তৃতীয় অধ্যায়ঃ মু’মিন ও কাফিরের এই পৃথকীকরণের মাধ্যমেই তাদের মাঝে শত্রুতা সৃষ্টি হয়
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ فَإِذَا هُمْ فَرِيقَانِ يَخْتَصِمُونَ
“আমি অবশ্যই সামুদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদের ভাই সালিহকে পাঠিয়েছিলাম এই আদেশসহঃ ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর’। কিন্তু তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হলো।” (সূরা নামল ২৭ঃ ৪৫)
هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ
“এরা দুই বিবাদমান পক্ষ, তারা তাদের রব সম্বন্ধে বিতর্ক করে;…” (সূরা হাজ্জ ২২ঃ ১৯)
إِنَّ الْكَافِرِينَ كَانُوا لَكُمْ عَدُوًّا مُبِينًا
“নিশ্চয়ই কাফেরগণ তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা নিসা ৪ঃ ১০১)
আর এই শত্রুতার দ্বারা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা উভয় দলকেই পরীক্ষা করেন,
ذَلِكَ وَلَوْ يَشَاءُ اللَّهُ لانْتَصَرَ مِنْهُمْ وَلَكِنْ لِيَبْلُوَ بَعْضَكُمْ بِبَعْضٍ
“ইহা এজন্য যে, আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাহাদেরকে শাস্তি দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি চান তোমাদের একজনকে অন্যের দ্বারা পরীক্ষা করতে।” (সূরা মুহাম্মদ ৪৭ঃ ৪)
তিনি সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ *
“এবং আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, যতক্ষণ না আমি প্রকাশ করি তোমাদের মধ্যে কারা মুজাহিদীন ও ধৈর্যশীল এবং আমি তোমাদের অবস্থা যাচাই করি।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ঃ ৩১)
সৃষ্টির পরীক্ষা নেয়া আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার একটি সুন্নাত এবং এ ব্যাপারে বহু আয়াত রয়েছে যা আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি। এ ব্যাপারে হাদীসেও স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলেছেনঃ “নিশ্চয় আমি তোমাকে পাঠিয়েছি শুধুমাত্র, তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য এবং তোমার সাথে অন্যান্যদের পরীক্ষা করার জন্য।” (মুসলিম কর্তৃক বর্ণিত) । ইমাম আন নববী (রহিমাহুল্লাহ) তার ব্যাখ্যায় বলেছেন, “তাঁর (মহিমান্বিত তিনি) বাণীঃ
“নিশ্চয় আমি তোমাকে পাঠিয়েছি শুধুমাত্র, তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য এবং তোমার সাথে অন্যান্যদের পরীক্ষা করার জন্য।” এর অর্থ হলো, “আমি তোমাকে ঐসব বিষয়ে পরীক্ষা করব যা তোমাদের দ্বারা প্রকাশ হয়ে পড়ে; আমার প্রেরিত হুকুম বাস্তবায়নের মাধ্যমে যা আমি রিসালাতের দ্বারা পাঠিয়েছি এবং এছাড়া আল্লাহর জন্য জিহাদের মাধ্যমে যেমন জিহাদ তাঁর প্রাপ্য এবং আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য সবর করার মাধ্যমে অথবা অন্য কোন উপায়ে।”
আমি তোমার সাথে তাদের পরীক্ষা করব যাদের প্রতি তোমাকে পাঠানো হয়েছে। এরপর তাদের মধ্যে কিছু লোক হবে যাদের ঈমান প্রকাশিত হবে এবং তাদের ঈমান হবে একনিষ্ঠ আল্লাহ্ ও তাঁর আনুগত্যের প্রতি এবং কিছু (মানুষ) পেছনে পড়ে থাকবে এবং স্থায়ীভাবে শত্রুতা করবে এবং কুফরী করবে এবং কিছু (মানুষ) যারা মুনাফিকে পরিণত হবে।” সুতরাং এর অর্থ হলো আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদের পরীক্ষা করবেন যাতে এটি যথার্থভাবে প্রকাশিত হয় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের শুধুমাত্র ঐ জিনিষের জন্য শাস্তি দিবেন যা তাদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে; তার ভিত্তিতে নয় যা সংঘটনের পূর্বেই তিনি অবহিত। আসলে তিনি সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সবকিছু সম্পর্কে পূর্ব থেকেই অবগত, তাঁর আয়াতঃ
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ *
“এবং আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, যতক্ষণ না আমি প্রকাশ করি তোমাদের মধ্যে কারা মুজাহিদীন ও ধৈর্যশীল এবং আমি তোমাদের অবস্থা যাচাই করি।” (সূরা মুহাম্মদ ৪৭ঃ ৩১) অর্থাৎ আমি তাদেরকে চিনি যারা এটি করে এবং যাদের পরিচিতি এভাবে দেয়া হয়েছে।
চতুর্থ অধ্যায়ঃ আল্লাহ্, মহিমান্বিত তাঁর সত্তা, তাক্বদিরের মাধ্যমে মু’মিদের ওপর কাফিরদেরকে শক্তিশালী করেন
মু’মিনদের সাথে শত্রুতা পোষণ ও যুদ্ধ করার ব্যাপারে কাফিরদেরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা শারীয়াহর মাধ্যমে বা কোন নাবীর যবান এর মাধ্যমে আদেশ পাঠাননি; এটি ‘তাক্বদির দ্বারা নির্ধারিত’। তিনি বরং তাদেরকে আদেশ দিয়েছেন ইবাদত এবং আনুগত্যের। সুতরাং মু’মিনদের উপর কাফিরদের শক্তি অর্জন হলো ‘তাক্বদির’ আর কাফিরদের উপর মু’মিনদের শক্তি অর্জন হলো ‘শারয়ী হুকুম’ এবং ‘তাক্বদির’।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ
“আমি এভাবেই প্রত্যেক নাবীর শত্রু করেছিলাম অপরাধীদের মধ্য থেকে।” (সূরা ফুরকান ২৫ঃ ৩১)
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ
“এইরূপে আমি মানুষ ও জ্বিনের মধ্যে শয়তানদেরকে নাবীদের শত্রু করেছি।” (সূরা আন’আম ৬ঃ ১১২)
তিনি সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا فِي كُلِّ قَرْيَةٍ أَكَابِرَ مُجْرِمِيهَا لِيَمْكُرُوا فِيهَا
“এইরূপে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধী প্রধানদেরকে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়েছি।”
(সূরা আন’আম ৬ঃ ১২৩)
উপরোক্ত তিনটি আয়াতেই আল্লাহ্, সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেছেনঃ
‘আমি … করেছি’ বা ‘আমি … দিয়েছি’ ….অর্থাৎ এগুলো তাক্বদির দ্বারা নির্ধারিত।
যুগ, জাতি, নাবী রাসূল অনেক কিছু পাল্টালেও তাদের এই শত্রুতার ধরণ কখনোই পাল্টায়নি। আর একারণেই আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
مَا يُقَالُ لَكَ إِلا مَا قَدْ قِيلَ لِلرُّسُلِ مِنْ قَبْلِكَ
“তোমার সম্বন্ধে তো তাই বলা হয় যা বলা হত তোমার পূর্ববর্তী রাসূলগণ সম্পর্কে।”
(সূরা ফুসসিলাত ৪১ঃ ৪৩)
এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
كَذَلِكَ مَا أَتَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلا قَالُوا سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ * أَتَوَاصَوْا بِهِ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُونَ
“এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে তারা তাকে বলেছে, ‘তুমি তো এক যাদুকর না হয় উন্মাদ’। তারা কি একে অপরকে এই মন্ত্রণাই দিয়েছে (বংশানুক্রমে শিখিয়েছে)? বস্তুত তারা সীমালঙঘনকারী সম্প্রদায়।” (সূরা যারিয়াত ৫১ঃ ৫২-৫৩)
তাদের এই শত্রুতার রয়েছে নানান রূপঃ অন্তরের কুফরী (তাকযিব); আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ
وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوا
“নিশ্চয় তোমার পূর্বে অনেক রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল; কিন্তু তারা ধৈর্যধারণ করেন…”
(সূরা আন’আম ৬ঃ ৩৪)
ঠাট্টা (সুখ্রিয়াহ) এবং বিদ্রুপ (ইসতিহ্জা) করা; আল্লাহ্ তাবারাক ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ أَجْرَمُوا كَانُوا مِنَ الَّذِينَ آَمَنُوا يَضْحَكُونَ
“যারা অপরাধী তারা তো মু’মিনদেরকে উপহাস করত।” (সূরা মুতাফ্ফিফীন ৮৩ঃ ২৯)
এবং তিনি সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেনঃ
يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ مَا يَأْتِيهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ
“পরিতাপ বান্দাদের জন্য; তাদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে তখনই তারা তাকে বিদ্রুপ করেছে।” (সূরা ইয়াসীন ৩৬ঃ ৩০)
মু’মিনদেরকে পাগল (জুনুন) বলে অপবাদ দেয়া; আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
وَقَالُوا يَا أَيُّهَا الَّذِي نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ
“তারা বলে, ‘ওহে যার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে! তুমি তো নিশ্চয় উন্মাদ।” (সূরা হিজ্র ১৫ঃ ৬)
মু’মিনরা কর্তৃত্ব (হুক্ম) ও ক্ষমতালোভী (রিয়াসাহ) বলে অপবাদ দেয়া, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
قَالُوا أَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آَبَاءَنَا وَتَكُونَ لَكُمَا الْكِبْرِيَاءُ فِي الْأَرْضِ
“তারা বলতে লাগলোঃ তুমি কি আমাদের নিকট এইজন্য এসেছ যে, আমাদেরকে সরিয়ে দাও সেই তরিকা থেকে, যাতে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের পেয়েছি, আর পৃথিবীতে তোমাদের দুইজনের আধিপত্য স্থাপিত হয়ে যায়?” (সূরা ইউনুস ১০ঃ ৭৮)
মু’মিনদের ধর্মত্যাগ ও বিশৃঙ্খলা (ফাসাদ) সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করা, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُونِي أَقْتُلْ مُوسَى وَلْيَدْعُ رَبَّهُ إِنِّي أَخَافُ أَنْ يُبَدِّلَ دِينَكُمْ أَوْ أَنْ يُظْهِرَ فِي الْأَرْضِ الْفَسَادَ
“ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালকের স্মরণাপন্ন হোক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনের পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।” (সূরা মু’মিন ৪০ঃ ২৬)
মু’মিনদের দারিদ্র ও অসহায়ত্বের সুযোগে গালমন্দ করা, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
قَالُوا أَنُؤْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الْأَرْذَلُونَ
“তারা বললঃ আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব অথচ নিচু শ্রেণীর লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে।” (সূরা শূরা ২৬ঃ ১১১)
তারা এটি করত যাতে অন্য মানুষেরা মু’মিনদের নিকটে না আসেঃ
قَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِلَّذِينَ آَمَنُوا أَيُّ الْفَرِيقَيْنِ خَيْرٌ مَقَامًا وَأَحْسَنُ نَدِيًّا
“… কাফিররা মু’মিনদের বলেঃ দু’দলের মধ্যে কোনটি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর ও মজলিস হিসেবে কোনটি উত্তম।” (সূরা মারইয়াম ১৯ঃ ৭৩)
মু’মিনরা অভিশপ্ত এবং মু’মিনদের কারণে তাদের উপর গযব আসবে এমন অভিযোগঃ
قَالُوا إِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ لَئِنْ لَمْ تَنْتَهُوا لَنَرْجُمَنَّكُمْ
“তারা বললঃ আমরা তোমাদেরকে অমঙ্গলের কারণ মনে করি এবং যদি তোমরা বিরত না হও তবে অবশ্যই তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করব; …” (সূরা ইয়াসীন ৩৬ঃ ১৮)
সত্য প্রত্যাখ্যান এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা যুক্তি প্রদর্শন; আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
وَيُجَادِلُ الَّذِينَ كَفَرُوا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوا بِهِ الْحَقَّ وَاتَّخَذُوا آَيَاتِي وَمَا أُنْذِرُوا هُزُوًا
“… কিন্তু কাফিররা মিথ্যা অবলম্বনে বিতন্ডা করে, এর দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য এবং আমার নিদর্শনাবলী ও যা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেই সমস্তকে তারা বিদ্রুপের বিষয়বস্তুরূপে গ্রহণ করে থাকে।” (সূরা কাহ্ফ ১৮ঃ ৫৬)
এগুলোর মাঝে লুকিয়ে ছিল তাদের বিভ্রান্তিসমূহ যা দ্বারা তারা আল্লাহর পথে বাঁধা সৃষ্টি করত।
সাধারণ মানুষকে মু’মিনদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
وَقَالَ الْمَلا الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَوْمِهِ لَئِنِ اتَّبَعْتُمْ شُعَيْبًا إِنَّكُمْ إِذًا لَخَاسِرُونَ
“তার সম্প্রদায়ের কাফির প্রধানরা বললঃ ‘তোমরা যদি শুআ’ইবকে অনুসরণ কর তবে তোমরা তো ক্ষতিগ্রস্থ হবে’।” (সূরা আ’রাফ ৭ঃ ৯০)
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
إِنِّي أَخَافُ أَنْ يُبَدِّلَ دِينَكُمْ أَوْ أَنْ يُظْهِرَ فِي الْأَرْضِ الْفَسَادَ
“ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালকের স্মরণাপন্ন হোক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনের পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।” (সূরা মু’মিন ৪০ঃ ২৬)
মু’মিনরা মুষ্টিমেয় হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ জনগণের উপর তাদের মতবাদ চাঁপিয়ে দিচ্ছে এমন অভিযোগ উত্থাপন। এর উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেছেনঃ
فَأَرْسَلَ فِرْعَوْنُ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ * إِنَّ هَؤُلاءِ لَشِرْذِمَةٌ قَلِيلُونَ * وَإِنَّهُمْ لَنَا لَغَائِظُونَ * وَإِنَّا لَجَمِيعٌ حَاذِرُونَ
“এরপর ফিরাউন শহরে শহরে লোক সংগ্রহকারী পাঠালো এই বলেঃ ‘ইহারা তো ক্ষুদ্র একটি দল। ইহারা তো আমাদের ক্রোধ উদ্রেক করেছে এবং আমরা তো সকলেই সদা শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সদা সতর্ক’।”
(সূরা শু‘আরা ২৬ঃ ৫৩-৫৬)
তারা দাবী করে যে, সত্য দ্বীনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান মু’মিনদের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ
قَالَ فِرْعَوْنُ مَا أُرِيكُمْ إِلا مَا أَرَى وَمَا أَهْدِيكُمْ إِلا سَبِيلَ الرَّشَادِ
“ফিরাউন বললঃ আমি যা বুঝি, আমি তোমাদেরকে তাই বলছি। আমি তোমাদেরকে কেবল সৎপথই দেখিয়ে থাকি।” (সূরা মু’মিন ৪০ঃ ২৯)
তিনি, (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা), বলেনঃ
إِنْ هَذَانِ لَسَاحِرَانِ يُرِيدَانِ أَنْ يُخْرِجَاكُمْ مِنْ أَرْضِكُمْ بِسِحْرِهِمَا وَيَذْهَبَا بِطَرِيقَتِكُمُ الْمُثْلَى
“তারা বললঃ নিশ্চয় এরা দুইজন যাদুকর, তারা চায় তাদের যাদু দিয়ে তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা ধ্বংস করতে।” (সূরা ত্বাহা ২০ঃ ৬৩)
তিনি, (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা), বলেনঃ
فَلَمَّا جَاءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَرِحُوا بِمَا عِنْدَهُمْ مِنَ الْعِلْمِ
“তাদের কাছে যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের রাসূল আসত তখন তারা নিজেদের জ্ঞানের দম্ভ করত।” (সূরা মু’মিন ৪০ঃ ৮৩)
নানাবিধ চক্রান্ত ও পরিকল্পনা করে সাধারণ মানুষকে মু’মিনদের অনুসরণ থেকে বিরত রাখা।
আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَقَالَ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِذْ تَأْمُرُونَنَا أَنْ نَكْفُرَ بِاللَّهِ وَنَجْعَلَ لَهُ أَنْدَادًا وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ وَجَعَلْنَا الْأَغْلالَ فِي أَعْنَاقِ الَّذِينَ كَفَرُوا هَلْ يُجْزَوْنَ إِلا مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
“যাদেরকে দুর্বল বলা হত তারা ক্ষমতাদর্পীদেরকে বলবেঃ ‘প্রকৃতপক্ষে তোমরাই তো দিবারাত্র চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি। যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা অনুতাপ গোপন রাখবে এবং আমি কাফিরদের গলায় শৃঙ্খল পরাব। তাদেরকে তারা যা করত তারই প্রতিফল দেয়া হবে।”
(সূরা সাবা ৩৪ঃ ৩৩)
মু’মিনদেরকে সুবিধাবঞ্চিত করে দ্বীন থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
هُمُ الَّذِينَ يَقُولُونَ لا تُنْفِقُوا عَلَى مَنْ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ حَتَّى يَنْفَضُّوا وَلِلَّهِ خَزَائِنُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لا يَفْقَهُونَ
“তারা বলেঃ আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য ব্যয় কর না যতক্ষণ না তারা তার থেকে সরে পড়ে। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর ধনভান্ডার তো আল্লাহরই কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না।”
(সূরা মুনাফিকূন ৬৩ঃ ৭)
মু’মিনদেরকে নানাবিধ সমস্যায় ফেলে দ্বীন থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَدُّوا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُونَ
“তারা চায় তুমি নমনীয় হও; তাহলে তারাও নমনীয় হবে।” (সূরা কালাম ৬৮ঃ ৯)
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَاحْذَرْهُمْ أَنْ يَفْتِنُوكَ عَنْ بَعْضِ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ
“…তাদের সম্পর্কে সতর্ক হও যাতে আল্লাহ্ যা তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন তা থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করতে না পারে।” (সূরা মা‘য়িদা ৫ঃ ৪৯)
কাফিররা কখনো মু’মিনদের এমন আহবান করে না যাতে তারা সত্য থেকে কিছু সরে আসে। কিছু সময়ের জন্য এমনটি চাইলেও, তাদের পরিপূর্ণ তৃপ্তি ততক্ষণ পর্যন্ত আসে না যতক্ষণ না মু’মিনগণ সত্য থেকে পুরোপুরি সরে আসে। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ
“ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানরা তোমার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর।” (সূরা বাকারা ২ঃ ১২০)
মু’মিনরা যদি তাদের দ্বীন থেকে না সরে অথবা কাফিরদের সাহায্য সহযোগীতা না করে তবে তাদেরকে জেল ও মৃত্যুদন্ডের ভয় দেখানো। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِنْ أَرْضِنَا أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا
“কাফিররা তাদের রাসূলগণকে বলেছিলঃ আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই আমাদের দেশ থেকে বহিষ্কৃত করব।” (সূরা ইব্রাহীম ১৪ঃ ১৩)
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
إِنَّهُمْ إِنْ يَظْهَرُوا عَلَيْكُمْ يَرْجُمُوكُمْ أَوْ يُعِيدُوكُمْ فِي مِلَّتِهِمْ وَلَنْ تُفْلِحُوا إِذًا أَبَدًا
“তারা যদি তোমাদের ব্যাপারে জানতে পারে তাহলে তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নিবে এবং সেক্ষেত্রে তোমরা কখনোই সফলকাম হবে না।”
(সূরা কাহ্ফ ১৮ঃ ২০)
মু’মিনদের উপর অত্যাচার, হত্যা এবং সংঘাত চাঁপিয়ে দেয়া। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
قَالُوا حَرِّقُوهُ وَانْصُرُوا آَلِهَتَكُمْ
“তারা বললঃ তাকে পুড়িয়ে দাও; সাহায্য কর তোমাদের দেবতাদেরকে…।” (সূরা আম্বিয়া ২১ঃ ৬৮)
তিনি, (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা), বলেনঃ
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ
“আর স্মরণ কর যখন কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যে, তোমাকে বন্দী করবে অথবা হত্যা করবে অথবা নির্বাসিত করবে…” (সূরা আন্ফাল ৮ঃ ৩০)
তিনি, (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা), বলেনঃ
وَلا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّى يَرُدُّوكُمْ عَنْ دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا
“তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়।” (সূরা বাকারা ২ঃ ২১৭)
তাই মু’মিন ভাইদের উদ্দেশ্যে বলছি, কাফিরদের শত্রুতা ও বিরোধিতার কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে যা কখনো বদলাবে না। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
أَتَوَاصَوْا بِهِ
“তারা কি একে অপরকে এই মন্ত্রণাই দিয়েছে (বংশানুক্রমে শিখিয়েছে)?” (সূরা যারিয়াত ৫১ঃ ৫৩)
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো মু’মিনদের ঈমানের কারণেই কাফিররা মু’মিনদের সাথে যুদ্ধ করে এবং শত্রুতা পোষণ করে। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَهُمْ عَلَى مَا يَفْعَلُونَ بِالْمُؤْمِنِينَ شُهُودٌ * وَمَا نَقَمُوا مِنْهُمْ إِلا أَنْ يُؤْمِنُوا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ
“তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধু এই কারণে যে তারা বিশ্বাস করত পরাক্রমশালী ও প্রশংসার্হ আল্লাহতে- আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যার সর্বময় কর্তৃত্ব; আর আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বদ্রষ্টা।”
(সূরা আল বুরুজ ৮৫ঃ ৭-৮)
এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ كَمَا كَفَرُوا فَتَكُونُونَ سَوَاءً
“তারা এটাই কামনা করে যে, তারা যেমন কুফরী করেছে তোমরা সেরকম কুফরী কর; যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও।” (সূরা নিসা ৪ঃ ৮৯)
সুতরাং কাফিরগণ মু’মিনগণকে শত্রু হিসেবে নেয় তাদের ঈমানের জন্য। একজন মুমিনের ঈমান যত বৃদ্ধি পায় তাঁর প্রতি কাফিরদের শত্রুতা ততই বৃদ্ধি পায়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “সবচাইতে বেশী পরীক্ষা করা হয় নাবীদেরকে, এরপর তাদের নিকটবর্তীদেরকে (ঈমানের স্তর ভেদে), তারপর তাদের নিকটবর্তীদেরকে (ঈমানের স্তর ভেদে)। মানুষ তার ঈমানের অনুযায়ী পরীক্ষিত হবে… ..”। (আত তিরমিযী; সহীহ্)
আর এটি বান্দা নিজেও বুঝতে পারে যে, তার ঈমান বৃদ্ধির সাথে সাথে তার প্রতি কাফির ও ফাসিকদের শত্রুতাও বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং সে তাদেরকে ভালো কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজে নিষেধ করে, এতে শত্রুতা আরো বৃদ্ধি পায়। আর তার ঈমান যত হ্রাস পায় তাদের শত্রুতাও ততই হ্রাস পায়।
তবে মু’মিনরা যতদিন ঈমানের উপর থাকবে তাদের প্রতি কাফিরদের শত্রুতা ততদিন পর্যন্ত শেষ হবে না; যদিও এতে কিছু থাকে তবুও। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ
“ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানরা তোমার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর।” (সূরা বাকারা ২ঃ ১২০)
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَلا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّى يَرُدُّوكُمْ عَنْ دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا
“তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়।” (সূরা বাকারা ২ঃ ২১৭)
[ইনশাআল্লাহ্* চলবে]
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ فَإِذَا هُمْ فَرِيقَانِ يَخْتَصِمُونَ
“আমি অবশ্যই সামুদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদের ভাই সালিহকে পাঠিয়েছিলাম এই আদেশসহঃ ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর’। কিন্তু তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হলো।” (সূরা নামল ২৭ঃ ৪৫)
هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ
“এরা দুই বিবাদমান পক্ষ, তারা তাদের রব সম্বন্ধে বিতর্ক করে;…” (সূরা হাজ্জ ২২ঃ ১৯)
إِنَّ الْكَافِرِينَ كَانُوا لَكُمْ عَدُوًّا مُبِينًا
“নিশ্চয়ই কাফেরগণ তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা নিসা ৪ঃ ১০১)
আর এই শত্রুতার দ্বারা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা উভয় দলকেই পরীক্ষা করেন,
ذَلِكَ وَلَوْ يَشَاءُ اللَّهُ لانْتَصَرَ مِنْهُمْ وَلَكِنْ لِيَبْلُوَ بَعْضَكُمْ بِبَعْضٍ
“ইহা এজন্য যে, আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাহাদেরকে শাস্তি দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি চান তোমাদের একজনকে অন্যের দ্বারা পরীক্ষা করতে।” (সূরা মুহাম্মদ ৪৭ঃ ৪)
তিনি সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ *
“এবং আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, যতক্ষণ না আমি প্রকাশ করি তোমাদের মধ্যে কারা মুজাহিদীন ও ধৈর্যশীল এবং আমি তোমাদের অবস্থা যাচাই করি।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ঃ ৩১)
সৃষ্টির পরীক্ষা নেয়া আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার একটি সুন্নাত এবং এ ব্যাপারে বহু আয়াত রয়েছে যা আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি। এ ব্যাপারে হাদীসেও স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলেছেনঃ “নিশ্চয় আমি তোমাকে পাঠিয়েছি শুধুমাত্র, তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য এবং তোমার সাথে অন্যান্যদের পরীক্ষা করার জন্য।” (মুসলিম কর্তৃক বর্ণিত) । ইমাম আন নববী (রহিমাহুল্লাহ) তার ব্যাখ্যায় বলেছেন, “তাঁর (মহিমান্বিত তিনি) বাণীঃ
“নিশ্চয় আমি তোমাকে পাঠিয়েছি শুধুমাত্র, তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য এবং তোমার সাথে অন্যান্যদের পরীক্ষা করার জন্য।” এর অর্থ হলো, “আমি তোমাকে ঐসব বিষয়ে পরীক্ষা করব যা তোমাদের দ্বারা প্রকাশ হয়ে পড়ে; আমার প্রেরিত হুকুম বাস্তবায়নের মাধ্যমে যা আমি রিসালাতের দ্বারা পাঠিয়েছি এবং এছাড়া আল্লাহর জন্য জিহাদের মাধ্যমে যেমন জিহাদ তাঁর প্রাপ্য এবং আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য সবর করার মাধ্যমে অথবা অন্য কোন উপায়ে।”
আমি তোমার সাথে তাদের পরীক্ষা করব যাদের প্রতি তোমাকে পাঠানো হয়েছে। এরপর তাদের মধ্যে কিছু লোক হবে যাদের ঈমান প্রকাশিত হবে এবং তাদের ঈমান হবে একনিষ্ঠ আল্লাহ্ ও তাঁর আনুগত্যের প্রতি এবং কিছু (মানুষ) পেছনে পড়ে থাকবে এবং স্থায়ীভাবে শত্রুতা করবে এবং কুফরী করবে এবং কিছু (মানুষ) যারা মুনাফিকে পরিণত হবে।” সুতরাং এর অর্থ হলো আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদের পরীক্ষা করবেন যাতে এটি যথার্থভাবে প্রকাশিত হয় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের শুধুমাত্র ঐ জিনিষের জন্য শাস্তি দিবেন যা তাদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে; তার ভিত্তিতে নয় যা সংঘটনের পূর্বেই তিনি অবহিত। আসলে তিনি সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সবকিছু সম্পর্কে পূর্ব থেকেই অবগত, তাঁর আয়াতঃ
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ *
“এবং আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, যতক্ষণ না আমি প্রকাশ করি তোমাদের মধ্যে কারা মুজাহিদীন ও ধৈর্যশীল এবং আমি তোমাদের অবস্থা যাচাই করি।” (সূরা মুহাম্মদ ৪৭ঃ ৩১) অর্থাৎ আমি তাদেরকে চিনি যারা এটি করে এবং যাদের পরিচিতি এভাবে দেয়া হয়েছে।
চতুর্থ অধ্যায়ঃ আল্লাহ্, মহিমান্বিত তাঁর সত্তা, তাক্বদিরের মাধ্যমে মু’মিদের ওপর কাফিরদেরকে শক্তিশালী করেন
মু’মিনদের সাথে শত্রুতা পোষণ ও যুদ্ধ করার ব্যাপারে কাফিরদেরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা শারীয়াহর মাধ্যমে বা কোন নাবীর যবান এর মাধ্যমে আদেশ পাঠাননি; এটি ‘তাক্বদির দ্বারা নির্ধারিত’। তিনি বরং তাদেরকে আদেশ দিয়েছেন ইবাদত এবং আনুগত্যের। সুতরাং মু’মিনদের উপর কাফিরদের শক্তি অর্জন হলো ‘তাক্বদির’ আর কাফিরদের উপর মু’মিনদের শক্তি অর্জন হলো ‘শারয়ী হুকুম’ এবং ‘তাক্বদির’।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ
“আমি এভাবেই প্রত্যেক নাবীর শত্রু করেছিলাম অপরাধীদের মধ্য থেকে।” (সূরা ফুরকান ২৫ঃ ৩১)
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ
“এইরূপে আমি মানুষ ও জ্বিনের মধ্যে শয়তানদেরকে নাবীদের শত্রু করেছি।” (সূরা আন’আম ৬ঃ ১১২)
তিনি সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا فِي كُلِّ قَرْيَةٍ أَكَابِرَ مُجْرِمِيهَا لِيَمْكُرُوا فِيهَا
“এইরূপে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধী প্রধানদেরকে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়েছি।”
(সূরা আন’আম ৬ঃ ১২৩)
উপরোক্ত তিনটি আয়াতেই আল্লাহ্, সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেছেনঃ
‘আমি … করেছি’ বা ‘আমি … দিয়েছি’ ….অর্থাৎ এগুলো তাক্বদির দ্বারা নির্ধারিত।
যুগ, জাতি, নাবী রাসূল অনেক কিছু পাল্টালেও তাদের এই শত্রুতার ধরণ কখনোই পাল্টায়নি। আর একারণেই আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
مَا يُقَالُ لَكَ إِلا مَا قَدْ قِيلَ لِلرُّسُلِ مِنْ قَبْلِكَ
“তোমার সম্বন্ধে তো তাই বলা হয় যা বলা হত তোমার পূর্ববর্তী রাসূলগণ সম্পর্কে।”
(সূরা ফুসসিলাত ৪১ঃ ৪৩)
এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
كَذَلِكَ مَا أَتَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلا قَالُوا سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ * أَتَوَاصَوْا بِهِ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُونَ
“এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে তারা তাকে বলেছে, ‘তুমি তো এক যাদুকর না হয় উন্মাদ’। তারা কি একে অপরকে এই মন্ত্রণাই দিয়েছে (বংশানুক্রমে শিখিয়েছে)? বস্তুত তারা সীমালঙঘনকারী সম্প্রদায়।” (সূরা যারিয়াত ৫১ঃ ৫২-৫৩)
তাদের এই শত্রুতার রয়েছে নানান রূপঃ অন্তরের কুফরী (তাকযিব); আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ
وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوا
“নিশ্চয় তোমার পূর্বে অনেক রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল; কিন্তু তারা ধৈর্যধারণ করেন…”
(সূরা আন’আম ৬ঃ ৩৪)
ঠাট্টা (সুখ্রিয়াহ) এবং বিদ্রুপ (ইসতিহ্জা) করা; আল্লাহ্ তাবারাক ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ أَجْرَمُوا كَانُوا مِنَ الَّذِينَ آَمَنُوا يَضْحَكُونَ
“যারা অপরাধী তারা তো মু’মিনদেরকে উপহাস করত।” (সূরা মুতাফ্ফিফীন ৮৩ঃ ২৯)
এবং তিনি সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেনঃ
يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ مَا يَأْتِيهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ
“পরিতাপ বান্দাদের জন্য; তাদের নিকট যখনই কোন রাসূল এসেছে তখনই তারা তাকে বিদ্রুপ করেছে।” (সূরা ইয়াসীন ৩৬ঃ ৩০)
মু’মিনদেরকে পাগল (জুনুন) বলে অপবাদ দেয়া; আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
وَقَالُوا يَا أَيُّهَا الَّذِي نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ
“তারা বলে, ‘ওহে যার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে! তুমি তো নিশ্চয় উন্মাদ।” (সূরা হিজ্র ১৫ঃ ৬)
মু’মিনরা কর্তৃত্ব (হুক্ম) ও ক্ষমতালোভী (রিয়াসাহ) বলে অপবাদ দেয়া, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
قَالُوا أَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آَبَاءَنَا وَتَكُونَ لَكُمَا الْكِبْرِيَاءُ فِي الْأَرْضِ
“তারা বলতে লাগলোঃ তুমি কি আমাদের নিকট এইজন্য এসেছ যে, আমাদেরকে সরিয়ে দাও সেই তরিকা থেকে, যাতে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের পেয়েছি, আর পৃথিবীতে তোমাদের দুইজনের আধিপত্য স্থাপিত হয়ে যায়?” (সূরা ইউনুস ১০ঃ ৭৮)
মু’মিনদের ধর্মত্যাগ ও বিশৃঙ্খলা (ফাসাদ) সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করা, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُونِي أَقْتُلْ مُوسَى وَلْيَدْعُ رَبَّهُ إِنِّي أَخَافُ أَنْ يُبَدِّلَ دِينَكُمْ أَوْ أَنْ يُظْهِرَ فِي الْأَرْضِ الْفَسَادَ
“ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালকের স্মরণাপন্ন হোক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনের পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।” (সূরা মু’মিন ৪০ঃ ২৬)
মু’মিনদের দারিদ্র ও অসহায়ত্বের সুযোগে গালমন্দ করা, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
قَالُوا أَنُؤْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الْأَرْذَلُونَ
“তারা বললঃ আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব অথচ নিচু শ্রেণীর লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে।” (সূরা শূরা ২৬ঃ ১১১)
তারা এটি করত যাতে অন্য মানুষেরা মু’মিনদের নিকটে না আসেঃ
قَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِلَّذِينَ آَمَنُوا أَيُّ الْفَرِيقَيْنِ خَيْرٌ مَقَامًا وَأَحْسَنُ نَدِيًّا
“… কাফিররা মু’মিনদের বলেঃ দু’দলের মধ্যে কোনটি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর ও মজলিস হিসেবে কোনটি উত্তম।” (সূরা মারইয়াম ১৯ঃ ৭৩)
মু’মিনরা অভিশপ্ত এবং মু’মিনদের কারণে তাদের উপর গযব আসবে এমন অভিযোগঃ
قَالُوا إِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ لَئِنْ لَمْ تَنْتَهُوا لَنَرْجُمَنَّكُمْ
“তারা বললঃ আমরা তোমাদেরকে অমঙ্গলের কারণ মনে করি এবং যদি তোমরা বিরত না হও তবে অবশ্যই তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করব; …” (সূরা ইয়াসীন ৩৬ঃ ১৮)
সত্য প্রত্যাখ্যান এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা যুক্তি প্রদর্শন; আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
وَيُجَادِلُ الَّذِينَ كَفَرُوا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوا بِهِ الْحَقَّ وَاتَّخَذُوا آَيَاتِي وَمَا أُنْذِرُوا هُزُوًا
“… কিন্তু কাফিররা মিথ্যা অবলম্বনে বিতন্ডা করে, এর দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য এবং আমার নিদর্শনাবলী ও যা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেই সমস্তকে তারা বিদ্রুপের বিষয়বস্তুরূপে গ্রহণ করে থাকে।” (সূরা কাহ্ফ ১৮ঃ ৫৬)
এগুলোর মাঝে লুকিয়ে ছিল তাদের বিভ্রান্তিসমূহ যা দ্বারা তারা আল্লাহর পথে বাঁধা সৃষ্টি করত।
সাধারণ মানুষকে মু’মিনদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
وَقَالَ الْمَلا الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَوْمِهِ لَئِنِ اتَّبَعْتُمْ شُعَيْبًا إِنَّكُمْ إِذًا لَخَاسِرُونَ
“তার সম্প্রদায়ের কাফির প্রধানরা বললঃ ‘তোমরা যদি শুআ’ইবকে অনুসরণ কর তবে তোমরা তো ক্ষতিগ্রস্থ হবে’।” (সূরা আ’রাফ ৭ঃ ৯০)
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
إِنِّي أَخَافُ أَنْ يُبَدِّلَ دِينَكُمْ أَوْ أَنْ يُظْهِرَ فِي الْأَرْضِ الْفَسَادَ
“ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালকের স্মরণাপন্ন হোক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনের পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।” (সূরা মু’মিন ৪০ঃ ২৬)
মু’মিনরা মুষ্টিমেয় হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ জনগণের উপর তাদের মতবাদ চাঁপিয়ে দিচ্ছে এমন অভিযোগ উত্থাপন। এর উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেছেনঃ
فَأَرْسَلَ فِرْعَوْنُ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ * إِنَّ هَؤُلاءِ لَشِرْذِمَةٌ قَلِيلُونَ * وَإِنَّهُمْ لَنَا لَغَائِظُونَ * وَإِنَّا لَجَمِيعٌ حَاذِرُونَ
“এরপর ফিরাউন শহরে শহরে লোক সংগ্রহকারী পাঠালো এই বলেঃ ‘ইহারা তো ক্ষুদ্র একটি দল। ইহারা তো আমাদের ক্রোধ উদ্রেক করেছে এবং আমরা তো সকলেই সদা শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সদা সতর্ক’।”
(সূরা শু‘আরা ২৬ঃ ৫৩-৫৬)
তারা দাবী করে যে, সত্য দ্বীনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান মু’মিনদের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ
قَالَ فِرْعَوْنُ مَا أُرِيكُمْ إِلا مَا أَرَى وَمَا أَهْدِيكُمْ إِلا سَبِيلَ الرَّشَادِ
“ফিরাউন বললঃ আমি যা বুঝি, আমি তোমাদেরকে তাই বলছি। আমি তোমাদেরকে কেবল সৎপথই দেখিয়ে থাকি।” (সূরা মু’মিন ৪০ঃ ২৯)
তিনি, (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা), বলেনঃ
إِنْ هَذَانِ لَسَاحِرَانِ يُرِيدَانِ أَنْ يُخْرِجَاكُمْ مِنْ أَرْضِكُمْ بِسِحْرِهِمَا وَيَذْهَبَا بِطَرِيقَتِكُمُ الْمُثْلَى
“তারা বললঃ নিশ্চয় এরা দুইজন যাদুকর, তারা চায় তাদের যাদু দিয়ে তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা ধ্বংস করতে।” (সূরা ত্বাহা ২০ঃ ৬৩)
তিনি, (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা), বলেনঃ
فَلَمَّا جَاءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَرِحُوا بِمَا عِنْدَهُمْ مِنَ الْعِلْمِ
“তাদের কাছে যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের রাসূল আসত তখন তারা নিজেদের জ্ঞানের দম্ভ করত।” (সূরা মু’মিন ৪০ঃ ৮৩)
নানাবিধ চক্রান্ত ও পরিকল্পনা করে সাধারণ মানুষকে মু’মিনদের অনুসরণ থেকে বিরত রাখা।
আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَقَالَ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِذْ تَأْمُرُونَنَا أَنْ نَكْفُرَ بِاللَّهِ وَنَجْعَلَ لَهُ أَنْدَادًا وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ وَجَعَلْنَا الْأَغْلالَ فِي أَعْنَاقِ الَّذِينَ كَفَرُوا هَلْ يُجْزَوْنَ إِلا مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
“যাদেরকে দুর্বল বলা হত তারা ক্ষমতাদর্পীদেরকে বলবেঃ ‘প্রকৃতপক্ষে তোমরাই তো দিবারাত্র চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি। যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা অনুতাপ গোপন রাখবে এবং আমি কাফিরদের গলায় শৃঙ্খল পরাব। তাদেরকে তারা যা করত তারই প্রতিফল দেয়া হবে।”
(সূরা সাবা ৩৪ঃ ৩৩)
মু’মিনদেরকে সুবিধাবঞ্চিত করে দ্বীন থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
هُمُ الَّذِينَ يَقُولُونَ لا تُنْفِقُوا عَلَى مَنْ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ حَتَّى يَنْفَضُّوا وَلِلَّهِ خَزَائِنُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لا يَفْقَهُونَ
“তারা বলেঃ আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য ব্যয় কর না যতক্ষণ না তারা তার থেকে সরে পড়ে। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর ধনভান্ডার তো আল্লাহরই কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না।”
(সূরা মুনাফিকূন ৬৩ঃ ৭)
মু’মিনদেরকে নানাবিধ সমস্যায় ফেলে দ্বীন থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَدُّوا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُونَ
“তারা চায় তুমি নমনীয় হও; তাহলে তারাও নমনীয় হবে।” (সূরা কালাম ৬৮ঃ ৯)
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَاحْذَرْهُمْ أَنْ يَفْتِنُوكَ عَنْ بَعْضِ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ
“…তাদের সম্পর্কে সতর্ক হও যাতে আল্লাহ্ যা তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন তা থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করতে না পারে।” (সূরা মা‘য়িদা ৫ঃ ৪৯)
কাফিররা কখনো মু’মিনদের এমন আহবান করে না যাতে তারা সত্য থেকে কিছু সরে আসে। কিছু সময়ের জন্য এমনটি চাইলেও, তাদের পরিপূর্ণ তৃপ্তি ততক্ষণ পর্যন্ত আসে না যতক্ষণ না মু’মিনগণ সত্য থেকে পুরোপুরি সরে আসে। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ
“ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানরা তোমার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর।” (সূরা বাকারা ২ঃ ১২০)
মু’মিনরা যদি তাদের দ্বীন থেকে না সরে অথবা কাফিরদের সাহায্য সহযোগীতা না করে তবে তাদেরকে জেল ও মৃত্যুদন্ডের ভয় দেখানো। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِنْ أَرْضِنَا أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا
“কাফিররা তাদের রাসূলগণকে বলেছিলঃ আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই আমাদের দেশ থেকে বহিষ্কৃত করব।” (সূরা ইব্রাহীম ১৪ঃ ১৩)
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
إِنَّهُمْ إِنْ يَظْهَرُوا عَلَيْكُمْ يَرْجُمُوكُمْ أَوْ يُعِيدُوكُمْ فِي مِلَّتِهِمْ وَلَنْ تُفْلِحُوا إِذًا أَبَدًا
“তারা যদি তোমাদের ব্যাপারে জানতে পারে তাহলে তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নিবে এবং সেক্ষেত্রে তোমরা কখনোই সফলকাম হবে না।”
(সূরা কাহ্ফ ১৮ঃ ২০)
মু’মিনদের উপর অত্যাচার, হত্যা এবং সংঘাত চাঁপিয়ে দেয়া। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
قَالُوا حَرِّقُوهُ وَانْصُرُوا آَلِهَتَكُمْ
“তারা বললঃ তাকে পুড়িয়ে দাও; সাহায্য কর তোমাদের দেবতাদেরকে…।” (সূরা আম্বিয়া ২১ঃ ৬৮)
তিনি, (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা), বলেনঃ
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ
“আর স্মরণ কর যখন কাফিররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যে, তোমাকে বন্দী করবে অথবা হত্যা করবে অথবা নির্বাসিত করবে…” (সূরা আন্ফাল ৮ঃ ৩০)
তিনি, (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা), বলেনঃ
وَلا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّى يَرُدُّوكُمْ عَنْ دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا
“তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়।” (সূরা বাকারা ২ঃ ২১৭)
তাই মু’মিন ভাইদের উদ্দেশ্যে বলছি, কাফিরদের শত্রুতা ও বিরোধিতার কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে যা কখনো বদলাবে না। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
أَتَوَاصَوْا بِهِ
“তারা কি একে অপরকে এই মন্ত্রণাই দিয়েছে (বংশানুক্রমে শিখিয়েছে)?” (সূরা যারিয়াত ৫১ঃ ৫৩)
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো মু’মিনদের ঈমানের কারণেই কাফিররা মু’মিনদের সাথে যুদ্ধ করে এবং শত্রুতা পোষণ করে। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَهُمْ عَلَى مَا يَفْعَلُونَ بِالْمُؤْمِنِينَ شُهُودٌ * وَمَا نَقَمُوا مِنْهُمْ إِلا أَنْ يُؤْمِنُوا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ
“তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধু এই কারণে যে তারা বিশ্বাস করত পরাক্রমশালী ও প্রশংসার্হ আল্লাহতে- আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যার সর্বময় কর্তৃত্ব; আর আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বদ্রষ্টা।”
(সূরা আল বুরুজ ৮৫ঃ ৭-৮)
এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ كَمَا كَفَرُوا فَتَكُونُونَ سَوَاءً
“তারা এটাই কামনা করে যে, তারা যেমন কুফরী করেছে তোমরা সেরকম কুফরী কর; যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও।” (সূরা নিসা ৪ঃ ৮৯)
সুতরাং কাফিরগণ মু’মিনগণকে শত্রু হিসেবে নেয় তাদের ঈমানের জন্য। একজন মুমিনের ঈমান যত বৃদ্ধি পায় তাঁর প্রতি কাফিরদের শত্রুতা ততই বৃদ্ধি পায়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “সবচাইতে বেশী পরীক্ষা করা হয় নাবীদেরকে, এরপর তাদের নিকটবর্তীদেরকে (ঈমানের স্তর ভেদে), তারপর তাদের নিকটবর্তীদেরকে (ঈমানের স্তর ভেদে)। মানুষ তার ঈমানের অনুযায়ী পরীক্ষিত হবে… ..”। (আত তিরমিযী; সহীহ্)
আর এটি বান্দা নিজেও বুঝতে পারে যে, তার ঈমান বৃদ্ধির সাথে সাথে তার প্রতি কাফির ও ফাসিকদের শত্রুতাও বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং সে তাদেরকে ভালো কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজে নিষেধ করে, এতে শত্রুতা আরো বৃদ্ধি পায়। আর তার ঈমান যত হ্রাস পায় তাদের শত্রুতাও ততই হ্রাস পায়।
তবে মু’মিনরা যতদিন ঈমানের উপর থাকবে তাদের প্রতি কাফিরদের শত্রুতা ততদিন পর্যন্ত শেষ হবে না; যদিও এতে কিছু থাকে তবুও। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَلَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ
“ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানরা তোমার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর।” (সূরা বাকারা ২ঃ ১২০)
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেনঃ
وَلا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّى يَرُدُّوكُمْ عَنْ دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا
“তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেয়।” (সূরা বাকারা ২ঃ ২১৭)
[ইনশাআল্লাহ্* চলবে]
Comment