বাংলাদেশ অঞ্চলে দ্বীন কায়েমের সমস্যা সম্ভাবনা :১ম পর্ব
সমস্যা:
১. পূর্ণাঙ্গ দ্বীন কী? এ সম্পর্কে আমজনতা এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ ওলামায়ে কেরামের সামনে দলিল ভিত্তিক স্পষ্ট ধারণার অভাব এবং দ্বীনের ক্ষুদ্র অংশকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন দাবী করা বা মনে করা :
দ্বীন কায়েম করতে হলে সবার আগে জানতে হবে দ্বীন কী ? কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এ বিষয়ে প্রতি পদে পদে আমাদের মাঝে বিভ্রান্তি বিরাজমান। ফলে দ্বীন কায়েম বাদ দিয়ে দ্বীন কী এটা বোঝাতেই জান বেরিয়ে যাচ্ছে। যে কারেণে তমাসাচ্ছন্ন এই যামানায় বিশ্বের দুই শতাধিক কোটি মুসলমান যখন মুক্তির পথ খুঁজতে গিয়ে দিশেহারা তখন অনেকেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের দাবী নিয়ে মুক্তির অসংখ্য ফ্রন্ট খুলে বসেছেন । যদিও এসমস্ত ফ্রন্টের অধিকাংশের সাথেই ইসলামের দূরতম বা ন্যূনতম কোন সর্ম্পক নেই । অর্থাৎ এগুলো হচ্ছে সর্বসম্মতভাবে ফিরাকে বাতিলা। কিন্তু অপর দিকে আমরা যারা নিজেদেরকে হকপন্থী বলে দাবী করছি আমরা আসলে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন হিসাবে মানুষের সামনে কী হাজির করছি ? আমাদের কর্মকান্ডকে যদি শরীয়াহর মানদন্ডে যাচাই করি তাহলে ফলাফল কী হবে ? যেমন ধরা যাক :
• দাওয়াতে তাবলীগের কথা : দাওয়াতে তাবলীগ আংশিকভাবে দ্বীনের কিছু খিদমত করে। কিন্তু এই জামাতের নীতি নির্ধারকগণ বা কর্মীগণ এই জামাতকে বা এই আংশিক খিদমতকেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন মানছেন বা শুধুমাত্র এখানেই মুক্তির পথ খুঁজছেন বা শুধু এই কাজ করেই জান্নাত পেয়ে যাচ্ছেন। তারা দ্বীনের একটি ছোট অংশকেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন বানিয়ে ফেলেছেন। পাতাকেই গাছ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন (এ বিষয়টা প্রচলিত দ্বীনি ফ্রন্টের সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য)। যে একবার চিল্লা দিয়েছে সে সারাজীবন চিল্লাই দিয়ে যাচ্ছে ।কোন প্রমোশন বা ডিমোশন নেই। একই ক্লাসে আজীবন থাকতেই যেন সকলে বদ্ধপরিকর। কিন্তু এই একই ব্যক্তি জীবনের বাকী সব ক্ষেত্রেই আবার তরক্কীর জন্য মরিয়া। সেটা শিক্ষার ক্ষেত্রেই হোক, চাকরীর ক্ষেত্রেই হোক,ব্যবসার ক্ষেত্রেই হোক বা রাজনীতি বা অন্য যেকোন ক্ষেত্রেই হোক। সব ক্ষেত্রেই সে শুধু উপরেই উঠতে চায়। কখনো সে এক জায়গায় স্থির থাকতে চায় না। শিক্ষা ক্ষেত্রে যেমন সে ১ম শ্রেণী থেকে মাস্টার্স বা তারপরও এম ফিল, পিএইচডি আরো কত কিই না করছে । আবার এই সব ডিগ্রী হাসিল করার পর চাকুরীতে বা পেশাগত অধিকতর তরক্কীর জন্য সে ইভনিং এমবিএ সহ আরও কত ডিপ্লোমা যে করছে তার হিসাব দেয়া মুশকিল। অন্যদিকে সে যখন ব্যবসা করছে তখন প্রতিদিনই ব্যবসায় তরক্কী করতে মরিয়া। এক ব্যবসা থেকে আর এক ব্যবসা, সেই ব্যবসা থেকে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট। এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট এর পর শিল্পপতি হওয়ার বাসনা । কোনটাই অপূর্ণ রাখছেনা সে । অপূর্ণ থাকছে কেবল তার দ্বীন চর্চা । এখানে এসেই তার মনে হচ্ছে বা তাকে মনে করানো হচ্ছে যে এই এককাজ করলেই চলবে। এটাই তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তার মানে কী দাঁড়ালো ? মানে দাঁড়াল এই যে আমরা নিজের জন্য যা পছন্দ করি দ্বীনের জন্য তা পছন্দ করি না। অর্থাৎ আমরা চাকুরী বা ব্যবসা বা নিজ পেশার পূর্ণাঙ্গতা অনুধাবন করে নিজ প্রয়োজনে এসকল ক্ষেত্রে যেমন প্রতিটি স্তর সফলতার সঙ্গে অতিক্রম করতে বদ্ধপরিকর। ঠিক উল্টোভাবে এই আমরাই সবচেয়ে কঠিন ময়দান তথা আখেরাতের জন্য দ্বীনের একটি প্রাক প্রাথমিক স্তরে আবদ্ধ থাকাকেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন সাব্যস্ত করে জান্নাত হাছিলের দিবা স্বপ্ন দেখছি।
এখানে আরও উল্লেখ্য যে, দাওয়াতে তাবলীগে একটি বিষয় বার বার মানুষের সামনে তুলে ধরা হ্য় তা হল – যেকোন একজন সাহাবীর জীবন অনুসরণ করলেই হেদায়েত পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র একদম উল্টো। কারণ বাস্তবে তাবলীগের ময়দানে কোন একজন সাহাবীর জীবনী পড়ানোরও কোন ব্যবস্থা নেই। যদি থাকত তাহলে প্রথমেই হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা
এর জীবনী পড়ানো হত । আর হযরতের জীবনী যদি পড়া থাকত তাহলে তাবলীগের সব সাথীই এ বিষয়টা জানতেন যে দ্বীনের একটি বিধান পালন বা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সামান্য একটু কম-বেশী হওয়াটাকে তিনি কিভাবে গ্রহন করেছিলেন। অর্থাৎ হুজুর পাক (সা
এর ইন্তেকালের পর যাকাত আদায়ের সময় তিনি বলেছিলেন হুজুর পাক (সা
জীবদ্দসায় যে বা যারা যাকাত প্রদানের সময় রশিসহ ছাগল দিত এখন যদি তারা ছাগল দিয়ে শুধু রশিটা দিতেও অস্বীকার করে তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে কিতাল করব। আর এবিষয়টা জানলে তাবলীগের একজন সাথী কখনই দ্বীনের অংশবিশেষকে দ্বীন বলে চালিয়ে দেওয়ার ঈমান বিধ্বংসী কাজ করার দুঃসাহস করতেন না বা রাসূল (সাঃ) কর্তৃক জিহাদের জন্য প্রেরিত সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর জামাতের সাথে তাবলীগে প্রেরিত জামাতকে এক করার মত গর্হিত অপরাধে লিপ্ত হত না। আবার ফাজায়েলে আ’মাল কিতাবের হেকায়েতে সাহাবা অধ্যায়ে সাহাবায়ে কিরাম (রা
এর যে সকল ঈমানদীপ্ত ঘটনাবলী উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেসব ঘটনাবলী থেকে উম্মতের যে শিক্ষা গ্রহন করা্র কথা সেখানেও তাবলীগের কান্ডারীরা সাথীদেরকে গোমরাহ করতে সক্ষম হয়েছেন। উদাহরণ হিসাবে একটি ঘটনা উল্লেখ করলেই পুরো বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে – তাবুক অভিযানের সময় কাব বিন মালেক, হেলাল বিন উমাইয়া এবং মোরারাহ বিন রাবী (রা
কিছুটা অলসতা, কিছুটা সম্পদের চিন্তা আর কিছুটা এই ভেবে পিছনে পড়ে গিয়েছিলেন যে “আমরা ত সকল যুদ্ধেই অংশগ্রহন করে থাকি। একটি যুদ্ধে না গেলে আর কি হবে ? ” তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহন না করার কারণে এই তিন জন সাহাবীর কি শাস্তি হয়েছিল তা ফাজায়েলে আ’মাল কিতাবের হেকায়েতে সাহাবা অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার ফায়েদা তে যা লেখা হয়েছে তা পড়লেই আমরা সহযেই বুঝতে পারব যে কিভাবে তাবলীগের কান্ডারীরা সাথীদেরকে গোমরাহ করার মিশন বাস্তবায়ন করছেন ।“ ফায়েদা : ইহা ছিল সাহাবায়ে কেরামদের আনুগত্য, দ্বীনদারি ও আল্লাহ ভীরুতার নিদর্শন। তাহারা সারা জীবন জিহাদে শরীক হইয়াও একটিমাত্র জিহাদ অংশগ্রহণ না করার কারণে কত বড় কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হন এবং তা অবনত মস্তকে মানিয়া লন। তদুপরি যে সম্পত্তির কারণে এত বড় দুর্দশায় পতিত হন উহাকেও আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করিয়া দেন এবং কাফের বাদশাহের চিঠি পাইয়া উহাতে উত্তেজিত না হওয়া বরং উহাকে আল্লাহ ও রাসূল (সা
এর নারাজীর কারণ মনে করিয়া আরো বেশি কাতর হইয়া পড়েন। আজ আমরাও মুসলমান ! হুযুর (সা
এর শত সহস্র আদেশ নিষেধ আমাদের সামনে। উহার মধ্যে সবচেয়ে বড় হুকুম নামাজের কথাই ধরা যাক। আমরা কয়জন উহা আদায় করিতেছি আর যাহারা আদায় করিতেছি তাহারাইবা কীভাবে আদায় করিতেছি। হজ্ব এবং যাকাতের কথা না হয় পরেই আসলো। কারণ উহাতে তো টাকা পয়সা খরচ করিতে হয়।”
এখানে ফায়েদা বা শিক্ষাটা হওয়া উচিত ছিল বিগত দিনের কোন জিহাদ কাযা না হওয়া সত্তেও শুধুমাত্র একটি জিহাদ কাযার দরুণ হুজুর (সা
এর জীবদ্দশায় সাহাবায়ে কেরাম (রা
এর যদি এমন কঠিন শাস্তি হতে পারে তাহলে আমরা যে জীবনে একটি জিহাদেও অংশগ্রহন করিনি বা নিদেন পক্ষে জিহাদে যাওয়ার জন্য কোন প্রস্তুতিও নেইনি তাহলে আমাদের অবস্থা কী হবে ? কিন্তু এখানেও কৌশলে জিহাদের আলোচনায়ও নামাজের গুরুত্ব বুঝানো হচ্ছে। যদিও নামাজের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য ফাজায়েলে নামাজ নামে আলাদা অধ্যায়ই আছে।
• পীর মুরিদীঃ দ্বীন সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকার কারনে আমাদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পীরের মুরীদ হওয়া এবং পীরের নির্দেশমত জীবন যাপন করাকেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন মানছে বা শুধুমাত্র এখানেই মুক্তির পথ খুঁজছে বা জান্নাত পেয়ে যাচ্ছে । এই লাইনে কত প্রকার ভণ্ডামি চলছে তা আমরা সবাই জানি। আর যারা এক্ষেত্রে নিজেদেরকে হক বলে দাবী করেন হালে তাদের অবস্থা কি তাও আমরা জানি। এ অঞ্চলে যে পীর মুরিদী চলছে পৃথিবীর আর কোথাও এর দ্বিতীয় কোন নজির নেই। কুরআন হাদিস তন্ন তন্ন করে খুজলেও পীর মুরিদীর কোন সরাসরি সুস্পষ্ট বক্তব্য কেউ দেখাতে পারবেন না। যে রকমভাবে দেখাতে পারবেন নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, পর্দা বা অন্য যেকোন ফরজ আমলের ক্ষেত্রে। মূলত পীর মুরিদীর বিষয়টি সাবেত করার জন্য আপনাকে কিয়াসের আশ্রয় গ্রহন করতে হবে এবং কিয়াস ব্যবহার করে আপনি এটাকে সর্বোচ্চ জায়েজ প্রমাণ করতে পারবেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজকে আমরা দ্বীন কায়েমের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বাদ দিয়ে পীর-মুরিদীর মত জায়েজ বিষয় নিয়ে দিন-রাত এক করে ফেলছি। সাহাবায়ে কেরামের মধ্য থেকে এমন একজন সাহাবীর উদাহরণ দেয়া যাবে যিনি হাল আমলের পীর সাহেবদের ন্যায় শুধূমাত্র তাযকিয়াতুন নাফস বা তাসাউফের অংশবিশেষ এর উপর আমল করেছেন বা এই তাযকিয়াতুন নাফস বা তাসাউফের মাধ্যমে কোথাও দ্বীন কায়েম করেছেন ? বা এই কাজকেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন বলে চালিয়ে দিয়েছেন ? উপরন্তু বংশানুক্রমিক বা মিরাসী বা উত্তরাধিকারসূত্রে পীরালী অর্থাৎ পীরের ছেলে পীর, তার ছেলে পীর, তার ছেলে পীর, তার ছেলে পীর এভাবে জন্মসূত্রে পীর হওয়ার নজীর পৃথিবীর কোথায় আছে ? বা আজ থেকে ১৫০ বছর আগেও কি এরকম নজীর খুব একটা পাওয়া যাবে ? মানব রচিত আইনে জন্মসূত্রে কোন দেশের নাগরিক হওয়ার বিষয়টি আমরা জানি। আর এখন দেখছি জন্মসূত্রে পীরও হওয়া যায়। আফসোসের কথা হল জন্মসূত্রে কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জজ, ব্যারিস্টার হয়েছে শুনলে আমরা হাসি । কিন্তু জন্মসূত্রে পীর হওয়ার কথা শুনলে এই আমরাই কেঁদে কেঁদে তার মুরীদ হতে চলে যাই। হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে এই ওয়ারিশী বড় ভাইজান, মেঝো ভাইজান, সেজো ভাইজান, ছোট ভাইজানদের খপ্পর থেকে হেফাজত করেন।
সমস্যা:
১. পূর্ণাঙ্গ দ্বীন কী? এ সম্পর্কে আমজনতা এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ ওলামায়ে কেরামের সামনে দলিল ভিত্তিক স্পষ্ট ধারণার অভাব এবং দ্বীনের ক্ষুদ্র অংশকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন দাবী করা বা মনে করা :
দ্বীন কায়েম করতে হলে সবার আগে জানতে হবে দ্বীন কী ? কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এ বিষয়ে প্রতি পদে পদে আমাদের মাঝে বিভ্রান্তি বিরাজমান। ফলে দ্বীন কায়েম বাদ দিয়ে দ্বীন কী এটা বোঝাতেই জান বেরিয়ে যাচ্ছে। যে কারেণে তমাসাচ্ছন্ন এই যামানায় বিশ্বের দুই শতাধিক কোটি মুসলমান যখন মুক্তির পথ খুঁজতে গিয়ে দিশেহারা তখন অনেকেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের দাবী নিয়ে মুক্তির অসংখ্য ফ্রন্ট খুলে বসেছেন । যদিও এসমস্ত ফ্রন্টের অধিকাংশের সাথেই ইসলামের দূরতম বা ন্যূনতম কোন সর্ম্পক নেই । অর্থাৎ এগুলো হচ্ছে সর্বসম্মতভাবে ফিরাকে বাতিলা। কিন্তু অপর দিকে আমরা যারা নিজেদেরকে হকপন্থী বলে দাবী করছি আমরা আসলে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন হিসাবে মানুষের সামনে কী হাজির করছি ? আমাদের কর্মকান্ডকে যদি শরীয়াহর মানদন্ডে যাচাই করি তাহলে ফলাফল কী হবে ? যেমন ধরা যাক :
• দাওয়াতে তাবলীগের কথা : দাওয়াতে তাবলীগ আংশিকভাবে দ্বীনের কিছু খিদমত করে। কিন্তু এই জামাতের নীতি নির্ধারকগণ বা কর্মীগণ এই জামাতকে বা এই আংশিক খিদমতকেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন মানছেন বা শুধুমাত্র এখানেই মুক্তির পথ খুঁজছেন বা শুধু এই কাজ করেই জান্নাত পেয়ে যাচ্ছেন। তারা দ্বীনের একটি ছোট অংশকেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন বানিয়ে ফেলেছেন। পাতাকেই গাছ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন (এ বিষয়টা প্রচলিত দ্বীনি ফ্রন্টের সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য)। যে একবার চিল্লা দিয়েছে সে সারাজীবন চিল্লাই দিয়ে যাচ্ছে ।কোন প্রমোশন বা ডিমোশন নেই। একই ক্লাসে আজীবন থাকতেই যেন সকলে বদ্ধপরিকর। কিন্তু এই একই ব্যক্তি জীবনের বাকী সব ক্ষেত্রেই আবার তরক্কীর জন্য মরিয়া। সেটা শিক্ষার ক্ষেত্রেই হোক, চাকরীর ক্ষেত্রেই হোক,ব্যবসার ক্ষেত্রেই হোক বা রাজনীতি বা অন্য যেকোন ক্ষেত্রেই হোক। সব ক্ষেত্রেই সে শুধু উপরেই উঠতে চায়। কখনো সে এক জায়গায় স্থির থাকতে চায় না। শিক্ষা ক্ষেত্রে যেমন সে ১ম শ্রেণী থেকে মাস্টার্স বা তারপরও এম ফিল, পিএইচডি আরো কত কিই না করছে । আবার এই সব ডিগ্রী হাসিল করার পর চাকুরীতে বা পেশাগত অধিকতর তরক্কীর জন্য সে ইভনিং এমবিএ সহ আরও কত ডিপ্লোমা যে করছে তার হিসাব দেয়া মুশকিল। অন্যদিকে সে যখন ব্যবসা করছে তখন প্রতিদিনই ব্যবসায় তরক্কী করতে মরিয়া। এক ব্যবসা থেকে আর এক ব্যবসা, সেই ব্যবসা থেকে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট। এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট এর পর শিল্পপতি হওয়ার বাসনা । কোনটাই অপূর্ণ রাখছেনা সে । অপূর্ণ থাকছে কেবল তার দ্বীন চর্চা । এখানে এসেই তার মনে হচ্ছে বা তাকে মনে করানো হচ্ছে যে এই এককাজ করলেই চলবে। এটাই তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তার মানে কী দাঁড়ালো ? মানে দাঁড়াল এই যে আমরা নিজের জন্য যা পছন্দ করি দ্বীনের জন্য তা পছন্দ করি না। অর্থাৎ আমরা চাকুরী বা ব্যবসা বা নিজ পেশার পূর্ণাঙ্গতা অনুধাবন করে নিজ প্রয়োজনে এসকল ক্ষেত্রে যেমন প্রতিটি স্তর সফলতার সঙ্গে অতিক্রম করতে বদ্ধপরিকর। ঠিক উল্টোভাবে এই আমরাই সবচেয়ে কঠিন ময়দান তথা আখেরাতের জন্য দ্বীনের একটি প্রাক প্রাথমিক স্তরে আবদ্ধ থাকাকেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন সাব্যস্ত করে জান্নাত হাছিলের দিবা স্বপ্ন দেখছি।
এখানে আরও উল্লেখ্য যে, দাওয়াতে তাবলীগে একটি বিষয় বার বার মানুষের সামনে তুলে ধরা হ্য় তা হল – যেকোন একজন সাহাবীর জীবন অনুসরণ করলেই হেদায়েত পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র একদম উল্টো। কারণ বাস্তবে তাবলীগের ময়দানে কোন একজন সাহাবীর জীবনী পড়ানোরও কোন ব্যবস্থা নেই। যদি থাকত তাহলে প্রথমেই হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা







এখানে ফায়েদা বা শিক্ষাটা হওয়া উচিত ছিল বিগত দিনের কোন জিহাদ কাযা না হওয়া সত্তেও শুধুমাত্র একটি জিহাদ কাযার দরুণ হুজুর (সা


• পীর মুরিদীঃ দ্বীন সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকার কারনে আমাদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পীরের মুরীদ হওয়া এবং পীরের নির্দেশমত জীবন যাপন করাকেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন মানছে বা শুধুমাত্র এখানেই মুক্তির পথ খুঁজছে বা জান্নাত পেয়ে যাচ্ছে । এই লাইনে কত প্রকার ভণ্ডামি চলছে তা আমরা সবাই জানি। আর যারা এক্ষেত্রে নিজেদেরকে হক বলে দাবী করেন হালে তাদের অবস্থা কি তাও আমরা জানি। এ অঞ্চলে যে পীর মুরিদী চলছে পৃথিবীর আর কোথাও এর দ্বিতীয় কোন নজির নেই। কুরআন হাদিস তন্ন তন্ন করে খুজলেও পীর মুরিদীর কোন সরাসরি সুস্পষ্ট বক্তব্য কেউ দেখাতে পারবেন না। যে রকমভাবে দেখাতে পারবেন নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, পর্দা বা অন্য যেকোন ফরজ আমলের ক্ষেত্রে। মূলত পীর মুরিদীর বিষয়টি সাবেত করার জন্য আপনাকে কিয়াসের আশ্রয় গ্রহন করতে হবে এবং কিয়াস ব্যবহার করে আপনি এটাকে সর্বোচ্চ জায়েজ প্রমাণ করতে পারবেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজকে আমরা দ্বীন কায়েমের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বাদ দিয়ে পীর-মুরিদীর মত জায়েজ বিষয় নিয়ে দিন-রাত এক করে ফেলছি। সাহাবায়ে কেরামের মধ্য থেকে এমন একজন সাহাবীর উদাহরণ দেয়া যাবে যিনি হাল আমলের পীর সাহেবদের ন্যায় শুধূমাত্র তাযকিয়াতুন নাফস বা তাসাউফের অংশবিশেষ এর উপর আমল করেছেন বা এই তাযকিয়াতুন নাফস বা তাসাউফের মাধ্যমে কোথাও দ্বীন কায়েম করেছেন ? বা এই কাজকেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন বলে চালিয়ে দিয়েছেন ? উপরন্তু বংশানুক্রমিক বা মিরাসী বা উত্তরাধিকারসূত্রে পীরালী অর্থাৎ পীরের ছেলে পীর, তার ছেলে পীর, তার ছেলে পীর, তার ছেলে পীর এভাবে জন্মসূত্রে পীর হওয়ার নজীর পৃথিবীর কোথায় আছে ? বা আজ থেকে ১৫০ বছর আগেও কি এরকম নজীর খুব একটা পাওয়া যাবে ? মানব রচিত আইনে জন্মসূত্রে কোন দেশের নাগরিক হওয়ার বিষয়টি আমরা জানি। আর এখন দেখছি জন্মসূত্রে পীরও হওয়া যায়। আফসোসের কথা হল জন্মসূত্রে কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জজ, ব্যারিস্টার হয়েছে শুনলে আমরা হাসি । কিন্তু জন্মসূত্রে পীর হওয়ার কথা শুনলে এই আমরাই কেঁদে কেঁদে তার মুরীদ হতে চলে যাই। হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে এই ওয়ারিশী বড় ভাইজান, মেঝো ভাইজান, সেজো ভাইজান, ছোট ভাইজানদের খপ্পর থেকে হেফাজত করেন।
Comment