ইয়া আল্লাহ আপনার প্রশংসা সহকারে শুরু করছি সেই সৃষ্টিকূলের সাথে যারা প্রতিনিয়ত আপনারই প্রশংশা করে যাচ্ছে, আপনার ই তাসবিহ পাঠ করে যাচ্ছে। ইয়া আল্লাহ নিশ্চয়ই আপনি আমাদের উপরে বড়ই অনুগ্রহ করেছেন কিন্তু আমরা নিজেদের উপরে বড়ই জুলুম করেছি।
দরুদ এবং সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সম্মানিত পরিবারবর্গের উপর।
-
তথাকথিত এক শ্রেণীর [আলিম দাবীকৃত] কিছু ব্যাক্তিদের থেকে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায় - ইসলামে গুপ্ত হত্যা হারাম, নিষিদ্ধ। এই কথার প্রেক্ষিতে তারা বিভিন্ন রকম দলিল দেয়ার চেষ্টা করেন যেগুলোর কোনটাই প্রাসঙ্গিক না আর যথার্থ তো অবশ্যই না!
আমি এটাকে বলি, আশে পাশে কোপানো। অর্থাৎ জেনে বুঝে এমন কথা বলতে থাকা এমন কাজ করতে থাকে যে উপস্থিত সাধারন মানুষ মনে করবে মা শা আল্লাহ কতবড় ফকিহ! ব্যখ্যা দেখেছো নাকি! কই কই ঘুরে আসলো! আমাদের অজ্ঞতার কারণে, আমরা হক্কপন্থী সহিহ আলিমদের কাছে আসা যাওয়া ছেড়ে দেয়ার কারনে আমাদের সামনে উনারা যেমন ইচ্ছা তেমন লাউ কদু দেখাতে থাকেন!
মূল কথায় ফিরে আসি -
ইসলামে গুপ্ত হত্যা হারাম, নিষিদ্ধ। এই কথাটি মিথ্যা কথা, শুধু মিথ্যা ই নয় বরং রাসুল সাঃ এর সিরাহকে, রাসুল সাঃ পবিত্র কাজকে মিথ্যা প্রমানের চেষ্টা করা। কিভাবে? কারণ রাসুল সাঃ এর পবিত্র সীরাহতে রাসুল সাঃ এর পবিত্র কাজের মধ্যেই আমরা গুপ্ত হত্যার বিষয়টি দেখতে পাই। সহিহ বুঝারী এবং মুসলিমের হাদিসে আমরা কাব বিন আশরাফ এবং আবু রাফে কে হত্যা করার বর্ণনা পাই।
حدثنا علي بن عبد الله، حدثنا سفيان قال عمرو بن دينار: سمعت جابر بن عبد الله يقول: قال رسول الله ﷺ: «من لكعب بن حدثنا علي بن عبد الله، حدثنا سفيان قال عمرو بن دينار: سمعت جابر بن عبد الله يقول: قال رسول الله ﷺ: «من لكعب بن الأشرف فإنه قد أذى الله ورسوله» فقام محمد بن مسلمة فقال: يا رسول الله أتحب أن أقتله؟
قال: نعم. قال: فأذن لي أن أقول شيئا، قال: قل فأتاه محمد بن مسلمة فقال: إن هذا الرجل قد سألنا صدقة، وإنه قد عنانا، وإني قد أتيتك أستسلفك.
قال: وأيضا، والله لتملنه.
قال: أنا قد اتبعناه فلا نحب أن ندعه حتى ننظر إلى أي شيء يصير شأنه، وقد أردنا أن تسلفنا.
قال: نعم، ارهنوني.
قلت: أي شيء تريد؟
قال: ارهنوني نساءكم.
فقالوا: كيف نرهنك نساءنا وأنت أجمل العرب؟
قال: فارهنوني أبناءكم.
قالوا: كيف نرهنك أبناءنا فيسب أحدهم فيقال رهن بوسق أو وسقين، هذا عار علينا، ولكن نرهنك اللأمة، قال سفيان: يعني السلاح، فواعده أن يأتيه ليلا، فجاءه ليلا ومعه أبو نائلة، وهو أخو كعب من الرضاعة فدعاهم إلى الحصن، فنزل إليهم فقالت له امرأته: أين تخرج هذه الساعة؟
وقال غير عمرو: قالت: أسمع صوتا كأنه يقطر منه الدم.
قال: إنما هو أخي محمد بن مسلمة، ورضيعي أبو نائلة، إن الكريم لو دعى إلى طعنه بليل لأجاب.
قال: ويدخل محمد بن مسلمة معه رجلين، فقال: إذا ما جاء فإني مائل بشعره فأشمه، فإذا رأيتموني استمكنت من رأسه فدونكم فاضربوه، وقال مرة: ثم أشمكم، فنزل إليهم متوشحا وهو ينفح منه ريح الطيب، فقال: ما رأيت كاليوم ريحا أي أطيب.
وقال غير عمر، وقال: عندي أعطر نساء العرب، وأجمل العرب.
قال عمرو: فقال: أتأذن لي أن أشم رأسك؟
قال: نعم، فشمه، ثم أشَمَّ أصحابه، ثم قال: أتأذن لي؟
قال: نعم، فلما استمكن منه قال: دونكم، فقتلوه ثم أتوا النبي ﷺ فأخبروه.
قال: نعم. قال: فأذن لي أن أقول شيئا، قال: قل فأتاه محمد بن مسلمة فقال: إن هذا الرجل قد سألنا صدقة، وإنه قد عنانا، وإني قد أتيتك أستسلفك.
قال: وأيضا، والله لتملنه.
قال: أنا قد اتبعناه فلا نحب أن ندعه حتى ننظر إلى أي شيء يصير شأنه، وقد أردنا أن تسلفنا.
قال: نعم، ارهنوني.
قلت: أي شيء تريد؟
قال: ارهنوني نساءكم.
فقالوا: كيف نرهنك نساءنا وأنت أجمل العرب؟
قال: فارهنوني أبناءكم.
قالوا: كيف نرهنك أبناءنا فيسب أحدهم فيقال رهن بوسق أو وسقين، هذا عار علينا، ولكن نرهنك اللأمة، قال سفيان: يعني السلاح، فواعده أن يأتيه ليلا، فجاءه ليلا ومعه أبو نائلة، وهو أخو كعب من الرضاعة فدعاهم إلى الحصن، فنزل إليهم فقالت له امرأته: أين تخرج هذه الساعة؟
وقال غير عمرو: قالت: أسمع صوتا كأنه يقطر منه الدم.
قال: إنما هو أخي محمد بن مسلمة، ورضيعي أبو نائلة، إن الكريم لو دعى إلى طعنه بليل لأجاب.
قال: ويدخل محمد بن مسلمة معه رجلين، فقال: إذا ما جاء فإني مائل بشعره فأشمه، فإذا رأيتموني استمكنت من رأسه فدونكم فاضربوه، وقال مرة: ثم أشمكم، فنزل إليهم متوشحا وهو ينفح منه ريح الطيب، فقال: ما رأيت كاليوم ريحا أي أطيب.
وقال غير عمر، وقال: عندي أعطر نساء العرب، وأجمل العرب.
قال عمرو: فقال: أتأذن لي أن أشم رأسك؟
قال: نعم، فشمه، ثم أشَمَّ أصحابه، ثم قال: أتأذن لي؟
قال: نعم، فلما استمكن منه قال: دونكم، فقتلوه ثم أتوا النبي ﷺ فأخبروه.
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বললেন, কা‘ব ইবনু আশরাফকে হত্যা করার জন্য কে প্রস্ত্তত আছ? কেননা সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি চান যে, আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, তাহ’লে আমাকে কিছু প্রতারণাময় কথা বলার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ বল। এরপর মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) কা‘ব ইবনু আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ লোকটি [রাসূল (ছাঃ)] ছাদাক্বা চায় এবং সে আমাদেরকে বহু কষ্টে ফেলেছে। তাই আমি আপনার নিকট কিছু ঋণের জন্য এসেছি। কা‘ব ইবনু আশরাফ বলল, আল্লাহর কসম! পরে সে তোমাদেরকে আরো বিরক্ত ও অতিষ্ঠ করে তুলবে। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, আমরা তাঁর অনুসরণ করছি। পরিণাম কি দাঁড়ায় তা না দেখে এখনই তাঁর সঙ্গ ত্যাগ করা ভাল মনে করছি না। এখন আমি আপনার কাছে এক ওসাক বা দুই ওসাক খাদ্য ধার চাই। কা‘ব ইবনু আশরাফ বলল, ধার তো পাবে তবে কিছু বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, কি জিনিস আপনি বন্ধক চান? সে বলল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ বললেন, আপনি আরবের একজন সুদর্শন ব্যক্তি। আপনার নিকট কিভাবে আমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখব? তখন সে বলল, তাহলে তোমাদের সন্তানদেরকে বন্ধক রাখ। তিনি বললেন, আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে আপনার নিকট কি করে বন্ধক রাখি? তাদেরকে এ বলে সমালোচনা করা হবে যে, মাত্র এক ওসাক বা দুই ওসাকের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। এটা তো আমাদের জন্য খুব লজ্জাজনক বিষয়। তবে আমরা আপনার নিকট অস্ত্রশস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। শেষে তিনি (মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ) তার কাছে আবার যাওয়ার ওয়াদা করে চলে আসলেন।
এরপর তিনি কা‘ব ইবনু আশরাফের দুধ ভাই আবূ নায়েলাকে সঙ্গে করে রাতের বেলা তার নিকট গেলেন। কা‘ব তাদেরকে দূর্গের মধ্যে ডেকে নিল এবং সে নিজে উপর তলা থেকে নিচে নেমে আসার জন্য প্রস্ত্তত হ’ল। তখন তার স্ত্রী বলল, এ সময় তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, এই তো মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ এবং আমার ভাই আবূ নায়েলা এসেছে। ‘আমর ব্যতীত বর্ণনাকারীগণ বলেন যে, কা‘বের স্ত্রী বলল, আমি তো এমনই একটি ডাক শুতে পাচ্ছি যার থেকে রক্তের ফোঁটা ঝরছে বলে আমার মনে হচ্ছে। কা‘ব ইবনু আশরাফ বলল, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ এবং দুধ ভাই আবূ নায়েলা (অপরিচিত কোন লোক তো নয়)। ভদ্র মানুষকে রাতের বেলা বর্শা বিদ্ধ করার জন্য ডাকলে তার যাওয়া উচিত। (বর্ণনাকারী বলেন) মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) সঙ্গে আরো দুই ব্যক্তিকে নিয়ে সেখানে গেলেন। সুফইয়ানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, ‘আমর কি তাদের দু’জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন? উত্তরে সুফইয়ান বললেন, একজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। ‘আমর বর্ণনা করেন যে, তিনি আরো দু’জন মানুষ সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন, যখন সে (কা‘ব ইবনু আশরাফ) আসবে। ‘আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ (মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামার সাথীদের সম্পর্কে) বলেছেন যে, (তারা হ’লেন) আবূ আবস্ ইবনু জাবর, হারিছ ইবনু আওস এবং আববাদ ইবনু বিশর। ‘আমর বলেছেন, তিনি অপর দুই লোককে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন এবং তাদেরকে বলেছিলেন, যখন সে আসবে তখন আমি তার মাথার চুল ধরে শুঁকতে থাকব। যখন তোমরা আমাকে দেখবে যে, খুব শক্তভাবে আমি তার মাথা অাঁকড়িয়ে ধরেছি, তখন তোমরা তরবারি দ্বারা তাকে আঘাত করবে। তিনি (মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ) একবার বলেছিলেন যে, আমি তোমাদেরকেও শুঁকাব। সে (কা‘ব) চাদর নিয়ে নীচে নেমে আসলে তার শরীর থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল। তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, আজকের মত এতো উত্তম সুগন্ধি আমি আর কখনো দেখিনি। ‘আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ বর্ণনা করেছেন যে, কা‘ব বলল, আমার নিকট আরবের সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সুগন্ধী ব্যবহারকারী মহিলা আছে। ‘আমর বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, আমাকে আপনার মাথা শুঁকতে অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। এরপর তিনি তার মাথা শুঁকলেন এবং এরপর তার সাথীদেরকে শুঁকালেন। তারপর তিনি আবার বললেন, ‘আমাকে আবার শুঁকবার অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। এরপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর। তাঁরা তাকে হত্যা করলেন। এরপর নবী (ছাঃ)-এর নিকট এসে এ খবর দিলেন।
[বুখারী হা/৪০৩৭ ‘মাগাযী’ অধ্যায়, ‘কা‘ব ইবনু আশরাফের হত্যা’]
কিতাবুল মাগাজির বর্ণনায় এনেছেন,
عن البراء بن عازب قال : بعث رسول الله صلى الله عليه و سلم إلى أبي رافع اليهودي رجالا من الأنصار فأمر عليهم عبد الله بن عتيك وكان أبو رافع يؤذي رسول الله صلى الله عليه و سلم ويعين عليه وكان في حصن له بأرض الحجاز فلما دنوا منه وقد غربت الشمس وراح الناس بسرحهم فقال عبد الله لأصحابه أجلسوا مكانكم فإني منطلق ومتلطف للبواب لعلي أن أدخل فأقبل حتى دنا من الباب ثم تقنع بثوبه كأنه يقضي حاجة وقد دخل الناس فهتف به البواب يا عبد الله إن كنت تريد أن تدخل فادخل فإني أريد أن أغلق الباب فدخلت فكمنت فلما دخل الناس أغلق الباب ثم علق الأغاليق على وتد قال فقمت إلى الأقاليد فأخذتها ففتحت الباب وكان أبو رافع يسمر عنده وكان في علالي له فلما ذهب عنه أهل سمره صعدت إليه فجعلت كلما فتحت باب أغلقت علي من الداخل قلت إن القوم نذروا بي لم يخلصوا إلي حتى أقتله فانتهيت إليه فإذا هو في بيت مظلم وسط عياله لا أدري أين هو من البيت فقلت يا أبا رافع قال من هذا ؟ فأهويت نحو الصوت فأضربه ضربة بالسيف وأنا دهش فما أغنيت شيئا وصاح فخرجت من البيت فأمكث غير بعيد ثم دخلت إليه فقلت ما هذا الصوت يا أبا رافع ؟ فقال لأمك الويل إن رجلا في البيت ضربني قبل بالسيف قال فأضربه ضربة أثخنته ولم أقتله ثم وضعت ظبة السيف في بطنه حتى أخذ في ظهره فعرفت أني قتلته فجعلت أفتح الأبواب بابا بابا حتى أنتهيت إلى درجة له فوضعت رجلي وأنا أرى أني قد أنتهيت إلى الأرض فوقعت في ليلة مقمرة فانكسرت ساقي فعصبتها بعمامة ثم انطلقت حتى جلست على الباب فقلت لا أخرج الليلة حتى أعلم أقتلته ؟ فلما صاح الديك قام الناعي على السور فقال أنعى أبا رافع تاجر الحجاز فانطلقت إلى أصحابي فقلت النجاء فقد قتل أبا رافع فانتهيت إلى النبي صلى الله عليه و سلم فحدثته فقال ( ابسط رجلك ) . فبسطت رجلي فمسحها فكأنها لم أشتكها قط
“হযরত বারা ইবনে আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহুদি আবু রাফের (হত্যার) উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে আনসারি কয়েকজন সাহাবিকে পাঠালেন। আবু রাফে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দিত এবং (মুশরিকদেরকে) তার বিরুদ্ধে সহায়তা করত। সে (খায়বারের কাছাকাছি) হিজায ভূমিতে তার একটি দূর্গে বাস করত। সাহাবায়ে কেরাম যখন তার দূর্গের কাছাকাছি পৌঁছলেন, ততক্ষণে সূর্য ডুবে গেছে এবং লোকজন তাদের পশুগুলোকে চারণভূমি থেকে বাড়ি নিয়ে এসেছে। আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সঙ্গীদের বললেন, তোমারা এখানেই বসে থাক। আমি যাই। দারোয়ানের সাথে কোন কৌশল করে ঢুকতে পারি কি’না দেখি।
তিনি দরজার কাছে পৌঁছলেন। পৌঁছে কাপড় মুড়ি দিয়ে এমনভাবে বসে গেলেন, যেন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করছেন। এতক্ষণে লোকজন দূর্গে ঢুকে গেছে। দারোয়ান আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ করে বলল, ওহে আল্লাহর বান্দা! ঢুকতে চাইলে ঢুক। আমি দরজা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছি।
আমি ঢুকে গেলাম। ঢুকে (আস্তাবলে) লুকিয়ে গেলাম। সবার ঢুকা শেষ হলে দারোয়ান দরজা বন্ধ করে দিল। চাবিগুলো একটি পেরেকে লটকিয়ে রাখল। তিনি বলেন, আমি চাবিগুলো নিয়ে নিলাম। দরজা খুললাম। আবু রাফের অভ্যাস ছিল, রাতে তার কাছে খোশ-গল্পের আসর বসত। সে দূর্গের উপরের তলায় থাকত। তার গল্পের সঙ্গীরা যখন চলে গেল, আমি সিঁড়ি বেয়ে উপর তলায় উঠলাম। আমি যে দরজাই খুলতাম, ভিতর থেকে লাগিয়ে দিতাম; এই ভেবে যে, যদি লোকজন আমার ব্যাপারে টের পেয়ে যায়, তাহলে হত্যা করে শেষ করা পর্যন্ত যেন তারা আমার কাছে পৌঁছতে না পারে। আমি তার কক্ষে পৌঁছলাম।
(অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি গিয়ে আবু রাফেকে ডাক দেন। তার স্ত্রী জিজ্ঞেস করে, তুমি কে? তিনি জওয়াব দেন, আমি আবু রাফের জন্য একটু হাদিয়া নিয়ে এসেছি। এতে স্ত্রী দরজা খোলে দেয়।) সে অন্ধকার কক্ষে তার পরিবারের লোকদের মাঝখানে শুয়ে ছিল। বুঝতে পারছিলাম না যে, ঠিক কোথায় সে। ডাক দিলাম, আবু রাফে! সে জওয়াব দিল, এই লোক কে? আমি আওয়াজটা লক্ষ করে তরবারি চালালাম। আমার তখন দিশেহারার মতো অবস্থা। কিন্তু না! কোন কাজ হল না। উল্টো সে চিৎকার দিয়ে উঠল।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। অল্প কিছুক্ষণ পর আবার গেলাম। (গলার স্বর পরিবর্তন করে যেন আমি তাকে সাহায্য করতে এসেছি এই ভান করে) বললাম, ‘আবু রাফে! আওয়াজ কিসের’? সে উত্তর দিল, ‘তোমার মায়ের সর্বনাশ হোক! এই মাত্র কক্ষে এক ব্যক্তি আমাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করেছে’। তিনি বলেন, এবার আরেকটা কোপ দিলাম। এতে সে মারাত্মক জখম হল। কিন্তু হত্যা করতে পারলাম না। এরপর আমি তরবারির ধারালো দিকটা তার পেটের উপর ধরে সজোরে চাপ দিলাম। একেবারে পিটে গিয়ে ঠেকল। বুঝতে পারলাম, হত্যা করতে পেরেছি।
তারপর একেক করে দরজাগুলো খুলতে লাগলাম। আসতে আসতে একটা সিঁড়িতে এসে পা রাখলাম। (আমি চোখে একটু কম দেখতাম।) রাত ছিল চাঁদনী। মনে করেছি (সব সিঁড়ি শেষ) নিচে এসে গেছি। (কিন্তু তখনও একটি সিঁড়ি বাকি ছিল)। আমি পড়ে গেলাম। পড়ে গিয়ে পায়ের গোছার হাড় ভেঙে গেল। পাগড়ি খোলে পা বেঁধে নিলাম।
সেখান থেকে এসে দরজার নিকট বসে রইলাম। বললাম, হত্যা করতে পেরেছি কি’না জানা পর্যন্ত আজ রাতে আর বের হচ্ছি না। যখন (ভোর হল এবং) মোরগ ডাকতে লাগল, তখন ঘোষক প্রাচীরের উপর উঠে ঘোষণা দিল, ‘আমি ঘোষণা দিচ্ছি যে, হিজাযের ব্যবসায়ী আবু রাফে মারা গেছে’।
ঘোষণা শুনে (নিশ্চিত হয়ে) আমার সঙ্গীদের নিকট এলাম। বললাম, তাড়াতাড়ি পালাও। আল্লাহ তাআলা আবু রাফেকে হত্যা করেছেন। (এরপর আমরা দিনের বেলা লুকিয়ে থাকতাম আর রাতের বেলা পথ চলতাম। এভাবে খায়বার থেকে মদীনায় উপস্থিত হলাম।) তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে ঘটনার বিবরণ শুনালাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, তোমার পা এদিকে বাড়াও দেখি। পা বাড়িয়ে দিলাম। তিনি পায়ে হাত বুলিয়ে দিলেন। এমনভাবে ভাল হয়ে গেলাম, যেন কখনও কোন ব্যথাই পাইনি।”- সহীহ বুখারি: ৩৮১৩, কিতাবুল মাগাজি।
লক্ষ্য করুন প্রথম হাদিসে "মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ রাঃ রাসুল সাঃ কে জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি চান যে, আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ।" রাসুল সাঃ হ্যা বলেছেন, রাসুল সাঃ এই গুপ্ত হত্যার ব্যাপারে হ্যা বলেছেন।এর পরের হাদিসে আবু রাফের (হত্যার) উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে আনসারি কয়েকজন সাহাবিকে পাঠালেন।
এরপরেও যখন বলা হয় ইসলামে গুপ্ত হত্যা নিষিদ্ধ তখন এর দ্বারা তারা কি প্রমান করতে চান? আমরা নিজে থেকে কিছু বানাইনি আর রাসুল সাঃ আমাদের জন্য এই কাজ নিষিদ্ধ করে যাননি তাহলে তাদের নিকট আমার প্রশ্ন - " ইসলামে গুপ্ত হত্যা নিষিদ্ধ" এ দ্বারা আপনারা আমাদের কি বুঝাতে চান?
বর্তমান সময়ে ড্রোন হামলার কথা জানেনা এমন মানুষ খুব কমই আছে। প্রতিনিয়ত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সোমালিয়া, লিবিয়া এমন মুসলিম দেশগুলোতে ড্রোন হামলায় হাজার হাজার নিরীহ মুসলিম নারী পুরুষ শিশু নিহত হচ্ছে! হতেই থাকছে। আজ পর্যন্ত কেউ এই ড্রোন হামলা নিয়ে কোন কথা বলেনা।
ড্রোন হামলার ৯০% টার্গেট হচ্ছে নিরীহ জনগন, যার মধ্যে আছে নারী পুরুষ এমনকি অসহায় শিশু! আমি যা বললাম শুধু মাত্র এই একটি লাইন বিশ্ব মিডিয়ার শিরোনাম হয়ে এসেছে। এভাবে বললেও মিথ্যা হবেনা যে, অ্যামেরিকার এই ভয়ঙ্কর খেলার শিকার হচ্ছে - ৯০% নিরীহ মানুষ!
শুধুমাত্র পাকিস্তানে ২০০৪ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সর্বমোট নিহতের সংখ্যা ২৫৩৭ থেকে ৩৬৪৬ এবং আহতের সংখ্যা - ১১২৮ থেকে ১৫৫৭ জন। এর মধ্যে - শিশুর সংখ্যা ২০০। সধারন নাগরিক - ৪১৬ থেকে ৯৫১। এবং অজানা - ১৯০৪ থেকে ২৪৪৬। অজানা অর্থ হচ্ছে - এই নিহতদের দেহ এমন পর্যায়ে বিকৃত বা ধংশ হয়ে গেছে যে তা বুঝার কোন উপায় নেই, তারা কে, বা কেমন? আর সমস্ত আহত নিহতের মধ্যে তাদের দাবীকৃত টার্গেট ছিলো মাত্র ৪৯ জন!
এ তো জানলেন শুধুমাত্র পাকিস্তানের ঘটনা। এবার আফগানিস্তানের ব্যাপারেও জেনে নিন। শুধুমাত্র ২০১৯ সালে আফগানিস্তানে সর্বমোট ৬৮২৫ টি ড্রোন স্ট্রাইক চালানো হয়েছে! তাহলে পাকিস্তানের হিসাব থেকে আফগানিস্তানের আহত নিহতের একটা ধারনা করে নেন!
তাগুত আল সাউদ নির্বিচারে ইয়েমেনে অসহায় মুসলিম নারী শিশুদের পাইকারী হারে হত্যা করছে এ নিয়ে কেউ ফাতওয়া দেয়না! অথচ মুসলিমের রক্ত ঝরানো যে কত বড় পাপ তা কল্পনা করাও মুশকিল! কাফের মুরতাদ এবং রাসুল সাঃ এর অবমাননাকারী জাহান্নামের কীটদের গুপ্ত হত্যা করা হলে ইনারা খুব আহত হোন সাথে সাথে ইসলামের শান রক্ষার্থে বয়ান দেয়া শুরু করেন কিন্তু অপর দিকে যখন মুসলিম নামধারী এই তাগুত রা ইসলামের নাম নিশানাই মিটিয়ে দিচ্ছে তখন তাদের মোটেও খুজে পাওয়া যায়না!
মনে রাখবেন, গুপ্ত হত্যা নিহত হয় খুব বেশী ১,২,৩ কিংবা ১০০ যারা কাফের কিংবা অধিকাংশই কাফের। আর তখন আপনাদের জবান খুলে যায়। অপর দিকে তগুতের জুলুমে নিহত হয় হাজার হাজার কিংবা লক্ষ লক্ষ মুসলিম নারী, শিশু এবং পুরুষ। তখন কেন আপনাদের আমরা খুঁজে পাইনা!
আমাদের মত কানাকে হাইকোর্ট হয়ত দেখাতে পারবেন - কিন্তু আস সামি ওয়াল বাসির কে পারবেন কি!
Comment