[IMG][/IMG]
সংশয় নিরসন সিরিজ পর্ব-০১- প্রথম সংশয়
জিহাদের অর্থ বিকৃতি।
জিহাদ সিরিজ।
দ্বীনের কল্যাণে যে কোনো চেষ্টা সাধনাই কি জিহাদ?
আসুন প্রথমে সংশয়টি বিস্তারিত জেনে নেই। বর্তমানে ইসলাম ও মুসলমানদের চরম ক্রান্তিকাল চলছে, সম্মিলিত কুফ্ফার বাহিনীর
হিংস্র থাবা দ্বীনও মুমিনদেরকে ক্ষতবিক্ষত করে চলছে পৃথিবীর প্রান্ত প্রান্ত। এমতাবস্থায় ইসলাম ও মুসলমানদের হেফাজতের জন্য
আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র হাতিয়ার জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।ঠিক তখনি একদল ভীতি ও দুনিয়া লোভী আলেম জিহাদের সংজ্ঞা ও পরিচয় বিকৃতি করে সাধারণ মুসলমানদেরকে
বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে। তারা বলছে জিহাদ অর্থ কঠোর চেষ্টা ও সাধনা করা। দ্বীনের পথে যে কোনো মেহনতই জিহাদ। তালিম,তাবলিগ ও তাজকিয়াসহ সব ইবাদতই জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। অনেকে পুরো বিষয়টিকে আরও একটু সাজিয়ে গুছিয়ে
এভাবে পেশ করেন।মুমিনের জীবনের সঙ্গে জিহাদ ও তপ্রোতভাবে
জড়িত। ব্যক্তিগত জীবনে শয়তান ও কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের মাধ্যমে শুরু হয় জিহাদ নামের এই ইবাদত।
তারপর পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে আল্লাহর নাফরমানী থেকে নিজেকে ও অধীনস্তদের বাঁচাতে তাকে জিহাদ করতে হয় শয়তান ও তার চেলাচামুণ্ডদের বিরুদ্ধে। এভাবে রাষ্ট্রীয় জীবনে এসেও কখনো তাকে অস্ত্রও হাতে তুলে নিতে হয়। এটি হলো জিহাদের সর্বোচ্চ স্তর।সুতরাং জিহাদ মানেই যুদ্ধ বা রক্তারক্তি নয়।
এটি অনেক ব্যাপক একটি ইবাদত। যা আমাদের ব্যক্তিক ও সামষ্টিক জীবনের সব ইবাদতকে শামিল করে।
সংশয় নিরসন
ইসলামের শুরুথেকেই যুগে যুগে শরিয়তের বিভিন্ন বিধানের বিকৃতির ধারাবাহিকতা চলে আচ্ছে,বাতিল ও বন্ডদের দৌরাত্ম সাময়িক বিগ্নতা ঘঠালেও কেউ এই বিকৃতি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
উম্মাহর হক্ব পন্থী আলেমরা এসব বিকৃতি চিহৃিত করে তার সমচিত
জবাব দিয়েছেন।এবং ইসলামকে স্বচ্ছ ও নির্ভেজাল রেখেছেন ইসলামের ইতিহাসে যেসব বিধান নিয়ে সবচেয়ে তাহরিফ বা বিকৃতি করা হয়েছে তার মধ্যহতে অন্যতম হল জিহাদ
ফি-সাবিলিল্লাহ।
ভারত উপমহাদেশে সর্ব প্রথম এধরনের সংশয় ছড়ায় ইংরেজদের
সৃষ্ট বন্ড নবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, মুসলমানদের ইংরেজ বিরোধী জিহাদকে নিশ্চিহৃ করার লক্ষ্যে তারা জিহাদের পরিচয় বিকৃতি করার অপচেষ্টা চালায় জিহাদের সংজ্ঞা ও পরিচয় নিয়ে
উল্লেখিত ব্যাখ্যাটি বন্ড কাদিয়ানী কিতাব ছাড়া বিগত ১৩০০হিজরি
পর্যন্ত রচিত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের কোনো কিতাবেই
আপনি পাবেন না।
পরবর্তীকালে তথাকথিত দুনিয়া লোভি আলেম কাদিয়ানী কিতাব
থেকে এই বিভ্রান্তি আমদানি করে। প্রকৃতপক্ষে জিহাদ
ফি-সাবিলিল্লাহ ইসলামি শরিয়তের একটি পরিভাষা।
যার অপর নাম কিতাল ফি-সাবিলিল্লাহ বা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করা। তা কখনই যেকোনো দ্বীনী যেষ্টা সাধনা করার নাম নই।বিভ্রান্তি সৃষ্টি কারীরা মূলত জিহাদের আভিধানিক অর্থকে শরিয় মূল অর্থ হিসাবে চালিয়ে দেয়।
এখন আমরা চারটি নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে শরিয় জিহাদের প্রকৃত সংজ্ঞা ও পরিচয় তুলে ধরার প্রয়াস পাব।
[১]
কুরআনে কারিম।
[২]
হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াল্লাম।
[৩]
মুহাদ্দিসিনে কেরামের অভিমত।
[৪]
ফুকাহায়ে কেরামের অভিমত।
[১] কুআনে কারিম।
কুরআনে কারিমে জিহাদ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে যেসব আয়াত নাজিল হয়েছে, প্রায় সবগুলো আয়াতেই সরাসরি কিতাল বা যুদ্ধ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন।
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَكُمْ
"তোমাদের ওপর যুদ্ধ ফরজ করা হয়েছে যদিও তোমরা তা অপছন্দ করো। (সুরা বাকারা:২১৫)
* ইমাম বাগাবি রহিমাহুল্লাহ এই আয়াতের তাফসিরে বলেন:
أَيْ فُرِضَ عَلَيْكُمُ الجِهَادُ
" অর্থাৎ তোমাদের ওপর জিহাদ ফরজ করা হয়েছে। (তাফসিরে বগবি:১/২৭৩)
* এই আয়াতের তাফসিরে আল্লামা ইবনে কাসির রহিমাহুল্লাহ বলেন:
بِهَذَا إِيِجَابٌ مِنَ اللَّهِ تَعَالی لِلْجِهَادِ عَلَی المُسْلِمِينَ.
" এই আয়াত দ্বারা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলমানদের ওপর জিহাদ ফরজ করা হয়েছে।
(তাফসিরে ইবনে কাসির :১/৪২৮)
* দেখুন, মুফাসসিরগণ কিতালের তাফসির করেছেন সরাসরি জিহাদ শব্দ দিয়ে। কুরআনে যেটাকে কিতাল বা যুদ্ধ বলা হয়েছে তাঁরা সেটাকেই জিহাদ বলেছেন।
وَقَاتِلُوافِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ.
" যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো।(সূরা বাকারা:১৯০)
وَقَاتِلُوالْمُشْرِكِيِنَ كَافَّةًكَمَايُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً.
" তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মভাবে যুদ্ধ করো,যেমনিভাবে তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মভাবে যুদ্ধ করে থাকে।
(সূরা তাওবা :৩৬)
قَاتِلُواالًَذِينَ لَايُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَابِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَايُحَرِّمُونَ مَاحَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَايَدِينُونَ دِينَ الْحَقِْ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّی يُعْطُواالْجِزْيَةَعَنْ يَدٍوَهُمْ صَاغِرُون.
" যাদের প্রতি কিতাব অবর্তীণ হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও
তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা গণ্য করে না এবং সত্য দ্বীন গ্রহণ করে না ; তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে স্বহস্তে জিজিয়া দেয়। (সূরা তাওবা:২৯)
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّی لَاتَكُونَ فِتْنَةَ وَيَكُونَ الدّيْنُ كُلُّهُ لِلَّهِ.
" আর তোমরা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকো,যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দ্বীন পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। (সূরা আনফাল:৩৯)
* উল্লিখিত সবগুলো আয়াতের তাফসির খুলে দেখুন মুফাসসিরগণ কিতালকেই জিহাদ বলেছে এবং এর সংশ্লিষ্ট আহকাম বর্ণনা করেছেন।
[২]
হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম
* চলুন এবার সরাসরি রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে জিজ্ঞেস করা যাক।
★ জিহাদ কী?
قَالَ وَمَاالْجِهَادُ
قَالَ أَنْ تُقَاتِلَ الْكُفَّارَ إِذَالَقِيتَهُمْ. قَالَ فَأَيُّ الْجِهَادِ أَفْضَلُ؟ قَالَ مَنْ عُقِرَ جَوَادُهُ وَأُهْرِيقَ دَمُهُ.
" এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করেন : জিহাদ কী? তিনি উত্তর দেন : কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ করা, যখন তুমি তাদের মুখোমুখি হও; সাহাবি আবার জানতে চান : কোন জিহাদ উত্তম? তিনি উত্তর দেন : যার ঘোড়া ময়দানে নিহত হয়েছে এবং সে নিজেও শহিদ হয়েছে।
(মুসনাদু আহমদ: ১৭০২৭: হাদিসটি সহিহ)
★ মুহাদ্দিসিনে কেরামের অভিমত
* বুখারি শরিফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার আল্লামা কাসতাল্লানি রহিমাহুল্লাহ বলেন,
هُوَفِيْ الْاِصْطِلَاحِ قِتَالُ الْكُفَّارِ لِنُصْرَةِالإِسْلَامِ وَإِعلَاءِكَلِمَةِالله.
" শরয়ি পরিভাষায় জিহাদ হলো ইসলামের সাহায্যার্থে এবং আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।
(ইরশাদুস সারি:৫/৩১)
* বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার হানাফি মাজহাবের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি রহিমাহুল্লাহ বলেন:
وَفِيْ الشَّرْعِ بَذْلُ الْجُهْدِ فِيْ قِتَالِ الْكُفَّارِلِإِِعْلَاءِكَلِمَةِ اللّه.
" শরয়ি পরিভাষায় জিহাদ হলো আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার জন্য কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সর্বশক্তি ব্যয় করা।
(উমদাতুল কারি : ১৪/১১৫)
* মিশকাতুল মাসাবিহ এর ব্যাখ্যাকার বিখ্যাত হানাফি মুহাদ্দিস মোল্লা আলি কারি রহিমাহুল্লাহ বলেন:
وَشَرْعًابَذْلُ الْمَجْهُوْدِفِيْ قِتَالِ الْكُفَّارِ مُبَاشَرَةً أَوْمُعَاوَنَةًبِالْمَالِ أَوْبِالرّأْيِ أَوْبِتَكْثِيْرِالسَّوَادِأَوْغَيْرِذَلِكَ.
" ইসলামের পরিভাষায় জিহাদ হলো কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সশরীরে অংশগ্রহণকরা অথবা সম্পদ, মতামত, সংখ্যাধিক্য বা অন্য কোনো উপায়ে সর্বশক্তি ব্যয় করা।
(মিরকাত: ৭/২৬৭)
এখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে কোনো ধরনের চেষ্টা-সাধনা ও শক্তি-সামর্থ্য ব্যয় করাই হচ্ছে জিহাদ।
* মিশকাতুল মাসাবিহএর আরেক ব্যাখ্যাকার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা তিবি রহিমাহুল্লাহ বলেন:
وَالْجِهَادُ مَصْدَرُجَاهَدْتَ الْعَدُوَّ إِذَاقَابَلْتَهُ فِيْ تَحَمُّلِ الْحُهْدِ إِذَابَذَلَ كُلٌّ مِنْكُمَا جُهْدَهُ أَيْ طَاقَتَهُ فِيْ دَفْعِ صَاحِبِهِ ثُمَّ غَلَبَ فِيْ الْإِسْلَامِ عَلَي قِتَالِ الْكُفَّارِ.
"(আল জিহাদ) শব্দটি (جَاهَد) এর মাসদার বা ক্রিয়ামূল,جَاهَدْت)ََ العَدُوَّ) তখনই বলা হয় যখন দুই শত্রু একে অপরকে প্রতিহত করতে গিয়ে সর্বশক্তি ব্যয় করে। ইসলামি পরিভাষায় শব্দটি কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অর্থে প্রতিষ্ঠিত হয়।
(শরহুত তিবি:৭/৩২৫)
★ফুকাহায়ে কেরামের অভিমত
প্রথমে আমরা জিহাদ সম্পর্কে হানাফি মাজহাবের শেষ্ঠ ইমামদের মতামত জানাব।
* আল্লামা আলাউদ্দিন কাসানি হানাফি রহিমাহুল্লাহ: বলেন:
وَفِي عُرْفِ الشَّرْعِ يُسْتَعْمَلُ فِي بَذْلِ الْوُسْعِ وَالطَّل قَةِ بِالْقِتَالِ فِي سَبِيِل الِلّهِ.عَزَّوَجَلَّ.بِا لنَّفْسِ وَالْممَالِ وَاللِّسانِ. أَوْغَيْرِذَلِكَ. أَوْالْمُبَالَغَةِ فِي ذَلِكَ.
" শরিয়তের পরিভাষায় জিহাদ আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধকরতে গিয়ে জান-মাল-জবান ইত্যাদির মাধ্যমে সর্বশক্তি ব্যয় করা।
(বাদাইউস সানায়ি: ৭/৯৮)
* আল্লামা মুহাম্মদ বিন আলী হাসকাফি রহিমাহুল্লাহ বলেন
الدُّعَاءُإِلَی الدِّيْنِ الْحَقِّ وَقِتَالُ مَنْ لَمْ يَقْبَلْهُ.
" জিহাদ হলো, সত্য দ্বীনের দিকে আহবান করা এবং যে কবুল করবে না তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। (আদ্দুররুল মুখতার :১/৩২৯)
* আল্লামা ইবনে নুজাইম হানাফি রহিমাহুল্লাহ বলেন :
وَالجِهَادُ هُوَالدُّعَاءُإِلَی الدِّيْنِ الحَقِّ وَالْقِتَالُ مَعَ مَنِ امْتَنَعَ عَنِ الْقَبُوْلِ بِالنَّفْسِ وَالْمَلِ.
" জিহাদ হলো, সত্য দ্বীনের দিকে আহবান করা এবং যে কবুল করবে না তার বিরুদ্ধে জান-মাল দিয়ে যুদ্ধ করা।
(আল-বাহরুর রায়িক : ৫/৭৬)
* আল্লামা ইবনুল হুমাম হানাফি রহিমাহুল্লাহ সংজ্ঞা দেন :
وَهُوَدَعْوَتُهُمْ إِلَی الدِّيْنِ الْحَقِّ وَقِتَالُهُمْ إِنْ لَمْ يَقْبَلُوا.
" জিহাদ হলো, সত্য দ্বীনের দিকে আহবান করা এবং গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ।
(ফাতহুল কাদির :৫/৪৩৫)
★ এবার দেখুন, জিহাদ সম্পর্কে শাফেয়ি মাজহাবের উলামায়ে কেরাম কী বলেন।
* বুখারী শরীফের প্রখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি শাফেয়ি রহিমাহুল্লাহ বলেন:
وَشَرْعًابَذْلُ الْجُهْدِ فِيْ قِتَالِ الْكُفَّارِ.
" ইসলামের পরিভাষায় জিহাদ হলো কাফেরদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি ব্যয়করা। (ফাতহুল বারি : ৬/৩)
★ এবার শুনুন, জিহাদ সম্পর্কে মালেকি মাজহাবের উলামায়ে কেরাম কী বলেন।
* মালেকি মাজহাবের বিখ্যাত গ্রন্থ হাশিয়াতুস সাবি আলাশ শরহিস সাগির- এ উল্লেখ আছে :
وَاصْطِلاَحًاقَالَ ابن عَرَفَةَ: قِتَالُ مُسْلِمٍ كَافِرًا غَيْرَذِيْ عَهْدٍلِإِعْلاَءِ كَلِمَةِ الله تَعَالَی- أوْحُضُوْرُهُ لَهُ أَوْدُخُوْلَهُ أَرْضَهُ.
" ইবনু আরাফা রহিমাহুল্লাহ বলেন: জিহাদ হলো, আল্লাহর বিধানকে উঁচু করার জন্য মুসলিম কর্তৃক যাদের সঙ্গে চুক্তি নেই এমন কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, বা যুদ্ধের জন্য (রণাঙ্গনে) উপস্থিত হওয়া অথবা কাফেরদের দেশে যুদ্ধের জন্য প্রবেশ করা।
(হাশিয়াতুস সাবি: ২/২৬৭)
★ এবার আমরা জানাব, জিহাদ সম্পর্কে হাম্বলি মাজহাবের উলামায়ে কেরাম কী বলেন।
* আল্লামা ইবনুল মুফলিহ আল-মাকদিসি হাম্বলি রহিমাহুল্লাহ বলেন :
وَشَرْعًا عِبَارَةٌ عَنْ قَتْلِ الْكُفَّارِ.
" শরিয়তের পরিভাষায় কাফেরদের হত্যা করাকে জিহাদ বলে।
(আল-মুবদি শরহুল মুকনি : ৩/২৮০)
♦ জিহাদের উল্লিখিত সবগুলো সংজ্ঞায় শব্দের কিছু তারতম্য বাদ দিলে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকেই জিহাদ বলা হয়েছে। যুগে যুগে মুসলমানগণ জিহাদের এই অর্থই বুঝেছেন। দ্বীনের পথে যে কোনো মেহনতই জিহাদ নয়। তালিম,তাবলিগ, তাজকিয়াসহ অন্যান্য যে কোনো ইবাদতই জিহাদ নয়। জিহাদ হলো কেবল কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকাণ্ড।
♣এবার আমরা চারটি আলাদা পয়েন্ট থেকে সংশয়টি নিরসন করার প্রয়াস পাব।
[[ প্রথম পয়েন্ট]]
* রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে যখন মদিনার অলিগলিতে ( حَيَّ عَلَی الْجِهَاد), এসো জিহাদের দিকে এই আহবান উচ্চকিত হতো তখন সাহাবাগণ সালাত,সিয়াম,জাকাত ইত্যাদি ইবাদতের দিকে দৌড়াতেন না ; তালিম ও আত্মশুদ্ধিতেও আত্মনিয়োগ করতেন না ; কিংবা কলম নিয়ে ছুটে এসে বলতেন নাড়ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোন বিষয়ে প্রবন্ধ লিখতে হবে? কী সম্বন্ধে গ্রন্থ রচনা করতে হবে? বরং সবাই ঢাল-তরবারি-তীর-ধনুক-বর্শা নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন।
যুগে যুগে উম্মাহর ইমামগণ জিহাদের এই অর্থই বুঝেছেন। ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম,ইমাম তিরমিজিসহ সমস্ত মুহাদ্দিসিনে কেরাম তাঁদের কিতাবে 'জিহাদ' অধ্যায় কেবল সশস্ত্র যুদ্ধ-বিষয়ক হাদিসগুলোই এনেছেন। ঘোড়া,তরবারি,গনিমত,যুদ্ধের প্রশিক্ষণ, কিতালের ফজিলত, মুজাহিদের মর্যদা,শাহাদাতের তামান্না,যুদ্ধে বাহাদুরি প্রদর্শন,জিহাদে উদ্বুদ্ধকরণ, গোয়েন্দাগিরি,সমরকৌশল,
জিহাদের আহকাম ইত্যাদি বিষয়গুলোই এতে স্থান পেয়েছে, এগুলো ছাড়া তালিম,আত্মশুদ্ধি,তাবলিগ বা অন্য কোনো ইবাদতের আলোচনা এসব অধ্যায়ে করা হয়নি।
একইভাবে সমস্ত ফিকহের কিতাবে 'কিতাবুল জিহাদ' বা জিহাদ অধ্যায়ে উম্মাহর ফকিহগণ কিতাল বা যুদ্ধের আলোচনাই করেছেন দেশ দারুল ইসলাম থেকে দারুল হরব কীভাবে হয়? যুদ্ধে কাদের হত্যা করা যাবে? কোন ধরনের হামলা করা বৈধ? গনিমত,ফাই জিজিয়া ইত্যাদির আহকামই এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। তালিম,তাজকিয়া বা অন্যান্য কোনো ইবাদতের আলোচনা এতে স্থান পায়নি।
দীর্ঘ ১৩০০ বছর পর্যন্ত জিহাদের এই অর্থই উম্মত বুঝেছে এবং আমল করছে। পরবর্তীকালে উপমহাদেশে উলামায়ে কেরামের ইংরেজবিরোধী জিহাদকে নস্যাং করার জন্য অভিশপ্ত কাদিয়ানিরা জিহাদের অর্থ বিকৃতি করতে শুরু করে। তারা বক্তৃতা- বিকৃতি ও লেখালেখির মাধ্যমে প্রচারণ চালাতে থাকে যে,দ্বীনের কল্যাণে যে কোনো মেহনতই জিহাদ। দুঃখের বিষয়,কালের বিবর্তনে তাদের সেই বিকৃতি অনেক হকপন্থী আলেমরাও গ্রহণ করে বসে।
[[ দ্বিতীয় পয়েন্ট]]
* প্রকৃতপক্ষে ইসলামের পরিভাষাগুলোকে যদি আভিধানিক অর্থে পয়োগ করা হয় তবে কোনো ইবাদতেরই অস্তিত্ব থাকবে না। কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করা যাক।
সালাতের আভিধানিক অর্থ নিতম্ব হেলানো,দোয়া করা, দরুদ পড়া ইত্যাদি। এখন কেউ যদি বলে নিতম্ব দোলানোও সালাত,দোয়া করাও সালাত, দরুদ পড়াও সালাত তাহলে সেটা কি গ্রহণযোগ্য হবে?
কেউ যদি এসব করে, তবে কি আপনি বলবেন সে সালাত আদায় করে ফেলেছে? অথচ আভিধানিক ভাবে তিনি একজন মুসল্লি বা সালাত আদায়কারী।
সওমের আভিধানিক অর্থ 'বিরত থাকা'। এখন কেউ যদি ঘন্টাখানিক খানাপিনা থেকে বিরত থাকে তাকে কি রোজাদার বলা হবে? অথচ আভিধানিকভাবে তিনি একজন সওম পালনকারী।
হজের আভিধানি অর্থ 'ইচ্চা করা ' মনস্থ করা। এখন কেউ যদি যে কোনো কিছু করার ইচ্ছা করে, তাকে কি আপনি হাজি বলবেন? অথচ আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি একজন হাজি।
♦ সুতরাং বোঝা গেল জিহাদের আভিধানিক অর্থ বলে পারিভাষিক অর্থের মধ্যে সংশয়, সন্দেহ ও ব্যাপকতা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা দ্বীনের একটি সুস্পষ্ট বিকৃতি এবং আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচরণের নামান্তর।
[[ তৃতীয় পয়েন্ট]]
দাওয়াত, তালিম,তাবলিগ,তাজকিয়া,রাজনীতি, নির্বাচন,মিছিল,
সব কিছুকেই যারা জিহাদ বলে চালিয়ে দেয়, তারা মূলত জিহাদের শাব্দিক অর্থের আশ্রয় নিয়ে সুচতুরভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
* জিহাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল আসির রহিমাহুল্লাহ, আন-নিহায়াহ'তে বলেন:
هوالمبالغةواستفراغ الوسع والطاقةمن قول أوفعل.
" কথা বা কর্মে সর্বোচ্চ সামার্থ্য ও শক্তি ব্যয় করা।
(আন-নিহায়া :১৫৭ পৃষ্ঠা)
♠ আর পারিভাষিক অর্থ নিয়ে আমরা পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ♠
* কুরআন শরিফের বেশ কয়েকটি আয়াতে জিহাদ শব্দটি তার আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই আয়াতগুলো দেখে অনেকেই এই ভেবে বিভ্রান্ত হন যে এখানেতো দাওয়াত ও তাবলিগকেও জিহাদ বলা হয়েছে। অতএব জিহাদ মানে কেবল সশস্ত্র যুদ্ধ বা যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড নয় জিহাদ দ্বীনের সকল ইবাদতকেই ধারণ করে। যেমন কুরআন শরিফে এসেছে:
فَلَاتُطِعِ الْكَافِرِينَ وَجَاهِدْهُمْ بِهِ جِهَادًاكَبِيرًا.
" সুতরাং (হে নবি) আপনি কাফেরদের আনুগত্য করবেন না এবং কুরআনের সাহায্যে আপনি তাদের সাথে প্রবল জিহাদ তথা (সংগ্রাম)চালিয়া যান। (ফুরকান:৫২)
এই আয়াতে দাওয়াত ও তাবলিগকে জিহাদ বলা হয়েছে। অথচ এতে যুদ্ধের কথা নেই। কারণ এটিতো সেই সময়ের কথা যখন আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিয়েছিলেন:
كُفُّواأَيْدِيَكُمْ.
তোমরা তোমাদের হাতগুলোকে গুটিয়ে রাখো (নিসা:৭৭)
সুতরাং জিহাদ যদি শুধু যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির নাম হয়ে থাকে, তবে কুরআনে দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতকে কেন জিহাদ শব্দ দিয়ে ব্যক্ত করা হয়েছে?
এই সংশয়ের জবাব হলো,উক্ত আয়াতে জিহাদ তার আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ এখানে (جَاهِدْ ) শব্দের অর্থ হলো কাফেরদের কাছে তাবলিগকরার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শক্তি ও সামর্থ্য ব্যয় করো।কেননা, আরবি ভাষায় কষ্ট ও মেহনত করে যে কোনো কাজ করাকেই জিহাদ বলা হয়। চাই তা ভালো কাজ হোক বা মন্দ কাজ। তাই জিহাদ শব্দ ব্যবহার করলেই তা ইসলামের প্রসিদ্ধ ইবাদত 'জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ' বলে গণ্য হবে না। আর যে কোনো কাজে জিহাদ শব্দ ব্যবহার করাটাই যদি জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ হওয়ার দলিল হয় তাহলে কুরআনে এই আয়াত সম্পর্কে আপনি কি বলবেন।
وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَی أنْ تُشْرِكَ بِي مَالَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا.
" তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সঙ্গে শিরক করানোর জন্য জিহাদ (চেষ্টা) করে যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নাই ;তবে তাদের এ কথা কখনো মানবে না (লুকমান:১৫)
* দেখুন!
এই আয়াতে শিরকের দিকে দাওয়াত দেয়ার মতো জঘন্য কাজকে জিহাদ শব্দে করা ব্যক্ত করা হয়েছে। এখন কেউ যদি বলে,শিরকের দিকে দাওয়াত দেয়াটাও জিহাদ,তাহলে আপনি তাকে কী বলবেন? নিঃসন্দেহে আপনি তাকে এটিই বলবেন এখানে জিহাদ শাব্দিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। শরয়ি ও পারিভাষিক অর্থ তথা জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ এখানে উদ্দেশ্য নয়।
[[ চতুর্থ পয়েন্ট]]
উপমহাদেশের যেসব বিভ্রান্ত আলেম নিজেদের মতো করে জিহাদের বিভিন্ন অর্থ বের করে সশস্ত্র যুদ্ধকে জিহাদের সর্বশেষ স্তর বলে প্রচার করে বেড়ান, তারা হয়তো কুরআনের এই তিনটি আয়াত দ্বারা বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে,
وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ هُوَاجْتَبَاكُمْ وَمَاجَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ.
" তোমরা আল্লাহর জন্য জিহাদ (শ্রম স্বীকার) করো, যেভাবে জিহাদ করা উচাত।তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন।তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি।( হজ:৭৮)
فَلَاتُطِعِالْكَافِرِينَ وَجَاهِدْهُمْ بِهِ جِهَادًا كَبِيرًا.
" সুতরাং (হে নবি) আপনি কাফেরদের আনুগত্য করবেন না এবং কুরআনের সাহায্যে আপনি তাদের সাথে প্রবল জিহাদ তথা (সংগ্রাম) চালিয়ে যান।( ফুরকান: ৫২)
وَالَّذِيْنَ جَاهَدُا فِينَالَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَاوَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ المُحسِنِينَ.
" যারা আমার উদ্দেশ্যে জিহাদ (সংগ্রাম) করে, আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব।আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন। (আনকাবুত:৬৯)
"এই আয়াত তিনটিতে জিহাদ তার আভিধানিক অর্থে এসেছে।অর্থাৎ এসব আয়াতে জিহাদ মানে সর্বাত্মক চেষ্টা-প্রচেষ্টাও কঠোর পরিশ্রম। এর অর্থ কোনোভাবেই শরিয়তের বিধান 'জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ' নয়। ইসলামের দ্বীতীয় রুকুন 'সালাত' দিয়ে বিষয়টি বোঝানো যায়। 'সালাত' শব্দটি কুরআনের তিনটি জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে,
وَلَاتُصَلِّ عَلَی أَحَدٍمِنْهُمْ مَاتَ أَبَدًا وَلَاتَقُمْ عَلَی قَبْرِهِ.
" আর তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে, তার ওপর কখনো সালাত (জানাজার নামাজ) আদায় করবে না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়াবে না। ( তাওবা :৮৪)
وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إنَّ صَلَا تَكَ سَكَنٌ لَهُمْ.
" আপনি তাদের জন্য সালাত(দোয়া) করুন।নিঃসন্দেহে তোমার সালাত তাদের জন্য চিত্তস্বস্তিকর।(তাওবা:১০৩)
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائكَتِهُ يُصَلُّونَ عَلَی النَّبِيِّ يَاأَيَّهَاالَّذِينَ آمَنُوا صَلُّواعَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا.
" আল্লাহ নবির প্রতি সালাত (রহমত) প্রেরণ করেন ও তাঁর ফেরেশতাগণ ও নবির প্রতি সালাত (দরুদ) প্রেরণ করেন। হে মুমিনগন! তোমরা নবির প্রতি সালাত (দরুদ) প্রেরণকরো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।( আহজাব: ৫৬)
★ এই আয়াতগুলোতে সালাত বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।যেমন :জানাজার নামাজ, দোয়া,দরুদ,রহমত ইত্যাদি। এখন কেউ যদি বলে,কিয়াম-কেরাত-রুকু সিজদাওয়ালা সালাতই একমাত্র সালাত নয়।বরং সালাতের বিভিন্ন স্তর আছে।
যেমন: দোয়া,রহমত,দরুদ ইত্যাদি। আর এর সর্বোচ্চ স্তর হলো রুকু-সিজদাওয়ালা নামাজ। তবে এই কথাটি কি গ্রহণযোগ্য হবে? কক্ষনো হবে না..... দোয়া,রহমত,দরুদ এসব কোনোভাবেই শরিয়তের ফরজ বিধান 'সালাতের' বিভিন্ন স্তর নয়।
♦একটি সতর্কবার্তা ♦
আমাদের মনে রাখতে হবে, জিহাদ জরুরিয়াতে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত।আর এই কথার ওপর উম্মতের ইজমা কায়েম হয়েছে যে, জরুরিয়াতে দ্বীনের মধ্যে এমন কোনো তাবিল করা কুফর,
যে তাবিলের দ্বারা তার ওই সুরত বাকি থাককে না,
যা তাওয়াতুরের দ্বারা প্রমাণিত।
(ইকফারুল মুলহিদিন)
★ সুতরাং জিহাদের অর্থেকে যারা ব্যাপক করছে কিংবা জিহাদ নয় এমন আমলকে শরয়ি জিহাদ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে, এহেন গর্হিত কর্মকাণ্ড তাদেরকে কুফর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে।
হজরত আবু-বকর সিদ্দিক (রাযিআল্লাহু আনহু) জাকাতে তাবিলকারী ও বিকৃতি সাধনকারীদের মুরতাদ ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা করেছিলেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)
সংশয় নিরসন সিরিজ পর্ব-০১- প্রথম সংশয়
জিহাদের অর্থ বিকৃতি।
জিহাদ সিরিজ।
দ্বীনের কল্যাণে যে কোনো চেষ্টা সাধনাই কি জিহাদ?
আসুন প্রথমে সংশয়টি বিস্তারিত জেনে নেই। বর্তমানে ইসলাম ও মুসলমানদের চরম ক্রান্তিকাল চলছে, সম্মিলিত কুফ্ফার বাহিনীর
হিংস্র থাবা দ্বীনও মুমিনদেরকে ক্ষতবিক্ষত করে চলছে পৃথিবীর প্রান্ত প্রান্ত। এমতাবস্থায় ইসলাম ও মুসলমানদের হেফাজতের জন্য
আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র হাতিয়ার জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।ঠিক তখনি একদল ভীতি ও দুনিয়া লোভী আলেম জিহাদের সংজ্ঞা ও পরিচয় বিকৃতি করে সাধারণ মুসলমানদেরকে
বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে। তারা বলছে জিহাদ অর্থ কঠোর চেষ্টা ও সাধনা করা। দ্বীনের পথে যে কোনো মেহনতই জিহাদ। তালিম,তাবলিগ ও তাজকিয়াসহ সব ইবাদতই জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। অনেকে পুরো বিষয়টিকে আরও একটু সাজিয়ে গুছিয়ে
এভাবে পেশ করেন।মুমিনের জীবনের সঙ্গে জিহাদ ও তপ্রোতভাবে
জড়িত। ব্যক্তিগত জীবনে শয়তান ও কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের মাধ্যমে শুরু হয় জিহাদ নামের এই ইবাদত।
তারপর পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে আল্লাহর নাফরমানী থেকে নিজেকে ও অধীনস্তদের বাঁচাতে তাকে জিহাদ করতে হয় শয়তান ও তার চেলাচামুণ্ডদের বিরুদ্ধে। এভাবে রাষ্ট্রীয় জীবনে এসেও কখনো তাকে অস্ত্রও হাতে তুলে নিতে হয়। এটি হলো জিহাদের সর্বোচ্চ স্তর।সুতরাং জিহাদ মানেই যুদ্ধ বা রক্তারক্তি নয়।
এটি অনেক ব্যাপক একটি ইবাদত। যা আমাদের ব্যক্তিক ও সামষ্টিক জীবনের সব ইবাদতকে শামিল করে।
সংশয় নিরসন
ইসলামের শুরুথেকেই যুগে যুগে শরিয়তের বিভিন্ন বিধানের বিকৃতির ধারাবাহিকতা চলে আচ্ছে,বাতিল ও বন্ডদের দৌরাত্ম সাময়িক বিগ্নতা ঘঠালেও কেউ এই বিকৃতি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
উম্মাহর হক্ব পন্থী আলেমরা এসব বিকৃতি চিহৃিত করে তার সমচিত
জবাব দিয়েছেন।এবং ইসলামকে স্বচ্ছ ও নির্ভেজাল রেখেছেন ইসলামের ইতিহাসে যেসব বিধান নিয়ে সবচেয়ে তাহরিফ বা বিকৃতি করা হয়েছে তার মধ্যহতে অন্যতম হল জিহাদ
ফি-সাবিলিল্লাহ।
ভারত উপমহাদেশে সর্ব প্রথম এধরনের সংশয় ছড়ায় ইংরেজদের
সৃষ্ট বন্ড নবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, মুসলমানদের ইংরেজ বিরোধী জিহাদকে নিশ্চিহৃ করার লক্ষ্যে তারা জিহাদের পরিচয় বিকৃতি করার অপচেষ্টা চালায় জিহাদের সংজ্ঞা ও পরিচয় নিয়ে
উল্লেখিত ব্যাখ্যাটি বন্ড কাদিয়ানী কিতাব ছাড়া বিগত ১৩০০হিজরি
পর্যন্ত রচিত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের কোনো কিতাবেই
আপনি পাবেন না।
পরবর্তীকালে তথাকথিত দুনিয়া লোভি আলেম কাদিয়ানী কিতাব
থেকে এই বিভ্রান্তি আমদানি করে। প্রকৃতপক্ষে জিহাদ
ফি-সাবিলিল্লাহ ইসলামি শরিয়তের একটি পরিভাষা।
যার অপর নাম কিতাল ফি-সাবিলিল্লাহ বা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করা। তা কখনই যেকোনো দ্বীনী যেষ্টা সাধনা করার নাম নই।বিভ্রান্তি সৃষ্টি কারীরা মূলত জিহাদের আভিধানিক অর্থকে শরিয় মূল অর্থ হিসাবে চালিয়ে দেয়।
এখন আমরা চারটি নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে শরিয় জিহাদের প্রকৃত সংজ্ঞা ও পরিচয় তুলে ধরার প্রয়াস পাব।
[১]
কুরআনে কারিম।
[২]
হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াল্লাম।
[৩]
মুহাদ্দিসিনে কেরামের অভিমত।
[৪]
ফুকাহায়ে কেরামের অভিমত।
[১] কুআনে কারিম।
কুরআনে কারিমে জিহাদ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে যেসব আয়াত নাজিল হয়েছে, প্রায় সবগুলো আয়াতেই সরাসরি কিতাল বা যুদ্ধ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন।
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَكُمْ
"তোমাদের ওপর যুদ্ধ ফরজ করা হয়েছে যদিও তোমরা তা অপছন্দ করো। (সুরা বাকারা:২১৫)
* ইমাম বাগাবি রহিমাহুল্লাহ এই আয়াতের তাফসিরে বলেন:
أَيْ فُرِضَ عَلَيْكُمُ الجِهَادُ
" অর্থাৎ তোমাদের ওপর জিহাদ ফরজ করা হয়েছে। (তাফসিরে বগবি:১/২৭৩)
* এই আয়াতের তাফসিরে আল্লামা ইবনে কাসির রহিমাহুল্লাহ বলেন:
بِهَذَا إِيِجَابٌ مِنَ اللَّهِ تَعَالی لِلْجِهَادِ عَلَی المُسْلِمِينَ.
" এই আয়াত দ্বারা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলমানদের ওপর জিহাদ ফরজ করা হয়েছে।
(তাফসিরে ইবনে কাসির :১/৪২৮)
* দেখুন, মুফাসসিরগণ কিতালের তাফসির করেছেন সরাসরি জিহাদ শব্দ দিয়ে। কুরআনে যেটাকে কিতাল বা যুদ্ধ বলা হয়েছে তাঁরা সেটাকেই জিহাদ বলেছেন।
وَقَاتِلُوافِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ.
" যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো।(সূরা বাকারা:১৯০)
وَقَاتِلُوالْمُشْرِكِيِنَ كَافَّةًكَمَايُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً.
" তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মভাবে যুদ্ধ করো,যেমনিভাবে তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মভাবে যুদ্ধ করে থাকে।
(সূরা তাওবা :৩৬)
قَاتِلُواالًَذِينَ لَايُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَابِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَايُحَرِّمُونَ مَاحَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَايَدِينُونَ دِينَ الْحَقِْ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّی يُعْطُواالْجِزْيَةَعَنْ يَدٍوَهُمْ صَاغِرُون.
" যাদের প্রতি কিতাব অবর্তীণ হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও
তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা গণ্য করে না এবং সত্য দ্বীন গ্রহণ করে না ; তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে স্বহস্তে জিজিয়া দেয়। (সূরা তাওবা:২৯)
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّی لَاتَكُونَ فِتْنَةَ وَيَكُونَ الدّيْنُ كُلُّهُ لِلَّهِ.
" আর তোমরা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকো,যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দ্বীন পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। (সূরা আনফাল:৩৯)
* উল্লিখিত সবগুলো আয়াতের তাফসির খুলে দেখুন মুফাসসিরগণ কিতালকেই জিহাদ বলেছে এবং এর সংশ্লিষ্ট আহকাম বর্ণনা করেছেন।
[২]
হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম
* চলুন এবার সরাসরি রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে জিজ্ঞেস করা যাক।
★ জিহাদ কী?
قَالَ وَمَاالْجِهَادُ
قَالَ أَنْ تُقَاتِلَ الْكُفَّارَ إِذَالَقِيتَهُمْ. قَالَ فَأَيُّ الْجِهَادِ أَفْضَلُ؟ قَالَ مَنْ عُقِرَ جَوَادُهُ وَأُهْرِيقَ دَمُهُ.
" এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করেন : জিহাদ কী? তিনি উত্তর দেন : কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ করা, যখন তুমি তাদের মুখোমুখি হও; সাহাবি আবার জানতে চান : কোন জিহাদ উত্তম? তিনি উত্তর দেন : যার ঘোড়া ময়দানে নিহত হয়েছে এবং সে নিজেও শহিদ হয়েছে।
(মুসনাদু আহমদ: ১৭০২৭: হাদিসটি সহিহ)
★ মুহাদ্দিসিনে কেরামের অভিমত
* বুখারি শরিফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার আল্লামা কাসতাল্লানি রহিমাহুল্লাহ বলেন,
هُوَفِيْ الْاِصْطِلَاحِ قِتَالُ الْكُفَّارِ لِنُصْرَةِالإِسْلَامِ وَإِعلَاءِكَلِمَةِالله.
" শরয়ি পরিভাষায় জিহাদ হলো ইসলামের সাহায্যার্থে এবং আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।
(ইরশাদুস সারি:৫/৩১)
* বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার হানাফি মাজহাবের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি রহিমাহুল্লাহ বলেন:
وَفِيْ الشَّرْعِ بَذْلُ الْجُهْدِ فِيْ قِتَالِ الْكُفَّارِلِإِِعْلَاءِكَلِمَةِ اللّه.
" শরয়ি পরিভাষায় জিহাদ হলো আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার জন্য কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সর্বশক্তি ব্যয় করা।
(উমদাতুল কারি : ১৪/১১৫)
* মিশকাতুল মাসাবিহ এর ব্যাখ্যাকার বিখ্যাত হানাফি মুহাদ্দিস মোল্লা আলি কারি রহিমাহুল্লাহ বলেন:
وَشَرْعًابَذْلُ الْمَجْهُوْدِفِيْ قِتَالِ الْكُفَّارِ مُبَاشَرَةً أَوْمُعَاوَنَةًبِالْمَالِ أَوْبِالرّأْيِ أَوْبِتَكْثِيْرِالسَّوَادِأَوْغَيْرِذَلِكَ.
" ইসলামের পরিভাষায় জিহাদ হলো কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সশরীরে অংশগ্রহণকরা অথবা সম্পদ, মতামত, সংখ্যাধিক্য বা অন্য কোনো উপায়ে সর্বশক্তি ব্যয় করা।
(মিরকাত: ৭/২৬৭)
এখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে কোনো ধরনের চেষ্টা-সাধনা ও শক্তি-সামর্থ্য ব্যয় করাই হচ্ছে জিহাদ।
* মিশকাতুল মাসাবিহএর আরেক ব্যাখ্যাকার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা তিবি রহিমাহুল্লাহ বলেন:
وَالْجِهَادُ مَصْدَرُجَاهَدْتَ الْعَدُوَّ إِذَاقَابَلْتَهُ فِيْ تَحَمُّلِ الْحُهْدِ إِذَابَذَلَ كُلٌّ مِنْكُمَا جُهْدَهُ أَيْ طَاقَتَهُ فِيْ دَفْعِ صَاحِبِهِ ثُمَّ غَلَبَ فِيْ الْإِسْلَامِ عَلَي قِتَالِ الْكُفَّارِ.
"(আল জিহাদ) শব্দটি (جَاهَد) এর মাসদার বা ক্রিয়ামূল,جَاهَدْت)ََ العَدُوَّ) তখনই বলা হয় যখন দুই শত্রু একে অপরকে প্রতিহত করতে গিয়ে সর্বশক্তি ব্যয় করে। ইসলামি পরিভাষায় শব্দটি কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অর্থে প্রতিষ্ঠিত হয়।
(শরহুত তিবি:৭/৩২৫)
★ফুকাহায়ে কেরামের অভিমত
প্রথমে আমরা জিহাদ সম্পর্কে হানাফি মাজহাবের শেষ্ঠ ইমামদের মতামত জানাব।
* আল্লামা আলাউদ্দিন কাসানি হানাফি রহিমাহুল্লাহ: বলেন:
وَفِي عُرْفِ الشَّرْعِ يُسْتَعْمَلُ فِي بَذْلِ الْوُسْعِ وَالطَّل قَةِ بِالْقِتَالِ فِي سَبِيِل الِلّهِ.عَزَّوَجَلَّ.بِا لنَّفْسِ وَالْممَالِ وَاللِّسانِ. أَوْغَيْرِذَلِكَ. أَوْالْمُبَالَغَةِ فِي ذَلِكَ.
" শরিয়তের পরিভাষায় জিহাদ আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধকরতে গিয়ে জান-মাল-জবান ইত্যাদির মাধ্যমে সর্বশক্তি ব্যয় করা।
(বাদাইউস সানায়ি: ৭/৯৮)
* আল্লামা মুহাম্মদ বিন আলী হাসকাফি রহিমাহুল্লাহ বলেন
الدُّعَاءُإِلَی الدِّيْنِ الْحَقِّ وَقِتَالُ مَنْ لَمْ يَقْبَلْهُ.
" জিহাদ হলো, সত্য দ্বীনের দিকে আহবান করা এবং যে কবুল করবে না তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। (আদ্দুররুল মুখতার :১/৩২৯)
* আল্লামা ইবনে নুজাইম হানাফি রহিমাহুল্লাহ বলেন :
وَالجِهَادُ هُوَالدُّعَاءُإِلَی الدِّيْنِ الحَقِّ وَالْقِتَالُ مَعَ مَنِ امْتَنَعَ عَنِ الْقَبُوْلِ بِالنَّفْسِ وَالْمَلِ.
" জিহাদ হলো, সত্য দ্বীনের দিকে আহবান করা এবং যে কবুল করবে না তার বিরুদ্ধে জান-মাল দিয়ে যুদ্ধ করা।
(আল-বাহরুর রায়িক : ৫/৭৬)
* আল্লামা ইবনুল হুমাম হানাফি রহিমাহুল্লাহ সংজ্ঞা দেন :
وَهُوَدَعْوَتُهُمْ إِلَی الدِّيْنِ الْحَقِّ وَقِتَالُهُمْ إِنْ لَمْ يَقْبَلُوا.
" জিহাদ হলো, সত্য দ্বীনের দিকে আহবান করা এবং গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ।
(ফাতহুল কাদির :৫/৪৩৫)
★ এবার দেখুন, জিহাদ সম্পর্কে শাফেয়ি মাজহাবের উলামায়ে কেরাম কী বলেন।
* বুখারী শরীফের প্রখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি শাফেয়ি রহিমাহুল্লাহ বলেন:
وَشَرْعًابَذْلُ الْجُهْدِ فِيْ قِتَالِ الْكُفَّارِ.
" ইসলামের পরিভাষায় জিহাদ হলো কাফেরদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি ব্যয়করা। (ফাতহুল বারি : ৬/৩)
★ এবার শুনুন, জিহাদ সম্পর্কে মালেকি মাজহাবের উলামায়ে কেরাম কী বলেন।
* মালেকি মাজহাবের বিখ্যাত গ্রন্থ হাশিয়াতুস সাবি আলাশ শরহিস সাগির- এ উল্লেখ আছে :
وَاصْطِلاَحًاقَالَ ابن عَرَفَةَ: قِتَالُ مُسْلِمٍ كَافِرًا غَيْرَذِيْ عَهْدٍلِإِعْلاَءِ كَلِمَةِ الله تَعَالَی- أوْحُضُوْرُهُ لَهُ أَوْدُخُوْلَهُ أَرْضَهُ.
" ইবনু আরাফা রহিমাহুল্লাহ বলেন: জিহাদ হলো, আল্লাহর বিধানকে উঁচু করার জন্য মুসলিম কর্তৃক যাদের সঙ্গে চুক্তি নেই এমন কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, বা যুদ্ধের জন্য (রণাঙ্গনে) উপস্থিত হওয়া অথবা কাফেরদের দেশে যুদ্ধের জন্য প্রবেশ করা।
(হাশিয়াতুস সাবি: ২/২৬৭)
★ এবার আমরা জানাব, জিহাদ সম্পর্কে হাম্বলি মাজহাবের উলামায়ে কেরাম কী বলেন।
* আল্লামা ইবনুল মুফলিহ আল-মাকদিসি হাম্বলি রহিমাহুল্লাহ বলেন :
وَشَرْعًا عِبَارَةٌ عَنْ قَتْلِ الْكُفَّارِ.
" শরিয়তের পরিভাষায় কাফেরদের হত্যা করাকে জিহাদ বলে।
(আল-মুবদি শরহুল মুকনি : ৩/২৮০)
♦ জিহাদের উল্লিখিত সবগুলো সংজ্ঞায় শব্দের কিছু তারতম্য বাদ দিলে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকেই জিহাদ বলা হয়েছে। যুগে যুগে মুসলমানগণ জিহাদের এই অর্থই বুঝেছেন। দ্বীনের পথে যে কোনো মেহনতই জিহাদ নয়। তালিম,তাবলিগ, তাজকিয়াসহ অন্যান্য যে কোনো ইবাদতই জিহাদ নয়। জিহাদ হলো কেবল কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকাণ্ড।
♣এবার আমরা চারটি আলাদা পয়েন্ট থেকে সংশয়টি নিরসন করার প্রয়াস পাব।
[[ প্রথম পয়েন্ট]]
* রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে যখন মদিনার অলিগলিতে ( حَيَّ عَلَی الْجِهَاد), এসো জিহাদের দিকে এই আহবান উচ্চকিত হতো তখন সাহাবাগণ সালাত,সিয়াম,জাকাত ইত্যাদি ইবাদতের দিকে দৌড়াতেন না ; তালিম ও আত্মশুদ্ধিতেও আত্মনিয়োগ করতেন না ; কিংবা কলম নিয়ে ছুটে এসে বলতেন নাড়ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোন বিষয়ে প্রবন্ধ লিখতে হবে? কী সম্বন্ধে গ্রন্থ রচনা করতে হবে? বরং সবাই ঢাল-তরবারি-তীর-ধনুক-বর্শা নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন।
যুগে যুগে উম্মাহর ইমামগণ জিহাদের এই অর্থই বুঝেছেন। ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম,ইমাম তিরমিজিসহ সমস্ত মুহাদ্দিসিনে কেরাম তাঁদের কিতাবে 'জিহাদ' অধ্যায় কেবল সশস্ত্র যুদ্ধ-বিষয়ক হাদিসগুলোই এনেছেন। ঘোড়া,তরবারি,গনিমত,যুদ্ধের প্রশিক্ষণ, কিতালের ফজিলত, মুজাহিদের মর্যদা,শাহাদাতের তামান্না,যুদ্ধে বাহাদুরি প্রদর্শন,জিহাদে উদ্বুদ্ধকরণ, গোয়েন্দাগিরি,সমরকৌশল,
জিহাদের আহকাম ইত্যাদি বিষয়গুলোই এতে স্থান পেয়েছে, এগুলো ছাড়া তালিম,আত্মশুদ্ধি,তাবলিগ বা অন্য কোনো ইবাদতের আলোচনা এসব অধ্যায়ে করা হয়নি।
একইভাবে সমস্ত ফিকহের কিতাবে 'কিতাবুল জিহাদ' বা জিহাদ অধ্যায়ে উম্মাহর ফকিহগণ কিতাল বা যুদ্ধের আলোচনাই করেছেন দেশ দারুল ইসলাম থেকে দারুল হরব কীভাবে হয়? যুদ্ধে কাদের হত্যা করা যাবে? কোন ধরনের হামলা করা বৈধ? গনিমত,ফাই জিজিয়া ইত্যাদির আহকামই এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। তালিম,তাজকিয়া বা অন্যান্য কোনো ইবাদতের আলোচনা এতে স্থান পায়নি।
দীর্ঘ ১৩০০ বছর পর্যন্ত জিহাদের এই অর্থই উম্মত বুঝেছে এবং আমল করছে। পরবর্তীকালে উপমহাদেশে উলামায়ে কেরামের ইংরেজবিরোধী জিহাদকে নস্যাং করার জন্য অভিশপ্ত কাদিয়ানিরা জিহাদের অর্থ বিকৃতি করতে শুরু করে। তারা বক্তৃতা- বিকৃতি ও লেখালেখির মাধ্যমে প্রচারণ চালাতে থাকে যে,দ্বীনের কল্যাণে যে কোনো মেহনতই জিহাদ। দুঃখের বিষয়,কালের বিবর্তনে তাদের সেই বিকৃতি অনেক হকপন্থী আলেমরাও গ্রহণ করে বসে।
[[ দ্বিতীয় পয়েন্ট]]
* প্রকৃতপক্ষে ইসলামের পরিভাষাগুলোকে যদি আভিধানিক অর্থে পয়োগ করা হয় তবে কোনো ইবাদতেরই অস্তিত্ব থাকবে না। কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করা যাক।
সালাতের আভিধানিক অর্থ নিতম্ব হেলানো,দোয়া করা, দরুদ পড়া ইত্যাদি। এখন কেউ যদি বলে নিতম্ব দোলানোও সালাত,দোয়া করাও সালাত, দরুদ পড়াও সালাত তাহলে সেটা কি গ্রহণযোগ্য হবে?
কেউ যদি এসব করে, তবে কি আপনি বলবেন সে সালাত আদায় করে ফেলেছে? অথচ আভিধানিক ভাবে তিনি একজন মুসল্লি বা সালাত আদায়কারী।
সওমের আভিধানিক অর্থ 'বিরত থাকা'। এখন কেউ যদি ঘন্টাখানিক খানাপিনা থেকে বিরত থাকে তাকে কি রোজাদার বলা হবে? অথচ আভিধানিকভাবে তিনি একজন সওম পালনকারী।
হজের আভিধানি অর্থ 'ইচ্চা করা ' মনস্থ করা। এখন কেউ যদি যে কোনো কিছু করার ইচ্ছা করে, তাকে কি আপনি হাজি বলবেন? অথচ আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি একজন হাজি।
♦ সুতরাং বোঝা গেল জিহাদের আভিধানিক অর্থ বলে পারিভাষিক অর্থের মধ্যে সংশয়, সন্দেহ ও ব্যাপকতা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা দ্বীনের একটি সুস্পষ্ট বিকৃতি এবং আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচরণের নামান্তর।
[[ তৃতীয় পয়েন্ট]]
দাওয়াত, তালিম,তাবলিগ,তাজকিয়া,রাজনীতি, নির্বাচন,মিছিল,
সব কিছুকেই যারা জিহাদ বলে চালিয়ে দেয়, তারা মূলত জিহাদের শাব্দিক অর্থের আশ্রয় নিয়ে সুচতুরভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
* জিহাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল আসির রহিমাহুল্লাহ, আন-নিহায়াহ'তে বলেন:
هوالمبالغةواستفراغ الوسع والطاقةمن قول أوفعل.
" কথা বা কর্মে সর্বোচ্চ সামার্থ্য ও শক্তি ব্যয় করা।
(আন-নিহায়া :১৫৭ পৃষ্ঠা)
♠ আর পারিভাষিক অর্থ নিয়ে আমরা পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ♠
* কুরআন শরিফের বেশ কয়েকটি আয়াতে জিহাদ শব্দটি তার আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই আয়াতগুলো দেখে অনেকেই এই ভেবে বিভ্রান্ত হন যে এখানেতো দাওয়াত ও তাবলিগকেও জিহাদ বলা হয়েছে। অতএব জিহাদ মানে কেবল সশস্ত্র যুদ্ধ বা যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড নয় জিহাদ দ্বীনের সকল ইবাদতকেই ধারণ করে। যেমন কুরআন শরিফে এসেছে:
فَلَاتُطِعِ الْكَافِرِينَ وَجَاهِدْهُمْ بِهِ جِهَادًاكَبِيرًا.
" সুতরাং (হে নবি) আপনি কাফেরদের আনুগত্য করবেন না এবং কুরআনের সাহায্যে আপনি তাদের সাথে প্রবল জিহাদ তথা (সংগ্রাম)চালিয়া যান। (ফুরকান:৫২)
এই আয়াতে দাওয়াত ও তাবলিগকে জিহাদ বলা হয়েছে। অথচ এতে যুদ্ধের কথা নেই। কারণ এটিতো সেই সময়ের কথা যখন আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিয়েছিলেন:
كُفُّواأَيْدِيَكُمْ.
তোমরা তোমাদের হাতগুলোকে গুটিয়ে রাখো (নিসা:৭৭)
সুতরাং জিহাদ যদি শুধু যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির নাম হয়ে থাকে, তবে কুরআনে দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতকে কেন জিহাদ শব্দ দিয়ে ব্যক্ত করা হয়েছে?
এই সংশয়ের জবাব হলো,উক্ত আয়াতে জিহাদ তার আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ এখানে (جَاهِدْ ) শব্দের অর্থ হলো কাফেরদের কাছে তাবলিগকরার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শক্তি ও সামর্থ্য ব্যয় করো।কেননা, আরবি ভাষায় কষ্ট ও মেহনত করে যে কোনো কাজ করাকেই জিহাদ বলা হয়। চাই তা ভালো কাজ হোক বা মন্দ কাজ। তাই জিহাদ শব্দ ব্যবহার করলেই তা ইসলামের প্রসিদ্ধ ইবাদত 'জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ' বলে গণ্য হবে না। আর যে কোনো কাজে জিহাদ শব্দ ব্যবহার করাটাই যদি জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ হওয়ার দলিল হয় তাহলে কুরআনে এই আয়াত সম্পর্কে আপনি কি বলবেন।
وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَی أنْ تُشْرِكَ بِي مَالَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا.
" তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সঙ্গে শিরক করানোর জন্য জিহাদ (চেষ্টা) করে যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নাই ;তবে তাদের এ কথা কখনো মানবে না (লুকমান:১৫)
* দেখুন!
এই আয়াতে শিরকের দিকে দাওয়াত দেয়ার মতো জঘন্য কাজকে জিহাদ শব্দে করা ব্যক্ত করা হয়েছে। এখন কেউ যদি বলে,শিরকের দিকে দাওয়াত দেয়াটাও জিহাদ,তাহলে আপনি তাকে কী বলবেন? নিঃসন্দেহে আপনি তাকে এটিই বলবেন এখানে জিহাদ শাব্দিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। শরয়ি ও পারিভাষিক অর্থ তথা জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ এখানে উদ্দেশ্য নয়।
[[ চতুর্থ পয়েন্ট]]
উপমহাদেশের যেসব বিভ্রান্ত আলেম নিজেদের মতো করে জিহাদের বিভিন্ন অর্থ বের করে সশস্ত্র যুদ্ধকে জিহাদের সর্বশেষ স্তর বলে প্রচার করে বেড়ান, তারা হয়তো কুরআনের এই তিনটি আয়াত দ্বারা বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে,
وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ هُوَاجْتَبَاكُمْ وَمَاجَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ.
" তোমরা আল্লাহর জন্য জিহাদ (শ্রম স্বীকার) করো, যেভাবে জিহাদ করা উচাত।তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন।তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি।( হজ:৭৮)
فَلَاتُطِعِالْكَافِرِينَ وَجَاهِدْهُمْ بِهِ جِهَادًا كَبِيرًا.
" সুতরাং (হে নবি) আপনি কাফেরদের আনুগত্য করবেন না এবং কুরআনের সাহায্যে আপনি তাদের সাথে প্রবল জিহাদ তথা (সংগ্রাম) চালিয়ে যান।( ফুরকান: ৫২)
وَالَّذِيْنَ جَاهَدُا فِينَالَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَاوَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ المُحسِنِينَ.
" যারা আমার উদ্দেশ্যে জিহাদ (সংগ্রাম) করে, আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব।আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন। (আনকাবুত:৬৯)
"এই আয়াত তিনটিতে জিহাদ তার আভিধানিক অর্থে এসেছে।অর্থাৎ এসব আয়াতে জিহাদ মানে সর্বাত্মক চেষ্টা-প্রচেষ্টাও কঠোর পরিশ্রম। এর অর্থ কোনোভাবেই শরিয়তের বিধান 'জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ' নয়। ইসলামের দ্বীতীয় রুকুন 'সালাত' দিয়ে বিষয়টি বোঝানো যায়। 'সালাত' শব্দটি কুরআনের তিনটি জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে,
وَلَاتُصَلِّ عَلَی أَحَدٍمِنْهُمْ مَاتَ أَبَدًا وَلَاتَقُمْ عَلَی قَبْرِهِ.
" আর তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে, তার ওপর কখনো সালাত (জানাজার নামাজ) আদায় করবে না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়াবে না। ( তাওবা :৮৪)
وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إنَّ صَلَا تَكَ سَكَنٌ لَهُمْ.
" আপনি তাদের জন্য সালাত(দোয়া) করুন।নিঃসন্দেহে তোমার সালাত তাদের জন্য চিত্তস্বস্তিকর।(তাওবা:১০৩)
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائكَتِهُ يُصَلُّونَ عَلَی النَّبِيِّ يَاأَيَّهَاالَّذِينَ آمَنُوا صَلُّواعَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا.
" আল্লাহ নবির প্রতি সালাত (রহমত) প্রেরণ করেন ও তাঁর ফেরেশতাগণ ও নবির প্রতি সালাত (দরুদ) প্রেরণ করেন। হে মুমিনগন! তোমরা নবির প্রতি সালাত (দরুদ) প্রেরণকরো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।( আহজাব: ৫৬)
★ এই আয়াতগুলোতে সালাত বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।যেমন :জানাজার নামাজ, দোয়া,দরুদ,রহমত ইত্যাদি। এখন কেউ যদি বলে,কিয়াম-কেরাত-রুকু সিজদাওয়ালা সালাতই একমাত্র সালাত নয়।বরং সালাতের বিভিন্ন স্তর আছে।
যেমন: দোয়া,রহমত,দরুদ ইত্যাদি। আর এর সর্বোচ্চ স্তর হলো রুকু-সিজদাওয়ালা নামাজ। তবে এই কথাটি কি গ্রহণযোগ্য হবে? কক্ষনো হবে না..... দোয়া,রহমত,দরুদ এসব কোনোভাবেই শরিয়তের ফরজ বিধান 'সালাতের' বিভিন্ন স্তর নয়।
♦একটি সতর্কবার্তা ♦
আমাদের মনে রাখতে হবে, জিহাদ জরুরিয়াতে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত।আর এই কথার ওপর উম্মতের ইজমা কায়েম হয়েছে যে, জরুরিয়াতে দ্বীনের মধ্যে এমন কোনো তাবিল করা কুফর,
যে তাবিলের দ্বারা তার ওই সুরত বাকি থাককে না,
যা তাওয়াতুরের দ্বারা প্রমাণিত।
(ইকফারুল মুলহিদিন)
★ সুতরাং জিহাদের অর্থেকে যারা ব্যাপক করছে কিংবা জিহাদ নয় এমন আমলকে শরয়ি জিহাদ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে, এহেন গর্হিত কর্মকাণ্ড তাদেরকে কুফর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে।
হজরত আবু-বকর সিদ্দিক (রাযিআল্লাহু আনহু) জাকাতে তাবিলকারী ও বিকৃতি সাধনকারীদের মুরতাদ ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা করেছিলেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)
Comment