বিসমিল্লাহ, ওয়াস সালাতু আস সালাম আলা রাসুলিল্লাহ।
মানুষ কি চায়? এ প্রশ্নের উত্তর বড় কঠিন! উত্তর হতে পারে একেক জন একেক রকম কিছু চায়... সত্য। তাহলে প্রশ্ন - সব চাওয়ার চূড়ান্ত রুপ কি? হ্যা, এখন হয়ত কোন একটা উত্তর পাওয়া যেতে পারে।
তাহলে প্রশ্নটি আবার করা যাক, সব চাওয়ার চূড়ান্ত রুপ কি? মানুষের সমস্ত চাওয়ার শেষ ছবিটি হয় পরিপূর্ণতা, সে চায় সব কিছু পরিপূর্ণ হবে, কোন অপূর্ণতা থাকবে না, কোন অতৃপ্তি থাকবেনা, প্রতিটি অর্জন, প্রতিটি সফলতা, প্রতিটি মাইলফলক তাকে চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা দিবে এটিই সম্ভবত সে আশা করে।
আর একদিন ঘুম থেকে উঠে সে এই আশার পেছনে ছুটতে শুরু করে। কম আর বেশ, সবাই ছুটে, ছুটতেই থাকে। কেউ জোরে, কেউ বা আস্তে। সে ছুটতে থাকে তার সেই সপ্নের সোনার হরিণ, সকল বিষয়ে পূর্ণতার পিছনে। খাওয়া দাওয়া, ধন সম্পদ, বাড়ি ঘর, নারী, গাড়ি, পেশা চাকুরি, ক্যারিয়ার, ছবি আঁকা, খেলা ধুলা, মডেলিং, ফ্যাশন, মিথ্যা বলা সত্য বলা, চুরি ডাকাতি কিংবা ম্যাজিক হাত সাফাই, জুতা পালিশ হোক কিংবা রান্না করা হোক, ফুল বাগানে কাজ করা হোক কিংবা স্টেজে উঠে কাউকে রক্তাক্ত করা হোক ... সে চায় পূর্নতা! সে চায় এমন এক অপার অনুভূতি যা তাকে তৃপ্ত করবে!
সে ছুটতে থাকে, আর সবাই তাকে ছুটতে শেখায়। বলে, আরো জোরে, জোর লাগাও হচ্ছেনা ত! ঐ দেখো তোমার সোনার হরিণ সে নিয়ে চলে গেলো, বাপ ঝরে যায়, ছেলে হাল ধরে, ছেলে মরে যায় মেয়ে এসে জায়গা নেয়। বোকারা বুঝেনা এক জনের ছুটে চলা আরেক জনের পথ কমিয়ে দেয়, আজ সে যেটাকে নিজের সফলতা মনে করছে সেটা তার নয়, বরং আরেক জনের এবং তার টা আরেক জনের, এবং তারটা এবং তার টা ... এভাবে ঘুরে ঘুরে দেখা যাবে সব শেষে চূড়ান্ত সফলতাই বলা হোক কিংবা সেই অপার অনুভুতিটির কথাই হোক তা কেউ ই পায়নি!
অ্যাপলের মহা নায়ক যে কিনা ছুটে চলা এই ছোট নায়কদের চোখে হিরো সেও শেষ সময়ে বুঝিয়ে দিলো ... হায়! হলো না, তারও হলো না... সমীকরনে বড্ড ভুল হয়ে গেলো! কোথায় সেই পূর্ণ সফলতা!
আজ এই রেসের ময়দানে কিছু জাদুকর আছে কিংবা হ্যামিলনের বাশি ওয়ালা আছে যারা দিন রাত বাঁশি বাজিয়ে এই পূর্ণ সফলতার চূড়ান্ত পরিতৃপ্তির নেশায় ডুবে থাকা মানুষগুলোকে পাগল করে তুলে! তারা দিগ্বিদিক ভুলে যায়! বাঁশির সুরে পাগল হয়ে যায়! নিজেকে বিক্রি করে দেয়, আকল, জ্ঞান, বিবেক, মানবিকতা সব কিছু! নিজেকে বিক্রি করেই ক্লান্ত হয়না বরং নিজের স্ত্রী, সন্তানদেরও বেচা-কেনার হাটে তুলে দেয়, আর বলে, আরে তোমরাও কি পিছে পড়ে থাকবে? তোমাদের জন্য তো আমিও পিছনে পড়ে যাবো! দেখছোনা যুগ কত এগিয়ে গেছে! চলো আমরাও এগিয়ে যাই। সেই অধরা সোনার হরিণের নেশায় ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে, মা, মেয়ে...
হঠাত যদি ঐ আকাশটাতে উঠে যাওয়া যেত তাহলে হয়ত এমন দেখা যেত, হ্যামিলনের বাঁশি ওয়ালার পেছনে ইঁদুরের ঝাঁকের মত এই সমাজ ছুটে চলেছে সেই অধরা সোনার হরিণের পিছে! কেউ টেরই পাচ্ছেনা এই জাদুকর তাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে! তারা জানেনা, তাদের এই পথ চলাই যাদুকরের পথ চলা, আর যাদুকরদের পথচলা তার চেয়ে বড় যাদুকরের পথচলা ... তাহলে দেখা গেলো আসমান এর নিচে এবং মাটির উপরে এই নেশার এক অভিশপ্ত চক্র চলতেই আছে, ঝরে যাচ্ছে অনেকে আবার তাদের জায়গায় উঠে আসেছে তারও বেশী! কেউ এমনকি দ্বিতীয়বার ঘুরেও তাকাচ্ছেনা!
শয়তান বলেছিলো, আমি তাদের জন্য রাস্তার প্রতিটি বাঁকে বাঁকে ওঁত পেতে বসে থাকবো!
কি এক প্রহেলিকা! এমন কেউ আছে কি যে থামাবে ওদের?
ভুলটা কোথায় হলো? এতবড় ভুল কিভাবে হলো? কিভাবে আজ মানুষ গুলো পাগল হয়ে গেলো? নেশায় উন্মাদ হয়ে গেলো?
ভুল হলো এইভাবে যে, তারা ভুলে গেলো তাদের রব্ব, মহান আল্লাহ তাদের কি বলে পাঠিয়েছিলেন... তাদের জন্য কি বলে দিয়েছেন ...
তারা ভুলে গেলো যে, এই পৃথিবী তার না। একবারও সে ভেবে দেখলো না ... না সে নিজের জন্মের আগে নিজের লিঙ্গ ঠিক করেছিলো, না সে ঠিক করেছিলো আয়না দেখে নিজের চেহারা, নাকের গড়ন, গালের টোল, চুলের ঢেউ, গায়ের গড়ন কিংবা চোখের রং নীল বা কালো! না সে ঠিক করেছিলো তার থাকার জায়গাটি যেখানে সে ঝুলে থাকবে প্রায় দীর্ঘ কয়েক মাস! সে কি জেনেছিলো সে কোথায় থাকবে? কি খাবে? কিভাবে খাবে? নাকি তার জানা ছিলো সে কিভাবে এই পৃথিবীতে আসবে! নাকি সে জানতো পৃথিবী নামে কিছু একটা আছে যেখানে সে একদিন উদ্ভ্রান্তের মত ছুটে চলবে মরীচিকার পেছনে! নাকি সে জানতো তার সফলতার সোনার হরিণ ঐ পথে পাওয়া যাবে। নাকি সে এটাও জানে যে কতদিন সে এই পৃথিবীতে থাকবে এবং কবে সে চলে যাবে? না না না ... কচু, সে এগুলোর কিছুই জানেনা। তাহলে হঠাত কিভাবে সে না জানা থেকে সর্ব জান্তা হয়ে গেলো! কে তাকে এগুলো শেখালো? কে? তার নাম কি? সেও কি তাহলে এগুলো জানে নাকি? চলো তাকে জিজ্ঞেস করেই দেখি ... সে কি তাহলে উপরের বিষয় গুলো আগে থেকেই জানতো? যদি এবারও উত্তর না হয়, তাহলে বড় ভুল হয়ে গেলো না!
কেউ কিচ্ছু জানেনা অথচ তারাই কিনা আমাদের পথ দেখাচ্ছে আর বলছে ছুটে চল, সবটুকু দিয়ে, এদিকেই আছে তোমার সফলতা!
কিন্তু এও তো সম্ভব নয় যে, মানুষ শুধু শুধু এখানে চলে আসবে, খাবে দাবে, মরে যাবে - ফুট্টুস!
দেখো ... মানুষের রব্ব, যিনি তাকে সৃস্টি করেছেন, যিনি তাঁর সৃষ্টির জন্য প্রতিটি ঘটনা সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করা প্রতিটি ঘটনাকে বাস্তব করেই ছাড়বেন তিনি, সেই মহান আল্লাহ কতবার বলেছেন -
এই দুনিয়া তোমাদের থাকার জায়গা না, ছুটার জায়গা না, সফলতার জায়গা না, ভোগের জায়গা না ... বরং এই দুনিয়াতে তো তোমাদের সামান্য কয়টা দিনের জন্য পাঠানো হয়েছে যেন তোমরা এখানে থেকে আমার বলে দেয়া পথে চলে তোমাদের সেই কাংখিত পূর্ণ সফলতা ভোগ করতে পারো! তাই নয় কি? তাই কি আল্লাহ বলেন নি?
পারলে কেউ আসুক আর বলুক, এর চেয়ে সুস্পষ্ট এবং পরিষ্কার রাস্তা আমার জানা আছে, আসো আমি তোমাদের দেখাই ... ও হ্যাঁ, তার আগে সে নিজে যেন সেই রাস্তার শেষ মাথায় তার নিজের চূড়ান্ত সফলতাকেও আমাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়! আমরা তা দেখে চোখ জুড়াতে চাই। সে মরবেনা, পচে যাবেনা, মিশে যাবেনা মাটির সাথে বরং অনন্ত কালের জন্য সে তার চূড়ান্ত সফলতার রাজত্বে বাস করবে সফল স্বপ্নপুরুষের ন্যায়!
যদি সে সত্যিই পারে!
তাহলে কি আমাদের এখনো ধোঁকায় ফেলে রাখলো?
ভুল হয়ে যাচ্ছে, বড় ভুল হয়ে যাচ্ছে ... এই ভুলের মাশুল বড় ভয়ংকর!
কেউ কি আছে যে কান পেতে শুনবে, শুনবে সেই কথা যা আমাদের রব্ব বলেছেন -
‘তোমরা জেনে রেখ, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক গর্বপ্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছু নয়। এর উপমা হলো ‘বৃষ্টি’, যার দ্বারা উৎপন্ন শস্য ভাণ্ডার কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, তারপর তা শুকিয়ে যায়। ফলে তুমি তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। অবশেষে তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। দুনিয়ার জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।
[ সূরাহ হাদিদ , আয়াত : ২০ ]
"আর এ দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং নিশ্চয়ই আখিরাতের নিবাসই হল প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত”।
[ সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৬৪ ]
আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহন করার জন্য অতএব, উপদেশ গ্রহণের কেউ আছে কি?
[ সুরা ক্বামার ৫৪:২২ ]
Comment