বাংলাদেশ অঞ্চলে দ্বীনকায়েমের সমস্যা সম্ভাবনা:২য় পর্ব
• দ্বীনি মাদারিস : দ্বীনি মাদারিস বা ইলমে ওহী এবং ইলমে নববীর খেদমত নিঃসন্দেহে দ্বীনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মজবুত অংশ । তবে ইহা পূর্ণাঙ্গ দ্বীন নয়। কিন্তু আফসোসের বিষয় আমরা অনেকেই মাদরাসাতেই বা ইলমের খেদমতের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন খুঁজে ফিরছি। এখন আমরা যদি মাদরাসার মূল উৎস খুঁজতে যাই তাহলে আমাদের একমাত্র গন্তব্য হবে মাদরাসাতুস সুফফা। এখন প্রশ্ন হল মাদরাসাতুস সুফফার সাথে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন অর্থাৎ উস্তাদ হিসাবে হুজুর পাক (সাঃ) এবং ছাত্র হিসাবে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর মধ্যে কি কেউ মাদরাসাতুস সুফফাকেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন মনে করেছিলেন ?যদি না করে থাকেন তবে আমরা কেন এমনটি মনে করছি ? মূলত মাদরাসা থেকেই উম্মত জানবে দ্বীন কায়েমের সুন্নাত বা সঠিক পন্থা কোনটি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় মাদরাসাগুলোতে পাক-নাপাক, হায়েজ-নেফাস বা নিকাহ-তালাকের মাসায়েলের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ গুরুত্ব দেওয়া হয় দ্বীন কায়েমের গবেষণায় যদি তার এক দশমাংশ গুরুত্বও দেওয়া হত তাহলে এই উপমহাদেশে আরো আগেই ইসলামী হুকুমত কায়েম হয়ে যেত। প্রকৃতপক্ষে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে আমরা দেখব দরসে নিজামীতে দ্বীন কায়েমের বিষয়ে স্বতন্ত্র কোন বিষয় (Subject/Paper) ত নেই ই এমনকি কোন বিষয়ের (Subject/Paper) মধ্যে স্বতন্ত্র কোন অধ্যায় পর্যন্ত পাওয়াও দুস্কর হবে।
• আল্লাহর খলিফা হিসাবে দুনিয়াতে মানুষের দায়িত্ব কি সে সম্পর্কে গাফেল থাকা: আল্লাহর খলিফা হিসাবে দুনিয়াতে আমাদের দায়িত্ব কি সে সম্পর্কে বেখবরী এ অঞ্চলে দ্বীন কায়েমের পথে একটি অন্যতম বড় বাধা। মহান রাব্বুল আ’লামিন আমাদেরকে তাঁর খলিফা হিসাবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন দ্বীন কায়েমের জন্য। একা একা নামাজ পড়ার জন্য নয়। নামাজ কায়েম করার জন্য। তাঁর দেওয়া দন্ডবিধি-কার্যবিধি মোতাবেক সকল প্রকার অন্যায়-অত্যাচার, পাপাচার-অপরাধ এর ন্যায়বিচার নিশ্চিত পূর্বক সমাজ থেকে সকল অন্যায়-অত্যাচার, পাপাচার-অপরাধ দূর করার জন্য। এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম ব্যতীত কোন অপরাধের বিচার কি আল্লাহর দেওয়া দন্ডবিধি-কার্যবিধি মোতাবেক নিশ্চিত করা সম্ভব ? আমাদের দেশে কি আল্লাহর দেওয়া দন্ডবিধি-কার্যবিধি মোতাবেক বিচারকার্য পরিচালিত হয় নাকি আল্লাহর বিধানের মোকাবেলায় মানবরচিত দন্ডবিধি-কার্যবিধি মোতাবেক পরিচালিত হয় ? শুধু বিচারকার্য নয় রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনের এমন এক ইঞ্চি জায়গা আছে যেখানে আল্লাহর দ্বীনের জন্য কোন জায়গা আছে ? তাহলে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে হুদুদ, কিসাস, জিহাদ, দ্বীন কায়েমের বিধানগুলো কেন দিয়েছেন ? শুধু তিলাওয়াত করার জন্য ? আমাদের কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে ‘‘ কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম” – ‘‘তোমাদের উপর সিয়াম (রোজা) ফরজ করা হল” এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে পালন করার জন্য আর ‘‘ কুতিবা আলাইকুমুল ক্বিতাল” – ‘‘তোমাদের উপর ক্বিতাল (যুদ্ধ) ফরজ করা হল” এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে শুধু তিলাওয়াত করার জন্য ! আবার মনে হচ্ছে ‘‘আকীমুস সালাত” – ‘‘সালাত (নামাজ) কায়েম কর” এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে পালন করার জন্য (যদিও ব্যক্তিগতভাবে পালন করা ছাড়া নামাজ কায়েম তথা নামাজ না পড়লে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাস্তি প্রদানের কোন ব্যবস্থা নাই) । আর‘‘আকীমুদ্দীন” – ‘‘দ্বীন কায়েম কর” এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে শুধু তিলাওয়াত করার জন্য ! এই যে আমরা আমাদের মহান প্রভুর বিধান সম্বলিত কিতাব (কুরআন) শুধু তিলাওয়াত করেই জান্নাত নিশ্চিত করতে চাইছি ইহা কি বাস্তব সম্মত ? মহান প্রভু যে সকল বিধান প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন করতে বলেছেন তা না করে শুধু তিলাওয়াত করে রেখে দেওয়া কি মহান প্রভুর সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা নয় ? বাংলাদেশের কোন জজ বা ডিসি বা এসপি যদি দেশের সংবিধান ও সংবিধানের অধীন অন্যান্য আইন প্রয়োগ না করে শুধু মাত্র তিলাওয়াত করে বা পড়ে রেখে দেয় তাহলে তার অবস্থা কী হবে ? তাহলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন যে আমাদেরকে তাঁর খলিফা হিসাবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তাঁর প্রদত্ত বিধান মোতাবেক পৃথিবী পরিচালনার জন্য, আর আমরা যে সেই বিধান কায়েম বা বাস্তবায়ন বা প্রয়োগ না করে শুধু তিলাওয়াত করে রেখে দিচ্ছি এই অবস্থায় আমাদের কী হবে ? আহকামুল হাকিমিন আমাদের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করবেন বলে আমরা আশা করছি ? মূলত দ্বীন কায়েমই ছিল আমাদের একমাত্র মিশন যা থেকে আমরা পুরোপুরি গাফেল।
• দ্বীন কায়েম ও দ্বীন হেফাজতের পন্থা সম্বন্ধে অজ্ঞতা :দ্বীন কায়েম ও দ্বীন হেফাজতের পন্থা সম্বন্ধে আমাদের অজ্ঞতা এবং একইসাথে বিপথগামীতা এ অঞ্চলে দ্বীন কায়েমের পথে অন্যতম বড় বাধা।কেউ তাবলীগের মাধ্যমে দ্বীন কায়েম করতে চান। কেউ আবার পীর-মুরিদী ফরমুলার মাধ্যমে। কেউ কেউ আবার ইকামতে দ্বীনের দোহাই দিয়ে কাফেরদের ল্যাবে আবিস্কৃত মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিনষ্টকারী রাজনৈতিক দল নামক ভাইরাসের মাধ্যমে কুফরী গণতান্ত্রিক পন্থায় দ্বীন কায়েমের অলীক স্বপ্ন দেখছে এবং দেখাচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল আমরা সব ক্ষেত্রেই মুখে এটা স্বীকার করি যে সাহাবায়ে কেরাম হচ্ছেন সত্যের মানদন্ড অথচ দ্বীন কায়েমের ক্ষেত্রে তাঁরা কি পন্থা অনুসরণ করেছিলেন কোন এক অজানা কারণে তা আমরা মোটেই আলোচনা করতে রাজী নই । সম্মানিত পাঠক লক্ষ্য করুন আমরা যারা নিজেদেরকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বলে দাবী করি তাদের কাছে সব ইবাদতের পন্থাই একেবারে পরিস্কার (দ্বীন বা দ্বীনের কোন বিধান কায়েমের পন্থা ছাড়া) ।এক্ষেত্রে কারো আমল বা আকিদা সাহাবায়ে কিরামগণের (রাঃ) আমল বা আকিদার সাথে না মিললে বা কেউ চুল পরিমান হেরফের করলেই বাহাস, মোনাযারা এবং সবশেষে সংশ্লিষ্টকে বাতেল, ভন্ড, বেদাতি, মাজার পূজারীসহ আরো অসংখ্য উপাধী লাগিয়ে দিচ্ছি।কিন্তু দ্বীন কায়েমের বা ইসলামী হুকুমতের প্রতিরক্ষার পন্থার ব্যাপারে আমাদের অবস্থা কী ? এক্ষেত্রে আমরা কোন পন্থা অবলম্বন করছি ? এ বিষয়ে আমরা কয়টা বাহাস বা মোনাযারা করেছি ? কাকে কাকে বেদাতি বা বাতেল বা গোমরাহ ঘোষণা করেছি ? আবার যেমন মিলাদ, উরস, মাজারে মান্নত, শির্ণী ইত্যাদি দেখলেই আমরা বলে দিতে পারি এগুলো বেদাত।আবার ক্বিয়াম, মাজারে সমাধিস্ত মৃত ব্যক্তির কাছে কোন কিছু চাওয়া, মাজারে বা পীরকে সেজদা ইত্যাদি দেখলেই আমরা বলে দিতে পারি এগুলো শিরক। ঠিক একইভাবে দ্বীন কায়েমের ক্ষেত্রে কি কি উপসর্গ দেখলে কাউকে বাতেল,গোমরাহ বা বেদাতি বা মুশরিক বলা যাবে বলে মনে করছি ? মূলত এ বিষয়ে আমাদের তেমন কোন গবেষণা এমনকি আলোচনা পর্যন্ত নেই। এখন শরীয়তের বিধান সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে যে অপরাধে আমরা বেদাতিদেরকে বেদাতি বলছি সেই একই অপরাধে কি আমরাও অপরাধী হব ? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ হব । কারণ দ্বীন কায়েম ও দ্বীন হেফাজতের একমাত্র পন্থা হচ্ছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ । আর এই পন্থা অবলম্বন করেই হুজুর আকরাম (সা এর ইন্তেকালের পর মাত্র ১৩ বছর সময়ের মধ্যে (হযরত উমর রা: এর খিলাফতকালে) সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) অর্ধেক পৃথিবীতে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করেছিলেন ।
বাংলাদেশ অঞ্চলে দ্বীনকায়েমের সমস্যা সম্ভাবনা: ১ম পর্ব ঃ
• দ্বীনি মাদারিস : দ্বীনি মাদারিস বা ইলমে ওহী এবং ইলমে নববীর খেদমত নিঃসন্দেহে দ্বীনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মজবুত অংশ । তবে ইহা পূর্ণাঙ্গ দ্বীন নয়। কিন্তু আফসোসের বিষয় আমরা অনেকেই মাদরাসাতেই বা ইলমের খেদমতের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন খুঁজে ফিরছি। এখন আমরা যদি মাদরাসার মূল উৎস খুঁজতে যাই তাহলে আমাদের একমাত্র গন্তব্য হবে মাদরাসাতুস সুফফা। এখন প্রশ্ন হল মাদরাসাতুস সুফফার সাথে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন অর্থাৎ উস্তাদ হিসাবে হুজুর পাক (সাঃ) এবং ছাত্র হিসাবে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর মধ্যে কি কেউ মাদরাসাতুস সুফফাকেই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন মনে করেছিলেন ?যদি না করে থাকেন তবে আমরা কেন এমনটি মনে করছি ? মূলত মাদরাসা থেকেই উম্মত জানবে দ্বীন কায়েমের সুন্নাত বা সঠিক পন্থা কোনটি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় মাদরাসাগুলোতে পাক-নাপাক, হায়েজ-নেফাস বা নিকাহ-তালাকের মাসায়েলের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ গুরুত্ব দেওয়া হয় দ্বীন কায়েমের গবেষণায় যদি তার এক দশমাংশ গুরুত্বও দেওয়া হত তাহলে এই উপমহাদেশে আরো আগেই ইসলামী হুকুমত কায়েম হয়ে যেত। প্রকৃতপক্ষে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে আমরা দেখব দরসে নিজামীতে দ্বীন কায়েমের বিষয়ে স্বতন্ত্র কোন বিষয় (Subject/Paper) ত নেই ই এমনকি কোন বিষয়ের (Subject/Paper) মধ্যে স্বতন্ত্র কোন অধ্যায় পর্যন্ত পাওয়াও দুস্কর হবে।
• আল্লাহর খলিফা হিসাবে দুনিয়াতে মানুষের দায়িত্ব কি সে সম্পর্কে গাফেল থাকা: আল্লাহর খলিফা হিসাবে দুনিয়াতে আমাদের দায়িত্ব কি সে সম্পর্কে বেখবরী এ অঞ্চলে দ্বীন কায়েমের পথে একটি অন্যতম বড় বাধা। মহান রাব্বুল আ’লামিন আমাদেরকে তাঁর খলিফা হিসাবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন দ্বীন কায়েমের জন্য। একা একা নামাজ পড়ার জন্য নয়। নামাজ কায়েম করার জন্য। তাঁর দেওয়া দন্ডবিধি-কার্যবিধি মোতাবেক সকল প্রকার অন্যায়-অত্যাচার, পাপাচার-অপরাধ এর ন্যায়বিচার নিশ্চিত পূর্বক সমাজ থেকে সকল অন্যায়-অত্যাচার, পাপাচার-অপরাধ দূর করার জন্য। এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম ব্যতীত কোন অপরাধের বিচার কি আল্লাহর দেওয়া দন্ডবিধি-কার্যবিধি মোতাবেক নিশ্চিত করা সম্ভব ? আমাদের দেশে কি আল্লাহর দেওয়া দন্ডবিধি-কার্যবিধি মোতাবেক বিচারকার্য পরিচালিত হয় নাকি আল্লাহর বিধানের মোকাবেলায় মানবরচিত দন্ডবিধি-কার্যবিধি মোতাবেক পরিচালিত হয় ? শুধু বিচারকার্য নয় রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনের এমন এক ইঞ্চি জায়গা আছে যেখানে আল্লাহর দ্বীনের জন্য কোন জায়গা আছে ? তাহলে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে হুদুদ, কিসাস, জিহাদ, দ্বীন কায়েমের বিধানগুলো কেন দিয়েছেন ? শুধু তিলাওয়াত করার জন্য ? আমাদের কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে ‘‘ কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম” – ‘‘তোমাদের উপর সিয়াম (রোজা) ফরজ করা হল” এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে পালন করার জন্য আর ‘‘ কুতিবা আলাইকুমুল ক্বিতাল” – ‘‘তোমাদের উপর ক্বিতাল (যুদ্ধ) ফরজ করা হল” এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে শুধু তিলাওয়াত করার জন্য ! আবার মনে হচ্ছে ‘‘আকীমুস সালাত” – ‘‘সালাত (নামাজ) কায়েম কর” এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে পালন করার জন্য (যদিও ব্যক্তিগতভাবে পালন করা ছাড়া নামাজ কায়েম তথা নামাজ না পড়লে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাস্তি প্রদানের কোন ব্যবস্থা নাই) । আর‘‘আকীমুদ্দীন” – ‘‘দ্বীন কায়েম কর” এই আয়াতটি নাযিল হয়েছে শুধু তিলাওয়াত করার জন্য ! এই যে আমরা আমাদের মহান প্রভুর বিধান সম্বলিত কিতাব (কুরআন) শুধু তিলাওয়াত করেই জান্নাত নিশ্চিত করতে চাইছি ইহা কি বাস্তব সম্মত ? মহান প্রভু যে সকল বিধান প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন করতে বলেছেন তা না করে শুধু তিলাওয়াত করে রেখে দেওয়া কি মহান প্রভুর সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা নয় ? বাংলাদেশের কোন জজ বা ডিসি বা এসপি যদি দেশের সংবিধান ও সংবিধানের অধীন অন্যান্য আইন প্রয়োগ না করে শুধু মাত্র তিলাওয়াত করে বা পড়ে রেখে দেয় তাহলে তার অবস্থা কী হবে ? তাহলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন যে আমাদেরকে তাঁর খলিফা হিসাবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তাঁর প্রদত্ত বিধান মোতাবেক পৃথিবী পরিচালনার জন্য, আর আমরা যে সেই বিধান কায়েম বা বাস্তবায়ন বা প্রয়োগ না করে শুধু তিলাওয়াত করে রেখে দিচ্ছি এই অবস্থায় আমাদের কী হবে ? আহকামুল হাকিমিন আমাদের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করবেন বলে আমরা আশা করছি ? মূলত দ্বীন কায়েমই ছিল আমাদের একমাত্র মিশন যা থেকে আমরা পুরোপুরি গাফেল।
• দ্বীন কায়েম ও দ্বীন হেফাজতের পন্থা সম্বন্ধে অজ্ঞতা :দ্বীন কায়েম ও দ্বীন হেফাজতের পন্থা সম্বন্ধে আমাদের অজ্ঞতা এবং একইসাথে বিপথগামীতা এ অঞ্চলে দ্বীন কায়েমের পথে অন্যতম বড় বাধা।কেউ তাবলীগের মাধ্যমে দ্বীন কায়েম করতে চান। কেউ আবার পীর-মুরিদী ফরমুলার মাধ্যমে। কেউ কেউ আবার ইকামতে দ্বীনের দোহাই দিয়ে কাফেরদের ল্যাবে আবিস্কৃত মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিনষ্টকারী রাজনৈতিক দল নামক ভাইরাসের মাধ্যমে কুফরী গণতান্ত্রিক পন্থায় দ্বীন কায়েমের অলীক স্বপ্ন দেখছে এবং দেখাচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল আমরা সব ক্ষেত্রেই মুখে এটা স্বীকার করি যে সাহাবায়ে কেরাম হচ্ছেন সত্যের মানদন্ড অথচ দ্বীন কায়েমের ক্ষেত্রে তাঁরা কি পন্থা অনুসরণ করেছিলেন কোন এক অজানা কারণে তা আমরা মোটেই আলোচনা করতে রাজী নই । সম্মানিত পাঠক লক্ষ্য করুন আমরা যারা নিজেদেরকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বলে দাবী করি তাদের কাছে সব ইবাদতের পন্থাই একেবারে পরিস্কার (দ্বীন বা দ্বীনের কোন বিধান কায়েমের পন্থা ছাড়া) ।এক্ষেত্রে কারো আমল বা আকিদা সাহাবায়ে কিরামগণের (রাঃ) আমল বা আকিদার সাথে না মিললে বা কেউ চুল পরিমান হেরফের করলেই বাহাস, মোনাযারা এবং সবশেষে সংশ্লিষ্টকে বাতেল, ভন্ড, বেদাতি, মাজার পূজারীসহ আরো অসংখ্য উপাধী লাগিয়ে দিচ্ছি।কিন্তু দ্বীন কায়েমের বা ইসলামী হুকুমতের প্রতিরক্ষার পন্থার ব্যাপারে আমাদের অবস্থা কী ? এক্ষেত্রে আমরা কোন পন্থা অবলম্বন করছি ? এ বিষয়ে আমরা কয়টা বাহাস বা মোনাযারা করেছি ? কাকে কাকে বেদাতি বা বাতেল বা গোমরাহ ঘোষণা করেছি ? আবার যেমন মিলাদ, উরস, মাজারে মান্নত, শির্ণী ইত্যাদি দেখলেই আমরা বলে দিতে পারি এগুলো বেদাত।আবার ক্বিয়াম, মাজারে সমাধিস্ত মৃত ব্যক্তির কাছে কোন কিছু চাওয়া, মাজারে বা পীরকে সেজদা ইত্যাদি দেখলেই আমরা বলে দিতে পারি এগুলো শিরক। ঠিক একইভাবে দ্বীন কায়েমের ক্ষেত্রে কি কি উপসর্গ দেখলে কাউকে বাতেল,গোমরাহ বা বেদাতি বা মুশরিক বলা যাবে বলে মনে করছি ? মূলত এ বিষয়ে আমাদের তেমন কোন গবেষণা এমনকি আলোচনা পর্যন্ত নেই। এখন শরীয়তের বিধান সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে যে অপরাধে আমরা বেদাতিদেরকে বেদাতি বলছি সেই একই অপরাধে কি আমরাও অপরাধী হব ? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ হব । কারণ দ্বীন কায়েম ও দ্বীন হেফাজতের একমাত্র পন্থা হচ্ছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ । আর এই পন্থা অবলম্বন করেই হুজুর আকরাম (সা এর ইন্তেকালের পর মাত্র ১৩ বছর সময়ের মধ্যে (হযরত উমর রা: এর খিলাফতকালে) সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) অর্ধেক পৃথিবীতে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করেছিলেন ।
বাংলাদেশ অঞ্চলে দ্বীনকায়েমের সমস্যা সম্ভাবনা: ১ম পর্ব ঃ