اسلام عليكم- بسم الله و الحمد لله
اسلام عليكم- بسم الله و الحمد لله وحده والصلاة والسلام علي من لا نبي بعده وعلي آله وأصحابه أجمعين . أما بعد.
বর্তমানে মুসলিমদের মধ্যে ব্যপক আলোচিত বিষয় হচ্ছে, ইমাম মাহাদী (আঃ), তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দাজ্জাল ও ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ)। আমরা এখনে কুরআন, সুন্নাহ, ইতিহাস ও বর্তমান বিশ্বকে সামনে রেখে দেখব দাজ্জালের সাথে চূড়ান্ত যুদ্ধের আর কত সময় বাকি আছে, ইনশাআল্লাহ। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করি। প্রথমেই সহীহ বুখারী থাকে একটি হাদীস,
سَمِعْتُ بُسْرَ بْنَ عُبَيْدِ اللَّهِ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا إِدْرِيسَ، قَالَ سَمِعْتُ عَوْفَ بْنَ مَالِكٍ، قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ، وَهْوَ فِي قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ فَقَالَ " اعْدُدْ سِتًّا بَيْنَ يَدَىِ السَّاعَةِ، مَوْتِي، ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ، ثُمَّ مُوتَانٌ يَأْخُذُ فِيكُمْ كَقُعَاصِ الْغَنَمِ، ثُمَّ اسْتِفَاضَةُ الْمَالِ حَتَّى يُعْطَى الرَّجُلُ مِائَةَ دِينَارٍ فَيَظَلُّ سَاخِطًا، ثُمَّ فِتْنَةٌ لاَ يَبْقَى بَيْتٌ مِنَ الْعَرَبِ إِلاَّ دَخَلَتْهُ، ثُمَّ هُدْنَةٌ تَكُونُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ بَنِي الأَصْفَرِ فَيَغْدِرُونَ، فَيَأْتُونَكُمْ تَحْتَ ثَمَانِينَ غَايَةً، تَحْتَ كُلِّ غَايَةٍ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا ".
---আউফ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম। তিনি তখন একটি চর্ম নির্মিত তাবুতে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
কিয়ামতের পূর্বের ছয়টি আলামত গণনা করে রাখো।
১। আমার(রাসূলুল্লাহ ﷺ) মৃত্যু,
২। তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়,
৩। তারপর তোমাদের মাঝে ঘটবে মহামারী, বকরীর পালের মহামারীর মত( এই মহামারী দ্বারা আল্লাহ তায়ালা সাহাবীদের বংশধরকে ও তাঁদের শাহাদত নসীব করবেন এবং তাঁদের আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করবেন। ইবনে মাজা: নং ৪০৪২)।
৪। সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যাক্তিকে একশ’ দ্বীনার দেওয়া সত্ত্বেও সে অসন্তুষ্ট থাকবে।
৫। তারপর এমন এক ফিতনা আসবে যা আরবের প্রতি ঘরে প্রবেশ করবে।
৬। তারপর যুদ্ধ বিরতির চুক্তি-যা তোমাদের ও রোমকদের (খৃষ্টানদের) মধ্যে সম্পাদিত হবে। এরপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা উত্তোলন করে তোমাদের মোকাবিলায় আসবে; প্রত্যেক পতাকা তলে বার হাজার সৈন্য দল থাকবে(এই যুদ্ধের পরে হবে দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ -সুনানে ইবনে মাজাহ)
[সহীহ বুখারী (ইফাঃ) ২৯৫২ , ৩১৭৬ ; (সুনানে ইবনে মাজাহ: কলহ-বিপর্যয় নং ৪০৪২)]।
যেহেতু রাসূলুল্লাহ ﷺ এই বিষয়গুলো ধারাবাহিক ভাবে বর্ননা করেছেন তাই এবিষয়ে আমরা নিশ্চিত যে, এই বিষয়গুলো ধাবাহিক ভাবেই ঘটবে। তাই আসুন পর্যায়ক্রমে বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করি:
১। আমার(রাসূলুল্লাহ ﷺ) মৃত্যু:
১১ হিজরীের রবিউল আওআল মাসে প্রিয় নাবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ ﷺ ইন্তিকাল করেন(আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ষষ্ঠ খন্ড)। এছাড়াও আয়িশা (রাঃ) বলেন, যেদিন আমার পেলা আসলো, সেদিন আল্লাহ তাঁকে (রাসূলুল্লাহ ﷺ) আমার কণ্ঠদেশ ও বক্ষের মাঝে (হেলান দেওয়া অবস্থায়) রূহ কবয করলেন এবং আমার ঘরে তাঁকে (রাসূলুল্লাহ ﷺ) দাফন করা হয়। {সহীহ বুখারী (ইফাঃ)অধ্যায়ঃ ২০/ জানাযা (كتاب الجنائز),হাদিস নম্বরঃ ১৩০৬ }
২ । তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়:
বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলিমদের প্রথম কিবলা। ১৫ /১৬হিজরীতে হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় করেন (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সপ্তম খন্ড, পৃ-১০৭ ই.ফা.), ( মহাপ্রলয়- আব্দুর রহমান আরিফী পৃ: ৩২)। এছারাও সালাহউদ্দিন আইয়ুবী(রহঃ) ৫৮৩ হিজরী সনে পুনরায় বিজয় করেন( মহাপ্রলয়- আব্দুর রহমান আরিফী পৃ: ৩২)।
সুতরাং দ্বিতীয় আলামত বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় তাও সম্পন্ন হয়েছে। হয়তো অনেকেই বলতে পারেন যে এখনতো মুসলিমদের হাতে নাই তাহলে আলামত কি করে পূরন হল? দেখুন ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন যে, বিজিত হওয়া (فَتْحُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ) শর্ত , বিজিত থাকা শর্ত না। এছাড়াও আপনারা জানেন যে কিয়ামতের পূর্বে মজাহিদদের হাতে আবার বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় হবে। ইনশাআল্লাহ।
৩। তারপর তোমাদের মাঝে ঘটবে মহামারী, বকরীর পালের মহামারীর মত:
মহামারী আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক আজাব, কিন্তু মুমিনদের জন্য রহমত। মহামারীর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের শাস্তি দেন, আর মুমিনদের শাহাদাত নসীব কারেন এবং তাদের আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করেন (সহীহ বুখারী -ইফাঃ হাদিস নং ৬৫০৩ (সূনান নাসাঈ - ইফাঃ হাদিস নং ২০৫৮ - সহিহ)।
বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়ের পর যে মহামারী প্রকাশিত হবে সেই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
----فَتْحُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ ثُمَّ دَاءٌ يَظْهَرُ فِيكُمْ يَسْتَشْهِدُ اللَّهُ بِهِ ذَرَارِيَّكُمْ وَأَنْفُسَكُمْ وَيُزَكِّي بِهِ أَمْوَالَكُمْ ----
---- "বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এক মহামারী ছড়িয়ে পড়বে, যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের বংশধরকে ও তোমাদেরকে শাহাদত নসীব করবেন এবং তোমাদের আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করবেন।"---- ( সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ ৩০/ কলহ-বিপর্যয় (كتاب الفتن) : হাদিস নং ৪০৪২-তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।)
----فَتْحُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ ثُمَّ مُوْتَانٌ يَأْخُذُ فِيكُمْ كَقُعَاصِ الْغَنَمِ ----
----- "বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, তারপর তোমাদের মাঝে ঘটবে মহামারী, বকরীর পালের মহামারীর মত"----(সহীহ বুখারী- ইফাঃ - হাদীস নং ২৯৫২)
উপরিউক্ত হাদীস দুইটি থেকে এটা স্পষ্ট যে, এই মহামারী সাহাবীদের মাঝে এবং তাঁদের বংশধরদের মাঝে প্রকাশিত হবে। কেনোনা রাসূলুল্লাহ ﷺ তোমাদের বংশধরকে ও তোমাদেরকে(ذَرَارِيَّكُمْ وَأَنْفُسَكُم) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন,
দ্বিতীয় খলীফা হজরত উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এর শাসনামলে বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়ের দুই বছর পর ১৮হিজরীতে "আমওয়াছ মহামারীর" ঘটনা ঘটে। এই মহামারীতে প্রাই পঞ্চাশ হাজার মুসলমান মারা যায়। হজরত মুয়াজ বিন জবাল (রাঃ), আবু উবায়দাহ (রাঃ), শুরাহবিল বিন হাসানা (রাঃ), ফজল বিন আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) এর মত বিখ্যাত সাহাবীগণ এই মহামারীতে ইন্তেকাল করেন ( মহাপ্রলয়- আব্দুর রহমান আরিফী পৃ: ৩৩), (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সপ্তম খন্ড, পৃ-১৪৫,১৪৬ ই.ফা.)।
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমির (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ‘উমার (রাঃ) সিরিয়া যাবার জন্য বের হলেন। এরপর তিনি ‘সারগ’ নামক স্থানে পৌঁছলে তাঁর কাছে খবর এল যে সিরিয়া এলাকায় মহামারী দেখা দিয়েছে। তখন ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তাঁকে জানালেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা কোন স্থানে এর বিস্তারের কথা শোন, তখন সে এলাকায় প্রবেশ করো না; আর যখন এর বিস্তার ঘটে, আর তোমরা সেখানে অবস্থান কর, তাহলে তাত্থেকে পালিয়ে যাওয়ার নিয়তে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না। [সহীহ বুখারী (তাওহীদ): হাদিস নং ৫৭৩০ (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৬)]
৬৭ হিজরী, ৮৭ হিজরী, ১১৯ হিজরী এবং ১৩৬ হিজরীতে কয়েকবার এ ভয়ানক মহামারী সংঘটিত হয়েছিল [সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী) অধ্যায়ঃ ০। মুকাদ্দামাহ (ভূমিকা) (المقدمة) হাদিস নম্বরঃ ৭ এর টিক]।
এছাড়াও পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় আল্লাহ তায়ালা মহামারী দিয়ে অনেক বার-ই পৃথিবীবাসীকে শাস্তি দিয়েছেন। মহামারিতে শতশত নগর সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন,
৬০০ শতকে দুনিয়ায় ৪০%, ৭৩৫-৭৩৭ এই দুই বছরে জাপানে এক তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায়। বাইজানটাইন সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়। ১৬ শতকে ম্যাক্সিকোতে ৮০%, ইতালিতে ৩ লক্ষ , দুনিয়াব্যাপী ফ্রক্স, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টাইফয়েড, অজানা রোগে অসংখ্য মানুষ মারা যায়। এশিয়া ও ইউরোপে মারা যায় ৫ কোটি । ১৪’শ শতাব্দীতে বিশ্বের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন থেকে ৩৫০-৩৭৫ মিলিয়নে নেমে আসে।ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দিতে আমেরিকা মহাদেশে প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ ,১৬৩৩ সালে প্রায় ২ কোটি ,১৬৬৫ সালের দিকে লন্ডনের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মারা যায়। ১৭৯৩ সালে প্রায় ৪৫ হাজার ,১৮৫৫ সালে প্রায় দেড় কোটি , ১৯১৮ সালে ৫ কোটি , ১৭২০ সালে ২০ কোটি মানুষ মারা যায়। ১৮২০ সালে এশিয়ায় কলেরা রোগে মারা যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ। এবং আফ্রিকা ইউরোপে বসন্ত রোগে মারা যায় ৩৫ লক্ষ মানুষ।১৯১৮ থেকে ১৯১৯ সালে প্রায় ৫ কোটি, ১৯২০ সালে ৫ কোটি মারা যায়।২০১২ সালে প্রথম সৌদি আরবে মার্স আবিষ্কৃত হয় এবং সেখানে আক্রান্তদের ৩৫শতাংশ মারা যায়। সৌদি আরব ছাড়াও এর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে ওমান, আরব আমিরাত, মিসর ইত্যাদি মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কটি দেশে। উইকিপিডিয়া
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, তৃতীয় আলামত "মহামারী" তাও বাস্তবায়ন হয়ে গেছে, যা হাদীস ও ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত।
ইনশাআল্লাহ বাকি তিনটি আলামত নিয়ে সামনের পর্বে আলোচনা করা হবে।
মুজাহিদদের জন্য দোয়া করতে অবহেলা করেন না(অনুরোধ)।
اسلام عليكم- بسم الله و الحمد لله وحده والصلاة والسلام علي من لا نبي بعده وعلي آله وأصحابه أجمعين . أما بعد.
বর্তমানে মুসলিমদের মধ্যে ব্যপক আলোচিত বিষয় হচ্ছে, ইমাম মাহাদী (আঃ), তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দাজ্জাল ও ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ)। আমরা এখনে কুরআন, সুন্নাহ, ইতিহাস ও বর্তমান বিশ্বকে সামনে রেখে দেখব দাজ্জালের সাথে চূড়ান্ত যুদ্ধের আর কত সময় বাকি আছে, ইনশাআল্লাহ। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করি। প্রথমেই সহীহ বুখারী থাকে একটি হাদীস,
سَمِعْتُ بُسْرَ بْنَ عُبَيْدِ اللَّهِ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا إِدْرِيسَ، قَالَ سَمِعْتُ عَوْفَ بْنَ مَالِكٍ، قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ، وَهْوَ فِي قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ فَقَالَ " اعْدُدْ سِتًّا بَيْنَ يَدَىِ السَّاعَةِ، مَوْتِي، ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ، ثُمَّ مُوتَانٌ يَأْخُذُ فِيكُمْ كَقُعَاصِ الْغَنَمِ، ثُمَّ اسْتِفَاضَةُ الْمَالِ حَتَّى يُعْطَى الرَّجُلُ مِائَةَ دِينَارٍ فَيَظَلُّ سَاخِطًا، ثُمَّ فِتْنَةٌ لاَ يَبْقَى بَيْتٌ مِنَ الْعَرَبِ إِلاَّ دَخَلَتْهُ، ثُمَّ هُدْنَةٌ تَكُونُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ بَنِي الأَصْفَرِ فَيَغْدِرُونَ، فَيَأْتُونَكُمْ تَحْتَ ثَمَانِينَ غَايَةً، تَحْتَ كُلِّ غَايَةٍ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا ".
---আউফ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম। তিনি তখন একটি চর্ম নির্মিত তাবুতে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
কিয়ামতের পূর্বের ছয়টি আলামত গণনা করে রাখো।
১। আমার(রাসূলুল্লাহ ﷺ) মৃত্যু,
২। তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়,
৩। তারপর তোমাদের মাঝে ঘটবে মহামারী, বকরীর পালের মহামারীর মত( এই মহামারী দ্বারা আল্লাহ তায়ালা সাহাবীদের বংশধরকে ও তাঁদের শাহাদত নসীব করবেন এবং তাঁদের আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করবেন। ইবনে মাজা: নং ৪০৪২)।
৪। সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যাক্তিকে একশ’ দ্বীনার দেওয়া সত্ত্বেও সে অসন্তুষ্ট থাকবে।
৫। তারপর এমন এক ফিতনা আসবে যা আরবের প্রতি ঘরে প্রবেশ করবে।
৬। তারপর যুদ্ধ বিরতির চুক্তি-যা তোমাদের ও রোমকদের (খৃষ্টানদের) মধ্যে সম্পাদিত হবে। এরপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা উত্তোলন করে তোমাদের মোকাবিলায় আসবে; প্রত্যেক পতাকা তলে বার হাজার সৈন্য দল থাকবে(এই যুদ্ধের পরে হবে দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ -সুনানে ইবনে মাজাহ)
[সহীহ বুখারী (ইফাঃ) ২৯৫২ , ৩১৭৬ ; (সুনানে ইবনে মাজাহ: কলহ-বিপর্যয় নং ৪০৪২)]।
যেহেতু রাসূলুল্লাহ ﷺ এই বিষয়গুলো ধারাবাহিক ভাবে বর্ননা করেছেন তাই এবিষয়ে আমরা নিশ্চিত যে, এই বিষয়গুলো ধাবাহিক ভাবেই ঘটবে। তাই আসুন পর্যায়ক্রমে বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করি:
১। আমার(রাসূলুল্লাহ ﷺ) মৃত্যু:
১১ হিজরীের রবিউল আওআল মাসে প্রিয় নাবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ ﷺ ইন্তিকাল করেন(আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ষষ্ঠ খন্ড)। এছাড়াও আয়িশা (রাঃ) বলেন, যেদিন আমার পেলা আসলো, সেদিন আল্লাহ তাঁকে (রাসূলুল্লাহ ﷺ) আমার কণ্ঠদেশ ও বক্ষের মাঝে (হেলান দেওয়া অবস্থায়) রূহ কবয করলেন এবং আমার ঘরে তাঁকে (রাসূলুল্লাহ ﷺ) দাফন করা হয়। {সহীহ বুখারী (ইফাঃ)অধ্যায়ঃ ২০/ জানাযা (كتاب الجنائز),হাদিস নম্বরঃ ১৩০৬ }
২ । তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়:
বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলিমদের প্রথম কিবলা। ১৫ /১৬হিজরীতে হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় করেন (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সপ্তম খন্ড, পৃ-১০৭ ই.ফা.), ( মহাপ্রলয়- আব্দুর রহমান আরিফী পৃ: ৩২)। এছারাও সালাহউদ্দিন আইয়ুবী(রহঃ) ৫৮৩ হিজরী সনে পুনরায় বিজয় করেন( মহাপ্রলয়- আব্দুর রহমান আরিফী পৃ: ৩২)।
সুতরাং দ্বিতীয় আলামত বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় তাও সম্পন্ন হয়েছে। হয়তো অনেকেই বলতে পারেন যে এখনতো মুসলিমদের হাতে নাই তাহলে আলামত কি করে পূরন হল? দেখুন ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন যে, বিজিত হওয়া (فَتْحُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ) শর্ত , বিজিত থাকা শর্ত না। এছাড়াও আপনারা জানেন যে কিয়ামতের পূর্বে মজাহিদদের হাতে আবার বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় হবে। ইনশাআল্লাহ।
৩। তারপর তোমাদের মাঝে ঘটবে মহামারী, বকরীর পালের মহামারীর মত:
মহামারী আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক আজাব, কিন্তু মুমিনদের জন্য রহমত। মহামারীর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের শাস্তি দেন, আর মুমিনদের শাহাদাত নসীব কারেন এবং তাদের আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করেন (সহীহ বুখারী -ইফাঃ হাদিস নং ৬৫০৩ (সূনান নাসাঈ - ইফাঃ হাদিস নং ২০৫৮ - সহিহ)।
বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়ের পর যে মহামারী প্রকাশিত হবে সেই বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
----فَتْحُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ ثُمَّ دَاءٌ يَظْهَرُ فِيكُمْ يَسْتَشْهِدُ اللَّهُ بِهِ ذَرَارِيَّكُمْ وَأَنْفُسَكُمْ وَيُزَكِّي بِهِ أَمْوَالَكُمْ ----
---- "বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এক মহামারী ছড়িয়ে পড়বে, যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের বংশধরকে ও তোমাদেরকে শাহাদত নসীব করবেন এবং তোমাদের আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করবেন।"---- ( সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ ৩০/ কলহ-বিপর্যয় (كتاب الفتن) : হাদিস নং ৪০৪২-তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।)
----فَتْحُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ ثُمَّ مُوْتَانٌ يَأْخُذُ فِيكُمْ كَقُعَاصِ الْغَنَمِ ----
----- "বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, তারপর তোমাদের মাঝে ঘটবে মহামারী, বকরীর পালের মহামারীর মত"----(সহীহ বুখারী- ইফাঃ - হাদীস নং ২৯৫২)
উপরিউক্ত হাদীস দুইটি থেকে এটা স্পষ্ট যে, এই মহামারী সাহাবীদের মাঝে এবং তাঁদের বংশধরদের মাঝে প্রকাশিত হবে। কেনোনা রাসূলুল্লাহ ﷺ তোমাদের বংশধরকে ও তোমাদেরকে(ذَرَارِيَّكُمْ وَأَنْفُسَكُم) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন,
দ্বিতীয় খলীফা হজরত উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এর শাসনামলে বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়ের দুই বছর পর ১৮হিজরীতে "আমওয়াছ মহামারীর" ঘটনা ঘটে। এই মহামারীতে প্রাই পঞ্চাশ হাজার মুসলমান মারা যায়। হজরত মুয়াজ বিন জবাল (রাঃ), আবু উবায়দাহ (রাঃ), শুরাহবিল বিন হাসানা (রাঃ), ফজল বিন আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) এর মত বিখ্যাত সাহাবীগণ এই মহামারীতে ইন্তেকাল করেন ( মহাপ্রলয়- আব্দুর রহমান আরিফী পৃ: ৩৩), (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সপ্তম খন্ড, পৃ-১৪৫,১৪৬ ই.ফা.)।
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমির (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ‘উমার (রাঃ) সিরিয়া যাবার জন্য বের হলেন। এরপর তিনি ‘সারগ’ নামক স্থানে পৌঁছলে তাঁর কাছে খবর এল যে সিরিয়া এলাকায় মহামারী দেখা দিয়েছে। তখন ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তাঁকে জানালেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা কোন স্থানে এর বিস্তারের কথা শোন, তখন সে এলাকায় প্রবেশ করো না; আর যখন এর বিস্তার ঘটে, আর তোমরা সেখানে অবস্থান কর, তাহলে তাত্থেকে পালিয়ে যাওয়ার নিয়তে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না। [সহীহ বুখারী (তাওহীদ): হাদিস নং ৫৭৩০ (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৬)]
৬৭ হিজরী, ৮৭ হিজরী, ১১৯ হিজরী এবং ১৩৬ হিজরীতে কয়েকবার এ ভয়ানক মহামারী সংঘটিত হয়েছিল [সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী) অধ্যায়ঃ ০। মুকাদ্দামাহ (ভূমিকা) (المقدمة) হাদিস নম্বরঃ ৭ এর টিক]।
এছাড়াও পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় আল্লাহ তায়ালা মহামারী দিয়ে অনেক বার-ই পৃথিবীবাসীকে শাস্তি দিয়েছেন। মহামারিতে শতশত নগর সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন,
৬০০ শতকে দুনিয়ায় ৪০%, ৭৩৫-৭৩৭ এই দুই বছরে জাপানে এক তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায়। বাইজানটাইন সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়। ১৬ শতকে ম্যাক্সিকোতে ৮০%, ইতালিতে ৩ লক্ষ , দুনিয়াব্যাপী ফ্রক্স, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টাইফয়েড, অজানা রোগে অসংখ্য মানুষ মারা যায়। এশিয়া ও ইউরোপে মারা যায় ৫ কোটি । ১৪’শ শতাব্দীতে বিশ্বের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন থেকে ৩৫০-৩৭৫ মিলিয়নে নেমে আসে।ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দিতে আমেরিকা মহাদেশে প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ ,১৬৩৩ সালে প্রায় ২ কোটি ,১৬৬৫ সালের দিকে লন্ডনের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মারা যায়। ১৭৯৩ সালে প্রায় ৪৫ হাজার ,১৮৫৫ সালে প্রায় দেড় কোটি , ১৯১৮ সালে ৫ কোটি , ১৭২০ সালে ২০ কোটি মানুষ মারা যায়। ১৮২০ সালে এশিয়ায় কলেরা রোগে মারা যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ। এবং আফ্রিকা ইউরোপে বসন্ত রোগে মারা যায় ৩৫ লক্ষ মানুষ।১৯১৮ থেকে ১৯১৯ সালে প্রায় ৫ কোটি, ১৯২০ সালে ৫ কোটি মারা যায়।২০১২ সালে প্রথম সৌদি আরবে মার্স আবিষ্কৃত হয় এবং সেখানে আক্রান্তদের ৩৫শতাংশ মারা যায়। সৌদি আরব ছাড়াও এর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে ওমান, আরব আমিরাত, মিসর ইত্যাদি মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কটি দেশে। উইকিপিডিয়া
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, তৃতীয় আলামত "মহামারী" তাও বাস্তবায়ন হয়ে গেছে, যা হাদীস ও ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত।
ইনশাআল্লাহ বাকি তিনটি আলামত নিয়ে সামনের পর্বে আলোচনা করা হবে।
মুজাহিদদের জন্য দোয়া করতে অবহেলা করেন না(অনুরোধ)।
Comment