জিহাদের বিভিন্ন সন্দেহ নিরসন
শাইখ ইউসূফ আল উয়ায়রী’র লেখা “ছাওয়াবিত আ’লা দারব-আল-জিহাদ”- বইটির সম্পাদকীয়ঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আস্সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আলহামদুল্লিাহ, আল্লাহ্ আমাদের এই বইটি সেই সব মু’মিনদের উপহার দেবার সুযোগ করে দিয়েছেন, যারা আল্লাহর সেই আহবানে সাড়া দিয়েছে অথবা দিতে চাচ্ছে, যখন আল্লাহ্ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ * تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ * يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
“হে মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেএবং আল্লাহর পথে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য। এবং আরও একটি অনুগ্রহ দিবেন, যা তোমরা পছন্দ কর। আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন।”( সুরা আস-সফঃ ১০-১২)
“ছাওয়াবিত আ’লা দারব-আল-জিহাদ”- বইটি জিহাদ বিষয়ক সমসাময়িক বইগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটা শাইখ ইউসূফ আল উয়ায়রী’র লেখা। তিনি অত্যন্ত অল্প বয়সে স্বদেশ ছেড়ে আফগানিস্তানে গিয়ে রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। যারা তাকে ভালভাবে চিনতো, তাদের বর্ণনা মতে তিনি তীক্ষ বুদ্ধির অধিকারী ছিলেন। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, যুদ্ধ ময়দানে ব্যবহৃত যেকোন অস্ত্র সম্বন্ধে তার অসমান্য দক্ষতা ছিল এবং এসব অস্ত্রচালনা ও প্রশিক্ষণে তিনি ছিলেন সুদক্ষ।
পরে তিনি আরব ভূমিতে ফিরে এসে চেচনিয়ার (শীশান) মুজাহিদদের সাহায্য করেন এবং তাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন । সময় অতিবাহিত হল, তিনি এক সময় গ্রেফতার হলেন এবং কয়েক বছর জেলেও ছিলেন। জেলে থাকাবস্থায় তিনি বুখারী ও মুসলিম শরীফ মুখস্ত করেন। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি কতগুলো বই লিখেন যার প্রতিটি এক একটি কালজয়ী এবং মহামূল্যবান। তার বইয়ে যেমন কুরআন ও সুন্নাহর উল্লেখ থাকে, তেমনি বর্তমান সময়ের ঘটনাবলীর উল্লেখও রয়েছে। তিনি পরে আরব ভূমিতে ত্বগুতের গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে নিহত হন। আমরা আল্লাহর কাছে দো‘আ করি, যেন উনি শহীদ হিসেবে গণ্য হন। আমীন।
ইমাম আনওয়ার আল-আওলাকি লেকচার সিরিজের মাধ্যমে এ বইটিকে নতুন ভাবে উপস্থাপন করেন। এটা আমাদের বর্তমান সময়ের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট বিস্তারিত একটা লেকচার সিরিজ, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী। কেননা, এখন কোন খিলাফাহ নেই এবং অনেক মুসলিমই দাবী করছে যে, “এখন জিহাদের সময় না”, তাছাড়া যদিও কিছু মুসলিম এটা বুঝে যে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা আমাদের কর্তব্য, অধিকাংশ মুসলিম ও ইসলামী আন্দোলন দুঃখজনকভাবে পাশ্চাত্য দৃষ্টিকোণ থেকে দ্বীনকে বোঝার চেষ্টা করে। জিহাদের ধারণাটা আসলে এমন হয়েছে যে, এখানে জিহাদ করাটা “ভীষণ বিপজ্জনক!” তাদের আসলে আল্লাহর উপর ভরসা নেই এবং অনেক মুসলিমই প্রচার করে যে, আমাদের আরও ঈমান ও ইয়াক্বীন দরকার। বাস্তবিক অর্থে, যখন বান্দা আল্লাহকে খুশি করার জন্য এক কদম আগায়, আল্লাহর উপর তার ভরসা আরও শক্তিশালী হয়। কেননা, হাদীসে কুদসী থেকে আমরা জানি যে, ‘বান্দা যখন আল্লাহর দিকে এক কদম এগোয়, আল্লাহ তখন তার দিকে বহু কদম এগিয়ে আসেন।’ এছাড়া জিহাদ বলতে তারা অন্য আর যেকোন কিছুর চেয়ে অন্তরের সংগ্রামই বেশি বুঝে থাকে। যদিও এটা ভাষাগত দিক থেকে ঠিক, তথাপি তা জিহাদের একটি ঘুড়ানো-প্যাচানো এবং বিকৃত ধারণা। যাই হোক, ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে জিহাদ হচ্ছে আল্লাহর জন্য লড়াই করা (জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ)।
ইসলাম আসার পূর্বেও আরবরা সলাত শব্দটি ব্যবহার করত, এর অর্থ ছিল তখন দো‘আ (প্রার্থনা) করা। কিন্তু যখন ইসলাম আসল, এর অর্থ পরিবর্তিত হয়ে আমাদের এই অতিপরিচিত ইবাদত (নামায) হল, যদিও এর ভাষাগত অর্থ: প্রার্থনাই রয়ে গেল। এই একই নীতি জিহাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আগে এর সাথে আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করার কোন ব্যাপারই জড়িত ছিল না, কিন্তু যখন ইসলাম আসল, তখন স্পষ্টতই ইসলাম এর অর্থ পরিবর্তন করে দিল। কেউ হয়ত যুক্তি দেখাবে যে, আল কুরআনে জিহাদ‘ ’ শব্দটি ‘চেষ্টা সাধনা’ করার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সত্যিই, কুরআনে এমন বহু আয়াত রয়েছে। কিন্তু আমরা আগেই বলেছি, জিহাদের সামগ্রিক প্রয়োগ পরিবর্তিত হয়েছে, যদিও এর ভাষাগত অর্থ একই রয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, আবু হুরায়রা(রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূলﷺ বলেন, “যে কেউ কোন গায্ওয়া (জিহাদ)-তে অংশগ্রহণ না করেই মৃত্যু বরণ করে অথবা এমন (অংশগ্রহণের) ইচ্ছাও পোষণ না করে, সে নিফাকের একটি শাখার উপর মৃত্যু বরণ করল।” (সহীহ মুসলিম)
তিনি কি এখানে “নাফ্সের বিরুদ্ধে জিহাদ” -এর কথা বলেছেন? মোটেও না। আরেকটি উদাহরণ দেখুনঃ আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার থেকে বর্ণিত, আমি আল্লাহর রসূলﷺ কে বলতে শুনেছি, “যখন তোমরা ব্যবসা-বাণিজ্যে মশগুল হয়ে যাবে, ষাড়ের লেজ আকড়ে ধরে থাকবে, কৃষিকাজে সন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং জিহাদ পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তোমাদের উপর অবমাননা বিস্তার করে দিবেন এবং ততক্ষণ পর্যন্ত তা সরাবেন না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রকৃত দ্বীনে (সত্যিকার ইসলাম) ফিরে আসবে।” (আবু দাউদ ২৩ / ৩৪৫৫)
এখানে জিহাদ অর্থ যুদ্ধ নয়,বরং সংগ্রাম করা এমনটি বলার কোন মানে হয় কি? এই হাদীস আমাদের জিহাদ পরিত্যাগ করার পরিণতি কি তা জানিয়ে দেয়। আজ আমরা জিহাদের আক্বীদা বিকৃত করে একে কেবল“নাফ্সের বিরুদ্ধে জিহাদ” পর্যায়ে নামিয়ে এনেছি। খুব সামান্যই এর দ্বারা আমরা যুদ্ধ করা বুঝাই। ফলস্বরূপ,আমরা অবমাননায় নিমজ্জিত আছি। অবমাননা মানে কি তা আর আজ বলে দিতে হবে না। অতীত থেকে এমনটিই হয়ে আসছে। এই দ্বীন কেবল তখনই সবকিছুর উপর প্রভাবশালী হবে, যখন আমরা ইসলাম ঠিক সেভাবেই পালন করব, যেভাবে পালিত হবার জন্য তা প্রেরিত হয়েছিল, আর তা হচ্ছে ইমাম থাকুক বা না থাকুকজিহাদ চালিয়ে যাওয়া। এই হাদীসটি আরেকটি বিষয়কে প্রমাণ করে যে, আমাদের ‘বেসামরিক’ লোকের মত জীবনযাপন ত্যাগ করে সৈন্যদের জীবনযাত্রা বেছে নেয়া উচিত। এটা এই বইয়ে আরও স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে।
আবু হুরায়রা(রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল “জিহাদের সমতূল্য কোন আমল আছে কি?”তিনি উত্তর দিলেনঃ “হ্যা, তবে তোমরা তা করতে পারবে না” এভাবে দুইবার বললেন। তৃতীয়বার তিনি বললেনঃ“মুজাহিদের সমতূল্য হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে মুজাহিদ ফিরে না আসা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে সাওম ও সলাত পড়তে থাকে।” (সহীহ মুসলিম)
অন্য কথায়, সে যুদ্ধ থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত ....। এখানে “নাফসের বিরুদ্ধে জিহাদ” থেকে ফিরে আসা মোটেও অর্থবোধক হয় না। এছাড়াও আমরা যদি জিহাদের উপর পূর্ববর্তী আলিম ও শ্রেষ্ঠ ফিকাহ শাস্ত্রের দিকে নজর দেই তবে দেখি যে, তারা এগুলোকে “কিতাব- আল-ক্বিতাল” না বলে “কিতাব-আল-জিহাদ” বলেছে; যেমন ইবন কুদামাহ’র আল-মুগনী, ইমাম শাফিঈ’র আল-উম্ম, ইমাম মালিকের আল-মুদাওয়ানাহ, আল খারশী, অলায়শ ও আল হাতাবের মুখতাসার, খালিলের তিনটি ব্যাখ্যা, ইবনে হাযমের সুবুল আস সালাম, নায়ল আল আওতারের আল-মুহাল্লা, ইবনে তাইমিয়্যাহর আল ফাতওয়া আল কুবরা প্রভৃতি।
কুফ্ফাররা এই দ্বীনের সবকিছুর মধ্যে জিহাদকেই সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে। আমাদের সলাত পড়া বা রমাদানে সীয়াম রাখা নিয়ে ওদের কোন মাথা ব্যাথা নেই, কেবল এই জিহাদ তাদের অন্তরকে প্রকম্পিত করে। আজকের দিনে খবরে “জঙ্গীবাদ” শব্দটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জিহাদের ব্যাপারেই ব্যবহৃত হয়। এটা মুসলিমীনদের ভয় দেখিয়ে তাদের সইে কর্তব্য থেকে দূরে ঠেলে দেয়, যে ব্যাপারে আল্লাহ বলেনঃ
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
“তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হল, যদিও তোমাদের নিকট তা অপছন্দনীয়। কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ কর, সম্ভবত তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস, সম্ভবত তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ্ জানেন আর তোমরা জান না।” (সূরা আল-বাকারাঃ ২১৬)
নিম্ন লিখিত হাদীসগুলো যেকোন সত্যিকার ঈমানদার বা মু’মিনকে এটা স্বীকার করাতে যেথষ্ট যে, জিহাদই ইসলামের চূড়াএবং তা কেবল কিছু একটা (খিলাফাহ) অর্জনের জন্য কোন কৃতকাজ নয়। রমাদানে রোযা রাখার মত এটাও একটা ফরয ইবাদত।
মুয়ায ইবনে জাবাল(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তাবুক থেকে ফিরবার পথে আমরা রাসূসূল্লাহ্ ﷺ সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ “তুমি চাইলে আমি তোমাকে একটি বিষয়ের প্রধান, এর স্তম্ভ ও এর চূড়া সম্বন্ধে বলতে পারি।” আমি বললামঃ “জী, ইয়া রাসূসূল্লাহ্ ﷺ,” তিনি বললেন, “ইসলাম হচ্ছে বিষয়টির প্রধান, সলাত হচ্ছে স্তম্ভ এবং জিহাদ হচ্ছে এর চূড়া।” (সহীহ্ বুখারী- ভলিয়ম-৪, বই-৫২, নং-৪৪)
সালামাহ বিন নুফাইল(রাঃ) বলেছেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ -র সাথে বসে ছিলাম, তখন এক ব্যক্তি এসে রসূলﷺ-কে বলল, “ইয়া রাসূসূল্লাহ্! ঘোড়াগুলোকে অপমানিত করা হচ্ছে, অস্ত্রসমূহ নামিয়ে রাখা হচ্ছে এবং মানুষজন দাবী করছে ,যেআর কোন জিহাদ নেই ও যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে।” রসূল ﷺ বললেনঃ “তারা মিথ্যা বলছে! যুদ্ধ তো কেবল শুরু হল। যুদ্ধ তো কেবল শুরু হল। আমার উম্মাহর একটি অংশ সত্য পথের উপর যুদ্ধ করতে থাকবেএবং আল্লাহ্ কিছু কিছু মানুষকে পথভ্রষ্ট করে তাদের জন্য যোদ্ধা সরবরাহ করতে থাকবেন, যতক্ষণ না কিয়ামত উপস্থিত হয় এবং আল্লাহর ওয়াদা পূর্ণ হয়। আর বিচার দিবস পর্যন্ত ঘোড়ার কপালেই কল্যাণ থাকবে। আমার প্রতি নাযিল হয়েছে যে, আমি খুব শীঘ্রই তোমাদের ছেড়ে চলে যাব এবং তোমরা একে অপরের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় আমার অনুসরণ করবে, আর ঈমানদারদের জায়গা হবে আশ্-শাম।” (আশ-শাম মানে সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন ও জর্ডান। এর দ্বারা এ দেশগুলোর পুরোটা বা কোন অংশ বুঝাতে পারে। এটি ইমাম আন- নাসাঈ হতে বর্ণিত এবং হাসান।)
আল সিন্দি, আন নাসাঈ’র মন্তব্যে বলা হয়েছে যে, “ঘোড়াদেরকে অপমানিত করা হচ্ছে।” এর অর্থ হচ্ছে এদের অবজ্ঞা করা বা এদের প্রয়োজনীয়তাকে ছোট করে দেখা বা যুদ্ধের জন্য এদেরকে ব্যবহার না করা। “যুদ্ধ তো কেবল শুরু হল, যুদ্ধ তো এখন কেবল শুরু হল।” (কথাটির) পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে এই বার্তার গুরুত্ব বোঝান হচ্ছে এবং এর অর্থ হচ্ছে যুদ্ধ তো কেবল বৃদ্ধি-ই পাচ্ছে এবং এর বিধান তো আল্লাহ্ মাত্রই দিলেন, এত শীঘ্রই তা কিভাবে শেষ হয়ে যাবে? অথবা এর অর্থ হতে পারে আসল যুদ্ধ তো কেবল শুরু হল, কারণ এতদিন তারা কেবল নিজেদের এলাকায়ই যুদ্ধ করেছে, কিন্তু এখন এই যুদ্ধকে দূর দূরান্তে নিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে।
“আল্লাহ্ কিছু মানুষের মনকে সঠিক পথ হতে বিচ্যুত করে দিবেন” -এর অর্থ আল্লাহ্ সবসময়ই ঈমানদারদের এই দলকে যুদ্ধ করার জন্য মানুষের যোগানদিবেন, এমনকি কিছু মানুষের মনকে ঈমান থেকে কুফর এর দিকে নিয়ে গিয়ে হলেও। অথাৎ আল্লাহ এই সকল ঈমানদারদের আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার সম্মানে সম্মানিত করবেন এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তাদেরকে পরিতুষ্ট করবেন।
“ঘোড়ার কপালেই কল্যাণ (লেখা) রয়েছে” এর অর্থ পুরষ্কার ও গণীমত অথবা সম্মান ও গর্ব। “আশ-শাম হচ্ছে ঈমানদারদের আবাসস্থল”এটা শেষ সময়ের দিকে ইঙ্গিত করে। ঐ জায়গা মুসলিমদের অর্থাৎ ইসলামের শক্তির কেন্দ্র হবে এবং ওটাই হবে জিহাদের ভূমি।
যায়েদ ইবনে আসলাম (রাঃ), তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “যতক্ষণ পর্যন্ত আসমান থেকে বৃষ্টির ফোটা পড়বে, ততক্ষণ পর্যন্তই সতেজ ও (চির) সবুজ রূপে জিহাদ চলবে । আর মানুষের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন তাদের মধ্যকার কুরআন তিলাওয়াতকারীরা বলবেঃ ‘এখন জিহাদের সময় নয়’ অতএব, যে কেউ সেই সময়ে থাকবে, জিহাদের জন্য সেটা সর্বোত্তম সময়।” তারা বললঃ “ইয়া রাসুলুল্লাহ! সত্যই কি কেউ এমন বলবে?” তিনি বললেনঃ “হ্যা, তার উপর আল্লাহর লা’নত এবং ফেরেশতাকূল ও সমগ্র মানবজাতির লা’নত ।” (উসূল-আস সুন্নাহ মুরসালানে ইবনে যামনীন কর্তৃক বর্ণিত এবং আনাস(রাঃ) থেকে ইবনে আসাকির মারফুয়ান কর্তৃক বর্ণিত।)
যে কেউ এই হাদীসটি পড়ে সেই অভিভূত হয়। বর্তমানে অনেকেই বলে, “এখন জিহাদের সময় নয়”। যুদ্ধের ময়দানে না যাওয়ার এটা একটা বিশ্বজনীন, ঐতিহাসিক অজুহাত, এমনকি রাসূলেরﷺ সময়ও তাই ছিল। তথাপি, রসূলﷺ বলেছেন “এটাই জিহাদের সর্বোত্তম সময়”, জিহাদ বিচার দিবসের আগ পর্যন্ত চলতে থাকবে। এই বইটি পড়ার সাথে সাথে এ ব্যাপারটি আমরা আরও ভালভাবে বুঝতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “ফিতনা আসছে। ফিতনা হচ্ছে অন্ধকার রাতের অংশের মত। (ফিতনা থেকে) সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে নিজের মেষপাল নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় আশ্রয় নেয় অথবা যে ব্যক্তি তলোয়ার নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বসে।”
সুবহানাল্লাহ্, প্রথমত আমরা এই পশ্চাতে বসে থেকে কি করছি? মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে দাজ্জালী সমাজ ব্যবস্থা থেকে দূরে থেকে একাকী আল্লাহর ইবাদত করে অথবা যে ব্যক্তি তলোয়ার নিয়ে লড়াইয়ের জীবন বেছে নিয়েছে অথবা যে জিহাদী জীবন যাপন করছে, এগুলোর মধ্যবর্তী আর কিছুই নেই। কেউ কেউ দা’ওয়াহ দেয়ার অজুহাত পেশ করে, যা শরীয়াহ অনুযায়ী একটা যৌক্তিক কারণ হতে পারে। অথচ দা’ওয়াহ মানে নূহ এর দাওয়াহ, যা প্রকৃতপক্ষে ছিল দিনে রাতে প্রতিনিয়ত আল্লাহর দ্বীন প্রচার করা। যে কারণেই হোক ঐসব মুসলিম, যাদেরকে আমীরুল মু’মিনীন কুফ্ফারদের ভূমিতে আক্রমণ করতে বলেছিলেন, তারা বর্তমান সময়ের কোন সাধারণ মুসলিম না; বরং তারা ছিলেন মুসলিমদের মধ্যে সর্বোত্তম, সর্বোৎকৃষ্ট এবং বেশির ভাগ ক্ষত্রেইে তারা ছিলেন প্রকৃত আলিম। কুফ্ফারদের দেশে থাকাটাই আমাদের জন্য ন্যায় সঙ্গত নয়। আর কোন আমীর আমাদের দা’ওয়াহ দেয়ার জন্য এখানে থাকতে নির্দেশ দেননি। দাওয়াহর ক্ষেত্রে আমরা কি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছি? আমরা কুফ্ফারদের পথ, সংস্কৃতি সবই গ্রহণ করেছি এবং এর পক্ষে আমাদের যুক্তি হচ্ছে যে, ইসলামকে আমরা তাদের জন্য গ্রহণযোগ্য করে উপস্থাপন করছি। সাহাবা ও পূর্ববর্তী সালাফগণ কি তাই করেছিলেন? কুফ্ফাররা যেসবের পিছনে ছুটত, তারাও কি সেসবের পিছনে ছুটতেন? সাধারণ কাফিরের ন্যায় তারা কি দুনিয়ার মধ্যেই নিমজ্জিত থাকতেন? বরং তাদের পোশাকও তো কুফফারদের মত ছিল না। তারা সমাজে সর্বদা আলাদা-ই ছিলেন। পাশ্চাত্যে দাওয়াহ প্রচার করা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নয়। বরং নিজেদের মুসলিম ভূমিগুলোকে প্রতিরক্ষা করাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশেষ করে যখন জিহাদ ফারদ-আল-‘আইন হয়ে গেছে। যে কোন উপায়ে এসব কুফ্ফারদের দেশ ত্যাগ করে নিজের দেশে জিহাদের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে মুসলিমদের সাধ্যমত সাহায্য করা উচিত।
রসূলﷺ বলেছেনঃ “যে কেউ মুশরিকের সাথে যোগ দেয় এবং তার সাথে বসবাস করে, সে তার-ই মত।” (আবু দাউদ, আত-তিরমিযী)
জাবির (রাঃ) বলেছেন যে, রসূলﷺ বলেনঃ “আমি সেই সব মুসলিম থেকে মুক্ত, যারা মুশরিকদের মাঝে বসবাস করে।” আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, “কেন ইয়া রাসুলুল্লাহ ﷺ?” তিনি জবাব দিলেনঃ “তাদের আগুন একে অপরের দৃষ্টিগোচর হওয়া উচিত না।” (আবু দাউদ)
কেউ কেউ হয়ত তর্ক করবে, “আমার জন্ম তো পশ্চিমে, তো আমি কোথায় যাব বা কি করব?” যদি আপনি এ ব্যাপারে অবগত থাকেন যে, পাশ্চাত্য অন্য সাধারণ কোন কুফ্ফার দেশের মত নয়, বরং তারা বাস্তবিকই মিডিয়ায় এবং যুদ্ধ ময়দানে ইসলামের বিরূদ্ধে লড়ছে, তবে আপনার কর্তব্য হচ্ছে, হয় তলোয়ার দিয়ে তাদের সাথে লড়া অথবা সম্ভব হলে কোন মুসলিম দেশে চলে গিয়ে জিহাদ করা।
কেউ কেউ হয়ত তর্ক করবে “আমরা ধর্মীয় নির্যাতন থেকে বাচাঁর জন্য এখানে এসেছি। এখানে অনেক বেশি স্বাধীনতা।” এটা কুফ্ফারদের দেশে আসার কোন অজুহাত হতে পারেনা। প্রথমত, “দেশ কখনই কাউকে পূর্ণাঙ্গরূপে ইসলাম পালন করতে দেয় না। তারা কি জিহাদ করতে দেয়? তারা কি আল্লাহর হুদুদ কার্যকর করতে দেয়? তারা কি জনসম্মুখে মুজাহিদ ও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারীদের নিন্দা করতে দেয়? যদি না হয়, তবে আমরা কি ধরনের ইসলাম পালন করছি? আল্লাহ্ বলেনঃ
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ الْعَذَابِ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
“...তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠিনতর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। তারা যা করে আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অনবহিত নন।” (সূরা আল বাকারাঃ৮৫)
দ্বিতীয়ত, যদি স্বদেশে নির্যাতন করা হয়, তবে ঐসব অত্যাচারীদের বিরূদ্ধে জিহাদ করা উচিত যারা কুফর কার্যকর করে, তাদের বশ্যতা কিছুতেই স্বীকার করা উচিত নয়।রসূলﷺ বলেনঃ “আল্লাহর পথে সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে, কোন অত্যাচারী শাসকের সামনে হক্ব কথা বলা।” (সূনান আবু দাউদ, বই ৩৭, নং: ৪৩৩০)
রাসুলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করা হয় যালেম শাসকদের সম্পর্কে, “আমাদের কি সে সময় তাদের প্রতিহত করা উচিত নয়?” তিনি ﷺ বলেন, “না, যতক্ষণ না তারা তোমাদের মাঝে সলাত প্রতিষ্ঠিত করবে।” অর্থাৎ যতদিন তারা ইসলাম দ্বারা শাসন করবে। উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) রাসুলুল্লাহ ﷺ এর কাছ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, “তোমরা শাসকদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের সুস্পষ্ট কুফরে সাক্ষী হও যার জন্য তোমার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে চূড়ান্ত প্রমাণ থাকবে।” (তিরমিযী, আহমদ)
আসুন এক মূহুর্তের জন্য শরীয়াহকে রেখে যুক্তি দিয়ে চিন্তা করি। তখন কি হবে যখন কাফিরদের ভূমিতে বসবাসরত তোমার শিশুরা থাকবে; যেখানে দিনে-রাতে কুফর প্রচারিত বা প্রসারিত হয় এবং তা ভাল হিসেবে দেখা হয়? তখন কি হবে যখন তোমার শিশুদের হারাম, শিরক, কুফর,জিনা ইত্যাদিকে ‘বিনোদন’ হিসেবে গণ্য করা হয়? এই যুগের মুসলিমদের কি হবে, যারা কাফিরদের ভূমিতে বসবাস করে?
তারা কি তাদের অনুসরণ শুরু করবে না? তারা কি তাদের একজন হবে না? আমরা কি এখনই তাদের মুখে তার লক্ষণ দেখতে পাই না (পর্দাহীনতা, দাড়ি কামিয়ে ফেলা)? এমনকি যারা এসব কুফর শক্তির বিরুদ্ধে চেষ্টা সাধনা করছে কেমন করে একজন বলবে যে, তারা অন্তর দিয়ে চেষ্টা সাধনা করছে কুফরের বিরুদ্ধে এবং পুরো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, যখন পুরো সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কুফরের উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং অমুসলিমরা তা চালু রেখেছে? কেউ তর্ক করতে পারে, “আমরা এই দেশে নফসের জিহাদ করার জন্য বসবাস করি। এই দেশে বসবাস আমার নফ্সকে মজবুত করবে।” এটা একটি দুঃখজনক সমর্থন ছাড়া আর কিছুই নয়। মুসলিমদের প্রথম তিন প্রজন্ম এবং পূর্ববর্তীযুগের সালাফগণের মাঝে এমন কোন একজনের উদাহরণ পাওয়া যাবে না, যারা নফ্স-এর জিহাদ করার জন্য কাফিরদের ভূমিতে বসবাস করত। যদি তারা নফ্সের জিহাদ করতে চাইতো তারা অতিরিক্ত নফল ইবাদত করত, কুরআন পড়ত এবং সবচেয়ে উত্তম উপায় ছিল জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্। রামাদানে রোযা রাখা একজনকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে, একই ঘটনা ঘটে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর ক্ষেত্রে, যেহেতু মৃত্যু ঈমানদারদের চতুর্দিক ঘিরে রেখেছে। সে তার নিয়্যতকে পরিশুদ্ধ করতে ত্বরা করবে এবং সেই সাথে তার কর্ম বৃদ্ধি করতে এবং উন্নত করতে সচেষ্ট থাকবে।
যেহেতু এই বইয়ের ক্ষুদ্র ভুমিকায় হিজরতের ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি, আমরা তাই এখানে এই বিশেষ বিষয় দিয়ে শেষ করব।
ﷺ বলেন, “তুমি কি এটা ভালবাসন যে আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন ? এবং তোমাকে জান্নাতে দাখিল করবেন? তবে আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর।”
এর চেয়ে সহজ আর কিছু নেই । আল্লাহ আমাদের সকলকে শুহাদা হিসেবে কবুল করুক । আমীন॥
আবু হুরায়রা(রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত,এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূলﷺ এর কাছে আসলেন এবং বললেন , “আমাকে এমন কাজের কথা বলে দিন যা জিহাদের সমতূল্য (প্রতিদানের ক্ষেত্রে)।” তিনি বললেন, “আমি এমন কোন কাজ দেখতে পাইনা।” অতঃপর তিনি যোগ করেন, “তুমি কি পারবে যখন মুসলিম যোদ্ধারা যুদ্ধক্ষেত্রে থাকবে, তখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে এবং বিরতি না দিয়ে সলাত পড়বে এবং রোযা রাখবে ?” লোকটি বললে , “কিন্তুকে তা পারবে ?” আবু হুরায়রা(রাঃ) যোগ করেন, “মুজাহিদগণ পুরকৃত হয়, এমনকি তার ঘোড়ার পদক্ষেপ সমূহে, যখন ঘোড়াটি একটি লম্বা দড়িতে বাধা অবস্থায় চারণ ভূমিতে চড়তে থাকে।” (সহীহ্ বুখারী)
আল্লাহু আকবার! এমনকি মুজাহিদের ঘোড়া যখন চারদিকে চড়ে বেড়ায়, তখন মুজাহিদের জন্য ভাল কাজ রূপে জমা হয়।
জিহাদের এই বিষয়ের উপর এমন আরও অনেক হাদীস আছে যা এই ভূমিকায় শেষ করা যাবে না। যদিও একটি বই আছে যা আমরা সকলকে পড়ার জন্য আন্তরিকভাবে পরামর্শ দেই, যারা এই বিষয়ে আগ্রহী এবং আজকাল যুদ্ধ করার পিছনে তা একটি দলীল স্বরূপ। বইটির নাম “মাশারী আল আশওয়াক্ব ইলা মাশারী আল উসাক্ব” -শাইখ আবি জাকারিয়য়া আল দিমাস্কি আল-দুময়াতী “ইবনে নুহাস” (৮১৪ হিজরী) এটা জিহাদের উপর একটি জনপ্রিয় সহজ সরল বই। এই বইয়ের উপরের যে বক্তব্য তাও প্রদান করেছেন ইমাম আনওয়ার আল আওলাকি। তার বক্তৃতার ভূমিকা হল,“ইবনে আল আকওয়ার গল্প”।
“ছাওয়াবিত আলা দ্বারব আল জিহাদ” নামক বইয়ের মত আমি এই বক্তৃতাগুলো বই আকারে অনুবাদ করেছি। এই বইয়ে আপনি যা পড়বেন তার শতকরা ৯৯% ভাগই ইমাম আনওয়ার আল আউলাকির বক্তব্য। বাকি ১% আমার যোগ করা যা লেখনীর বিভিন্ন বিষয় হাদীস, আয়াত, উদাহরণ এবং বক্তব্য দ্বারা সহজবোধ্য করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। উপরন্তু, তাঁর বলা প্রতিটি শব্দ লেখার পরিবর্তে আমি আমার নিজস্ব শব্দ ব্যবহার করেছি, যাতে পাঠকের কাছে বক্তব্যটি পরিষ্কারভাবে প্রতিভাত হয়। মূল বক্তৃতায় অনেক পূনরাবৃত্তি ছিল, যা ছোট করা হয়েছে। আমি আরও ক্ষুদ্রক্ষুদ্র অতিরিক্ত শিরোনামযুক্ত করেছি, যাতে পাঠকের কাছে সহজতর হয় এবং কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রমাণসমূহ খুজে পাওয়া যায়।
পরিশেষে, আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের সকলকে তাঁর সঠিক পথে পরিচালিত করেন, তাদের পথে যারা তাঁর জন্য চেষ্টা সাধনা করে। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি আমাদেরকে তাঁদের অন্তর্ভূক্ত করেন, যারা তাঁর জন্য যুদ্ধ করে এবং শহীদ হয়। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করি, তিনি যেন আমাদের তাঁদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেন, যাদেরকে তিনি শুহাদা হিসেবে পছন্দ করেছেন। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন শাইখ ইউসুফ এর এমন উদ্ধুদ্ধকারী এবং জ্ঞানগর্ভ কথায় ভরপুর (আল্লাহর একজন দাস সবচেয়ে বড় যে ইবাদত করতে পারে) লেখনীর জন্য তাকে জান্নাত ও রহমত বর্ষণ করেন । আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি ইমাম আনওয়ার আল আওলাকিকে হিফাজত করেন, জান্নাত দান করেন এবং তাঁকে সন্তুষ্ট করেন- তার ব্যাখ্যা এমন যুগে দান করা হয়েছে যখন জিহাদকে নিচুচোখে দেখা হয়, তার জ্বালাময়ী বক্তব্যে জিহাদকে জীবন্ত করে তুলে ধরার প্রচেষ্টার জন্য। পরিশেষে, আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন, তিনি এই বইকে শুধুমাত্র জ্ঞানগর্ভ বইয়ে নয়, বরং একটি ব্যবহারিক বইয়ে পরিণত করেন ।
(আমীন ইয়া রাব্বুল আ’লামীন)
ওয়া’আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
মুজাহিদ ফী সাবিলিল্লাহ
Comment