বিসমিল্লাহ, ওয়াস সালাতু আস সালাম আলা রাসুলিল্লাহ
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ:« سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ في ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إلاَّ ظِلُّهُ: إمَامٌ عَادِلٌ، وَشَابٌّ نَشَأ في عِبَادَةِ الله تَعَالَى، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابّا في اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيهِ وتَفَرَّقَا عَلَيهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأةٌ ذَاتُ مَنصَبٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ: إنِّي أخَافُ الله، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ، فَأخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ الله خَالِياً فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না; (তারা হল,) ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা), সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ তাআলার ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।) সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে) আহবান করে, কিন্তু সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপন করে; এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে, তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।’’
[বুখারি ও মুসলিম ]
আর সেই ব্যাক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরন করে, আর আল্লাহর স্মরণে তার চোখে পানি চলে আসে।
একবার চিন্তা করে দেখি, সেই দিনের কথা! ৫০ হাজার বছর সবাই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে, কারও এক চুল নড়ার সামর্থ্য হবেনা। কেউ কোন কথা বলতে পারবেনা, নিজের পায়ের পাতা যতটুকু স্থান দখল করতে পারে শুধুমাত্র ততটুকু জায়গার উপর ৫০ হাজার বছর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, এমন দিনে যেদিন মহান আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যাতিত আর কোন ছায়া থাকবেনা। এমন কঠিন দিনে যারা সেই ছায়ার নিচে স্থান পাবেন তাঁদের এক শ্রেনি হচ্ছেন - আল্লাহর স্মরনে যাদের চোখ ভিজে উঠে!
আরেকটি হাদিস থেকে পাওয়া যায়, আল্লাহর নিকট দুটি ফোঁটা খুব প্রিয় তার একটি হচ্ছে, আল্লাহর ভয়ে বের হয়ে আসা চোখের অশ্রু।
এই হাদিস গুলো আলহামদুলিল্লাহ আমরা কমবেশী অনেকেই শুনেছি। তবুও অনেক দিন থেকে মনে ইচ্ছা ছিলো এ ব্যাপারে দু'কথা লেখার, আল্লাহই তাউফিক দাতা!
যান্ত্রিক সমাজের অনেক কুফলের মধ্যে অন্যতম একটি কুফল হচ্ছে, এটি অন্তরকে মৃত বানিয়ে দেয়। এরফলে অন্তর তাফাক্কুর করতে পারেনা, তাদাব্বুর করতে পারেনা। এই অন্তরের উপরে আবরণ পড়ে যায়। সত্য দেখে, সত্যকে বুঝেও সত্য উপলব্ধি করতে পারেনা। একটি উদাহরণ সামনে নিয়ে আসার লোভ সামলাতে পারছিনা -
কোন গৃহকর্তাকে যদি তার স্ত্রী বা সন্তান বলে, আজ থেকে এই বাড়িতে তোমার কথা চলবেনা। গৃহকর্তা জিজ্ঞেস করলেন, তো বেশ কার কথা চলবে? উত্তরে যে কারো একজনের নাম আসলো। এমন অবস্থায় সে গৃহকর্তা কি করবে বলে আপনাদের ধারণা! অথচ এই একই গৃহকর্তারা, একই চেতনা নিয়ে এটা খুব সহজেই মেনে নিয়েছেন যে, দুনিয়া এবং এর সমস্ত সৃষ্টিই আল্লাহর কিন্তু হুকুম চলবে মানুষের! হায়! একে কি বলে আমার জানা নাই! আপনি লক্ষ্য করে দেখেন, এটা বুঝার জন্য অনেক বড় বিজ্ঞ ব্যাক্তি হবার দরকার হয়না, আসলে শুধু আকল খাটালেই হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আকল খাটানোর সেই অন্তর যে আগেই মরে গেছে!
যা বলছিলাম -
এ অন্তর গুলো মরে যাওয়ার কারণে আমরা দেখি, শুনি, পড়ি, কিছু হয়ত বুঝিও কিন্তু এরপরে তা আর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনা। কারণ আমাদের অন্তর এগুলোর উপরে তাফাক্কুর করতে পারেনা। আল্লাহ বলেছেন, তাদের অন্তর কি তালাবদ্ধ?
আসেন একটা ছবি দেখি। মনে করেন অনেক বড় কোন জমায়েত। বিশাল চোখ ধাঁধানো কোন জায়গায় এক অনুষ্ঠান হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ হাজির। এমন অবস্থায় একজন এসে নাম ডাকতে শুরু করল, উমুক আসেন, উমুক আসেন, উমুক আসেন ... আপনারা আজকের দিনের সম্মানিত মেহমান, আপনারা এই সামনের সিটে সম্মানের সাথে বসেন। আমার আপনার অন্তরের অবস্থা কি হত? ইশ! আমিও যদি তাদের সাথে থাকতে পারতাম!
এবার চিন্তা করে দেখেন সেই একই কথা বলা হচ্ছে কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে, কোন প্রেক্ষাপটে! এমন এক দিনে এই কথা বলা হচ্ছে যার ভয়াবহতার বিবরণ দিতে গিয়ে রাসুল সাঃ বলেছেন সেদিন গর্ভবতী তার ভার হাল্কা করে ফেলবে, নিষ্পাপ বাচ্চার চুল সাদা হয়ে যাবে, মা তার সন্তানকে ভুলে যাবে। মানুষ উলঙ্গ হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে কিন্তু সেদিকে কারো কোন খেয়ালই থাকবেনা। কেন? কারণ এরচেয়েও মহা গুরুতর এক বিষয় মানুষের সামনে হাজির হয়ে গেছে! সেদিন মনে হবে সবাই উদ্ভ্রান্ত! কিন্তু আসলে তারা উদ্ভ্রান্ত নয়! বরং দুশ্চিন্তায় মানুষ এমন হয়ে যাবে। এমন দিনে মানুষ যখন দেখবে একটা দল, এরা আল্লাহর আরশের ছায়ার নিচে নিশ্চিন্তে অবস্থান করছে তখন তাদের ব্যাপারে সমস্ত মানুষের দৃষ্টি কেমন হবে! সবাই জানবে এরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত! আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ প্রাপ্ত! আর এমন কঠিন একটি দিনে এই অনুগ্রহ কেমন মুল্যবান হতে পারে!
কাজ কি? আল্লাহর স্মরণে নরম হওয়া, কৃতজ্ঞ হওয়া, নিজের দুর্বলতা আর আল্লাহর মহত্ত্ব, বড়ত্ব নিয়ে চিন্তা করা। হয়ত এক ফাকে অজান্তেই চোখ ভিজে উঠবে ইনশা আল্লাহ। আর যদি কাদতে নাও পারি, কাঁদার ভাব করি। আল্লাহ এমনকি তাও পছন্দ করেন।
রাসুল সাঃ জানিয়েছেন, কাঁদো, না পারলে কাঁদার ভাব কর। উমার রাঃ এর ন্যায় মহান ব্যাক্তি এসে রাসুল সাঃ কে বলছেন ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনারা কেন কাঁদছেন, আমাকে বলুন, আমিও কাঁদবো, না পারলে কাঁদার ভাব করব।
অথচ আমাদের একটু সময় হয়না। আমরা কতই না কারণে কাঁদি। হায় ...
তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ কারণে আমরা কাঁদি, এমন সব বিষয়ে আমরা কাঁদি যা কোন গুরুত্বই রাখেনা অথচ আল্লাহর জন্য সবার আগে আমি সহ আমরা কাঁদতে পারিনা ...
প্রিয় ভাই,
কাঁদার জন্য আল্লাহর স্মরন ব্যাতিত আর উত্তম কি আছে! কাঁদার জন্য আল্লাহর স্মরন ব্যাতিত উত্তম আর কি আছে! কাঁদার জন্য আল্লাহর স্মরন ব্যাতিত উত্তম আর কি আছে! আমার আপনার চোখের পানি এমনকি তা নিয়েও যদি আমি আপনি ভাবি, আমাদের থেমে যেতে হবে - এই মামুলি চোখের পানি যার জন্য আমাদের সময় হয়না, এই পানি - না পানি, না তেল, না অন্য কিছু। পানি, তেল, এবং আরো অনেক রকম মিশ্রণের গুনাবলী নিয়ে এক অনন্য উপাদান। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখেন -
এটি যদি পানিই হত তবে ঠান্ডায় তা জমে বরফ হয়ে যেত, কিংবা বাতাসে শুকিয়ে যেত আর আপনি চোখের পাতা ফেলতেও পারতেন না। আবার যদি তা তেল হত তবে ধুলা বালি জমে সব ঘোলা হয়ে যেত কিছুই দেখতে পেতেন না। অথচ এটা পানির মত ধুলা বালি পরিস্কার করে ফেলে, আবার তেলের মত মসৃণ ও করে রাখে কিন্তু এটা না পানি, না তেল!
এবার চোখটা মেলেই তাকান আসমানের দিকে, দেখেন তো কোন ছিদ্র পান কিনা! আবার, আবার আবার ... কোন ছিদ্র? এভাবে আপনি যেদিকে ইচ্ছা সেদিকেই তাকান শুধু তাই দেখবেন যা অবিরত সাক্ষ্য দিয়েই যাচ্ছে, প্রশংসা শুধুই মাত্র আল্লাহরই জন্য!
প্রিয় ভাই -
আল্লাহর কথা বলে শেষ করা আমার মত অধমের কি সাধ্য! রাত যখন গভীর হয়ে যায়, সবাই যখন ঘুমিয়ে যায়, তখন একাকী একটু আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেন, লক্ষ, লক্ষ তারা আর চাঁদ আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিবে, এই বিশাল আকাশ আর এই লক্ষ কোটি তারার মালিকের স্মরণ করার ফুরসত কি তোমার এখনো হলো না?
আমাদের অন্তর গুলো আল্লাহর সান্নিধ্য না পেয়ে পেয়ে মরে যায়, পরে যখন এই অন্তরের সামনে আল্লাহর কথা বলা হয়, আল্লাহর কালামের তিলাওয়াত হয় তখন তা আর নড়াচড়া করেনা। তাই আমাদের এই মৃত অন্তর গুলোকে আবার জাগিয়ে তুলতে হবে, আল্লাহই তাউফিক দাতা। এ ব্যাপারে প্রসিদ্ধ উলামাগণ বিস্তর আলোচনা করেছেন, তাই সে ব্যাপারে এই অধমের কথা না বলাই উত্তম!
আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই, সামান্য কিছু সময় হলেও আমরা আল্লাহর জন্য আলাদা করি। এই সময় টুকু শুধুই আল্লাহর জন্য। আল্লাহর ব্যাপারে, আল্লাহর সৃষ্টির ব্যাপারে তাফাক্কুর করার জন্য। যখন সবাই ঘুমিয়ে যায়, পৃথিবীও শান্ত হয়ে যায়, এমন সময়ে আল্লাহর স্মরনের জন্য খুব উপযুক্ত। আল্লাহর ব্যাপারে ভাবলেই অন্তর শান্ত হতে শুরু করবে ইনশা আল্লাহ, আর সাথে যদি কিছু আয়াত পেয়ে যান তো মাশা আল্লাহ!
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لِّأُوْلِي الألْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে। [ সুরা ইমরান ৩:১৯০ ]
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىَ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। [ সুরা ইমরান ৩:১৯১ ]
আল্লাহ আমাদের কত সুন্দর করে স্মরন করিয়ে দিচ্ছেন -
أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ
যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী। [ সুরা হাদীদ ৫৭:১৬ ]
-
ইয়া আল্লাহ, আপনি এই অধমকে এবং যাদের পর্যন্ত আপনি এই লেখা পৌঁছে দিবেন সকল বান্দাকে আপনার স্মরণে চোখের পানির নিয়ামত দান করুন। আপনার দয়া এবং অনুগ্রহে আমাদেরকে আপনার আরশের নিচে অবস্থান লাভে ধন্য করুন
وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ:« سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ في ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إلاَّ ظِلُّهُ: إمَامٌ عَادِلٌ، وَشَابٌّ نَشَأ في عِبَادَةِ الله تَعَالَى، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابّا في اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيهِ وتَفَرَّقَا عَلَيهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأةٌ ذَاتُ مَنصَبٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ: إنِّي أخَافُ الله، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ، فَأخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ الله خَالِياً فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না; (তারা হল,) ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা), সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ তাআলার ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।) সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে) আহবান করে, কিন্তু সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপন করে; এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে, তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।’’
[বুখারি ও মুসলিম ]
আর সেই ব্যাক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরন করে, আর আল্লাহর স্মরণে তার চোখে পানি চলে আসে।
একবার চিন্তা করে দেখি, সেই দিনের কথা! ৫০ হাজার বছর সবাই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে, কারও এক চুল নড়ার সামর্থ্য হবেনা। কেউ কোন কথা বলতে পারবেনা, নিজের পায়ের পাতা যতটুকু স্থান দখল করতে পারে শুধুমাত্র ততটুকু জায়গার উপর ৫০ হাজার বছর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, এমন দিনে যেদিন মহান আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যাতিত আর কোন ছায়া থাকবেনা। এমন কঠিন দিনে যারা সেই ছায়ার নিচে স্থান পাবেন তাঁদের এক শ্রেনি হচ্ছেন - আল্লাহর স্মরনে যাদের চোখ ভিজে উঠে!
আরেকটি হাদিস থেকে পাওয়া যায়, আল্লাহর নিকট দুটি ফোঁটা খুব প্রিয় তার একটি হচ্ছে, আল্লাহর ভয়ে বের হয়ে আসা চোখের অশ্রু।
এই হাদিস গুলো আলহামদুলিল্লাহ আমরা কমবেশী অনেকেই শুনেছি। তবুও অনেক দিন থেকে মনে ইচ্ছা ছিলো এ ব্যাপারে দু'কথা লেখার, আল্লাহই তাউফিক দাতা!
যান্ত্রিক সমাজের অনেক কুফলের মধ্যে অন্যতম একটি কুফল হচ্ছে, এটি অন্তরকে মৃত বানিয়ে দেয়। এরফলে অন্তর তাফাক্কুর করতে পারেনা, তাদাব্বুর করতে পারেনা। এই অন্তরের উপরে আবরণ পড়ে যায়। সত্য দেখে, সত্যকে বুঝেও সত্য উপলব্ধি করতে পারেনা। একটি উদাহরণ সামনে নিয়ে আসার লোভ সামলাতে পারছিনা -
কোন গৃহকর্তাকে যদি তার স্ত্রী বা সন্তান বলে, আজ থেকে এই বাড়িতে তোমার কথা চলবেনা। গৃহকর্তা জিজ্ঞেস করলেন, তো বেশ কার কথা চলবে? উত্তরে যে কারো একজনের নাম আসলো। এমন অবস্থায় সে গৃহকর্তা কি করবে বলে আপনাদের ধারণা! অথচ এই একই গৃহকর্তারা, একই চেতনা নিয়ে এটা খুব সহজেই মেনে নিয়েছেন যে, দুনিয়া এবং এর সমস্ত সৃষ্টিই আল্লাহর কিন্তু হুকুম চলবে মানুষের! হায়! একে কি বলে আমার জানা নাই! আপনি লক্ষ্য করে দেখেন, এটা বুঝার জন্য অনেক বড় বিজ্ঞ ব্যাক্তি হবার দরকার হয়না, আসলে শুধু আকল খাটালেই হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আকল খাটানোর সেই অন্তর যে আগেই মরে গেছে!
যা বলছিলাম -
এ অন্তর গুলো মরে যাওয়ার কারণে আমরা দেখি, শুনি, পড়ি, কিছু হয়ত বুঝিও কিন্তু এরপরে তা আর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনা। কারণ আমাদের অন্তর এগুলোর উপরে তাফাক্কুর করতে পারেনা। আল্লাহ বলেছেন, তাদের অন্তর কি তালাবদ্ধ?
আসেন একটা ছবি দেখি। মনে করেন অনেক বড় কোন জমায়েত। বিশাল চোখ ধাঁধানো কোন জায়গায় এক অনুষ্ঠান হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ হাজির। এমন অবস্থায় একজন এসে নাম ডাকতে শুরু করল, উমুক আসেন, উমুক আসেন, উমুক আসেন ... আপনারা আজকের দিনের সম্মানিত মেহমান, আপনারা এই সামনের সিটে সম্মানের সাথে বসেন। আমার আপনার অন্তরের অবস্থা কি হত? ইশ! আমিও যদি তাদের সাথে থাকতে পারতাম!
এবার চিন্তা করে দেখেন সেই একই কথা বলা হচ্ছে কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে, কোন প্রেক্ষাপটে! এমন এক দিনে এই কথা বলা হচ্ছে যার ভয়াবহতার বিবরণ দিতে গিয়ে রাসুল সাঃ বলেছেন সেদিন গর্ভবতী তার ভার হাল্কা করে ফেলবে, নিষ্পাপ বাচ্চার চুল সাদা হয়ে যাবে, মা তার সন্তানকে ভুলে যাবে। মানুষ উলঙ্গ হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে কিন্তু সেদিকে কারো কোন খেয়ালই থাকবেনা। কেন? কারণ এরচেয়েও মহা গুরুতর এক বিষয় মানুষের সামনে হাজির হয়ে গেছে! সেদিন মনে হবে সবাই উদ্ভ্রান্ত! কিন্তু আসলে তারা উদ্ভ্রান্ত নয়! বরং দুশ্চিন্তায় মানুষ এমন হয়ে যাবে। এমন দিনে মানুষ যখন দেখবে একটা দল, এরা আল্লাহর আরশের ছায়ার নিচে নিশ্চিন্তে অবস্থান করছে তখন তাদের ব্যাপারে সমস্ত মানুষের দৃষ্টি কেমন হবে! সবাই জানবে এরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত! আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ প্রাপ্ত! আর এমন কঠিন একটি দিনে এই অনুগ্রহ কেমন মুল্যবান হতে পারে!
কাজ কি? আল্লাহর স্মরণে নরম হওয়া, কৃতজ্ঞ হওয়া, নিজের দুর্বলতা আর আল্লাহর মহত্ত্ব, বড়ত্ব নিয়ে চিন্তা করা। হয়ত এক ফাকে অজান্তেই চোখ ভিজে উঠবে ইনশা আল্লাহ। আর যদি কাদতে নাও পারি, কাঁদার ভাব করি। আল্লাহ এমনকি তাও পছন্দ করেন।
রাসুল সাঃ জানিয়েছেন, কাঁদো, না পারলে কাঁদার ভাব কর। উমার রাঃ এর ন্যায় মহান ব্যাক্তি এসে রাসুল সাঃ কে বলছেন ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনারা কেন কাঁদছেন, আমাকে বলুন, আমিও কাঁদবো, না পারলে কাঁদার ভাব করব।
অথচ আমাদের একটু সময় হয়না। আমরা কতই না কারণে কাঁদি। হায় ...
তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ কারণে আমরা কাঁদি, এমন সব বিষয়ে আমরা কাঁদি যা কোন গুরুত্বই রাখেনা অথচ আল্লাহর জন্য সবার আগে আমি সহ আমরা কাঁদতে পারিনা ...
প্রিয় ভাই,
কাঁদার জন্য আল্লাহর স্মরন ব্যাতিত আর উত্তম কি আছে! কাঁদার জন্য আল্লাহর স্মরন ব্যাতিত উত্তম আর কি আছে! কাঁদার জন্য আল্লাহর স্মরন ব্যাতিত উত্তম আর কি আছে! আমার আপনার চোখের পানি এমনকি তা নিয়েও যদি আমি আপনি ভাবি, আমাদের থেমে যেতে হবে - এই মামুলি চোখের পানি যার জন্য আমাদের সময় হয়না, এই পানি - না পানি, না তেল, না অন্য কিছু। পানি, তেল, এবং আরো অনেক রকম মিশ্রণের গুনাবলী নিয়ে এক অনন্য উপাদান। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখেন -
এটি যদি পানিই হত তবে ঠান্ডায় তা জমে বরফ হয়ে যেত, কিংবা বাতাসে শুকিয়ে যেত আর আপনি চোখের পাতা ফেলতেও পারতেন না। আবার যদি তা তেল হত তবে ধুলা বালি জমে সব ঘোলা হয়ে যেত কিছুই দেখতে পেতেন না। অথচ এটা পানির মত ধুলা বালি পরিস্কার করে ফেলে, আবার তেলের মত মসৃণ ও করে রাখে কিন্তু এটা না পানি, না তেল!
এবার চোখটা মেলেই তাকান আসমানের দিকে, দেখেন তো কোন ছিদ্র পান কিনা! আবার, আবার আবার ... কোন ছিদ্র? এভাবে আপনি যেদিকে ইচ্ছা সেদিকেই তাকান শুধু তাই দেখবেন যা অবিরত সাক্ষ্য দিয়েই যাচ্ছে, প্রশংসা শুধুই মাত্র আল্লাহরই জন্য!
প্রিয় ভাই -
আল্লাহর কথা বলে শেষ করা আমার মত অধমের কি সাধ্য! রাত যখন গভীর হয়ে যায়, সবাই যখন ঘুমিয়ে যায়, তখন একাকী একটু আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেন, লক্ষ, লক্ষ তারা আর চাঁদ আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিবে, এই বিশাল আকাশ আর এই লক্ষ কোটি তারার মালিকের স্মরণ করার ফুরসত কি তোমার এখনো হলো না?
আমাদের অন্তর গুলো আল্লাহর সান্নিধ্য না পেয়ে পেয়ে মরে যায়, পরে যখন এই অন্তরের সামনে আল্লাহর কথা বলা হয়, আল্লাহর কালামের তিলাওয়াত হয় তখন তা আর নড়াচড়া করেনা। তাই আমাদের এই মৃত অন্তর গুলোকে আবার জাগিয়ে তুলতে হবে, আল্লাহই তাউফিক দাতা। এ ব্যাপারে প্রসিদ্ধ উলামাগণ বিস্তর আলোচনা করেছেন, তাই সে ব্যাপারে এই অধমের কথা না বলাই উত্তম!
আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই, সামান্য কিছু সময় হলেও আমরা আল্লাহর জন্য আলাদা করি। এই সময় টুকু শুধুই আল্লাহর জন্য। আল্লাহর ব্যাপারে, আল্লাহর সৃষ্টির ব্যাপারে তাফাক্কুর করার জন্য। যখন সবাই ঘুমিয়ে যায়, পৃথিবীও শান্ত হয়ে যায়, এমন সময়ে আল্লাহর স্মরনের জন্য খুব উপযুক্ত। আল্লাহর ব্যাপারে ভাবলেই অন্তর শান্ত হতে শুরু করবে ইনশা আল্লাহ, আর সাথে যদি কিছু আয়াত পেয়ে যান তো মাশা আল্লাহ!
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لِّأُوْلِي الألْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে। [ সুরা ইমরান ৩:১৯০ ]
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىَ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। [ সুরা ইমরান ৩:১৯১ ]
আল্লাহ আমাদের কত সুন্দর করে স্মরন করিয়ে দিচ্ছেন -
أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ
যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী। [ সুরা হাদীদ ৫৭:১৬ ]
-
ইয়া আল্লাহ, আপনি এই অধমকে এবং যাদের পর্যন্ত আপনি এই লেখা পৌঁছে দিবেন সকল বান্দাকে আপনার স্মরণে চোখের পানির নিয়ামত দান করুন। আপনার দয়া এবং অনুগ্রহে আমাদেরকে আপনার আরশের নিচে অবস্থান লাভে ধন্য করুন
Comment