Announcement

Collapse
No announcement yet.

সংশয় নিরসন সিরিজ_ *জিহাদ সিরিজ★_ পঞ্চম সংশয়: জিহাদের আগে কি ইমান ঠিক করা শর্ত?

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সংশয় নিরসন সিরিজ_ *জিহাদ সিরিজ★_ পঞ্চম সংশয়: জিহাদের আগে কি ইমান ঠিক করা শর্ত?

    সংশয় নিরসন সিরিজ_ * জিহাদ সিরিজ* _ পঞ্চম সংশয়: জিহাদের আগে কি ইমান ঠিক করা শর্ত?


    " জিহাদ করা কোনো সহজ কাজ নয়। জিহাদের জন্য যেমন মজবুত ইমান থাকা দরকার তেমন ইমান যেহেতু আমাদের নেই, তাই আমাদের উচিত প্রথমে ইমানের মেহনত করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে মক্কায় তেরো বছর সাহাবিদের নিয়ে ইমান ঠিক করেছেন, দাওয়াতের কাজ করেছেন। তারপর তিনি জিহাদের ময়দানে নেমেছেন। আমাদের বর্তমান সময়ে মুসলমানদের ইমানের অবস্থা যেহেতু খুবই শোচনীয়, তাই এখন শুধু তালিম, দাওয়াত ও পির-মুরিদির মাধ্যমে তাদের ইমান ঠিক করতে হবে। তারপর জিহাদ করার চিন্তা করা যাবে। এর আগে জিহাদ করা জায়িজ হবে না।

    *সংশয় নিরসন*

    জিহাদ-বিমুখ আলিমদের জিহাদি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করার এটি একটি প্রদিদ্ধ অজুহাত। এর উত্তর আমরা সংক্ষেপে বলব, ইসলামের চৌদ্দশ বছরের ইতিহাসে উম্মাহর কোনো ফকিহ কি এমন কথা বলেছেন যে, জিহাদের জন্য বিশেষ ধরনের মজবুত ইমান দরকার? শরিয়ার কোন মূলনীতির আলোকে এমন উদ্ভট দাবি পেশ করা হচ্ছে? আল্লাহই ভালো জানেন, কে বা কারা মুসলমানদের মাঝে প্রথম এই ভ্রান্ত কথার প্রচলন ঘটিয়েছে? আমাদের জানামতে, এই বিভ্রান্তির উৎস ভণ্ড নবি মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানির রচিত কিতাবাদি। ইংরেজদের বিরুদ্ধে পরিচালিত জিহাদকে নস্যাৎ করার জন্য ব্রিটিশরা এই কাফিরকে দিয়ে আরও অনেক বিভ্রান্তিকর কথা প্রচার করে।

    চলুন শরিয়ার আলোকে তাদের এই সংশয়টির স্বরূপ যাচাই করে দেখা যাক।

    (এক)
    আপনার কথা মেনে নেওয়া হলো যে, মক্কি জীবনে তের বছর সাহাবায়ে কিরামের ওপর ইমানের মেহনত করা হয়েছে, তারপর জিহাদের বিধান নাজিল করা হয়েছে। তাহলে যেসব সাহাবায়ে কিরাম মদিনায় মুসলমান হয়েছেন, তাদের ওপর তেরো বছর ইমানি মেহনত হলো না কেন? মক্কায় তেরো বছরে মুসলমান হয়েছেন স্বল্প সংখ্যক মানুষ। অধিকাংশ সাহাবি তো মুসলমান হয়েছেন হিজরতের পর; বিশেষ করে আনসারি সাহাবিরা।

    নাউজুবিল্লাহ!
    ইমানি মেহনত না করে, তাদের ইমান মজবুত না করে তাদেরকে যুদ্ধের ময়দানে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল কেন? এই আপত্তি কার ওপর গিয়ে পড়ে? মুজাহিদ সাহাবিগণের ওপর? না মুজাহিদদের রবের ওপর? নাকি জিহাদের ইমাম রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর ওপর?

    একটু চিন্তা করুন!
    যারা মদিনায় মুসলমান হয়েছেন এবং কোনো ধরনের ইমানি মেহনত ছাড়াই জিহাদে শরিক হয়ে শহিদ হয়েছেন, তাদের কী হবে?

    নাউজুবিল্লাহ!
    ইমানের মেহনত না করে দুর্বল ইমান নিয়ে জিহাদের ময়দানে যাওয়ার এই দায়ভার কার ওপর চাপাবেন?

    হাদিসে এসেছে:
    عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ٭ قَالَ٭ سَمِعْتُ البَرَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ٭ يَقُولُ٭ أَتَی النَّبِيَّ صَلَّی اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ مُقَنَّعٌ بِالحَدِيدِ٭ فَقَالَ٭ يَارَسُولَ اللهِ أُقَاتِلُ أَوْ أُسْلِمُ؟ قَالَ أَسْلِمْ ثُمَّ قَاتِلْ٭ فَأَسْلَمَ ثُمَّ قَاتَلَ فَقُتِلَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّی اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم عَمِلَ قَلِيلًا وَأُجِرَ كَثِيرًا
    'বারা রাযিঅাল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহﷺ- এর নিকট লৌহবর্মে আচ্ছাদিত এক ব্যক্তি (আমর বিন সাবিত রাযিঅাল্লাহু আনহু) এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনার পক্ষে যুদ্ধ করব না প্রথমে মুসলমান হয়ে যাব? তিনি বললেন, প্রথমে মুসলিম হও তারপর যুদ্ধে শরিক হও। অতঃপর সে ইসলাম গ্রহণ করে জিহাদে অংশগ্রহণ করল এবং শহিদ হলো। রাসুলুল্লাহﷺবললেন, সে অল্প আমল করল, কিন্তু বেশি সাওয়াব পেয়ে গেল।' (সহিহ বুখারি: ২৮০৮)

    যেসব ভাইয়েরা ইমানি মেহনতের বাহানা দিয়ে বছরের পর বছর জিহাদের হুকুম থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের জন্য এই হাদিসে অনেক বড় শিক্ষা রয়েছে। চিন্তা করুন! এই সাহাবি কালিমা পড়ার পর জিহাদ ব্যতীত দ্বীনের অন্য কোনো আমলই করেননি। কালিমা পড়েই তিনি জিহাদে শরিক হলেন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শহিদ হয়ে জান্নাতে চলে গেলেন। অথচ তিনি সালাত, সওম, হজ, জাকাত, তাবলিগ ইত্যাদি কিছুই করার সুযোগ পাননি। তার নেক আমল শুধু কালিমা ও জিহাদ। রাসুলুল্লাহﷺ তাকে এ কথা বলেননি যে, হে আমর, আগে ইমানের মেহনত করো! আগে ইমান বানাও। তারপর যুদ্ধে শরিক হও।

    আসল কথা হলো, কালিমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন মুসলিমের ওপর শরিয়তের সকল হুকুম নিজ নিজ গুরুত্ব মোতাবেক পালনীয় বলে সাব্যস্ত হয়। উল্লেখিত সাহাবি মুসলমান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ওপর জিহাদ ফরজে আইন হয়ে গিয়েছিল। কারণ, তখন কাফিরদের সঙ্গে মুসলিমদের যুদ্ধে শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাই অন্য কোনো আমলের জন্য তিনি দেরি করতে চাননি, আর রাসুলুল্লাহ ﷺও তাকে দেরি করতে বলেননি। বোঝা গেল, ফরজে আইন পরিমাণ ইলমও হাসিল হয়নি এমন নওমুসলিমও ফরজ জিহাদে শরিক হয়ে যাবে। তাহলে যারা বছরের পর বছর চিল্লায় সময় লাগাচ্ছে, প্রত্যেক বছর তিন মাসের জন্য বের হচ্ছে, তাদের কি এখনো জিহাদে শরিক হওয়ার সময় হয়নি? আর কত বছর বা কত দিন মেহনত করলে জিহাদে শরিক হওয়ার মতো ইমান হবে? এর কি কোনো সময়সীমা আছে? নাকি হায়াত শেষ হয়ে গেলেও জিহাদের উপযুক্ত ইমান তৈরি হবে না?

    (দুই)
    একজন মুসলিমের ওপর যে কারণে সালাত, সওম, হজ, জাকাত ইত্যাদি ফরজ, ঠিক সেই ইমানের কারণেই জিহাদ ফরজ। যে ইমান দিয়ে সালাত আদায় করবে, সওম পালন করবে, হজ করবে, জাকাত দেবে একই ইমান দিয়ে জিহাদের ফরজও আদায় করবে। এর জন্য বিশেষ কোনো ইমান বা আত্মশুদ্ধির কথা ইসলামি শরিয়তে নেই। ইমান বানানোর বাহানা দিয়ে যেমন সালাত, সওম, হজ জাকাত ইত্যাদি থেকে অব্যাহতি লাভ করা যায় না, ঠিক তেমনি জিহাদের হুকুম থেকেও অব্যাহতি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে কেউ নিজেকে মুসলিম দাবি করবে, তার ওপর শরিয়তের সমস্ত হুকুমই বর্তাবে। হ্যাঁ, বিশেষ ওজরের কারণে কারও থেকে কোনো হুকুম সাময়িকভাবে মওকুফ হতে পারে। জিহাদে অংশগ্রহণ না করা বৈধ হওয়ার জন্য কুরআন-সুন্নাহয় যতগুলো ওজর উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে ইমানের দুর্বলতা নেই।

    কোন কোন বিষয়গুলোকে শরিয়ত ওজর হিসেবে গ্রাহ্য করে, তা নিয়ে আমরা সংশয় নিরসনের চতুর্থ পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। অতএব, ইমানের দুর্বলতার বাহানা দিয়ে ফরজে আইন জিহাদ তরক করার কোনো সুযোগ নেই। বরং কেউ যদি ইমানের মেহনত করা কিংবা ইমানের দুর্বলতার বাহানা দাঁড় করিয়ে ফরজে আইন জিহাদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার অপচেষ্টা করে, তবে তার ইমান ক্রমশ দুর্বল হতে থাকবে। এমনকি একপর্যায়ে ইমানহারা হয়ে মরার আশষ্কা আছে। কারণ, আল্লাহ তাআলা জিহাদ পরিত্যাগ করাকে মুনাফিকির আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

    (তিন)
    সাহাবিদের ইমান পরিপূর্ণ ও সবল হতে তেরো বছর লেগেছিল এটি একটি ভিত্তিহীন ও আজগুবি কথা। এটি দ্বীনের মধ্যে এক নির্জলা মিথ্যাচার। সাহাবিদের ইমান নিয়ে এমন প্রশ্ন তোলা রীতিমতো ধৃষ্টতা। কোনো মুসলমান এমন কথা বলতে পারে না। ইসলামের শুরুর দিনগুলোতে যেসব সাহাবি কাফিরদের চরম নির্যাতনর শিকার হয়ে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেছেন, তাদের ইমানের ব্যাপারে আপনাদের কী ধারণা? তারা কি অপরিপূর্ণ ও দুর্বল ইমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় হয়েছেন? তাদের ইমান পরিপূর্ণ হতে কি তেরো বছর সময়ের প্রয়োজন ছিল? সুমাইয়া রাযিঅাল্লাহু আনহা - কে নরপিশাচ আবু জাহিল চরমভাবে নির্যাতন করে অবশেষে লজ্জাস্থানে বর্শা মেরে শহিদ করেছে, তবুও তিনি ইমান পরিত্যাগ করেননি। আপনাদের ভাষ্যমতে তাঁর ইমান কি দুর্বল ছিল?

    উম্মতের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলেন উমর রাযিঅাল্লাহু আনহু। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন নবুওয়াতের যষ্ঠ বছরে। তিনি তো তেরো বছর ইমানের মেহনত করতে পারেনি। তাহলে তাঁর ইমান কি পরিপূর্ণ হয়নি? অনুরূপ যারা নবুওয়াতের প্রথম বছরেই ইসলাম গ্রহণ করেননি; বরং পরে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তারাও তো ইমান বানানোর জন্য তেরো বছর সময় পাননি। তাঁদের ইমানের ব্যাপারে কী বলবেন? তাঁদের সবার ইমান কি অপূর্ণ ছিল।

    আসতাগফিরুল্লাহ!
    কত বড় জালিম আমরা! আল্লাহ আমাদের তাওবা নসিব করুন।

    (চার)
    জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ এমন একটি মুবারক আমল, কোনো দুর্বল ইমানদারও যদি এই ফরজ আদায়ে অগ্রসর হয়, তার ইমান সবল ও মজবুত হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে তার ইমানি শক্তি। কারণ, জিহাদের ময়দানে সে আল্লাহর গায়েবি মদদ ও নুসরত প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পায়। শহিদদের রক্তের সুবাস তার ইমানকে সুরভিত করে তোলো। কুরআনে এসেছে, জিহাদের ময়দানে এলে সাহাবাদের ইমান বৃদ্ধি পেত।

    আল্লাহ তাআলা বলেন:
    الَّذِينَ قَتلَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا وَقَالُوا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ
    'তাদেরকে ( সাহাবিদেরকে) লোকেরা বলেছিল, তোমাদের বিরুদ্ধে লোকসকল ( কুরাইশের যোদ্ধারা) জমায়েত হয়েছে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো। কিন্তু এটি তাদের ইমান দৃঢ়তর করেছিল এবং তারা বলেছিল, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি কত উত্তম কর্ম-বিধায়ক!' (সূরা আলি-ইমরান: ১৭৩)

    অন্য আয়াতে বলেন:
    وَلَمَّا رَأَی الْمُؤْمِنُونَ الْأَحْزَابَ قَالُوا هَذامَا وَعَدَنَا اللهُ وَرَسُولُهُ وَصَدَقَ اللهُ وَرَسُولُهُ وَمَازَادَهُمْ إِلَّا إِيمَانًا وَتَسْلِيمًا
    'মুমিনগণ যখন সম্মিলিত বাহিনীকে দেখল, তারা বলে উঠল, এটি তো তা-ই, আল্লাহ ও তাঁরা রাসূল যার প্রতিশ্রুতি আমাদের দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ ও তার রাসুল সত্যিই বলেছেন। আর এতে তাদের ইমান ও আনুগত্য কেবল বৃদ্ধিই পেল।' (সুরা আহজাব:২২)

    অন্য আয়াতে বলেন:
    وَالَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللهِ فَلَنْ يُضِلَّ أَعْمَالَهُمْ سَيهْدِيهِمْ وَيُصْلِحُ بَالَهُمْ وَيُدْخِلُهُمْ الْجَنَّةَ عَرَّفَهَا لَهُمْ
    'আর যারা আল্লাহর পথে শহিদ হয়, তিনি কখনো তাদের আমল বিনষ্ট হতে দেন না। তিনি তাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তাদের অবস্থা ভালো করে দেন। তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার কথা তিনি তাদেরকে জানিয়েছিলেন।' ( সূরা মুহাম্মাদ: ৫)

    (পাঁচ)
    জিহাদের জন্য স্পেশাল কোনো ইমানের প্রয়োজনীতার কথা বলে যেসব ভাইয়েরা বিভ্রান্তি ছড়ান তাদেরকে অনুরোধ করব, আপনারা কুরআন-সুন্নাহর দলিল সহযোগে ইমান পরিপূর্ণ হওয়ার একটি সুনির্দিষ্ট সীমারেখা ঠিক করে দিন; যে পর্যন্ত পৌঁছলে ইমান পরিপূর্ণ হবে এবং অনায়াসে জিহাদের কাজ করা যাবে। অন্যথায় কিয়ামত পর্যন্ত আগত উম্মত তো অসম্পূর্ণ ইমান নিয়েই মৃত্যুবরণ করবে। বলুন, সেই সীমারেখা কতটুকু? কত বছর এভাবে টালবাহানা করে জিহাদ থেকে উম্মতকে বঞ্চিত রাখবেন?

    (ছয়)
    এখানে এসে অনেকে হয়তো বলবেন, নাহ! এখানে বিষয়টি ইমান বানানো বা ইমানকে পরিপূর্ণ করার না ; কথা হলো জিহাদ করতে হলে দাওয়াতের স্তরটি পার হতে হবে, যেটি রাসুলুল্লাহﷺ তেরো বছরের মক্কি জীবনে পার করেছেন। এখন আমরা মক্কি জীবনে আছি। তাই আমাদের ওপর জিহাদ ফরজ নয়। কেননা, মক্কি জীবনে জিহাদ ফরজ ছিল না ; বরং হারাম ছিল।

    এর উত্তরে আমরা বলব, মক্কি জীবন দ্বিতীয়বার আর কখনো ফিরে আসবে না। রাসুলুল্লাহﷺ-এর মাদানি জীবনের শেষ দিকে এসে ইসলাম পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। পরিপূর্ণ হওয়ার পর এই দ্বীন আর কখনো অপরিপূর্ণতার দিকে ফিরে যাবে না।

    আল্লাহ তাআলা বলেন:
    الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
    'আজ তোমাদের জন্য আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম। আর ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। '(সূরা মায়িদা: ০৫)

    যদি বলা হয়, এখন মক্কি জীবনে চলছে এবং মক্কি জীবনের বিধানই আমরা মেনে চলব, তাহলে তো ইসলাম আর পরিপূর্ণ থাকল না! মক্কি জীবনে শুধু জিহাদ ফরজ ছিল না যে তা নয়, বরং তখন রমজানের রোজা ফরজ হয়নি, জাকাত ফরজ হয়নি, হজ ফরজ হয়নি, পর্দা ফরজ হয়নি ; এছাড়াও দ্বীনের বেশির ভাগ বিধানই তখন নাজিল হয়নি। একখন কি মক্কি জীবন চলছে এই দোহাই দিয়ে আমরা রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদিও ছেড়ে দেবো?

    আহ! দ্বীন-বিকৃতির এই সয়লাব কবে বন্ধ হবে? আল্লাহ আমাদের তাওবা নসিব করুন।

    জিহাদ-বিরোধী অনেক ভাই মক্কি জীবনে নাজিলকৃত মানসুখ আয়াত ও হাদিসগুলো বারবার আওড়াতে থাকে। পরবর্তীকালে নাজিলকৃত আয়াতগুলো তার বেমালুম চেপে যায়। আর বলে বেড়ায় যে, আমরা মক্কি যুগে আছি তাই শুধু দাওয়াতের কথা বলি, জিহাদের কথা বলি না। তাদের বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য আমরা জিহাদ ফরজ হওয়ার ধারাবাহিক স্তরগুলো নিয়ে আলোচনা করব এবং একটি উদাহরণ টেনে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করার প্রয়াস পাব।

    ইসলামে জিহাদ চারটি ধাপে ফরজ হয়। নিম্নে আমরা প্রতিটি ধাপ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করছি।

    (প্রথম ধাপ: শুধু ক্ষমা ও উপেক্ষা।)

    রাসুলুল্লাহﷺযখন মক্কায় তাওহিদের বাণী প্রচার করতে শুরু করলেন এবং তাগুতের ইবাদত ছেড়ে এক আল্লাহর ইবাদত করার আহ্বান জানালেন, তখন মক্কার কাফিররা রাসুলুল্লাহﷺও তার অনুসারীদের ওপর কঠিন নির্যাতন শুরু করল। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের সবর করার এবং দাওয়াতের কাজ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন। কুরআনের একাধিক আয়াতে এই নির্দেশ এসেছে।

    আল্লাহ তাআলা বলেন:
    فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِِ الْمُشْرِكِينَ
    'অতএব, আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন, তা প্রকাশ্যে প্রচার করুন এবং মুশরিকদের উপক্ষা করে চলুন।'( সূরা হিজর: ৯৪)

    অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
    خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
    'আপনি ক্ষমা প্রদর্শন করুন এবং ভালো কাজের আদেশ দিন। আর মূর্খদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন।'(সূরা আরাফ: ১৯৯)

    ওই সময় রাসুলুল্লাহﷺসাহাবায়ে কেরামদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন:
    إِنِّيْ أُمِرْتُ بِالْعَفْوِ فلَا تُقَاتِلُوْا
    'আমাকে ক্ষমা করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, অতএব তোমরা যুদ্ধ করো না। ' (সুনানে নাসায়ি: ৩০৮৬)

    (দ্বিতীয় স্তর: যুদ্ধের অনুমোদন)
    এই স্তরে এসে আল্লাহ তাআলা বিশেষ ক্ষেত্রে শুধু জিহাদের অনুমোদন দিয়েছেন, ফরজ করেননি।


    আল্লাহ তাআলা বলেন:
    أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللهَ عَلَی نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ
    'যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হলো তাদেরকে, যাদের ওপর কাফিররা আক্রমণ করেছে। কেননা, তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদের সাহায্য করতে সক্ষম।'( সূরা হজ:৪০)

    আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা সম্পর্কে এটি প্রথম আয়াত। এই আয়াতে অত্যাচার ও জুলুমের শিকার হলে যুদ্ধে কেবল অনুমতি দেওয়া হয়েছে, আদেশ করা হয়নি। পরে সুরা বাকারায় যুদ্ধের আদেশ প্রদান সম্পর্কিত আয়াতটি নাজিল হয়। সামনে তার আলোচনা আসবে।

    অনুমোদন আর নির্দেশদানের মধ্যে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধান ছিল। অনুমোদন নাজিল হয় হিজরি প্রথম বর্ষের জিলহজ মাসে আর নির্দেশ জারি হয় বদর যুদ্ধের কিছু পূর্বে দ্বিতীয় হিজরির রজব বা শাবান মাসে।
    (তাফসিরে ইবনে কাসির)

    (তৃতীয় স্তর: আত্মরক্ষামূলক জিহাদের আদেশ)

    এই পর্যায়ে এসে আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতির ওপর জিহাদ ফরজ করেছেন। তবে আক্রমণাত্মক নয়; বরং আত্মরক্ষামূলক। যদি কোনো শত্রুপক্ষ মুসলিম ভূখণ্ডের ওপর হামলা করে অথবা কোনো মুসলিমকে আক্রমণ করে বা গ্রেফতার করে কিংবা মুসলিম জাতির জানমালের ক্ষতি করে কেবল সেক্ষেত্রই সেই শত্রুদের প্রতিহত করা এবং তাদের মোকাবেলা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ফরজ করা হয়। এই স্তরে এসে যে আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে তা হলো:

    وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَاتَعْتَدُوا إِنَّ اللهَ لَايُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
    'আর লড়াই করো আল্লাহর রাস্তায় তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্যই কারও প্রতি বাড়াবাড়ি কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। '(সূরা বাকারা: ১৯০)

    অপর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
    وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
    'তোমরা মুশরিকদের সঙ্গে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করবে। যেমনিভাবে তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বত্মকভাবে যুদ্ধ করে। আর জেনে রেখো, আল্লাহ তো মুত্তাকিনদের সঙ্গে আছেন।'(সূরা তাওবা: ৩৬)

    (চতুর্থ স্তর: দ্বীন কায়েমের জন্য যুদ্ধ করা ফরজ)

    এই স্তরে এসে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ ফরজ করা হয়। যেখানেই কাফির বিজয়ী থাকবে তাদের বিরুদ্ধেই জিহাদ করতে হবে। চাই তারা প্রথমে যুদ্ধ করুক আর না-ই করুক। যতক্ষণ তারা ইসলাম গ্রহণ না করে বা জিজিয়া দিয়ে মুসলিম শাসনের আনুগত্য না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত জিহাদ চলতে থাকবে।

    আল্লাহ তাআলা বলেন:
    فَإِذَا انْسَلَخَ الْأَشْهُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ
    'অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিক্রান্ত হলে মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা করো। তাদের বন্দি করো, অবরোধ করো এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁত পেতে বসে থাকো।'(সূরা তাওবা: ০৫)

    অন্য আয়াতে তিনি বলেন:
    قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِا للهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أَُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّی يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ
    'যাদের প্রতি কিতাব অবর্তীণ হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের ওপর ইমান আনে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যা হারাম করেছেন তা হারাম গণ্য করে না এবং সত্য দ্বীন অনুসরণ করে না, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, যতক্ষণ না তারা নত হয়ে স্বহস্তে জিজিয়া আদায় করে।'(সূরা তাওবা:২৯)

    অন্যত্র বলেন:
    وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّی لَاتَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَإِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
    'তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দ্বীন পরিপূর্নভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়।'(সূরা আনফাল:৩৯)

    এই আয়াতগুলো থেকে প্রমাণিত হলো, জিহাদ শুধু আত্মরক্ষামূলক নয়; বরং যেখানেই কুফর ও শিরক বিজয়ী থাকবে, আল্লাহর পরিবর্তে মানুষের সার্বভৌমত্ব ও মানুষের তৈরি আইন-বিধান চলবে এবং বহু ইলাহের আনুহত্যে করা হবে সেখানেই হামলা করতে হবে। এটিই সর্বশেষ বিধান এবং এটিই চূড়ান্ত। এর মাধ্যমেই দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করে। মুসলমান হতে হলে এই পরিপর্ণ ইসলামের ওপরই ইমান আনতে হবে। প্রথম স্তরের ক্ষমার আয়াতসমূহ, দ্বিতীয় স্তরের অনুমতির আয়াতসমূহ এবং তৃতীয় স্তরের আত্মরক্ষামূলক আয়াতগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মুসলমানদের ধোঁকা না দিয়ে সর্বশেষ ও চূড়ান্ত স্তর অনুযায়ী আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য, আল্লাহ কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য এবং কাফির-মুশরিকদের শক্তি ও প্রতিপত্তি চুরমার করে দেওয়ার জন্য জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করাই এখন একজন মুমিনের ফরজ দায়িত্ব।

    (একটি উদাহরণ

    জিহাদ ফরজ হওয়ার এই ধারাবাহিক স্তরসমূহকে আমরা মদ হারাম হওয়ার ধারাবাহিক ধাপগুলোর সঙ্গে তুলনা করতে পারি। আমরা জানি, ইসলামে মদ পান করা সম্পূর্ণ হারাম। কিন্তু এই হারাম কি প্রথম দিনই ঘোষণা করা হয়েছিল? না এটি প্রথম দিনই ঘোষণা করা হয়নি; বরং মদকে হারাম করা হয়েছে চারটি স্তর বা চারটি ধাপে।

    (প্রথম স্তর : মদ তৈরি করা বৈধ)

    আল্লাহ তাআলা বলেন :
    وَمِنْ ثَمَرَاتِ النَّخِيلِ وَالْأَعْنَابِ تَتَّخِذُونَ مِنْهُ سَكَرًا وَرِزْقًا حَسَنًا إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِقِوْمِ يَعْقِلُونَ
    'আর খেজুর বৃক্ষের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।'(সূরা নাহল: ৬৭)

    তখনও মুসলমানরা মদ খেত। একবার উমর রাযিঅাল্লাহু আনহু ও মুআজ রাযিঅাল্লাহু আনহু-সহ সাহাবায়ে কিরামের একটি প্রতিনিধি দল রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদেরকে মদের ব্যাপারে ফয়সালা দিন। কেননা, তা মানুষের বিবেক ও মাল বিনষ্টকারী। এরপর সূরা বাকারার নিম্নোক্ত (দ্বিতীয় স্তরে উল্লেখিত) আয়াতটি নাজিল হয়।

    (দ্বিতীয় স্তর: মদপানে নিরুৎসাহ প্রদান)

    يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا
    'তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকার। কিন্তু এগুলোর পাপ উপকার অপেক্ষা অধিক।'(সূরা বাকারা: ২১৯)

    এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর কিছু সাহাবি মদপান পরিত্যাগ করে, আর কিছু সাহাবি আগের মতো মদপান অব্যাহত রাখে। কেননা, এই আয়াতে মদকে হারাম করা হয়নি; বরং লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি বলে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম এই আয়াত নাজিলের পর থেকে মদকে ঘৃণা করতে শুরু করেন। এর মধ্যে ঘটে গেল আরেকটি ঘটনা। এক সাহাবি মদ খেয়ে বিভোর অবস্থায় ইমামতি করতে গেলেন। নামাজে সূরা কাফিরুন পড়তে গিয়ে তিনি সব আয়াত থেকে(لا) শব্দটি বাদ দিয়ে দেন। এতে সূরার অর্থ সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। এরপর নিম্নোক্ত(তৃতীয় স্তরে উল্লেখিত)আয়াতটি নাজিল হয়।

    (তৃতীয় স্তর: নেশা অবস্থায় সালাত আদায় নিষিদ্ধ)
    يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَی حَتَّی تَعلَمُوا مَا تَقُولُونَ
    'হে মুমিনগণ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না ; যতক্ষণ না তোমরা যা বলো তা বুঝতে পারো।'(সূরা নিসা: ৪৩)

    এই আয়াত নাজিলের পর মদপানকারীদের সংখ্যা আরও কমে গেল। কারণ, তারা চিন্তা করলেন, যে জিনিস পান করে সালাতের কাছে যাওয়া যায় না, তা নিশ্চয় মন্দ জিনিস। তখনও মদ পুরোপুরি হারাম হয়নি। তাই অল্প সংখ্যক সাহাবি তখনও মদপান অব্যাহত রাখেন। একদিন মদ খেয়ে মাতাল হয়ে এক সাহাবি আরেক সাহাবির মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করে। এই ঘটনা শুনে উমর রাযিঅাল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ ﷺএর কাছে আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি মদের ব্যাপারে আমাদেরকে সর্বশেষ ও চূড়ান্ত বিধান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন। এরপরই আল্লাহ তাআলা মদের ব্যাপারে সর্বশেষ ও চূড়ান্ত বিধান হিসেবে নিম্নোক্ত আয়াত নাজিল করেন।

    (চতুর্থ স্তর: মদপান সম্পুর্ণরূপে হারাম)

    يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِِنَّمَا الْخَمرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
    'হে মুমিনগণ, মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্যনির্ণায়ক তীর এসবই হলো ঘৃণ্য বস্তু ও শয়তানের কার্য। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে সফলকাম হতে পারো।'(সূরা মায়িদা:৯০)

    এখানে স্পষ্ট হলো যে, মদ ধাপে ধাপে হারাম করা হয়েছে এবং তিনটি ধাপ অতিক্রম করে বর্তমান অবস্থায় এসে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে। কিন্তু পবিত্র কুরআনে মদ সম্পর্কে সব আয়তই আছে। তাই বলে কি কেউ প্রথম স্তরের, দ্বিতীয় স্তরের কিংবা তৃতীয় স্তরের আয়াতগুলো দিয়ে দলিল পেশ করে বর্তমানে মদকে হালাল বলতে পারে? অবশ্যই নয়; বরং সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নির্দেশই এখানে গ্রহণযোগ্য হবে।

    ঠিক তেমনিভাবে ইসলামের প্রাথমিক যুগে জিহাদের অনুমতি ছিল না। তারপর শুধু অনুমতি দেওয়া হয়েছে, ফরজ করা হয়নি। তারপর ফরজ করা হয়েছে, তবে শুধু আত্মরক্ষামূলক। তারপর চূড়ান্ত ও সর্বশেষ হুকুম নাজিল হলো। এখন কি আমরা সর্বশেষ ও চূড়ান্ত বিধানটিকে গ্রহণ করব, নাকি আগেরগুলো নিয়ে বসে থাকব? একমাত্র মুনাফিক ছাড়া এই বিভ্রান্তিকর কাজ আর কেউ করতে পারে না? মুনাফিকরাই জিহাদ থেকে বাঁচার জন্য টালবাহানা আর প্রতারণার আশ্রয় নেয়। আল্লাহ তাআলা কুরআন মজিদে বিভিন্নভাবে তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন।

    আল্লাহ তাআলা আমাদের বোঝার ও আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।
    ’’হয়তো শরিয়াহ, নয়তো শাহাদাহ,,
Working...
X