ الْوَقُودِ
যে গর্ত ভর্তি ছিলো দাউ দাউ করে জ্বলা ইন্ধনের আগুনে
إِذْ هُمْ عَلَيْهَا قُعُودٌ
যে সময়টাতে তারা গর্তের কিনারায় বসে ছিলো
وَهُمْ عَلَى مَا يَفْعَلُونَ بِالْمُؤْمِنِينَ شُهُودٌ
আর তারা মুমিনদের সাথে যা করছিলো তা দেখছিলো
وَمَا نَقَمُوا مِنْهُمْ إِلَّا أَن يُؤْمِنُوا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ
তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিলো শুধু এ কারণে যে, তারা প্রশংসিত, পরাক্রান্ত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল
الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ
যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের ক্ষমতার মালিক, আল্লাহর সামনে রয়েছে সবকিছু
তাফসিরে এ ব্যাপারে কয়েকটি ঘটনার নাম পাওয়া যায়। তবে সবগুলো ঘটনার মূল কথা প্রায় একই। আসেন দেখি ছবিটা কেমন?
এর আগে আমরা একবার ভেবে নেই বনানী এফআর টাওয়ার এর আগুনের কথা, কিংবা পুরান ঢাকার আগুনের কথা, কিংবা বস্তিগুলো দাউ দাউ করে জ্বলে উঠার কথা। এই ছবিগুলো আমরা মাথায় নিয়ে আসি। কারণ এটা খুব স্বাভাবিক যে, আমরা যদি দাউ দাউ আগুনের কোন দৃশ্য বুঝতে চাই তবে সেরকম বা কাছাকাছি কোন দৃশ্য যা আমরা নিজেরা দেখেছি তা সামনে রাখতে হবে। আর এভাবে বাস্তব দুনিয়ার ঘটনাগুলো সামনে রাখতে উৎসাহিত করা কুরআনের নিজস্ব একটি স্টাইল। অনেক জায়গায় আল্লাহ বলেন, তারা কি দেখে না... ? এমন বলে আল্লাহ বিভিন্ন উদাহরন সামনে নিয়ে আসেন। যেমন দুই নদীর মিলন স্থল, পাহাড়, সাগরে চলাচল করা নৌযান, আকাশে উড়ে যাওয়া পাখি ...
তাই কুরআনের দৃশ্য বুঝার জন্য বাস্তব দৃশ্যকেও মানসপটে রাখা জরুরি। মনে করেন এফআর টাওয়ার বা পুরান ঢাকার আগুনের কথা! সবাই দুর থেকে দাঁড়িয়ে শুধু মুখে হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো আর আফসোস করছিলো! চোখের সামনে একের পর এক চলে যাচ্ছিলো প্রান গুলো!
এমনই এক দৃশ্য আল্লাহ বর্ণনা করেছেন বরং এর চেয়েও আরো ভয়ংকর!
চিন্তা করে দেখেন কোন এলাকার সমস্ত ঈমানদার, মুমিন নারী পুরুষকে হত্যা করার জন্য গর্ত খনন করে, খন্দক কেটে তাতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বালানো হয়েছে। হয়ত দিনের পর দিন সেখানে আগুন জ্বলেছে। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছে এই আগুনে বিশ্বাসীদের পুড়িয়ে মারা হবে। এরপরে একদিন সবাইকে এই গর্তের পাশে লাইন ধরে বসানো হয়েছে। রাজার সৈন্য একজন একজন করে জিজ্ঞেস করছে নিজের ঈমান ছেড়ে দিতে রাজি আছে কিনা? সবাই আগুনের মুখে দাঁড়িয়ে একের পর এক অস্বীকার করছে আর সাথে সাথেই তাকে আগুনের মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে। একবার চিন্তা করে দেখেন - আপনি আপনার বাবা, মা, ভাই বোন সবাই দাঁড়িয়ে আছেন। আপনার সাথে আপনার অবুঝ সন্তানেরাও আছে, আছে আপনার প্রানপ্রিয় স্ত্রী। দেখলেন আপনার বাবা আগুনের মধ্যে হারিয়ে গেলো, এরপরে আপনার মা, আপনার ভাই, আপনার স্ত্রী! এখানে একটু থামেন। শুধু লাইন গুলো লিখে যাওয়া নয় পড়ে যাওয়া নয়। আসেন আমরা ঐ সময়ে তাদের অন্তরে কেমন অবস্থা হয়েছিলো তা নিজেদের অন্তর দিয়ে বুঝার চেস্টা করি।
কেমন হয়েছিলো আপনার বাবা মা আগুনে হারিয়ে যাবার আগে আপনার চেহারা! কেমন হয়েছিলো আপনাকে ফেলে দেয়ার আগে আপনার প্রানপ্রিয় স্ত্রী এবং আপনার সন্তানদের অবস্থা! প্রতিটি সেকেন্ড তাঁদের বেঁচে থাকতে হয়েছিলো। হ্যা, তারা আগুনে ঝাপিয়ে পড়েছিলো কিন্তু এরপরেও নিজের ঈমান পরিত্যাগ করেনি। না বৃদ্ধ, না যুবক না শিশু। এই ঘটনার সাথেই পাওয়া আরেকটি বর্ণনা, কোলের শিশু মাকে বলেছিলো - মা, তুমি হক্কের উপরেই আছো!
অপরদিকে মুমিনদের এই নির্যাতন একদল জালিম উপভোগ করছিলো! আর কেন এই নির্যাতন? আল্লাহ বলেই দিচ্ছেন, কারণ আর কিচ্ছু না, তারা ঈমান এনেছিলো আল্লাহর উপরে। তারা আল্লাহর হুকুমের উপরে আল্লাহর বিধানের সামনে কোন রাজা বাদশার বিধান মেনে নিতে চায়নি! এই ছিলো তাঁদের অপরাধ!
আচ্ছা, কেন এই ঘটনা উল্লেখ করলাম? কারণ চিন্তা করে দেখেন এই ঘটনা আমাদের সাথে খুবই প্রাসঙ্গিক! সময় আলাদা, আশে পাশের দৃশ্য টা আলাদা কিন্তু ঘটনা ঠিক ঠিক একই!
আজকের এইদিনে যখন আমাদের সামনে তারা হুমকি দেয় যে জালিমদের হুকুম, বিধানের সামনে আমাদের মাথা নত করতে হবে আর আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করতে হবে তখন আজও সেই দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি! ঠিক ঠিক তাই! আজকের জালিম বাদশারা বলে, আল্লাহর বিধানকে পরিত্যাগ না করলে এবং তাদের মনমত বিধান মেনে না নিলে, জেলে দিবে, ফাঁসি দিবে, নির্যাতন করবে, গুম করবে। কিন্তু তারা জানেনা যে, আমরা এমন ঘটনার সাথে আগেই পরিচিত। তারা জানেনা যে, তাদের কাফেলা আর আমাদের কাফেলা এক নয়। আমরাতো সেই সেই গর্তওয়ালাদের কাফেলার মানুষ। আমাদের আর তাদের মধ্যে তো সেই উপাদানটিই রয়ে গেছে যার জন্য তাদের পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। আর তা হচ্ছে -
"তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিলো শুধু এ কারণে যে, তারা প্রশংসিত, পরাক্রান্ত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল"
জালিমরা ভুল করলো। বড় ভুল করল! না তারা ইতিহাস পড়েছে, না তারা এ ব্যাপারে কিছু জেনেছে।
তাদের সামনে বালাম বাউরাদের যে দলটি আছে তাদের থেকে এ ব্যাপারে কেন জেনে নিলোনা যে, জালিম বাদশা যখন বালকটিকে হত্যা করেই ফেললো (আল্লাহর নাম নিয়ে, সে তো আল্লাহকে মানেনি, শুধুমাত্র নিজের গায়ের জ্বালা মেটানোর জন্যই তা করেছে, ভেবেছিলো সে খুব সফল হয়ে যাবে) তখন সবাই তাই মেনে নিলো যা থেকে সবাইকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য সে এতকিছু করল! কিন্তু সে সফল হতে পারলো কই?
কিংবা তাদের বালাম বাউরা রা এটাও বলে দেয়না কেন যে, ফিরাউনের জাদুকররা যখন জাদুর বান ছেড়ে দিলো তখন মূসা আঃ বলেছিলেন, আল্লাহ তো এই জালিমদের কাজ নষ্ট করেই দিবেন! আর জাদুকরদের সব জাদু শুন্য হয়ে গেলো আর তারা মুসলমান হয়ে গেলো ফিরাউনের সামনেই! তাহলে ফিরাউন সফল হতে পারলো কই?
এই বালাম বাউরা রা এটাও বলে দেয়না কেন যে, না পেরেছিলো নূহ আঃ এর কওম, না আদ জাতি, না সামুদ জাতি, না কওমে সালিহ, না ফিরাউন, না নমরুদ, না কারুন, না আবরাহা, না আবু জাহাল, না পেরেছিলো পারস্য সম্রাজ্য, রোম সম্রাজ্য! না পেরেছিলো রাশিয়া, না পারলো তাদের প্রভু যুগের হুবাল অ্যামেরিকা!
তাদের প্রত্যেকে সৈন্যসামন্তের সবটুকু শক্তি নিয়েই তো নেমেছিলো, কিন্তু পারলো কই?
তাই আজ আমরা তোমাদের ভয় পাইনা ইনশা আল্লাহ। কেন ভয় পাবো? তোমরা তো জাহান্নামের লাকড়ি!
যাও, বিশ্বাস না হলে তোমাদের বালাম বাউরাদের জিজ্ঞেস করে দেখো, তাগুত এবং তার সাহায্যকারী হিসেবে আমাদের অবস্থান কোথায়? আমি জানি সে সাহস তোমাদের হবেনা!
আল্লাহ তোমাদের চারদিক থেকে পরিবেষ্টন করে আছেন তা তোমরা টেরও পাওনা। চীন চেয়েছিলো আল্লাহর কালাম বদলে দিবে, ভেবেছিলো আল্লাহ তাদের ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন (নাউজুবিল্লাহ) কই তারা সফল হতে পারলো কই?
তোমরা খুব ভেবে নিয়েছো, তোমরা সফল হয়েই যাচ্ছো, কিন্তু তা হচ্ছে কই? নিজেদের প্রভুদের খুশি করার জন্য আল্লাহর হুকুম জিহাদকে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ বানিয়ে দিলে, সাথে তোমাদের বালাম বাউরা রাও খুব নেচে নিলো, মুজাহিদদের উপরে জুলুমের আর নির্যাতনের কোন সীমা রাখলেনা, কত চেস্টাই না করলে, কিন্তু সফলতা কই? হায়! আজ তো সবাই উগ্রবাদের দিকেই ঝুঁকে পড়ছে! না আমার কথা না, তোমাদের গবেষকদের কথা, দুনিয়ার বড় বড় গবেষকদের কথা!
তোমরা সফল হতে পারলে কই? আর পারবেও না। কেন জানো? কারণ আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে, তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন তাই এবং শুধু তাই নয় আল্লাহ এই ওয়াদাও করেছেন যে সবশেষে তিনি তোমাদেরকে জাহান্নামেই একত্রিত করবেন - তাই!
আমার প্রিয় দ্বীনের ভাই এবং বোনেরা, উজ্জীবিত হোন, আশাবাদী হোন, খুশি হোন, ঈমানের দীপ্তি আর বলিষ্ঠ পদক্ষেপে কদম উঠান বিজয়ের প্রতিশ্রুতির দিকে, সফলতার দিকে, আল্লাহর সন্তুস্টির দিকে, জান্নাতের দিকে! হায়! তারা আমাদের কিই বা করবে, তার যদি বুঝতো! আমাদের হত্যা করে ফেললে তো আমরা আল্লাহর সাথেই সাক্ষাতে চলে যাবো ইনশাআল্লাহ। হুর রা বসে আছে আমাদের অপেক্ষায়, অপেক্ষায় আছেন ফেরেশতাগন, অপেক্ষায় আছে আমাদের বালাখানা আর সেই মনোরম প্রাসাদ! সমস্ত কিছু তো শুধু আমাদের সেখানে প্রবেশের অপেক্ষায়!
আর তোমরা? পচে মর জাহান্নামে! জাক্কুম, কাঁটা আর গলিত, দুর্গন্ধ পুঁজের মধ্যে! এমনকি আল্লাহ পর্যন্ত তোমাদের সাথে সেদিন কোন কথা বলবেন না।
অভিশাপ তোমাদের উপরে যা করেছো তার জন্য! তোমরাও অপেক্ষা কর, আমরাও অপেক্ষায় আছি! জানো আল্লাহ কি বলেছেন?
আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালা আমাদের সামনে কুরআনকে এমন ভাবে পেশ করেছেন যেন তা এক জীবন্ত ছবি! কুরআনের বাচনভঙ্গীই এমন যে, তা ঘটনাগুলোর ছবি আমাদের সামনে বর্ণনা করে থাকে। যেমন আল্লাহ বর্ণনা করেছেন, জান্নাত, জাহান্নাম, হাশরের ময়দান, জাহান্নামের ভিতরের ছবিব, জান্নাতের ভিতরের ছবি, আল্লাহর সামনে বান্দার দন্ডায়মান হয়ে থাকা অবস্থা, পুলসিরাতের উপরে অবস্থা এমন কত কিছু। একই ভাবে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন আমাদের আগের জাতির ইতিহাস! আদ জাতি, সামুদ জাতি, নুহ আঃ এর কওম, মুসা আঃ এবং ফিরাউনের ইতিহাস।
এই ছবিগুলোর মধ্যে থেকে একটি ছবি আছে সুরা বুরুজে। আল্লাহ বলছেন -
قُتِلَ أَصْحَابُ الْأُخْدُودِ
ধ্বংস/হত্যা করা হয়েছিলো গর্ত/খন্দক ওয়ালাদের
النَّارِ ذَاتِ الْوَقُودِ
যে গর্ত ভর্তি ছিলো দাউ দাউ করে জ্বলা ইন্ধনের আগুনে
إِذْ هُمْ عَلَيْهَا قُعُودٌ
যে সময়টাতে তারা গর্তের কিনারায় বসে ছিলো
وَهُمْ عَلَى مَا يَفْعَلُونَ بِالْمُؤْمِنِينَ شُهُودٌ
আর তারা মুমিনদের সাথে যা করছিলো তা দেখছিলো
وَمَا نَقَمُوا مِنْهُمْ إِلَّا أَن يُؤْمِنُوا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ
তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিলো শুধু এ কারণে যে, তারা প্রশংসিত, পরাক্রান্ত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল
الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ
যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের ক্ষমতার মালিক, আল্লাহর সামনে রয়েছে সবকিছু
তাফসিরে এ ব্যাপারে কয়েকটি ঘটনার নাম পাওয়া যায়। তবে সবগুলো ঘটনার মূল কথা প্রায় একই। আসেন দেখি ছবিটা কেমন?
এর আগে আমরা একবার ভেবে নেই বনানী এফআর টাওয়ার এর আগুনের কথা, কিংবা পুরান ঢাকার আগুনের কথা, কিংবা বস্তিগুলো দাউ দাউ করে জ্বলে উঠার কথা। এই ছবিগুলো আমরা মাথায় নিয়ে আসি। কারণ এটা খুব স্বাভাবিক যে, আমরা যদি দাউ দাউ আগুনের কোন দৃশ্য বুঝতে চাই তবে সেরকম বা কাছাকাছি কোন দৃশ্য যা আমরা নিজেরা দেখেছি তা সামনে রাখতে হবে। আর এভাবে বাস্তব দুনিয়ার ঘটনাগুলো সামনে রাখতে উৎসাহিত করা কুরআনের নিজস্ব একটি স্টাইল। অনেক জায়গায় আল্লাহ বলেন, তারা কি দেখে না... ? এমন বলে আল্লাহ বিভিন্ন উদাহরন সামনে নিয়ে আসেন। যেমন দুই নদীর মিলন স্থল, পাহাড়, সাগরে চলাচল করা নৌযান, আকাশে উড়ে যাওয়া পাখি ...
তাই কুরআনের দৃশ্য বুঝার জন্য বাস্তব দৃশ্যকেও মানসপটে রাখা জরুরি। মনে করেন এফআর টাওয়ার বা পুরান ঢাকার আগুনের কথা! সবাই দুর থেকে দাঁড়িয়ে শুধু মুখে হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো আর আফসোস করছিলো! চোখের সামনে একের পর এক চলে যাচ্ছিলো প্রান গুলো!
এমনই এক দৃশ্য আল্লাহ বর্ণনা করেছেন বরং এর চেয়েও আরো ভয়ংকর!
চিন্তা করে দেখেন কোন এলাকার সমস্ত ঈমানদার, মুমিন নারী পুরুষকে হত্যা করার জন্য গর্ত খনন করে, খন্দক কেটে তাতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বালানো হয়েছে। হয়ত দিনের পর দিন সেখানে আগুন জ্বলেছে। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছে এই আগুনে বিশ্বাসীদের পুড়িয়ে মারা হবে। এরপরে একদিন সবাইকে এই গর্তের পাশে লাইন ধরে বসানো হয়েছে। রাজার সৈন্য একজন একজন করে জিজ্ঞেস করছে নিজের ঈমান ছেড়ে দিতে রাজি আছে কিনা? সবাই আগুনের মুখে দাঁড়িয়ে একের পর এক অস্বীকার করছে আর সাথে সাথেই তাকে আগুনের মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে। একবার চিন্তা করে দেখেন - আপনি আপনার বাবা, মা, ভাই বোন সবাই দাঁড়িয়ে আছেন। আপনার সাথে আপনার অবুঝ সন্তানেরাও আছে, আছে আপনার প্রানপ্রিয় স্ত্রী। দেখলেন আপনার বাবা আগুনের মধ্যে হারিয়ে গেলো, এরপরে আপনার মা, আপনার ভাই, আপনার স্ত্রী! এখানে একটু থামেন। শুধু লাইন গুলো লিখে যাওয়া নয় পড়ে যাওয়া নয়। আসেন আমরা ঐ সময়ে তাদের অন্তরে কেমন অবস্থা হয়েছিলো তা নিজেদের অন্তর দিয়ে বুঝার চেস্টা করি।
কেমন হয়েছিলো আপনার বাবা মা আগুনে হারিয়ে যাবার আগে আপনার চেহারা! কেমন হয়েছিলো আপনাকে ফেলে দেয়ার আগে আপনার প্রানপ্রিয় স্ত্রী এবং আপনার সন্তানদের অবস্থা! প্রতিটি সেকেন্ড তাঁদের বেঁচে থাকতে হয়েছিলো। হ্যা, তারা আগুনে ঝাপিয়ে পড়েছিলো কিন্তু এরপরেও নিজের ঈমান পরিত্যাগ করেনি। না বৃদ্ধ, না যুবক না শিশু। এই ঘটনার সাথেই পাওয়া আরেকটি বর্ণনা, কোলের শিশু মাকে বলেছিলো - মা, তুমি হক্কের উপরেই আছো!
অপরদিকে মুমিনদের এই নির্যাতন একদল জালিম উপভোগ করছিলো! আর কেন এই নির্যাতন? আল্লাহ বলেই দিচ্ছেন, কারণ আর কিচ্ছু না, তারা ঈমান এনেছিলো আল্লাহর উপরে। তারা আল্লাহর হুকুমের উপরে আল্লাহর বিধানের সামনে কোন রাজা বাদশার বিধান মেনে নিতে চায়নি! এই ছিলো তাঁদের অপরাধ!
আচ্ছা, কেন এই ঘটনা উল্লেখ করলাম? কারণ চিন্তা করে দেখেন এই ঘটনা আমাদের সাথে খুবই প্রাসঙ্গিক! সময় আলাদা, আশে পাশের দৃশ্য টা আলাদা কিন্তু ঘটনা ঠিক ঠিক একই!
আজকের এইদিনে যখন আমাদের সামনে তারা হুমকি দেয় যে জালিমদের হুকুম, বিধানের সামনে আমাদের মাথা নত করতে হবে আর আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করতে হবে তখন আজও সেই দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি! ঠিক ঠিক তাই! আজকের জালিম বাদশারা বলে, আল্লাহর বিধানকে পরিত্যাগ না করলে এবং তাদের মনমত বিধান মেনে না নিলে, জেলে দিবে, ফাঁসি দিবে, নির্যাতন করবে, গুম করবে। কিন্তু তারা জানেনা যে, আমরা এমন ঘটনার সাথে আগেই পরিচিত। তারা জানেনা যে, তাদের কাফেলা আর আমাদের কাফেলা এক নয়। আমরাতো সেই সেই গর্তওয়ালাদের কাফেলার মানুষ। আমাদের আর তাদের মধ্যে তো সেই উপাদানটিই রয়ে গেছে যার জন্য তাদের পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। আর তা হচ্ছে -
"তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিলো শুধু এ কারণে যে, তারা প্রশংসিত, পরাক্রান্ত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল"
জালিমরা ভুল করলো। বড় ভুল করল! না তারা ইতিহাস পড়েছে, না তারা এ ব্যাপারে কিছু জেনেছে।
তাদের সামনে বালাম বাউরাদের যে দলটি আছে তাদের থেকে এ ব্যাপারে কেন জেনে নিলোনা যে, জালিম বাদশা যখন বালকটিকে হত্যা করেই ফেললো (আল্লাহর নাম নিয়ে, সে তো আল্লাহকে মানেনি, শুধুমাত্র নিজের গায়ের জ্বালা মেটানোর জন্যই তা করেছে, ভেবেছিলো সে খুব সফল হয়ে যাবে) তখন সবাই তাই মেনে নিলো যা থেকে সবাইকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য সে এতকিছু করল! কিন্তু সে সফল হতে পারলো কই?
কিংবা তাদের বালাম বাউরা রা এটাও বলে দেয়না কেন যে, ফিরাউনের জাদুকররা যখন জাদুর বান ছেড়ে দিলো তখন মূসা আঃ বলেছিলেন, আল্লাহ তো এই জালিমদের কাজ নষ্ট করেই দিবেন! আর জাদুকরদের সব জাদু শুন্য হয়ে গেলো আর তারা মুসলমান হয়ে গেলো ফিরাউনের সামনেই! তাহলে ফিরাউন সফল হতে পারলো কই?
এই বালাম বাউরা রা এটাও বলে দেয়না কেন যে, না পেরেছিলো নূহ আঃ এর কওম, না আদ জাতি, না সামুদ জাতি, না কওমে সালিহ, না ফিরাউন, না নমরুদ, না কারুন, না আবরাহা, না আবু জাহাল, না পেরেছিলো পারস্য সম্রাজ্য, রোম সম্রাজ্য! না পেরেছিলো রাশিয়া, না পারলো তাদের প্রভু যুগের হুবাল অ্যামেরিকা!
তাদের প্রত্যেকে সৈন্যসামন্তের সবটুকু শক্তি নিয়েই তো নেমেছিলো, কিন্তু পারলো কই?
তাই আজ আমরা তোমাদের ভয় পাইনা ইনশা আল্লাহ। কেন ভয় পাবো? তোমরা তো জাহান্নামের লাকড়ি!
যাও, বিশ্বাস না হলে তোমাদের বালাম বাউরাদের জিজ্ঞেস করে দেখো, তাগুত এবং তার সাহায্যকারী হিসেবে আমাদের অবস্থান কোথায়? আমি জানি সে সাহস তোমাদের হবেনা!
আল্লাহ তোমাদের চারদিক থেকে পরিবেষ্টন করে আছেন তা তোমরা টেরও পাওনা। চীন চেয়েছিলো আল্লাহর কালাম বদলে দিবে, ভেবেছিলো আল্লাহ তাদের ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন (নাউজুবিল্লাহ) কই তারা সফল হতে পারলো কই?
তোমরা খুব ভেবে নিয়েছো, তোমরা সফল হয়েই যাচ্ছো, কিন্তু তা হচ্ছে কই? নিজেদের প্রভুদের খুশি করার জন্য আল্লাহর হুকুম জিহাদকে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ বানিয়ে দিলে, সাথে তোমাদের বালাম বাউরা রাও খুব নেচে নিলো, মুজাহিদদের উপরে জুলুমের আর নির্যাতনের কোন সীমা রাখলেনা, কত চেস্টাই না করলে, কিন্তু সফলতা কই? হায়! আজ তো সবাই উগ্রবাদের দিকেই ঝুঁকে পড়ছে! না আমার কথা না, তোমাদের গবেষকদের কথা, দুনিয়ার বড় বড় গবেষকদের কথা!
তোমরা সফল হতে পারলে কই? আর পারবেও না। কেন জানো? কারণ আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে, তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন তাই এবং শুধু তাই নয় আল্লাহ এই ওয়াদাও করেছেন যে সবশেষে তিনি তোমাদেরকে জাহান্নামেই একত্রিত করবেন - তাই!
আমার প্রিয় দ্বীনের ভাই এবং বোনেরা, উজ্জীবিত হোন, আশাবাদী হোন, খুশি হোন, ঈমানের দীপ্তি আর বলিষ্ঠ পদক্ষেপে কদম উঠান বিজয়ের প্রতিশ্রুতির দিকে, সফলতার দিকে, আল্লাহর সন্তুস্টির দিকে, জান্নাতের দিকে! হায়! তারা আমাদের কিই বা করবে, তার যদি বুঝতো! আমাদের হত্যা করে ফেললে তো আমরা আল্লাহর সাথেই সাক্ষাতে চলে যাবো ইনশাআল্লাহ। হুর রা বসে আছে আমাদের অপেক্ষায়, অপেক্ষায় আছেন ফেরেশতাগন, অপেক্ষায় আছে আমাদের বালাখানা আর সেই মনোরম প্রাসাদ! সমস্ত কিছু তো শুধু আমাদের সেখানে প্রবেশের অপেক্ষায়!
আর তোমরা? পচে মর জাহান্নামে! জাক্কুম, কাঁটা আর গলিত, দুর্গন্ধ পুঁজের মধ্যে! এমনকি আল্লাহ পর্যন্ত তোমাদের সাথে সেদিন কোন কথা বলবেন না।
অভিশাপ তোমাদের উপরে যা করেছো তার জন্য! তোমরাও অপেক্ষা কর, আমরাও অপেক্ষায় আছি! জানো আল্লাহ কি বলেছেন?
ওয়াল আ'কিবাতু লিল মুত্তাকিন
Comment